Three Gangsters Love Part-27

0
2867

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_27.

-“ভাবি,,ও ভাবিরা! গেলা কই?”জোরে চিল্লিয়ে ডাকতে ডাকতে হল রুমে এসে দাঁড়াল ফাহিম।

রিমি,সিমি,নিধি,ফারিন হল রুমের সোফায় বসা ছিল। ফাহিম সেটা খেয়াল করেনি।

-“আরে ভাবি…..।”

-“ঐ কানা! এম্মে(এদিকে) তাকা। তোমার সামনে বসে রইছি। আর তুমি চোখে ঠাওর পাও না।” রিমি বলে।

-“মুই খেয়াল করি নাই ভাবি।” দাঁত কেলিয়ে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলে ফাহিম ।

-“তা দেখবে কী করে? কালো সানগ্লাস পড়ে অন্ধ হয়ে গেছে।” ফারিন পিঞ্চ মেরে বলে।

ফাহিম ট্যারা চোখে ফারিনের দিকে তাকিয়ে রিমিদের উদ্দেশ্যে বলে,
-“ভাবি আহো,তোমাগো লগে আমি টুক টুক করমু।”

রিমি,সিমি,নিধি এক সাথে বলে,
-“কী টুক টুক ।”

ইশা হেসে হেসে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলে,
-“টুক টুক না ওটা টিক টক হবে।”

-“হয়,হয় ঐটাই।” মাথা নাড়িয়ে বলে ফাহিম।

রিমি,সিমি,নিধি হাসে। ফারিন ভাব নিয়ে বলে,
-“ঠিক মতো বলতে পারে না,সে কিনা আবার টিক টক করবে।”

ফাহিম মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“ভাবি হেতিরে কিছু কও। হেতির লগে কিন্তু মুই কোনো কথা কই না।”

-“আপু আমিও কারো সাথে কথা বলি না। আমি নিজের সাথে নিজে কথা বলি।”ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে ফারিন।

-“এহহহ! কলা চিনেন কলা? আপনে কলা
হরেন(করেন) ।” ফাহিম বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলে ফারিনকে।

ফারিন চোখ পাকিয়ে তাকায় ফাহিমের দিকে।

-“ঐভাবে তাকাইয়া লাভ নাই। গিল্লা খাইতে পারবেন না। আমি মেলা ডাঙ্গর(বড়)।”

-“আমি বলিনি আপনাকে গিলে খাবো।” দাঁত কটমট করে বলে ফারিন ।

-“কওয়া লাগে না,আপনার মনডায় কী চায় জানি।”

-“আপু কিছু বলো তারে।” নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।

-“ফাহিম থাম এবার। আর তুইও থাম ফারিন।”

-“থামলাম আহো ভাবি টুক টুক করমু।”

ইশা বলে,
-“কিসের অভিনয় করবি?চোরের নাকি ডাকাতের?”

-“দিতে মোর আগের কামলার(কাজের) কথা মনে করাইয়া।” মনে মনে বলে ফাহিম।

-“আমি শুনেছি তুই নাকি এই বাড়িতে চুরি করতে ডুকেছিলি?” ইশা ভ্রু উঁচু করে হেসে হেসে বলে ।

-“আগের দিন,কথা বাঘে খাইয়া হালাইছে। হেইয়া মনে করেন ক্যা এহন?” ফাহিম দু’হাত জাগিয়ে বলে ।

-“ফটাৎ(হঠাৎ) কইরা মনে পড়ে গেল। তাই বললাম ।” হেসে হেসে বলে ইশা।

-“চোরের কথাতে মনে পড়ল আমরা আগে যেখানে কাজ করতাম সেখানেও একটা চোর ছিল। বেটায় হোটেল থেকে খাবার,জীনিস পত্র চুরি করত।একদিন সবাই মিলে ধরে ইচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছি। তারপরে আর চোর বেটা হোটেলে আসেনি।” সিমি বলে।

ফাহিমের আর বুঝতে বাকি থাকে না এরাই সেই মেয়েরা। সেদিন ও’কে যারা মারার জন্য তাড়া করেছিল।

হুট করেই পিছন থেকে সাব্বির বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে বলে,
-“ভাবি ওয়েট!সেই চোরটায় কী চাদর মুড়া দেওয়া ছিল।”

-“হ্যাঁ!” নিধি বলে।

সাব্বির এবার ক্লিয়ার হয়। সেদিনের মাইর ওর ভাবিরাই দিয়েছিল ।

রিমি ভ্রু কুঁচকে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি কিভাবে জানলে? তুমি কী সেখানে ছিলে?”

-“তাহলে আসল কথা শুনেন।” সাব্বির সবটা ওদের বললো। কথা শেষ করে কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে,”ঐ শালারে যদি পাইতাম না। যেটার জন্য আমি হুদা জাগায় মাইর খাইছি।খবর করে ছাড়তাম ওর।”

ফাহিম শুকনো ঢোক গিলে । রিমি,সিমি,নিধি মুখ টিপে হাসছে। ইশা ও ফারিন জোরে জোরে হাসছে।

সাব্বির ইশার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
-“রুমে চলো,হাসি বের করব।”

ফাহিম তো মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি হাসি থামিয়ে ফাহিমকে বলে,
-“ফাহিম তোমার টুক টুক করবা না।”

-“করতে তো চাইছিলাম। কিন্তু আপনারাই তো চোর নিয়া হাসা-হাসি শুরু করছেন ।”

-“আচ্ছা আর হাসব না। আসো টুক টুক করি।” নিধি বলে।

-“আর করছি টুক টুক,আমি যাই।” বলেই ফাহিম রুমে চলে আসে।

ওরা কিছুটা অবাক হয়। হঠাৎ করে ফাহিমের কী হলো বুঝতে পারছে না।
.
.
রাতে…..

নিধি রুমে এসে অভ্রকে না দেখতে পেয়ে ওড়না খুলে হাতে নিয়ে গোল গোল‌ গুরতে লাগল। আর সঙ্গে সঙ্গে ওড়না টা একটি ফুলের টপের সাথে লেগে ফ্লোরে পড়ে ভেঙে চূড়মাড় হয়ে যায়। নিধি হা করে তাকিয়ে আছে ভাঙা ফুলের টপের দিকে। এটা অভ্রের প্রিয় ফুলের টপ ছিল। নিঁখাত এখন অভ্র যদি এটা দেখতে পায় তাহলে ওর তেরোটা বাজিয়ে দিবে। নিধি অভ্রের কথা ভাবতে না ভাবতেই অভ্র রুমে এসে হাজির। নিধির সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফ্লোরে ভাঙা ফুলের টপ দেখে অভ্রের রাগ হয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“এটা কী করলে তুমি? আমার প্রিয় ফুলের টপ ভেঙে ফেললে?”

নিধির রাগ হয় অভ্রের কথা শুনে ।নিধি তো ইচ্ছে করে এটা ভাঙেনি। ওর ওড়নায় লেগে ভেঙ্গে গেছে। তাতে ওর দোষ কী? সিমি অভ্রের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলে,
-“আমি এটা ইচ্ছে করে ভাঙিনি। ওড়নায় লেগে পড়ে ভেঙ্গে গেছে।”

-“দোষ করে কেউ শিকার করে না যে সে দোষ করেছে। তোমার অবস্থাও ঠিক সেই রকম।”

-“দোষ!কিসের দোষ? আমি বলেছি না এটা ইচ্ছে করে ভাঙিনি।”

-“ইচ্ছে করেই ভেঙেছো তুমি।” কিছুটা ধমকের স্বরে বলে অভ্র।

নিধির খুব খারাপ লাগে সামান্য একটা ফুলের টপ নিয়ে এত কঁড়া কথা বলবে অভ্র সেটা জানাছিল না।

-“দাঁড়িয়ে থেকে কী দেখছো? ভাঙা টুকরো গুলো ওঠাও।”

নিধি রাগী মুড নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আলতাফ চৌধুরীর কাছে যাবে বিচার দিতে অভ্রের নামে। আলতাফ চৌধুরীর রুমে এসে দেখে তিনি রুমে নেই। করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে নিচে উঁকি মেরে দেখে আলতাফ চৌধুরী ও রিমি,সিমি,ইশা সহ রুদ্র,শুভ্র সাব্বির একে অপরের সাথে তর্ক করছে। আলতাফ চৌধুরী তাদের থামানোর চেষ্টা করছে। জরিনা বেগম,আলি হোসেন ও ফারিন,ফাহিম পাশে দাঁড়িয়ে ঝগড়া দেখছে। নিধিও নিচে নেমে আসে। সাথে অভ্রও। ওদের মতো আলতাফ চৌধুরীর কাছে বিচার দিতে নিলে এক প্রকার ঝগড়া সৃষ্টি হয়। আলতাফ চৌধুরী আর সহ্য করতে পারছে। এক সাথে,এক বারে কথা বললে কিছুই বুঝা যায় না।শেষে বিরক্ত হয়ে জোরে ধমক দিয়ে বলে,
-“থামো!থামো সবাই।”

এক ধমকেই সবাই চুপ। হল রুমে নিরবতা নেমে আসে । আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“এক এক করে বলো কী হয়েছে? ”

-“দাদু তোমার নাতি ওয়াশরুমে গিয়ে সাবানের উপর পা রেখে চিৎ হয়ে পড়ে গেছে। এখন এর জন্য আমাকে দায়ী করছে। আমি নাকি সাবান ইচ্ছে করে ফ্লোরে ফেলে রেখেছিলাম। এর জন্য আমাকে অনেক বকা-ঝকা করেছে। তুমি এখন এর বিচার করো।” রিমি নাক টেনে বলে।

রুদ্র কিছু বলতে গেলে আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“রুদ্র তুমি থামো। নাতবউ তুমি বলো?”সিমির উদ্দেশ্যে বলে।

সিমি আঙুল তুলে শুভ্রকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,
-“দাদু ওনি আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে আনতে বলেছে। আমি কপি বানাতে গিয়ে ভুলে গুড়ো দুধের জাগায় খাবারের সোডা দিয়ে ফেলেছি। তিনি কপি খেয়ে আমাকে ইচ্ছা মতো বকা দিয়েছে। এত করে বললাম আমি ভুল করে দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনেইনি।আমাকে এত্ত গুলো বকা দিছে।”

-“তুমি ইচ্ছে করে সোডা দিয়েছো সিমি।” ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে শুভ্র।

-“তুমি থামো শুভ্র। ভুলটা তোমার হয়েছে নাতবউ এর নয়। তুমি বলো নাত বউ।” নিধির উদ্দেশ্যে বলে ।

নিধি ফুলের টপ ভাঙার কথা আলতাফ চৌধুরীকে বলে । অভ্র কিছু বলতে নিলে এবারও থামিয়ে দেয় আলতাফ চৌধুরী। সব শেষে ইশার কাছে জিজ্ঞেস করা হয় কী হয়েছে। ইশা কান্নার ভান করে বলে,
-“দাদু,সাব্বির আমাকে সব সময় খেতে বলে। বাসায় যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ শুধু খাও আর খাও। আমার খাবার খেতে ভালো লাগে না বমি আসে। এই গাধাটায় সেটা বুঝে না। খাবার না খেলেই করুন হালে বকা শুরু করে দেয় আমাকে । তুমি কিছু বলো ও’কে দাদু।”

একজন আরেক জনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে । আলতাফ চৌধুরী সেটা বুঝতে পারে।

-“বড় কঠিন অবস্থা দেখছি তোমাদের। কিন্তু তারপরও আমি নাতবউদের সাপোর্ট করব।”আলতাফ চৌধুরী কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে ।

-“আইলা! দাদু পার্টি বদলাইয়া হালাইছে।” মনে মনে বলে ফাহিম।

-“দাদু! তুমি এটা কী বলছো? আমাদের সাপোর্ট না করে ওদের সাপোর্ট টানছো?” রুদ্র বলে।

রিমি,সিমি,নিধি,ইশা খুশি হয় ওদের দাদুর কথা শুনে। আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“আমি ওদের সাপোর্টই টানবো। আর তোমারা ওদেরকে বিনা কারণে বকা দেওয়া জন্য আজ থেকে তিনদিন তোমরা এক সাথে থাকবে না। অন্য রুমে ঘুমাবে। এই তিন দিন ওরা ওদের স্বাধীন মতো চলবে। তোমরা ওদের কিছু বলতে পারবে না। তিন দিন পর আবার এক সাথে থাকবে । এটাই তোমাদের চার জনের শাস্তি ।”

দাদুর কথাটা শুনে মনে হলো ওরা চারজন ঝাটকা খেলো। রিমি,সিমি,নিধি,ইশা সেই লেভেলের খুশি । মুখে ফুটে ওঠে ডাইনি হাসি। ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। সাব্বির চিল্লিয়ে বলে,
-“না! দাদু তুমি এটা করতে পারো না।”

-“ফিল্মি ডাইলগ বন্ধ কর। আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল। আর কোনো কথা হবে না। যাও যে যার রুমে যায়। আর নাতবউ রা তোমরা চাইলে আমাদের বড় গেস্ট রুমটায় এক সাথে থাকতে পারো ।”

রিমি খুশি মুডে বলে,
-“জ্বী দাদু! আমরা ঐ রুমেই থাকবো এবং ঘুমাবো।”

আলতাফ চৌধুরী কথাটা শুনে তার রুমে চলে গেলেন।রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ও সাব্বির রাগে সাপের এতো হিস হিস করছে।রিমি,সিমি,নিধি,ইশা সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। তাই ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে মুড নিয়ে চলে যায়। ওরাও আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে ওদের রুমে চলে আসে। ফাহিমও ওর রুমে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পর গেস্ট রুম থেকে জোরে মিউজিক বাজার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । মিউজিকের শব্দ অভ্র,রুদ্র,শুভ্র,সাব্বির ওদের রুমে বসেও শুনতে পাচ্ছে। ওদের রাগ ভেড়ে যায় । না পারছে কিছু বলতে, না পারছে সহ্য করতে। আর এদিকে গ্যাংস্টারদের কুইন রা ইচ্ছা মতো ডান্স করছে । ফারিন ও ইশা সোফায় বসে দেখছে।

আলতাফ চৌধুরীর তার রুমে বসে মিউজিক শুনেও কিছু বলল না। এক দফা ডান্স করার পর হয়রান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর নাচবে না বলে বক্স বন্ধ করে বিছানায় ঘুমাতে চলে আসে। ফারিন ওর রুমে চলে আসে। গেট লাগিয়ে দেয় রিমি।

অন্য প্রান্তে গ্যাংস্টার তিন জন সহ সাব্বিরের চোখে ঘুমের ‘ঘ’ ও নেই। ওদের ঘুম সাথে করে নিয়ে গেছে ওরা চারজন। বিছানায় শুনে ওপাশ, ওপাশ করছে। ঘুম চোখে ধরা দিচ্ছে না। রুদ্র বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আবার এসে বিছানায় শোয়। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যায় রুদ্র।

সবাই ঘুমে মগ্ন। শুধু ফারিন বাদে। ফারিন বিছানার উপর বসে আছে। এক পাশে ফোন ও অন্য পাসে একটি মাজারি আঁকারের ছুঁড়ি রাখা। দু’হাত দু পাশে রেখে মাথা নিচের দিকে রেখে চুপটি করে বসে আছে । একটু আগেই একটি ম্যাসেজ এসেছে ওর নাম্বারে। লেখা ছিল “মেরে ফেলো” । কাকে মারতে হবে সেটা ফারিন জানে। এখন কী কবরে বুঝতে পারছে না ফারিন। মুখের উপর দু হাত রেখে আরো কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর হাত সরিয়ে ফোস করে একটি নিঃশ্বাস টেনে নেয়। ছুঁড়ি হাতে নিয়ে ওঠে দাঁড়ায়। সাবধানে দরজা খুলে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে । প্রথমে রুদ্র,তারপর শুভ্র,তারপরে অভ্রের রুমের সামনে এসে ঘুরে যায়। প্রথম দিন যখন ফারিন এই বাড়িতে আসে,তখন ওদের তিন ভাইয়ের চেহারা ঠিক এতো চিনে রাখার জন্য বার বার ওদের দিকে তাকাত। আর এখন চিনে ফেলেছে ওদের। কিন্তু ফারিন ওদের রুম থেকে ঘুরে আবার নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। মাথার চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে আবার দু তিন পা হেঁটে ভূতিয়া রূপ নিয়ে ফাহিমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় । আস্তে করে দু বার নক করল দরজা। ফাহিম গভীর ঘুমে মগ্ন থাকায় টের পায়নি। ফারিন এবার আরেকটু জোরে করাঘাত করল। খট করে ফাহিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ঘুম চোখে ওঠে বসে। খেয়াল করে বুঝার চেষ্টা করে শব্দটা কোথা থেকে আসছে। তখনি আবার দরজায় শব্দ হয়।

ফাহিম টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বিছানা থেকে নেমে হাই তুলতে তুলতে গেট খুলে দেয়। গেট খুলে ফারিনকে চুল ছাড়া, হাতে ছুঁড়ি নেওয়া অবস্থায় চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিমের ঘুমের রেশ কেঁটে যায়। ফাহিম চোখে ভুল দেখছে ভেবে চোখ দুই হাত দিয়ে কচলিয়ে পিটপিট করে ফারিনের দিকে তাকাতেই ফারিন ছুঁড়ি হাতে ফাহিমের উপর আক্রমন করে দেয়। ফাহিম নিজেকে রক্ষা করার জন্য চিৎকার না দিয়ে আগেই ছুঁড়ি নেওয়া হাত ধরে ফেলে। ফারিন এটা দেখে অন্য হাত দিয়ে ফাহিমের হাত সরিয়ে নিতে চাইছে ফাহিম এই হাতও ধরে ফেলে, এবং সুযোগ বুঝে ফাহিম ফারিনের হাত থেকে ছুঁড়ি মাটিতে ফেলে দিয়ে দু’হাত পিছনের দিক নিয়ে বিছানার সাথে মাথা চেপে ধরে । ফারিনের হাত ওর পিঠের সাথে চেপে ধরেছে বিধায় আর শক্তি প্রয়োগ করতে পারছে না। ফাহিমের কাছে হেড়ে যায়।

ফাহিম প্রথমে নিজেকে সান্ত করে। এতক্ষণ ওর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে হয়রান হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে তারপর ফারিনকে বলে,
-“মোরে ছুঁড়ি দিয়া মারতে আইছেন কিল্লাই? মুই কী হরছি?”

ফারিন ফাহিমের কথার উত্তর দিচ্ছে না। হাত ছাড়ানোর জন্য ছোড়াছুড়ি করছে।

-“নড়াচরা না কইরা সত্য কথা কন। আর নাইলে মুই কিন্তু…….।”

-“কিন্তু কী?” রেগে বলে ফারিন।

-“দেহেন,আমি কিন্তু জানি আপনি প্রথম প্রথম মোরে ভূতের ভয় দেখাইছেন ক্যা?”

ফারিন চুপ করে এখনো ছোড়াছুড়ি করছে।

-“নিধি ভাবি কইছে আপনি নাকি যাদের পছন্দ করে না তাদের নিজের কাছ থেকা দূরে সরাবার জন্য ভূতের মতো নাটক করেন। যাতে হেতিরা আপনাকে ভূতে ধরছে মনে কইরা দূরে থাকতে পারে।” ফাহিম থেমে আবার বলে,
-“মুই চাইলে এর জন্য আপনারে জম্মের শিক্ষা দিতে পারতাম। কিন্তু মুই এইডা হরি নাই। কারণ,মুই প্রথম দেহায় আপনারে ভালোবাইসা হালাইছিলাম।”

ফারিন এবার শান্ত হয়ে যায়। ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে চুপ করে থাকে । ফাহিম আবারও বলে,
-“মুই যখন বুঝতে পারছি আপনে মোরে পছন্দ হরেন(করেন) না। তারপর থেকা আমি আপনারে জ্বালাই নাই। আপনার থেকা দূরে থাকছি। কিন্তু আপনি এহন আমারে মারতে আইছেন ক্যা? মুই তো আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই। ”

ফারিনকে স্থির থাকতে দেখে ফাহিম হাত ছেড়ে দেয়। ফারিন আস্তে করে ওঠে দাঁড়ায়। ফাহিম ফারিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফারিনও তাকিয়ে থাকে ফাহিমের দিকে। কিছুক্ষণ পর ফারিন ফাহিমের গালে জোরে একটি থাপ্পড় দিয়ে ক্ষুপ্ত কন্ঠে বলে,
-“আমাকে ভালোবেছিস! এটাই তোর বড় ভুল। খুন করে ফেলবো যদি তুই আমার দিকে তাকিয়েছিস তো। দূরে থাকবি আমার কাছ থেকে ।” কথা গুলো বলেই ফারিন চলে যায় ওর রুমে।

ফাহিম মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। হাত থেকে হালকার উপরে ছুঁড়িটা পড়ে যায় ফ্লোরে। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে ফাহিম। যাকে ভালোবেসেছিল তার মনের মধ্যে যে ওর প্রতি বিষ ছিল সেটা ওর জানা ছিল না। যার দরুণ এই গভীর রাতে‌ ও’কে মারতে এসেছে। ফাহিম ধীরে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে কেন এই দুনিয়াতে বেঁচে আছে? কেনই বা ছোট কালে ওর মৃত্যু হয়নি। এই দিনটি দেখার জন্য? জীবনের প্রথম কোনো মেয়েকে এতটা ভালোবেসেছিল ফাহিম। আজ তার কাছ থেকেই এতটা কঠিন,কঠোর কথা শুনতে হলো। চোখ থেকে পানি পড়ছে না ওর। শুধু পাথরের মতো চুপটি করে বসে আছে ।
সারা রাত এভাবেই পার করে দেয় ফাহিম। রৌদ্দে ছটা জানালা ভেদ করে রুমের ফ্লোরে এসে পড়ে। সারা রাত ভেবেছে ফাহিম। নিজের মনকে সান্তনা দিয়েছে। চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে ওর। চোখ জোড়া দু হাত দিয়ে কচলিয়ে ওঠে বাথরুমে চলে যায়।

নয়টা বাজতে চলল। এখনো রিমি,সিমি,নিধি,ইশা ঘুম থেকে ওঠেনি। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র আর সাব্বির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসে। নাস্তা না করেই চলে যায় অফিসে। আলতাফ চৌধুরী রাগী মুড নিয়ে তার রুম থেকে বের হন। তিনি হয়তো কোনো কারণে রেগে আছেন। হল রুমে এসে দেখে কেউ এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। রাগ আরো দ্বিগুন ভেড়ে যায়। হাতে গান নিয়ে হল রুমের ঝারবাতির দিকে গুলি ছুঁড়ে । সঙ্গে সঙ্গে ঝারবাতি ফ্লোরে পড়ে ভেঙে চূড়মার হয়ে যায়। এমন বিকট শব্দে ঘুম থেকে দড়ফড়িয়ে ওঠে বসে ওরা চারজন। সার্ভেন্ট রা এসে মাথা নত করে দাঁড়ায় আলতাফ চৌধুরীর সামনে। রিমি,সিমি,নিধি, ইশা কোন কথা না বলেই এক প্রকার দৌঁড়ে নিচে আসে। এসে দেখে ঝারবাতি ফ্লোরে পড়া। ওদের দাদু সার্ভেন্ট দের ইচ্ছা মত‌ো গালাগালি করছে। ফট করেই ফাহিম রুম থেকে বেরিয়ে আলতাফ চৌধুরীর সামনে উপস্থিত হয়। বলে,
-“ও দাদু,হইছেডা কী? পুরা বাড়ি মাথার উপর নিয়া নাচতাছো ক্যা?”

-“স্টুপিড কোথাকার,কথার মাঝে কথা বলিস। দেখছিস না আমি ওদের সাথে কথা বলতেছি।” ধমক দিয়ে বলেন আলতাফ চৌধুরী ।

-“হেডায়..থুক্কু সেইটাই তো জিগাইতাছি। হইছে ডা কী? কবা তো?”

-“আজকেও আবার চায়ে চিনি দিছে ওরা।”

-“বুঝছি আর কওয়া লাগত না। আমি দেখতাছি। ঐ সারপেন্ট!..”

-“সার্ভেন্ট হবে গাধা!” পাশ থেকে রিমি বলে ওঠে।

-“ঐ……।”

নিধি,সিমি,ইশা এক সাথে বলে,
-“হইলো….।”

-“হ ঠিক! ঐ সার্ভিসিং রা….।” ফাহিম বলে।

এবার রিমি,সিমি,নিধি,ইশা তিন জনিই কঁপালে এক সাথে হাত দেয়।

-“কী হইলো? তোমাগো কপালে কী এক সাথে মশা পড়ছে?” ফাহিম কপাল কুঁচকে বলে ।

-“তোর ইংলিশ শুনে জ্ঞান হারানোর চেয়ে,এখান থেকে চলে যাওয়া ভালো।” ইশা এটা বলেই চলে যায় সেখান থেকে ।

সেখানের মেয়ে সার্ভেন্ট রা মুখ টিপে হাসছে। ফাহিম ওদের হাসি দেখে কিছুটা ধমকের স্বরে বলে,
-“হপ,ইটানসন ফায়েস।”

-“ওরে রে আমার মাথা ঘুরায় রে,,,রিমি, নিধি আমারে ধর।” মাথায় হাত দিয়ে বলে সিমি।

নিধি,রিমি সিমিকে ধরবে কী ওরা হেসেই কূল পাচ্ছে না।

-“মুই কী এবারও ইংলিশ ভুল কইছি?” মুখ মনিল করে বলে ফাহিম।

সিমি ঝাড়ি দিয়ে বলে,
-“তা নয়তো কী? এটেনশন কে ইটানসন আর গায়েস কে ফায়েস করে দিয়েছো তুমি।”

ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলে,
-“ঐ……..।”

সিমি চিল্লিয়ে বলে,
-“তোরে আজকা জনমের মনে ঐ হইলো খাওয়াইয়া দিমু খাঁড়া।”বলেই ফাহিমকে দৌঁড়ানি দিল সিমি। ফাহিমও দৌঁড়াচ্ছে খিঁচ্ছা। নিধি আজ ফাহিমকে ধরতে পারলে পিঠে ভাদ্রমাসের তাল ফেলবে এটা শিওর। যার কারণে ফাহিম দৌঁড়াচ্ছে। সোফার চারদিক গোল গোল করে দৌঁড়াচ্ছে ওরা দু’জন। আলতাফ চৌধুরী আহম্মক হয়ে গেছে। তার সমস্যা সমাধান করতে এসে তিনি হা হয়ে গেছে। রাগ হচ্ছে তার। পরক্ষণে হেসে সেখান থেকে তিনি তার রুমে চলে আসে। রিমি,সিমি হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়েছে। সার্ভেন্ট রাও মিটমিটিয়ে হাসছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……