ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-২০+২১

0
2264

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 20
writer : Mohona

.

মনি : আমি যাবোনা… হুহ…
দহন : ইন দ্যাট কেইস…. অ্যাওমারি কেওমারি…
মনি হাহা করে হেসে উঠলো।
মনি : এই ভাইয়া একদমনা।
দহন : তাহলে যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও।
মনি : আমি এখনি যাচ্ছি।
মনি রেডি হতে গেলো।
দহন : বাপী আমি সব মিটিং নেক্সট উইকে শিফ্ট করেছি।
দীপন : হামমম।

বহ্নি : হ্যালো ভাবি…
দিনা : বলো…
দিনার কন্ঠ বহ্নি পেছন থেকে শুনতে পেলো। ঘুরে দেখে দিনা দারিয়ে আছে। ভাবি বলে গিয়ে জরিয়ে ধরলো। দহনের কোলে ভোর আর কাধে রিদি।
বহ্নি : ভাবি তুমি ভালো আছো? বাচ্চারা ভালো আছে?
দিনা : হামম। তুমি ভালো আছো তো?
বহ্নি : হামম।
দিনা : দেখোনা দহন সকালবেলা গিয়ে হাজির। বলে পিকনিকে যাবো সবাই মিলে এন্ড যেতে হবে ব্যাস। রীতিমতো তুলে নিয়ে এসেছে।
বহ্নি দহনের দিকে তাকালো। ও ভালো মতোই জানে যে দহন কেন এমনটা করেছে।
বহ্নি : হ্যা ভালোই করেছে। আসলে কালকে রাতেই প্ল্যানটা হয়েছে। প্ল্যানও না আসলে। মনি বলল ওর নাকি কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে। তাই দহন ভাবলো যাওয়া যাক । ছোট মানুষতো কবে থেকে বের হয়না।
দিনা : ভাইয়েরা তো এমনই হয় । তোমার ভাইয়ার কথা মনে নেই… তোমার হাসিটাই সব…
বলতে বলতে দিনার চোখেও পানি চলে এলো। আর বহ্নির চোখেও। বহ্নি নিজেকে সামলে
বলল : রিদি… ফুপ্পির কাছে আসবেনা?
রিদি : তুমি তো ফুপ্পার মতো কাধে নিতে পারবেনা ।
বহ্নি : দেখেছো ভাবি… ফুপ্পিকেই চেনেনা…

সবাই মিলে বের হলো। সারাদিন বহ্নি দহন থেকে দূরে দূরেই রইলো। রাতে সবাই ফিরে এলো। দিনাকে রেখে দিলো সবাই । বলল রাত করে যেতে দিবেনা।

.

বহ্নি : ভাবি আসি…
দিনা : আরে আসো। বসো।
রিদি : ফপ্পি…
বহ্নি : আমার সোনা বাচ্চাটা।
রিদি : ও ফপ্পি তুমি আজকে আমাদের সাথে ঘুমাবে? 😃
দিনা : রিদি…
বহ্নি : ও ভাবি… এমন করছো কেন হামম? ফুপ্পি আজকে তোমার সাথেই ঘুমাবে।
রিদি : ইয়ে…. গল্প বলবে কিন্তু।
বহ্নি : হামমম।
দিনা : সব হবে। ঘুমানোর আগে ব্রাশ করে আসো যাও।
রিদি : ওকে।
রিদি ব্রাশ করতে গেলো।
দিনা : তুমি আমাদের এখানে থাকলে দহন রাগ করবেনা তো?
বহ্নি : না না রাগ করবে কেন?
দিনা : ১টা কথা বলি?
বহ্নি : হ্যা বলো।
দিনা : তোমার আর দহনের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে?
বহ্নি : না তো।
দিনা : আমার চোখে কিন্তু ফাকি দিতে পারবেনা। আমি কিন্তু তোমার রাগ , জেদ , অভিমান সবই বুঝি। কি হয়েছে বলো তো… হামম?
বহ্নি : কিছু না ভাবি।
দিনা : বললেই হলো….
বহ্নি : ভাবি তুমিও না… কি কি ভাবো বলো তো… তু…
তখন দহন নক করলো।
দহন : আসতে পারি?
দিনা : আরে আসো আসো।
দহন : আমাকে রেখেই আড্ডা দেয়া হচ্ছে বুঝি হামম?
তখন রিদি ব্রাশ করে এলো।
দহন : হেই চ্যাম্প। ঘুমাওনি?
রিদি : ব্রাশ করে এলাম। ফুপ্পা… তুমি কি ফপ্পিকে নিয়ে যেতে এসেছো? ফপ্পি আজকে একটু আমাদের সাথে থাকুক না।
দহন : ওকে মাই চ্যাম্প। আমি তো জাস্ট তোমাদের সাথে কথা বলতে এলাম।
রিদি : থ্যাংক ইউ।
দহন : ওয়েলকাম মামনি।
কিছুকক্ষন কথা বলে দহন ঘুমাতে চলে গেলো।

দিনা : এই দহন রাগ টাগ কেমন করে রে? তুমি না বিয়ের আগে বলতা যে অনেক রাগি… তোমাকে কি বকাঝকা করে?
বহ্নি : না ভাবি দহন আমাকে বকাঝকা করেনা।
দিনা : মিথ্যা বলছো না তো?
বহ্নি : আরে না … মিথ্যা কেন বলবো… আসলেই দহন কখনোই বকাঝকা করেনা। একটু বেশি রাগি। বাট বকাঝকাতে নেই।
দিনা : যাক শুনে ভালো লাগলো…
ওরা শুয়ে পরলো। দিনা আর বাচ্চারা ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু বহ্নি জেগে আছে।
বহ্নি মনে মনে : এখন তো ভাবির কাছে গিয়ে থাকাও যাবেনা । ভাবির সন্দেহ আরো গাঢ়ো হবে। হয়তো দহনের সাথে বিয়েতে রাজি হওয়াটা ভুল ছিলো। এটা তো জানতামই যে দহন …

পরদিন দিনা বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলো। সবাই থাকতে বলল। কিন্তু দিনা বলল যে ২দিনপর থেকে রিদির এক্সাম…

.

সন্ধ্যায়…
বৃষ্টি পরছে। বহ্নি বারান্দায় দারিয়ে দেখছে। বৃষ্টিটাকে ওর খুব আপন মনে হয় । নিজের মনে হয়। খুব করে ভিজতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বাবা বলতো ঠান্ডা লেগে যাবে। আর বহ্নি কখনোই বাবার কথার অবাধ্য হয়নি । তাই আজ পর্যন্ত ও বৃষ্টিতে ভিজেনি। বারান্দার লাইট নেভানো। অন্ধকারেই বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে ওর। দহন গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় দেখলো বারান্দায় কেউ দারিয়ে আছে। বুঝতে পারলো এটা বহ্নি। বিদ্যুৎ চমকালো এতে দহন স্পষ্টভাবে বহ্নির মুখটা দেখতে পেলো। বহ্নির মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। অদ্ভুদ সুন্দর লাগছে। বহ্নি যথেষ্ট সুন্দর। নিস্বন্দেহে কাকনের থেকেও সুন্দর। কিন্তু কেন যেন দহনের বহ্নিকে সৌন্দর্য্যের দিক দিয়ে বিচার করতে ভালো লাগেনা। ওর মনে হয় বহ্নি মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো। দহন দরজার মাঝে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে বসেই বহ্নিরে দেখছে। তখন দীপনের গাড়ি এলো। হর্ন বাজালো। এতে দহনের ধ্যান ভেঙে গেলো। আর বহ্নিরও । ও নিচে তাকিয়ে দেখলো যে দহন আর দীপন এসেছে। প্রায় ৮-৯দিনপর আজকে দহন তারাতারি ফিরেছে । বহ্নি আচল দিয়ে মুখ মুছে চট করে দহনের টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে নিচে গেলো।

বহ্নি দহনকে ইগনোর করতে লাগলো । বিষয়টা দহন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো।

.

রাতে…
বহ্নি শুয়ে আছে। দহন রুমে গেলো।
দহন : বহ্নি আমি জানি তুমি ঘুম না। প্লিজ উঠে বসো। উই নিড টু টক।
বহ্নি : আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক টু ইউ…
দহন : উঠতে বললাম তো।
বহ্নি কিছু না বলে উঠে গিয়ে নিচে চলে গেলো। দহনও নিচে গিয়ে বহ্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে বাহিরে গেলো। গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ঝড়ো বাতাস বইছে। যেকোনে মুহুর্তে বৃষ্টি শুরু হবে। কিছুটা দূর গিয়ে দহন বহ্নির হাত ধরে টেনে বের করলো। বহ্নি মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে ।
দহন : বললাম না উই নিড টু টক… হ্যা? দেখো আমাকে রাগ-জেদ দেখাবানা। বুঝেছো? একদম না ।
বহ্নি : আমি তো… আমি আপনাকে রাগ-জেদ কিছুই দেখাইনি। আমি এমন কেউ নই যে আপনাকে রাগ দেখাবো…
বলেই বহ্নি দহনের কাছ থেকে সরে যেতে নিলে দহন ওকে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো।
দহন : তুমি ভালো মতোই জানো আমি আর আমার রাগ কতোটা ভয়ংকর । আমাকে রাগ দেখাও কোন সাহসে? বলো? অ্যান্সার মি ড্যাম ইট…
বহ্নি কেপে উঠলো।
দহন : কোন সাহসে কালকে থেকে আমাকে ইগনোর করছো তুমি? বলো…
বহ্নি : ….
দহন : এখন চুপ কেন? পরশু তো খুব তেজ দেখালে। এখন চুপ কেন…
বহ্নি : …
দহন : বলো…
বহ্নি : আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা।
দহন : তবুও তোমাকে বলতে হবে। বুঝেছো? আর আপনি আপনি কেন শুরু করেছো?
বহ্নি : কারন আপনি আমার আপনজন নন…
দহন : ১টা থাপ্পর দিবো…
বহ্নি : দিন কে না করেছে ? সবকিছু তো আপনি আপনার ইচ্ছামতোই করেন… নিজের মন চায় তো এসে আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেন… ভালো আচরন করেন। মন চাইলো ঝারি মারেন… রাগ দেখান। যা মনে চায় তাই করেন । আপনি যা করেন তার সব ঠিক। আর আমি তার ১অংশ করলেও ভুল। কেন? বলুন…
দহন : ….
বহ্নি : আমি তো জাস্ট ২দিন ধরে ইগনোর করছি… আর আপনি… আপনি এই কয়টাদিন ধরে একজন অচেনা মানুষের আচরন করছেন? কেন আমি কি জোর করে আপনার জীবনে এসেছি? বলুন? বিয়ের আগে এমনকি বিয়ের পরেও আমি বলেছিলাম। কিন্তু আপনি… আপনার কাহিনি কি জানেন? আপনি আমার হাত ধরতেও চান না আর ছারতেও চান না… ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার বন্ধু হবেন। অর্নবের মতো। কিন্তু আপনি হাজারবার জন্ম নিলেও অর্নবের মতো হতে পারবেননা। ভালো স্বামী তো দূরের কথা ভালো বন্ধু হওয়ার যোগ্যও আপনি নন। আপনার সাথে বন্ধুত্ব করাটাই আমার ঠিক হয়নি। আপনার মতো কাউকে অর্নবের জায়গা দেয়া ঠিক হয়নি । আমার অর্নব কখনোই আমার সাথে এমন আচরন করতোনা…
বহ্নির মুখে ‘আমার অর্নব’ শুনে দহনের রাগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেলো। সহ্যই হলো না কথাটা । কেন ওর বহ্নি অন্য ১টা ছেলেকে ‘আমার অর্নব’ বলবে ?
বহ্নি: অর্নব আ…
বহ্নি আর বলতে পারলোনা। দহন বহ্নির ঠোট জোরা দখল করে নিলো… বহ্নি ভাবতেও পারেনি যে দহন এমন কিছু করবে…

দহন : জানতে চেয়েছিলেনা যে আমি এমন কেন করছি… আই থিংক আই অ্যাম ফলিং লাভ উইথ ইউ… বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্যাট…
বলেই দহন বহ্নির কাছ থেকে সরে এলো। আর তখনই বৃষ্টি শুরু হলো।

বহ্নি থ মেরে ওভাবেই দারিয়ে রইলো। কারন … এমন কথা ও কখনোই আশা করেনি। দহন ওকে ভালোবাসবে? তাও এতো তারাতারি? বিশ্বাসই হচ্ছেনা। পরে খেয়াল করলো কথাটা যে দহন মনে করে … বাট চায়না বহ্নিকে ভালোবাসতে।

দহন নিজেও কথাটা বলে অবাক। ও বলতে চায়ওনি বহ্নিকে । তবুও বলে দিলো। দহন ২হাত দিয়ে চুল গুলো পিছে নিচ্ছে । বৃষ্টির বেগ বারছে সেই সাথে বাতাসও পাল্লা দিচ্ছে । রাত খুব গভীরনা। তাই কিছু কিছু গাড়িও যাচ্ছে। ওর আর বহ্নির দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। দহন পিছে ঘুরলো। দেখলো যে বহ্নি সাদা রঙের গোল্ডেন পারের ১টা সুতি শাড়ি পরা । ও তো খেয়ালই করেনি যে বহ্নি সাদা রঙ পরেছে না অন্য কোনো রঙ। আর বহ্নিরও খেয়াল নেই যে ও সাদা রঙের শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজছে। দহন ছুটে গিয়ে নিজের টি-শার্টটা খুলে কোনো রকমে বহ্নির গায়ে জরিয়ে দিলো।
দহন : গাড়িতে ওঠো…
বহ্নি : ….
দহন : গাড়িতে উঠতে বললাম তো নাকি…
বহ্নি গাড়িতে উঠলো। ওরা বাসায় পৌছালো। বহ্নি চেঞ্জ করে এলো।

দহন : বর্ষাকালে কখনো আর সাদা রং পরবা না…
বলেই দহন ওয়াশরুমে চলে গেলো।

.

সকালে…
দহনের ঘুম ভাঙলো। দেখে বহ্নি এখনো ঘুম। দহন একটু অবাক হলো। কারন ১দিনও ও ঘুম থেকে উঠে বহ্নিকে শুয়ে থাকতে দেখেনি। ভাবলো ২-১দিন ঘুম বেশি আসতেই পারে। ও ওয়াশরুমে গেলো । ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে , শাওয়ার-টাওয়ার নিয়ে দহন বেরিয়ে এসে দেখে বহ্নি এখনো ঘুম। ঘড়ির দিকে তাকালো দেখলো প্রায় ৯টা বাজে। এবার দহনের সন্দেহ হলো। দহন এগিয়ে গেলো। ধীরে ধীরে ডাক দিতে লাগলো।

দহন : বহ্নি… বহ্নি… এই বহ্নি…
দহন বহ্নির কাধে হাত দিলো।
দহন : ব…
বুঝতে পারলো যে বহ্নির শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে ।
দহন : ওহ নো … ওর তো ভীষন জ্বর। ডক্টর ডাকি… মামনি মামনি…
ডাকতে ডাকতে অস্থির হয়ে নিচে নামলো। কিন্তু নিশার কোনো সারা পেলোনা। তখন ১জন সার্ভেন্ট এসে বলল যে নিশা মনির স্কুলে গিয়েছে । প্যারেন্টস মিটিং এ । আর মিটিং শেষে নিশা বাবার বাসায় যাবে ।
দহন : হ্যা নানুবাসায় যাবে। ড্যাম ইট।

রুনু : ভাইজান আপনার কি কিছু লাগবে?
দহন : না আমার কিছু লাগবেনা। তবে তোমার ভাবির অনেক জর…
রুনু : বলেন কি…
দহন : হ্যা।
বলেই দহন ডক্টকে ফোন করতে করতে রুমে গেলো । কিছুক্ষন পর ডক্টর এলো। জ্বর মাপলো , চেক আপ করলো।

ডক্টর : হঠাৎ করে এমন ধুম জ্বর কিভাবে এলো?
দহন : ….
ডক্টর : বৃষ্টিতে ভিজেছিলো নাকি?
দহন : জী আংকেল।
ডক্টর : বৃষ্টিতে ভেজা যে কতো ক্ষতিকর। হার্টবিট অনেক বেশি , পালস রেটও অনেক বেশি। হাতের তালু ঠান্ডা হয়ে আছে। যাই হোক আমি মেডিসিন লিখে দিয়ে গেলাম। দেখো কালকে পর্যন্ত জ্বর কমে কিনা । আর শোনো পারলে গোসল করানোর ব্যাবস্থা করো। যদি পসিবল না হয় তবে মাথায় পানি দিয়ে দিও দেন হাত-পা মুছিয়ে দিও।
ডক্টর চলে গেলো।

দহন : রুনু … এই রুনু…
রুনু : জী ভাইজান…
দহন : তোমার ভাবির জন্য একটু স্যুপ রান্না করে আনোনা প্লিজ… আর হ্যা পিটারকে প্রেসক্রিপশনটা দাও। বলবে এক্ষনি যেন মেডিসিন গুলো নিয়ে আসে।
রুনু : জী ভাইজান ।

রুনু ছুটে গেলো।
দহন : কি করবো? মামনি তো বাসায় নেই। ফোন করবো? ওদিকে তো নানুর শরীরটাও ভালোনা। দেখি কালকে পর্যন্ত । গোসল করাবো… কিন্তু অনেক তো জ্বর। এক কাজ করে মাথায় পানি দিয়ে দেই ।

দহন মাথায় পানি দেয়া শুরু করলো। প্রথমবার পানি দিতেই বহ্নি অনেক কেপে উঠলো। দহন বহ্নিকে ভালোভাবে ঢেকে দিয়ে রুম টেম্পারেচার বারিয়ে দিলো। এরপর বহ্নির মাথায় পানি দিতে লাগলো। দহন ঘেমে একাকার হয়ে গেলো। কার তাপমাত্রা বারানোর জন্য ওর খুব গরম লাগছে। টি-শার্টটা খুলে ফেলল। মাথায় পানি দেয়ার পর বহ্নি গলা-ঘাড়-হাত-পা মুছে দিলো।

ততোক্ষনে পিটার মেডিসিন আর রুনু স্যুপ নিয়ে এলো। দহন কোনো রকমে খাইয়ে দিলো। বহ্নির হাত-পা প্রচুর ঠান্ডা ।

দহন : জ্বর এলে হাত-পা ঠান্ডা হলে মামনিকে দেখি তেল গরম করে হাতে পায়ে মাসাজ করে দেয়… রুনু .. রুনু…
রুনু : জী ভাইজান …
দহন : একটু তেল গরম করে দাওনা। বহ্নির হাত পায়ে মাসাজ করবো।
রুনু : জী ভাইজান…

রুনু তেল গরম করে আনলো।
রুনু : ভাইজান আপনি তো একা পারবেন না… আপনি তাহলে হাতে মাসাজ করেন আমি পায়ে করি।
দহন ভাবলো যে এই গরমে রুনুর কষ্ট হবে। তাই না করে দিলো। রুনু চলে গেলো । দহন নিজেই ১বার বহ্নির হাতে ১বার পায়ে মাসাজ করতে লাগলো। বহ্নি সব শুনলো। কিন্তু চোখ মেলার শক্তি পাচ্ছে না। ১বার নিভু নিভু চোখে দেখলো যে দহন ওর পায়ে মাসাজ করছে। ১টা অস্থিরতা কাজ করছে ওর মধ্যে। বহ্নির খারাপ লাগলো কারন দহন ওর পা ধরেছে। ও ওর আম্মুকে দেখেছে যে কখনো ওর বাবাকে পা টাচ পর্যন্ত করতে দেয়নি।

.

দহন বহ্নির পায়ে মাসাজ করছে। তখন ভরভর করে কাকন ওর রুমে ঢুকলো। দহনকে খালি গায়ে দেখে আর বহ্নির পায়ে মাসাজ করতে দেখে কাকন ক্ষেপে গেলো।
দহন : তুমি? তুমি আমার বেডরুমে নক না করে কিভাবে ঢুকলে? তুমি আমার বাসায় ঢুকলে কোন সাহসে?
কাকন : তুমি এই অবস্থায় কেন…
দহন : পিটার পিটার… রুনু…
ওরা ২জন ছুটে এলো।
পিটার : জী স্যার।
দহন : এই আবর্জনাটাকে এখনই বাসার বাহিরে ছুরে ফেলে দিয়ে আসো।
পিটার : জী স্যার।
কাকন চেচাতে লাগলো। আর ওরা ২জন ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। বের করে দিলো।

দহন : কোন দুঃখে যে ওই মেয়েটাকে ভালোবেসেছিলাম…? ওই মেয়েটার জন্যই আমি নরমাল হতে পারছিনা….

.

চলবে…

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 21
writer : Mohona

.

দহন : ওই মেয়েটার জন্যই নরমাল হতে পারছিনা… বহ্নির জ্বরটা মেপে দেখি…
দহন বহ্নির জ্বরটা মেপে দেখলো। কিছুটা কমেছে।
দহন : এখনও অনেক জ্বর। কি যে করি… এই ডক্টরগুলোও না… কি সব মেডিসিন দেয়…. কতোক্ষন হয়ে গিয়েছে তবুও জ্বর কমছেনা। মামনিকে কল করলেই ভালো হবে…
বহ্নি অনেক কষ্টে চোখটা মেলল। দহনের মলিন মুখটা দেখলো। ও বেশ বুঝতে পারলো যে দহন সকাল থেকে কিছুই খায়নি…
দহন দেখলো যে বহ্নি চোখ মেলেছে।
দহন : কি হয়েছে? কিছু লাগবে? খারাপ লাগছে?
বহ্নি অনেক কষ্টে
বলল : তুমি কিছু খেয়ে নাও…
দহন : আমি খেয়েছি তো …

বহ্নি মাথাটা ধীরে ধীরে এপাশ ওপাশ করলো।
বহ্নি : কিছু খেয়ে নাও প্লিজ …
দহন : আরে আমি খ…
বহ্নি : প্লিজ…

দহন : রুনু…
দহন রুনুকে দিয়ে খাবার আনিয়ে অল্প করে খেয়ে নিলো।

.

রাত ৮টা…
সারাদিন বহ্নির খেয়াল রেখে দহন অনেকটাই ক্লান্ত । তাই বসে বসেই ঘুমিয়ে পরেছে । বহ্নি ওয়াশরুমে যাবে। দহন খুব ক্লান্ত বলে ওকে আর ডাক দিলোনা। নিজেই দেয়াল ধরে ধীরে ধীরে যেতে লাগলো। কিন্তু এখনও জ্বর সম্পুর্ন ছারেনি। সারা শরীর কাপছে… মাথা ঘুরে ধিরিম করে পরে গেলো। শব্দ পেয়ে দহন হকচকিয়ে উঠলো।
দহন : বহ্নি…
দহন ছুটে গিয়ে বহ্নিকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসালো।
দহন : তুমি নেমেছো কেন?
বহ্নি : ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম…
দহন : তো আমাকে ডাক দাওনি কেন? স্টুপিড…
বহ্নি : না মানে তুমি খুব টা…
দহন : শাট আপ…
বলেই দহন বহ্নিকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। এরপর বাহিরে দারিয়ে রইলো। বহ্নি বেরিয়ে এলে আবার কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো। এরপর জোর করে একটু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো।

দহন : এখন শুয়ে পরো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। না ১ কাজ করি মাথায় পানিপট্টি দিয়ে দেই।
বহ্নি : না না লাগ…
দহন : শাট আপ…

দহন বহ্নির কপালে পানিপট্টি দিচ্ছে । বহ্নি এক দৃষ্টিতে দহনের দিকে তাকিয়ে আছে ।
দহন : কি হলো এভাবে কি দেখছো?
বহ্নি : খুব কষ্ট দিয়ে ফেললামনা তোমাকে…
দহন : চুপ থাকতে বলেছি কিন্তু। চোখ বন্ধ…
বহ্নি : উহু…
দহন : হুহ।
দহনকে দেখতে দেখতে বহ্নি ঘুমিয়ে পরলো। জ্বরের জন্য বহ্নি একেবারে লাল হয়ে আছে। দহনের কাছে খুব কিউট লাগছে। বিশেষ করে বহ্নির গাল ২টা। তাই টুপ করে ২গালে ২টা চুমু দিয়ে দিলো।
দহন : আমার লক্ষি বউটা…

.

সকালে…
বহ্নির ঘুম ভাঙলো। দেখলো দহন ওর মাথার কাছেই ওকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। বহ্নি আস্তে করে উঠে এলো।
বহ্নি মনে মনে : বাবা ঠিকই বলতো যে … যে যতো বেশি রাগী সে ততো বেশি ভালো… এখন যদি ওকে ঠিক মতো শুইয়ে দিতে যাই তো নির্ঘাত জেগে যাবে। ইশ একদম ঘেমে আছে। এক কাজ করি টেম্পারেচার কমিয়ে দেই ।
বহ্নি দহনের মন মতো পাওয়ার দিয়ে এরপর ওর ওপর ব্ল্যাংকেটটা ওর ওপর দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে গেলো।
রুনু : ভাবিজান… তুমি নিচে নেমে এলে কেন? তোমার শরীর ঠিক আছে এখন?
বহ্নি : একদম ঠিক আছি… মামনিরা এসেছে ?
রুনু : না ভাবি।
বহ্নি : ওহ আচ্ছা। দহন কালকে কিছুই খায়নি । দেখি ওর জন্য ঝটপট কিছু রান্না করে ফেলি।
রুনু : ভাবি তুমি অসুস্থ তো…
বহ্নি : একদম ঠিক আছি।
বলতে না বলতেই বহ্নির মাথা চক্কর দিলো। পরে যেতে নিলে রুনু ধরে ফেলল। ধরে ধরে বসিয়ে দিলো ।
রুনু : দেখেছো ভাবি… কতোটা দুর্বল তুমি?
বহ্নি : ও কিছুনা। তুমি একটু কাটাকুটিতে হেল্প করোনা গো । আমি রান্নাটা সেরে ফেলি…
রুনু : ভাবি তোমার রান্না করতে হবেনা।। ভাইজান জানলে কিন্তু বকবে…
বহ্নি : আরে কিচ্ছু জানবেনা।
রুনু : তোমরা ২জন ২জনকে অনেক ভালোবাসো তাইনা? জানো কালকে ভাইজান অনেক অস্থির হয়ে পরেছিলো তোমার জন্য ।
বহ্নি : …
রুনু : আমি ভাবতেও পারিনি যে ভাইজান কাকন আপাকে কখনো ভুলতে পারবে। আসলেই ভাইজান খুব ভালো। আর সবকিছুই হলো কবুলের জোর…
বহ্নি মুচকি হাসি দিলো।
বহ্নি : আচ্ছা শোনো তোমার ভাইজানকে আবার বলতে যেওনা যে আমার মাথা চক্কর দিয়েছিলো।
রুনু : আচ্ছা।

দহন : ১টা থাপ্পর দিবো তোমাকে।
বহ্নি আর রুনু কেপে উঠলো। ২জনই পিছে ঘুরে দেখে দহন দারিয়ে আছে। দহনের চাহনী দেখে বহ্নির কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে। দহন বহ্নির দিকে এগিয়ে এলো।
দহন : রুনু … কিছু হালকা খাবার রান্না করো। এন্ড ইউ… কোন সাহসে নিচে নেমেছো তুমি? তাও সোজা কিচেনে চলে এসেছো…
বহ্নি : তো কি করবো? আমার অযথা শুয়ে থাকতে ভালো লাগেনা ।
দহন : অযথা শুয়ে থাকা মানে? তোমার জ্বর এসেছে…
বহ্নি : চলে গিয়েছে।
দহন : ১টা থাপ্পর মারবো। সাংঘাতির সাহস হয়েছে না ? চলো রুমে চলো।
বহ্নি : ডাকাত কোথাকার …
দহন : কি বললা?
বহ্নি : কিছুনা। 😅।
দহন : চলো। রুনু আমার জন্য ১কাপ কফি দিও প্লিজ।
দহন আগে আগে আর বহ্নি পিছে পিছে হাটছে। বহ্নির হাটার অবস্থা দেখে দহন বহ্নিকে কোলে তুলে নিলো।
বহ্নি : 😶। নামাও। রুনু আছে।
দহন : তো? এমনিতেই মুরগির মতো হাটো। তারওপর এখন অসুস্থ । কচ্ছপকেও ফেল বানাবা …

.

দহন বহ্নিকে বেডে বসিয়ে দিয়ে সরে আসতে নিলে বহ্নির গলার লকেটটা দহনের শার্টের বাটনে আটকে যাওয়া টান লাগলো। দহন সেটা খোলার চেষ্টা করছে। আর দহন এতো কাছে থাকাতে বহ্নির অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে । সাধারনত দহন কখনোই বহ্নির এতো কাছাকাছি আসেনা। দহন লকেটটা ছারিয়ে খেয়াল করলো যে বহ্নি চোখ বন্ধ করে আছে। কপালটা কুচকে রেখেছে। দহন মুচকি হাসি দিলো। বহ্নি তো সবসময়ই এমন। তবে আজকাল ওর কাছে বেশি সুন্দর লাগে । দহন বহ্নির আরেকটু কাছে গেলো। তখন রুনু এসে দরজায় নক করলো। দহন সরে এলো।
দহন : কাম।
রুনু : ভাইজান আপনার কফি আর ভাবির স্যুপ।
দহন : শোনো তুমি ব্রেকফাস্ট করেছো?
রুনু : …
দহন : করোনি না? আগে কিছু খেয়ে নাও তারপর কাজ করো। ওকে?
রুনু : জী ভাইজান।
রুনু চলে গেলো।
দহন : এই যে ম্যাডাম স্যুপটা ফিনিশ করেন।
বলেই দহন কফি হাতে নিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসলো।

বহ্নি : তুমি আজকে অফিস যাবেনা?
দহন : 😒।
বহ্নি চুপ মেরে গেলো। স্যুপ খেতে লাগলো। তখন ওর মনে পরলো যে দহনের নানু অসুস্থ।
বহ্নি : দহন… মামনির সাথে কথা হয়েছে? নানুর শরীর এখন কেমন আছে?
দহন : আগের থেকে একটু ভালো।
বহ্নি : বলছি কি… চলোনা নানুকে গিয়ে দেখে আসি। এখন তো আমার জ্বর চলেই গিয়েছে ।
দহন : একদম ভালোগিরি দেখাবানা আমাকে বুঝেছো? অসহ্য লাগে আমার এসমস্ত ভালোগিরি… চুপচাপ স্যুপটা শেষ করে মেডিসিন নিয়ে আরাম করো। গট ইট?

বলেই দহন ল্যাপটপের ভেতর ঢুকে গেলো । বহ্নি আবারও দহনের কথায় কষ্ট পেলো। ও জানে যে দহন ওর ভালোর জন্যই বলেছে। কিন্তু ও ভালোগিরি করা বা দেখানোর জন্য কথাটা বলেনি। ও ভালোবেসে মন থেকেই কথাটা বলেছে। আর ভালোবাসাটাকে ভালোগিরির নাম দেওয়াতে কষ্ট পেয়েছে । বহ্নি চুপচাপ স্যুপটা খেয়ে মেডিসিনটাও খেয়ে নিলো। এরপর চুপটি করে শুয়ে পরলো। দহনও বুঝতে পারলো যে বহ্নি কষ্ট পেয়েছে।

দহন মনে মনে : প্রেমিকার থেকেও বউ ভয়ংকর। আর বউ যদি এমন ঠান্ডা মেজাজের হয় তাহলে তো আরো ভয়ংকর। কিছু না বলেও ভয়ংকর জবাব দেয়। আর যদি জীবনে বিয়ে করেছি… বাসবোনা বউটাকে ভালো।

বহ্নি মনে মনে : ভালো কথাটাও ভালোভাবে বলতে পারেনা। মনে হয় এর জন্মের পর মামনি এর মুখে মধু দিতেই ভুলে গিয়েছিলো। ডাকাত ১টা…

দহন : এই মিসেস ভীতু…
বহ্নি মনে মনে : সারা দিবোনা। ডাকতে থাকুক।
দহন : এই…
বহ্নি : …
দহন : বহ্নি…
বহ্নি : …
এবার দহন ঝাড়ি মেরে ডাক দিলো : বহ্নি…
বহ্নি কেপে উঠে বসলো।
বলল : হামম।
দহন : কেন এতো ঝাড়ি খেতে মন চায় তোমার…
বহ্নি : …
দহন : দেখো নানুবাসা এখান থেকে ৩-৪ঘন্টার রাস্তা। জার্নি করতে পারবা?
বহ্নি : হামমম।
দহন : ওকে দেন কালকে সকাবে বের হবো।
বহ্নি : আজকে বিকালেই চলোনা।
দহন : 😒।
বহ্নি : ওকে ওকে… কালই যাবো।

.

বিকালে…
২জন ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তখন দহনের বেস্টফ্রেন্ড রনক এলো।
রবি : হাই মাই জান…
দহন : হেই রনক…
২জন ২জনকে জরিয়ে ধরলো।
দহন : কি খবর তোর দোস্ত।
রবি : আর আমাদের খবর কে রাখে? সুন্দরি ভাবিকে পেয়ে তো সব ভুলে গিয়েছিস। দেখি সর… আসসালামু আলাইকুম কিউট ভাবি।
বহ্নি : ওয়ালাইকুম আসসালাম।
রবি : ভালো আছো ভাবি?
বহ্নি : জী… আপনি ভালো আছেন ভাইয়া? বাসার সবাই ভালো আছে?
রবি : সবাই ভালো আছে। ভাবি… এই গাধাটার হাতে দিবোনা তোমার হাতে দিবো।
বলেই রনক কার্ড বের করে বহ্নির হাতে দিলো।
বহ্নি: ???
রবি : আমার বিয়ের কার্ড ভাবি…
বহ্নি : কংগ্রেচ্যুলেশন…
রবি : থ্যাংক ইউ ভাবি।
দহন : তোর বিয়ে… আর এখন জানাচ্ছিস।
রবি : ভুল হয়ে গিয়েছে। বিয়ের পর জানালে ভালো হতো। 😁।
দহন : সর বাদর কোথাকার…
বহ্নি : আপনারা বসুন আমি আসছি…
বহ্নি কিচেনের দিকে গেলো।
দহন মনে মনে : এই মেয়েটা আবার কিচেনের দিকে গেলো। এর মনে হয় কাজ করার বাহানা খোজে।
রবি দহনের চোখের সামন তুরি বাজালো।
রবি : কিরে বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস যে? এতোটুকু সময়কি বউকে চোখের আড়াল করতে মন চায় না হামম?
দহন : শাট আপ। যা জানবি তা নিয়ে কথা বলবি না। ওর জ্বর এসেছে।
রবি : ওহ। শোন আমার বিয়ের বিয়ের দায়িত্ব তোর। যেহেতু ডেসটিনেশন ওয়েডিং… তাই এ টু জেড তোকে আমার চাই।
দহন : আই উইল ট্রাই…
রবি : ট্রাই…? থাবরা খাবি। তুইনা আমার বেস্টফ্রেন্ড।
দহন হাসি দিলো।
রবি : দহন ১টা কথা বলি?
দহন : বল।
রবি : আমি অনেক হ্যাপী তোর জন্য যে তুই মুভ অন করেছিস। যে মেয়েটা সবটা জেনে তোর জীবনে এসেছে তুই তাকে সবদিক দিয়ে এক্সেপ্ট করেছিস…
দহন : নারে… আমি অতোটাও মহান না। আমি এখনও ওর সাথে নিজেকে ভালোবাসার বন্ধনে বাধতে পারিনি রে।
রবি : হুয়াট এন্ড হুয়াই? এটা তো ভুল রে।
দহন : হামম রে। বাট আমি…
তখন বহ্নিকে আসতে দেখে দহন চুপ হয়ে গেলো। চা-নাস্তা করে আড্ডা মেরে রবি চলে গেলো।

বহ্নি : ডেসটিনেশন ওয়েডিং… সিলেটে…
দহন : হামম। বাট আমরা যাবোনা।
বহ্নি : কেন? ভাইয়া না তোমার বেস্টফ্রেন্ড।
দহন : হামম। সেই সাথে ও কারনেরও ফ্রেন্ড । আর তাই বিয়েতে কাকনও আসবে। তাই আমি যাবোনা।
বহ্নি : কিন্তু ভাইয়া যে কষ্ট পাবে…
দহন : কিছু করার নেই। আমি কাকনকে ভালো ভাবে চিনি। ওখানে গেলে ও অনেক কাহিনি করবে। যা নিস্বন্দেহে আমাদের সম্পর্কের অবনতি আই মিন আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে। যেটা আমাদের ২জন এবং আমাদের পরিবারের জন্য ভালো হবেনা। ওহ সরি… আমাদের মধ্যে তো এখন আর কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক নেই। আমি তো তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যই নই। আমি কখনো তোমার অর্নবের মতো হতে পারবোনা।

বলেই দহন বেরিয়ে গেলো।
বহ্নি : দ…
বহ্নি বুঝতে পারলো যে দহন ভীষন কষ্ট পেয়েছে ওর কথাগুলোতে। সেদিন দহন বাসায় ফিরে বেশ ঠান্ডা মেজাজে কথা বলল। দহনের এমন আচরনের সাথে বহ্নি অপরিচিত। পরদিন ওরা দহনের নানুবাসায় গেলো। ৩দিন থেকে সবাই ফিরে এলো ।

.

পরদিন…
দহন পকেটে হাত দিয়ে বারান্দায় দারিয়ে আছে। তখন বহ্নি ২কাপ কফি নিয়ে হাজির হলো। ১কাপ কফি দহনের দিকে এগিয়ে দিলো । দহন নিলো ।
দহন : থ্যাংক ইউ।
বহ্নি : ওয়েলকাম। দহন…
দহন : হামম।
বহ্নি : সেদিনরাতের কথার জন্য আই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি। আসলে … আমি ওভারিয়্যাক্ট করেছিলাম । সবকিছু জেনেবুঝেও অবুঝ টিনেজারদের মতো আচরন করেছিলাম। সরি ফর দ্যাট।
দহন কফির কাপটা রেখে বহ্নিকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখলো। বহ্নিতো মহাঅবাক দহনের এমন আচরনে। ও একদম শক্ত হয়ে গিয়েছে ।
দহন : আমরা কি আমাদের লাইফ অন্যসব স্বাভাবিক কাপলের মতোকরে সাজাতে পারিনা…!!!

.

চলবে…