#বোনু
#সিজন_০২
#Last_Part
#Writer_NOVA
একে একে কাজী সাহেব ৫ টা বিয়ে পরালেন।সবার প্রথমে মিহু ও রাজের।মিহু কবুল বলার সময় অনেক কাঁদছে। বিদায়ের পালা ঘনিয়ে এলো।মিহুকে কিছুতেই গাড়িতে উঠানো যাচ্ছে না। ও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কিছুতেই যাবে না। এখানো কেঁদেই চলেছে। রিমও কাঁদছে ওর বাবা-মাকে ধরে।
আইজানঃ ভাই এনাকোন্ডা কাঁদতেও পারে?এতো চোখের পানি রাখছিলো কই?নদী বানায় দিতাছে তো।
নিবরাজঃ চুপ কর।
মিহুঃ বাপি আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না। ওদের চলে যেতে বলো।আমার একা একা ভালো লাগবে না।
ফাহিমঃ লক্ষ্মী মা আমার।পাগলামি করিস না।
মিহুঃ আমি যাবো না। মাম্মিই——
মিহু ওর মাম্মিকে জড়িয়ে ধরলো।ওর মা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।তার ঘর মাতিয়ে রাখার সেই দুষ্ট মেয়েটা আজ তাদের ছেড়ে চলে যাবে।
লুবনাঃ তুই চলে গেলে বাড়িতে কে দুষ্টুমি করবে?আমি সারাদিন কাকে বকবো?আমার যে ভালো লাগবে না। আমাদের বাড়িটা খালি করে দিয়ে চলে যাচ্ছিস।
মিহু সবার থেকে বিদায় নিলো।মেহরাব,ঐশিক,
রিশিক,মামা,মামি ওর বন্ধুদের সবাইকে ধরে অনেক কাদলো।তিন ভাইতো কিছুক্ষণ পরপর চোখ মুছছে।মিহুকে জোর করেও নিতে পারছিলো না।রিশিক কোলে করে ওকে নেওয়ার সময় মিহু ইচ্ছে মতো হাত-পা ছুড়ছিলো।অনেক কষ্ট করে মিহুকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো রিশিক।ফাহিম মির্জা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি ছেড়ে দিলো।মিহু গাড়ির কাচ হাত দিয়ে বারি মেরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে।
নিবরাজঃ কি করছো? হাত কেটে যাবে তো।
মিহুঃ আমি যাবো না। আমাকে আমার বাপির কাছে যেতে দিন।
কাঁদতে কাঁদতে নিবরাজের কাঁধে অজ্ঞান হয়ে গেছে মিহু।তাই তাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তিন ভাইয়ের মন ভার হয়ে রয়েছে।আর ফাহিম মির্জাতো নিজের কলিজাটাকে ছিঁড়ে অন্যের হাতে তুলে দিলো।নির্বাক হয়ে বসে রয়েছে সে।চোখ দিয়ে তার নিরবে পানি পরছে।আইজান ও রিম পরের গাড়িতে আসছে।রিমও কাঁদছে তবে মিহুর মতো এতো নয়।মেহরাব,ঐশিক,
রিশিক যার যার বউ নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
খান ভীলা…….
রোজনি ও আইরিন আহমেদ নতুন দুই বউকে বরণ করে নিলো।বর্তমানে মিহু ও রিম সোফায় বসে আছে। গাড়ি থেকে নেমে মিহুর জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।আশেপাশে তেমন কোন মানুষ না দেখে রিম বললো।
রিমঃ বাপরে!!! কত বড় বাড়ি?
মিহুঃ ঐ ছেমড়ি আস্তে কথা কো।কেউ শুনলে খারাপ বলবো।
রিমঃ তুই আগে আসছিলি?
মিহুঃ ২/৩ বার আসছিলাম।
রিমঃ আমাদের শাশুড়ী কেমন রে?আমি তো দেখিও নাই।
মিহুঃ খুব ভালো। চুপ কর কে জানি আসছে।
আধ ঘন্টা পর ওদেরকে আইভি বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে এলো।মিহু অনেকখন ধরে ঘোমটা টেনে বসে আছে।কিন্তু রাজের আসার খবরি নেই। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে মিহু একটু নড়েচড়ে বসলো।ওর বুকের বাপাশটা সমান তালে ঢিপঢিপ করছে।কাঁপা কাপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাজকে সালাম করতে নিলে খোপ করে ওর হাত ধরে ফেললো।
নিবরাজঃ করছোটা কি?
মিহুঃ সালাম করছি।(ভয়ে ভয়ে)
নিবরাজঃ তোমার স্থান পায়ে নয় আমার বুকে।
রাজ মিহুকে জড়িয়ে ধরলো। মিহু অনেকটা কেঁপে উঠলো। ওর অনেকটা অস্বস্তি লাগছে। যদিও এর আগে রাজ ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো।তারপরেও কিরকম কিরকম জানি ফিলিংস এসে উঁকি ঝুঁকি মারছে।
নিবরাজঃ এখনো এটা পরে কি করে আছো?যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
মিহু ফ্রেশ হতে চলে গেল। কফি কালারের একটা থ্রি পিস পরে বেরিয়ে আসলো।বেরিয়ে রাজকে কোথাও দেখলো না।বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মিষ্টি একটা ফুলের ঘ্রাণ আসছে।মিহু শ্বাস টেনে তা অনুভব করলো।সম্ভবত হাসনাহেনা ফুল হবে।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে কাঁধে তার,থুঁতনি রাখলো।ঘাড়ে তার গরম নিশ্বাস পরছে। মিহু জানে এটা কে।তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।রাজের পরনে টাউজার ও টি-শার্ট।
নিবরাজঃ বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে?
মিহুঃ হুম
নিবরাজঃ মন খারাপ করো না। আমরা আগামীকাল আবার যাবো ঐ বাড়িতে।
মিহু চুপ হয়ে গেলো। রাজ নিজের থুতনি উঠিয়ে মিহুর চুলে মুখ গুঁজলো।মিহু কিছুটা কেঁপে উঠলো। রাজের ধ্যান ওর থেকে সরানোর জন্য বললো।
মিহুঃ দেখুন চাঁদটা কত সুন্দর? মনে হচ্ছে পূর্ণিমা।কতদিন পর দেখছি।গ্রামে থাকতে দেখতে পেতাম।শহরে এসে চাঁদ দেখার সময় হয়ে উঠে না।
নিবরাজঃ তার থেকে আমার চাঁদ বেশি সুন্দর।
মিহুঃ তাই বুঝি🤨।
নিবরাজঃ হুম,অবশেষে তুমি আমার হলে।
মিহুঃ আমিতো আপনারি ছিলাম।
নিবরাজঃ আপনি নয় তুমি।
মিহুঃ ঠিক আছে আমার নিবরাজ চিলি মসলা।
নিবরাজঃ আমার সুইট পাগলী। (গাল টেনে)
হুট করে রাজ মিহুকে ছেড়ে ওর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো।হাতটা বাড়িয়ে মিহুর বাম হাতের অনামিকা আঙুলে একটা ডায়মন্ডের আংটি পরিয়ে দিলো।
মিহুঃ ওয়াও,কত সুন্দর!!!!
নিবরাজঃ তোমার থেকে বেশি নয়।
মিহুঃ হ্যাঁ,আমার থেকে বেশি কোন কিছুই সুন্দর নয়।সবকিছু এখন আমার থেকে তুচ্ছ।
নিবরাজঃ হুম।
নিবরাজ উঠে দাঁড়িয়ে মিহুর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। যাতে কখনো ওকে ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে।মিহুর ভয়টা অনেকটা কেটে গেছে। সে রাজের বুকের বা পাশটায় নিজের কান রাখলো।তার কাছে মনে হচ্ছে রাজের হৃৎপিণ্ডের হৃদছন্দটা বারবার ওর নাম নিচ্ছে। যদিও এটা ওর ধরণা।বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সেও রাজকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো।
☘️☘️☘️
১৭ বছর পর…….
খান ভীলার সামনের বাগানে তিনটা ছেলে ও একটা মেয়ে খেলছে।অনেকক্ষণ ধরে মেয়েটা ছেলেগুলোকে ধরতে চেষ্টা করছে।কিন্তু কোন ছেলেকে ধরতে পারছে না।
আইভানঃ আমাকে ধরতে পারবি না বোনু।
মেহরাজঃ পারলে আমাকে ধরে দেখা।
আইহানঃ এতটুকু তো হয়রান হয়ে গেলি।
মেহরাজঃ আস্তে পরে গিয়ে ব্যাথা পাবি তো।
মাহিরাঃ ভাইয়ুরা, আমি তোমাদের ধরেই ছাড়বো।
আইভানঃ এতো সহজ না।
মাহিরাঃ আউচ্। আহ্ পায়ে ব্যাথা পেয়েছি।
মেহরাজঃ কি হয়েছে বোনু?
ছেলেগুলো দৌড়ে তাদের বোনের কাছে ছুটে এলো।মেয়েটা পা ধরে নিচে বসে রয়েছে।
আইহানঃ বোনু, তুই ঠিক আছিস?
মাহিরাঃ আমার পা কেটে গেছে।
আইভানঃ কিভাবে কেটে গেলো?
মাহিরাঃ আরেকবার কেটে দেখাবো🤬।এ্যাঁ,এ্যাঁ,এ্যাঁ, অনেক ব্যাথা করছে।
মেহরাজঃ দেখি সর তো।সামান্য পা কেটে গিয়েছে। তার জন্য ছেচকাদুনে কেঁদে বন্যা বানিয়ে ফেলছে।
আইভানঃ আয় তোকে কোলে করে নিয়ে যাই।
আইভান, মাহিরাকে কোলে করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।মাহিকে কোলে করে আনতে দেখে রিম ও মিহু এগিয়ে এসলো।
মিহুঃ কি হয়েছে ওর?
রিমঃ পা কাটলো কি করে?
মেহরাজঃ ওকেই জিজ্ঞাসা করো।ব্যাঙের মতো লাফানো ছাড়াতো আর কিছু পারে না।এতো করে সাবধান করলাম পরে গিয়ে ব্যাথা পাবি।আমার কথা কি শুনলো।
মিহুঃ মেহরাজ,এটা কি ধরনের কথা?চুপ কর তুই। রিম ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয়।
রিম বক্স নিয়ে এলো।মাহিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে পা টি-টেবিলে তুলে দিলো আইহান।
মেহরাজঃ দাও ছোট মা,আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।আগেই বলেছিলাম পরে যাবে।আমার কথাতো শুনলো না।এবার বোঝ মজা।
মেহরাজ ওর বোনের পায়ে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দিচ্ছে। হালকা করে ফুঁ দিয়ে আলতো হাতে কাটা স্থানে ঔষধ লাগাচ্ছে। মনে হচ্ছে ব্যাথাটা মাহি নয় ওর ভাই পেয়েছে। মিহু মুগ্ধ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহরাবও ঠিক এমনভাবে ওর খেয়াল রাখতো।
নিবরাজ ও মেহরুনের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম মেহরাজ খান। মেহরুনের থেকে মেহ এবং নিবরাজের থেকে রাজ নিয়ে দুটো মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছে মেহরাজ।বংশের প্রথম ছেলে বলে কথা।আর মেয়ের নাম মাহিরা খান।রিম ও আইজানের জমজ দুই ছেলে।আইভান খান ও আইহান খান।এখানে আশ্চর্য একটা ঘটনা আছে।সেটা হলো মিহুর যেমন তিন ভাই ওকে আগলে রেখেছে।তেমনি মাহিরাকেও ওর তিন ভাই আগলে রাখে।মিহুর একটা আপন ভাই আর দুইটা মামাতো ভাই ছিলো।আর মাহির একটা আপন ভাই দুইটা চাচাতো ভাই। তবে মাহিরাও ওর মায়ের মতো সবাইকে বলে ওর তিন ভাই।সেই ছোট বেলা থেকে তিন ভাইয়ের বোনের দিকে কেউ ভুলেও তাকাতে পারে না।তাকালেই নিজের বিপদ ডেকে আনলো।মেহরাজের বয়স ১৫ বছর সে এবার দশম শ্রেণিতে উঠেছে ,আইভান ও আইহানের বয়স ১৩ বছর।তারা আষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।মাহিরার বয়স ১২। সে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে।
☘️☘️☘️
রাতে……..
সবাই একসাথে খাবার টেবিলে খেতে বসেছে।আইজান ও নিবরাজ এখন কোম্পানি ও কলেজ চালায়।দুজনের বাবা দুই ছেলের হাতে সব তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে আছে।রাজ ও জানের বাবা-মা বর্তমানে ওমরা হজ্জ করতে গিয়েছে। যার কারণে বাসাটা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
নিবরাজঃ মেহরাজ,তুমি আজ স্কুলে কি করেছো?
মেহরাজঃ কেন পাপা?(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
আইজানঃ ভাই, কিছু জিজ্ঞেস করেছে।উত্তর দে।
মেহরাজঃ কিছুই তো করিনি।
নিবরাজঃ কিছু না করলে একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে হসপিটালে এডমিট কে করেছে?(রেগে)
আইহানঃ ওহ, এই ব্যাপার বড় পাপা।আমি ভেবেছিলাম কি না কি করেছে ভাই।
মিহুঃ কি হয়েছে? কি করেছে ওরা?
আইভানঃ বেশি কিছু করিনি।একটা কলেজের ছেলে আজ বোনুর হাত ধরেছিলো।তাই ওকে আমরা তিন ভাই মিলে শায়েস্তা করেছি।তবে আফসোস একটা রয়ে গেছে। ওর হাতটা যদি কেটে ফেলে দিতে পারতাম তাহলে আফসোস মিটতো।
রিমঃ কলেজের ছাত্রকে তোরা পুঁচকে ছেলেরা মিলে মেরেছিস😲?(অবাক হয়ে)
মেহরাজঃ তো কি করবো?কোলে তুলে নাচবো।ওর সাহস কি করে হয় আমার বোনুর হাত ধরার।
মিহুঃ এই না হলে আমার ছেলেরা।একদম ঠিক করেছিস আমার জাদু ছেলেরা।গুড বয়স্।
আইহানঃ Thank you বড়মা😘।
নিবরাজঃ তোমার আশকারা পেয়ে ছেলেগুলো এমন হয়েছে। (রেগে)
মিহুঃ ওরা ভুল কিছু করেনি।
আইজানঃ ভুল কিভাবে করবে বলো?তোমরা দুজন মিলে আদরে বাদড় বানাচ্ছো।
রিমঃ ভালো কিছু করলে তোমাদের ক্রেডিট আর খারাপ করলে আমাদের।
মিহুঃ মাহি,তোর স্টিক কোথায়?
মাহিরাঃ নিতে ভুলে গেছি মাম্মি।
মিহুঃ এটা ভুলিস কি করে? সবসময় নিজের কাছে রাখবি।স্টিকটা আমি তোকে দিয়েছি।তুই আবার তোর মেয়েকে দিবি।তোর মেয়ে আবার তার মেয়েকে দিবে।এভাবে সবার হাতে এটা থাকবে।
আইজানঃ থাকবেই তো,রাজকীয় তলোয়ার কিনা।সেটা বংশ পরম্পরায় সবার হাতে থাকতে হবে।রক্ষাকবচ বলে কথা।(মুখ ভেংচিয়ে)
রিমঃ তুমি চুপ করবে।(রেগে)
মিহুঃ তুই তো দেখছি আমার মান-সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিবি মাহি?
মাহিরাঃ কেন🙄?
মিহুঃ তুই আমার মেয়ে হয়ে ঐ ছেলেকে ছেড়ে দিলি।চাচার মতো সবকিছুতে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করিস কেন?
আইজানঃ 🤬🤬
মিহুঃ নিজের ম্যাটার নিজে সলভ করতে পারিস না। কেউ তোর সাথে অসভ্যতামী করলে সোজা নাক বরাবর ঘুষি মারবি।নয়তো স্টিক দিয়ে মাথা ফাটাবি।বাকিটা তোর পাপা আর ভাইরা সামলাবে।নিজেকে রক্ষা করতে শিখতে হবে তো।
আইজানঃ যেমন মা তেমন মেয়ে 🤪।
আইভানঃ তুমি চিন্তা করো না বড় মা।আমরা থাকতে বোনুর গায়ে একটা ফুলের টোকাও পরবে না।
নিবরাজঃ স্কুলে গিয়ে পড়ালেখাও করিস।গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরলে তো চলবে না।
মেহরাজঃ আমরা পড়ালেখাও করি, বোনুকে দেখেও রাখি।
আইজানঃ সাত রাজার ধন যে চোখে চোখে রাখতে হবে?
তিন ভাইঃ তার থেকেও কম নয় আমাদের বোনু।
একসাথে তিন ভাই রেগে+চেচিয়ে কথাটা বললো।
☘️☘️☘️
পরের দিন…..
চার ভাই-বোন তৈরি হয়েছে স্কুলে যাবে বলে।এমন সময় আইভান এসে রিমের কাছে টাকা চাইছে।
আইভানঃ মাম্মি আমার টিফিনের টাকা দাও।
রিমঃ মাত্র না নিয়ে গেলি।
আইভানঃ আমি আবার কখন নিলাম?তুমি আইহানকে দিয়েছো।
রিমঃ আমিতো দুজনকেই দিলাম। দুজন দুবারে এসে নিয়ে গেলি।
আইভানঃ নিশ্চয়ই এটা আইহানের কাজ।ওকে আমি দেখে নিবো।
আইহানঃ হি হি 😁ভাইয়া।আমি আজ ডাবল টাকা পেয়েছি।
আইভানঃ তুই একবার দাঁড়া। দেখ আমি কি করি?
দুই ভাই দৌড়ে বাইরে চলে গেল। কিছু সময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর মেহরাজের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল।তারপর চারজন মিলে গাড়িতে করে স্কুলে চলে গেল।
রিমঃ নিজের ছেলেদের এখনো আমি চিনতে পারি না।
মিহুঃ এক কাজ কর,কপালে খোদাই করে ওদের নাম লিখে দে।তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।
রিমঃ আইডিয়াটা খারাপ না।
মিহুঃ জানিস রিম,এখন বুঝতে পারি আমার ভাইয়ু,বাপি ও মাম্মিকে কত জ্বালিয়েছি। মেয়েটা পুরো আমার মতো আর ছেলেটা ওর বাবার মতো।
রিমঃ আয় বোইন কোলে আয়।তুই যে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছিস সেটাই অনেক।
মিহুঃ মেয়েটাকে নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই। ওকে আমার মতো ওর তিন ভাই আগলে রাখবে।কিন্তু ছেলেটার যা রাগ।ও রেগে গেলে ওর সামনে যেতেই আমার ভয় করে।
রিমঃ দেখিস ঠিক হয়ে যাবে।
মিহুঃ তাই যেনো হয়।অনেক দিন ধরে ভাইয়ুদের সাথে কথা হয় না।ভাবছি আজ কথা বলবো।
মেহরাব বর্তমানে বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত।ঐশিক পুলিশের চাকরি নিয়ে থাকে।রিশিক দেশের বাইরে পরিবার নিয়ে থাকে।মাঝে মাঝে তিন ভাই এসে ওদের বোনকে দেখে যায়।মেহরাবের দুই মেয়ে,মেহেক ও মৌ।ঐশিকের এক মেয়ে ঐশী মির্জা।রিশিকের এক ছেলে রশ্মিক ও এক মেয়ে রশ্মিকা।মিহুর ফ্রেন্ডদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত।মাসে দুএকবার কথা হয়।
☘️☘️☘️
দুপুরে……..
আজ নিবরাজ ও আইজান তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে এসেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।তখনি মেহরাজ বাড়িতে ঢুকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। চোখ, মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে কোন ভেজাল হয়েছে।
আইজানঃ ভাই, মেহরাজ আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরলো।
নিবরাজঃ দেখে মনে হলো প্রচুর রেগে আছে।
আইজানঃ দেখ কার সাথে ঝামেলা করে এসেছে।
নিবরাজঃ আমার ছেলে কারো সাথে অকারণে ঝামেলা করে না।সেটা আমি জানি।নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।
মেহরাজ রুমে ঢুকেই ভাংচুর করা শুরু করে দিয়েছে। বাবার কার্বন কপি তো।স্কুলে আজ মাহিকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। কিছুখন পর আইভান,আইহান ও মাহিরা বাড়িতে ঢুকলো।দুই ভাই চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। উপরে যাওয়ার সাহস করছে না। মাহি ভয়ে সোফায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে। রিম ও মিহু কিচেনে রান্না করছিলো।ভাংচুরের আওয়াজ পেয়ে জলদি করে ড্রয়িং রুমে চলে এলো।
রিমঃ মেহরাজ,এতো রেগে গেছে কেন?
নিবরাজঃ আমরা দুই ভাই জানি না।
মিহুঃ আইভান,আইহান ঘটনা কি?
আইজানঃ কি হয়েছে স্কুলে?
আইভানঃ পাপা,বোনু আজ ভাইয়ের এক বন্ধুকে স্টিক নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছে। তা নিয়ে ভাই ও তার বন্ধুদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
মিহুঃ মাহি যাও,গিয়ে ভাইয়ের রাগ কমাও।
মাহিরাঃ আমি যাবো না।বড় ভাইয়ু আমাকে মারবে।রেগে গেলে আমার ভাইয়ুকে অনেক ভয় করে।
মিহুঃ আমাকে দেখলে রাগ আরো বেড়ে যাবে।তুই তো জানিস তোর ভাই অবিকল তোর পাপার মতো।যার সাথে রাগ করে সেই শুধু তাকে শান্ত করতে পারে।
নিবরাজঃ🤬🤬
আইজানঃ ওমন করে তাকানোর কিছু নেই ভাই। যা সত্যি তাই বলেছে।
রিমঃ মাহি তুই যা।আমরা পেছনে পেছনে আসছি।
মাহিরা গুটি গুটি পায়ে উপরে উঠে গেলো।পেছন পেছন বাকি সবাই। মেহরাজের রুমে ঢুকে ওর সামনে গিয়ে বললো।
মাহিরাঃ বড় ভাইয়ু সরি।
মেহরাজঃ যা,এখান থেকে।(রেগে)
মাহিরাঃ আমার কথাটা শোনো।
মেহরাজঃ তোকে যেতে বলছি।
নিবরাজঃ মেহরাজ, আগে তোর বোনের কথাটা তো শোন।তারপর চলে যাবে।
মিহুঃ ছেলেকে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। অথচ ১৭ বছর আগে এমনি একদিন আমিও বলেছিলাম আমার কথাটা শোনো।তখন কিন্তু তুমি আমার কথা শুনোনি।বরং আমার গলা টিপে ধরেছিলে।
বড় ভাইয়ুকে নিয়ে তুমি সন্দেহ করেছিলে।আমি কিন্তু সেই ঘটনা ভুলি না।কারণ তারপর থেকে আমি তোমাকে ভয় পেতাম।
নিবরাজঃ 😐😐
মাহিরাঃ তোমার বন্ধু আজ আমার কাছে এসে তোমাদের তিনজনের নামে আজেবাজে কথা বলেছে।মিথ্যে কথাগুলো আমার একটুও সহ্য হয়নি।আমার ভাইয়ুদের নিয়ে কেউ খারাপ কথা বলবে আর আমি তা মুখ বুজে সহ্য করবো।তা কি হয় বলো?প্লিজ তুমি রাগ করো না।
মাহিরা কাঁদতে শুরু করলো। মেহরাজ ওর সাথে রাগ করলেই ওর খারাপ লাগে।খারাপ লাগা থেকে কান্না আসে।আর মিহুর তিন ভাইয়ের মতোই মাহিরার তিন ভাই ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারে না। কান্নার শব্দ পেয়ে মেহরাজ ওর বোনের দিকে ঘুরলো।এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
মেহরাজঃ একদম কাঁদবি না। তোর কান্না আমরা সহ্য করতে পারি না।
মাহিরাঃ তাহলে তুমি আমার সাথে রাগ করে থাকবে না।
মেহরাজঃ ঠিক আছে থাকবো না। চোখ মোছ।
আইভানঃ বোনু কাঁদিস না।
আইহানঃ কাঁদতে মানা করেছি।আবার যদি কাঁদিস তাহলে আমরা তিন ভাইয়ের কেউ তোর সাথে কথা বলবো না।
মাহিরাঃ আচ্ছা কাঁদবো না।
আইভানঃ তাহলে সুন্দর করে একটা হাসি দে।
মাহিরা চোখ মুছে একটা হাসি দিলো।তিন ভাই ওকে জড়িয়ে ধরলো। ওদের চারজনকে এভাবে দেখে নিবরাজ, মিহু,রিম,আইজান একটা প্রশান্তির হাসি দিলো।
মিহুঃ ওরা যেনো সারাজীবন এমন থাকে। আমার আর কিছু চাই না।
রিমঃ আমারও।
আইজানঃ চলো খেতে দিবে।আমার খুদা লেগেছে তো।
রিমঃ নিজেদেরটা বেড়ে খাও।
আইজানঃ ছেলে-মেয়ে আসার পর থেকে আমাদের দিকে নজরও দেও না।
মিহুঃ তার কোন প্রয়োজন মনে করি না। সবার প্রথমে আমাদের ছেলে-মেয়ে। ওদের সাথে নিজেদের তুলনা করবে না।
নিবরাজঃ হয়েছে, তোমারা আর ঝগড়া করো না।নিচে চলো।
রিমঃ বাচ্চারা খেতে চলে এসো।
চার ভাই-বোন একসাথে বললো –আসছি।
এভাবেই হাসি, আনন্দে কাটতে লাগলো আরেক ভাই-বোনের জীবন। পরিবারকে সাথে নিয়ে তারা আল্লাহর রহমতে বেশ ভালো আছে। মাঝে মাঝে মেহরাজ খুব রেগে যায়।যার হাত থেকে বাকি দুই ভাই তাদের বোনকে বাঁচিয়ে দেয়।কিন্তু তিন ভাই নিজের সবটুকু দিয়ে বোনকে আগলে রাখে।যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক এমন ভাই-বোনের ভালোবাসা।এই সম্পর্ক যে আল্লাহ নিজে সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমার মনে হয় না ভাই-বোনের ভালোবাসার সম্পর্ক থেকে বড় কিছু আছে।বাবা-মায়ের পরেই তো এই পবিত্র সম্পর্ক।
__________________(সমাপ্ত)_________________
❤️NOVA❤️