ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব-৩৬

0
2192

#ভালোবেসে_ফেলেছি
part : 36
writer : Mohona

.

বহ্নি : শোনো তার আগে তোমাকে প্রমিস করতে হবে যে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যাবেনা ক্ষেপে…
দহন : যদি অমন কিছু হয় তাহলেই অবশ্যই এখনই গিয়ে ওই অর্নবকে…
বহ্নি : ফাইন যা ইচ্ছা করো। আমি কিছু বলবোনা।
দহন : আরে… আজব তো। এটা কেমন কথা?
বহ্নি : এটা এমনই কথা।
দহন : তুমি কিন্তু বড্ড জেদী হয়ে গিয়েছো…
বহ্নি : দেখতে হবেনা বউটা কার?
দহন : বলো না কলিজাপাখি..।
বহ্নি : তাহলে প্রমিস করো …
দহন : ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু…
বহ্নি : ঠিকই হচ্ছে। কারন এটা আমার প্রতিশোধের ব্যাপার।
দহন : জানিনা কি ঘটনা কিন্তু তুমি আমি কি আলাদা?
বহ্নি : না আলাদা নয়… আর তাই তো তোমার সাপোর্ট চাইছি। প্লিজ…
দহন : ওকে প্রমিস… তুমি যেটা বলবে সেটাই করবো। এবার তো বলো…

বহ্নি সবটা বলল। আর সবটা শুনে দহন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তাহলে ওর ধারনাই ঠিক হলো।
দহন : আই জাস্ট নিউ ইট। বাট আমি ভেবেছিলাম যে ও জরিত আছে… নাটের গুরুই যে ও সেটা জানতাম না।
বহ্নি : হামমম।
দহন : বহ্নি তুমি তোমার প্রমিসটা তুলে নাও… আমি ওকে শেষ করে দিবো।
বহ্নি : না… আর অর্নব যেন কিছুতেই জানতে না পারে যে তুমি জানো…
দহন : তুমি ওকে সহ্য করছো কিভাবে বলো তো…
বহ্নি : ওকে আমি একদম সহ্য করছিনা তো। একদমই না। তবে জানো ও বলে়ছে যে ৬৫% প্রশাসন ওর হাতে। কোনো পুলিশ নাকি ওকে গ্রেফতারই করতে পারবেনা। ইভেন করবেও না। তাই আমি ওকে দেখাবো যে ওর ধারনাই সবসময় ঠিক না।
দহন : ও যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে?
বহ্নি : ও আমার কোনো ক্ষতিই করবেনা। ও করলে তোমাদের আর ভাবি-বাচ্চাদের করবে। ওদেরকে যতো তারাতারি সম্ভব সকলের চোখের আড়াল করতে হবে…
দহন : কিন্তু তোমার এই অবস্থায় আমি কি করে তোমাকে এমন রিস্কি কাজের অনুমতি দেই বলো তো। আর তাছারা পুলিশের ট্রেনিং ও তো আছে… ৬মাসের ট্রেনিং… ভেবে দেখেছো…
বহ্নি তো এটা ভুলেই গিয়েছিলো….
দহন : আমার মনে হয় আমাদের বাপীর সাথে কথা বলার দরকার। বাপীই কোনো সল্যুশন দিতে পারবে।
বহ্নি : হামমম।

.

পরদিন…
বিকালে…
ওরা দীপনকে সবটা বলল।
দীপন : মামনি… তুমি পুলিশে জয়েন করতে চাও তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। পুলিশের ট্রেনিং ফেনিং এর কথাও আমি বলবোনা। কারন দহনের মামা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব। আর তাছারাও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথেও আমার সম্পর্কটা ভালো আছে। আর তার তোমার বাবা পুলিশে থাকায় তুমি তো জব অফার পেয়েছোই। আমার ভাবনা তোমার হেল্থ কন্ডিশন নিয়ে । পুলিশের চাকরি বেশ কঠিন চাকরি। প্রতিহিংসার চাকরি। সব আমি তবুও বাদ দিতাম যদি এখন এমন ১টা সময় না থাকতো। তোমার জায়গায় মনি থাকলেও আমি এটাই ভাবতাম। এটাই বলতাম।
বহ্নি : জানি বাপী। তুমি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করো। ইনফ্যাক্ট আরো বেশি। বাপী পুলিশের চাকরী করার আমারও কোনো ইচ্ছা ছিলোনা। ইভেন এখনও নেই । তবে প্রথম জয়েন করতে মন চেয়েছিলো বাবা আম্মু ভাইয়া মারা যাওয়ার পর। ওদের খুনীদের শাস্তি দেয়ার জন্য । আর এখন খুনী আমার সামনে। আমি জানি ওই অর্নব আমার পরিবারের হত্যাকারী। হয়তো এমন অনেক পরিবারকে ও শেষ করে দিয়েছে। আরও করবে। তাই ওর শাস্তি পাওয়াটা জরুরী। আর বাপী পুলিশের চাকরি আজীবন করতে আমি চাইনা। এটাই হবে আমার প্রথম আর শেষ কেইস। আমি কেবল ওর হাতে হাতকরা পরাতে চাই।
দীপন : হামম। ওকে।
দহন : কিন্তু বাপী…
দীপন : তুমি ওর জায়গায় থাকলে ওয়েট করতে পারতে?
দহন : …
দীপন : উই শুড সাপোর্ট হার।
দহন : হামমম।
বহ্নি : ওহ বাপী আরেকটা কথা…
দীপন : হ্যা বলো মামনি…
বহ্নি : আমার পুলিশে জয়েন করার বিষয়টা যেন একদম গোপন থাকে। কোনোক্রমেই যেন অর্নবের কানে না যায়… আর হ্যা তোমাদেরকে এমন ১টা সুরক্ষিত জায়গায় যেতে হবে যেখানে কেউ তোমাদের খুজে পাবেনা।
দীপন : হামমম।

দীপন নিজের পাওয়ার কাজে লাগিয়ে বহ্নিকে পুলিশে ঢুকিয়ে দিলো। বাট খবরটা গোপন রাখার ব্যাবস্থা করলো।

.

৬দিনপর…
অর্নব বাসায় এলো। ওকে দেখে দহন ক্ষেপে গেলো।
দহন : তুই আবার কেন এ বাসায় পা রেখেছিস?
অর্নব : কারন আমার বেস্টফ্রেন্ড আমাকে আসতে বলেছে।
দহন : মিথ্যা কথা।
অর্নব : বিশ্বাস না হলে বহ্নিকে ডেকে জিজ্ঞেস করো…
দহন : তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোর কথায় বহ্নিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো। তুই বেরিয়ে যা। না হলে এখন এই মুহুর্তে তোকে জানে মেরে ফেলবো।
অর্নব : যাবো না। গেলে আজকে বহ্নিকে সাথে নিয়েই যাবো।
কথাটা শুনতেই দহন অর্নবের গলা চেপে ধরলো।
দীপন : দহন… ছারো ওকে… দহন… লিভ হিম…
নিশা : দহন ছার ওকে বাবা…
অর্নব কঠোরভাবে দহনকে ছারিয়ে নিলো।
অর্নব : তোমার কপাল ভালো যে এতোকিছু করার পরও তুমি জীবীত আছো ।
দহন : ই…
বহ্নি : দহন.. প্লিজ থামো…
দহন : বহ্নি তুমি…
বহ্নি : দহন… অর্নব কি বলার আছে তোমার?
অর্নব : তুই কি জানিস না?
বহ্নি : ….
অর্নব : বল…
দহন : কিসের কথা বলছে ও বহ্নি…
বহ্নি : …
অর্নব : জেনে যাবে… তার আগে আমি বহ্নির সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাই…
দহন : তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে আমার বউর সাথে কথা বলতে দিবো…
অর্নব : বহ্নি… আমার হাতে সময় নেই।
বহ্নি : দহন … ১৫মিনিট সময় দাও… প্লিজ…
অর্নব : 😏।
দীপন : কথা বলাতে এমন কোনো মহা অপরাধ না। সো লেট দেম টক।

.

অর্নব : কি ডিসিশন নিলি…
বহ্নি : অর্নব বিষয়টা অতো সহজনা। দেখ আমি দহনকে অনেক বেশি ভালোবাসি… অনেক। আমি ওকে ছারা নিজেকে ভাবতেও পারিনা।
অর্নব : আর আমি যে তুই ছারা অচল… তারবেলা… তুই ১টা বার আমার কথা ভেবে দেখেছিস?
বহ্নি : দেখো আমি দহনকে যতোটা না ভালোবাসি… দহন আমার থেকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে। আমি মরে যাবো ওকে ছারা…
অর্নব : ওকে ফাইন… তবে মরে যাওয়ার আগে তোর বর-শশুড়-শাশুড়ি-ননদ-ভাবি-ভাতিজা-ভাতিজী … সবাইকে মরতে দেখবি… যেমন করে মরতে দেখেছিলি তোর বাবা-মা-ভাইকে … তখন … তোর সন্তান পৃথিবীতে এলে তার ভবিষ্যৎ আরো খারাপ।
বহ্নি : তততুই আমার সাথে এমনটা করতে পারবি…. বল… বল না…
অর্নব : কেন পারবোনা। অবশ্যই পারবো…. ভুলে যাস না আই অ্যাম মাফিয়া কিং ডেভিল…
বহ্নি : তবে মনে রেখো মিস্টার মাফিয়া কিং ডেভিল… বহ্নি দহনের থেকে দূরে গেলেও দহনেরই থাকবে। কারন বহ্নি শুধুই দহনের… তোকে কখনোই মনে জায়গা দিবেনা।
অর্নব : না দিলি জায়গা… তবুও তো তোর পাশে অন্য কাউকে দেখতে হবেনা… এখন তোর সিদ্ধান্ত কি সেটা বল… ইয়েস অর নো…
বহ্নি : কি গ্যারান্টি আছে যে আমি তোর কাছে গেলে আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবিনা…
অর্নব : গ্যারান্টি চাইছিস? আমার মুখের কথা তোর বিশ্বাস হয়না?
বহ্নি : তার কোনো অপশন রেখেছিস তুই…
অর্নব : বিশ্বাস না করলে নেই। আমার কাছে চলে এলে ভালো না হলে সবাইকে শেষ করে দিবো।
বহ্নি : তাহলে জেনে রাখ তুইও আমার কাছে কোনো অপশন রাখলিনা। আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।
অর্নব : বহ্নি…
বহ্নি : খবরদার চিল্লাবিনা। আমি তোর হুকুমের গোলাম নই। যদি আমার পরিবারের সুস্থতার গ্যারান্টি না পাই তবে আমার জীবন দিয়ে দিবো। তবুও তোর কাছে যাবোনা…
অর্নব রেগে বেডে ১টা লাথি মারলো।
অর্নব : অনেক সাহসী হয়ে গিয়েছিস ..
বহ্নি : আমাক দহনের অবদান..
অর্নব : দহন দহন দহন…
বলেই অর্নব পকেট থেকে ১টা পেনড্রাইভ বের করে বহ্নির হাতে দিলো।
বহ্নি : এটা কি?
অর্নব : এই পেনড্রাইভে আমার সকল কাজের সকল ইনফর্মেশন আছে… আ আ আ.. এটা দিয়ে ভুলেও আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করিসনা। কারন পাসওয়ার্ড ছারা এই পেনড্রাইভ ওপেন হবেনা। এদের সবাইকে ছেরে তুই আমার কাছে গেলে তোকে পাসওয়ার্ড জানাবো। যদি আমি কখনো তোর পরিবারের সাথে কোনে ক্ষতি করি তবে তুই এটা দিয়ে আমাকে বরবাদ করে দিতে পারিস…
বহ্নি : কি গ্যারান্টি আছে যে এটা কোনো সাধারন পেনড্রাইভ নয়… তুই আমাকে বোকা বানানোর জন্য এগুলো বলছিস…
অর্নব : ল্যাপটপ আছে তোর ঘরে… থাকলে দে… আমি তোকে দেখাচ্ছি এর ভেতর কি আছে…

অর্নব দেখালো।
অর্নব : এবার বিশ্বাস হলো?
বহ্নি : হামমম।
অর্নব : এখন চল আমার সাথে।
বহ্নি : ১মিনিট দারা… আমাকে ৩দিন সময় দে… আমি এই ৩দিন দহনের সাথে কাটাতে চাই…. এমন ভাবে কাটাতে চাই যেন সারাটাজীবন এই স্মৃতিগুলো নিয়ে বাঁচতে পারি। এটাই তোর কাছে আমার শেষ আবদার… ৩দিন পর আমি নিজে তোর দুয়ারে এসে দারাবো।
অর্নব : তুই নিশ্চয়ই এটা খোলার জন্য ৩নিচ্ছিস। আমাকে ফাসানোর জন্য নিচ্ছিস।
বহ্নি : না রে। আমি তোর জন্যই ৩দিন নিচ্ছি। সবাইকে ছেরে যাওয়ার জন্য আমার শক্তি প্রয়োজন। শক্তিটা জোগানোর জন্য আমি ৩দিন নিচ্ছি… ৩দিন পর সবছেরে তোর কাছে যাবো। সব ভুলে যাবো। কথা দিলাম… আজকে থেকে ৩দিনপর আমি তোর দুয়ারে গিয়ে দারাবো… তুই এমন সাজে বহ্নিকে দেখবি যে কল্পনাও করতে পারবিনা। কথা দিলাম। দেনা আমাকে ২টা দিন ভিক্ষা…
অর্নব : আচ্ছা যা দিলাম। কিন্তু ধোকা দেয়ার চেষ্টা ভুলেও করিসনা। সব ধ্বংস করে দিবো আমি…

অর্নব হনহন করে চলে গেলো।

.

দহন : কি হলো? ও বাজে কিছু করেনিতো?
নিশা : উফফ… তুই তো তোর ল্যাপটপে সবই দেখলি।
দীপন : তবে ভাবতেও পারিনি যে এমন কিছু হবে। মেঘ না চাইতেই জ্বল … এটা ওর চাল নয়তো?
বহ্নি : জানিনা বাপী…
দহন : দেখা যাক কি হয়…
দীপন : পাসওয়ার্ডটা যদি জানা যেতো।
দহন : যাবে যাবে… বাপী… এই রুমের মধ্যে এতোগুলো ক্যামেরা… কোনো না কোনাে অ্যাংগেলের ক্যামেরাতে তো নিশ্চয়ই উঠবে…. লেট মি চেক…

অর্নব : আবেগে এসে পেনড্রাইভ দিয়ে এসে কোনো ভুল করিনি তো? ও যদি ওপেন করতে চায়? পারবেনা। পাসওয়ার্ড দেয়া তো। আর আনলক করার সময় তো আমি ওকে দেখাইনি… আর ১বারও যদি ভুল পাসওয়ার্ড দিতে যায় তবে তো আমি জেনেই যাবো…

দহন : গট ইট … গট ইট… এই দেখো… এই ক্যামেরাটার ফুটেজ থেকে পাসওয়ার্ডের ১ম অংশ আর এই ক্যামেরার ফুটেজে ২য় অংশ দেখা যাচ্ছে।
দীপন : গ্রেট। তাহলে তোমার ক্যামেরা লাগানোর বুদ্ধিটা সফল হলো।
দহন : হ্যা । আমি তো জাস্ট ওকে চতু্র্দিক দিয়ে অবজার্ভ করার জন্য … আর ওর খুন করার স্বীকৃতি + ওর মাফিয়া কিং ডেভিল হওয়ার সত্যটা রেকর্ড করার জন্য এগুলো করেছিলাম। বাট সারপ্রাইজিংলি রাঘব বোয়াল হাতে পরলো। গ্রেট। এন্ড ইউ মাই কলিজা পাখি… আই জাস্ট প্রাউড অফ ইউ। একে বারে ফাটিয়ে দিয়েছো….

.

৩দিনপর…
অর্নব সারারাত ঘুমায়নি বহ্নির অপেক্ষায়। সেই সাথে টেনশনও আছে যে বহ্নি আসবে কি আসবে না। তখন ডোরবেল বেজে উঠলো। অর্নব ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। বহ্নি দারিয়ে আছে। কিন্তু বহ্নিকে দেখে চরম অবাক হলো অর্নব । কারন বহ্নির পরনে পুলিশের পোশাক…
অর্নব : বহ্নি তুই এই পোশাকে?
বহ্নি অর্নবের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাতকরাটা অর্নবের মুখের সামনে ঝুলিয়ে
বলল : ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিস্টার অর্নব । আই মিন মাফিয়া কিং ডেভিল…

চলবে…