#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_20.
গাড়ি এসে থামল নদীর সামনে। ইশা আগে গাড়ি থেকে নামে। সাব্বিরের কোনো রেসপন্স নেই। চুপ চাপ বসে আছে রাগী মুড নিয়ে। ইশা গাড়ির দরজা খুলে সাব্বিরের হাত ধরতেই এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে ফেলে। ইশা আবার ওর হাত ধরে। সাব্বির এবারও সরিয়ে ফেলে। ইশা এবার রাগ নিতে হাত ধরতে গেলেই সাব্বির গাড়ি থেকে নেমেই জোরে চড় বসিয়ে ওর বাম গালে। গাল লাল হয়ে যায় ইশার। ইশা করুন চোখে সাব্বিরের দিকে তাকালেই দেখতে পায় সাব্বিরের হিংস্র মাখা দুটি চোখ। সাব্বির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
-“এখন কী নিজের ঢং দেখাবার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো? কেনই বা আমার হাত ধরছো? একজন বংশ পরিচয়হীন,অশিক্ষিত লোকের হাত ধরতে ঘৃন্না করে না? নাকি আমার রিয়েল Attitude,Smartness দেখে তোমার মনে প্রেম জেগেছে?”
ইশা নিষ্পাপ চাওনিয়ে চোখ জোড়া স্থির করে রেখেছে সাব্বিরের দিকে। সাব্বির আবারও বলে,
-“মুভি,নাটকে এমন দৃশ্য অনেক দেখেছি। প্রথমে নাইকা ভুল বুঝে। তারপর মানাতে যায়। মিল হয়ে যায় তাদের মাঝে। বাহ! কী সুন্দর । বাট ঐ গুলো মুভি,নাটকেই ভালো মানায়। রিয়েল লাইফে এ নয়। আমাকে অশিক্ষিত বলেছো! আমি কিছু মনে করিনি। বাট আমার বংশ পরিচয় নিয়ে কথা বলাটা তোমার ঠিক হয়েছে? আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কী কোনো খারাপ আচরণ করেছি? নাকি জোর করে হাগ,কিস করেছি? আজ কাল প্রেমিক রা তো গফ দের পারমিশন ছাড়াই অনেক কিছু করে বসে। আমি কী করেছি তোমার সাথে? যার কারণে তুমি আমার বংশ নিয়ে কথা বলেছো? তুমি যানো আমি কে? কেন এই বাড়িতে থাকি আমি। কী হই তোমার ভাইয়া দের। তারপরও আমার ব…………. ।”
ইশা থামিয়ে দেয় সাব্বিরকে।
-“চুপ করো সাব্বির । প্লিজ তুমি চুপ করো।……।”
সাব্বির ঝাঁড়ি দিয়ে আঙুল জাগিয়ে বলে,
-“কেন চুপ করব আমি? কেন? তুমি আমাকে এখন তোমার আগের বলা কথা গুলোর কারণটা বলবে, আর সেটা শুনে আমি তোমাকে মেনে নিবো ভাবছো। নাহ! আমি মেনে নিবো না তোমাকে ।”
ইশা জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“আমিও আমাকে মেনে নিতে বলব না তোমাকে। অন্যের পাপ তুমি কেন তোমার মাথায় নিবে?” বলেই কেঁদে দেয় ইশা।
সাব্বিরের কঁপাল কুঁচকে যায়। অস্ফুট স্বরে বলে,
-“পাপ! কিসের পাপ?”
ইশা চুপ করে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে মুখে হাত রেখে জোরে জোরে কাঁদছে।
সাব্বির ইশার বাহুতে হাত রেখে বলে,
-“কিসের পাপ বলো ইশা? বলো?”
ইশা ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে,
-“আমি প্রেগন্যান্ট সাব্বির। আমি মা হতে চলেছি।” কথাটা বলেই ইশা হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। অনবরত কেঁদে যাচ্ছে ইশা। এক মুহূর্তের জন্য সাব্বির স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করানো দায় হয়ে যাচ্ছে। বার বার ইশার বলা কথাটা সাব্বিরের কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সাব্বির পাথর হয়ে গেছে।এবার সাব্বিরের কাছে সবটা খোলাসা হয়। কেন ইশা ও’কে অপমান করেছিল। হাঁটু গেড়ে ইশার সামনে বসে মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কে করেছে? কী হয়েছিল? আমি তোমাকে এসব জিজ্ঞেস করব না। শুধু একটা কথা বলো আমাকে? তুমি কী আমাকে ভালোবাসো? ”
সাব্বিরের কথা শুনে অশ্রুশিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকায়। এত বড় সত্যের সম্মুখীন হয়েও কিভাবে এ কথা বলতে পারলো সাব্বির। ইশা ভেবে পাচ্ছে না।
-“বলো ইশা!”
ইশা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ! বলে।
-“বিয়ে করবে আমায়?”
ইশা ঝাঁপিয়ে পড়ে সাব্বিরের বুকে হাউমাউ করে কাঁদে। খুব জোরে জড়িয়ে ধরে সাব্বিরকে। সাব্বিরের চোখেও পানি টমলম করছে। ইশাকে ওর বুকের সাথে পরম যত্নে জড়িয়ে ধরে। ইশা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সাব্বির ইশাকে বুক থেকে সরিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। বলে,
-“এ চোখে যেনো আর কখনো পানি না দেখি। আজকেই লাস্ট বারের মতো কেঁদেছো। এটা ভেবে নেও।”
ইশা সাব্বিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমার কোনো ভুল ছিল না সাব্বির । দিন দিন আমি তোমার মায়ায় পড়ে যাচ্ছিলাম। দূরে সরানোর জন্য এমনটা করতে হলো আমায়। কিন্তু পরে বুঝতে পারি। তোমাকে সবটা বলা খুব দরকার। তোমার কষ্ট দেখে যে আমিও কষ্ট পাচ্ছিলাম। মাফ করে দেও আমায়।”
সাব্বির ইশার কপালে চুপু দেয়।বলে,
-“মাফ করে দিয়েছি। তার প্রমান সরূপ তোমার কপালে এঁকে দিলাম।”
ইশার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সাব্বিরও মৃদু হাসে।
ওঠে দাঁড়ায় ওরা।
-“বাসায় চলো ইশা।”
-“একটা কথা বলার ছিল?”
-“ভাইয়াদের বিয়ের কথা জানাবার কথা বলছো? আজকেই জানাবো। সব কিছু জানাবো ভাইয়া দের।”
-“আরো একটা কথা আছে।”
-“বলো?”
-“আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল না।”
সাব্বিরের ছোট ছোট চোখ করে ইশার দিকে তাকায়। বলে,
-“মানে?”
ইশা মাথা নিচু করে বলে,
-“আমার চাচাত ভাই। প্রতি রাতে জোর করে…..।”
সাব্বির মুখ চেপে ধরে। আগের চেয়ে রাগের মাত্র দ্বিগুন ভেড়ে যায় সাব্বিরের। ইশার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে এসে কোলে করে গাড়িতে বসায়। সেট বেল্ড পড়িয়ে অপর পাশে বসে সাব্বির গাড়ি জোরে চালাতে লাগলো। এক টানে বাসায় চলে আসে।
কিছুক্ষণ পর…..
রুদ্র,শুভ্র,অভ্র রাগ নিয়ে সোফায় বসে আছে। আলতাফ চৌধুরীর চেহারাতেও রাগের আভা ভাসছে।রিমি,সিমি,নিধি ইশার পাশে বসে আছে। ফাহিম রাগে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। সাব্বির বার বার এদিক,সেদিক পায়চারি করে বডিগার্ড দের গাড়ে ক্ষুপ্ত গলায় কথা বলছে।তবে একটা কথা বলতে হবে। ইশার প্রচণ্ড ধৈর্য্য আছে। ওর সিচুয়েশনে অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আত্মহত্যা করতো বা বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতো। কিন্তু ইশা তা করেনি। সব সময় চেয়েছে হাসি,খুশিতে থাকতে। এই নতুন অতিথিকে এই দুনিয়ার মুখ দেখাতে। বাচ্চা টার ক্ষতি করতে গিয়েও শুধু একটা কথাই ভেবেছে । ওর তো কোনো দোষ ছিল না! না আছে ওর নিজের! এটা ওর ভাগ্যে লেখা ছিল।
ইশার পরিবারের কেউ এটা জানে না। রুদ্র জানাতে চায় না।
কিছুক্ষণ পর বডিগার্ড দের বলা কথা শুনে সাব্বিরের রাগ কিছুটা কমে। সাব্বির সোফায় বসে বলে,
-“শেষ!”
-“গুড।”
-“ভাই আমি ইশাকে কালই বিয়ে করতে চাই। এখানে থেকেই।”
-“বিয়ে হবে! কালকেই হবে।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।
-“আমি খালা মনিকে,খালুকে জানিয়ে দিচ্ছি । তারা আসতে পারলে আসবে। না আসতে পারলে তার ভাইয়ের ছেলের শোক পালন করবে।” রুদ্র বলে।
-“সেটাই কর।” আলতাফ চৌধুরী বলে।
ইশা রিমিকে জড়িয়ে ধরে। রিমি ফাহিমকে বলে,
-“ফাহিম ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আয়। খুশির দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা।”
-“আইচ্ছা!”
ফাহিম মিষ্টি এনে সবাইকে দেয়। মিষ্টিমুখ করে বিয়ে আয়োজনের কথা বলে। কালকে গায়ে হলুদ হবে। রাতে বিয়ে। ফাহিমের খুশি কে দেখে। সবাই খুব খুশি এই বিয়েতে।
রাত পার হলো। নতুন একটি দিন এলো। মেহমান রা কেউ আসেনি এবং কী ইশার বাবা-মাও আসেনি। এক দিকে তার চাচাত ভাই মারা যাওয়ার শোক পালন করছে। আরেক দিকে ইশা বিয়ে করছে সাব্বিরকে। এতে প্রচণ্ড রেগে আছে ইশার পরিবার ও ইশার চাচার পরিবারের সব লোকরা। অবশ্য তাতে রুদ্র,ইশার কোনো কিছুই যায় আসে না।
ইশার বাবা রা দুই ভাই। ইশার বাসা ছিল ছোট। আর ওর চাচা ছিল বড়। ইশা বাদে ওর একটি ছোট ভাই আছে। ক্লাস সেভেন এ পড়ে। আর ওর চাচারও এক ভাই এক বোন ছিল। বড় ছিল রাতুল। ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। জয়েন পরিবার হবার শুবাদে সবার আড়ালে রাতে লুকিয়ে ইশার সাথে প্রায় জোর করে ইন্টিমেট হতো। ইশা বাড়ির লোকদের বলতে চাইলে রাতুল হুমকি-দামকি দেয়। যার কারণে রাতের এত বড় কাণ্ড ইশা মুখ বুজে সহ্য করে নিতো। ইশা যখন নিজের শরীরের পরিবর্তন চেঞ্জ অনুভব করে তখনি হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরিক্ষা করে। তখনি ধরা পড়ে ইশা মা হতে চলেছে। কী করবে বুঝতে পারছিল না। রাতুলকে বাচ্চার বিষয় জানাই নি।তখন ইশার পেটের বাচ্চার দুই মাস ছিল। আর যখনি শুনে ইশা রুদ্রের বিয়ে ঠিক হয়েছে তখন ওর বাবা,মা কে রাজি করায়। এবং চলে আসে বিয়েতে।বিয়ে শেষে ইশাকে ওর বাবা,মার সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ইশার থাকার ইচ্ছে ছিল বিধায় রুদ্রকে বলে ওর বাবা,মাকে রাজি করায়। এবং তারা ইশাকে রেখে দিনাজপুরে চলে যায়। ইশার এখানে থাকার একটি কারণ ছিল। আর তা হলো। রুদ্রকে সব কিছু খুলে বলা। কিন্তু ইশা এখানে এসে এত সুন্দর হাসি-খুশি ভরা পরিবার দেখে ওর মধ্যে থাকা অস্থিত্বের কথা প্রায় ভুলেই যায়। আর সেদিন সাব্বির প্রপোজ করে বসে। যার কারণে সত্যি টা বলে দিয়ে আজ সাব্বির,ইশার বিয়ে হচ্ছে। ইশার পরিবারের কেউ জানে বা রাতুলকে কে মেরেছে? তাদের কাছে অজানা।
কেউ না আসাতেও তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হবে ওদের। নিজেরা,নিজেরাই। তবে আয়োজন একি ভাবেই করা হয়েছে। সাব্বিরের বিয়ে বলে কথা। ইশার ওর বাবা,মা,ভাইয়ের জন্য মন খারাপ থাকলেও ফাহিম তো আছেই মন ভালো করার একজন মানুষ। ওর কথা শুনে যে কেউ হাসতে বাধ্য। তা তো আমার পাঠকরা জানেই।
রিমি,সিমি,নিধি ইশার দু হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে দিচ্ছে। ইশা হাত জাগিয়ে বসে আছে। সাব্বির তখন রুমে আসে ইশার জন্য পায়েস নিয়ে। এসে দেখে ইশার হাত মাখা মেহেদিতে।
রিমি দুষ্টমি করে বলে,
-“আরে দেওরা বউয়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছো বুঝি?”
-“হ্যাঁ! ভাবি। সমস্যা নেই আপনারা মেহেদি দিন, আমি ইশাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
-“ওরে মা! আমার দেওরা দেখি খাস ভাষা ভুলে এখন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে।” অবাক করা কন্ঠে কথাটা বলে সিমি।
সাব্বির মুচকি হাসে।
-“তবে যাই বলো না কেন। এখন কিন্তু সাব্বিরকে দেখতে সেই হ্যানসাম লাগছে। এখন বোঝা যাচ্ছে যে থ্রি গ্যাংস্টার দের ছোট ভাই।” নিধি বলে।
-“হুম! এটা ঠিক বলেছিস নিধি। ইশা সাব্বিরের কপালে কাজলের টিপ দিয়ে রেখো। নয়তো অন্য মেয়েরা চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।” খোঁচা দিয়ে বলে ইশাকে রিমি।
-“ডিয়ার ভাবি রা। কথা অনেক হয়েছে। এবার আমার বউকে খাওয়াতে দিন।” রিমি,সিমি,নিধির দিকে তাকিয়ে বলে সাব্বির ।
-“তা তোমাকে ধরে রেখেছে কে শুনি?” মুখ বাকিয়ে বলে নিধি।
সাব্বির ইশাকে খাইয়ে দিচ্ছি । এরি মধ্যে আমাদের প্রিয় ফাহিম ভাই এখানে এসে উপস্থিত হয়।
-“হেই ভাবিরা ফুক,ফুক! মোরে কেমন দেখাইতাছে কন তো?” একটা সিলমারা সানগ্লাসের উপর ফু দিয়ে চোখে পড়ে বলে।
রিমি,সিমি,নিধি এক সাথে বলে,
-“ফুক? ফুক কী?”
সাব্বির বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“লুক হবে লুক,গাধাটায় ফুক বলেছে।”
কে দেখে কার হাসি। একজন আরেক জনার গায়ে ঢলে পড়ছে হাসতে হাসতে। ফাহিম চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলে,
-“হাসির কী আছে? মুই তো ভুই কই। সেটা তো জানেনই। এখন হাসি থামিয়ে বলেন। আমার নুতান(নতুন) প্যান্ট, নুতান(নতুন) শার্ট । আর এই সানপ্রাস টা কেমন হইছে?”
বলবে কিভাবে ওরা হেসেই কূল পাচ্ছে না।
রিমি অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে,
-“দেবর তোমাকে সেই বিটিরফুল লাগছে।”
-“সিরিয়াসলি অনেক সুপানং লাগছে।” সিমি বলে।
নিধি ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
-“আচ্ছা ফাহিম দেওরা নিচে কী তোমার প্রিয় আন্ডারগ্রাউন পড়েছো?”
কথাটা বলতেও না পেরেছে নিধি তার মধ্যেই আবারও হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। এবার সাব্বিরও হাসছে।
-“দিছি ভাবি মোর ইজ্জতের কাজ সাইরা। এরা মোর আন্ডারগ্রাউন লইয়া পইরা আছে ক্যা কে জানে?” মনে মনে বলে ফাহিম।
রিমি হাসি থামিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
-“দেখো ফাহিম,সাব্বির তোমরা আমাদের দেবর। তাই মজা করে এটা,ওটা বললে কিন্তু রাগ করবে না। কারণ,ভাবিরা দেবর দের অনেক কিছুই বলতে পারে। বুঝেছো?”
-“হ ভাবি বুঝছি।”ফাহিম মাথা দুলিয়ে বলে।
-“এবার এখানে এসে বোসো,তোমার হাতে মেহেদি দিয়ে দেই।” সিমি বলে।
-“খাড়ান হাত সাপান(সাবান) দিয়া ধুইয়া আহি(আসি)।
-“কেন?” নিধি বলে।
-“তাইলে মেহেদিতে লাল হইবো বেশি।”
-“এসব আজগবি কথা কে বলেছে তোমাকে। এখানে এসে চুপ চাপ বোসো। ” নিধি বলে।
-“আইচ্ছা।”
ওদের মধ্যে দাদু এসে উপস্থিত হয়। ফাহিম,সাব্বির এবং কি আলতাফ চৌধুরীর হাতেও মেহেদি দিয়ে দেয়। শুধু রুদ্র,শুভ্র,অভ্র বাদে। বিকেল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। দুপুরে খাওয়া,দাওয়া করার পর হালকা নাচ-গান হয়। তারপর পাঁচটার দিকে ইশাকে বউ সাজানো হয়।
আর ফাহিম সাব্বিরকে রেডি করাচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মাগরিবের নামাজের পর সাব্বির ও ইশার বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়। ইশা এখন সাব্বিরের ওয়াইফ। সাব্বির,ইশা অনেকটাই খুশি। এবং বিয়ের মধ্যে সাব্বির এটাও বলে দিয়েছে, যদি চায় ইশা বাচ্চা রাখতে পারবে। আর না হলে ফেলে দিতে পারবে। এতে সাব্বিরের কোনো জোর নেই। কারণ,সাব্বির বাচ্চা সহই ইশাকে মেনে নিয়েছে। বাকিটা ইশার ইচ্ছা। কিন্তু ইশা বাচ্চাকে ফেলতে চায় না এটাও বলে দেয় তখন। এতে সাব্বিরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সাব্বিরের মধ্যে সেই মানুষত্ববোধ টা আছে। যেটা এমন পরিস্থিতে অনেকেরি থাকে না। কিন্তু সাব্বির ভয় পাচ্ছে বাচ্চা হবার সময় ইশার না কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।কারণ,সাব্বির দুনিয়াতে আসার সময় ওর মাকে হারিয়েছে।এখন ইশার সাথেও এমনটা না ঘটে।
সাব্বিরের জন্য ইশার মনের মধ্যে ভালোবাসাটা আরো বেড়ে যায়। এমন একটি লোককে এর জীবন সঙ্গি হিসাবে পাবে সেটা ইশার জানা ছিল না।
রাতে আরেক দফা নাচ,গান হয়। সবাই মিলে হালকা ডান্স করে। খাওয়া,দাওয়া করার পর রাত এগারোটার সময় ইশাকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসে রিমি রা। তারপর সাব্বিরকে ঢেলে,গুতিয়ে বাসর ঘরে পাঠায়।
.
সাব্বির রুমে এসে দেখে ইশা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইশার কাঁধে হাত রাখতেই ইশা ঘুরে তাকায় সাব্বিরের দিকে। ইশার চোখে তখন মুক্তর মতো ফোটা ফোটা জন গাল বেয়ে থুতনিতে এসে ঠেকেছে। সাব্বির চোখ মুছিয়ে দিয়ে মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“আমি কিন্তু তোমাকে কাঁদতে একে বারের জন্য নিষেধ করেছি। তুমি কী আমার কথা শুনবে না?”
ইশা সাব্বিরের বুকে মাথা রাখে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে,
-“কী থেকে কী হয়ে গেল?”
-“যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। আমাদের ভাগ্যে এটাই লিখে রেখেছিল আল্লাহ্! তাই তো আমি তোমাকে পেয়েছি। আর এখন তুমি আমার বউ।”
-“আমার কপালে এত সুখ সইবে তো সাব্বির! আমি যে তোমার কাছ থেকে দূরে যেতে চাই না।”
সাব্বির ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় ইশাকে। হালকা চোখ জোড়া বন্ধ করে বলে,
-“আমার কাছেই থাকবে তুমি সারা জীবন। দূরে যেতে দেবো না তোমায়।”
-“ভালোবাসি সাব্বির। তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।”
-“তোমার চেয়ে দ্বিগুন বেশি আমি তোমাকে ভালোবাসি ইশা।” ইশার কপালে চুমু দিয়ে বলে।
ইশাকে কোলে ওঠিয়ে নেয় সাব্বির। বিছানায় শুইয়ে দেয় ইশাকে। হারিয়ে যায় ভালোবাসার সাগরে।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To………..