অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১৮

0
5518

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৮
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আমি দোলনা থেকে ওঠে রিয়ান ভাইয়ের কোলে বসে পড়ি। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেন। আমি দুইহাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে সুরে বলি,

চলুন না আমরা বিয়ে করি ফেলি।

তোর বিয়ে করার বয়স হয়ছে?

আর এক মাস ১০দিন পড়ে আমার ১৮ বছর বয়স হয়ে যাবে। ১৮ বছর বিয়ে করার জন্য পারফেক্ট বয়স। লেখাপড়া ভালো লাগে না তাই ভাবতেছি বিয়ে করে ফেলবো। বিয়ের পর পরই বাচ্চা নিয়ে নিবো তারপর স্বামি সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করবো।

তুই তো নিজেই বাচ্চা তোকে সামলাতে গিয়ে আমি হিমশিম খাই আবার বাচ্চা। তুই লেখাপড়া করবি না আর আমি তোকে বিয়ে করবো।

কেনো করবেন না?

সবাই আমাকে বলবে আমার বউ ইন্টার পাশ তার উপর আবার অটোপাশ।

একদম অটোপাশ নিয়ে খোটা দিবা না।

তুই যদি আমাদের ভার্সিটিতে চান্স না পাস তাহলে আমি তোকে বিয়ে করবো না।

আমি উনার গলা ছেড়ে দিয়ে কোল থেকে নেমে পড়ি।

কই যাচ্ছিস?

বাসায়।

তুই না এখানে ৫ দিন থাকবি।

৫ দিন থাকবো না এখনি চলে যাবো। আগামী ১ মাস আপনার বাসা এবং আপনার দাড়ে কাছেও আসবো না। আপনাদের ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া পর আপনার সামনে আসবো এবং আপনাদের বাসায় আসবো।

কথাটা বলে দিলাম এক দৌড়।

রিয়া দাঁড়া বলছি।

উনার কথা না শুনার বান করে এক দৌড়ে বাসার বাইরে চলে আসি। লিফট দিয়ে নেমে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসি।

কেটে গেছে ১ মাস। এই ১ মাসে রিয়ান ভাই আমার সাথে অনেকবার দেখা করার চেষ্টা করছেন কিন্তু আমি দেখা করি নাই। ইনফেক্ট উনার সাথে কথাও বলি নাই। আজকে মনিদের বাসায় যাব কারণ আমি রিয়ান ভাইদের ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।

আম্মু আমি মনিদের বাসায় যাচ্ছি।

দাঁড়া এক মিনিট।

কেনো?

এইগুলো ধর।

এখানে কী আছে?

রিয়ানের প্রিয় কিছু খাবার। কতদিন ধরে ছেলেটা আমাদের বাসায় আসে না।

আম্মু রিয়ান ভাই ১৫ দিন আগেই আমাদের বাসা থেকে ঘুরে গেলেন। এই ১৫ দিন তোমার কাছে কতদিন হয়ে গেলো? আপু তো এক মাস ধরে আমাদের বাসায় আসে না।

তোকে এতো কথা বলতে কে বলেছে? আসার সময় রিয়ানকে সাথে করে নিয়ে আসবি।

আচ্ছা।

রিয়া তুই কোথাও বের হবি।

মনিদের বাসায় যাব ভাইয়া।

আমিও ঐদিকে যাব চল তোকে ড্রব করে দেই।

রিয়াদ তুই ঐদিকে কেনো যাবি?

আম্মু একটা কাজ ছিল।

আম্মু তোমার ছেলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।

তুই কী করে জানলি?

ভাইয়া আমার মাথায় একটা চাটি মারে। আম্মু সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে আসে। ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে আমি পাশের সিটে বসি।

তোর উপকার করতে গেলাম আর তুই আমাকে বাঁশ দিলি।

এতো ভয় পাও কেনো বলো তো। আম্মুকে বলে দিতে তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো।

পাগল নাকি আম্মু মেরে আমার হাড় গুড় ভেঙে দিবে।

যে ছেলে তার মায়ের সামনে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারে না তার প্রেম করার কোনো অধিকার নেই।

তোকে কে বললো?

তুমি জানো না ভীতু ছেলেদের প্রেম করতে নেই।

আসছে সাহসী মেয়ে তুই আম্মুকে বলতে পারতি।

আমি তোমার মতো এতো ভীতু না। আমি বিয়ে করে ছেলেকে একেবারে আম্মুর সামনে দাঁড় করিয়ে দিতাম।

সময় হলেই দেখা যাবে।

আচ্ছা দেখো।

কথা বলতে বলতে গাড়ি এসে থামে মনিদের বাসার সামনে। ভাইয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার ভিতর ঢুকলাম। দুই বার কলিংবেল বাজানোর পরে মনি এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই আমি মনিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরি।

১ মাস পর আপনার পায়ের ধুলি পড়লো আমাদের বাসায়। আপনি আমাদের বাসায় এসে আমাদের ধন্য করে দিলেন।

এভাবে কেনো বলছো?

তুই তো আমাদের কথা ভুলেই গেছিস।

তোমাকে আমি ভুলতে পারি। পড়াশোনার অনেক চাপ ছিল তাই আসতে পারেনি।

আমি বোকা না সবই বুঝি।

তোমাকে এতো বুঝতে হবে না মাই ডিয়ার মনি। এগুলো ধরো।

এখানে কী আছে?

আম্মু রিয়ান ভাইয়ের জন্য খাবার পাঠিয়েছে। রিয়ান ভাই কই?

রুমে আছে দেখ।

কথাটা বলে মনি কিচেনে চলে যায়। আমি নিঃশব্দে রিয়ান ভাইয়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াই। এতক্ষণ ভয় না করলেও এখন অনেক ভয় করছে। ভিতরে আমার জন্য কী অপেক্ষা করছে আল্লাহ জানে। ১ মাস উনার সাথে কোনো যোগাযোগ করি নাই এর জন্য কী শাস্তি হতে পারে ভেবেই আমার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে। গুটিশুটি মেরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দরজায় নক করতে গিয়েও বারবার হাত ফিরিয়ে নিচ্ছি। এক বুক সাহস নিয়ে দরজায় নক করতে যাব তার আগেই রুমের ভিতর থেকে এক জোড়া হাত আমাকে রুমের ভিতরে টেনে নেয়। আমি জানি এটা রিয়ান ভাই। উনি আমারে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেন। উনি গভীর দৃষ্টিতে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন আর আমি উনাকে।

তোর আমাকে কষ্ট দিতে অনেক ভালো লাগে।

আমি দুই হাত দিয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেন।

আপনাকে কষ্ট দিতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।

তোর কোনো ধারণা আছে এই এক মাস আমার কীভাবে কেটেছে? কতগুলো রাত নির্ঘুম কেটেছে। এক মাস আমার কাছে সবকিছু অসহ্য লাগছে। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারিনি।

সব দোষ আপনার। আপনি তো বলছেন আপনাদের ভার্সিটিতে চান্স না পেলে আমাকে বিয়ে করবেন না। এই সামন্য একটা কারণে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না তাই আমার অনেক অভিমান হয়েছিল।

দরজার বাইরে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে আমি রিয়ান ভাইয়ের গলা ছেড়ে দেই। নিজেকে উনার কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। উনি ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে ধরেন।

রিয়ান ভাই কী করছেন কেউ দেখলে কী ভাববে?

ভাববে আমরা বিয়ে ছাড়া রোমান্স করছি। আমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তোর তো বিয়ে করার অনেক ইচ্ছে। আমি তো তোর কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখি না। তাই আজকে এই ইচ্ছেটাও পূর্ণ করে দিবো।

চলবে….