#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_28
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আমি বসে বসে সুপ খাচ্ছি।আর নিতু আপু আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি সুপ খাওয়া শেষ করে বাটিটা একপাশে রাখলাম।
আস্থা যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?(নিতু)
আমি জানি তুমি কি জিজ্ঞেস করবে!আমি এখন না জানিয়ে তোমাদের বাড়িতে হটাৎ কেনো চলে আসলাম!এইটাই তো?(আমি)
ওইটা তো আছেই কিন্তু তোমার ঐ রকম অবস্থা কি করে হলো?(নিতু)
আসলে আপু,,,
পরেই আমি নিতু আপুকে সব খুলে বললাম।
আমরা দুজনই চুপচাপ বসে আছি।
এইটা তো অনেক সিরিয়াস বেপার এখন কি করবে তুমি আস্থা?(নিতু)
সেইটাই তো মাথায় আসছে না নিতু আপু।(আমি মাথায় হাত দিয়ে)
কি হতে যে কি হয়ে গেল!আমরা সবাই গ্রামের বাড়িতে গেলাম মজা করতে আর সেখান থেকে কি শুরু হয়ে গেল!(নিতু একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)
নিতু আপুর কথা শুনে আমার মাথায় বাতি জ্বলে উঠলো।
এইটাও তো নিতু আপু!(আমি এক্সসাইটেড হয়ে)
কী?(নিতু অবাক হয়ে)
যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানে গেলেই তো এই সবের মাথা খুঁজে পাবো!(আমি)
মানে?(নিতু)
পরেই আমি নিতু আপুকে আমার প্ল্যান খুলে বললাম।
ওকে আস্থা।তুমি যা ভালো বুঝ করো।আমি সব কিছুর ব্যবস্থা করছি।(নিতু)
থ্যাংকস নিতু আপু।(আমি মুচকি হেসে)
হুম।এখন ঘুমাও কাল সকালে উঠতে হবে।(নিতু আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল)
পরেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
।
।
অন্যদিকে
আভি আস্থাকে গুলশান সহ পুরো ঢাকা শহর অর্ধেক খুঁজে ফেলেছে।কিন্তু আস্থা তো আর নেই। ও তো শান্তি মতো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।আর এদিকে অভি নিজের ঘুম হারাম করে আস্থাকে খুজেই চলছে।
কিছুক্ষণ পরেই আভির ফোনে একটা ফোন আসলো।আভি গাড়ি সাইডে পার্ক করে ফোন ধরলো
স্যার।আপনি যা সন্দেহ করেছেন তাই ঠিক!(ডিটেকটিভ)
থ্যাঙ্ক ইউ।তুমি এখন শুধু প্রমাণ জোগাড় করো।(আভি)
ওকে স্যার।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
আস্থা কোথায় তুমি?তোমাকে দূরে রাখা আমার পক্ষে কতো কঠিন তুমি জানো।(আভি গাড়িতে লাথি মেরে)
।
।
সকালে
ভাই কোথায় তুমি?কাল রাত থেকে ফোন করছি তুমি ফোনই ধরছো না।(আয়ুশ ফোনে)
আয়ুশ।আমি সারারাত ঘুমাইনি।(আভি)
কেনো?কি হয়েছে?কোথায় তুমি!(আয়ুশ চিন্তিত হয়ে)
আমি সারারাত ড্রাইভ করেছি!এখনও ড্রাইভ করছি(আভি)
ড্রাইভ করছো মানে?আস্থা ভাবী কোথায়?তোমার সাথে?(আয়ুশ)
সাথে হলে কি আর ড্রাইভ করতাম।অসভ্য মেয়ে খালি পারে আমাকে টেনশন দিতে। ও পালিয়ে গেছে।আর আমি ওকে সারারাত ধরে খুঁজেছি।(আভি)
তোমাদের সম্পর্ক যে কি আল্লাহ মালুম।একজন কিডন্যাপ করে একজন পালিয়ে যায়।সাথে থাকলে কি তোমাদের কোনো সমস্যা হয়?(আয়ুশ)
ওইটা তোর ভাবীকে বল।ওই তো শুধু পালায়।(আভি)
বলতে হলে তো আগে ভাবীকে খুঁজতে হবে।(আয়ুশ)
হুম।তুই বরং একটা কাজ কর।ছায়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস কর দেখ ওকে ফোন দিয়ে কিছু বলেছে কিনা!ওর প্রাণ তো আবার ছায়া।(আভি)
হুম।ছায়ার প্রাণও তো আস্থা।যাইহোক আমি এখন জিসান আংকেলের বাড়ির দিকেই যাচ্ছি।আর আমিও এখন ড্রাইভ করছি।গিয়ে দেখি ও কিছু জানে কি না!যদি জানে আমিও তোমাকে জানাবো।এখন রাখি।
বলেই আয়ুশ ফোন কেটে দিলো।
।
।
আয়ুশ রেড সিগন্যাল এ দাড়িয়ে আছে এমন সময় ও দেখলো।সিগনালের পাশের একটা পার্কে আকাশ আর পিয়ালী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।এইটা দেখেই আয়ুশ এর মাথা গরম হয়ে যায়।
ছায়াকে ভালোবেসে।ওর পিছে ওর বোনের বান্ধুবীকে জড়িয়ে ধরা।তোর সাহস কি হয় ছায়াকে ধোঁকা দেয়ার।তোর সাহস তো কম না।
বলেই গাড়ি সাইডে পার্ক করে।নেমে সোজা পার্ককে গিয়ে আকাশকে একটা ঘুষি মারলো।আর আকাশ ছিটকে পড়লো
আকাশ,,(পিয়ালী অবাক হয়ে)
তোর সাহস কি করে হয় ছায়াকে ধোঁকা দেয়ার!ওই মেয়ে তোকে কতো ভালোবাসে তুই জানিস!(আয়ুশ আকাশকে মারতে মারতে)
আয়ুশ তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।(পিয়ালী আকাশ আর আয়ুশ কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
তুমি চুপ করো।আমার কোনো ভুল হচ্ছে না।তোমরা মিলে ছায়ার ফিলিংস এর সাথে খেলেছো।আজ আমি তোমার মুখোশ ছায়ার কাছে ফাঁস করবোই।
বলেই আয়ুশ আকাশকে টেনে ছায়াদের বাসায় নিয়ে গেলো।পার্ক থেকে ছায়ার বাড়ির দুরত্ব দুমিনিটের।
।
।
আহা কি সুন্দর সকাল!এই সকালে বাগানের মিষ্টি রোদে চা খাওয়ার মজাই আলাদা।মা আর বাবা আদি আংকেলের বাড়িতে গেছে।যদিও আমি যাবো একটু পরে।ব্যাপার না আমি বরং চা এনজয় করি।
বলেই ছায়া চায়ের কাপে যেই চুমুক দিবে ওমনি ওর সামনে আয়ুশ চিৎকার করে উঠলো।
ছায়া কাশতে কাশতে
কী হলো সাজ সকালে চেচাছ কেনো?আর তুমি আকাশ ভাইকে এইভাবে ধরে রেখেছো কেনো?
ও তোমাকে ধোঁকা দেয়।ওর সাহস কত।
বলেই আয়ুশ আকাশকে মারতে যাবে তখনই ছায়া আয়ুশকে ধাক্কা দিয়ে আকাশের কাছ থেকে দূরে ঢেলে দেয়।
তোমার সাহস কি করে হয় আকাশ ভাইয়াকে মারার?(ছায়া চিৎকার করে)
তুমি জানো ওর সম্পর্ক পিয়ালির সাথে।(আয়ুশ)
সেটা আমার আর আকাশের ব্যাপার।এর মধ্যে তুমি ঢোকার কে?(ছায়া)
আমি কে?ছায়া ও তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে।আর তুমি ওর সাইড নিচ্ছো!(আয়ুশ অবাক হয়ে)
ও আমাকে ধোঁকা দিয়েছে আর তুমি?তুমি কি করেছো?তুমি দুধের দোয়া তুলসী পাতা।তুমিও তো আমাকে ধোঁকাই দিয়েছো।আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছো।তুমি এতো কিছু করার পড়েও আবার কি করে পারো আকাশ ভাইয়ার উপর আঙ্গুল তুলতে?নিজের চরকায় তেল দাও আয়ুশ।আগে নিয়ে শুধরাও।আর হ্যা আমার ব্যাপারে নাক না গলিয়ে নিজের গার্লফ্রেন্ড নেহার কাছে যাও।দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে।(ছায়া একদমে কথা গুলো বললো)
আয়ুশ ছায়ার কথা শুনে আরো রেগে গেলো
কী বললি তুই নেহার কাছে যাবো তাই না?তাহলে শোন নেহার সাথে আমার ব্রেক আপ ওইদিনই হয়ে গেছিলো যেদিন তুই আকাশের বাইকে বসে চলে গেছিলি।(ছায়ার বাহু চেপে ধরে)
আমি মানছি আমি খারাপ ছেলে অনেক খারাপ করেছি তোমার সাথে।কিন্তু বিশ্বাস করো এখন আমি আর সেই আগের আয়ুশ না।ওইদিন সেই পুকুর পাড়ের তোমার বলা কথা গুলো আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে,নিজেকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।আমি তোমার জন্য নিজেকে বদলে ফেলেছি।তোমার করা প্রতিটা অপমান আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি।কারণ জানি এইটা আমার প্রাপ্য।আমি যা করেছি তোমার সাথে তারই শাস্তি।কিন্তু ছায়া আমি কি এতটাই জঘন্য যে একটা সুযোগও তুমি আমায় দিতে চাও না।যাইহোক আমি যদি এতটাও খারাপ হয়ে থাকি তাহলে আমি শাস্তি নিতে প্রস্তুত।আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পিছু ছাড়বো না যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি আমাকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছ তোমাকে ভালোবাসার।একদিন তো তুমি ক্লান্ত হবে আমায় অপমান করতে করতে সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।হয়তো তুমি আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে।কিন্তু আমার মনকে পরিবর্তন করতে পারবে না তোমাকে ভালোবাসা থেকে।সেই একদিনের আশায় আমি সব সময় পাশেই থাকবো।পাশে থেকে বলবো ছিলাম তো তোমারই পাশে।যদি একদিন মান ভাঙ্গে তাহলে টেনে নিও তোমার কাছে।(আয়ুশ ছায়ার চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বললো)
ছায়া চোখ ফিরিয়ে আকাশের কাছে গেলো।আর তা দেখে আয়ুশ এর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো।
পিয়ালী আপু।আকাশ ভাইয়াকে নিয়ে যাও।উনাকে গিয়ে মলম লাগিয়ে দাও। থ্যাংকস ভাইয়া।আমার কথা চিন্তা করে আয়ুশ এর গায়ে হাত না তোলার জন্য।অন্তত পক্ষে আপনি বুঝতে পেরেছেন আয়ুশ কতোটা পাগল।(ছায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)
তোমারই তো।তুমিই সামলাও।(আকাশ মুচকি হেসে)
যাই ছায়া।
বলেই পিয়ালী আকাশকে নিয়ে চলে গেলো।
ছায়া পিছন ফিরে আয়ুশকে কিছু বলতে যাবে তখনই ছায়ার ফোনে একটা ফোন আসলো
হ্যালো?(ছায়া)
ছায়া আমি আস্থা।(আমি)
আসুপি?(ছায়া অবাক হয়ে আয়ুশ এর দিকে তাকিয়ে)
আয়ুশ ইশারা দিয়ে ফোন স্পিকার এ দিতে বললো
হ্যা।আপু কই তুই আর আভি ভাইয়া?আর এইটা কার নম্বর?(ছায়া)
ছায়া।এইটা নিতু আপুর নম্বর উনি আমাকে একটা ফোন দিয়েছে।আর আভির কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি।(আমি)
তাহলে এখন তুমি কোথায়?আর নিতুর আপুর সাথে তোমার কোথায় দেখা হয়েছে?(ছায়া চিন্তিত হয়ে)
নিতু আপুর কথা পরে বলবো।এখন যার জন্য তোকে ফোন দেয়া তা শোন আমি এখন এয়ার পোর্ট এ রেল স্টেশনে আছি।(আমি)
তুমি ঐখানে কি করছো?(ছায়া অবাক হয়ে)
আমি গ্রামের বাড়িতে যাবো।নিতু আপু আমার জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করেছে।এখন আমি একাই যাচ্ছি গ্রামের বাড়িতে।সেখানে গিয়ে প্রমাণ করবো আমি আর বাবা নির্দোষ আর শোন বাবা মাকে বলিস চিন্তা করতে না আর তুইও চিন্তা করিস না।আর আভিকে বলিস না আমি কোথায়।আমি এখন রাখছি আমার ট্রেন এসে পড়েছে।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
হে,,, হেলো?ফোন কেটে দিলো।(ছায়া)
দাড়াও আমি ভাইকে ফোন করি।
বলেই আয়ুশ আভিকে ফোন করল।
হ্যালো।তুই কি ওর খবর পেয়েছিস?(আভি)
হুম।ভাবী ট্রেনে করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।এখন মনে হয় উনার ট্রেন ছেড়েও দিয়েছে।(আয়ুশ)
শিট।এই মেয়ে কি নিজেরে সুপার গার্ল ভাবে?সব সময় না বুঝে না জেনে কোনো জিনিসে পরে যায়।আয়ুশ তুমি মা বাবা আর জিসান আঙ্কেল কলি আন্টিকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আয়।(আভি)
আর তুমি?(আয়ুশ)
আমি ফ্লাইটে যাচ্ছি।আমার টিকেট কাটা হয়ে গেছে।(আভি)
তুমি কি কোনো ভাবে জানতে ভাবী গ্রামের বাড়িতে যাবে!(আয়ুশ)
না।কিন্তু আমি এমনি যেতাম সেখানে পুরনো হিসাব আছে।আমি বরং এখন রাখি।
বলেই আভি ফোন রেখে দিল।
আয়ুশ চলো মা বাবা তোমাদের বাড়িতেই।(ছায়া)
হুম।চলো।
বলেই আয়ুশ আর ছায়া বেরিয়ে পড়লো।
।
।
বাবা ওরা গ্রামের বাড়িতে যাবে!(তিশা ফোনে)
ওরা গেলে আমরাও যাবো।
বলেই রামিন ফোনটা কেটে দিলো।
তিশা এতক্ষন আয়ুশ এর পিছু নিয়েছিলো।
এইবার শেষ খেলাটা হবে গ্রামের বাড়িতে।(রামিন)
।
।
চলবে,,,^_^