ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-১৬+১৭

0
2374

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 16
writer : Mohona

.

নিশা : ভেবেছিলাম তুই কিচেনে চিনি খুজে পাসনি…
মনি : ইশ। এই নাও কফি।
বহ্নি : থ্যাংক ইউ গো নয়নমনি।
নিশা : বাবাগো বাবা … ২দিন যেতে না যেতেই বরের বোল বলছো!!!
বহ্নি : বুঝলাম না মামনি…
নিশা : এই যে ওকে নয়ন মনি ডাকছো।
মনি : মামনি… ভাবি আমাকে আগে থেকেই নয়নমনি ডাকে। মনে হয় ভাবির সাথে ভাইয়ার দেখা হওয়ারও আগে থেকে।
নিশা : যাক অবশেষে দহন-বহ্নির মধ্যে ১টা মিল পাওয়া গেলো। দুজনই মনিকে নয়নমনি ডাকে।
বলেই ৩জন হাসতে লাগলো।

নিশা : আচ্ছা শোন বহ্নি দেখ আমার ছেলের কথা আর তোকে নতুন করে কি বলবো? তুইতো অনেকটাই জানিস… যেটা বলবো সেটা হলো এই যে তুই এখন দহনের বউ। এটা তোর সংসার আর দহন তোর স্বামী। ওর ওপর কেবল তোর অধিকার। ও কখন বাসা থেকে বের হবে , কখন বাসায় ঢুকবে এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির কাজ আর রান্নাবান্না নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা… বনেদি পরিবার নয় আমাদের। তুই তোর লেখাপড়াটা ঠিক রাখ। আর আমার ছেলের সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক কর…
বহ্নি : …
নিশা : অবাক হলি তো যে আমি কিভাবে জানি?
বহ্নি : …
নিশা : ছেলেটা তো আমার । তাই বুঝি। শোন মেয়েদের ঘর-বর … ২টাই সামলে রাখতে হয়। বুঝেছিস?
বহ্নি : হামম।
নিশা : কতো রাত হয়ে গিয়েছে। যা গিয়ে ঘুমিয়ে পর…
মনি : আমি আরো কথা বলবো…. তুমিই তো সব বললা…
নিশা : কালকে আবার বলিস। কালকে থেকে তোর ভাবির আর ঝামেলা নেই। এই কদিন ধরে অনেক ধকল গিয়েছে। আজকে আরাম করতে দে। কালকে থেকে ওর মাথা খাস…
মনি : হুহ।। গুডি গুডি নাইট মিষ্টিভাবি…
বহ্নি : গুড নাইট মিষ্টি ননদিনী…

.

বহ্নি দরজায় নক করলো।
দহন : কাম ইন…
বহ্নি ভেতরে ঢুকলো।
দহন : ইটস ইউ?
বহ্নি : হামমম।
দহন : হায়রে। যাইহোক। তুমি ঘুমাও আমি স্টাডিতে যাচ্ছি…
বহ্নি : স্টাডিতে? এখন? ঘুমাবেননা আই মিন ঘুমাবেনা?
দহন : হামম। ঘুমাবো। একটু কাজ আছে। আসলে ৫-৬দিন ধরে তো অফিস যাচ্ছিনা। তাই এতো কাজ জমে পরেছে। তাই একটু কাজ করবো।। তুমি ঘুমিয়ে পরো।
বহ্নি : তোমাকে তাহলে চা বা কফি করে দিবো?
দহন : নো নো। নট নিডেড।
বহ্নি : কতোক্ষন না কতোক্ষন লাগে… আমি চা করে দেই তবে…
দহন ধমক দিয়ে
বলল : না করেছি না একবার…? বাংলা ভাষা বোঝোনা? লিসেন আমার ১কথা বারবার বলা তো দূরের কথা ২বার বলতেই ভালো লাগেনা। ইভেন আমি বলিও না। নো মিনস নো। গট ইট?
বহ্নি কেপে উঠলো।
দহন : ডু ইউ গট ইট ?
বহ্নি : হামম।
দহন : গুড।।। ঘুমাও। গুড নাইট।
বলেই দহন বেরিয়ে গেলো।

বহ্নি : কি অদ্ভুদ মানুষরে বাবা… শুধুশুধুই রাগ করে। আমি তো ভালোর জন্যই বলছিলাম।
দহন : অতো ভালোর জন্য বলতে হবেনা।
বহ্নি চমকে উঠলো।
বহ্নি : তততুমি না চলে গেলে…?
দহন : কেন চলে গেলে কি আসা যায়না?
বহ্নি : আমি এটা কখন বললাম?
দহন : এইমাত্র।
বলেই দহন মোবাইল নিয়ে হনহন করে চলে গেলো।
বহ্নি : ঘুমিয়েই পরি আমি…

.

সকালে…
নিশা রুম থেকে কিচেনে যাওয়ার সময় স্টাডিরুমের জানালার ফাক দিয়ে দহনের মাথা দেখতে পেলো।
নিশা : দহন?
নিশা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানালার সামনে গেলো। দেখলো হ্যা দহনই। রাতে এখানে বসে ড্রিংকস করে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে। নিশার রাগ উঠলো। রেগে আগুন হয়ে কিচেনে গেলো। দেখলো বহ্নি রান্না করছে।
নিশা : বলি তোকে কি আমি রাধুনি করে এনেছি নাকি ছেলের বউ করে শুনি?
বহ্নি : না আসলে মামনি মনির মুখে শুনেছি যে বাবা-দহন … কুকদের হাতের রান্না খেতে চায়না। তুমি রান্না করো। তাই ভাবলাম আজকে ব্রেকফাস্টটা আমিই বানিয়ে ফেলি…
নিশা : আমিই বানিয়ে ফেলি… 😒… দহন কোথায় ঘুমিয়েছিলো? মিথ্যা বলবিনা … আমি দেখেছি ও স্টাডিতে।
বহ্নি : মিথ্যা বলবো কেন মামনি? ও স্টাডিতে কোনো অফিশিয়াল কাজ করতে গিয়েছিলো। বলল যে ৪-৫দিন ধরে অফিস যায়না। তাই অনেক কাজ জমে আছে। তাই কাজ করতে গিয়েছে।
নিশা : তোমার জামাই কাজ করতে যায়নি গো সুন্দরি। অকাজ করতে গিয়েছিলো।
বহ্নি : মানে?
নিশা : চলো দেখবে চলো…
বলেই নিশা বহ্নিকে স্টাডিতে নিয়ে গেলো।
নিশা : সী… কতো সুন্দর কাজ করেছে…
বহ্নি : …
নিশা : এখন তো বেডরুমে তুই আছিস। তাই স্টাডিতে এসে গিলেছে।

.

একটুপর…
দহনের ঘুম ভাঙলো। মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে। কারন প্রায় ৩দিনপর ড্রিংকস করেছে … দহন রুমে গেলো। দেখলো বহ্নি নেই ।
দহন : যাক ভালোই হয়েছে যে ও নেই।
দহন ফ্রেশ হতে গেলো। বেরিয়ে দেখে বহ্নি লেবুর পানি নিয়ে দারিয়ে আছে… সাথে হালকা খাবার।
দহন : গুড মর্নিং…
বহ্নি : এগুলো খেয়ে নাও তারাতারি। ভালো লাগবে।
দহন : রিটার্ন উইশ করলানা?
বহ্নি : …
দহন : এগুলো খেলে কার ভালো লাগবে? 😁।
বহ্নি : আমার । কারন রাতে তো আমি ড্রিংকস করেছি…
দহন : …
বহ্নি : ফিনিশ করো।
দহন বসে খেতে লাগলো।
বহ্নি : আজকে রাত থেকে রুমেই ড্রিংকস করো প্লিজ। স্টাডিতে যাওয়ার দরকার নেই। না করবোনা আমি…
দহন : রুমেই করতাম। বাট রুমটা এখন জাস্ট আমার একারনা। এটা ভেবেই স্টাডিতে গিয়েছিলাম।
বহ্নি : যেতে হবেনা কোথাও…
দহন : এক্সকিউজ মি … তুমি কি আমাকে রাগ দেখাচ্ছো?
বহ্নি : দেখালেই বা সমস্যা কোথাও। ১জন বন্ধু কি অন্য বন্ধুকে এতোটুকু বলতে পারোনা।
দহন : ভালো ছাত্রীদের না বিয়ে করা ঠিকনা। আর যদি ভালো ছাত্রীটা ভুলেও ঠান্ডা স্বভাবের হয় তবে তো আরো বিয়ে করা উচিত নয়। কারন তারা তো আর অন্যান্যদের মতো কোমড় বেধে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করবেনা। তারা লজিক দিয়ে ঝগড়া করে। এমন ১টা লজিক ঢুকিয়ে দিবে যে বেচারা বর রা হা হয়ে থাকে। আমার মতো …
বহ্নি ফিক করে হেসে দিলো।
দহন : আচ্ছা তুমি সবসময় এমন ছোটছোট হাসি দাও কেন? তোমার কি জোরে জোরে গলা ফাটিয়ে হাসতে মন চায়না? এভাবে হেসে মন ভরে?
বহ্নি : আমার না হয় মন নাইবা ভরলো। আমিতো সবসময় এভাবেই হাসি । কিন্তু তুমি তো আগে হাহা করে হাসতে। আর এখনতো হাসোই না… খালি রাগ করো… তাহলে ?
দহন : বউ হয়েছো বন্ধু হয়েছো… ভালোবাসা হওনি… তাই নিজের লিমিটে থাকবা। তোমার জন্য আমি নিজেকে চেঞ্জ কেন করবো?
বহ্নি : আরে আমি চে…
দহন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বহ্নি : কেমন লোকরে বাবা। কেন আর কখন রাগ করে বোঝা মুশকিল…

.

খাবার টেবিলে…
নিশা-বহ্নি খাবার সাজাচ্ছে আর মনি বসে আছে তখন দীপন রেডি হয়ে নিচে নামলো।
দীপন : গুড মর্নিং…
মনি : মর্নিং বাপী…
দীপন বসলো।
দীপন : বহ্নি মামনি… গুড মর্নিং ।
বহ্নি : গুড মর্নিং বাপী…
তখন দহনও রেডি হয়ে নিচে নামলো। বসলো।
দীপন : তুমি রেডি হয়ে নামছো? আজকে থেকেই অফিস যাবে নাকি?
দহন : হ্যা বাপী। ৪-৫দিন ধরে যাচ্ছিনা। বাসায় বসে বোর হচ্ছি ।
দীপন : বোর হচ্ছো মানে? এই কদিন তো ভাগাদৌড়ি গেলো । আজকেই অফিস না গেলেই নয়…
দহন : বাপী প্লিজ… বাসায় বসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
দীপন : ওকে। মামনি তোমার ক্লাস কবে থেকে অন?
বহ্নি : নেক্সট উইক থেকে বাপী ।
দীপন : ওকে…

কাকন : গুড মর্নিং ….
সবাই পিছে ঘুরলো দেখলো কাকন বড় ১টা ফুলের তোরা নিয়ে দারিয়ে আছি।
দহন : ইউ….
কাকন : সিন ক্রিয়েট করতে আসিনা। কেবল শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি । তোমাকে আর তোমার বউকে। তোমার পাশে যে বসে আছে সেই তো তোমার বউ… কি যেন নাম? বহ্নি… বহ্নি রহমান। তাহলে আমার সন্দেহই ঠিক। আমি ঠিকই ধরেছিলাম যে তোমাদের মধ্যে প্রেম চলছে। সেদিন তো চলেই যাচ্ছিলাম। তবে কেন এয়ারপোর্টে এসে তামাশা করলে? বলো… তুমিই আমাকে ধোকা দিয়েছো।
দহন : জাস্ট শাট আপ এন্ড গেট আউট।
কাকন : চলেই যাবো…
বলেই বহ্নির দিকে এগিয়ে গেলো। তোরাটা ওর হাতে দিলো ।

কাকন : অন্যের ভালোবাসা কেরে নেয়ার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন তোমাকে। একি দহন আজই বউকে ফেলে অফিস যাচ্ছো… ব্যাপারটা কি?
দহন : তোমাকে কে বলল যে আমি অফিস যাচ্ছি ? আমি বহ্নি আর মনিকে নিয়ে বের হবো। নাউ আউট প্লিজ।।
কাকন ১টা বাকা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। দহন এই বাকা হাসির মানে বোঝে।

দীপন : কাকন কিসের তামাশার কথা বলছিলো?
দহন : বলছি বাপী… বহ্নি-মনি… তোমরা গিয়ে রেডি হয়ে নাও। আমরা বেরোবো।
মনি : সত্যি?
দহন : হামম।
মনি তো লাফিয়ে চলে গেলো। বহ্নি দারিয়ে রইলো।
দহন : বহ্নি গো এন্ড গেট রেডি প্লিজ।
বহ্নিও গেলো।

দীপন : এখন তো বলো…
দহন সব বলল । সেই বহ্নিকে অপমান করা থেকে শুরু করে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সব…

দীপন : দেখো দহন… সব কিছুরই লিমিট থাকে। কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ভালোবেসেছো। তার ফলও পেয়েছো। আর মনি তোমার বোন। নিঃসন্দেহে মনির প্রতি তোমার স্নেহ দেখে অভিভুত হই। বাট এরমানে এটা নয় যে মনির অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে। যেটা ভুল সেটা ভুল। আশা করি বুঝেছো। আর হ্যা বহ্নি তোমার স্ত্রী … কাউকে কিছু প্রমান করার জন্য কোনো কাজ করোনা। এতে তোমার ইগো স্যাটিসফাই হতে পারে বাট বহ্নি হার্ট হবে। তাই এরপর থেকে এমনকিছু না করলে খুশি হবো।

বলেই দীপন অফিস চলে গেলো। তখন বহ্নি আর মনি রেডি হয়ে নিচে নামলো। দহন ২জনকে নিয়ে বের হলো।

.

রাতে…
ঘুমানোর সময়…
বহ্নি বুঝতে পারছে যে দহন বারবার এপিঠ ওপিঠ করছে। বহ্নি উঠে বসলো।
বহ্নি : কি হয়েছে? তোমার কি খারাপ লাগছে?
দহনও উঠে বসলো।
দহন : আসলে ঘুম আসছেনা।
বহ্নি : ওহ। ১মিনিট..
বলেই বহ্নি ওর লাগেজে গিয়ে হাত দিলো।
দহন : একি তুমি লাগেজ থেকে ড্রেস এন্ড আদারস কিছু বের করোনি?
বহ্নি : না মানে এগুলো কোথায় রাখবো তাই?
দহন : ১টা থাপ্পর দিবো? গাধা কোথাকার। আমার মাথায় রাখো ওগুলো। এতো বড় ১টা কাবার্ড পরে আছে। ড্রেসগুলো কি রাখা যায়না? লাগলে বলো আরো ১টা কাবার্ড আনাবো। স্টুপিড। কালকে থেকে যেন লাগেজ টানাটানি না দেখি। বুঝেছো?
বহ্নি : হামমম।

বহ্নি ১টা বই বের করে নিয়ে দহনের হাতে দিলো। দহন দেখলো যে ‘অগ্নিবীণা’ … দহনের বই টই পড়তে একদম ভালো লাগেনা। বোরিং লাগে। ও জাস্ট ভেবেই পায়না যে মানুষ এতো মোটা মোটা উপন্যাসের বই কিভাবে পড়ে…

দহন : এটা কারজন্য ?
বহ্নি : তোমার জন্য। তুমি না বললে ঘুম আসছেনা। বই পড়ার অনেকগুলো সুবিধা আছে। মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর রাতে ঘুম না এলে বই পড়লে মানসিক প্রশান্তির সাথে ভালো ঘুমও আসে। 😊।
দহন : আমারনা এমনিই ঘুম চলে আসছে। গুড নাইট।😅।
বলেই দহন শুয়ে পড়লো ।
বহ্নি মনে মনে : বইটা যখন বের করেই ফেলেছি তখন পড়তে থাকি। …
বহ্নি লাইটটা নিভিয়ে গিয়ে বারান্দায় বসলো। লাইট জ্বালিয়ে বই পড়তে লাগলো।

.

সকালে…
দহনের ঘুম ভাঙলো। উঠে বসলো। দেখলো বহ্নি নেই। মনে করলো উঠে গিয়েছে। ঘড়িতে দেখে সাড়ে সাতটা বাজে।
দহন : মেয়েটা এতো সকালে ওঠে…
তখনই ওর মনে পরলো রাতে বইয়ের কাহিনি। দহনের ঠোটের কোনায় হাসি ফুটলো ।
দহন : এর কাছ থেকে এমন সব আইডিয়াই পাওয়া যাবে…
দহনের নজর দরজার দিকে গেলো।
দহন : আরে এতো ভেতর থেকে লক… বহ্নি তো বাহিরে যায়নি। ওয়াশরুমেও তো নেই।
দহন বারান্দায় গেলো। দেখলো বইয়ের ওপর মাথা রেখে বহ্নি ঘুমিয়ে আছে….

.

চলবে…

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 17
writer : Mohona

.

বহ্নি ঘুমিয়ে আছে।
দহন : যার নামের অর্থ আগুন তার স্বভাব পানির মতো। কি অদ্ভুদ।
তখন বহ্নি নরে চরে উঠলো।
দহন : ঘুম কি ভাঙলো? নাকি আরেকটু ঘুম দিবেন মিসেস ফ্রেন্ড …
দহনের গলা শুনে বহ্নির ঘুম পুরোপুরি ভেঙে গেলো। হরবর করে উঠে বসলো।
দহন : আস্তে আস্তে … এভাবে ওঠার মতো কিছু হয়নি । বাসায় ডাকাত পরেনি।
বহ্নি : কটা বাজে?
দহন : আমি যখন উঠলাম তখন ৭:৩০ এর মতো ছিলো। এখন মনে হয় ৭:৫০ এর মতো হবে… কেন দেরি হয়ে গিয়েছে বুঝি?
বহ্নি : না আবার হ্যা ও। নরমালি ৭টা সাড়ে ৭টায় ঘুম ভেঙে যায় তো…
দহন : তাহলে খুব দেরি হয়নি…
বহ্নি : হামমম।
বলেই বহ্নি বইটা হাতে নিয়ে রুমে গেলো বইটা রাখলো। ওয়াশরুমে ঢুকবে তখনই দহন ডাক দিলো।
দহন : বহ্নি…
বহ্নি : হামমম।
দহন : আমি আগে প্লিজ ।
বহ্নি : আচ্ছা …

.

৩দিনপর…
দীপন : দহন…
দহন : হ্যা বাপী…
দীপন : আজকে থেকে তো বহ্নির ক্লাস শুরু । তুমি নিয়ে যাবে তো?
দহন : হামমম।
দীপন : শুধু নিয়ে গেলেই হবেনা। নিয়ে আসতেও হবে। বুঝেছো?
দহন : হামম বাপী । তবে তুমি তোমার বউমাকে বলো যেন রেডি হতে আশি ঘন্টা না লাগায় ।
বহ্নি : আশি ঘন্টা লাগবে কেন ? আমি তো রেডিই ।
দহন : গুড। তাহলে তারাতারি খাবার খান ম্যাডাম… এরপর গিয়ে গাড়িতে বসুন প্লিজ।
বহ্নি : হামমম।
দীপন : তুমি কি টিটকারি করছো?
দহন : আজব তো এখানে টিটকারির কি আছে?
দীপন : আমি তোমার বাবা না তুমি আমার বাবা …
দহন : 😒।

.

গাড়িতে…
বহ্নি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে । কয়েকজন পুলিশ দারিয়ে আছে । তাদের মধ্যে একজন মোটামোটি বয়ষ্ক বহ্নি তারদিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে খানিকটা ওর বাবার মতোই দেখতে । দহন বিষয়টা বুঝতে পারলো।
দহন : বহ্নি…
বহ্নি : হামমম।
দহন : বাবা পুলিশের জব করলে নাকি সন্তানেরাও পায় তাইনা?
বহ্নি : হামমম।
দহন : তুমি অফার পাওনি?
বহ্নি : পেয়েছিলাম। বাট করিনি।
দহন : নিশ্চয়ই ভয়ের জন্য ।
বহ্নি : না না ভয়ের জন্য না। আসলে ভাবি চায়না যে আমি পুলিশে জয়েন করি।
দহন : ইশ ভাবির দোষটা দিয়ে দিলা। আমি জানি যে তুমিই ভয় পেয়ে জয়েন করোনি।
বহ্নি : না না সত্যি বলছি । বিশ্বাস করো।
দহন : তুমি কি জয়েন করতে চাও…
বহ্নি : …
দহন : তুমি যদি চাও তবে আমি ভাবিকে রাজি করাবো ।
বহ্নি : মাস্টার্সটা কমপ্লিট করি…
দহন : ওকে। বাট তোমার সাহস আছে তো?
বহ্নি : হামম ।
দহন : লেট মি চেক…
বলেই দহন গাড়ির স্পিড বারিয়ে দিলো। আর বহ্নির আত্মা তো যায় যায়।
বহ্নি : দহন গাড়ি থামাও … পাগল হলে নাকি… এই দহন …
দহন : কেন তোমার না সাহস আছে…
বহ্নি : আল্লাহ … ভয় করছে তো প্লিজ থামাও…
দহন গাড়ি থামালো। বহ্নি ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে থরথর করে কাপছে । দহনের ভীষন হাসি পাচ্ছে। একটু হেসে পানির বোতল এগিয়ে দিলো ।
দহন : এই যে বীরপুরুষ থুরি বীরমহিলা ধরুন পানি পান করুন…
বহ্নি তো কেপেই যাচ্ছে । দহন এক হাত দিয়ে বহ্নিকে টেনে কিছুটা নিজের সাথে মিশিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে
বলল : দেখি পানি খেয়ে নাও… হা করো…
দহন বহ্নিকে পানি খাইয়ে দিলো…
দহন : ফিলিং বেটার..
বহ্নি : হামম…
দহন : গুড গার্ল …
এখন দহন বহ্নিকে ছেরে দিলেও বহ্নি শক্ত করে ধরে আছে ।
দহন : এই যে মিস সরি মিসেস ভীতু… আপনি কি উঠবেন নাকি আমার বাহুতে ঘর-সংসার করবেন শুনি… চলুন আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি…
বহ্নি দহনকে ছেরে সোজা হয়ে বসলো।
বহ্নি : বাসায় যাবো কেন? আমার তো ক্লাস আছে ।
দহন : তোমার যে কাপাকাপি শুরু হয়েছে মনে তো হয়না যে এই অবস্থায় ক্লাস করতে পারবে..😂..
বহ্নি : ইশ ।
দহন : তাহলে চলো বাসায়।
বহ্নি : না… 😒..
দহন : বাবাহ… তুমি এভাবেও তাকাতে পারো… গুড গুড…
বহ্নি : এখন কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দাও। না হলে লেট হয়ে যাবো।
দহন : বাহিরে তাকিয়ে দেখোতো কোথায় আছো?
বহ্নি : কো…
বহ্নি দেখে ওরা ভার্সিটিতে চলে এসেছে। বহ্নি মুচকি হাসি দিলো।
দহন : আমি অতোটাও খারাপ না…
বহ্নি গাড়ি থেকে নামলো । ৪-৫ কদম এগিয়ে যেতেই দহন
বলল : এই যে মিসেস ভীতুর ডিম… তুমি বোধহয় আমাকে থ্যাংক ইউ দিতে ভুলে গিয়েছো…
বহ্নি দহনের কাছে ফিরে এলো ।
বহ্নি : কেন তোমাকে থ্যাংকস দিবো কেন?
দহন : এইযে এতো কষ্ট করে তোমাকে ড্রপ করলাম তাই।
বহ্নি : ইটস ইউর ডিউটি… তাই কোনো থ্যাংকস তুমি পাচ্ছোনা মিস্টার। বাই বাই…
বলেই বহ্নি চলে যেতে লাগলো।
দহন : থ্যাংকস দিলে না তো… ফাইন আমিও পিক করতে আসবোনা…
বহ্নি : দেখা যাবে….
বহ্নি গেলো ক্লাসে আর দহন চলে গেলো অফিস ।

.

বহ্নিকে ওর ক্লাসমেটরা ধরলো।
রিপা : এই বহ্নি তোমার সাথে ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কে ছিলো …?
কবিতা : কেন তুই জানিসনা? ওটাতো বহ্নির বর…
রিপা : সত্যি? বহ্নি ক্রাশ বয়টা কি সত্যি তোমার বর…
বহ্নি : হামমম।
মনে মনে : সত্যি না হওয়ার কি আছে? আজব মানুষ ।
রিপা : হায় ক্রাশ খেয়েছি। বড় সরো তাও।
মাহি : আমিও রে। হায় কি পার্সোনালিটি…
রিপা : তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ।
বহ্নি : না।
রিপা : তোমাকে পিকও কি জিজু করতে আসবে?
বহ্নি : হ্যা।
রিপা : গ্রেট। আবারও দেখবো।
মাহি : মনেহয় রোজই দেখবো রে। হায় ম্যায় মারজাওয়া ।
তমা : কিরে মরছিস কেন?😪
রিপা : বহ্নির বরকে দেখে।
তমা : বহ্নির বর? ওকে যে ড্রপ করে দিয়ে গেলো?
মাহি : হামমম। আমি ক্রাশিতো।
তমা : আমিও রে। 🙈।
কবিতা : এটাই স্বাভাবিক ।
তমা : আর আমরা ক্রাশ খেলে কি হবে? ক্রাশবয় তো তার বউকে চরম ভালোবাসে। গাড়ি থামার পর দেখলাম বউকে জরিয়ে ধরতে… 😜…
বহ্নি তো লজ্জায় রংধনু হয়ে যাচ্ছে।
কবিতা : উহু রোমান্টিক রোমান্টিক…
মাহি : ইশ যদি বহ্নির জায়গায় আমি হতাম…
সবাই দহনকে নিয়ে বকবক শুরু করলো। বহ্নির ইচ্ছা করছে একেকটাকে গিলে খেতে।

.

ক্লাসশেষে…
বহ্নি বের হয়ে গেইটের দিকে যাচ্ছে। তখন দেখলো কতোগুলো মেয়ে গেইটে বাহিরে কি যেন দেখছে। তাও ড্যাপড্যাপ করে। কি দেখছে সেটা বোঝার জন্য বহ্নিও ঘাড় বাকা করলো। দেখলো দহন দাড়িয়ে আছে গাড়ির পাশে। আর ফোনে কথা বলছে। চোখে সানগ্লাসটা পরে আছে। বহ্নির ভীষন রাগ উঠলো। বহ্নি দহনের দিকে এগিয়ে গেলো। বহ্নিকে আসতে দেখে দহন ফোন রেখে দিলো।
দহন : হুয়াটস আপ?
বহ্নি : ভালো।
দহন : সিট…
বহ্নি বসলো। দহন গাড়ি স্টার্ট দিলো ।
বহ্নি : দহন…
দহন : ইয়েস…
বহ্নি : এরপর থেকে তোমার আমাকে আর ড্রপ এন্ড পিক করতে হবেনা?
দহন : হুয়াট এন্ড হুয়াই?
বহ্নি : এমনি…
দহন : এমনি বললে তো হবেনা। আমার জল্লাদ বাপ আমাকে কেলানী দিবে।
বহ্নি : আমি বাপীর সাথে কথা বলে নিবো।
দহন : দরকার নেই। আমিই ড্রপ করবো এন্ড আমিই পিক করবো। সুন্দরী বউকে কি আর একা ছারা যায়….
বহ্নি : এতোদিন তো আমি একাই এসেছি।
দহন : কারন তখন তুমি আমার বউ ছিলেনা। এখন তুমি আমার বউ। আর আমি আমার বউকে একা ছারবোনা। বুঝিয়াছো?
বহ্নি : এতো বুঝতে হবেনা। ড্রাইভার কাকার সাথে আসলে গেলেই তো হবে।
দহন : আচ্ছা কাহিনি কি বলো তো…
বহ্নি : কিছুনা।
দহন : কাহিনি তো কিছু আছে। এই তোমার ফ্রেন্ডসরা আমাকে নিয়ে কিছু বলেনিতো? ক্রাশ ট্রাশ খায়নিতো… ?
বহ্নি : তুমি কি করে জানলে?
দহন : তারমানে এটা সত্যি?
বহ্নি : হামমম।
দহন : আর তাই তুমি জেলাস…
বহ্নি : …
দহন হাহা করে হাসতে লাগলো। বহ্নি রাগ করবে না খুশি হবে বুঝতে পারছেনা । কারন দহন আবার আগের মতো করে হাসছে ।
দহন : মিস্টার দহন আহমেদ আপনার বউ জ্বলছে পুরছে । কারন মেয়েরা আপনাকে দেখে ক্রাশিতো। হাহাহা… ভালোই হলো ফ্লার্ট করা যাবে। হাহাহা।
বহ্নি : আজব তো এখানে হাসির কি আছে। আমার কষ্ট লাগাটা কি স্বাভাবিক নয়? তুমি আমাকে ভালোনাবাসলেও আমি তো তোমাকে #ভালোবেসে_ফেলেছি না…
কথাটি বলে বহ্নিও থতমত খেয়ে গেলো আর দহনও হতবাক হয়ে গেলো। হাসি থামিয়ে সিরিয়াস টাইপ মুখ করে ড্রাইভ করতে লাগলো। বহ্নির মুখে ভালোবাসি ফেলেছি কথাটা কেন যেন ওর রাগ তুলছে। বহ্নিও বেশ বুঝতে পারছে যে দহন ক্ষেপেছে । তাই চুপ রইলো । ও নিজেই সাংঘাতিক অবাক হয়েছে যে ও বললটা কি আর কেন? ও কি সত্যি দহনকে ভালোবেসে ফেলেছে???
দহন বহ্নিকে বাসায় পৌছে বাহিরে থেকেই অফিস চলে গেলো। ভেতরে যেতেই নিশা আর মনি বহ্নির সাথে রাজ্যের গল্প জুরে দিলো ।

.

সন্ধ্যায়…
বাবা-ছেলে অফিস থেকে ফিরলো। বহ্নি ভয়ের চোটে দহনের সামনে গেলোনা। কিচেনে রইলো। দহন বিষয়টা বেশ বুঝতে পারলো। ২জন পানি টানি খেয়ে রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
বহ্নি , মনি , নিশা ৩জন গল্প জুরে দিলো। কিছুক্ষনপরই দহন গলা ফাটিয়ে বহ্নিকে ডাকতে লাগলো।
দহন : বহ্নি … এই বহ্নি… বহ্নি… । বহ্নি…
নিশা : বাবাগো বাবা তোর বর ডাকছেরে। যা যা বরের কাছে যা।
মাঝেমাঝে বহ্নি বুঝতেই পারেনা যে নিশা ওর শাশুড়ি। বহ্নি দোয়া-দরূদ পড়তে পড়তে রুমে গেলো।
দহন : কতোক্ষন ধরে ডাকছি? এতোক্ষন লাগে আসতে?
বহ্নি : …
দহন : ব্ল্যাক ব্লেজারটা কোথায় ?
বহ্নি : লন্ড্রিতে। কোথাও যাচ্ছো?
দহন : হ্যা। আমার জন্য ১ কাপ কফি করে এনে রেডি হয়ে নাও।
বহ্নি : রেডি?
দহন : হ্যা রেডি।
বহ্নি : কোথায় যাবো…
তখন বহ্নির মনে পরলো দিনা-রিদি-ভোরের কথা।
বহ্নি : ভাবি আর বাচ্চারা ঠিক আছে তো? কোনো সমস্যা হয়নিতো?
দহন : তুমি কোন লজিকে এগুলো জিজ্ঞেস করছো আমি বুঝতে পারছিনা। কফি করে এনে এই মুহুর্তে রেডি হও।
বহ্নি কিছু না বলে কফি করে আনলো।
দহন : যাও রেডি হও।
বহ্নি দারিয়েই রইলো। দহন কাবার্ড থেকে ১টা শাড়ি বের করে বহ্নির হাতে ধরিয়ে দিয়ে টেনে ওয়াশরুমে ঢোকালো।
দহন : কফি খেতে খেতে বেরিয়ে আসা চাই…

একটুপর বহ্নি বেরিয়ে এলো। আর বেরিয়ে আসতেই দহন হাত হাটা শুরু করলো।
দহন : অতো সাজার দরকার নেই। আমার বউ এমনিতেই সুন্দর।
দহন বহ্নির হাত ধরে নিচে নেমে এলো। সবাইতো অবাক । বহ্নি তো সাংঘাতিক লজ্জা পাচ্ছে।
নিশা : কোথায় যাচ্ছিস দহন ?
দহন : ডিনার করতে…
কথাটা শুনে দীপন ভীষম খেলো । নিশা তো বেরিয়ে আসার মতো চোখ করে দহনের দিকে তাকালো।
দহন : আসছি বাপী…
বলেই বহ্নির হাত ধরে চলে গেলো।

নিশা : এই মনি আমাকে একটু চিমটি কাট তো…
মনি : ওকে মামনি…
মনি ভীষন জোরে চিমটি কাটলো।
নিশা : মা গো। এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে বজ্জাত মেয়ে।
দীপন : এই তুমিই তো বললা চিমটি কাটতে।
নিশা : তাই বলে এতো জোরে কাটবে?

.

রেস্টুরেন্টে…
দহন : তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো?
বহ্নি : …
দহন : বলো….
বহ্নি : জানিনা…
দহন : তখন যে বললা…
বহ্নি : জানিনা কিভাবে বলে ফেলেছি…
দহন : ভালোবাসো কি বাসোনা?
বহ্নি : বাসি… 🙈🙊🙉

.

চলবে…