অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
6410

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

রুম আসতেই আমার চোখ যায় বিছানার ওপর রাখা কালো গোলাপ আর একটা চিরকুট। আর একটু এগিয়ে দেখি রেপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্স। আমি গিফট বক্স,কালো গোলাপ আর চিরকুটটা হাতে নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসি। প্রথমে চিরকুটটা খুলি।


কালো লেহেঙ্গায় তোমাকে ড্রাক কুইন লাগছিলো। তুমি তো রাণী আমার মনের রাজ্যের রাণী। আজকে তোমার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে নিজেকে কনট্রোল করা দায় হয়ে গেছিল। তুমি লজ্জা পেলে তোমার গাল দুটো লাল টমেটোর মতো হয়ে যায়। ইচ্ছে করে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি। গিফট বক্সের ভিতর তোমার জন্য একটা ছোট গিফট আছে। আমি চাই তুমি কালকে এটা খুলে দেখো।

গিফট বক্সটা কাবাডের ভিতর রেখে আমার ডায়েরীটা বের করি। ডায়েরির ভিতর যত্ন সহকারে ফুল আর চিরকুটটা রেখে দেই। কেউ আমাকে একটা ঘাস দিলেও সেটা আমি ডায়েরির ভিতর রেখে দেই। কেউ কাউকে কিছু দিলে সেটা থাকে অনেক আবেগ, অনুভূতি। বিছানায় শুয়ে পড়ি এখন একটা ঘুমের দরকার। রুমের জানালা খোলা থাকায় ফুরফুরে বাতাসে আসছে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হঠাৎ মনে হলো আমার হাত ধরে কেউ টানছে। কিন্তু ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারছি না। আমার অবচেতন মন বলছে পেত্নী আমার হাত ধরে টানছে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলি। চোখ খুলতেই দেখতেই পাই এক জোড়া লাল চোখ। ছোটবেলায় দাদুর কাছে শুনে ছিলাম পেত্নীদের চোখ লাল হয়। আমি ভয়ে দিলাম এক চিৎকার।

আহ..

কিন্তু আমার চিৎকারটা চার দেয়ালের বাইরে পৌছালো না তার আগেই কেউ আমার মুখ চেপে ধরে।

এই তুই এভাবে চিৎকার করছিস কেনো? (ধমকের সুরে)

আমি চোখ বন্ধ করে আবার খুলি। চোখ খুলে আমি ভূত দেখার মতো চমকে ওঠি। কারণ আমার সামনে রিয়ান ভাই চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দ্রুত ওঠে বসি।

আপনি।

রিয়ান ভাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। রিয়ান ভাইয়ের ব্যবহারে আমার অনেক খারাপ লাগছে।

আমি দেখতে এতোটাই খারাপ হয়ে গেছি যে আমার দিকে তাকানো যায় না। আমি জানি আমি আপনার মতো এতটা সুন্দর না তাই বলে আপনি আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিবেন।

রিয়া তোর কাপড় ঠিক কর।

আমি নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় কুঁকিয়ে গেলাম। আমার শরীরে উড়না বলতে কোনো বস্তুই নেই। প্লাজুটা হাঁটু পর্যন্ত ওঠে গেছে। তাড়াতাড়ি করে শরীরে একটা উড়না জড়ালাম। হাঁটুর কাছে প্লাজুটা নিচে নামাই। আমি লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।

আমি এতক্ষণ রিয়ান ভাইয়ের সামনে এভাবে বসে ছিলাম। ছিঃ আমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছি। উনি আমার সম্পর্কে কী ভাবছেন? (মনেমনে)

আমি তোর সম্পর্কে কী ভাবছি সেটা তোর না জানলেও চলবে। এখন তাড়াতাড়ি ওঠে পড়তে বস।

আমি রিয়ান ভাইয়ের দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকায়।

উনি পাগল হয়ে গেছেন আজকে আমি পড়তে বসবো ইম্পসিবল। (মনেমনে)

আমি পড়তে বসবো না।

তোকে পড়তে বসতেই হবে। এতোদিন তো বিয়ের ঝামেলায় পড়াশোনা গোল্লায় গেছে।

আমি মিনতির সুরে বলি, প্লিজ রিয়ান ভাই আজকে পড়তে বসবো না।

তুই যদি আমাদের ভার্সিটিতে চান্স না পাস তাহলে মেরে তোর ট্যাং ভেঙে দিব। তুই এখন পড়তে বসবি।

আমি করুণ চোখে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাই। রিয়ান ভাই আমার দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে পড়ার টেবিলে বসায়। নিজেও একটা চেয়ার টেনে আমার বিপরীত পাশে বসে। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,

তাড়াতাড়ি বই বের কর।

আমি গাল ফুলিয়ে চেয়ারে বসে আছি। এমন ভাবে বসে আছি যেনো এই রুমে আমি ব্যতিত আর কেউ নেই। আর রিয়ান ভাই যে কথাটা বলল তা যেনো কর্ণপাতই হয়নি। রিয়ান ভাই বেশ ধমকের সুরে বলে,

এসব ভাব তোর বয়ফ্রেন্ডের সামনে ধরিস আমার সামনে না। এখন তাড়াতাড়ি বই বের কর।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও বই বের করলাম।

———————–

গত তিন ঘন্টা যাবত রিয়ান ভাই পড়াচ্ছে কিন্তু এখনো তার পড়ানো শেষ হয়নি। ঘুমে আমার চোখ দুটো তিড়িং বিড়িং করছে।

তুই জাতীয় সঙ্গীত পারিস?

পড়ার মাঝখানে রিয়ান ভাইয়ের এমন প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে যাই। আমার জানা মতে উনি পড়ার মাঝখানে অহেতুক কথা পছন্দ করে না। আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রিয়ান ভাই আবার প্রশ্ন করে,

কীরে পারিস?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলি।

তাহলে জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইনটা বল।

ছোটবেলা থেকেই আমি জাতীয় সঙ্গীত খুব ভালো পারি। কেউ গাইতে বললে গড়গড় করে বলতে থাকি কোনো কিছু না বলেই।এবার তার ব্যতিক্রম হলো না।

জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন হলো:

আমি তোমাকে ভালোবাসি।

কথাটা বলেই আমি জিব কাটলাম।

হায় আল্লাহ এটা আমি কী বলে ফেললাম? (মনেমনে)

রিয়ান ভাই কোনো কথা না বলে চেয়ার থেকে ওঠে হনহন করে আমার রুম থেকে চলে যায়। কী হলো কিছুই বুঝলাম না?

————————————————-

রুমে বসে গিফট বক্সটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি। তখনি রিয়ান ভাই আমার রুমে প্রবেশ করে। রিয়ান ভাইয়ের দৃষ্টি এখন ফোনের দিকে। ফোনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললেন,

রিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হ আমার সাথে বের হবি।

আমি এখন কোথাও যাবো না।

রিয়ান ভাই কিছু না বলে শান্ত ভঙ্গিতে ফোনটা পকেটে রেখে। আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার এক হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়। আচমকায় আমাকে কোলে তুলে নেয়। আমি হকচকিয়ে রিয়ান ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরি।

আমাকে কোলে নিছেন কেনো?

আমি জানি তুই গাড় ত্যাড়া এমনি এমনি যাবি না। তাই বাধ্য হয়ে তোকে কোলে নিতে হয়েছে।

আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে থাকি। রিয়ান ভাই আমাকে গাড়িতে বসায় নিজেও ড্রাইভিং সিটে গাড়ি চালাতে থাকে। আমি প্রশ্ন করেই যাচ্ছি। কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না। প্রায় ১৫ মিনিট পরে একটা বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি থামে।

আমি জানালে দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ দুটো অটোমেটিকলি বড় হয়ে যায়। কারণ বিল্ডিং উপর বড় বড় করে লিখা,

কাজি অফিস।

চলবে…..