#বোনু
#সিজন_০২
#Part_22
#Writer_NOVA
ঐশিক চলে গেল।মিহু মুচকি হাসলো।ওরা সবাই মিলে পাশেই একটি এতিমখানায় গেলো।ইশিকা প্রতি জন্মদিনে এখানে এসে সময় কাটাতো।ইশিকা বাচ্চা অনেক পছন্দ করতো।মিহু গত চার বছর শুধুমাত্র এই দিনে বাচ্চাদের সাথে কাটায়।যে পার্কের মতো জায়গায় ইশিকে কবর দেওয়া হয়েছে এটা ওর প্রিয় জায়গা ছিলো।অবসর সময়ে এখানে কাটাতো।ইশি মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে ওর বাবা এই জায়গায়টা কিনে মেয়ের মনের মতো করে সাজিয়ে দেন।তাতে ইশি ভিষণ খুশি হয়েছিল।ওর প্রিয় জায়গায় ওকে কবর দেিয়া হয়।
ইশিকা একদিন ঠাট্টার ছলে মিহুকে বলেছিলো,”আমি যদি মারা যাই তাহলে আমাকে এখানে কবর দিতে বলবি।” কে জানতো ওর কথা এতো শীঘ্রই সত্যি হয়ে দাঁড়াবে। মিহু সেদিন ওর মাথায় গাট্টা মেরে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলেছিল, “একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না।তুই আমায় ছেড়ে কোথাও যাবি না।” মিহুর কাছে মনে হচ্ছে সেদিনের ঘটনা। চোখের মধ্যে এখনো ভাসছে ইশির সাথে করা দুষ্টুমী,খুনশুটিগুলো।কোন দিক দিয়ে আপন বোনের চেয়ে কম ছিলো না ওরা।সারাদিন এতিমখানায় বাচ্চাদের সাথে কাটালো ওরা ৫ জন।দিনটা ওদের ভালোই কেটেছে।
নিবরাজ কখনো বাচ্চাদের সাথে সময় কাটায়নি।কিন্তু আজ ওর ভীষণ ভালো লেগেছে।প্রথম প্রথম মনে হয়েছিলো আজকের দিনটা ওর নষ্ট হলো।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আজকের দিনটা সবচেয়ে বেস্ট। অন্য কোন দিন হয়তো এতো ভালো যায়নি।বাচ্চাদের সাথে খেলা করা,একসাথে খাবার খাওয়া,ওদের হাতে গিফট তুলে দেওয়া।অন্যরকম একটা ভালোলাগা ছিলো।আজ এই দিনের ওপর থেকে রাজেরও রুহ্টা উঠে গেছে। সে মনে মনে পণ করছে কখনো এই দিনটা পালন করবে না।যদি করতে হয় তাহলে এতিমখানায় চলে আসবে।
অন্যদিকে আইজান আজ রিমকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছে।অনেক দিন ধরে করবে করবে ভাবছে?কিন্তু মিহুর ভয়ে রিমের সামনে তো দূরে থাক, ওর কথা মনেও আনে নি।আজ মিহু না থাকায় সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।থাকলে নিশ্চয়ই মিহু স্টিক দিয়ে দৌড়ানি দিতো।আইজানকে দেখে যতটা ভদ্র দেখা যায় কিন্তু সে তো তলে তলে টেম্পু না চালিয়ে সোজা বাস চালানো শুরু করে দিলো।রিম প্রথমে রাজি হতে চায়নি।বাপ-রে🥶!!! যা হুমকি দিয়েছে। তাতে ওর গলা শুকিয়ে গেছে। এই বোকা ছেলপটা যে এতো রাগী তা রিম জানতো না।বলছে প্রস্তাব না রাখলে সোজা তুলে নিয়ে কাজী অফিসে যাবে।নিবরাজের মতো করে আইজানও রিমকে কাঁধে তুলে কাজী অফিসের দিকে রওনা দিয়েছিলো।বেচারী রিম ভয় পেয়ে চুপচাপ রাজী হয়ে যায়।কারণ ও ভালো করেই জানে, যে সহজে রাগে না বাই চান্স সে যদি রেগে যায় তাহলে সব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে।
☘️☘️☘️
পরেরদিন……
আজ চৌধুরী বাড়ি চোকের মাতরম। সারা বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। সকালে অন্তুর লাশ বাড়ির সামনের গেইটে পাওয়া গেছে। দেখে মনে হচ্ছে বেচারাকে অনেক কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। সারা শরীরে অগণিত ধারালো অস্ত্রের গভীর জখম।চোখ দুটো উপড়ানো,হাতের আঙুল গুলো কাঁটা।অনেক যত্ন করে কেউ একটা একটা করে দশ আঙুল ফেলে দিয়েছে। পায়ের নখগুলো উপড়ানো।মুখে ছুড়ির আঁচড়ের দাগ।কোমড় থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত এসিড দিয়ে ঝলসানো।গলায় রশির দাগটাও কালো হয়ে ঘা হয়ে গেছে। খুবই বিভৎস একটা লাশ।অনেকে ভয়ে সামনে যাচ্ছে না।মনে হচ্ছে কোন সাইকো তার মনের হিংস্রতা এই লাশের ওপর মিটিয়েছে।বুকের হাড়গুলো পিঠের সাথে লেগে গেছে। সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি এখন কঙ্কালসার হাড্ডিতে পরিণত হয়েছে। কত মাস না খেয়ে আছে তা কেউ বলতে পারবে না। ময়নাতদন্তে খুনীকে চেনার কোন ক্লু পাওয়া যায়নি।তবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে।
অঙ্কু,আন্তর,আবির চৌধুরী কয়েকদিন আগে স্কটল্যান্ড থেকে ফিরেছেন।দাফন কাজ শেষে সবাই বাড়ি ফিরেছে।বাড়ি এসেই অঙ্কু জিনিসপত্র তছনছ করছে।রাগে,ক্ষোভে, দুঃখে সবকিছু ভাঙছে সে।ড্রয়িংরুমে থাকা বুক সেলফ টাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। ডাইনিং টেবিলের যাবতীয় খাবার নিচে ছুঁড়ে মারলো। একটা চেয়ার নিয়ে পরপর কয়েকটা বারি দিতেই টেবিলটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।হাতে থাকা চেয়ারটা দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো। চেয়ারটাও সুন্দর পার্ট পার্ট করে ভেঙে নিচে পরে গেল।বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবাই ভয়ে কাঁপছে। অন্তর চৌধুরী সোফায় চুপ করে বসে আছে। সে জানে তার ছেলেকে এখন কিছুতেই শান্ত করা যাবে না। আবির চৌধুরী অঙ্কুর সামনে গেল।
আবিরঃ অঙ্কু, কুল ডাউন।প্লিজ এমন করিস না।
অঙ্কুঃ আমি কাউকে ছাড়বো না। এর জন্য ওদের পোস্তাতে হবে।ওরা আমার ভাইকে মেরেছে। আমার ভাই যত কষ্ট পেয়েছে তার ১০০ গুণ বেশি কষ্ট আমি ওদের দিবো।(রেগে+চিৎকার করে)
রিকির মা ও অঙ্কুর মা তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।তাদের দেখে অন্তর চৌধুরী ধমকে উঠলেন।
অন্তরঃ তোমরা এখানে কি করছো?যাও উপরে যাও।তোমাদের এখানে থাকতে কে বলেছে?কতবার বলেছি আমরা কথা বলার সময় তোমারা সেখানে থাকবে না।(জোরে ধমক দিয়ে)
দুজন উপরে চলে গেল। কারণ এদেরকে চৌধুরীরা কোন মূল্য দেন না।চৌধুরীদের কাছে মেয়ে মানেই নিজের ইচ্ছে মতো নাচাবো।শুধুমাত্র কিচেনে কাজ করবে।তাদের কোন অধিকার নেই কোন কথা বলার প্লাস শোনার।চুপচাপ ঘরের কাজ করবে।ছেলেদের কথার মাঝে কেন থাকবে?এরা নাকি এই যুগের ছেলে।ঠিক কতটা নিচ মন-মানসিকতার মানুষ হলে তারা ঘরের স্ত্রীকে এমন ভাবতে পারে তা আপনারাই ভেবে নিন।
( বাচ্চার প্রথম শিক্ষাটাই হয় পরিবার থেকে। সেখানে যদি বাচ্চার বাবা-চাচা তার মা-চাচিকে সবসময় হীন ও নিচু নজরে দেখে,তাহলে বাচ্চাটাও সেরকম শেখাবে।অবশ্যই সে শিখতে বাধ্য,কারণ তারা অনুকরণ প্রিয়।বাবা-চাচাকে প্রতিদিন এরকম খারাপ আচারণ করতে দেখে সে বাচ্চা বড় হয়ে কেন অন্য মেয়েকে হেনস্তা করবে না বলুন?ধীরে ধীরে একসময় তারর কাছে নিজের মা-চাচি হয়ে উঠবে অবহেলার ও অসহ্যকর।কারণ সেই মন-মানসিকতা তার পরিবারের সদস্য থেকেই পেয়েছে। তার কাছে কি অন্য মেয়ে কখনো ভারসার হাত পাবে?এখনো পৃথিবীতে অনেক পরিবার আছে যেখানে নারীকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না।তারা ভাবে মেয়ের জন্ম হয়েছে শুধুমাত্র ঘরের কাজ করার জন্য। পুরুষের সেবা ও বাচ্চা লালন-পালন জন্য।দিন-রাত পুরুষের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করার জন্য। আমি জানি এটা অনেকে মানতে চাইবেন না।বলবেন, এটা আগে হতো আপু,কিন্তু এখন হয় না।কারণ বিশ্ব এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। আর নারীরা এখন পুরুষের সাথে সমান তালে চলতে শিখেছে।আপনি যা বললেন তা আদিম যুগে হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। নাহ ভাই, এখনো হয়।এখনো প্রতিদিন গড়ে হাজারটা মেয়ে নিজের স্বামীর কাছে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচারিত হয়।মানতে কষ্ট হলেও এটাই কিন্তু সত্যি। পুরো বিশ্বকে কতটুকু জানি আমরা?ঠিক ততটুকুই যা আমাদের সামনে সোশ্যাল মিডিয়া গুলো তুলে ধরে।কিন্তু সবকিছু তারা কি আদোও তুলে ধরতে পারে? নাহ্ পারে না।কারণ পুরো বিশ্বের আনাচে কানাচে এরকম ঘটনা বহু আছে।যা আমাদের ধরা,ছোঁয়ার অনেক বাইরে।)
অন্তর চৌধুরী গিয়ে অঙ্কুর মাথায় হাত রাখলেন।অঙ্কু ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
অঙ্কুঃ ড্যাড কি হয়ে গেল?আমার ভাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল।আমাকে ভাই বলে কে ডাকবে?কারা করেছে এসব? আমি জানতে চাই। যারা অন্তুকে মেরেছে তাদের একটাকেও আমি ছাড়বো না। আজকের মধ্যে আমি সবকিছু বের করবো।আজ এবং এখন।(কঠিন গলায়)
টি-টেবিলে থাকা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে দেয়াল টিভিতে ছুঁড়ে মারলো। টিভির কাচটা চুর চুর করে ভেঙে শব্দ করে নিচে পরলো।অঙ্কু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।উপরে গিয়ে কাকে জানি কল করতে লাগলো।
☘️☘️☘️
কিছু দিন পর…..
মির্জা কুঠির………
ঐশিক,মির্জা বাড়িতে এসেছে। মিহুর রুমে ঢুকতেই দেখলো ও তৈরি হচ্ছে।
ঐশিকঃ হির বোনু,কোথাও কি যাচ্ছিস?
মিহুঃ আসালামু আলাইকুম বড় ভাইয়ু।তুমি কখন এলে?কেমন আছো?
ঐশিকঃ অলাইকুম আস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো,তুই?
মিহুঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।কখন আসছো?
ঐশিকঃ মাত্রই আসছি।কারো সাথে দেখা না করে সোজা তোর রুমে। কোথায় যাস?
মিহুঃ বলবো না সিক্রেট 😜।
ঐশিকঃ তোর এমন কোন সিক্রেট আছে, যা কিনা আমি জানি না।(ভ্রু কুঁচকে)
মিহুঃ সবই তুমি জানো!!!(অবাক হয়ে)
ঐশিকঃ হুম😏।
মিহুঃ জানলে ভালো।কি জন্য এসেছো তাই বলো?
ঐশিকঃ বুঝে গেছিস তাহলে?
মিহুঃ কোন দরকার ছাড়া তো মিস্টার ঐশিক মির্জা পুলিশের চাকরি রেখে এখানে আসবে না।
ঐশিকঃ তোকে একটা কাজ করতে হবে?
মিহুঃ কি?
ঐশিকঃ সেদিন নিবরাজদের বাসায় গিয়ে আরুহিকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। এর মধ্যে ওর ফ্যামেলীর সবাইকে রাজী করে ফেলছি।কিন্তু ও রাজি হচ্ছে না। তাই ওকে একটু রাজী করাবি বিয়ের জন্য।
মিহুঃ কি-ই-ই-ই 😤?তুমি আর মেয়ে পেলে না।ঐ ঢংগী,দেমাকি মেয়েকে তুমি —-ওহ নো।আর মেয়ে কি নেই দুনিয়াতে?ঐ মেয়েকে পছন্দ করতে হলো।ঐ শাঁকচুন্নিকে আমি একদম সহ্য করতে পারি নাআর তুমি কি না ওকে বিয়ে করবে?আমি কিছুতেই পারবো না।তুমি ওকে বিয়ে করবে না। যদি করো তাহলে আমি তোমার সাথে কখনো কথা বলবো না। এবার ভেবে বলো, আমি আগে নাকি ঐ মেয়ে আগে?
ঐশিকঃ আচ্ছা ঝামেলায় পরলাম তো।আমার লক্ষ্মী,যাদু, টুনটুনি বোনু এমন করিস না।
মিহুঃ তোমাকে ভাবার জন্য দুই দিন সময় দিলাম।ভেবে তারপর বলবে তুমি কাকে চয়েজ করেছো?
ভালো করে ভাবো।ভাবিয়া করিয়ো কাজ,করিয়া ভাবিও না।আমি আসছি।আল্লাহ হাফেজ।
মিহু সাইড ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ঐশীক মূর্তির মতো খাটে বসে আছে।
ঐশিকঃ আমি এখন কি করবো?পরে দেখা যাবে কি করি?বোনুকে ঠিক সামলে নিবো। এখন আমি আর মেহরাব মিলে আরুহিদের বাসায় যাই।ওকে তো পটাতে হবে।নইলে বিয়ে করবো কাকে?
ঐশিক, মেহরাবকে সাথে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।উদ্দেশ্য এখন আরুহিদের বাসা।
☘️☘️☘️
মিহু আজ বেশ সাজগোজ করেছে। করবে না কেন?নিবরাজ ওকে আজ একটা রিসোর্টে দেখা করতে বলেছে।মিহু আজ মনের সব কথা বলে দিবে রাজকে।মিহুর পরনে গাঢ় কফি কালার গাউন।চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।ঠোঁটে গাঢ় ডার্ক লিপস্টিক। কাঁধে গোল্ডেন কালার সাইড ব্যাগ।মুখে হালকা মেকআপ।এক কথায় হালকা-পাতলা পার্টি সাজ যাকে বলে।আজ বাইক নেয়নি।নিবরাজ গাড়ি পাঠিয়েছে। ও বাইরে আসতেই গেইটের সামনে কালো কালার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।দেরী না করে উঠে গেল।
নিবরাজ আজ কফি কালার শার্ট,কালো প্যান্ট,কফি কালার সু জুতা পরেছে।হাতে দামী ব্রান্ডের ঘড়ি। সেটাও কফি কালার।সানগ্লাসের রংটাও ডার্ক কফি।সবাই চকলেট বয় সাজে কিন্তু সে আজ কফি বয় সেজেছে। চুলগুলো হালকা সোজা করে সেট করা। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।মিহু ও রাজ দুজন কথা বলে এক কালার পরেছে।কফি কালারটা নিবরাজের খুব পছন্দ।
রিসোর্টটাকে খুব সুন্দর করে নানা রঙের টিস্যু, জালি কাপড় ও বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সাথে জমকালো লাইটিং।সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছু সময় আগে। চারিদিকে রাতের অন্ধকার ছেয়ে গেছে। নিবরাজ দূর থেকে দেখলো গাড়ি থেকে কফি কালার গাউন পরে একটা মেয়ে নামলো।আবছা অন্ধকার থাকায় মেয়েটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। নিবরাজ সাথে সাথে সকল লাইট অফ করে দিলো।শুধু রাজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানকার ওপরে একটা লাইট জ্বালানো আছে।যার আলো ওর গায়ে পরছে।ওকে ছাড়া এখন সবকিছু ঘুটঘুটে অন্ধকার।নিবরাজ হাতে বিশাল ফুলের তোড়া নিয়ে পেছনে ঘুরে রইলো।ওর মনে হলো মিহু ওর পেছনে এসে দাঁড়ালো। নিবরাজ বলতে শুরু করলো।
নিবরাজঃ গত তিন বছর ধরে তোমাকে ভালোবাসি।আমার স্বপ্ন, কল্পনা, আবেগ সব তোমায় ঘিরে।আমি জানি না তোমার মাঝে কি জাদু আছে?যার কারণে তুমি বারবার ফিরিয়ে দিলেও তোমায় ভুলতে কিংবা ছাড়তে পারিনি।বরং আরো বেশি আপন করে নিয়েছি।ইউ আর মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট লাভ। ইউ আর মাই লাইফ।আই এম রিয়েলি লাভ ইউ।অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায়।কখনো আমায় ছেড়ে চলে যেও না। আমি সহ্য করতে পারবো না। তুমি যদি একবার বলো আমার তাহলে পৃথিবীর আর কিছুই চাইনা তুমি ছাড়া।
নিবরাজ আপন মনে কথাগুলো বলে পেছনে ঘুরতে লাগলো।তার আগেই পেছন থেকে ওর মাথায় জোরে একটা ইটের বারি পরলো।এতটা জোরে ছিলো যে ইট ভেঙে দুই টুকরো হয়ে নিচে পরে গেল। রাজ মাথা ধরে ধপ করে নিচে পরে গেল।মাথা থেকে অঝোর ধারায় রক্ত পরছে।রাজ মাথা ধরে রেখেছে।
নিবরাজঃ কি করলে এটা?
সামনে থাকা মানুষটা কাঁদতে কাঁদতে বললো
— আই আম সরি,রিয়েলি সরি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও।এছাড়া আমার কোন কিছু করার ছিলো না। আমি এটা মোটেও করতে চাইনি।আমার হাত-পা বাঁধা। আমি তোমার ক্ষতি না করলে যে ওরা আমার পরিবারের ক্ষতি করে দিতো। আমি আমার পরিবার হারাতে পারবো না। আমি আমার জন্য ওদের কোন ক্ষতি হতে দিতে পারি না।
নিবরাজ সামনে থাকা সবকিছু ঘোলা দেখছে।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।সবকিছু চোখের সামনে ঘুরছে।
সব অন্ধকার দেখতে লাগলো।হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে। রাজের চোখ দুটো
বন্ধ হয়ে গেল।শত কষ্ট করেও পারলো না চোখ দুটো খোলা রাখতে।নিথর হয়ে পরে রয়েছে দেহটা।দেখে মনে হচ্ছে প্রাণ পাখিটা কিছু সময় আগে চলে গেছে তার গন্তব্যে।রক্তাক্ত দেহটাকে বুকে জরিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো সেই মানুষটা।নিজের পরিবার বাঁচাতে মেরে ফেললো সে রাজকে।চিৎকার করে কাঁদছে সে।আজ তার চোখের বাঁধ ভেঙে গেছে। নিজেকে খুনী মনে হচ্ছে। নিজের কাছের মানুষটাকেই শেষ করে দিলো, সে নিজেই।যে মানুষটাকে আপন করে পেতে চেয়েছিলো সে।আড়ালে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটা দেখছিলো অঙ্কু।
অঙ্কুঃ Thank you. তুমি আমার কাজে সাহায্য করেছো।তোমার ফ্যামেলি আমি ছেড়ে দিবো।তাদের তুমি সহিসালামত বাড়িতে পাবে।
কথাটা বলে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো অঙ্কু।আরো কাজ বাকি আছে তো। এখনো রাজের মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে আরেকজন।সে এক দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনরবত টপটপ করে পানি পরছে।কি করলো সে আজ?
অন্যদিকে……..
মেহরাব ও ঐশিক গাড়ি নিয়ে আরুহিদের বাসায় যাচ্ছিলো।কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে একটা বড় ট্রাক পেছন থেকে ওদের গাড়ি ধাক্কা দিলো।পুরো গাড়ি পল্টি খেয়ে আগুন ধরে যায়।দুই ভাই আগেই লাফ দিয়ে নেমে যায়।তবে শেষ রক্ষা হয় না।ঐশিক একটা গাছের সাথে ঢুঁ খেয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়।মেহরাব লাফ দেওয়ার সময় এক হাত ও এক পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।স্থানীয়রা ওদের উদ্ধার করে হসপিটালে নিয়ে যায়।ওদের হসপিটালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানায় ঐশিক কোমায় চলে গেছে। আর মেহরাবের এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে।
এক সপ্তাহ পর…………
#চলবে