Three Gangsters Love Part-17

0
3532

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_17.

হাইওয়ের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে পাঁচটি কার দ্রুত গতীতে চলছে। এতটা দ্রুত গতীতে চলছে যে রাস্তার ধুলো উঁড়িয়ে দিয়ে চোখ ধাদিয়ে যাচ্ছে। আর কিছুটা সামনে এগোবার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি গাড়ি এক সাথে আগুন ধরে যায়। ব্লাস্ট হয়ে যায় গাড়ি তিনটি। দাউ! দাউ! করে আগুন জ্বলতে লাগলো।কালো মুখোশ পড়া একটি লোক এটা দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে মুখে পৈচাশিক হাসি ফুটে ওঠে তার। ফোন বের করে কল দেয় একটি নাম্বারে। প্রথম রিং হতেই ফোন রিসিভ করে ওপর পাশে থাকা বিপলপ তালুকদার। উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-“কাজ শেষ?”

-“জ্বী,স্যার। পার্টি করেন।”

কথাটা শুনেই বিপলপ তালুকদারের মুখে বিজয়ি হাসি ফুটে। চোখ জোড়া খুশিতে চিকচিক করছে তার। ফোন কেঁটে তিনি ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে দোল খেতে লাগলো। ঠোঁটে তখনো হাসি লেগে ছিল। অপর পাশের লোকটি পিছনে ফিরতেই পাঁচজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তাদের গায়ের কোট থেকেই বুঝতে পারে এরা কারা। লোকটি দৌঁড়াতে নিলে তাদের মধ্যে থেকে একজন লোক তাঁর বাঁ পায়ে গুলি করে। লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। লোকটির কাছে এসে চুল ধরে টেনে ছিঁচড়ে তাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে লাগলো।

ভাইব্রেশন করা ফোনটি বেজে উঠল সাব্বিরের। পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে।

-“ছোট স্যার! কাজ হয়ে গেছে। তালুকদারের লোক এখন আমাদের কাছে বন্দি আছে। যদি পারমিশন দেন তো মেরে দেই।”

বডিগার্ড টির কথা শুনে সাব্বির তীক্ষ্ণস্বরে বলে,
-“নাহ! ও’কে বেঁধে রাখো। ভাইদের সাথে কথা বলে আমি তোমাদের জানাব।”

-“ওকে ছোট স্যার ।”

টু..টু..টু….

ফোন কেঁটে দেয় সাব্বির।এটা রুদ্রদের প্লান ছিল। ওদের যাওয়ার কথা ছিল আজ রাতে। কিন্তু মত পাল্টে প্লান অনুসারে সকালে বাড়ি থেকে একে একে পাঁচ টি গাড়ি বের হয়। গাড়ি বের হবার পর পরি ওরা সবাই হেলিকপ্টারে চড়ে কাপ্তাই রওনা‌ দেয়। গোপনে ওদের হানিমুন ও পিকনিকের যাওয়ার কথাটা জানতে পারে বিপলপ তালুকদার । খবরটা পাওয়া মাত্রই তালুকদার তার লোক পাঠায়। যেই রাস্তা দিয়ে যাবে ওই রাস্তায় বোম ফিট করে রাখে। ওই রাস্তা অতিক্রম করার সময় গাড়িতে আগুন ধরে ব্লাস্ট হয়ে যায়। তালুকদার ভেবেছে তার লক্ষ্যে তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন। কিন্তু না! পুরাই ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
.
কাপ্তাই এর সৌন্দর্য সকলের চোখেই দোলা দেয়। কাপ্তাই লেকের অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুহূর্তেই ফুরফুরা করে দিতে পারে মন,মেজাজ। আকাশ থেকে কাপ্তাই লেক এর অপরূপ সৌন্দর্য সবার নজর কেঁড়ে নিয়েছে। কাপ্তাই এর অপরূপ সৌন্দর্যের সবুজে ঘেরা পাহাড় দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায় সবার। কাপ্তাই এসে রিমি,সিমি,নিধি ও ইশা প্রচণ্ড হ্যাপি। ওরা আগে আসলেও,রিমি,সিমি,নিধি রা এখানে এই প্রথম এসেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘেরা কাপ্তাই হ্রদ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আরও একটি নিদর্শন কাপ্তাই লেক। এখান কার কাপ্তাই লেক এক একথায় অসাধারণ। শুভলং ঝর্না,ঝুলন্ত ব্রীজ। প্রকৃতির এ এক অপার মহিমাময়।

হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার সাথে সাথেই রিমি,সিমি,নিধি,ইশা বাংলর ভেতরে প্রবেশ না করে কাপ্তাই এর নির্মল সৌন্দর্য চার দিক তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখছে। মুগ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে ওরা।ওদের তিন জনের কাছে এটা সপ্নের দেখ বলে মনে হচ্ছে। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র,সাব্বির,ফাহিম আর ওদের দাদু সহ ওদের খুশির জলক মাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের কে খুশি দেখে তাদের কাছেও ভালো লাগছে।

আলতাফ চৌধুরী লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে ওদের সামনে এসে বলল,
-“নাতবউ রা! বাকি সৌন্দর্য পরে দেখবে। তার আগে ফ্রেশ হয়ে নেও।”

রিমি খুশি মুডে বলে,
-“দাদু,আমি পাগল হয়ে যাব। এত সৌন্দর্য ঘেরা দেশ আমি আগে কখনোই দেখিনি।”

সিমি দু হাত মেলে দিয়ে বলে,
-“সত্যি দাদু অনেক সুন্দর ।”

-“একদম সপ্নের মতো।” নিধি বলে ।

-“হুম। আরো অনেক কিছু বাকি আছে দেখার। তার আগে নিজেরা ফ্রেশ হয়ে নেও। বিকেলে ‘লেক ভিউ আইল্যান্ড’ যাব।”

ইশা দু গালে হাত রেখে বলে,
-“ওয়াও দাদু! ওই আইল্যান্ডটা অনেক সুন্দর।আই এম সো হ্যাপি।”

-“হ্যাঁ! এখন ভেতরে যাও সবাই।”

-“জ্বী,দাদু।”

ওরা সবাই ভেতরে চলে এলো। ওদের বাংলটা একটি শুনসান এড়িরার মধ্যে। এখান থেকে বাজারের পথ প্রায় এক কিলোমিটার দূর হবে। বাংলর চার পাশে বডিগার্ড রা দাঁড়ান। পাহারা দিচ্ছে । ওরা আসার আগেই বডিগার্ড রা এসে এখানে পাহারা দিচ্ছে। বলতে গেলে সিকিউরিটি কোনো ত্রুুটি রাখেনি রুদ্র রা।
.
.
সিমি বিছানায় উপর লেদার উঠিয়ে কাঁপড় বের করতে নিলে তখনি শুভ্র রুমে প্রবেশ করে। সিমির হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে আসে। আচমকা একটা করার কারণে সিমি চমকে যায়। সিমির এক হাত শুভ্র ওর পিঠের সাথে চেপে ধরে। আরেক হাত সিমির ঘাড়ের কাছে রেখে নরম স্বরে বলে,
-“কালকে হানিমুনের যাওয়ার কথা শুনে বিষম খেয়েছো। আজকে ডেমো দেখাবো হানিমুন কিভাবে করে।”

সিমির কঁপাল কুঁচকে যায়। কাল রাতে কিছু না বললেও শুভ্রযে রেগে ছিল সেটা বুঝতে পেরেছে সিমি। আর এখন তার ঝাল ওঠাবে। শুকনো ঢোক গিলে সিমি। শুভ্র বাঁকা হেসে সিমির থুতনিতে চুমু খেয়ে বলে,
-“ভয় পাচ্ছো?”

সিমি চুপ করে আছে। সিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-“আগেই বলেছি,পারমিশন ছাড়া উহু!”

সিমি কিছুটা স্বস্থি পায় কথাটা শুনে। এখন শুভ্র দূরে সরলেই বাঁচে। কারণ সিমির বুকের মধ্যে হার্ট দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে।শুভ্র সিমির কাছ থেকে সরে আসে। বড় থাইগ্লাস খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় শুভ্র। সিমি কাঁপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
.
.
রিমি রুমে এসেই নরম বিছানা দেখে ধুপাশ করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। নরম বিছানায় শুতে খুব শান্তি লাগছে। আরামের ঠেলায় চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। ঠিক তখনি ওর গায়ের উপর কিছু একটা পড়েছে মনে হচ্ছে। চোখটা মেলেই দর্শন হয় গ্যাংস্টার বাবু রুদ্রের দুষ্ট মুখখানা। যা দেখে রিমির বুকের ডিপডিপ শব্দ হতে শুরু করে।
রিমি চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বিরক্তি চেহারা নিয়ে রুদ্রের বুকে দু’হাত রাখে ও’কে সরানোর জন্য।। রুদ্র রিমির হাতের অনুসরণ করে হাতের দিকে তাকায়। টেডি হাসি দিয়ে বলে,
-“গেঞ্জি খুলবে নাকি।”

কথাটা শুনেই রিমি বুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। রুদ্র ফিক করে হেসে দেয়। রিমির মুখের উপর ঝুঁকে ডান গালে একটি আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে,
-“ইউ নো রিমি, হানিমুন কাকে বলে জানো?”

রিমি মাথা আস্তে করে দুলিয়ে বলে না।

-“বলবো?”

রিমি মাথা দুলিয়ে না বলে।

-“তার মানে তুমি জানো?” এক ভ্রু উঁচু করে বলে।

রিমি এবারও মাথা দুলিয়ে না বলে।

রুদ্রের ঠোঁটে তখনো লেগে আছে টেডি হাসি। আলত করে রিমির ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে সরে আসে । ঠোঁট ছোঁয়ার আগেই রিমি চোখ কুঁচকিয়ে বন্ধ করে নেয়। রুদ্র রিমির চোখ বন্ধ দেখে আঙুলের উল্টো পিঠ দিয়ে গালে স্লাইড করে। রিমি চট করে চোখ খুলে ফেলে। রুদ্র গালে হাত রেখে রিমির কপালে ওর কপাল ঠেকায়। পরম যত্নে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। এই মুহূর্তটা গভীরে গিয়ে অনুভব করতে চায় রুদ্র। রিমির চোখ জোড়া তখন খোলা ছিল। খুব কাছ থেকে রুদ্রকে দেখছে। এক নিমিষেই মনটা সান্ত হয়ে যায় রিমির। প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেয় সে।
.
.
রুমে ঢুকে অভ্র ওর ফোনটা বিছানার উপর রেখে সোফায় পা ঝুলিয়ে বসে। নিধি ব্যাগ থেকে কাঁপড় বের করতে যাবে তখনি অভ্র বলে,
-“নিধি ফোনটা দেও।”

নিধি চট করেই বলে ফেলে,
-“পারছি না।”

অভ্র কপাল কুঁচকে বলে,
-“কী পারছো না?”

নিধির হুশ আসে একটু আগে কী বলেছে । দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে অভ্রের সামনে ধরে। অভ্র ফোন নেওয়ার বাহানায় নিধির হাত টেনে ধরে পাজরা কোলে বসায় নিধিকে। নিধি চালাকি বুঝতে পারে। অভ্র নিধিকে আরেকটু কাছে নিয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,
-“চলো হানিমুনের কাজটা সেরে ফেলি!”

-“কিন্ত তার আগে আমার একটা কথা ছিল।” মৃদু স্বরে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে নিধি।

অভ্র মুচকি হেসে বলে,
-“হুম,বলো?”

নিধি অভ্রের উপর থেকে চোখ সরিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
-“আমি প্রেগন্যান্ট!”

নিধিকে সহ সাথে নিয়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় অভ্র। কথাটা শুনে মাথায় যেনপ উঁড়ন্ত প্লেন পড়েছে। বিয়ে হয়েছে এক মাসও হয়নি। তার উপরে ওদের মাঝে কিছুই হয়নি। তাহলে নিধি প্রেগন্যান্ট হলো কী করে? অভ্র চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে বলে,
-“এটা কী বলছো তুমি নিধি?”

নিধি মিন মিন করে বলে,
-“দাঁড়ান সত্যিই টা বলছি।”

নিধি ব্যাগ থেকে জামা-কাঁপড় বের করে এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে বলে,
-“ওটা মিথ্যে কথা ছিল।” ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় নিধি। অভ্র আহম্মক হয়ে যায়। এত বড় একটা মিথ্যা কথা বলেছে শুধু ওর কাছ থেকে পালানোর জন্য? কী ফাজিল মেয়ে এটা!
ফিক করে হেসে দেয় অভ্র। মনে মনে বলে,”সুযোগ পেলে আমিও তোমায় দেখে নিবো।”

ফ্রেশ হয়ে সবাই এক সাথে দুপুরের খাবার খেতে বসে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে ঘুরতে বের হয় ‘লেক ভিউ আইল্যান্ড’। গাড়ি থেকে নেমে রিসোর্ট নীলকৌড়ি‌ বোটে ওঠে । বোট ছেড়ে দেয়।নীলকৌড়িতে বসে লেক ভিউ দেখার মজাই আলাদা। নীলকৌড়ি অতিথির যে কোনো বর্জার চেয়ে এক কাঠি এগিয়ে। আছে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এ,লি,ডি টিভি,চওয়া বিছানা,বাথরুম এবং লেক উপভোগ করার সব ব্যবস্থা। সবার বোটের ছাদের চেয়ারে বসে কাপ্তাই লেক ভিউ এর সৌন্দর্য উপভোগ করছে। সাব্বির ওর ক্যামেরায় বন্দি করে নিলো সুন্দর দৃশ্য গুলো। সবাই খুব খুশি। বিকেল গড়িয়ে যায় পুরো লেক ঘুরতে । বাংলতে ফিরে আসে সন্ধ্যার সময়। সবাই কিছুটা টায়ার্ড। ইশা আগে থেকেই বলে রেখেছিল রাতের ডিনার বাংলর বাহিরের বাগানে করবে। তাই এই অনুজাই আগে থেকেই গার্ডস রা বড় একটি তাবু টানিয়ে রেখেছে বাগানে। ডিনারের সব ব্যবস্থা করা হয়। বড় একটি গোল টেবিল ও দশটি চেয়ার সেটআপ করা। সবাই ফ্রেশ হয়ে চলে আসে বাগানে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সবাই ডিনার শেষ করে। যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়। সকালে সবার আগে ফাহিম ঘুম থেকে ওঠে। ওঠেই ওর জানালার পর্দা সরিয়ে জানালা খুলে দিয়ে তাজা তাজা বাতাসের মজা নিচ্ছে।

আরো কিছুক্ষণ দাঁড়াবে বলে ভাবে। কিন্তু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। চলে যায় বাথরুমে। কিছুক্ষণ পর দাঁত বের করে হেসে পেট হাতাতে হাতাতে বাথরুম থেকে বের হয় ফাহিম। হুট করেই ওর নজর পড়ে বিছানার পাশে রাখা লেদারের উপর। ফাহিমের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দেখে তিনটি বানর ওর জামা কাঁপড় ঘেটে একাকার করেছে। একজন বানর ওর লাল রঙের গেঞ্জি ও আরেকজন কালো রঙের গেঞ্জি পড়েছে। আরেকটা বানর তো ওর আন্ডারপ্যান্ট মাথায় পড়ে বসে আছে। চোখ বড় বড় করে তাকানোর কারণে বানর তিনটিও ওর দিকে চোখ স্থির করে তাকিয়ে আছে। গেঞ্জি ও আন্ডারপ্যান্ট নিয়েছে বিধায় ফাহিম তড়িৎগতিতে ওর লেদারের কাছে আসতে নিলে বানর তিনটি জানালা দিয়ে দৌঁড়ে পালায়। ফাহিমও বানরের পিছু পিছু জানালা দিয়ে লাফ দেয়। বানর তিনটি বাংলর সামনে চলে আসে। বানরের গায়ে ফাহিমের গেঞ্জি বেশ লম্বা হয়। কিন্তু তারপরও ওরা ওটা পড়েই দৌঁড়াতে শুরু করে। ফাহিম ওদের পিছু দৌঁড়াচ্ছে আর বলছে,
-“ঐ হালার পুত, মোর গাঞ্জি,ছোট প্যান্ট দিয়া যা। ঐ হালার পুত খাড়া(দাঁড়া)!”

কে শুনে কার কথা। বানর রা সাড়া বাগান জুড়ে দৌঁড়াচ্ছে আর দাঁত কেলিয়ে হাসছে। বানরদের চেহারা দেখে বুঝাই যাচ্ছে ওদের খুব পছন্দ হয়েছে ফাহিমের গেঞ্জি ও আন্ডারপ্যান্ট। তাই দিবেনা বিধায় দৌঁড়াচ্ছে।

এদিকে সাব্বির ঘুমের ঘোরে সপ্নে দেখছে! এত এত সাগর কলা নিয়ে বসেছে খেতে। ইচ্ছা মতো কলা খাচ্ছে। খেয়েই যাচ্ছে,একা ধারে খেয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ করেই সাব্বিরের মনে হলো ওর গালে কেউ ঠোকটা দিয়েছে। পিকপিক করে চোখ মেলে তিন জোড়া ছোট ছোট লালচে চোখ দেখে হুড়মুড় করে বিছানায় লাফ দিয়ে ওঠে দাঁড়ায় । সাব্বিরকে লাফ দিয়ে ওঠতে দেখে বানর তিনটি ভয়তে বিছানার নিচে নেমে দাঁড়ায়। সাব্বিরের বুক ধড়ফড় করছে। ঘুম থেকে ওঠে রুমে অচেনা মানুষকে দেখেই ভয় পাবে যে কেউ। আর এদিকে তো তিনটি বানর ওর বিছানায় বসে ছিল। সাব্বির বিছানার উপর কলার ছোলা দেখতে পেলো। তাহলে কী সত্যিই বানর রা ও’কে কলা খাওয়াচ্ছিল? বানর তিনটি ঘাপটি মেরে ফ্লোরে বসে আছে। ওদের নজর সাব্বিরের উপর। সাব্বির নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না। এভাবে কখনোই বানর ফেস টু ফেস দেখেনি। এই প্রথম বানরের সামনা সামনি পড়ল। সাব্বির জানত এখানে বানরের উৎপাত আছে। কিন্তু এভাবে বানরের সম্মুখীন হতে হবে সেটা ওর জানা ছিল না।

সাব্বির মনে মনে ভেবে নিলো রুম থেকে বের হতে হবে। আর না হলে ওদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে না এত সহজে। তবে ওর মাথায় এটা কাজ করছে না,বানর ওর রুমে আসল কোথা থেকে । তখনি নজর পড়ে জানালার দিকে। কাল রাতে ভুল বশত ভাবে জানালা খোলা রেখেই শুয়ে পড়ে। বুঝতে পারে জানালা রেলিং নেই তাই ওখান থেকেই এসেছে। সাব্বির হাত জাগিয়ে দু বার “হুশশ! হুশশ!” করল। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। বানর রা সেখানেই নিরিবিলি বসে আছে। মনে হচ্ছে সাব্বিরকে কলা খাইয়ে তার হিসাব নিবে বলে‌ খাপটি মেরে বসে আছে। সাব্বির আস্তে আস্তে বিছানার পাশে আসে। সুযোগ বুঝে এক লাফ দিয়ে দজরা খুলে বের হতে নিলেই দুটো বানর লাফিয়ে ওর মাথায় আর কাঁধে চড়ে বসে চুল শক্ত করে ধরে রাখে। সাব্বির বাহিরে বের হয়ে চিল্লাচ্ছে আর দৌঁড়াচ্ছে ‘মা গো, বাবা গো,চাচা গো,মামা গো,কে কোথায় আছো!!! বাঁচাও গো। নাম আমার মাথা থেকা,নাম কইতাছি।’

সাব্বিরের দৌঁড়ানি দেখে ফাহিম আর ওর গেঞ্জি,আন্ডারপ্যান্ট নেওয়া বানর তিনটি থেমে যায় । এবার সাব্বিরের কাণ্ড দেখচ্ছে। ফাহিম সাব্বিরকে বাঁচাতে যাবে তখনি ওর মনে পড়ে গেঞ্জি ও আন্ডারপ্যান্ট বানরের কাছে। ওদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“ঐ মোর গাঞ্জি,ছোট প্যান্ট।” বলেই আবার ঐ বানরদের পিছু ছুটতে লাগলো।

সাব্বির, ফাহিম দু’জনই চিল্লাচ্ছে। বডিগার্ড রা ওদের চিৎকার শুনে মুখ টিপে হাসছে। কিন্তু ওদের কাছে আসছে না।

আর এদিকে ঘুমের দফা-রফা হয়ে গেছে বাকি দের। এভাবে চিৎকার করলে কী ঘুমানো যায়? চড়ম বিরক্তি নিয়ে সবাই ওঠে আসে। গেটের সামনে এসেই বাংলর বাগানে দিকে সবার চোখ পড়ে। সবার চোখ বড় হয়ে যায়। কী কাণ্ড! একজন বানরদের দৌঁড়ানি দিচ্ছে। আরেকজন দৌঁড়ানি খাচ্ছে। বাহ! রিমি,সিমি,নিধি,ইশা এমন দৃশ্য দেখে কিভাবে স্থির থাকবে বলুন? জানি আমার পাঠক রাই স্থির নেই। তার তো ওরা! হাসতে হাসতে দম বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে ওদের। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র এক রাশ বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আলতাফ চৌধুরী মাথা দুলিয়ে হাসে। যাক! সকাল সকাল জগিং হচ্ছে ওদের । সাথে বানরদেরও ।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……

কাপ্তাই গেলে অনেকেই বানরের দেখা পেয়ে যাবেন। তাও খুব সামনে থেকে। হ্যাঁ! আমিও দেখেছি। তাই বলে রাখলাম। যাতে কারো মনে ডাউট না থাকে।