#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_9
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আসলে ঈশানি আর রোহান এতো রিকোয়েস্ট করছে যে না এসে পারলাম না। শত হলেও তো ডালিয়া তো আমার ভাইয়ের মেয়ে।(রোহান আর রামিন ভাই)তাই যখন ওরা বললো তখন ভাবলাম অতীতের মনমালিন্য ভুলে নতুন করে না হয় সম্পর্ক গুলো সাজানো যাক।কি বলো জিসান?(রামিন জিসানের দিকে তাকিয়ে)
আমি উনাদের কথা শুনছি আর খাচ্ছি যখন উনি বাবার কথা বললেন তখনই আমি হ্যা করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি।বাবার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট কিন্তু উনি ভদ্রতার খাতিরে চুপ করে আছে।আমি তো বাবাকে দেখে অবাক।উনি চুপ করে থাকার মানুষ না,,রাগ হলে উনি সরাসরি অ্যাকশন করে দেয়। কিন্তু এই রিএকশনে আমার খুবই টেনশন হচ্ছে।বাবা নিজের রাগকে সাইডে রেখে ভদ্রতার খাতিরে রামিন আঙ্কেলকে জবাব দিলো,,
হুম রামিন।নতুন করে সাজানো তো যেতেই পারে।কিন্তু পুরনো গুলো ভুলা যায়না।অতীত কখনও ভুলা যায়না।আর সেটা যদি হয় আ,,,,,
বলতেই গিয়েই বাবাকে মা থামিয়ে দিলো।
আমরা যেহেতু বিয়েতে এসেছি সেহেতু বিয়েটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হাওয়া উচিত।আমরা বরং খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি উঠি।অনেক কাজ পরে আছে।তাই না ঈশানি আপা।(কলি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
হ্যা হ্যা।আছেই তো আজ তো ছেলের বাড়ির লোকেরা আসবে বিকেলে।আর কালকে গায়ে হলুদ।সুমাইয়া ভাবী তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠো।আমাদের মহিলাদের অনেক কাজ আছে।রাইশা তুমিও এসো।(ঈশানি)
হ্যা হ্যা আসছি।
বলেই সুমাইয়া আর রাইশা উঠে গেলো।
অন্যদিকে মা আর ঈশানি আন্টিও উঠে গেলো।
তার কিছুক্ষণ পরেই বাবা রাগে উঠে গেলো।বাবার পিছু পিছু আদি আঙ্কেল গেলো।রামিন আঙ্কেল একটা ডেভিল হাসি দিয়ে সেও বাহিরে চলে গেলো।
অন্যদিকে আমি আর বাকি সবাই ভাবছি কি হলো আমাদের বড়োদের।উনারা এমন এবনরমাল ব্যাবহার করছে কেন?কেউই কিছু খেলো না।সবার খাবারই যেমন দেয়া ছিলো তেমনি আছে।ছায়া আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি ওর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আভির দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে দিশেহারা পরিস্থিতিতে তাকিয়ে আছে।তারমানে কেউই জানে না এখানে কি লুকাচ্ছে বড়রা।কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা জেনেই ছাড়বো কি হচ্ছে!
আমিও খাবার রেখে টেবিল থেকে উঠে গেলাম।
আসুপি।কোথায় যাচ্ছো?(ছায়া)
ছায়া তুই বস আমি আসছি।
বলেই আমিও বাবা আর আদি আংকেলের পিছু পিছু গেলাম।
আয়ুশ তুই বস আমি একটু আসছি।
বলেই আভি ও উঠে গেলো।
কি হলো সবাই খালি ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে যেমন উনারাই ব্যাস্ত আমরা বসে আছি।(আয়ুশ)
আমার মনে হয় কোনো গন্ডগোল আছে(ছায়া)
আমারও তাই মনে হয়। যাই হোক ভাই সামলে নিবে।তুমি খাও।(আয়ুশ)
ছায়াও মাথা নেড়ে খেতে শুরু করলো।
আপু।তোমার কি মনে হয় বাবা কি করতে চাইছে?(তিশা ফিস ফিস করে)
জানি না।তবে এইটুকু বুঝতে পেরেছি। যাই করতে চাইছে তা খুবই খারাপ।(তুলি ফিস ফিস করে)
এখন কি করবে?(তিশা)
আমাদের যা কাজ করার তাই করতে হবে।তুই বরং তোর কাজ ভালো করে কর না হলে আয়ুশ কিন্তু এই ছায়ার হতে বেশিক্ষণ লাগবে না।(তুলি)
জ্বি।আপু।(তিশা)
।
।
অন্যদিকে আমি বাবা আর আদি আংকেলের পিছু নিতে নিতে ছাদের কাছে চলে আসলাম।
বাবা আর আদি আঙ্কেল ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছাদের অন্য দিকের একটা কোনায় লুকিয়ে দাড়িয়ে আছে।যেখান থেকে উনাদের স্পষ্ট শুনতে পারবো।অন্য দিকে আভি এসে ছাদের সিড়িতে দাড়িতে আছে যেখান থেকেও তাদের কথাবার্তা শুনা যায়।
আস্থা জানত না আভি এসেছে।কিন্তু আভি ঠিকই জানে যে আস্থা এসেছে।
আমি মনোযোগ দিয়ে বাবার কথা শুনতে লাগলাম।
আদি তুই বলিস নি কেনো যে রামিন এসেছে!(জিসান রেগে)
ওর আসার কথা ছিলো না।যদি আমি জানতাম ও আসবে তাহলে আমি তোর কাছ থেকে লুকাতাম না।আমি জানি তুই আর রামিন একে অপরের সহ্য করতে পারিস না।(আদি বুঝানোর চেষ্টা করে)
বাবা।রামিন আঙ্কেলকে সহ্য করতে পারে না?কেনো?(আমি মনে মনে)
রামিন আঙ্কেল আর জিসান আংকেলের মধ্যে কি কিছু সমস্যা আছে?(আভি মনে মনে)
দেখ।যেহেতু ও চলে এসেছে আমি আর আমার পরিবার এখান থেকে চলে যাবো। ও যেখানে থাকবে সেখানে আমি থাকবো না সেটা তুই ভালো করেই জানিস!(জিসান রাগে)
দেখ জিসান পাগলামি করিস না।এসেই যখন পড়েছিস বিয়েটা দেখেই যা।তারপর না হয় তোরা চলে গেলি।(আদি)
ওর করা আগের কৃতকর্মের কারণে কিন্তু ওকে আমি যোগ্য শাস্তি দিতে পারি নি।কিন্তু এখন কিন্তু আমি ওকে ছাড় দিবো না।একটা সুযোগও যদি পাই ওর কাছ থেকে বদলা নেওয়ার আমি নিয়েই ছাড়বো যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হোক।আমি বলতে দিলাম তোকে।(জিসান)
বাবা খুব রেগে আছে।নিশ্চয়ই আংকেলটা খুব খারাপ কিছু করেছে বাবার সাথে।(আমি মনে মনে)
জিসান আঙ্কেল বদলা নিতে চায় রামিন আংকেলের কাছ থেকে।কিন্তু কেনো?(আভি মনে মনে)
তা না হয় নিস কিন্তু এখন তো চল।(আদি)
আগে তুই আমাকে প্রমিজ কর তুই আমার পাশে থাকবি?(জিসান)
আমি সব সময় তোর পাশে ছিলাম তোর পাশেই থাকবো।(আদি)
ঠিক আছে।বিয়ে পর্যন্ত আমরা আছি। চল গিয়ে বিয়ের কাছ করা যাক(জিসান)
চল।
বলেই আদি আর জিসান নেমে আসবে তার আগেই আভি সেখান থেকে চলে গেলো।
বাবা আর আঙ্কেল চলে যাওয়ার পর আমি বের হলাম।
মনে হচ্ছে কিছু সিরিয়াস হতে চলেছে।কিন্তু কি হবে তাই আন্দাজ করাই মুশকিল। যাই হোক যখন হবে তখন না হয় দেখা যাবে।
বলেই আমি ছাদ থেকে নেমে সোজা রুমে গিয়ে একটা লম্বা ঘুমের জন্য বেডে শুয়ে পড়লাম।
আমাকে যে রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে।সেই রুমে আমি,,ছায়া আর আরেকটা মেয়ে থাকবে।কিন্তু সেই মেয়ে বরের বাড়ির তাই এখনও সে আসে নি।ছায়া বাহিরে তাই পুরো বিছানা জুড়ে গড়াগড়ি খেয়ে লাগলাম।আর একটা শান্তির ঘুম দিলাম।
।
।
অন্যদিকে আভি
বাবা আর জিসান আঙ্কেল কি বদলার কথা বলছিলো? কি করেছে রামিন আঙ্কেল?কেনোই বা জিসান আঙ্কেল এতো ক্ষেপে আছে?যা দেখে বুঝলাম যে বাবা জিসান আংকেলের পক্ষে। তারমানে সমস্যা হয়েছে জিসান আর রামিন আংকেলের মধ্যে।কিন্তু বাবা রামিন আঙ্কেলকে সাপোর্ট না করে জিসান আঙ্কেলকে করছে।কি হয়েছিল তা আমার জানতেই হবে।
এইসব ভাবতে ভাবতে আভি যে কখন ঘুমিয়ে পড়লো ও নিজেই বুঝতে পারেনি।
।
।
অন্যদিকে রামিন বাগানে দাড়িয়ে আছে তখনই তুলি আসলো
বাবা।তোমার আস্থার বাবার সাথে কি কোনো সমস্যা হয়েছিলো?(তুলি ভয়ে ভয়ে)
আস্থা কে?(রামিন ভ্রু কুঁচকে)
জিসান আংকেলের মেয়ে।যার কারণে আভি আর আমার ব্রেক আপ হয়েছে।(তুলি)
মানে?পুরো ঘটনা আমাকে খুলে বলো।(রামিন)
পরেই তুলি ক্লাবে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো।
বাহ!মেঘনা চাইতেই জল।এখন আমি জিসানের মেয়েকেই ব্যাবহার করে জিসান আর আদির সম্পর্ক শেষ করে দিবো।তার সাথে আভি আর আদির সম্পর্কও।এইবার দেখি কি করে আমাকে আটকায় জিসান আর আদি!(রামিন মনে মনে)
কী হয়েছে বাবা?তুমি কি ভাবছো?(তুলি)
কিছু না মা।তুমি বরং একটা কাজ করো।আভিকে বলো তুমি আর ওর উপরে রাগ করে নেই।তুমি ওকে এতো ভালোবাসো যে রাগ করে থাকতেই পারো নি।ওকে এই কয়েকদিন এতো ভালোবাসা এতো কেয়ার করো।যে ও তোমার দিওয়ানা হয়ে যায়।(রামিন)
কিন্তু এতে কি হবে?(তুলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
আমি যা বলছি তাই করো!কি হবে তা আমি দেখে নিবো।(রামিন)
আচ্ছা।বাবা।
বলেই তুলি চলে গেলো।
।
।
অন্যদিকে
তিশা যেনো আয়ুশ এর পিছু ছাড়তেই চাইছে না।অন্যদিকে আয়ুশ ছায়ার সাথে সাথেই আছে তিশার কাছ থেকে বাঁচতে।
আয়ুশ আর ছায়া ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে হাঁটছে আর গ্রামটাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।মাঝে মধ্যে ছায়া পরে যেতে লাগলে আয়ুশ ওর হাত চেপে ধরে।এই নিয়ে দুজনে অনেক হাসাহাসি করে।
ও আপনাকে ভালোবাসে।ওকে একটা সুযোগ দিলেই তো পারেন।(ছায়া ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে)
তুমি জানো বানরকে সুযোগ দিলে ও মাথায় চড়ে বসে।(আয়ুশ ছায়াকে ধরে হাঁটছে যাতে ছায়া না পরে যায়)
কিন্তু আমি তো তিশার কথা বলছি বানরের কথা কেনো তুলছেন?(ছায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
হায় রে।বাদ দাও।এখন বলো খেজুরের রস খাবে?(আয়ুশ)
খেজুরের রস কোথায় পাবো?(ছায়া অবাক হয়ে)
আরে গ্রামে এসেছি।খেজুরের রস পাবো না।এইটা কি হয়?তুমি শুধু বলো খাবে কি না?(আয়ুশ)
থাকলে তো অবশ্যই খাবো।আমি কোনোদিন খাইনি (ছায়া)
তাহলে আর দেরি না করে জলদি চলো।
বলেই আয়ুশ ছায়ার হাত ধরে চলতে শুরু করলো।
।
।
কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে আয়ুশ আর ছায়া উপস্থিত হলো।
বাড়িটা মাটির তৈরি।কিন্তু খুব সুন্দর করে গোছানো।দেখতে খুব ভালো লাগছে।
ওয়াও।(ছায়া মাটির দেয়ালে হাত বুলিয়ে)
তুমি কি কখনও মাটির ঘর দেখনি?(আয়ুশ হাসতে হাসতে)
দেখেছি কিন্তু এই ঘরটা খুব সুন্দর লাগছে আমার!(ছায়া খুশি হয়ে)
হুম।উনাদের বাড়িটা সত্যিই অনেক সুন্দর।উনাদের কাছে খেজুরের রস পাওয়া যায়।খেজুরের গুড় তৈরি করে তারা।যখনই আমরা গ্রামের বাড়িতে আসি।খেজুরের রস উনাদের কাজ থেকেই খাই।(আয়ুশ)
তাই নাকি আমিও খাবো।(ছায়া)
ওকে দাড়াও।
পরেই আয়ুশ একজনকে ডাক দিলো।ডাক দেয়ার পরই এক বৃদ্ধ লোক বেরিয়ে আসলো।
আয়ুশ গিয়েই লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো।
কেমন আছেন দাদু!(আয়ুশ)
আলহাদুলিল্লাহ।তুমি কেমন আছো?কবে আইলা?(দাদু)
আমি আলহাদুলিল্লাহ। পরশু রাতেই আসলাম।(আয়ুশ)
ওইডা কেডা?(দাদু)
ও হচ্ছে।আমার বন্ধু।(আয়ুশ)
বন্ধু নাকি অন্য কিছু?(দাদু টিটকারি করে)
দাদু আপনিও না।এখন আপনি কি আমাদের খেজুরের রস খাওয়াবেন না।(আয়ুশ হাসতে হাসতে)
আইচ্ছা।তোমরা বসো।আমি তোমাগো লেইগা।রস লইয়া আহি।
বলেই দাদু ভিতরে চলে গেলো।
মনে হয় দাদুর সাথে আপনার খুব ভালো বন্ডিং।(ছায়া)
তা বলতে পারো।(আয়ুশ)
পরেই ছায়া আর আয়ুশ রস খেয়ে দাদুর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে।আবার বাড়ির পথে হাটা ধরলো।
আবারও এই ক্ষেতের মাঝ খান দিয়ে যেতে হবে?(ছায়া বিরক্ত হয়ে)
তা না হলে কোথা দিয়ে যাবে?ম্যাডাম।এইটাই একটা রাস্তা।অন্য কোনো রাস্তা নেই।(আয়ুশ হাসতে হাসতে)
ওকে।
বলেই ছায়া পা ফেলতেই পরে গেলো।আর সাথে সাথে পা মচকে গেলো।
আহ্।
বলেই ছায়া কাদতে লাগলো।
কী করে পরে গেলে তুমি?(আয়ুশ ছায়ার কাছে এসে)
আবার পরে গিয়ে দেখাই কি করে পড়েছি।মশাই আগে আমাকে তুলুন(ছায়া বসে আয়ুশ এর দিকে হাত বাড়িয়ে)
আচ্ছা আচ্ছা।রেগে যাচ্ছো কেনো?আমি তো এমনি বলছি।এখন কি তুমি হাঁটতে পারবে?(আয়ুশ ছায়াকে ধরে তুলল)
মনে হয় না।আমি কি করে বাড়ি যাবো!(ছায়া পায়ে হাত দিয়ে)
নো প্রব্লেম আমি আছি না।
বলেই আয়ুশ এক ঝটকায় ছায়াকে কোলে তুলে নিলো।
ছায়া আয়ুশ এর এই আচমকা কান্ডর জন্য।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
।
।
চলবে,,,,,