#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_25
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আমরা খাচ্ছি তখন হটাৎ কোথা থেকে যেনো জয় এসে পড়লো
Hey,, লাভ বার্ডস (জয়)
এসে পড়েছে কাবাবের হাড্ডি।(আভি বিরক্ত বিড়বিড় করে)
হুম,,?(আমি আর জয়)
কিছু না(আভি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
তা আমাকে ইনভাইট না করে আপনারা ব্রেক ফাস্ট করছেন!এইটা কিন্তু মানা যায় না!(জয়)
আপনার ইনভিটেশন দরকার হয়!(আভি দাত চেপে)
তা ঠিক!আমার কোনো ইনভিটেশন এর প্রয়োজন নেই।(জয় এক গাল হেসে)
জানতাম।(আভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)
আপনাদেরও তো ইনভাইট করার কোনো ইচ্ছাই থাকে না।যদি থাকতো তাহলে বিয়েতে ইনভাইট করতেন।(জয় জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
কেনো?আপনি কি কোনো ভিআইপি নাকি!আপনাকে ইনভাইট করতে হবে।(আভি দাত চেপে চেপে)
আমি এতক্ষন বসে বসে দুজনের কথাবার্তা শুনছি।আভি আমার এক পাশে অন্যপাশে জয়।দুইজন মুখোমুখি বসে যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে।নিজেই বুঝতে পারছে না কতো ফলতো কথা ওরা বলছে।একবার একদিকে আরেকবার অন্য দিকে তাকিয়ে দেখছি।এখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে আমার।তাই আমি কাটা চামচ নিয়ে একদম টেবিলের মাঝ বরাবর গেঁথে দিলাম।আভি আর জয় আমার দিকে তাকাতেই
এইরে আস্থা সেই ক্ষেপে আছে!(আভি মনে মনে)
আজ কপালে শনি আছে নির্ঘাত।(জয় মনে মনে)
তোমাদের ফালতু কনভারসেশন শুনে আমার খুব ভালো লাগলো।এখন যদি তোমাদের আরো কিছু বলার থাকে তাহলে তোমাদের তাহলে এখন এখান থেকে দূরে গিয়ে বলো।কারণ আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।আমি সেই যে ঢাকা থেকে খেয়ে এসেছি এখনও কিছু খাইনি।এখন যদি আমার খাবারের সময় তোমরা কেউ বিরক্ত করো তাহলে আমি তোমাদের চিবিয়ে খাবো বলে দিলাম।(আমি দাত চেপে চেপে)
ইয়েস ম্যাম।
বলেই আভি আর জয় বেরিয়ে পড়লো।
আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সব ছেলেরা এক।আমি বরং আগে খেয়ে নেই তারপর ওদের দেখা যাবে।
বলেই আমি রাক্ষুসের মত খেতে শুরু করলাম।
।
।
আভি আর জয় সমুদ্র পাড়ে হাঁটছে।
তুমি আসুকে অনেক ভালোবাসো তাই না?(জয়)
হুম।অনেক।আর তুমিও ওকে ভালোবাসো তাই না?(আভি জয়ের দিকে তাকিয়ে)
হুম।কিন্তু তোমার মত না।(জয় আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আভি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি যদি ওকে তোমার চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম তাহলে উপরওয়ালা আমাদের মিলিয়ে দিতো।যেহেতু উনিই আমাদের মিলিয়ে দেন নি তাহলে নিশ্চয়ই আমার ভালোবাসাতে কোনো কমতি ছিল।(জয় আভির দিকে তাকিয়ে)
আভি অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
জানো আভি।ছোটো বেলা থেকেই আমি আর আসু একসাথে থাকতাম সবাই ভাবতো আমরা হয়তো বড়ো হয়ে একে অপরকে বিয়ে করবো। সবার এই ধারণা থেকে আমার মনেও আসুর জন্য ফিলিংস জন্মে ছিলো।কিন্তু নিয়তি তো ওর ভাগ্য তোমার সাথে লিখে রেখেছে।আসু কোনো সহজ মেয়ে না।ওর কথাবার্তা ওর চালচলন আর পাঁচটা মেয়ের মত হলেও ও তাদের থেকে আলাদা।ওর মনে জায়গা করা খুব কঠিন কাজ।কারণ কোনো ভাবনায় পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার মেয়ে আসু না।কিন্তু ও তোমাকে বেছে নিয়েছে।(জয়)
এই কথা শুনে আভি অবাক হয়ে বললো
মানে?
মানে!তুমি ওর মনে জায়গা করতে পেরেছো! ও তোমার জন্য ফিল করে।(জয় মুচকি হেসে)
তুমি জানো কি করে?(আভি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
ঐযে বললাম।ছোটো বেলা থেকেই আসুর সাথে আমার বড়ো হওয়া।(জয়)
আভি একটা মুচকি হাসি দিলো।
কিন্তু আভি মনে রেখো মন পাওয়া যতো সহজ সেই মনকে ভালবেসে আগলে রাখা ততটাই কঠিন।ওকে কষ্ট দিলে ফিরে পাওয়া কিন্তু অনেক কঠিন হয়ে যাবে তোমার।ভেবে চিনতে পা ফেলো।আমার আসুকে তোমার কাছে দিলাম(জয় আভির কাধে হাত রেখে)
আভি জয়কে জড়িয়ে ধরে বলল
এই জীবন থাকতে আস্থার কিছু হবে না।কোনো দিন ওকে কষ্ট পেতে দিবো না।
হুম।(জয়)
ওরা আরো কথাবার্তা বলছে তখনই আস্থার ডাক পড়লো।
।
।
এইযে আমার খাওয়া শেষ।এখন বিলটা দিয়ে যাও।নয়তো আমাকে যেতে দিবে না।(আমি চিল্লিয়ে)
তোকে রেখে দিক।বাসন মাজার জন্য।(জয় চিল্লিয়ে)
জয়ের বাচ্চা তোকে আমি খাইছি!(আমি রেগে)
সেই ছোটো বেলা থেকেই শুনছি আমাকে খাচ্ছিস?কই আমি তো এখনও ঠিকই আছি।(জয় এসে)
তুই কি আমার সাথে মজা করছিস?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
তোমার সাথে মজা করবে কোন পাগলে?(আভি আর জয় হাতে তালি দিয়ে)
এক মিনিট একটু আগে এমনভাবে যুদ্ধ করছিলে মনে হচ্ছে তোমরা সতীন।এখন এমন ভাব করছো যেনো তোমরা জিগরি দোস্ত।কাহিনীটা কি?আবহাওয়া পরিবর্তন হয় বুঝলাম।এখন দেখি পুরো জলবায়ুই পরিবর্তন হয়ে গেলো!(আমি অবাক হয়ে)
আরে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেছি।(জয়)
বিশ্বাস হয় না!(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
সত্যিই।জয় ঠিকই বলছে আমরা এখন বেস্ট ফ্রেন্ড।(আভি)
ইম্পসিবল।(আমি অন্যদিকে ফিরে)
এইভাবেই আমি আর আভি ঝগড়া করতে লাগলাম।
সত্যিই আসুর খুশি আভির সাথে।(জয় মনে মনে মুচকি হেসে)
সেদিন আমি,,আভি আর জয় সারাদিন ঘুরলাম।ভাই আর বরের সাথে ঘুরার মজাই আলাদা।দুজনেই আমাকে কলিজার টুকরোর মত আগলে রেখেছি।সত্যিই নিজেকে অনেক সুরক্ষিত মনে হচ্ছে।মাঝে মাঝে জয় যেনো আভিকে কি যেনো শিখিয়ে দিচ্ছে!আমি জানি না তবে ওদের দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে গেছে এইতেই আমি খুশি।আমরা অনেক ঘুরোঘুরি করলাম।পরেই সন্ধ্যায় আভি আর আমি আমাদের হোটেলে আর জয় ওর হোটেলে চলে গেলো।
।
।
রুমে
আমি ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলাম।আভি বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে।তাই আমিও বিছানায় টাওয়েল রেখে বেলকনিতে আভির পাশে দাড়ালাম।
কী ভাবছো আভি?(আমি ওর দিকে তাকিয়ে)
আকাশ দেখছি।প্রেমে পড়লে নাকি আকাশ অনেক সুন্দর দেখায়।(আভি)
আমি ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।
তুমি হাসছো কেনো?(আভি অবাক হয়ে)
আকাশ যেমন ছিল তেমনি আছে।এতে সুন্দর কিছুই নেই।শুধু শুধু বেচারা প্রেমকে আকাশ সুন্দর হাওয়ার ক্রেডিট দিও না।(আমি হাসতে হাসতে)
আস্থা?(আভি আমার দিকে তাকিয়ে)
হুম।(আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে)
তুমি কি কোনদিন কাউকে ভালোবেসেছ?(আভি)
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আমি তো একজনকেই ভালোবাসেছি।আর সে আর কেউ না। তুমি?জানি না তুমি ভালোবাসো কিনা?কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু এখন এই ভালোবাসার দোহায় দিয়ে তোমাকে এই সম্পর্কে আমি রাখতে চাই না।আমি চাই না তুমি আমার জন্য তোমার ভালোবাসা তুলিকে ছেড়ে দাও।এতো সার্থপর আমার ভালোবাসা হতে পারে না।(আমি আভির দিকে তাকিয়ে ভাবছি)
কী হলো আস্থা বলো?(আভি তুরী বাজিয়ে)
না।কাউকে ভালোবাসি নি।(আমি মুচকি হেসে)
ও।(আভি ওর চোখ মুখ নিরাশ হয়ে গেল)
আমি আর আভি চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি।দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।
।
।
আজ আমাদের বাড়ি ফেরার পালা।আমি আর আভি দুজনেই জোরাজুরি করে জয়কে আমাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি।এই কয়দিন আমরা অনেক মজা করেছি।অনেক জায়গায় ঘুরোঘুরি করেছি।এখন এই সুন্দর জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে এইটা ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেলো। তবে আমার সেই পরিচিত বেস্ত শহরে ফিরবো এইটা ভেবেই অনেক শান্তি লাগছে।
এয়ার পোর্ট এ আমরা ফ্লাইটে উঠবো তখনই আভির ফোন একটা ফোন আসলো।
আস্থা জয়।তোমরা যাও আমি আসছি।(আভি ফোন হাতে নিয়ে)
ওকে।(আমি আর জয়)
।
।
কী হয়েছে তুলি?(আভি ফোন ধরে বিরক্ত সুরে)
এখন যেমন খুব বিরক্ত লাগে আমার কথা তোমার কাছে?(তুলি)
কেনো ফোন দিয়েছো তা বলো!(আভি)
শুনলাম হানিমুনে গেছো! তা কেমন হলো তোমার হানিমুন?(তুলি)
তা তোমার জানতে হবে না।কাজের কথায় এসো।(আভি)
তোমার সাথে কথা ছিলো!ঢাকায় আসলে দেখা করো।(তুলি)
হুম।আমারও তোমার সাথে কথা আছে।ঢাকায় আসলে কথা হবে।(আভি)
তুলি আর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
তুলির সাথে কথা বলে সব শেষ করে দিবো।তারপর আস্থার সাথে নতুন করে শুরু করব।(আভি মনে মনে)
।
।
অন্যদিকে তুলি
একবার ঢাকায় এসো।তোমার আর আস্থার সম্পর্ক আমি কি করে শেষ করি তুমি শুধু দেখবে।(তুলি মনে মনে)
।
।
চলবে,,,^_^