#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_30.
তিন দিন পর…
শুভ্র এখন অনেকটাই সুস্থ । ওর সেবা করার জন্য সিমি তো ছিলই। শুভ্রকে এই কয়দিন অনেকটাই যত্ন করেছে। রুদ্র,অভ্র,সাব্বির অফিসে গেছে। বাসায় বাকিরা আছে। শুভ্র বেলকুনিতে বসে কফি খাচ্ছিল আর রুদ্রদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিল। সিমি গার্ডেনে ফুলের গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিল। গাছে পানি দেওয়ার জন্য অবশ্য লোক আছে। কিন্তু আজ সিমি নিজেই গাছে পানি দিবে ভেবে,পানির পাইপ নিয়ে পানি দিতে লাগলো। রিমি,নিধি,ইশা ও ফারিন সুইমিংপুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সুইমিংপুলের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে ওরা।
কিছুক্ষণ গাছে পানি দেওয়ার পর সিমি দেখতে পায় একটি ফুল গাছের ডাল ভেঙ্গে কাত হয়ে পড়ে আছে । ডালটা তুলতে যাবে তখনি মনে পড়ে পানির পাইপটার কথা, কারো হাতে দিতে হবে। তখনি ওর পিছন থেকে ফাহিম যাচ্ছিল। সিমি ফাহিমকে ডাক দিল।
-“ফাহিম এদিকে আসো।”
-“ক্যা ভাবি কিছু কইবেন?” থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ফাহিম।
-“হুম,এখানে আসো।”
ফাহিম আর কিছু জিজ্ঞেস না করে সিমির সামনে এসে দাঁড়ায়। সিমি একবার ফাহিমের দিকে তাকিয়ে,ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাইপটা ফাহিমের দিকে ঘুরিয়ে ধরে গাছের ডাল ধরতে ধরতে বলে,
-“পাইপ টা ধরো। আমি গাছের ভাঙ্গা ডালটা সরিয়ে দিচ্ছি।”
ফাহিমের কোনো রেসপন্স নেই। সিমি পাইপ ধরছে না দেখে গাছের দিকে তাকিয়েই বলে,
-“আরে ধরো না।”
এবারও ফাহিম পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সিমির কিছুটা রাগ হয়। মাথা ঘুরিয়ে ফাহিমের দিকে তাকাতেই ভ্যাব্যাচ্যাক্যা খেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। ফাহিম রাগবে নাকি সিমিকে বকবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কারণ,সিমি যখন পানির পাইপটা ফাহিমের দিকে ঘুরিয়ে ধরেছিল। তখন পানির পাইপ থেকে পানি পড়ছিল। যার কারণে ফাহিম সেই পানির দ্বারা ভিজে কাক হয়ে গেছে। তাই এতক্ষণ আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। সিমি তাকিয়ে থাকার এক পর্যায় খিল খিল করে হাসতে লাগলো । ফাহিম বেচারা বোকার মতো সিমির দিকে তাকিয়ে আছে। সুন্দর মতো রেডি হয়ে ফিটফাট ড্রেসআপ পড়ে বের হচ্ছিল ফাহিম। সিমির জন্য এখন ফিটফাটের জাগায় সদরঘাটের ভেজা কাকের মতো হয়ে গেছে। চড়ম বিরক্ত,রাগ দুটোই নিয়ে ফাহিম বলে,
-“ভাবি হরলেন(করলেন) কী এইডা? এহন আবার ২৯পাটি দাঁত বের করে হাসতাছেন। একটু তো সরম পাওয়া দরকার আপনের।”
সিমি বুকে হাত দিয়ে হাসি থামিয়ে বলে,
-“ফাহিম আমি ইচ্ছে করে করিনি এটা। ভুলে পাইপটা বন্ধ না করে এভাবেই তোমার দিকে ধরেছিলাম। যার কারণে তুমি এখন ভেজা কাক।” বলেই হাসতে লাগলো সিমি ।
সিমির হাসিতে ফাহিমের রাগ আরো ভেড়ে যায়। বলে,
-“মুইও ইচ্ছা কইরা করতাছি না।” এটা বলেই ফাহিম সিমির হাতের পাইপটা ছোঁ মেরে নিয়ে সিমির দিকে ঘুরিয়ে ধরল।
এবার সিমির হাসি থেমে যায়। ভিজে যাচ্ছে পাইপের পানিতে।
-“ফাহিম পাইপ সরাও। আমি ভিজে যাচ্ছি ।”
-“মুই যহন কাক হইছি,তখন আপনেরো ভেজা কাকিনি বানামু।”
সিমি সামনে দু হাত দিয়ে পানি আটকানোর অবস্থায় বলে,
-“পাইপ সরাও বলছি ।”
-“সরামু না।”
সিমি এবার ছোঁ মেরে পানির পাইপ নিয়ে গেল ফাহিমের হাত থেকে। রাগ দেখিয়ে বলে,
-“করলি কী শয়তান ছেঁমড়া। দিলে তো ভিজাইয়া।”
-“শোদবোধ ভাবি।” দাঁত কেলিয়ে বলে ফাহিম।
সিমি রাগে কিছু বলতে যাবে তখনি ওর নজর পড়ে রিমি দেয় উপর। সিমি আস্তে করে বলে,
-“আমরা যখন ভিজছি,তখন ওদেরও পুলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই চলো।”
ফাহিম রিমিদের দিকে তাকিয়ে ফারিনকে সেখানে দেখে বলে,
-“মুই পারমু না,আপনে যান।”
-“না তুমিও আমার সাথে যাবে।”
-“যামু!তবে,নিধি ভাবির বোন আর ইশা ভাবি বাদে রিমি,নিধি ভাবিরে ধাক্কা মারতে পারি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে চলো।”
রিমি,নিধি পুলের সামনে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। তখনি আচমকা ফাহিম সেখানে গিয়ে দু’জনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। রিমি,নিধি ভয় পেয়ে বেলেন্স ঠিক রাখতে না পেরে দু’জনেই ধুপাশ করে পুলে পড়ে যায়। ফাহিম সহ ওরা হেসে কুঁটি কুঁটি। রিমি,নিধি দুই,তিন গ্লাস পানি খেয়ে পুলের পাড়ে এসে থামে। ফাহিমের উপর রাগে ফায়ার ওরা দু’জন । নিধি চিল্লিয়ে আঙুল তুলে ফাহিমের উদ্দেশ্যে বলে,
-“ফাহিম্মার বাচ্চা তোর হাত ভেঙ্গে পায়ে ঝুলাইয়া দিমু ।”
নিধির বলা উল্টা কথাটা শুনে ওরা আরো জোরে হাসতে লাগলো। রিমির রাগ হলেও নিধির কথা শুনে ও নিজেও হেসে দেয়। নিধি এক প্রকার চিল্লিয়ে বলে,
-“থাম হারামজাদি গুলা।”
ফাহিম হেসে হেসে বলে,
-“ভাবি মোর শখ হইছে হাত ভেঙ্গে পায়ে ঝুলানোর। আহো একটু ঝুলাইয়া দেও।”
নিধি রাগে চোখ ছোট ছোট করে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে ফাহিমকে ধরতে নিলে ফাহিম দৌঁড় দেয়। এখন সুইমিংপুলের চারদিক গোল গোল ঘুরছে নিধি,ফাহিম। রিমি এই সুযোগে সিমি ও ফারিনকে ধাক্কা মেরে পুলে ফেলে দেয়। নিধি,ফাহিমের দৌঁড় থেমে যায়। ওরা দাঁড়িয়ে ওদের অবস্থা দেখছে।
-“আব কেসা লাগা বেহনা?” মুচকি হেসে বলে রিমি।
সিমি,ফারিন সরু চোখে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে। নিধি ফাহিমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখেই খপ করে ওর শার্টের কলার পিছন থেকে চেপে ধরে। তখন রিমিও আসে। দু জনে মিলে ফাহিমের শার্টের কলার ধরে টেনে পুলের সামনে এনে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ফাহিম উপুড় হয়ে পড়ে পানি খেতে খেতে সাঁতার কাঁটতে লাগলো।
রিমি,নিধি বাড়ির ভিতরে চলে আসে ভেজা অবস্থায় । সিমি পুল থেকে ওঠে পাড়ে এসে দাঁড়াতেই শুভ্রের কথা মনে পড়ে। বেলকুনির দিকে তাকাতেই দেখে শুভ্র ওর দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সিমি চোখ সরিয়ে নেয়। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ফারিনকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই শুভ্র ভিডিও কল কেটে দেয়। এতক্ষণ শুভ্র ভিডিও কলে রুদ্র ও অভ্রকে ওদের এই ফানি মোমেন্টটা দেখাচ্ছিল। ওরা এগুরা দেখে হেসেছে।
সিমি শাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আসে। আয়নার উপর চোখ পড়তেই শুভ্রকে বেলকুনির গেটের দরজার সামনে দেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে । এভাবে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমি লজ্জা পাচ্ছে। চোখ সরিয়ে নিয়ে তোয়ালে মাথা থেকে খুলে চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এক পাশে চুল এনে ভালো করে আঁচড়িয়ে ঝাড়া দিয়ে পিছনে রাখতেই চুল গুলো শুভ্রের মুখের সাথে বারি লাগে। সিমি আয়নাতে দেখতে পায় শুভ্র ওর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কখন এসে দাঁড়িয়েছে,সেটা ও নিজেও জানে না। সরে যেতেই শুভ্র সিমির পিছনে থেকে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। পাশে সরতে নিলে শুভ্র সিমির এক হাত ধরে আয়নার উপর রেখে,ওর হাত দিয়েই সিমির হাত চেপে ধরে। আরেক হাতের বাজ থেকে চিঁড়ুনি ফেলে দিয়ে ওই হাতের আঙুলের বাজে ওর আঙুল আবদ্ধ করে ধরে সিমির পেটের উপর রাখে। শুভ্রের স্পর্শে সিমি কেঁপে ওঠছে। কিন্তু তারপরও নিজেকে সামলে নিচ্ছে। শুভ্র সিমির চুলে মুখ ডুবিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে আলত করে কিস করে,তারপর ফিসফিস করে বলে,
-“আর কত দিন দূরে সরিয়ে রাখবে সিমি। তোমার একেকটা রূপ থেকে আমি মাতোয়ারা। যাকে বলে দিওয়ানা।”
কথাটা শুনেই আনমনে সিমি চোখ বন্ধ করে নেয়। কেন জানি ওর নিজেরও মন চাইছে শুভ্রকে কাছে পেতে। আয়নাতে সিমির চোখ বন্ধ দেখে শুভ্র টেডি হাসে। কানে কানে বলে,
-“তাহলে কী বুঝবো! হ্যাঁ?”
হ্যাঁ! উত্তর শুনে সিমি চোখ মেলে তাকায়। মাথা নিচু করে শুভ্রের হাত থেকে ওর হাত সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে আসে। শুভ্রের প্রচণ্ড রাগ হয়। যত বারি সিমির কাছে গিয়েছে তত বারি সিমি শুভ্রকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। শুভ্র সিমিকে ওর দিকে ঘুরিয়ে, দু বাহুতে হাত রেখে ওর মুখের কাছে নিয়ে এসে চিল্লিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
-“কিসের এতো বাঁধা? কিসের এত আপত্তি?কেন হতে পারো না তুমি আমরা? কেন সিমি?”
সিমি শুভ্রের ধমক শুনে মৃদু কেঁপে ওঠে। ভীতকর দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে চোখ পিট পিট করে তাকায়। সিমিকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্রের আরো রাগ হয়। যার দরুণ এক প্রকার সিমিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সিমি মাথা নিচু করে রাখে। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে । যে কষ্টের কারণ এক মাত্র শুভ্র। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে নেয়।
শুভ্র গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এক হাত দিয়ে গাড়ির স্টেয়ারিং ধরে রেখেছে। আরেক হাত দিয়ে ওয়াইনের বোতলের মুখ করে খাচ্ছে। রাগ হচ্ছে! ভীষন রাগ হচ্ছে ওর। যেই রাগ থামানোর কোনো ওয়ে ওর কাছে নেই।
.
.
.
-“স্যার আর কতদিন এবাবে চলবে? ওরা তো রুদ্রদের কোনো ক্ষতি করতে পারছে না।”
-“জানি! তার জন্য আমি নতুন প্লান সাজিয়ে ফেলেছি । খুব তাড়াতারি ওদের সবাইকে আমি আমার কব্জায় নিয়ে আসব।”
-“যা করার তাড়াতারি করুন স্যার। মোট কথা ওদেরকে মেরে ফেলুন।”
-“মারতে তো হবেই ওদের। দু দিন আগে বা পরে। যাই হোক,আমার ভাই কেমন আছে?”
-“তিনি এখান থেকে পালাতে চাইছে। আপনার সাথে কথা বলার জন্য জেদ করছে খুব।”
-“ও’কে বলো খুব তাড়াতারি ওর সাথে মুলাকাত হবে। ততদিন বেঁচে থাকতে বলো আমার ভাইকে।”
-“ঠিক আছে স্যার ।”
টু..টু..টু….
অফিসে….
সাব্বির সিকিরিউটি রুমে কিছু আগের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করছে।কারণ অফিস থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে গেছে মানে চুরি হয়েছে বলা যায়। যার কারণ,রুদ্র ও’কে সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখতে বলেছে কে এই ফাইল চুরি করেছে। হঠাৎ-ই এক ফুটেজে একটি রেকর্ড হয়ে যাওয়া চিত্র দেখতে পায় সাব্বির । সাব্বিরের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। দ্রুত ফুটেজটি রুদ্র,অভ্রের কাছে নিয়ে আসে।
.
.
ফারিন বিছানার উপর শুয়ে এই বাড়িতে আসার পর হ্যাপি মোমেন্ট গুলো ভাবছে। আর নিরবে চোখের পানি ফেলছে। তখনি ওর পাশে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রিনে নাম্বারটি দেখে ফারিনের চিনতে কষ্ট হয়নি। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে একটি ছেলের কন্ঠ ভেসে আসে। সেই কন্ঠের স্বর শুনে ফারিনের নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে । খুব কষ্টে মৃদ স্বরে ‘হ্যালো’ বলে।
-“মাই সুইটি! কেমন আছো তুমি?”
ফারিন চুপ।
-“ভয় পেও না মাই সুইটি। শোনো তোমাকে একটি কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। ঠান্ডা মাথায় সেই কথাটা শুনো সুইটি।” মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলে ছেলেটি ।
ফারিন কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
-“জ..জ..জ্বী!”
-“তোমরা কালকেই ওই বাড়ি থেকে চলে যাবে তোমাদের বাড়ি। তোমাদের আর কোনো কাজ করতে হবে না।”
কথাটা শুনে ফারিন যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“আমার ভাই,আমার ভাই কেমন আছে? ”
-“ওহ! মাই সুইটি। তোমার ভাইয়া দু’দিন আগেই মারা গেছে। এতে অবশ্য আমার কোনো দোষ নেই।”
কথাটা শুনেই ফারিনের মনে হচ্ছে ও শূন্যে ভাসছে। কথা বলার বাকশক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে। অপর পাশ থেকে ছেলেটি বলে,
-“শোনো সুইটি। তোমার বাবা এখন আমাদের আন্ডারের। যেভাবেই পারো এখন কাল ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসো । আর হ্যাঁ! কাউকে কিছু বলার চেষ্টা করলে,ভাইয়ের মতো তোমার বাবাকেও হারাবে। গুড বাই মাই সুইটি। ”
টু..টু…
ফোন কেঁটে দেয় ছেলেটি। ফারিনের হাত থেকে ফোন বিছানার উপর পড়ে যায়। পাথরের ন্যায় রূপ ধারন করছে। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু বর্ষিত হচ্ছে। নিজের ভাইয়ের জন্য এত রিক্স নিয়ে এবাড়িতে এসেছে নিজের আপন বোনের মতো নিধির ক্ষতি করার জন্য। আর আজ কিনা ওর ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা শুনতে হলো। মুখে হাত রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ফারিন। কী বলবে ওর মাকে? কী করে জানাবে তাঁর ছোট্ট ছেলেটি এখন আর এই দুনিয়াতে নেই? ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ফারিনের।
গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে ফাহিম ফারিনের কান্নার আওয়াজ শুনছে। ফারিনের কান্নার আওয়াজ যে তীরের মতো ফাহিমের বুকে এসে গাথছে। রুমে যেতে চেয়েও সাহস পাচ্ছে না যেতে। পারছে না ফারিনকে জিজ্ঞেস করতে,কী হয়েছে তোমার?
বুকের মধ্যে অভিমান নিয়ে রুমের সামনে থেকে সরে আসে ফাহিম। নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।
রাতে…
রুদ্র,অভ্র,সাব্বির বাড়িতে ফিরে আসে। এরা ফিরে আসার পর পরি শুভ্র বাড়িতে আসে। সবাই ডিনার করলেও। শুভ্র ডিনার না করেই শুয়ে থাকে। সিমির কাছে বিষয়টি খারাপ লাগছে। শুভ্রের জন্য খাবার নিয়ে উপরে এসে দেখে শুভ্র এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। সিমি খাবারের প্লেট রেখে শুভ্রের কাছে এসে টেনে ধরে ঠিক মতো শুইয়ে দেয়। দু বার ডাক দেওয়ার পর কোনো রেসপন্স না পেয়ে সিমি খাবার টেবিলের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
সকালে…
ফারিন আর জরিনা বেগম তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে এসে গাড়িতে উঠার জন্য গাড়ির সামনে আসে। নিধির চোখে পানি চিকচিক করছে। এই কয়দিন এক সাথে থাকার কারণে তাদের যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না। নিধি ওর মামার কথা কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছিল ফারিন ও জরিনা বেগমের কাছে। কিন্তু জরিনা বেগম তাঁর খবর না জানলেও,ফারিন ঠিকিই জানে। তাই মিথ্যে বলে দিয়েছে তিনি দোকানের কাজে কোথাও গিয়েছে । নিধি বুঝতে না পারলেও,জরিনা বেগম ঠিক বুঝতে পেরেছে ফারিনের মিথ্যে কথাটা। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র,আলতাফ চৌধুরী আর সাব্বির বাড়ির ভিতরে থাকলেও। রিমি,সিমি,ইশা ও নিধি বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের কাছেও খারাপ লাগছে ফারিন চলে যাওয়াতে। নিধি কয়েক বার নিষেধ করেছিল না যেতে। কিন্তু ফারিন অনেক অজুহাতে নিধিকে বুঝিয়েছে। ফারিন গাড়িতে বসতেই জরিনা বেগম ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,
-“তোর বাবা কোথায় ফারিন? আর ইফাদ! ইফাদ কেমন আছে রে মা?”
বোবাদের মতো চুপ করে আছে ফারিন। গাড়ি তখন চলতে শুরু করেছে। কিভাবে বলবে? তার ছোট্ট ছেলে ইফাদ আর এই দুনিয়াতে নেই। আর বাবাও এখন মৃত্যুর মুখে!
ফারিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“কথা বলছিস না কেন ফারিন? কথা বল?”
ফারিন চুপ।
জরিনা বেগম মমতা মাখা কন্ঠে বলে,
-“ফারিন মা,সত্যি কথা বল। বল না মা। বল?”
ফারিন গাড়ির সামনের আয়নাতে দেখতে পায় ফাহিম বাড়ির বাহিরে রিমির পাসে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এদিকে গাড়ি বাড়ির গেটের সামনে এসে পড়েছে। তখনি ফারিনের মনের মধ্যে সাহসিকতা কাজ করে। গাড়ির ড্রাইভার কে চিল্লিয়ে বলে,
-“গাড়ি থামান।”
চিল্লিয়ে বলার কারণে ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি থামিয়ে দেয়। ফারিন জরিনা বেগমকে রেখেই দ্রুত গতিতে গাড়ি থেকে নেমে যায়। রিমিরা এটা দেখে অবাক। সাথে ফাহিমও। জোরে দৌঁড় দিয়ে ফাহিমের কাছে আসতে নিলেই মাঝ পথেই ফারিন চট করেই থেমে যায়। আর তখনি পেছনের গাড়িটায় ব্লাস্ট হয়ে উপরের দিকে ওঠে নিচে পড়ে আগুন ধরে যায়। এমন দৃশ্য দেখে নিধি জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র,সাব্বির,আলতাফ চৌধুরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রিমি,সিমি নিধিকে ধরে রেখেছে। গাড়িতে থাকা জরিনা বেগম মারা যায়।আর ফারিন স্লো মশনে উপুড় হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। পিঠ থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল। তাঁরা বুঝতে পারছে কেউ ও’কে পিছন থেকে গুলি করেছে। বডিগার্ড রা পিস্তল হাতে নিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিধি চিৎকার করে ফারিন ও মামি বলে কান্না করে কাছে যেতে নিলে অভ্র নিধিকে টেনে ধরে।রিমি,সিমি,ইশা ফারিনের কাছে আসতে চাইলে ওরা তিন জনও টেনে ধরে ওদের। জোর করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে। ফারিনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে ফাহিম দ্রুত ফারিনের কাছে আসে। ফারিনের নিথর দেহ ওঠিয়ে বুকের সাথে মিশে ধরে। বডিগার্ড রা চারদিক তাকিয়ে সুটারকারিকে খুঁজছে। ফাহিমের চোখে আজ পানি বিদ্যমান। নিঃশ্বাস যেনো ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছে ওর।ফারিনের হার্টবিট তখনো চলছিল। ফাহিম কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। ফারিন চোখের পাতা জোড়া খুব কষ্টে খুলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে মুখ থেকে শুধু “ফাহিম” নামটি উঁচ্চারন করে। ফাহিম ফারিনের মুখে ওর নামটি শুনে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে আসে।ততক্ষনে রুদ্র রা ফাহিমের কাছে আসে। ফারিনের ফ্যাকাশে চেহারা দেখে ফাহিমের কষ্টটা আরো ভেড়ে যায়। সাথে সাথে আবার বুকের সাথে চেপে ধরে।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……