#তুমি_আমারই
#পর্ব_১৯_ধামাকা😎
#Sumaia_Jahan
পৃথিবীতে আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজের মধ্যে সাজতে আর সাজাতে। আর সেই আমাকেই দু দু ঘন্টা ধরে একই জায়গায় বসিয়ে খুব মনযোগ দিয়ে সাজাচ্ছে রুহি আর আমি বোর হয়ে বসে আছি।কি বা করবো শতো বারন করার পরও আমাকে এতক্ষণ সময় ধরে বসিয়ে বসিয়ে সাজাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি ওর পার্লারের একমাত্র ক্লাইড। আর আমাকে ঠিক ভাবে সাজাতে না পরলে ওর পার্লারটা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কোনো খুঁত থাকতে পারবে না। এতোটাই মনোযোগ দিয়ে সাজাচ্ছে ও আমায়।নিজেকে এখন মনে হচ্ছে কোনো আর্ট পেপার যাতে রুহি নামক আর্টিস্ট রং তুলি দিয়ে পেইন্টিং করছে।আর এই আর্টিস্ট এর মনে হয় কোনো ক্লান্তি নেই।কিন্তু আমি নামক আর্ট পেপার টা তো ভিষন ক্লান্ত হয়ে গেছে পেইন্ট হতে হতে এটা কি এই আর্টিস্ট বুঝতে পারছে না?
দুই ঘন্টা আগে রুহি হাতে একটা গাউন নিয়ে আমার ঘরে এসেছে। গাউন টা নাকি রোদ্দুর পাঠিয়েছে আমার জন্য। একটা শুভ্র সাদা রঙের ভিতর স্টোন বসানো আর মাঝে মাঝে আবার সাদা দিয়েই কিছু কাজ করা।বেশি ভারি কাজ না গাউন টাতে খুব হালকাই কাজ তবুও গাউন টা চোখধাঁধানো সুন্দর। আমি মুগ্ধতা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম গাউন টার দিকে। রুহি আমাকে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,
—- ওভাবে তাকিয়েও না নজর লেগে যাবে তো।আর এটা তোমার জন্যই স্পেশাল ভাবে তেমার বর বানিয়েছে।
রুহি কথায় আমার হুস আসলো।ছি কি নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে ছিলাম। রুহি কি ভাবলো।তারাতাড়ি প্রসঙ্গ উল্টাতে মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললাম,
—- আরে না আমি তো ভাবছিলাম আমার জন্য হঠাৎ ওনি গাউন কেন পাঠালেন?
—- সেটা আমি জানি না তুমি তোমার বরকেই জিজ্ঞেস করো।আর আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাকে এই গাইন টা পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে ছাদে পৌঁছে দেওয়ার।আর দেখতো আমাকে কেমন লাগছে?
আমি ওর কথায় ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি ও একটা ব্লাক গাউন পরে আছে। আর খুব সুন্দর করে সেজেছে। এতে ওকে একদম একটা কালো পরীর মতো লাগছে। আমি ওর নাকটা একটু টেনে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,
—- আজ তো রুহিপরীকে দেখে মনে হচ্ছে পরীলোক থেকে কোনো পরী নেমে এসেছে। আজ কোনো ছেলের সামনে কিন্তু যেও না তাহলে তোমাকে সত্যি কারে পরী ভেবে হার্ট অ্যাটাক করবে।
রুহি মুখ ফুলিয়ে দু হাত ভাজ করে বললো,
—- মোটেও না যদি সত্যি সুন্দর লাগতো তাহলে তো আগেই বলতা হুম।আমি বলার পরে বলতা না।
আমি ওকে দেখে হাসতে হাসতে বললাম ,
—- আমি এতোক্ষণ তোমাকে খেয়াল করিনি।অন্য কথা ভাবছিলাম তো তাই।আমি কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে আজকে একটা পরীর মতো লাগছে।
রুহি আমার কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বললো,
—- সত্যি! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারতেছি না আমাকে পরীর মতো লাগছে।
ওর কান্ড দেখে আমার ভিষণ হাসি পাচ্ছে। মাঝে ওর কথা শুনে মনে হয় ও এই পৃথিবীর সবথেকে বয়স্কো মানুষ আর মাঝে মাঝে ও একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কান্ড করে।আল্লাই জানে ওর ভবিষ্যতে কি আছে।
তারপর থেকেই এই মহান সাজানোর কাজে আদাজল খেয়ে লেগেছে।আর আমি বোরিং হচ্ছি।দুই ঘন্টা পর আমার থেকে একটু দুরে গিয়ে হাত জেরে মুখে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো,
—- কমপ্লিট!
ওর এই একটা কথা শুনেই আমার প্রানে পানি না না শুধু পানি না পুরো সমুদ্রের পানি এসে গেলো।খুশিতে আমার চোখ চিকচিক করে ওঠলো।রুহি আমাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে আমার দুই কাদে হাত রেখে বললো,
—- ভাইয়াকে কিন্তু আমার ভিষণ হিংসে হচ্ছে। আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে ভাইয়ার আগে আমিই তোমাকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ফেলতাম।কিন্তু আফসোস তা তো আর হবে না।
আমি কিছু একটা ভেবে বললাম,
—- আচ্ছা রুহি আমাকে উনি ছাদে কেন যেতে বললনেন?অনুষ্ঠান তো বাড়িতে!
—- একটু পরেই সব জানতে পারবে।এখন চলো।
তারপর রুহি আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসলো।ছাদের দরজার সমনে এসে দাড়িয়ে বললো,
—- আমার দায়িত্ব এইটুকুই। বাকি পথটুকু তুমি একাই যাও।আমি চললাম।
কথাটা বলেই গাউনের দুপাশ দু হাত দিয়ে ধরে সিরি বেয়ে দ্রুত চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। তার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দারজা ঠেলে ছাদে প্রবেশ করলাম।ওমা ছাদে এসে দেখি পুরো ছাদ অন্ধকার। আমার ভিষন ভয় করতে লাগলো।আমি ভয়ার্ত কন্ঠে রোদ্দুর কে ডাকলাম,
—- রোদ্দুর রোদ্দুর আপনি কি এখানে আছেন? থাকলে প্লিজ সারাদিন আমার ভিষণ ভয় করছে!
সাথে সাথেই পুরো ছাদ আলোকিত হয়ে গেছে।চারিদিকে তাকিয়ে দেখি পুরো ছাদটা কেউ খুব যত্ন করে সাজিয়েছে। হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলো,
—– আয়সু প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।আর কখনো এমন টা করবো না।
আমি চমকে উঠলাম।এই নামে তো আমাকে শুধু আদিই ডাকতো।ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে হাটু ঘেরে বসে রোদ্দুর ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—- আপনি আমাকে এই নামে ডাকছেন কেন? এি নামে তো……..
—– আশপিয়ার আদি ডাকতো তাই তো!আর এখনো আশপিয়ার আদিই তাকে এই নামে ডাকছে।
—- কি বলতে চাইছেন আপনি?আমার আদি আমাকে ডাকছে মানে?
—- মানে আমি তোর সেই আদি যে তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে।খুব অত্যতাচার করেছে।
—- কিন্তু আপনি তে রোদ্দুর!
—- হ্যা আমি রোদ্দুর খান কিন্তু আশপিয়ার সামনে সে আদি তার আসল পরিচয় আশপিয়ার সামনে দেয়নি সে!
আমি খুশি হবো দুঃখ পাবো বুঝতে পারছি না আমার এতোদিনের অপেক্ষা করা মানুষ টা আমার সামনে। আর এতোদিন আমারই চোখের সামনে ছিলো অথচ আমি বুঝতেই পারি নি।আমি এবার কেঁদেই ফেললাম।আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—- স সত্যি!
রোদ্দুর ছলছল চোখে বললো,
—- হুম সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি আমিই তোর সেই খারাপ আদি যে তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে।জানিস আমার সেই দিন খুব রাগ হয়েছিলো তুই যখন আমাকে চিনতে পারিসনি।আমি কিন্তু তোকে দেখেই চিনে ফেলেছিলাম।তোর গলায় থাকা আমার দেওয়া লকেট টা দেখে ওটাকে ছুঁতে গিয়ে ছিলাম আর তই তখনই আমাকে চড় মারলি।আমার খুব রাগ হয়েছিল যেখানে আমি তোকে এক দেখাতে চিনে ফেলেছিলাম আর সেখানে তুই আমাকে চিনা তো দূরের কথা আমার সাথে এমন ব্যবহার করলি।বিশেষ করে তুই আমাকে চিনতে পারিসনি এটার কারনে আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।আমি কিন্তু সেদিই দেশে ফিরেছিলাম আর তুই আমাকে চিনতে পারলি না তাই আমার মনটা একদম ভেঙ্গে পরেছিলো।
এটুকুই বলেই রোদ্দুর একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলো,
—- ওই দিনই আমি প্লান করি তোকে এই ভাবে বিয়ে করবো আর তোকে একটা বছর আমার পরিচয় না দিয়ে তোকে আমার মতোই কষ্টের আগুনে জ্বালাবো।
আমি তীব্র অভিমানের কন্ঠে বললাম,
—- এখনো তো তেমার সেই একবছর শেষ হয়নি তাহলে আমাকে কষ্টের আগুন থেকে বের করলে কেন?
অপরাধী মুখ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে বললো,
—- তুই হয়তো ভুলে গেছিস আজ তোর জন্মদিন। কালকে তোর বাপি ইনভাইড করতে গিয়ে জানতে পারি আমি চলে যাওয়ার কিছুদিনের পর তোর একটা এক্সিডেন্ট হয় । আর সেই এক্সিডেন্টে সব কিছু মনে থাকলেও অতিথিের সবার চেহারা গুলো তুই ভুলে গেছিস।তাই হয়তো তুই সেই দিন আমাকে চিনতে পারিস নি।আর এতোদিনেও আমাকে চিনতে পারিসনি। আমি এসব কিছু না জেনেই তোর সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার করেছি।আর তোকে খুব কষ্ট দিয়েছি।আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে।বিশ্বাস কর আমি আর কখনো না জেনে এমন করবো না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে!
কথা গুলো খবই অপরাধী মুখ করে বললো।কিন্তু আমি কিছুতেই ওকে ক্ষমা করবো না। না জেনে ও কেন আমাকে এতো কষ্ট দিলো।এবার আমার পালা।আবার আমি ওকে ঠিক ওর মতোই করে ওকে ফিরিয়ে দিবো।আমি বললাম,
—- ক্ষমা করতে পারি তবে একটা শর্ত আছে!
ও খুশিতে লাফিয়ে ওঠে দাড়িয়ে বললো,
—- কি শর্ত বল না আয়সু! আমি তোর সব শর্ত মানতে রাজি।
আমি মুখে দুষ্ট হাসি দিয়ে বললাম,
—- তুমি তো আমাকে এক বছর জ্বালাতে চেয়েছো! তো এখন থেকে ঠিক একবছর আমি বাপির কাছে গিয়ে থাকবো। আর তুমি আমার থেকে একবছর দুরে থাকবা।এটাই তোমার শাস্তি।
আমার কথা শুনে রোদ্দুর আমাকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো,
—- তুমি আমারই ছিলে আমারই আছো আর আমারই থাকবে!আমার থেকে দুরে যাওয়ার চেষ্টাও করো না। তাহলে আদি থেকে রোদ্দুর খান হতে কিন্তু বেশি সময় লাগবে না।আর রোদ্দুর খানকে তো তুমি চিনোই সুইটহার্ট!
এতোক্ষণ কথাগুলো খুব সাহসের সাথে বললেও এখন ভয়ে ডোক গিললাম।রোদ্দুর থেকে আমার আদিই টের ভালো। দরকার নাই আমার এই রোদ্দুরের মতো হওয়ার।
ওই দিকে পার্টিতে হঠাৎ সব আলো নিভে গেলো।একজনের উপর লাইট পরলো সে হাসি মুখে বললো,
—- এটেনসোন প্লিজ! আজ আমি আপনাদের সামনে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট করবো।
লোকটার কথায় সবাই ওর দিকে গুরে তাকালো।রুহি লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাকের উপর অবাক।কেননা লোকটা ওর চিরচেনা।এই লোকটার জন্যই তো এতো গুলো দিন অপেক্ষা করছিলো।আর এই লোকটা ওর সামনে আজ এভাবে দেখতে পাবে ওর কল্পনার অতিত।আর লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে সবার অগচরে চোখ টিপ মারলো।……
চলবে,,,,,,,,