#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৭
#Sumaia_Jahan
—- দুর বাবা ভালো লাগে না!কিছুতেই এই লোকটার সাথে পারি।আমি একটা কিছু করলে উনি তার পাঁচ গুণ আমাকেই ফিরিয়ে দেয়।আশপিয়া তোর আর কোনো সম্মানই থাকলো না।সবসময় একটা লোকের কাছে হেরে যাচ্ছিস?লজ্জা করে না তোর এভাবে বারবার হারতে! তোর তো এখনি কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দেওয়া উচিৎ। কিন্তু এখানে তুই এখন কচু গাছ পাবি না তাই এখন দিতে হবে না পরে দিস।কিন্তু এভাবে তো আর বেশিদিন চলতে পারে না।সবসময় কি করে হারিস তুই?না না নাহ আমি সবসময় হারবো না আমারও দিন আসবে তখন ওই লোটাকে আমি নাকে দড়ি দিয়ে হাটাবো হুম।
একটু আগে যা হলো তার জন্য নিজের সাথেই নিজে বকবক করে যাচ্ছি। কি আর করবো এছাড়া তো অন্য কিছু করার নেই। তাই নিজের সাথেই নিজে বকবক করছি।
একটু আগে…….
আমি রুহি রাহাত রোদ্দুরের জোকার মুখ নিয়ে হাসাহাসি করছিলাম।এমন সময় রোদ্দুর ছাদে চলে আসে।উনি ছাদে আসার পর রুহি রাহাত তো ভয়ে দাড়িয়ে গেল আর আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসেছিলাম। অবশ্য আমিও একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলাম না।রোদ্দুর আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে রুহি আর রাহাত কে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- তোদের কি সবসময় কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার স্বাভাব নাকি!এখান থেকে যা তোদের আদরের ভাবিমনি সাথে আমার একটু প্রাইভেট কাজ আসে।
রোদ্দুরের কথায় রুহি আর রাহাত দুজনেই আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। বেচারারা ভাইকে ভিষন ভয় পায়।আর এদিকে আমাকেও ওই দিন কথা দিয়েছিলো আমাকে বিপদে একা ছেড়ে যাবে না। সব মিলিয়ে বেচারাদের খুব করুন অবস্থা। না দাড়াতে পারছে না যেতে পারছে!ওদের এমন অবস্থা দেখে আমার একটু মায়া হলো।যতোই হোক আমার জন্যই তো এসব।তাই আমি রোদ্দুর কে কড়া মেজাজ দেখি বললাম,
—- ওরা কোথাও যাবে না। এখানেই থাকবে কি করবেন আপনি!
উনি আবারও ওদের কে উদ্দেশ্য করে শান্ত গলায় বললো,
—- বাহ! তোদের তো দেখি আজকাল ডানা গজেছে! তোরা আমার কথার শুনছিস না।তোদের কে কি নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে আমার কথার অবাধ্য হলে তার ফল কি হবে।
উনার এমন শান্ত গলার হুমকি তে ওরা দুজনই একটা শুকনো ঢোক গিললো।রুহি আমার কাছে এসে আস্তে আস্তে বললো,
—- শোনো না ভাবিমনি আমরা যদি এখন এখান থেকে না যাই তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ কিছু করবে। ভাইয়া আজকে কিন্তু প্রচন্ড রেগে আছে।প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো!
রুহি খুব করুন ভাবে কথা গুলো বললো।আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললাম,
—- ঠিক আছে যাও……
আমি যাও এর যা উচ্চারণ করতে দেরি কিন্তু ওদের ভেনিস হতে দেরি নেই।কি ভয়টাই না ভয় এই লোকটাকে! সবাই পুরো জমের মতো ভয় পায়। কি আর করার এই জমের সাথেই আমাকে এখন একা লড়তে হবে।আমার ভাবনার মাঝেই রোদ্দুর বললো,
—- বুদ্ধিহীন মাথা টাকে বেশি খাটিও না। তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না।কি কপাল আমার আমি এতো বুদ্ধিমান হয়েও আমার কপালে এমন বুদ্ধিহীন বউ জুটলো!
আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেল আমি নাকি বুদ্ধহীন!এই ভাবে ইনসাল্ট করলো!আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
—- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে ইনসাল্ট করার!আর বুদ্ধিহীন আমি না আপনি বুঝলেন।
উনি হাই তুলতে তুলতে বললেন,
—- বুদ্ধিমান মানুষেরা বেশি কথা বাড়ায় না তাই আর বাড়ালাম না এভার মূল পয়েন্টে আসি আমাকে এখন কি শাস্তি দেই বলতো?
আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। এটা চড়ের প্রতিশোধ যেই লোকটা এমন ভাবে নেই আল্লাই জানে এখন কিরবে!দুর আর অন্য কিছু করার পেলাম না!জোকার কেন সাজাতে গেলাম?এখন যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু এখন এর থেকে তো বাঁচতে হবে।আমি গলাটা কে একটু গম্ভীর করে বললাম,
—- শাস্তি মানে কিসের শাস্তি?
—- ওমা সেকি তোমার স্মৃতি শক্তি এতোই দুর্বল! একটু আগের কথাই ভুলে যাও!তবে শোনো একটু আগে একটা পেত্নী আমাকে ঘুমের মধ্যে জোকার সাজিয়েছিলো।
আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,
—- কিহহহহহ……….আমি পেত্নী! আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে পেত্নী বলার পেত্নী তো আপনি।
—- প্রথমো তো ছেলেরা পেত্নী হয় না ওটা শুধু মেয়েদের জন্যই।আর তুমি যেহেতু নিজের দোষ টা নিজেই শিকার করলে তাই তোমার শাস্তি একটু কমিয়ে দিবো।আমি তো আগেই বলেছিলাম আমি একটু বেশিই দয়ালু।
নিজের মাথায় নিজেই ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।রাগের বসে আমি নিজেই নিজের দোষ টা শিকার করে ফেললাম। সব হইছে এই লোকটার জন্য।কি চালাক রে বাবা আমাকে রাগিয়ে আমার মুখ থেকেই কথা বের করে নিলো।হঠাৎ করে আমি শূন্যে ভাসতে শুরু করলাম।আমি আশ্চর্যের চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। আমি আবার কোনো জিনের পাল্লায় পরলাম নাতো?দেখি তো একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখি সয়ং রোদ্দুর খান নামক জীবন্ত মানুষ রুপি জিনটাই আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে।উফ বাঁচলাম! কোনো জিনের খপরে পরিনি।কিন্তু এই ব্যাটা আমাকে কোলে তুললো কেন?সাহস তো কম নয়?আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
—- আমাকে নামান বলছি নামান। আমাকে কি আপনার আটা ময়দার বস্তা মনে হয় যখন খুশি তুলে নিবেন?নামান আমাকে নামান!
আমি এরকম একের পর এক বলেই যাচ্ছি আর ছটপট করছি নামার জন্য কিন্তু উনার কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।উনি নিজের মতো করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলেন।রুমে এসে আমাকে নামালেন। আমি নেমেই একটা দম নিয়ে বলতে লাগলাম,
—- আমি কি হাটতে পারি না? নাকি আমার পায়ে কিছু হইছে যে আপনি আমাকে কোলে করে রুমে আনলেন?
—- বকবক বন্ধ করো সেই কখন থেকে কান ঝালাপালা করে দিয়েছো। এবার পিছনে ঘুরো ওখানে তোমার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি একবার দেখোতো!
আমি উনার কথা মতো পিছনে ঘুরলাম। যা দেখলাম আমার তাতে আমার চোখ কপালে উঠেছে কারন আমার সামনে দুই টা দুধের গ্লাস যা আমার চিরশত্রু আমি সেই ছোটবেলা থেকেই এই জিনিস টাকে বড্ড ঘৃণা করি।আজ পর্যন্ত আমাকে এই জগ্ন জিনিস টা আমাকে খাওয়াতে পারেনি।আর শুধু এই দুই টা গ্লাস সাথে আরো দুইটা করলার জুসেরও গ্লাস আছে।আমি চোখ বড়ো বড়ো করে গ্লাস গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি আর রোদ্দুর আমার পাশ থেকে বললো,
—- দেখছো আমি কতোটা দয়ালু তুমি আমার সাথে কতোটা খারাপ কাজ করলে আর আমি তোমার জন্য এই সামান্য কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করলাম।একবার ভাবো তুমি কতোটা ভাগ্যবতি এমন জামাই তোমার কপালে জুটলো।
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি মাথায় দুহাত চেপে ধরে পরে গেলাম।রোদ্দুর আমাকে সাথে সাথেই ধরে ফেললো।আমাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলো।
—- আশপিয়া কি হয়েছে তোমার কি হয়েছে?
আমাকে ডাকতে ডাকতেই মুখে পানির ঝাপটা দিলো কিন্তু আমি কিছুতেই চোখ খুললাম না।কারন আমার আসলে কিছুই হয়নি। আমি তো ওগুলো খাওয়ার হাত থেকে বাচার জন্য এমনটা করেছি।যার কিছুই হয়নি তাকে হাজার পানির ঝাপটা দিলেও কি সে চোখ খুলবে?রোদ্দুরের কি
যেন হলো এতোক্ষণ তো আমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো এখন হঠাৎ উঠে গেলো কেন?আমি আস্তে একটা চোখ একটু খানি খুলে দেখার চেষ্টা করলা উনি করছেটা কি?একটা বক্স থেকে কি যেন নিলো।নিয়ে এদিকেই আসছে। আমি তারাতাড়ি চোখ বন্ধ করে নিলাম।
রোদ্দুর আশপিয়ার কাছে এসে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো,
—- আমি জানি তোমার কি হয়েছে। এই ইনজেকশন টা দিলেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করো না আমি তোমাকে ঠিক সুস্থ করে তুলবো।আফটার ওল তুমি আমার একমাত্র বউ!
কথাটা বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য। আমি লাফ দিয়ে উঠে খাট থেকে নেমে গিয়ে বললাম,
—- আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি আমার কোনো ইনজেকশন লাগবে না।
আমার ভয়ে বুক কাপছে। আমি ইনজেকশন কে খুব ভয় পাই।আর একটু হলেই আমার হাতে ইনজেকশন ডুকিয়ে দিতো।এ ব্যাটা ঠিক বুঝে গেছে আমার কিছুই হয়নি আমি ওইগুলো খাওয়ার জন্য এই নাটক টা করেছি।তাই তো এভাবে ইনজেকশনের ভয় দেখালো।
ওদিকে রোদ্দুর একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
—- এখন যখন সম্পূর্ণ সুস্থ তাহলে পটাপট এই গ্লাস গুলো খালি করে দেও তো!
আমি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,
—- আমি কিছুতেই এগুলো খাবো না।
—- খাবে না তো! ঠিক আছে তাহলে এই ইনজেকশন টা নিতে হবে।তোমার হাতে দুই টা অবশন এক ইনজেকশন আরেক হলো ওগুলো খাওয়া।তুমি মনে হয় ইনজেকশন নিতে চাচ্ছো।ওকে আমি নাহয় ইনজেকশন টাই দেই।
কথা গুলো বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন রোদ্দুর।আমি তারাতাড়ি বললাম,
—- খবরদার আর এগোবেন ইনজেকশন নিয়ে ওই খানেই থাকুন। আমি এগুলোই খাচ্ছি।
কথা গুলো বলেই আস্তে আস্তে ওই ভয়ংকর গ্লাস গুলোর কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে নাক টিপে ধরে একের পর এক খেতে লাগলাম।এগুলো খাওয়ার সাথে সাথেই আমার মুখ ভরে বমি আসলো দৌড়ে ওয়াস রুমে ডুকে বমি করে দিলাম।
আর এদিকে রোদ্দুর হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,
—- আমার সাথে লাগতে আসলে এরকমই হবে।তাই এরপরে একশো কোটি বার ভেবে আমার সাথে লাগতে আসবা ওকে।
সেই থেকেই একা একা বসে বসে নিজে কে নিজেই কথা শোনাচ্ছি।……
চলবে,,,,,,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]