তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-১২

0
1478

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_12
#Writer_NOVA

প্রায় দশ মিনিট ধরে তাসিন ও পুষ্প রেষ্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে। তাসিনের মুখটা ভীষণ অসহায় দেখাচ্ছে। আর পুষ্প গাল ফুলিয়ে বসে আছে। গত পরশু দেখতে যাওয়ার পর থেকে একটা কথাও বলেনি পুষ্প।ওদের ফ্যামেলীর সবাই তাসিনকে পছন্দ করেছে।বিয়েটাও সাত দিন পর। রাইয়ের কথায় তাড়াহুড়ো করে বিয়ের ডেট ফেলতে হয়েছে। রাই-এর ধারণা ওর ভাই এখন বিয়ে করতে রাজী হয়েছে কিন্তু তারপর যদি মানা করে দেয়।তাই এতো জলদী করে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। তাসিন তো আর তার বোনের কথা ফেলতে পারে না।তাসিন সারা পৃথিবীর কাছে বাঘ থাকলেও পুষ্পর কাছে বিড়াল হয়ে যায়।যেমন এখন আছে।একে দেখে বোঝার সাধ্যি নেই যে এই ছেলেটা পুরো মাফিয়া জগৎ কাঁপায়।

তাসিনঃ আই এম সরি পুষ্প।আসলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি।কিন্তু তুমি যে এতটা মন খারাপ করে ফেলবে তা বুঝতে পারিনি।সরি ডিয়ার।এবারের মতো মাফ করে দেও।

পুষ্পঃ 😶😶

তাসিনঃ সত্যি বলছি।তুমি যে এতো কান্নাকাটি করবে তা জানলে আমি কখনি এমনটা করতাম না।তাছাড়া পুরো প্ল্যানটা তোমার আদরের ননদীনির।আমি প্রথমে রাজী হতে চাইনি।রাইপরী জোর করে করেছে।

পুষ্পঃ খবরদার,আমার ননদীনির কোন দোষ দিবেন না। আপনি কি দুধের ধোয়া তুলসী পাতা নাকি?আপনাকে কল করার পর কি বলেছেন?তা কিন্তু আমি ভুলিনি। আপনার কথা শুনে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম।

তাসিনঃ আর হবে না।😐

পুষ্পঃ যেই ছেলেটা আমাকে তিনদিন না দেখতে পেরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও চলে এসেছে। তার মুখে ওমন কথা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল তা কি আপনি ভেবে দেখেছেন?সবসময় নিজের দিকটা ভাবলেন।আমার কথা চিন্তা করেন না।আপনি সেই ঝড়ের দিনে এসে নিজের মনের কথা বলে এক মিনিটও দেরী করলেন না।কিন্তু একবারও কি ভেবেছিলেন আমার কি অবস্থা হবে আপনি যাওয়ার পর?সারাটা রাত আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি।আমার অনেক খারাপ লেগেছিল। তারপর দেখতে আসার কথা শুনে আপনার ভাবলেশহীন উত্তর শুনে আমি ঠিক কতটা ভেঙে পরেছিলাম তা আপনাকে বোঝাতে পারবো না। অথচ শুধু আপনার ওপর রাগ করেই আমি আপনাদের সামনে এসেছিলাম।যদি আমি জানতাম আপনি আমায় দেখতে এসেছেন তাহলে কখনি আসতাম না।(কাঁদো কাঁদো সুরে)

রেস্টুরেন্টে পাশেই মোবাইল সার্ভেসিং-এর দোকানে গান বাজছে।বর্তমানে পুষ্পের অভিযোগের সাথে গানটা হুবাহু মিলে যায়।চলুন আমরাও শুনে আসি।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

মন ভাঙা, মন গড়া কিছুতেই নেই যে প্রেম(×০২),
মনেরি মনিকোঠায়, সাজানো যে থাকবে
এতকিছু বোঝো আর মন বোঝো না
কতকিছু তুমি খোঁজো,আমায় তো খোঁজো না।(×০২)

যতদূর যেতে চাও,ভেসে চলে যাও
এ মনেরি ছায়ায়।
রবে তোমাকে ঘিরে, তুমি আসবেই ফিরে
এ মনেরি মায়ায়।(×০২)
মনেরি মনিকোঠায়, সাজানো যে থাকবে
এতকিছু বোঝো আর মন বোঝো না
কতকিছু তুমি খোঁজো,আমায় তো খোঁজো না।(×০২)

আমি দু হাত বাড়িয়ে আছি দাঁড়িয়ে
বিরোহী প্রতিক্ষণ,
তুমি রাঙা চরণে,আমার সিঁথানে
এসে দাঁড়াও কখন।(×০২)
মনেরি মনিকোঠায়, সাজানো যে থাকবে
এতকিছু বোঝো আর মন বোঝো না
কতকিছু তুমি খোঁজো,আমায় তো খোঁজো না।(×০২)

মন ভাঙা, মন গড়া কিছুতেই নেই যে প্রেম(×০২),
মনেরি মনিকোঠায়, সাজানো যে থাকবে
এতকিছু বোঝো আর মন বোঝো না
কতকিছু তুমি খোঁজো,আমায় তো খোঁজো না।(×০২)

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

পুষ্প অন্য দিকে ঘুরে এক ধ্যানে গানটা মনোযোগ দিয়ে শুনে ঠোঁট চেপে কান্না করতে লাগলো।নিজের মনের সব অভিযোগ আজ প্রকাশ করে দিয়েছে। তাসিন এক ধ্যানে তাকিয়ে পুষ্পর কথা শুনছিলো।পুষ্পকে কাঁদতে দেখে নিজের চেয়ার থেকে উঠে পুষ্পের সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে দুই কান ধরে বসলো।

তাসিনঃ পুষ্প এবার মতো মাফ করে দেও।প্রমিস করছি ২য় বার হবে না।আরেকটা চান্স দেও।আমার সাথে চলো।বুঝেছি অন্যভাবে তোমার রাগ ভাঙাতে হবে। তার ব্যবস্থাও আমি করে রেখেছি।

তাসিন কথাটা বলেই পুষ্পর হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতরের দিকে নিয়ে গেলো।

পুষ্পঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।হাত ছাড়ুন।আমি কোথাও যাবো না আপনার সাথে। (মুখ ভার করে)

তাসিনঃ চুপচাপ আমার সাথে চলো।

🌺🌺🌺

ভেতরে একটা রুমের দিকে তারা চললো।অন্ধকার রুমের ভেতরে ঢুকতেই তাসিন ওর হাত ছেড়ে দিলো।পুষ্প ভয় পাচ্ছে। তার মধ্যে হাত দিয়ে ওর চোখ আটকে দিলো তাসিন।গুটি গুটি পায়ে এগুতেই একটা টেবিলের সামনে নিয়ে হাত সরিয়ে দিলো।চারপাশে রং-বেরঙের লাইট জ্বলে উঠলো। পুষ্প চোখ খুলে তাসিনকে দেখতে পেলো না। কিন্তু আশেপাশের ডেকোরেশন দেখে অবাক।হুট করে ওপর থেকে পুষ্পর গায়ে একগাদা গোলাপের পাপড়ি পরলো।সামনের টেবিল ভর্তি চুড়ির বক্স।পুষ্প খুশি হয়ে চুড়ির ওপর হামলে পরলো।

ছোট একটা রুমের মতো দেখতে জায়গাটা।চারপাশের দেয়ালে পুষ্পর অসংখ্য ছবি।যেগুলো ওর অজান্তে তুলেছে তাসিন।পুরো রুমটা বিভিন্ন ফুল ও নেট জাতীয় কাপড় দিয়ে সাজানো।লাইটের আলোতে ঝলমল করছে। সবকিছু দেখে নিমেষেই পুষ্পর মনটা ভালো হয়ে গেলো।ছবিগুলো দেখে সে একের পর এক অবাক হচ্ছে। তখনি সামনে তাকিয়ে দেখলো তাসিন একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। মুচকি হেসে বলতে লাগলো।

তাসিনঃ জানি না কিভাবে শুরু করবো?যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন আমার মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। বুকের বাপাশটা প্রচুর স্প্রিডে ওঠানামা করছিলো।এক মুহুর্তের জন্য আমার পুরো পৃথিবীটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না।যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইড। সেদিনই তোমার সকল খোঁজ-খবর নিয়ে ফেলেছিলাম।আমি এক চুড়ি পাগলীর প্রেমে পড়েছি।যার নাম পুষ্প।হ্যাঁ, সে দেখতে সত্যি পুষ্পের মতো কোমল।কি করে তোমার কাছে যাওয়া যায় তাই ভাবছিলাম।তাই দ্বিধা-দ্বন্দ নিয়ে তোমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।তুমি তা গ্রহণ করে নিলে।আমি যে সেদিন কতটা খুশি ছিলাম তা তোমাকে বোঝাতে পারবো।দিন যত যেতে লাগলো ততই তোমার প্রতি দূর্বল হতে লাগলাম।আমি আরো আগে তোমাকে বলে দিতাম আমার মনের কথা। কিন্তু ভয় হতো যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও।আর কয়েক দিন পর যেহেতু তুমি পুরোপুরি আমার হবে তাই ভাবলাম তার আগে বলেই দেই।আই লাভ ইউ পুষ্প।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বিশ্বাস করো আমার হৃৎপিণ্ডে তোমার নাম আছে।ডু ইউ লাভ মি?তোর_রঙে_রাঙাবো আমি নিজেকে।তুই কি আমাকে রাঙাতে দিবি?আমায় স্বামী হওয়ার সুযোগ দিবি?আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গী হবি?বিশ্বাস করে আমার ভালোবাসার রঙে তোকে রাঙিয়ে রাখবো।আমার সবটুকু দিয়ে তোকে আগলে রাখবো।সেই সুযোগটা কি আমি পাবো?আমি তোর_রঙে_রাঙাবো আমার ভুবন।যদি সাথী হই দুজন।অনুমতিটা কি পাবো আমি???

পুষ্প মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে এসে তাসিনের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কিছু সময় পর তাসিন পুষ্পকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর নিজের দুই হাতের মুঠোর মধ্যে পুষ্পর দুই হাত আবদ্ধ করে নিল।মুগ্ধ দৃষ্টিতে মনোযোগ সহকারে পুষ্পকে দেখতে লাগলো তাসিন।

পুষ্পঃ সব কথা বলে না হৃদয়। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।কারণ আমিও তোর_রঙে_রাঙাবো জীবন।তুই কি আমায় তা করতে দিবি?প্রমিস তোর অগোছালো জীবন গুছিয়ে দিবো।কিন্তু কখনো ধোকা দিস না।

তাসিন আলতো হাতে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর কিছুটা ভীত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

তাসিনঃ পুষ্প যদি কখনো জানো আমি তোমার কাছ থেকে অনেক বড় একটা সত্যি লুকিয়েছি।তখন কি করবে?আমার কালো দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক আছে।তুমি কি আমাকে ছেড়ে দিবে?তুমি তখন ছেড়ে দিতে চাইলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না। পুষ্প, তুমি কি কিছু শুনছো?

পুষ্পঃ তুমি কি কিছু বললে তাসিন?আমি না আসলে খুব মনোযোগ দিয়ে তোমার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকনি শুনছিলাম।তাই তোমার কথা শুনিনি।আমার মনে হচ্ছে তোমার হৃৎপিণ্ডটা আমার নাম নিচ্ছে। ওহ্ সরি আবেগের বশে আপনাকে তুমি করে বলে ফেললাম।

তাসিনঃ তোমার মুখে তুমি ডাকটাই আমার ভালো লাগছে। আর আপনি করে বলা যাবে না। এখন থেকে সবসময় তুমি বলবে।

পুষ্পঃ আচ্ছা, তাই হবে।

তাসিনঃ আমি এতগুলো কথা বললাম তার উত্তর কিন্তু পেলাম না।

পুষ্পঃ ঐ যে বললাম, সব কথা বলে না হৃদয়। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। তুমিও বুঝে নেও।তোমাকে ভালো না বাসলে তো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতাম না।সেটাও কি বোঝো না তুমি?

তাসিন মুচকি হেসে পুষ্পকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে মিশিয়ে নিলো।তার মনে এখন আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ এসে ভর করেছে। না চাইতেও সে তার অনিশ্চিত জীবনটার সাথে পুষ্পকে জড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু সেই বা কি করবে?পুষ্পকে ছাড়া তার তো এক মুহুর্তও ভালো লাগে না।নিজেকে শূণ্য, শূণ্য মনে হয়।ওর দূর্বলতার এক অংশ এখন পুষ্প।যাকে দেখলেই সব ভুলে মনে হয় তোর_রঙে_রাঙাবো আমার অনন্ত জীবন।

#চলবে