#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:২১
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
পরেরদিন দুপুরবেলা রিয়ান ভাইকে নিয়ে আমাদের বাসায় যাই। বাসায় গিয়ে অবাক হয়ে যায়। কারণ আমাদের ড্রয়িংরুমে নিলয় ভাইয়ার বাবা-মা বসে আছে। আমি আর রিয়ান ভাই বাসার ভিতর প্রবেশ করতেই এমন একটা কথা শুনতে পাবো কল্পনাও করি নাই। আমাদের দুজনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নিলয় ভাইয়ার বাবা-মা আমার সাথে নিলয় ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। তখনি হন্তদন্ত হয়ে আমাদের বাসায় আসে নিলয় ভাইয়া।
মা তুমি এই বাসায় আসছো কেনো? আর আমাকে তাড়াতাড়ি এখানে আসতে বললে কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?
আরে বাবা এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিবো কী করে? তুই শান্ত হয়ে বস আমি বলছি।
একটা দরকার ছিল তাই তোকে এখানে ডেকেছি আর আমারও এখানে এসেছি। কোনো সমস্যা হয় নাই। তোর সাথে রিয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
নিলয় ভাইয়া সোফা থেকে ওঠে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে, কীহহহ?
এতো অবাক হচ্ছিস কেনো? তুই তো রিয়াকে ভালোবাসিস।
তোমাকে কে বললো আমি রিয়াকে ভালোবাসি?
কেউ বলতে হবে আমি বুঝি না। আদ্রিয়ান আর রোজের গায়ে হলুদের দিন তুই বার বার রিয়া সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলি আর রিয়া তোকে ইগনোর করছিলো। আর ঐদিন রাস্তায় একটা ছেলে টেনে রিয়াকে গাড়িতে তুলছে দেখে তুই পাগলের মতো ড্রাইভ করে ঐ গাড়িটার পিছনে আসলি। যখন দেখলি ছেলেটা রিয়ার সাথে অসভ্যতামু করার চেষ্টা করছে তখন তুই ছেলেটাকে সাইকোদের মতো মারছিলি।
নিলয় ভাইয়া ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। নিলয় ভাইয়ার বাবা গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
ভাবি এক গ্লাস পানি হবে।
তোমরা দুজন এমন বিহেভ করছো কেনো?
নিলয় ভাইয়া আর উনার বাবা একসাথে বলে, এইটুকুর জন্য তুমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে। তুমি আসলেই ব্যাগডেটেট।
মা তুমি তো একবার আমাকে জিঙ্গেস করবে। তা না করে তুমি সোজা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলে এলে। বুঝতে পারছি তোমার জন্য ভবিষ্যৎ আমার কপালে অনেক দুঃখ আছে। অন্য কারো বউ-বাচ্চা এনে বলবে এই নে তোর বউ-বাচ্চা।
নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছে। আমি নিজের হাসিটা আটকে রাখতে না পেরে হাসতে হাসতে রিয়ান ভাইয়ের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছি। রিয়ান ভাই আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাচ্ছে তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। আন্টি বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রেখেছে।
মা আমি রিয়াকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু তুমি যেমন ভাবছো তেমন না। আমি রিয়াকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসি। গায়ে হলুদের দিন এই বাসায় এসে আমার চোখ আটকে যায় এক সবুজ পরির ওপর। পরিটা খিলখিল তরে হাসছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার ছোট নীরা পরি আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাইলে মেয়েটা আমাকে ইগনোর করে। ইগনোর করার কারণটা আমি জানি। ( রিয়ান ভাইয়ের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে কথাটা বললো। রিয়ান ভাই খুক খুক করে কাশি শুরু করে দেয়।)
নীরাটা কে?
আমার বোন তোমার মতো দুষ্টু ছিল। আমাকে না জ্বালালে ওর পেটের ভাত হজম হতো না। আমি না খাইয়ে দিলে সারাদিন না খেয়ে বসে থাকতো।
নীরা আপু এখন কোথায়?
হারিয়ে গেছে। ( চোখে পানি টলমল করছে)
মানে?
৫ বছর আগে আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি একটা অপদার্থ ভাই। আমার সামনে আমার বোনকে রেপ করেছে কিন্তু আমি কিছু করতে পারেনি। তখন নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিল। ভাই হয়েও বোনের জন্য কিছু করতে পারলাম না। হারিয়ে গেলো আমার বোন আমার কাছ থেকে। জানো খুব কষ্ট হয় যখন কোনো বোনকে তার ভাইয়ের কাছে আবদার করতে দেখি। আমার নীরা পরিও আমি কলেজ থেকে ফিরলে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আবদার করতো।
নিলয় ভাইয়ার চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি নিলয় ভাইয়ার গা ঘেষে বসে পড়লাম। এক হাত টেনে ধরে বললাম,
কে বললো তোমার কাছে কেউ ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার আবদার করবে না? আমাকে এখন থেকে প্রতিদিন ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে।
নিলয় ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কী হলো বলো নিয়ে যাবে না? (ঠোঁট উল্টে)
তুমি আমার সাথে ঘুরতে যাবে? (খুশি হয়ে)
না যাবো না। তুমি আমাকে বোন ভাবতে পারছো না।
কে বললো?
তাহলে তুমি আমাকে তুমি তুমি করে ডাকছো কেনো?
ওহ এই ব্যাপার এখন থেকে তুই করে ডাকবো।
ভাই তুমি তো আমার ভালোবাসায় ভাগ বসায়া দিলা। তোমারে দেখে আমার এখন সতিন সতিন টাইপ ফিলিংস আসছে। (ইনোসেন্ট ফেইস করে)
ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।
একটু আগে একজন আমাকে সতিন মনে করছিল এখন তুমি ভাবা যায়।
সবাই রিয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমার প্রচুর লজ্জা লাগছে তাই সবার মাঝখান থেকে ওঠে চলে এলাম।
————————————-
একটু আগে নিলয় ভাইয়া আর উনার বাবা-মা চলে গেছে। আমি বেডে বসে আছি আর রিয়ান ভাই সোফায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু নড়াচড়া করলেই দেয় এক রাম ধমক।
রিয়ান ভাই, ও রিয়ান ভাই।
তোকে কথা বলতে নিষেধ করছি না।
এভাবে বসিয়ে রাখছেন কেনো?
শুধু শুধু তো আর রাখি নাই কারণ আছে তাই রাখছি।
আমার এভাবে বসে থাকতে অসহ্য লাগছে।
যা আর বসে থাকতে হবে না।
এতক্ষণ বসিয়ে রাখলেন কেনো?
৩ দিন তোর সাথে দেখা হবে না তাই মন ভরে দেখে নিলাম।
দেখা হবে না কেনো?
আমি ৩ দিনের জন্য ময়মনসিংহ যাচ্ছি।
কেনো?
দরকার আছে তাই।
না গেলে হয় না।
না ৩ দিনেরই তো ব্যাপার। এখন আসছি।
এখনি চলে যাবেন?
হুম।
রিয়ান ভাই আমার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে যায়। একটু পরে ভাইয়া আসে।
কিছু বলবা?
হুম।
কী?
আজকে তোকে মিমের সাথে দেখা করাবো রেডি হয়ে নে।
তোমাদের মাঝে আমাকে টানছো কেনো? তোমাদের মাঝে আমি গেলে নিজেকে থার্ড পারসন মনে হবে।
তোকে বেশি কথা বলতে বলেছি। মিম তোর সাথে দেখা করতে চায়।
অগত্যা রেডি হয়ে ভাইয়ার সাথে বের হলাম। অর্ধেক রাস্তায় আসতেই টায়ার পাঞ্চার হয়ে যায়। ভাইয়া টায়ার চেইন্জ করতে যায়। আমার দৃষ্টি রাস্তার ঐ পাশে ফুলওয়ালার দিকে যায়।
ফুল আমার অনেক প্রিয়। আমি গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেই। মাঝ রাস্তায় আসতেই আমার খেয়াল হয় আমার দিকে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে আসছে। আমি নড়ার শক্তি পাচ্ছি না। আমি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
চলবে…..