#তুমি_আমারই
#পর্ব_২২
#Sumaia_Jahan
নিজেকে আজ খুব বড়ো বড়ো মনে হচ্ছে। খুব দায়িত্ববানও মনে হচ্ছে। হবেই না কেন?আজ একজন বড়ো ভাবি হয়ে একমাত্র দেওরের হয়ে কথা বলতে এসেছি বলে কথা।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি এতোটাই কনফিডেন্স নিয়ে কথা বলতে এসেছি যে এখন সবই ভুলে গেছি কি বলবো!কথায় আছে না ওভার কনফিডেন্স ভালো না।আমার হয়েছে সেই অবস্থা! ঘরে টানা এক ঘন্টা প্রাকটিস করেছি কিভাবে কি বলতে হবে।কিন্তু এখানে এসে হাওয়া সব ফুস হয়ে গেছে।সব ভুলে খেয়ে ফেলেছি।
ডয়িং রুমে সোফায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে নিজের মনে মনে কথা সাজাচ্ছি। কিন্তু কথা গুলো পেট থেকে গলা অবধি এসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিছুতে মুখে আনতে পারছি না।আমার পাশেই রোদ্দুর বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।ডান পাশের সোফায় শ্বশুর মশাই আর শ্বাশুড়ি মা। আর বাম পাশের সোফায় রুহি আর আকাশ ভাইয়ার মাঝখানে রাহাত বসে আছে।
সবাই অতি আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ওদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো বলে আধা ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি।রাহাত তো একটু পর পরই নিজে নিজেই লাজুক হাসি দিচ্ছে।রুহি আর আকাশ ভাইয়াও ব্যপারটা অনেকটাই বুজতে পেরেছে।তাই ওরাও রাহাতের কান্ড দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।রোদ্দুর আমার এমন অবস্থা দেখে অতি বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—- আশপিয়া কথাটা না হয় আমিই বলি!
আমি জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,
—- না একদম না!রাহাত কে আমি কথা দিয়েছি তাই কথাটা আমিই বলবো।
—- তোমার কথা শোনার জন্যই এই আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি।তুমি তো কিছুই বলছো না।আর আমার মনেও হয় না তুমি এ জীবনে আর মুখ খুলতে পারবে।তার থেকে ভালো আমি কথাটা বলি!
শ্বাশুড়ি মাও রোদ্দুরের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
—- হ্যাঁ মা ওকে কথাটা বলতে দে।দেখ আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি। তুই তো কিছু বলছিসই না।সামনেই রুহির বিয়ে অনেক কাজ পড়ে আছে।তুই প্লিজ ওকে বলতে দে। আর না হয় তুই বল।
রাহাতও অতি আগ্রহের শুরে বলে ওঠলো,
—- হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবিমনি ভাইয়াই না হয় বলুক।
আমি সবার কথা শুনে চোখ বন্ধ করে বললাম,
—- কাউকে বলা লাগবে না আমিই বলছি।….আসলে রাহাত নিহা নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসে।আর নিহার বাড়ির লোক ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পেশার দিচ্ছে। তাই রাহাতের সাথে এখন বিয়েটা না দিলে ওর বাড়ির লোক হয়তো অন্য কারো সাথে ওর বিয়েটা দিয়ে দিবে।তাই আমি বলছি চাচ্ছি আমারা তো রুহি সাথে রাহাতের বিয়েটা দিয়ে দিতে পারি।
কথা গুলো একনাগারে বলে একটা চোখ আস্তে করে খুলে পরিবেশ টা বোঝার চেষ্টা করছি।রাহাত, রুহি, আকাশ ভাইয়া এমনকি রোদ্দুরের মুখেও টেনশনের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কারন শ্বাশুড়ি মা আমার কথা টা শুনে গম্ভীর ভাবে বসে আছেন।কারো মুখে কোনো কথা নেই পুরো ঘরে জুড়ে নিরবতা বিরাজ করলো। কিছুক্ষন পর নিরবতার চাদর চাদর ভেঙে শ্বাশুড়ি মা মুখ খুললেন গম্ভীর গলায়ই বললেন,
—- রাহাত আমি এটা আশা করিনি।
রাহাতের মুখটা একদম ফ্যকাসে হয়ে গেলো।আমাদের সবার মুখেও ভয়ের ছাপ।আমি ভেবেছিলাম শ্বাশুড়ি মা মেনে নেবেন।কিন্তু উনার ব্যবহারে তো অন্য কিছু মনে হচ্ছে। রাহাত মাথা নিচু করে বললো,
—- মা নিহা খুব ভালো মেয়ে।আর আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ওকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
শ্বাশুড়ি মা আবারও গম্ভীর গলায় বললেন,
—- আমি সেটা বলিনি।ভালোবাসা অন্যায় না কিন্তু তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো আর দায়িত্ব নিয়ে সেটা বাবা-মা কে বলতে পারলে না।তোমার হয়ে আশপিয়াকে কেন বলতে হলো।
মুহূর্তেই রাহাতের মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো।আর আমাদের বুকের উপর থেকেও পাথরটা সরলো।সবাই ছোট করে একটা শ্বাস ফেললাম।উফ যা ভয় পাওয়ার পেয়েছিলাম। রাহাত আবার মাথা নিচু করে বললো,
—- আসলে মা আমি অনেক বারই নিহার কথা তোমাদের বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি।তাই……
—- তাই আশপিয়া কে দিয়ে কথাটা বলালে তাই তো।রাহাত আমরা কি বাঘ যে তুই আমাদের কে কথাটা বলতে ভয় পাচ্ছিলি।
শ্বাশুড়ি মায়ের কথার মাঝেই শ্বশুর মশাই বলে ওঠলেন,
—- রাহাত তুই আমার ছেলে হয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে ভয় পাস?
শ্বশুর মশাই এর কথাটা শুনে শ্বাশুড়ি মা মুখ ভেংচি কেটে বললো,
—- তোমার ছেলে হবার কারনেই ও এমন ভিতুরডিম হয়েছে।
—- তুমি আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করতে পারলে?
শ্বশুর মশাই ইনোসেন্ট ফেইস করে কথা বললেন। পাশ থেকে রাহাত বলে ওঠলো,
—- মা তুমি কিন্তু বাবার সাথে সাথে আমাকেও ইনসাল্ট করছো।
—- আরে রাখ তোর ইনসাল্ট। তোরা দুইজনেই একই কোয়ালিটির ভিতুরডিম।তোদের তো এর থেকেও বেশি ইনসাল্ট করা উচিৎ ছিলো আমার। জানিস তোদের বাবাও আমাকে ভালোবাসতো।কিন্তু বাবা-মায়ের কাছে কিছুতেই আমার কথা বলতে পারতো না।বলতে গেলেই উনার ভূমিকম্পনের মতো হাটু কাঁপা শুরু হয়ে যেতো।তারপর বাধ্য হয়ে উনার বন্ধু কে দিয়ে আমাদের কথা বলিয়েছিলাম আমি।
আমরা সবাই একসাথে হেসে দিলাম।আর শ্বশুর মশাইয়ের অবস্থা দেখার মতো হয়ে গোলো।শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে বললেন,
—- এভাবে ছেলে মেয়েদের সামনে আমার মানসম্মান ধুলো মিশিয়ে দিলে?
—- থামো তো তুমি…. আশপিয়া তুই কি যেনো বলছিলি রুহি আর রাহাতের বিয়েটা একসাথেই দিয়ে দেওয়ার কথা তাই না!এটা কিন্তু খুব ভালো একটা ব্যপার হবে।দু ভাই বোনের একসাথেই বিয়ে হবে।
আমি মাথা নেরে বললাম,
—- হুম মা একদম জোড়া বিয়ে।
এমন সময় রাজিব ভাইয়া আর দিয়া আসলো।দিয়া আসতে আসতেই বললো,
—- আমি মনে হয় ঠিক সময়ই এসেছি। তোমরা কি রাহাতের বিয়ে বিয়েও ঠিক করছো?
দিয়া কে দেখে ওঠে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বললাম,
—- তুই এই সময় এই বাড়িতে?
দিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- তোকে দেখতে মন চাইলো তাই চলে আসলাম।কেন আসতে পারি না?
—- আসতে পারবি না কেন হাজার বার আসতে পারবি।আর তুই ঠিক ধরেছিস রাহাতেরই বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাও আবার রুহি আর রাহাতের একই দিনে।
আমি কথাটা বলেই থেমে গেলাম।তারপর কিছু একটা ভেবে শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- মা আমার একটা ইচ্ছা আছে।
—- হ্যাঁ বল।তোর ইচ্ছা অবশ্যই পুরোন করবো।তুই শুধু একবার বলে দেখ!
—- দিয়ার বিয়ের সময় তো আমি ছিলাম না।আর আমার অনেক অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো ওর বিয়ে দেখার।তাই আমারা রুহি আর রাহাতের বিয়ের সাথে দিয়ার আবার বিয়ে দিতে পারি!
—- অবশ্যই! তবে শুধু দিয়ার না তোর আর রোদ্দুরেরও আবার বিয়ে হবে।এক সাথে চার চারটে বিয়ে!
—- মা তোমাকে বললাম দিয়ার বিয়ের কথা আর তুমি আমার বিয়ে নিয়ে বলছো!
—- কেন রে এখন গাঁয়ে লাগছে?যদি আমার বিয়ে হয় আবার তাহলে তোরও আবার বিয়ে হতে হবে হুম। তোর বিয়েও তো আমি দেখিনি।
কথাটা পাশ থেকে দিয়া বললো।দিয়ার কথার সাথে তাল মিলিয়ে শ্বাশুড়ি মা বললেন,
—- হুম একদম ঠিক কথা বলেছে দিয়া।তোর বিয়ে টাও তো ও দেখেনি।আমি আর কিছু শুনতে চাই না ওই দিনে চারটে বিয়েই হবে। আর না হলে একটাও হবে না।
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]