অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-২২ এবং অন্তিম পর্ব

0
7618

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#অন্তিম_পর্ব
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ফুল আমার অনেক প্রিয়। আমি গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দেই। মাঝ রাস্তায় আসতেই আমার খেয়াল হয় আমার দিকে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে আসছে। আমি নড়ার শক্তি পাচ্ছি না। আমি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ কেউ হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে নেয়।

সুইসাইড করার জন্য আর কোনো জায়গা পাননি নিজেও মরতেন সাথে আরেকজনকে ফাঁসাতেন। এতোই সুইসাইড করার সখ ছাদ থেকে ঝাপ দিয়েও মরতে পারতেন। নাকি কাউকে ফাঁসানোর ধান্ধা।

এতক্ষণ নিচু করে রাখা মাথাটা উপরে তুললাম।হাত দিয়ে মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরালাম।

বাঁচানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বাঁচিয়ে এতো এডবাইস দিতে কে বলছে? আমি আপনাকে একবারও বলছি আমি সুসাইড করতে আসছি? না জেনে এতোগুলো উপদেশ দিয়ে দিলেন। সুযোগ পেলে ফ্রীতে উপদেশ সবাই দিয়ে দেয়। আমি…….

বেবিডল।

চির চেনা পুরুষালি কন্ঠসর শুনে ছেলেটার দিকে তাকায়। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট সুরে বের হয়ে আসে,,

অনি ভাইয়া।

বেবিডল।

অনি ভাইয়া আমায় ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। উনার চোখের পানি দিয়ে আমার কাঁদ ভিজে একাকার হয়ে গেছে।

কেমন আছিস তুই? কতদিন পরে তোকে দেখলাম। জানিস তোকে আর রিয়াদকে আমি কত খুঁজছি? কিন্তু কোথাও তোদের পায়নি। হঠাৎ করে তোরা উদাও হয়ে গেলি।

আমি সর্তক চোখে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেই। ভাইয়াকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি অনি ভাইয়াকে ছেড়ে একটু দুরে সরে দাঁড়ালাম।

অনি ভাইয়া ভাইয়া এদিকে আসছে তুমি ভুলক্রমেও বলো না তুমি ভাইয়ার ছোটবেলার বন্ধু।

কিন্তু কেনো?

তুমি চলে যাওয়ার কিছুদিন পরেই ভাইয়ার একটা এক্সিডেন্ট। ঐ এক্সিডেন্টে ভাইয়া স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে। ডক্টর বলেছে ভাইয়াকে জোর করে ছোটবেলার কোনো কথা মনে করাতে চাইলে ভাইয়া কোমায় চলে যাবে। তোমার সাথে আমি পরে যোগাযোগ করে নিব। তোমাকে আর আমাকে একসাথে দেখলে ভাইয়ার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এতে যদি ভাইয়ার কোনো প্রবলেম হয়। আমি এখন আসছি। আর এটা আমার নাম্বার।

অনি ভাইয়ার হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে চলে এলাম।

তোর সাথে ঐ ছেলেটা কে ছিল?

আমার কলেজ টিচার হঠাৎ করেই স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেলো। তাই টুকিটাকি কথা বলছিলাম। গাড়ি ঠিক হয়ে গেছে?

হুম।

তাহলে চলো যাওয়া যাক।

হুম চলো।

————————————

ফোনের তুমুল শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নেই। ফোনের স্কিনে রিয়ান ভাই নামটা ঝলঝল করছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১১:৩০ বাজে। এতো রাতে রিয়ান ভাইয়ের ফোন দেখে চমকে ওঠি। মনের ভিতর একটা খারাপ অনুভূতি হচ্ছে। কারো কিছু হলো না তো। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলাম।

হ্যালো

তাড়াতাড়ি বাসার নিচে আয়।

এতো রাতে বাসার নিচে যাব কেনো?

আমি বলছি।

বাই এনি চান্স আপনি আমাদের বাসার নিচে নন তো?

আমি তোদের বাসার নিচে তোর জন্য ওয়েট করছি।

আপনি এতো রাতে ফালতু কথা বলার জন্য আমার স্বাদের ঘুমটা নষ্ট করছেন।

ফালতু কথা নারে বাবা। তোর যদি বিশ্বাস না হয় তুই বেলকনিতে এসে নিচে তাকিয়ে দেখ।

গলায় স্কার্ফ জড়িয়ে বেলকনিতে গেলাম। বেলকনিতে গিয়ে নিচে তাকিয়ে আমি চমকে গেলাম। সত্যিই রিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের আলোয় রিয়ান ভাইয়ের মুখ স্পষ্ট বুঝা না গেলেও আবছা আবছা বুঝা যাচ্ছে।

এবার বিশ্বাস হলো তো?

হুম।

এবার ঝটপট নিচে নেমে আয়।

ড্রেসটা চেইন্জ করে আসি?

একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে আসবি।

এখন শাড়ি কেনো?

আমি বলছি তাই।

আচ্ছা রেডি হয়ে নিচে আসছি।

একটা নীল রঙের শাড়ি পড়লাম। ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক দিলাম। হাতে নীল কাঁচের চুড়ি পড়লাম। চোখে ঘন কালো কাজল দিলাম। চুলগুলো খুলে দিলাম। এর মাঝে রিয়ান ভাই আবার ফোন দিল। ফোনটা রিসিভ করে কানে ইয়ার রিং পড়ে একটা দৌড় দিয়ে রুমের বাইরে চলে এলাম। পা টিপে টিপে বাসার পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে এলাম। রিয়ান ভাই গাড়ির ঢিকির ওপর বসে আছে। পড়নে নীল রঙের পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবি হাতা কুনুই পর্যন্ত ঘুটানো। উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। গাড়ির ঢিকি থেকে নেমে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন। এতোটা কাছে যে উনার নিশ্বাস আমার চোখ মুখে আঁচড়ে পড়ছে। উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,

একদম আমার বউ বউ লাগছে।

আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই।

গাড়িতে ওঠো।

কেনো?

কাজি অফিসে যাবো।

কেনো?

আজকে তোমার আমার বিয়ে।

আমরা কী পালিয়ে বিয়ে করছি?

হুম।

আমার কতদিনের ইচ্ছে ছিল পালিয়ে বিয়ে করার আজকে সেই ইচ্ছে পুরণ হতে চলেছে।

এবার গাড়িতে উঠুন ম্যাম।

———————————-

রিয়ান ভাইয়ের রুমে বসে আছি। চারদিক ফুলের গন্ধ মৌ মৌ করছে।

কিছুক্ষণ আগে

রিয়ান ভাই আমাকে নিয়ে কাজি অফিসে যায়। আগে থেকে উনার বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলেন। আমার পৌছাতেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। কিছুক্ষণের মাঝেই বিয়ে পড়ানো কম্পলিট হয়। রিয়ান ভাই আমাকে নিয়ে উনার বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে আমি চমকে যাই। কারণ আমার ফেমেলির সবাই রিয়ান ভাইয়ের বাসায়। আমাদের দুজনকে দেখে কেউ চমকায়নি। আমার কাজিনরা আমাকে রিয়ান ভাইয়ের রুমে বসিয়ে দিয়ে যায়। বুঝতে পারলাম সবাই আগে থেকে সবকিছু জানতো।

খট করে দরজার খুলার শব্দে আমার ভাবনার ছেদ ঘটে। রিয়ান ভাই রুমে প্রবেশ করে দরজাটা লক করে আমার দিকে এগিয়ে আসেন। আমার পাশে বসে মাথা থেকে ঘোমটা সরান।

আমার জানামতে বাসর রাতে সব মেয়েরা তার বরকে সালাম করে তুমি করলে না?

আপনি সালাম করা পছন্দ করেন না আমি জানি। তাই করি নি।

বাহ বাহ আমার বউ আমার পছন্দ সম্পর্কে ভিষণ খেয়াল রাখে দেখা যায়।

আপনি সবকিছু প্লেন করে করেছেন তাই না?

হুম তোমার ১৮ তম জন্মদিনের উপহার। আমার পিচ্চি বউটা কত বড় হয়ে গেছে।

আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম।

এখনি এতো লজ্জা পেলে চলবে। বাই দা ওয়ে তুমি এখনো কিন্তু বললে না আমাকে ভালোবাসো?

আপনি বলেছিলেন এটা #অন্তরালে_ভালোবাসা। মুখে বলতে নেই বুঝে নিতে হয়।

আমার সাথে থাকতে থাকতে রোমান্টিক হয়ে গেছো।

ধুর আপনিও না।

আমি লজ্জা পেয়ে উনার বুকে মুখ লোকাই। উনি মুচকি হেসে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরেন।

সমাপ্ত!