#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_26.
পরের দিন অফিসে রুদ্র রা একা যায় নি। আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির ও ফাহিম সাথে গিয়েছে। বাড়িতে মেয়েরাই একা ছিল। সাব্বির, ফাহিম বডিগার্ড দের নিয়ে অফিসের পুরো কেবিনে সার্চ করে, কোথাও বোম লাগানো আছে কি না। তেমন কোনো কিছু দেখতে না পেয়ে রুদ্র দের কেবিনে ফিরে আসে।
-“বুঝতে পারছি না কে পিছন থেকে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে?” রুদ্র রাগান্বিত কন্ঠে বলেই চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায়।
-“বিপলপ তালুকদারের এত সাহস নেই যে তিনি আমাদের উপর হামলা করবে। তাকে তো আগে থেকেই দুর্বল করে দিয়েছি আমরা।” শুভ্র চেয়ারে বসে দুলতে দুলতে বলে।
-“শত্রু দুর্বল হলেও আক্রমন করার হাল ছেড়ে দেয় না। এটা ভুলে যেও না বিপলপ তালুকদার তার ছেলের মৃত্যুর বদলা ঠিক নিবেই।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।
-“কিন্তু দাদু! আমার মনে হচ্ছে বিপলপ তালুকদারের সাথে অন্য কেউ মিলে আমাদের উপর হামলা করছে। কারণ বিপলপ তালুকদার একা এই কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।” অভ্র হাতে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।
আলতাফ চৌধুরী অভ্রের কথাটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসল। তারপর বলল,
-“ইনফরমারদের কাছে কোনো কিছু জানতে পারলে?”
-“নাহ দাদু! ওরা কোনো খবর দিতে পারছে না।ইনফরমার রা বলছে বিপলপ তালুকদার একেবারে নরম হয়ে গেছে। এখন আর খারাপ কাজ করে না।” সাব্বির বলে।
-“চোখের দেখাই সব দেখা নয়। অনেক সময় আমরা যেটা দেখি যেটা ভুল প্রমানিত হয়। বিপলপ তালুকদারের মনের মধ্যে কী আছে,একমাত্র সেটা ওই বলতে পারবে।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।
-“তাহলে কী বিপলপ তালুকদারের উপর আরো নজর রাখব?”সাব্বির প্রশ্ন করে।
-“আরো নয়! কঁড়া নজর রাখো তার উপর।”
-“ওকে দাদু।”
.
.
.
রিমি,সিমি নিধির রুমে বসে একে অপরের সাথে কথা বলছে।কালকের রাতের বিষয় নিয়ে আলাপ করছে ওরা তিন জন।
-“রাফি…থুক্কু রুদ্র সত্যিই আমাকে ভালোবাসে রে। সেটা আমি কালকে বুঝতে পেরেছি।” রিমি বলে।
-“অভ্রও আমাকে ভালোবাসে। কালকে রাতে ওর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।”
-“এতটা ভালোবাসে তারপরও গ্যাংস্টারের বাচ্চা গুলো মুখে প্রকাশ করতে পারে না। ভালোবাসি কথাটা বললে মনে হয় মান-সম্মান সব চলে যাবে।” মুখ বাকিয়ে বলে সিমি।
-“সেই রকমি কিছু মনে কর। গ্যাংস্টার তো,তাই ভাব দেখায়।” রিমি বলে।
-“এই যে ভাবিরা। আমার ভাইয়া দের নামে বদনাম করছো?”ইশা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
-“জি না…শুনাম করছি।”কিছুটা টেনে কথাটা বললো নিধি ।
-“শুনাম নাকি দূর্নাম,সেটা আমি রুমে ঢুকে শুনেছি।”
-“ভালো করেছো শুনেছো। এখন হাতে তালি দেও।” রিমি বলে।
-“ভাবি,তোমাদের মনে কোনো ভালোবাসা নেই। আমার ভাইয়া দের প্রতি তো আরো নেই।”
-“ঠিক বঝেছ! আমরা কঠির দিলের লোক,মানে মেয়ে মানুষ।” আঙুল তুলে বলে সিমি ।
-“একটু তো ভালোবাসো ভাইয়াদের।”
-“কী তখন থেকে ভালোবাসো,ভালোবাসো শুরু করেছো। চুপ কর।” নিধি কিছুটা ধমক দিয়ে বলে।
-“ভালো কথা বললেই দোষ।”
-“হু,বলো কেন?”
-“আমি কী রুমে ঠেং রাখতে পারি?” ফারিন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
-“শুধু ঠেং নয়! ঠেঙ্গা নিয়েও ভেতরে আসতে পারিস।” নিধি বলে ফারিনের দিকে তাকিয়ে ।
ফারিন রুমে ঢুকে বলে,
-“ঠেঙ্গা! ঠেঙ্গা কী?”
-“আর কত বার যে বলতে হবে। এই ঠেঙ্গার মানে কী? লাঠি চিনো?”রিমি বলে।
-“হ চিনি!”
-“ঠেঙ্গা মানে লাঠি। বুঝেছো?”
-“হুম।”
-“তো কিছু বলবি নাকি?”নিধি প্রশ্ন করে ফারিনকে।
-“হু! আকাশের অবস্থা ভালো না। মনে হয় বৃষ্টি হবে। তাই বলছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজবা?”
-“বৃষ্টিতে ভিজার কথা বলতাছস? কালকের কথা মনে নাই? ইশা আর ফাহিমের জন্য এখন আমরা জীবিত আছি। আর নাইলে উপরে থাকতে হতো।” নিধি বলে।
-“কালকের কথার সাথে আজকের বৃষ্টিতে ভিজার কারণ কী? বুঝলাম না।”
-“বুঝস নাই? দাঁড়া বুঝাইতাছি। দর কালকে আমাগো এক্সিডেন্টের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু আজ যদি বৃষ্টিতে ভিজি। আর এই খবর যদি ঐ থ্রি গ্যাংস্টার দের কানে যায়। তাহলে,ইন্নালিল্লা! ” গলাই হাত রেখে বললো নিধি।
-“এত ভয় পাও কেন? দুলাভাই আসতে এখনো অনেক দেরি।”
কথা বলতে বলতে ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি নামতে শুরু করল। সাথে শোঁ শোঁ করে বাতাসও বইছে। এখন কী ওদের ঘরে মন রয়।
-“ইশা তুমি থাকো। আমরা বরং বৃষ্টিতে ভিজে আসি। খবরদার তোমার ভাইয়াদের বলবা না।” নিধি বলে।
ফারিন এক ভ্রু উঁচু করে বলে,
-“এখন ভাইয়াদের কথা মনে নেই নাকি?”
-“রাখ তোর ভাইয়া। কিছু বলতে আসলে ঠেঙ্গা দেখাইয়া দিমু,ঠেঙ্গা।” বলেই ওদের তিন জনকে আর পায় কে। এক দৌঁড়ে ছাদে চলে আসে।
ইশা মন খারাপ করে বসে থাকে। কারণ এই অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজা সম্ভব নয়। ফারিন অনেক অনুরোধ করে ইশাকে। কিন্তু ইশা না করে দেয়। ফারিনও চলে আসে ছাদে। ছাওনির নিচে দাঁড়িয়ে করুন চোখে রিমি,নিধি,সিমির দিকে তাকিয়ে আছে । কিছু একটা ভাবছে ফারিন। চোখের পানি গুলো ওদের আগোচড়ে বার বার মুছে নিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরেই রুদ্র রা সবাই অফিস থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাস্তায় বৃষ্টির কবলে পড়তে হয় ওদের।
নিধি ফারিনকে খুঁজছে। ওদের কে বৃষ্টিতে ভিজতে বলে ফারিন উদাও হয়ে গেছে। তেমন একটা পাত্তা দিল না। দু হাত মেলে দিয়ে বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে তিন জন।
ফারিন ও জরিনা বেগম ইশার রুমে আসে। দরজার সামনে দাঁড়াতেই ফারিন ও জরিনা বেগম ইশার পাগলামি দেখে মুখ কালো হয়ে যায় ওদের। ইশা হাতে একটি বেবি ড্রেস নিয়ে ওর পেটের উপর হাত রেখে একা একা কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে ওর অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলছে। ফারিন ও জরিনা বেগম যে ওর পিছনে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা ইশা বুঝতে পারিনি। জরিনা বেগম তার ছেলের কথা মনে করে নিজের মনকে শক্ত করে। রুমে প্রবেশ করতে নিলে ফারিন জরিনা বেগমের এক হাত পিছনে থেকে ধরে ফেলে অশ্রুশিক্ত চোখে ওর মার দিকে তাকায়। মেয়ের চোখে অশ্রু দেখে তিনি কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও পরক্ষণে আস্তে করে ফারিনের হাত সরিয়ে ফেলে। আরেকটু ভেতরে প্রবেশ করতেই বাহির থেকে গাড়ির হন বাজার শব্দ হয়। জরিনা ও ফারিন দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বুঝতে পারে রুদ্র রা বাড়িতে এসেছে। ইশা হঠাৎ-ই কারো উপস্থিত টের পেয়ে পিছনে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। আবারও আগের মতো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ইশা।
অন্যদিকে রুদ্র দের গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে রিমি,সিমি,নিধি ভয়তে এক প্রকার দৌঁড়ে ওদের রুমে চলে আসে। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র,সাব্বির,ফাহিম ও আলতাফ চৌধুরী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ওদের রুমে চলে আসে।
অভ্র রুমে এসে নিধিকে খুঁজতে শুরু করে। কিন্তু নিধিকে রুমে দেখছে না।ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে বুঝতে পারে নিধি ওয়াশরুমে। রাগ ওঠে যায় অভ্রর। নিধিকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল ও অফিস থেকে আসার আগে যেনো গোসল সেরে নেওয়া হয়। তাই এখন নিধিকে ওয়াশরুমে দেখতে পেয়ে রেগে যায় অভ্র।
-“নিধি,নিধি,ওয়াশরুম থেকে বের হও। আগেই বলেছি তোমাকে আমি আসার আগে শাওয়ার করে নিতে। নিধি!” দরজায় নক করে কঁড়া গলায় বলে অভ্র।
নিধি ভয়তে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে । হুট হাট করে তো বৃষ্টিতে ভিজতে গেছে ঠিকিই। কিন্তু ওয়াশরুমের ভেতরে এসে ফেঁসে গেছে নিধি। জামা কাঁপড় না নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকেছে। এখন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না নিধি।
-“নিধি! বের হচ্ছো না কেন?”
ভালোভাবে ফেসেছে নিধি। এখন কাঁদতে ইচ্ছে করছে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে প্রচুর । আর এদিকে অভ্র তো দরজায় করাঘাত করেই যাচ্ছে। এবার নিধির রাগ হচ্ছে । পরের বার দরজার করাঘাত করতে যাবে ঠিক সেই সময় নিধি চট করে দরজা খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অভ্রের দিকে তাকায়। অভ্রের রাগ নিমিষেই পানি হয়ে যায় নিধির রাগ দেখে । নিধি একদম রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক পা ওয়াশরুমের বাহিরে রেখে অভ্রের বুকের উপর এক হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে দুই কদম দূরে সরিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“হার গরুর মতো চেঁচাচ্ছেন কেন? ওয়াশরুম কী আপনার একার? অফিস থেকে এসেই ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান। কেন? ওয়াশরুমে কী গুপ্তধন,সম্পদ রেখে গেছেন? যে এসেই চেক করতে হবে কেউ নিয়ে গেছে কিনা?ফিরামিরা(আবার) যদি চিল্লাইছেন না! তাহলে,,,,,ঠেঙ্গা!” কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে আলমারি থেকে কাঁপড় বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে অভ্রের মুখের উপর দরজা ধুম করে লাগিয়ে দিল।
এতক্ষণ অভ্র ঘোরের মধ্যে ছিল। দরজা লাগানোর শব্দে ঘোরটা কেঁটে গেল। অভ্র ভাবতেই পারছে না নিধি ও’কে এভাবে কঁড়া কঁড়া কথা শুনাবে। তাও আবার ওয়াশরুম থেকে বের হবার কথা বলার কারণে। সে বোকা হয়ে গেছে পুরা।
.
.
রিমি শাওয়ার বন্ধ করে টাওয়াল হাতে নিতে যাবে তখনি ওর মনে পড়ে তাড়াহুড়োর জন্য টাওয়াল বাদে জামা-কাঁপড় নিয়ে ওয়াশরুমে এসেছে। এখন? মুখে আঙুল রেখে ভাবতে থাকে ।
-“রুদ্রের গাড়ি তো অনেক আগেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। রুমে কী এখনো আসেনি নাকি। আসলে তো এতক্ষণে ওয়াশরুম থেকে বের হতে বলতো আর নাইলেও দশ বার। মেবি আসে নাই। একটু উঁকি মেরে দেখি।” কথাটা বলেই দরজা খুলে উঁকি মেরে রুমের চারদিক দেখতে লাগলো রুদ্র আছে কিনা। রুদ্রকে না দেখতে পেয়ে রিমি পা টিপে বের হয়ে আলমারির সামনে এসে দাঁড়ায়। বিছানার উপর থেকে তোয়ালে নিতে যাবে তখনি পিছন থেকে কেউ ওর কাঁধে হাত রাখে। রিমি চমকে ওঠে। টাওয়াল হাতে নিয়ে পিছনে থাকা ব্যক্তিটির উপর তোয়ালে দিয়ে বার বার মারতে মারতে থাকে। চট করেই রুদ্র ওর হাত ধরে ফেলে।বলে,
-“রিমি আমি।”
রিমি রুদ্রর কন্ঠ শুনে সান্ত হয়। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পিছিয়ে গিয়ে আলমারির সাথে মিশে দাঁড়ায়।
রুদ্রের ঠোঁটে দুষ্ট হাস ফুটে ওঠে । রিমি রুদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তোতলিয়ে বলতে লাগলো,
-“আ..আপনি?”
রুদ্র রিমির দিকে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয়। ভেজা কাঁপড়,ভেজা চুল গুলো। তার উপর কঁপাল বেয়ে ফোটা ফোটা পানি ঝড়ছে। বেশ স্নিগ্ধ লাগছিল রিমিকে। রুদ্র উত্তর দেয়,
-“ইয়াপ!আমি!”
-“এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? ”
-“তোমার পিছনে?”
-“পিছনে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রিমি।
-“জ্বী,রুমে এসে দেখি তুমি রুমে নেই। বারান্দায় খোঁজ করতে গেলাম। সেখানেও নেই। বারান্দা থেকে রুমে এসে দেখি তুমি পা টিপে টিপে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছো। তাই আমিও পা টিপে তোমার পিছনে এসে দাঁড়ালাম।এবার বলো! এই ভেজা অবস্থায় কোথায় যাচ্ছিলে? ”
রিমি আগের ন্যায় তোতলিয়ে বলতে আরম্ভ করল,
-“টা..টা..টা..।”
-“টা..টা কী?”
-“টা..টা..টা..টাওয়াল নিতে এসেছিলাম।”
-“তো নেও!” স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে রুদ্র।
কথাটা শুনেই টাওয়াল বিছানার উপর থেকে নিয়ে রিমি দৌঁড়ে ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে নিলে দেখে দরজা বন্ধ হচ্ছে না। রিমি বার বার চেষ্টা করছে,কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারছে না। দরজার সামনে কিছু একটা আটকে আছে মনে করে রিমি উঁকি মেরে দরজার সামনে তাকাতেই দেখে রুদ্র এক পা দরজার সামনে দিয়ে স্ট্রেচুর মতো দু হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি রুদ্রের চোখের দিকে তাকাতেই রুদ্র দুই ভ্রু উঁচু করে,যার মানে ‘কী’। গেছে রিমি ফেঁসে!রিমিকে যে আজ তিমি করে ফেলবে রুদ্র এটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে রিমি। তারপরও রিমি দরজা জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছে লাগানোর জন্য। কিন্তু রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে তো দাঁড়িয়েই আছে। সরে যাওয়ার নাম গন্ধও নেই। রিমি এক প্রকার দরজার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। রুদ্রের এটা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে। হাত দিয়ে ওর গায়ের শার্টের বোতাম গুলো খুলে দিল। দরজায় হাত রেখেই দরজা খুলে ফেললো রুদ্র। রিমি ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। রুদ্র ওয়াশরুমের দরজা লক করে দিল। যেটা দেখে রিমি পুরা হতবাক হয়ে যায়।
রিমি পিছাতে নিলে,রুদ্র রিমিকে আর পিছাতে না দিয়ে ওর কাছে টেনে নিয়ে আসে। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে দু’জনেই এক সাথে ভিজতে থাকে। রিমি আগেও বৃষ্টিতে একবার ভিজেছে। এখন আবার শাওয়ার অন করার পর শীত লাগছে ওর। এক তো রুদ্রের কাছে আসার কারণে বুক দড়ফড় করছে। তার মধ্যে শীত লাগছে। রুদ্র ধীরে ধীরে রিমির প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগলো। পিছন দিকে ঘুরিয়ে পিঠের উপর থেকে আলত করে চুল সরিয়ে গলায় ডিপ কিস করল। রিমির চোখের পাতা আনমনেই বন্ধ হয়ে আসে। পিছন দিক থেকে পেটের উপর হাত রেখে রিমিকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে। রুদ্র নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে রিমির ঘাড়ে,গলায় ঠোঁট বুলাচ্ছে। রিমি চোখ বন্ধ করে নিয়ে ওড়না হাতের মুঠোই চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পর রুদ্র রিমির কানে কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“আমার হয়ে যাও রিমি!”
কথাটা শুনা মাত্রই রিমি চোখ মেলে তাকায়। শরীর হাত-পা কাঁপতে থাকে ওর। রুদ্রের থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়। রুদ্র রিমির উত্তর পেয়ে যায়। এক বুক অভিমান নিয়ে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুদ্র। রিমি কিছুক্ষণ মৌন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর পিছনের দিকে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। মনে মনে বলে,
-“আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছেন আপনি। এত তাড়াতারি এটা কিভাবে আমি ভুলে যাব। কষ্ট তো আপনাকে আরো পেতে হবে মি.রুদ্র। জানি আমাকে ভালোবাসেন। আমিও দেখতে চাই আপনি কত টুকু কষ্ট সহ্য করতে পারেন।”
.
.
সিমি কোন রকম শাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।ভেজা কাঁপড় গুলো ওয়াশরুমের ভেতরেই রেখে আসে। চুল ভালো করে মুছতে পারিনি বিধায় চুল থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বাহিরে তখনো বৃষ্টি পড়ছিল। বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল আর ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে মুছছিল। তখনি রুমে শুভ্রের আগমন ঘটে। কোট সোফার উপর রেখে সোফায় বসতেই সিমিকে বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সিমি থাইগ্লাসের আয়নায় আপছা আপছা শুভ্রকে দেখতে পায়। এতে সিমি বুঝে যায় শুভ্র সোফায় বসে আছে। কিছুক্ষণ পর সিমি আচমকা পিছনে ঘুরতেই শুভ্রের থুতনিতে ওর মাথায় বারি খায়। একটু জোরেই লাগে বারিটা। সিমি মাথায় হাত বুলায়। শুভ্র ওর থুতনিতে । সিমি বিরক্তি মুখে বলে,
-“সমস্যা কী? পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?”
-“বলতে হবে?” ঘাড় হালকা কাত করে বলে শুভ্র।
-“হ্যাঁ, বলেন ।”
-“কী যেনো বলতে তুমি? ওহ হ্যাঁ! কমু ক্যা।” কিছুক্ষণ ভেবে বলে শুভ্র।
সিমি চোখ ছোট ছোট করে কিছুটা রাগী মুড নিয়ে তাকায় শুভ্রের দিকে। এই কমু ক্যা কথাটা একদিন সিমি পার্কে বসে শুভ্রের অন্য কথার পিঠে বলেছিল। যার কারণে আজকে ওরি কথায় পিঠে ও’কেই বলে দিলো ।
-“কপি!”
-“নো,নো..ইট’স মাই।” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে শুভ্র ।
সিমি শুভ্রের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে হাত ধরে ফেলে। সিমি এবারও বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“কী?”
-“বাহিরের ওয়েদার দেখো। টুপ টাপ বৃষ্টি পড়ছে। সাথে ঠান্ডা বাতাস ফ্রী! রুমে এখন শুধু তুমি আর আমি । একটি রোমাঞ্চকর পরিবেশ ফুটে ওঠেছে।” ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলে শুভ্র।
নিধি মুচকি হেসে চোখ পিটপিট করে বলে,
-“রোমাঞ্চ পাচ্ছে আপনার?”
-“ইয়াহ!”
ফট করেই নিধির হাতের তোয়ালে শুভ্রের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“আমার তোয়ালে আর আমি! একি কথা। আপনি ওর সাথে রোমাঞ্চ করুন। ও আপনাকে কোনো ডিস্টার্ব করবে না। ঠিক আছে।”
বলেই চলে যেতে নিলে শুভ্র একটি গান ধরে,
-“তুমি বুঝনি…।”
-“খবরদার! এই গানটা বলবেন তো আমি আপনাকে আমার দু’হাত দিয়ে চটকিয়ে ফেলবো।” আঙুল তুলে বলে সিমি ।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বলে,
-“হোয়াট! চটকিয়ে কী?”
-“লবন কম আছে।”
-“কোথায়?”
-“আপনার মধ্যে ।”
-“হোয়াট!” জোরে বলে।
সিমি জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“জানি না! ঠেঙ্গা।” বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
শুভ্র তখনো কপাল কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। সিমি একটু আগে ‘চটকিয়ে,লবন কম’ কী বলেছে বুঝতে পারছে না শুভ্র। আবার যাওয়ার আগে ‘ঠেঙ্গ’ নামের একটি ওয়ার্ডও বলে গেছে। সিমির আজগবি কথা গুলো মাথার মধ্যে ঢুকছে না শুভ্রর। নিজে নিজেই বলে,
-“Whatever.”
.
.
.
-“মা,আমার দ্বারা এটা করা কিছুতেই সম্ভব নয়।” কান্না করে বলে ফারিন।
-“আমাদের কিছু করার নেই। যে করেই হোক আমাদের কাজ সম্পূর্ণ করতেই হবে।” জরিনা বেগম কিছুটা কঁড়া গলায় বলেন।
-“কিভাবে করব মা? তুমি দেখেছো সব কিছু নিজের চোখে।”
-“ফারিন আমরা নিরুউপায়। আমাদের কিছুই করার নেই।”
-“আমি পারবো না মা। আমি পারবো না।” কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়ে ফারিন।
জরিনা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ফারিন বিছানার উপর মাথা রেখে একা ধারে কেঁদে যাচ্ছে। হতাশ,নিরুপায় তারা। না আছে তাদের কিছু করার। না আছে জমে থাকা কষ্ট গুলো কাউকে বলার। সব কিছুই গোলকধাঁধার মধ্যে আঁটকে গিয়েছে। না পারছে বের হতে,না পারছে সহ্য করতে।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To………