অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
5133

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমি জানালে দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ দুটো অটোমেটিকলি বড় হয়ে যায়। কারণ বিল্ডিং উপর বড় বড় করে লিখা,

কাজি অফিস।

আমি বিস্ফোরিতো চোখে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,

আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এলেন?

বিয়ে করতে।

মানে?

কালকে তুই আমাকে বললি তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই আজকে তোকে বিয়ে করতে নিয়ে এলাম।

আমি ইচ্ছে করে করিনি। আপনি চালাকি করে আমাকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন।

তোর কাছে কোনো প্রমাণ আছে যে আমি চালাকি করে তোকে দিয়ে বলিয়েছি।

আমি মলিন মুখ করে দুই দিকে মাথা হেলায় যার অর্থ নাই। পরক্ষণেই আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

আপনার কাছেও তো কোনো প্রমাণ নাই যে আমি আপনাকে ভালোবাসি এটা বলেছি।

রিয়ান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা সয়তানি হাসি দিয়ে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে। একটা অডিও রেকডিং চালু করে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি।

এটা তো আমার কন্ঠ।আপনি তখন এটা রেকর্ড করে রেখেছিলেন।

হুম। (চোখ টিপ দিয়ে)

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, আমি বিয়ে করবো না।

রিয়ান ভাই আমার গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে দিল। আমি গাল হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকাই। রিয়ান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

আপনি একটু আগে এটা কী করলেন?

কী করলাম? ( না জানার ভান করে)

আপনি একটু আগে আমাকে কি…….

আমি একটু আগে তোকে কী?

আমি রিয়ান ভাইয়ের সামনে এক আঙ্গুল তুলে বলি,

আপনি একটা অসভ্য।

রিয়ান ভাই আমার আঙ্গুলে চুমু দিয়ে দেয়। আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেই। রিয়ান ভাই গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও গাড়ি থেকে টেনে নামায়। টানতে টানতে একটা মেয়ের সামনে নিয়ে যায়। মেয়েটাকে দেখে আমি থ বনে যায় কারণ মেয়েটি কলেজে আমার সিনিয়র ছিল। মেয়েটার সাথে আমার সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু রিয়ান ভাই আমাকে কেনো আনলো?

সি ইজ মাই ওয়াইফ।

ওয়াইফ শব্দটা শুনে আমি অবাক হয়ে রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকায়। আমার কানে একটা কথায় বাজছে ‘সি ইজ মাই ওয়াইফ’।

আমি বিশ্বাস করি না এই মেয়েটা তোমার বউ।

তোমার বিশ্বাস করাই বা না করাই আমার কিচ্ছু আসে যায় না।

তুমি বলো এই মেয়েটার মাঝে কী আছে যা আমার মাঝে নেই? আমি মেয়েটার থেকে দেখতে হাজার গুণ বেশি সুন্দরী। আমি কত স্মার্ট তোমার সাথে শুধু আমাকেই মানাই। এই ক্ষেত মেয়েটাকে তোমার সাথে মানায় না। গায়ে পড়া মেয়ে একটা।

রিয়ান ভাই ঠাসস করে এনের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

তুমি আমাকে মারতে পারলে।

তুই মেয়ে নাহলে মেরে এতক্ষণে মুখ ভেঙে দিতাম।

তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি সারাদিন এই কাজি অফিসের সামনে বসে থাকবো।

তুই কাজি অফিসের সামনে বসে থাক কিংবা গাড়ি নিচে চাপা পড়ে মর তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। নেক্সট টাইম যেনো তোকে আমার আশেপাশে না দেখি। মাইন্ড ইট।

রিয়ান ভাই আমার হাত ধরে হাঁটা দিল। আমি এতক্ষণ নিরব দর্শকের মতো তাদের কথোপকথন শুনে গেলাম। যেটুকু বুঝলাম এন রিয়ান ভাইকে পছন্দ করে কিন্তু রিয়ান ভাই এনকে সহ্য করতে পারে না। রিয়ান ভাইয়ের হাত থেকে আমার হাত ছাড়াতে গেলেই উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকায় যা দেখে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। দ্বিতীয় বার উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়নোর সাহসটা দেখালাম না। উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসেন। অনেক জুড়ে ড্রাইভ করতে থাকে।আমি দু চোখ বন্ধ করে রিয়ান ভাইয়ের বাহুর কাছের শার্টটা খামছে ধরি। রিয়ান ভাই হঠাৎ করে অনেক জুড়ে ব্রেক কষে আমি ভয়ে আরো শক্ত করে রিয়ান ভাইকে ধরি।

আমার গাড়ি থেকে নাম। ( ধমকের সুরে)

আমি চোখ খোলে চারপাশে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাসার সামনে এসে গেছি।

আমার গাড়ি থেকে নামবি নাকি টেনে নামাতে হবে। তোকে দেখে আমার মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। ( ধমক দিয়ে)

রিয়ান ভাই এভাবে ধমক দেওয়ায় আমি ফুফিয়ে কেঁদে ওঠি।

একদম আমার সামনে ন্যাকা কান্না কাঁদবি না।

রিয়ান ভাইয়ের এমন কথা শুনে আমার কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো। আমি নাক টেনে টেনে বললাম,

আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেনো?

তোকে পূজা করতাম নাকি। পারিস তো শুধু আমার মুখে মুখে কথা বলতে অন্য কারো সামনে তো মুখে বুলি ফোটে না। ঐ মেয়ে তোকে এত কিছু বলল আর তুই কিছু বললি না কেনো?

আমি কী বলবো? যা সত্যি তাই তো বলেছে। আমি দেখতে অসুন্দর, আনস্মার্ট আর আপনি কত সুন্দর? আপনি এভাবে আমাকে বউয়ের পরিচয় দিলে যে কেউই এসব বলবে? এখন তো আপনারও আমাকে দেখে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।

আমি গাড়ি থেকে নামতে গেলেই রিয়ান ভাই আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। আচমকা এভাবে টান দেওয়ায় আমি টাল সামলাতে না পেরে রিয়ান ভাইয়ের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। আমার খোলা চুল গুলো রিয়ান ভাইয়ের নাকে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। রিয়ান ভাই আমার গালের দুই পাশে হাত রেখে বলেন,

আমি সত্যি তোকে ওভাবে বলতে চায়নি। রাগের মাথায় তোকে কি বলে দিয়েছি নিজেও জানি না। প্লিজ…..

উনার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নেই।

লাগবে না আপনার এসব আলগা পিরিতি। আমাকে দেখে….
চলবে…..