Three Gangsters Love Part-18

0
3795

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_18.

এক দিকে রিমি রা জোরে জোরে হাসছে। আরেক দিকে সাব্বির,ফাহিম বানরদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র দের আর সহ্য হচ্ছে না। ভীষন রাগ হচ্ছে ওদের। কয়দিন যাবত ওদের কাণ্ড কারখানা দেখে ওরা জাস্ট বিরক্ত। এখন আবার সকাল সকাল বানরের তামাশা পেতে রেখেছে। রুদ্র আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে রুমে গিয়ে লেদার থেকে পিস্তলটা বের করে নিয়ে বাহিরে আসে। বাগানের সামনে হেঁটে এসে উপরে তুলে গুলি করার সঙ্গে সঙ্গে সব একে বারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় ওদের দৌঁড়ানি ও হাসি। বানর রা ও দৌঁড়ে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। সাথে করে ফাহিমের গেঞ্জি ও আন্ডারপ্যান্টও নিয়ে যায়। সাব্বির,ফাহিম মাথা নত করে রুদ্রের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি,সিমি,নিধি,ইশা নিজেদের স্বাভাবিক করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র রাগে দাঁত,মুখ খিঁচে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-“সকাল সকাল কী বানরের সার্কাস নিয়ে বসেছিস তোরা? কিভাবে আসল বানর?”

সবাই চুপ। কারো মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। সাব্বির মাথা নত করে মিন মিন করে বলে,
-“ভাই কাইল রাইতে আমি ভুলে জানালা খুইলা ঘুমাইছিলাম। সকালে ঐ বানর গুলো জানালা খোলা পাইয়া আমার রুমে আসে। তারপরই……..।” থেমে যায় সাব্বির ।

রুদ্র এবার ফাহিমকে ঝাঁড়ি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“আর তোর কী সমস্যা? জামা কাঁপড়ের কী অভাব পড়েছে নাকি? বানরের পিছনে দৌঁড়াচ্ছিস কেন?”

ফাহিম চুপ করে আছে।

-“যাহ! ভেতরে যা।” ধমক দিয়ে বলেই রুদ্র চলে যায়।

সবাই সেখান থেকে যার যার রুমে চলে আসে। সাব্বির,ফাহিম এক সাথে যাচ্ছিল। তখনি ফাহিম সাব্বিরকে বলে,
-“ভাই একটা কথা কমু?”

সাব্বির মুড অফ করে বলে,
-“বল।”

ফাহিম প্রথমে ডানে বামে তাকায়। তারপর আস্তে করে বলে,
-“ভাই তোমার ছোট প্যান্ট কয়টা। মোরে একটা দিতে পারো? আসলে দুইটা আনছিলাম। একটা তো ঐ হারামজাদার বান্দরে নিয়া গেছে। হালায় হারা জনম ধইরা থাকে ন্যাংটা। এখন আমার আন্ডারগ্রাউন দেইখা ওগো পছন্দ হইছে। কেমনডা লাগে কও তো। থাকলে বেশি দি………..।” লাস্টের কথাটা বলেই সাব্বিরের দিকে তাকাতেই ফাহিমের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ,সাব্বির ফাহিমের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে। বেশ ভয়ংকর লাগছে সাব্বির কে দেখতে। ফাহিম জোর করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“থাওক লাগতো না। আজকে একটা পইরা,পরের দিন ধুইয়া দিয়া রৌদ্দে শুকামু।শুকাইলে পরে পরমু।” কথাটা বলতে বলতে ফাহিম আস্তের উপরে কেঁটে পড়ে। সাব্বির রাগী মুড নিয়ে রুমে চলে আসে। এসেই আগে জানালাটা বন্ধ করে দেয় ।

বিছানার উপর বসতেই ওর ফোনটা বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে বডিগার্ড ফোন দিয়েছে। কানে দিয়ে বলে,
-“বলো!”

-“ছোট স্যার,ওর মুখ থেকে কোনো কথা বের করা যায় নি। বার বার এক কথায় বলতে ও’কে মেরে দিতে।”

-“বেঁধে রাখো। ভাইদের সাথে কথা বলে নেই । তাদের সাথে কথা হয়নি কাল।পরে তোমাদেরকে জানাচ্ছি আমি ।”

-“ওকে।”

টু..টু…

ফোন বিছানার উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।
_________________________

কাল রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি বিপলপ তালুকদার । কিভাবেই বা ঘুমাবে? যখনি শুনেছে তার প্লান অনসাকসেসফুল হয়েছে। চৌধুরী পরিবারের সবাই কাপ্তাই মজ-মাস্তিতে আছে। তখনি তার দু চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এবং কি তার একজন লোকও রুদ্রদের কাছে আটক আছে।

ইজি চেয়ারে মদের বোতল হাতে নিয়ে মাথা ঠেকিয়ে চোখ মেলে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ জোড়া রক্তিম সূর্যের মতো লাল হয়ে গেছে। আধা পাকা চুল গুলো উসকোখুসকো হয়ে আছে। চট করেই ওঠে দাঁড়ান তিনি। কিছু একটা মনে করে বাসার বাহিরে গাড়ি নিয়ে বের হয়। চলে আসে সেই বাড়িতে। যেখানে আগেও একবার এসেছিল।
.
.
.
.
নেভী পিকনিক স্পটে আসে সবাই। সেখানের পরিবেশ আরো সুন্দর ছিল। চার কোণাচে বাশেঁর চেড়া দিয়ে একটি ঘর বানানো আছে। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র,সাব্বির ও আলতাফ চৌধুরী সেখানে বসে কথা বলছিল। বাকি কয়জন সামনের দিকে একটি জিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল।

-“শেষ করে দিতে বল তালুকদারের লোককে।” দাঁত কটমট করে বলে রুদ্র।

-“ও’কে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের কোনো লাভ হবে না।” গম্ভীর স্বরে বলে শুভ্র।

-“তালুকদারের কিচ্ছা শেষ করে দিচ্ছো না কেন তোমরা?” আলতাফ চৌধুরী বলেন।

-“তালুকদারকে শেষ করলেও‌। আমার মনে হয় তালুকদারের পিছনে অন্য কারো হাত আছে দাদু।তোমার উপর এট্টাক করার কথা মনে আছে?” অভ্র সন্দেহজনক ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে।

-“হ্যাঁ! থাকতে পারে অন্য কারো হাত? কিন্তু কে সে?” আলতাফ চৌধুরী চিন্তিত স্বরে বলে।

-“সেটাই জানতে হবে আমাদের।” রুদ্র বলে।

সাব্বির ঐখানে বসেই বডিগার্ড কে কল দিয়ে তালুকদারের লোককে উঁড়িয়ে দিতে বলে।
আরো অনেক বিষয় কথা বলতে থাকে ওরা।
.
-“ভাবি,অনেক ছবি তো তুললেন। এহন ভাইয়া গো লগে কয়টা ছবি তুলেন।”

-“না,না দরকার নাই তাদের সাথে ছবি তুলোনের।” রিমি বলে।

-“কেন ভাবি? সমস্যা কী ভাইয়াদের সাথে ছবি তুলতে?” ইশা বলে।

নিধি মুখ ভার করে বলে,
-“ভয় করে।”

-“ভয়ের কী আছে? আচ্ছা একটা কথা বলো তো? তোমরা কী ভাইয়া দের ভালোবাসো না?”

-“ইশা ভালোবাসা আর,না ভালোবাসার কথা না। আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তুমি তাঁর কিছুই জানো না।” সিমি বলে।

-“কিভাবে হয়েছে? আর আমিই বা জানবো কিভাবে? তোমাদের হলুদের অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগেই তো এসে ছিলাম আমি।”

-“এর জন্যই তোমার কাছে সবটা অজানা। ” নিধি বলে।

-“তাহলে আমাকে বলো না ভাবি। আমি জানতে চাই।” ইশা অনুরোধ জড়ানো কন্ঠে বলে।

-“বলছি…..।”

রিমি ইশাকে প্রথম থেকে শেষ অবধি সব বলে। ফাহিম পাশে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিল। ইশা কিছুটা অবাক হয় রিমির কথা শুনে । পরক্ষণে হেসে বলে,
-“তার মানে ভাইয়ারা তোমাদের কে ভালোবাসে।”

-” তারা ভালোবাসে কি না সেটা আমি জানি না। কারণ,তোমার রুদ্র ভাইয়ার মুখ থেকে আমি ভালোবাসার কথাটা এখনো শুনি নি।” রিমি বলে।

-“আমি…. ।”

-“আমাকেও কখনোই বলেনি শুভ্র।”

-“বলো কী?”ভ্রু কুঁচকে বলে ইশা

-“হ্যাঁ! ঠিক বলছি। আর দশটা ছেলেদের মতো তারা না। তারা নিজেদের ওয়েট রেখে কাজ করে। গ্যাংস্টার তো গ্যাংস্টারই হয়। বুঝোই তো!” নিধি বলে।

-“তারা শুধু নিজেদের ঠুল্লু পছন্দ করে এবং ভালোবাসে।” রিমি মুখ বেকিয়ে বলে।

ইশা কপাল আরো বাজ করে বলে,
-“ঠুল্লু?”

-“আরে পিস্তল,পিস্তল! ওটাকেই রিমি ঠুল্লু বলেছে।” সিমি বলে।

-“হাই রে!” মুচকি হেসে বলে ইশা।

-“আচ্ছা এসব কথা বাদ দেও। আসো আরো কিছু ছবি তুলি।” নিধি বলে।

-“আচ্ছা।” ইশা বলে।

-“ঐ আন্ডারগ্রাউন কিং ফাহিমা! ছবি তোল।” হেসে হেসে বলে রিমি।

ফাহিম মুখ মলিন করে বলে,
-“ভাবি দুইটা ভুল নাম কইছেন। কিং টা ঠিক আছে ।”

-“যা তাহলে কিং ও বাদ। আন্ডারগ্রাউন জিং ফাহিম,ইয়ো।” নামটা বলেই রিমি হাসতে লাগলো । ওর সাথে সিমি,নিধি,ইশাও সমান তালে হেসে যাচ্ছে। ফাহিম মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে আছে।

দুপুরের লাঞ্চ সেরে সবাই স্পটটা চার দিকে ঘুরে ঘুরে দেখে। যতই দেখছে ততই প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাচ্ছে তারা। চিকচিক করা রৌদ্দ। ঝিরিঝিরি বাতাস। মন ভালো করার একটি মুগ্ধকর স্পট এটা। আরো অনেকক্ষণ ঘোরাফেরা করে রাত আটটার সময় বাসায় ফিরে তারা। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসে আছে সবাই। হঠাৎ ইশা বলল একটি গেম খেলবে।সাব্বির,ফাহিম,রিমি রা খেলতে চাইলে,রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওরা কোনো রিয়েক্ট করল না। বুঝাই যাচ্ছে ওদের খেলার ইচ্ছা নেই। কিন্তু ইশা এক প্রকার জোর করে খেলার জন্য রাজি করায় ওদের। ইশা অনেক গুলো কাগজের টুকরো বানিয়ে তার মধ্যে লিখছে। খেলার নিয়মটা সবাইকে বলে দেয় ইশা। কাগজের টুকরো গুলো একটি কাঁচের বাটিতে রাখা হয়।

-“এই কাগজের মধ্যে যা লেখা আছে। সেগুলো তাকে করে দেখাতে হবে। এটাই রুল।” ইশা বলে।

-“আর যদি রুল ভাঙ্গে তাহলে?” রুদ্র বলে।

-“শাস্তি অনুজাই তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে।”

-“বাহ! টাকা আয় করার খুব সুন্দর দান্ধা।” অভ্র মৃদু হেসে বলে।

-“ভাইয়া! তেমন কিছুই না। ওকে! খেলা শুরু করি। প্রথমে দাদুর কাছ থেকে শুরু হবে।”

-“আমার কোনো সমস্যা নেই।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।

-“ঠিক আছে। এর মধ্যে থেকে যে কোনো একটি কাগজ ওঠাও।” ইশা বাটিটা আলতাফ চৌধুরীর সামনে ধরে ।

আলতাফ চৌধুরী একটি কাগজ হাতে নেয়। ইশা আলতাফ চৌধুরীর কাছ থেকে কাগজের টুকরো টি নিয়ে,বাজ খুলে পড়ে,
-“প্রিয় মানুষটির বিষয় প্রশংসা করো। হুম,হুম দাদু করে ফেলো।”

-“প্রশংসা করলে আমার স্ত্রীর প্রশংসা করব। আমেনা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসাত। এতটাই ভালোবাসতো যে সপ্তাহের দুই দিন আমাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিত। যখন আমি কাজ সেরে বাসায় আসি। তখন আমেনা ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মাথার ঘাম মুছে দিত। আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকত। প্রতি রাতে আমার পায়ে তেন মালিশ করে দিতো। এমন স্ত্রীর প্রতি যে কোনো স্বামীর ভালোবাসা সীমাহীন থাকবে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আমার মনে মধ্যে এখনো আমেনা বেঁচে আছে।”

কথা বলা শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিতে শুরু করল।

-“ওয়াও দাদু,তুমি তো ফাটাইয়া দিছো।” ফাহিম দাঁত বের করে বলে।

-“হুম! এবার আমাদের আন্ডারগ্রাউন জিং ফাহিমা ভাই। নিন।” ফাহিমের সামনে বাটিটা ধরে হেসে হেসে বলে ইশা।

ফাহিম মুখে হাসি না ফুটিয়ে চিন্তা ভাবনা করে একটি কাগজ ওঠায়।
ইশা কাগজ টি নিয়ে খুলেই খুশি মুড নিয়ে পড়তে লাগলো,
-“গান গেয়ে অভিনয় করতে হবে।”

-“বাহ! ভালো একটি কাগজ পড়েছে।” হেসে বলে সিমি।

-“নে ফাহিমা শুরু কর।” সাব্বির বলে।

ফাহিম প্রথমে মুখ ভার করে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর ওঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালে মাথায় নিয়ে বেশুরা গলায় গান ধরে,সাথে অভিনয় তো আছেই,
-“ও ছকিনা গেছো কিনা,ভুইলা আমারে…..
ও ছকিনা গেছো কিনা,ভুইলা আমারে……
আমি এহন…রিকশা চালাই…আমি এহন রিকশা চালাই ঢাকা,শহরে। ও ছকিনা গেছো কিনা ভুইলা আমারে।ধুর! আর পারমু না।” কিছুটা রাগ নিয়ে বলে ফাহিম।

আর এদিকে হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যাওয়ার পালা ওদের পাঁচ জনের। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র আর আলতাফ চৌধুরী মিটমিটিয়ে হাসছে। ওদের মতো তো আর জোরে জোরে হাসা যায় না।

-“ওরে ছকিনা রে,ফাহিমের দুঃখটা বুঝল না রে….।” হেসে হেসে বলে সাব্বির ।

-“রাইট!” ইশা বলে।

-“এডা কিন্তু গান ছিল। সিরায়িস নিবেন না।” ট্যারা চোখে তাকিয়ে বলে ফাহিম।

-“সিরায়িস! ইউ মিন সিরিয়াসলি। ও মাই গড!” ইশা কথাটা বলেই বুকে হাত দিয়ে উঁচু স্বরে হাসতে লাগলো । কেবল মাত্র রিমি,সিমি,নিধি দের হাসি থেমেছিল। ফাহিমের ইংলিশ সিরায়িস শুনে আবারও হাসিতে ফেটে পড়লো।

সাব্বির রাগে গজগজ করছে। কিছু বলতেও পারছে না রুদ্র দের জন্য।

ইশা হাসি থামিয়ে বলে,
-“ওকে, ওকে। এবার সাব্বির ভাইয়ার পালা।”

ভাইয়া ডাকটা শুনেই সাব্বিরের চেহারার রং পাল্টে যায়। রাগের আভা ফুটে উঠে। কিন্তু সবাইকে সেটা বুঝতে দিল না।

-“নিন ভাইয়া,আপনি একটি কাগজ নিন।” বলেই বাটিটা সাব্বিরের সামনে ধরল। সাব্বির বিরক্তি নিয়ে একটি কাগজ উঠিয়ে হাতে নিলো। খুলতে নিলেই ইশা টেনে নিয়ে গেল।

-“ওয়াও,গান! ভাইয়া আপনাকে এখন গান গাইতে হবে।” ইশা বলে।

-“আমি গান পারি না।” অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে সাব্বির ।

-“এটা বললে তো হবে না। গাইতে তো হবে।”

-“গামু না।”

-“ভেবে বলছেন তো?” ইশা এক ভ্রু উঁচু করে বলে।

-“আচ্ছা,গাইতাছি।”

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রয়। সবার নজর এখন সাব্বিরের উপর। সাব্বির কিছু একটা মনে করে মিটমিটিয়ে হাসছে। তারপর একটি কাশি দিয়ে গান গাইতে শুরু করে,
-“ইস্কে সাবা,,ইস্কে সাবা…ইশায় মারছে আমারে খোঁচা। দিছে,দিছে,দিছে,দিছে খোঁচা দিছে। দেখছে,দেখছে,দেখছে,দেখছে দাদু দেখছে। লাগছে,লাগছে,লাগছে,লাগছে,লাগছে জোরেএএএ…লাগছে…কেমনে বলি আমি মাইনষে..রে..(মানুষরে)। ইস্কে….।”

ইশা গানটা শুনেই তেলেবেগুনে রেগে ওঠে। আর এবার রুদ্র রা সহ জোরে জোরে হাসতে লাগলো। ফাহিম ফ্লোরে চিৎ হয়ে শুয়ে হাসছে। লাস্টের কলি টুকু আর সাব্বির কে গাইতে দিল না । ধমন দিকে ইশা থামিয়ে দিল সাব্বিরকে। রেগে আঙুল তুলে বলে,
-“এটা কোন ধরনের গান?তাও আমার নাম নিয়ে গাইছেন। ”

-“এই গানটার লেখক আমি,গায়কও আমি। এটা হচ্ছে ২০২১ সালের নিউ গান।”সাব্বির শার্টের কলার উঁচু করে ভাব নিয়ে বলে।

-“এই ফালতু গান গাইতে বলিনি আপনাকে।”

-“গান তো গানিই। সুর দিয়ে আ,উ করলেই গান হয়ে যায়। আর এটা তো আমি নিজেই গাইছি।”

-“ফালতু গান। নিজে নিজে বানাইছেন। বানিয়ে গান বলতে বলিনি।”

-“অ্যাহ! গান তো নিজেই বানায়। জানেন না।”

-“জানি বাট এমন ফালতু গান আপনার মতো ফালতু লোকরায় বানায়।”

-“ওয়েট! ফালতু দিয়া আরেকটা গান মনে পড়ছে। গাইতাছি। আলতু,ফালতু,ইশা তোমারে পিডামু!আ…।”

-“ঐ,ঐ থামেন! আপনারে কেউ গান গাইতে বলিনি। ভাইয়া কিছু বলো তাকে। এখন কিন্তু বেশি করতেছে।”

রুদ্র ওর হাসি থামিয়ে বলে,
-“সাব্বির থেমে যা।”

-“আইচ্ছা ভাই! ইশ! নিয়া গান আরো কয়টা আছিলো। ভাই কইছে দেইখা থাইমা গেলাম হু।” মুড নিয়ে বলে সাব্বির ।

ইশা রাগে ফোস ফোস করছে।সাব্বির যে ভাই ডাকার শোদ নিচ্ছে সেটা ইশা বুঝতে পারছে । সিমি ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“খেলা শুরু করো ইশা।”

ইশা রাগে বাটিটা তুলেই সিমির দিকে ধরল। সিমি গেছে ফেসে। এখন যদি উল্টা পাল্টা কিছু পড়ে তাহলে তো আরো গেছে! টাকা তো কাণা কড়িও নেই।

-“নিচ্ছো না কেন ভাবি?” ইশা বলে।

সিমি একটি কাগজ বাটি থেকে নিলো। ইশা ছোঁ মেরে কাগজটি নিয়ে পড়েই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। মুচকি হেসে বলে,
-“এই কাজটি যে নিবে,তার যদি বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে সে তার স্বামী বা স্ত্রীকে সবার সামনে গালে কিস করবে।” পুরটা পড়েই ইশা সিমির দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।

সিমির অবস্থায় যায়,যায়। লজ্জায় টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে।

-“এই ইশার বাচ্চা দিছে আমারে ফাসাইয়া।” মনে মনে বলে সিমি।

শুভ্রর খুশি কে দেখে! মনে মনে ইশাকে হাজারটা ধন্যবাদ জানাচ্ছে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“ঐখানে আসতে হবে নাকি তুমি আমার কাছে আসবে?”

শুভ্রর কথা শুনে সিমি আরো লজ্জায় পড়ে যায়।লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।

-“আহ!ভাবি তাড়াতারি করো। রাত হয়ে যাচ্ছে। বাকিদেরও যে খেলতে হবে। উঁহু! না বলবে হবে না। যাও গিয়ে ভাইয়াকে কিস করো।”

সিমি বসে থাকে। আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“নাতবউ! এত লজ্জা পাচ্ছো কেন? আরে আমরা কিচ্ছু মনে করব না। তুমি যাও তো।”

-“আরে ভাবি যাও।” সাব্বির বলে।

রিমি,নিধি চুপ করে আছে। সিমিযে ভালো ভাবে ফেসেছে। সেটা বুঝতেই পারছে ওরা।

উপায় নেই ভেবে সিমি ওঠে দাঁড়াল। ধীরে পায়ে মাথা নিচু করে শুভ্রর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। সামনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সিমি। শুভ্র ওঠে দাঁড়াল। সিমি তো লজ্জায় মাথা তুলতেই পারছে না।

-“ভাবি! তাড়াতারি করো।”

এদিকে সিমি লজ্জায় যাচ্ছে মরে। আর ইশা তাড়াতারি করতে বলছে। সিমি দাঁড়িয়ে আছে। সাব্বির,ফাহিম,ইশা কিস দিতে বলছে বার বার। শেষে সিমি রাগের চোটে পা উঁচু করে শুভ্রর গাল ধরে বাম গালে চুমু দিয়েই আগের জাগায় এসে বসে পড়ে। সাব্বির,ফাহিম,ইশা জাগর দিয়ে ওঠে। সিমির লজ্জায় মাটির ভেতরে ঢুকে যেতে মন চাইছে। শুভ্রের মুখে বিজয়ি হাসি ফুটে ওঠে। সিমির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। রুদ্র,অভ্র এতক্ষণ চুপ চাপ বসে দেখছিল। রিমি,নিধি ভয়ের মধ্যে আছে। এখন তো মনে হচ্ছে ওদের পালা।

ইশা চট করেই বাটিটা নিধির দিকে ধরল।
-“নেও ভাবি। ”

নিধি কাপা কাপা হাতে একটি কাগজ উঠাল। ইশা খুলে পড়তে লাগলো।
-“প্রিয় মানুষটির জন্য একটি কবিতা বলবে।”

নিধি কিছুটা হাপ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু ওর মাথায় এখন কবিতা আছসে না। আর ও কবি না যে এখন কবিতা বানিয়ে বলবে।

-“ভাবি তাড়াতারি ভাইয়ার জন্য ভালো দেখে একটি কবিতা বলো।”

-“আমি কবিতা পারি না। ”

-“আরে যেমন পারো,তেমন বলো ।”

নিধি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নিচু করে আস্তে বলে,
-“মনের অভিলাষ সুখের আবাস
অনন্য হয়ে থাকো,
বাহু ডোরে আগলে রেখে
ভালোবাসার রং মাখো।”

সবাই হাত তালি দিল। কবিতাটা শুনে অভ্র খুশি হয়ে গেল। মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে।

-“কবিতাটা অনেক সুন্দর হয়েছে।” ইশা বলে।

-“হয়,একছের সুন্দর হইছে।” ফাহিম বলে।

-“ওকে! এবার রিমি ভাবি। নেও ভাবি।একটি কাগজ নেও।”

রিমি আল্লাহ্,আল্লাহ্ করে একটি কাগজ নিলো। ইশা কাগজটি নিয়ে খুলে পড়ে।
-“বিয়ে হলে কাপল ডান্স। আর না হলে একা ডান্স করতে হবে।”

রিমি গেছে তিমি হয়ে। পুরাই চিপায় পড়েছে। এখন রুদ্রের সাথে কাপল ডান্স করতে হবে ভাবতেই রিমির লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।

-“ভাইয়া,ভাবি। তাড়াতারি ওঠে পড়ো। আমি মিউজিক চালিয়ে দিচ্ছি।” বলেই ইশা বক্সে মিউজিক চালালো।

নাচতে যখন হবে তখন আর বসে থেকে কী হবে ভেবে রিমি ওঠে দাঁড়ায়। রুদ্রও ওঠে এসে খালি জাগাতে দাঁড়ায়। রুদ্রের ঠোঁটে ছিল ঢেডি হাসি। দেখেই মনে হচ্ছে,মনে মনে এমনটাই চেয়েছিল। রিমির দিকে তাকিয়ে আছে। আর রিমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিভাবে? কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।

মিউজিক অন….

Tuje Milke Laga hai Ye……
Tuje Dondhe Raha Tha Main…..
Tuje Milke Laga hai Ye….
Tuje Dondhe Raha Tha Main…..
Tuhj main Hai Kuch Aisi Subah Sa…..
Jiski khaatir,Main Tha Jaga sa…..
Aa Tu Mere,Khwab Sajaa Ree……
…………Mahi Aja Re,Mahi Aja Ree……..

Tuhj main Hai Kuch Aisi Subah Sa…..
Jiski khaatir,Main Tha Jaga sa..
Aa Tu Mere,Khwab Sajaa Ree……
Dil Roye Ya Hahi,
Tu Aaja….
Dil Roye Ya Hahi,
Tu Aaja….
Mere Mahi…..
Mere Mahi….
Tu Aaja Mere Mahi….🎶

রুদ্র রিমির কোমড়ে হাত রেখে ডান্স করছে। রুদ্রের সাথে তাল মিলিয়ে রিমিও ডান্স করছে। মাঝে মাঝে রুদ্রের ছোঁয়ায় রিমি কেঁপে কেঁপে ওঠছে। ওদের দু’জনের নাচ দেখে অভ্র,শুভ্র বসে থাকতে পারে নি। সিমি ও নিধির হাত ধরে টেনে উঠিয়ে ডান্স করতে লাগলো। মনের মধ্যে উথাল,পাথাল ঢেউ শুরু হয়ে গেছে সিমি ও নিধির। রিমির মতো নিধি ও সিমিও শুভ্র,অভ্রের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠছে। নাচের প্রত্যেকটা স্টেপে রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওদের হাত ধরে কাছে নিয়ে এসে মিলিয়ে মিলিয়ে নেচেছে। যার দরুণ ওদের নাচ রোমান্টিকতা ফুটে ওঠেছে। উৎসুক চোখে সাব্বির,ইশা ওদের নাচ দেখছে। সাব্বির কিছুক্ষণের জন্য ভেবে নেয়, ইশার সাথে এখন এভাবে ডান্স করবে। কিন্তু মনকে সংযত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিছুক্ষণ পর গান শেষ হয়ে যায়। নাচের লাস্টের স্টেপ । শেষ করেই রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ওদের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণের জন্য রিমি,সিমি,নিধিও পেছন থেকে ওদের দু’হাত দিয়ে জাপটে ধরে। এই প্রথম ওরা ওদেরকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে। মুহূর্তটা বেশ রোমান্টিক । কিন্তু এই সুন্দর রোমান্টিক মুহূর্তটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ইশা,সাব্বির,ফাহিম ও আলতাফ চৌধুরীর হাতের তালির শব্দ শুনে ওরা তাড়াতারি করে ওদের কে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। এখন বেশ লজ্জা লাগছে রিমিদের । ইশা ওঠে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে এসে মুচকি হেসে বলে,
-“ওয়াও,ওয়াও…কী সুন্দর তিন জোড়া কাপল ডান্স ছিল। পুরাই অস্থির।”

-“প্রচণ্ড সুন্দর ছিল।” সাব্বির বলে ।

-“মাশ-আল্লাহ! চমৎকার ছিল।” আলতাফ চৌধুরী বলেন মুচকি হেসে ।

-“হ একদম সুপানং।”

সবাই ফাহিমের কথাটা শুনে ওর দিকে তাকায়। আলতাফ চৌধুরী ধমক দিয়ে বলে,
-“হারামজাদা! ছাতার ইংলিশ বলিস। সুপার রে সুপানং বানিয়ে দিছিস।”

সবাই এক সাথে হাসতে লাগলো। সেদিনের মতো আজকেও হাসির পাত্র হয়ে গেল ফাহিম। মাথা চুলকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে ফাহিম।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…………