Crush Villain Part-25

0
7684

#Crush_Villain
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব ২৫ ||

– বুঝলাম তুমি আগেই বুঝে গেছো কিন্তু আমাকে তো বলতে দেয়ার সময় দেয়া উচিত ছিলো তাইনা?

– আপনি আগেই যা বলার বলে ফেলেছেন এখন আবার কোন রঙঢঙ করতে বলবেন? আমি এতো ন্যাকামি করতে পারি না তাই আগে বুঝেই রিং নিয়ে আপনার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে ফেলললাম।

আয়াফ নিঃশব্দে হাসলো। তারপর বলে,”ওকে বাবা বুঝলাম তুমি জনাবা বিদ্যাসাগরনী এখন রিং টা দেও পরিয়ে দেই!”

সানিয়া মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে রিংটা দিয়ে দিলো আর আয়াফ সেই রিং সানিয়াকে পরিয়ে দিলো। সানিয়ার সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে৷ তার ক্রাশ কি না তাকে ভালোভাসে তাও রিং পরালো। সত্যি-ই আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তার দ্বিগুণ কিছু তিনি ফিরিয়ে দেন। আগে চাইতো একবার হলেও যেনো আয়াফের সাথে কথা বলার সুযোগ সে পায় কিন্তু না সুযোগ তো অনেক আগেই পেলো সাথে আজকে নিজের জম্মদিনে এমন একটা উপহার পেলো।

রিং পরিয়ে আয়াফ উঠে দাঁড়াতেই নীল আর যাহির মিলে কেক আনলো তারপর সানিয়ার সামনে রাখলো৷ সানিয়া আনন্দের মাঝেই কেক কাটে। সর্বপ্রথম আয়াফকে খাইয়ে দেয় তারপর একে একে সবাইকে। সবাই যে যার মতো মজা করছে তখনই সানিয়া সুযোগ বুঝে আয়াফের দু’গালে কেকের ক্রিম লাগিয়ে ভূত বানিয়ে দিলো৷ আয়াফ হোয়াট দ্যা… বলে কিছুটা চেঁচিয়ে উঠে আর সানিয়া খিলখিলিয়ে হাসছে।

আয়াফ মুগ্ধ হয়ে সানিয়ার হাসি দেখছে। পরে কি মনে করে যেনো আয়াফও সানিয়াকে ভূত বানিয়ে দেয়। সানিয়াও রেগে হাতে কেক নিয়ে আয়াফের দিকে ছুঁড়ে মারে আর আয়াফ সাথে সাথে সরে যায়। আয়াফ সরে যেতে দুর্ভাগ্যক্রমে আলিজার মুখে গিয়ে ক্রিমটা লাগে। আলিজা চোখ খুলে সামনে রেগে তাকাতেই দেখলো নীল দাঁড়িয়ে। সে ধরেই নিলো নীলই তাকে মেরে তাই সে কেক হাতে নিয়ে নীলের দিকে ছুঁড়ে মারে। বিষয়টা এতো জলদি জলদি হলো যে নীল বেকুব বনে গেলো। তারপর এরা দুজনও শুরু করলো কেকের ক্রিম ছুঁড়াছুঁড়ি।

সানিয়া আর আয়াফ কেক ছুঁড়াছুঁড়ি করতে করতে ছাদে এসে দাঁড়ায় আর আকাশে থাকা সেই গোলাকৃতির চাঁদটার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে৷ পরিবেশটাও কেমন ঠান্ডা, নরম, তুলতুলে। এ রাত যেনো লং ড্রাইভের জন্য পারফেক্ট। আয়াফ নিরবতা ভেঙে বলে,”চলো আমরা লংড্রাইভে যাই!”

– বুদ্ধিটা খারাপ না তবে আমি এই ভারি গাউন পরে যেতে পারবো না।

– ওকে চেঞ্জ করে এসো।

– আচ্ছা।

তারপর দুইজনই নিচে চলে এলো। সানিয়া এক রুমে গিয়ে এই গাউন খুলে নিজের জামাটা পরে নিলো। তারপর বাইরে বের হতেই দেখে আয়াফও রেডি। সানিয়া যতোক্ষণে চেঞ্জ করেছিলো ততোক্ষণে তার বন্ধুদেরবলে দিয়েছে যে তারা লং ড্রাইভে যাবে। দুইজন একসাথে বেরিয়ে গেলো। রাত প্রায় ১২ঃ৩০ মিনিট হবে। তবুও রাস্তা কতো ফাঁকা, কোনো মানুষজন নেই। মাঝে মধ্যে রাস্তার ধারের ফুটপাতে কিছু কুকুর ঘেউ ঘেউ করে চলেছে যা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জানালা দিয়ে শো শো ঠান্ডা বাতাস সানিয়ার মুখে বারি খাচ্ছে আর তার চুলগুলো মুক্ত পাখির মতো উড়ছে। আয়াফ এই মোমেন্ট টা বেশ ইঞ্জয় করছে। বাতাসটা অনেকটা ফিল করার মতো একদম দূষণমুক্ত। হঠাৎ একটা ফ্লাইওভার দেখতে পায় সানিয়া। সাথে সাথে আয়াফকে গাড়ি থামাতে বলে।

– কেন এই মাঝরাস্তায় কেন থামাবো?

– আরে দেখেন ফ্লাইওভার কি সুন্দর লাগছে ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোতে। কোনো গাড়িও নেই মাঝে দিয়ে দুজন বেশ করে হাঁটতে পারবো এবং মনে আলাদা তৃপ্তিও পাওয়া যাবে। প্লিজ চলুন না আমার খুব ইচ্ছে এমন মাঝরাতে ফ্লাইওভারের মাঝে দিয়ে হাঁটার।

আয়াফ কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর সম্মতি দিয়ে বলে,”চলো তবে বেশি দূর যাবো না!”

– আচ্ছা!!(অত্যন্ত খুশি হয়ে)

আয়াফ গাড়ি একসাইডে পার্ক করে গাড়ি থেকে নামলো সাথে সানিয়াও।

দুজন মিলে পাশাপাশি হাঁটছে ফ্লাইওভারে। কিছুক্ষণ পরপর সানিয়ার গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগলেই শীতে কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। তাই দুইহাত জড়িয়ে একপ্রকার গুটিয়েই হাঁটছে সানিয়া। বিষয়টা আয়াফ খেয়াল করতেই নিজের হাতে থাকা জ্যাকেট টা সানিয়াকে জড়িয়ে দিলো। সানিয়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবারও হাঁটায় মন দেয়। দুজনের মাঝেই যেনো অনুভূতির ঝড় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ-ই মুখ ফুটে বলতে পারছে না। অনেকটা দোটানায় আছে দুজন। মাঝের কাছাকাছি আসতেই আয়াফ বে উঠে,”হয়েছে আর হাঁটা লাগবে না অনেক হেঁটেছি। এই মাঝরাতে মানুষ আমাদের দেখলে নির্ঘাত চোর ভেবে ধরে নিয়ে যাবে।”

সানিয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,”ঠিক আছে চলুন। আমারও ইচ্ছা নেই জম্মদিনের দিন পুলিশের ডান্ডা পেটা খাওয়ার!”

সানিয়ার কথায় আয়াফ বাকা হাসে। তারপর দুজন ফ্লাইওভার থেকে নেমে গাড়িতে উঠে পরলো।

দুইজন লেকে পা ডুবিয়ে চিপস খাচ্ছে। সানিয়া আয়াফের কাধে মাথা রেখেছে আর আয়াফ প্যাকেট থেকে চিপস বের করে করে সানিয়ার মুখে পুরে নিচ্ছে। চারপাশে শুনশান, ঝিঝি পোকার ডাকসহ আরও টুকটাক শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে বলা যায় চারপাশেই নিস্তব্ধতা! হালকা ঠান্ডা হাওয়াও রয়েছে। সানিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে,”আপনি সেদিন ওইভাবে এতো ড্রিংকস কেন করছিলেন? আপনি কি ড্রিংকস এ রেগুলার? আর রেগুলার হলেও মানুষ এভাবে এতোগুলা বোতল সাবাড় করে?”

আয়াফ নিঃশব্দে একটা হাসি দিয়ে বলে,”নাহ আমি রেগুলার না। বন্ধুরা জোর করলে দুই এক বার খাওয়া পরে বাট হাই ডোজের টা খেতে পারিনা কেমন গলা থেকে বুক ঝলসে উঠে আমার।”

– তো সেদিন ওভাবে খাচ্ছিলেন কেন?

– সে লম্বা কাহীনি অন্য একদিন শোনাবো।

– সত্যি তো?

– হুম।

– আচ্ছা এই টপিক বাদ এখন এটা বলেন তো কতোদিন হলো আপনি আমার প্রেমে পরেছেন?

– সেটা আমি জানিনা তবে কম করে হলেও ৬-৭ মাস তো হবেই।

– তো এতোদিন জানালেন না কেন?

– এমনি।

সানিয়া ভেংচি কাটলো আর আয়াফ ফিক করে হেসে দেয়। সানিয়া একমনে রিং টার দিকে তাকিয়ে রয়৷ তারপর কি মনে করে একটা সবুজ লতা ঘাসের থেকে ছিঁড়ে আয়াফের হাতে ধরিয়ে দিলো।লতাটায় একটা সুন্দর সাদা ফুল আছে। আয়াফ অবাক হয়ে বলে,”কি করবো এটা দিয়ে?”

– সুন্দর করে একটা রিং বানিয়ে দিবেন যেটার ঠিক মাঝখানে এই ফুলটা থাকবে।

সানিয়ার এই ছোট ছোট আবদার কেন জানিনা আয়াফকে খুব মুগ্ধ করে দেয়। আয়াফ সম্মতি জানিয়ে খুবই যত্নে সানিয়ার কথামতন একটা রিং বানিয়ে আয়াফ হাত বাড়ালো। আয়াফ হাত বাড়িয়ে দিতেই সানিয়া মুচকি হেসে নিজের ডান হাতটা আয়াফের হাতে রাখে। আয়াফ সেই সবুজ লতার রিংটা সানিয়ার অনামিকা আঙুলে পরিয়ে দিলো।

কিছুক্ষণ দুইজন সেখানে কাটালো। হঠাৎ আয়াফের কল আসতেই আয়াফ রিসিভ করে হ্যালো বললো। ওপাশে কি বললো সানিয়া শুনতে পেলো না। আয়াফ “ওকে” বলে ফোন কেটে সানিয়াকে তাড়া দিয়ে বলে,”এখন উঠতে হবে চলো এখান থেকে।”

– কিন্তু কেন আর কে-ই বা কল করেছে?

– সারপ্রাইজ!(টেডি স্মাইল দিয়ে)

একপ্রকার জোর করেই আয়াফ সানিয়াকে নিয়ে গেলো। হঠাৎ কোথায় এসে থেমে আয়াফ আর সানিয়া গাড়ি থেকে নামলো। সানিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা লাল কাপড় সানিয়ার চোখে বেধে দেয়। সানিয়া একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে কিন্তু আয়াফ ইচ্ছে করে উত্তর দিচ্ছে না। একসময় এক জায়গায় এসে দাঁড় করালো সানিয়াকে তারপর আস্তে করে চোখ খুলে দিলো। সানিয়া পিটপিট করে সামনের দিকে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেলো। খুশিতে তার চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।

সানিয়া এখন তার স্বপ্নের লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ তার স্বপ্ন এবং ভালোবাসা যেটার কাজ গতমাসে কিছু কারণে বন্ধ হয়ে গেছিলো। তার লাইব্রেরিকে এভাবে ফিরে পাবে কখনো ভাবতে পারেনি সে। ছলছল দৃষ্টিতে আয়াফের দিকে তাকাতেই আয়াফ সানিয়ার হাতে একটা ক্যাচি ধরিয়ে দিয়ে বলে,”নেও লাল ফিতাটা কেটে আপনার লাইব্রেরির উদ্ভোদন তো করেন ম্যাম!”

– আপনি এতোকিছু কি করে….

– বললাম না সারপ্রাইজ এখন যা বলেছি করো তাড়াতাড়ি বেশি সময় নেই তোমাকে আবার আলিজার বাসাতেও পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে।

– কেন?(ভ্রু কুচকে)

– তো কি রাতটা আমার সাথে পার করার ইচ্ছা আছে নাকি?(বাকা চোখে)

সানিয়া নিঃশব্দে হাসে। তারপর ফিতাটা কেটে ভেতরে ডুকে। ভেতরের লাইটিং সিস্টেম, ফ্লোর, সেল্ফসহ খুবই উন্নতমানের। বইগুলোও খুব সুন্দর মার্জিত ভাবে সাজানো এবং বাকি জিনিসপত্র তো আছেই। সানিয়া আনমনে সবকিছুতে হাত বুলিয়ে দেখছে আর দেখছে। সে এতোটা খুশি কোনোদিন হয়নি যতোটা আজ রাত ১২টা থেকে এই অব্দি পাচ্ছে। মনে মনে আল্লাহর দরবারে লাখো লাখো শুকুরিয়া আদায় করছে। সে নিয়ত করেছে এখান থেকে গিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ এবং ফজরের নামাজ পড়ে তবেই সে দু’চোখের পাতা এক করবে। সানিয়াকে এতো খুশি দেখে আয়াফও আজ ভিষণ খুশি।

প্রায় কিছুক্ষণ পরই সানিয়াকে আলিজার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়াফও চলে গেলো। আলিজার সাথে রুহিও ছিলো। আলিজার বাবা মা আজ বাসায় নেই তাই আজ তাদের কোনো সমস্যা হবে না। সানিয়া নিজের নিয়ত অনুযায়ী ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামাযে দাঁড়ায়। একেবারে ফজরের নামাজ পরেই ঘুমিয়ে যায়।

সকাল ৯ঃ১০ মিনিট!

সানিয়া, আলিজা আর রুহি! ৩জনই মরার মতো ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ-ই সানিয়ার ফোনে কল এলো। কিন্তু সানিয়া ঘুমাতে এতোটাই বিভোর রিংয়ের শব্দ তার কান অব্দি পৌঁছায়নি। রিং হতে হতে কল কেটে যায় এভাবে কয়েকবার কল আসতেই সানিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তবুও চোখ না খুলে ভ্রু কুচকে বালিশের কাছে হাঁতড়ে ফোন নিয়ে রিসিভ করে বলে,”হ্যালো কে?”

– সানিয়া আমায় বাচা ওরা আমায় জোর করে বিয়ে দিচ্ছে আমি ওই অমানুষটাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। আমায় মেরে ফেলবে ওই জানোয়ার।

বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে রোজা। রোজার কথা শুনে সানিয়ার ঘুম উড়ে গেলো। সে লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে,”হ্যালো রোজা তোকে কে বিয়ে করতে চাইছে কি হলো বল?”

– আমার বাসায় আয় আমাকে আটকে রেখেছে।

বলেই ফোন কেটে দেয় রোজা। সানিয়া হ্যালো হ্যালো অনেকক্ষণ করলো। যখন বুঝলো ফোন কেটে দিয়েছে তো আবার ফোন করলো কিন্তু আফসোস ফোন অফ। আমি জলদি করে আলিজা আর রুহিকে উঠানোর চেষ্টা করে ওয়াশরুমে দেই দৌড়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি ফইন্নি গুলা এখনো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মেজাজ ৭ম আসমানে চেপে বসলো, মন তো চাচ্ছে এইগুলারে বালিশচাপা দিয়ে মেরে ফেলি কিন্তু নাহ এখন সিরিয়াস কিছুই ঘটেছে। ভেবেই মাথা ঠান্ডা করে দুইটারে ওঠানোর চেষ্টা করতে লাগি। শেষে উপায় না পেয়ে বিছানার উপর উঠে দুইটার কোমড়ে ফুটবলের লাথি দিতে দিতে বলে,”ওই ফইন্নিরা মরার কতো আর কতো ঘুমাবি উঠ হারামীর শাশুড়ীসমূহ উঠ!”

লাথি খেয়ে দুইজনেই ব্যাথায় উঠে বসলো। ওরা কিছু বলার আগেই ওদের থামিয়ে বলি,”এতোকিছু বলার সময় নাই তাড়াতাড়ি রেডি হ রোজার বাসায় যেতে হবে ইমারজেন্সি। এখন প্রশ্ন করিস না যেতে যেতে বলবো, এখন তাড়াতাড়ি যাওয়াটা অধিক প্রয়োজন।”

রোজার কথা শুনে খারাপ কিছু হয়েছে ভেবে দুইজন দুই ওয়াশরুমে ঢুকলো। তারপর জলদি করে একপ্রকার দৌড়েই তিনজন বেরিয়ে গেলো। তাদের দেখে মনে হবে যেনো তাদের ট্রেন মিস যাবে কিন্তু না তাদের কলিজার বান্ধবী বিপদে পরেছে সেইজন্য!

চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ।)