প্রেয়সী পর্ব-২২

0
1108

#প্রেয়সী♥️🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ২২

৪৩.

—-” নাচের প্রোগ্রাম?”

আমার জোরেশোরে করা প্রশ্নটিতে স্যার সহ ক্লাসের বেশির ভাগ স্টুডেন্টেরই দৃষ্টি এসে ঠেকলো আমার ভোলা ভালা চেহারার উপর। আমি থতমত খেয়ে “উপস সরি” বলেই মুখ চেপে ধরলাম। স্যার পড়া থামিয়ে দিলেন। কতক্ষণ তিক্ত চোখে আমাকে দেখে আবারও নড়েচড়ে পড়াতে শুরু করলেন। রাই নিজের মাথা চেপে ধরলো বেঞ্চের উপর। এমন অস্বস্তিকর ঘটনার জন্য মূলত এই বেয়াদবই দায়ী। হঠাৎ নাচের প্রোগ্রাম হতে যাবে কেন ভার্সিটিতে? আমি বাম হাতটা তুলে চটাস করে বারি লাগিয়ে দিলাম রাইয়ের মাথায়। রাই মাথা উঠাতে গিয়েও উঠাতে পারলো না। কেননা না চাইতেও ওর মাথাটা খানিক ঝুঁকে গেলো সামনের দিকে। অবশেষে ভ্রু জুগল কুঁচকে নিয়েই রাগী চোখে তাকালো আমার দিকে। আমার মুখের ভঙ্গিমা বিরক্ততায় সিক্ত। কেন? বুঝতে পারছিনা। এই অর্ধেক কথা বলা মানুষ গুলো আমার ভীষণ বিরক্তের। আর তারই মাঝে রাই একজন অন্যতম প্রানী।

—-” পুরো কথা বলবি নাকি আরেকটা গাট্টা খাবি?”

রাই ঠোঁট ফুলিয়ে তাকালো। মাথায় হাত ডলে করুন গলায় বলল,

—-” স্যার বার বার তাকাচ্ছিলেন! দেখতে পাচ্ছিস না তুই?”

আমি আঁড়চোখে স্যারের দিকে তাকালাম। আসলেই এমন কিছু ছিলো নাকি?

—-” আর কিছু বলতে নিলেই সোজা ঘাড় ধরে ক্লাসের বাইরে ছুঁড়ে মারতেন!”

—-” অহ এ-কাহিনী তবে! যাক-গে, এখন বল কিসের নাচের প্রোগ্রাম? ভার্সিটিতেও এসব হয় নাকি? জানা ছিলো না তো?”

—-” নাচের প্রোগ্রাম বলতে নবীন বরন অনুষ্ঠান!”

—-” কিইইই…”( উত্তেজনার বসে আবারও চেঁচিয়ে ওঠা আমার নিষ্পাপ গলা)

—-” হেই ইডিয়ট!! বোথ অফ ইউ… স্ট্যান্ডআপ?”

স্যারের বাজখাঁই গলায় আমার অন্তর-আত্মা অব্দি কেঁপে উঠলো। চমকে উঠে রাইয়ের হাত খামচে ধরতেই রাই, “ও-মা গো” বলে চেঁচিয়ে উঠলো। আমার কি দোষ? আমি তো স্রেফ নবীন বরন হওয়ার খুশিতেই চেঁচিয়ে উঠেছি। উনার বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে উনার একমাত্র ছেলের হাতে মদের বোতল দেখে তো চেঁচাইনি! রাই কাঁপতে কাঁপতে আমাকে নিয়েই দাঁড়িয়ে গেলো। আমার দিকে একবার তাকিয়েই মেয়ের কেঁদে দেওয়ার উপক্রম হলো। আমি দাঁত কেলিয়ে একখানা হাসি দিয়ে স্যারের দিকে তাকালাম। চোখে মুখে এঁটে দিলাম সেরা অসহায়ের খেতাব।

—-” সরি স্যার!”

ছোট্ট করা কথাটাতে স্যারের রাগে আরও ঘী-মসলা পরলো। গলার রগ ফুলিয়ে আবারও চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি,

—-” তোমরা দুজনে এক্ষনি বের হয়ে যাবে ক্লাসরুম থেকে। গেট আউট.. গেট আউউউট!”

আমি আবারও আঁতকে উঠলাম। সকাল বেলা এই লোক ঠিকই কচু ভর্তা দিয়ে গোল্লা গোল্লা ভাত খেয়ে এসেছে। অকারনেই ভীষণ চটছে। সামান্য কথাই তো বলেছি মশাই তাতে এতো চটে যাওয়ার কি হলো? হুহ্। আমি পাশ থেকে রাইকে খোঁচা মেরে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করলাম। স্কুল কলেজের টিচাররা হলে কতক্ষণ ঘ্যানোর ঘ্যানোর ঘ্যান করে আবারও ঠিক বসিয়ে দিতেন কিন্তু এরা কিছুতেই তা করবেননা। তাই কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। বের হয়ে যাইয়াই উচিৎ কার্য।

ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছি। চারিপাশ একদম বেকায়দায় ফাঁকা। কেননা সব রুমেই ক্লাস চলছে। এই মুহুর্তে এ-পথ ধরে একা না যাওয়াটাই বেটার। যদিও আমার সাথে রাই আছে। মেয়েটা গুম মেরে আছে। কথা বলছেনা! স্যারের ধমক খেয়ে কোমায় চলে যায়নি তো আবার?

—-” কি-রে?? বাঁইচা আছিস না কোমায় ট্রান্সফার হয়েছিস?”

চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো রাই। নাহ্ সত্যি রেগে আছে!

—-” স্যারের ধমক খেয়ে এখনও শকে আছিস?”

—-” তুই ওমন করে চেঁচালি কেন বলতো?”

—-” কেমন করে?”

—-” কেমন করে কি! ওমন করে! স্যার কি ভাবলো আমাদের বলতো? আর ক্লাসের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট আমাদের কীভাবে দেখছিলো! দেখেছিস তুই?”

—-” রিলাক্স ইয়ার। স্যারের ক্লাসে আমার নিজেকে স্রেফ মগা মগা বলে ফিল হচ্ছিলো! প্রচুর বোরড হচ্ছিলাম তাই তো তোকে কাজে লাগিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম!”

—-” হোয়াট! তাই বলে এভাবে?”

—-” এভাবে আর কি? ভাল্লাগছিলো না ব্যস বেরিয়ে এসেছি এই তো! এসে গেছি… চল আজ জমিয়ে উপন্যাসের বই পড়বো। দেখবো কে ক’টা শেষ করতে পারে!”

—-” আমার এখন মুড নেই!”

—-” চড়িয়ে তোমার মুড করে দিবো বেদ্দপ! আয় বলছি।”

রাইয়ের অনিচ্ছা স্বত্বেও ওকে মোটকথা টেনেটুনে নিয়ে এলাম ভেতরে। ভেতরে আসতে আমি মোটামুটি ধরনের চমকালাম। বাইরে থেকে ভেতরকার অবস্থা ভূতুড়ে পরিবেশের মতো সুনসান লাগলেও ভেতরে তো পুরো উল্টো কাহিনী। লাইব্রেরীর এপাশ থেকে ওপাশ অব্দি ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে একদম গিজগিজ করছে। এই সময় এতো স্টুডেন্ট থাকে? জানা ছিলো না তো!

বড় বুক সেল্ফটার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা দাঁতভাঙা উপন্যাস পড়বো কি-না ভাবছি! মাঝেমধ্যে এমন দাঁতভাঙা উপন্যাস পড়তেও বেশ মজাই আছে।

রাই হাতের ভাজে শরৎচন্দ্রের একটা উপন্যাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—-” তুই কোনটা পড়ছিস?”

আমি বইয়ের মাঝে হাত চালাতে চালাতে বললাম,

—-” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইন্টারেস্টিং টাইপ কোনো বইয়ের নাম জানিস তুই?”

রাই উগ্র কন্ঠে বলল,

—-” এতো এতো কবি, লেখক রেখে উনার ওমন শক্ত লেখার প্রতি তোর এতো আগ্রহ জন্মালো কেন?”

আমি বিরস মুখে তাকালাম বটে। তবে জবাব দিলাম না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একখানা জব্বর ধাঁচের বই পেতেই একটা ফাঁকা জায়গায় এসে বসেলাম। বইয়ের পাতা চটপট উল্টানোর মাঝে রাইও এসে বসল। ব্যস, এখন দিন দুনিয়ার সব খেয়াল রেখে কেবল বইয়েই মগ্ন হয়ে পড়বো। রেডি 1,2,থি…… মনোযোগে বিগ্ন ঘটিয়েই পার্সের মধ্যে ফোনটা করুন সুরে চাপা আর্তনাদ করতে লাগলো। রাই আঁড়চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

—-” কি হলো?”

আমি তিক্ত সুরে জবাব দিলাম,

—-” ফোনটার ক্ষিধে পেয়েছে! তাই কাঁদছে!”

রাই মুখ টিপে হেসে বলল,

—-” দেখ তোর বরের কল হয়তো?”

—-” হ্যাঁ, আমার জন্মগত বর!”

রাই আবারও হাসলো। শব্দ বিহীন হাসি! ফোনটা বের করতে করতে কল কেটে যাওয়ার লাস্ট স্টেজ এসে গেছে। তাই তাড়াহুড়োর উপর নাম্বারে চোখ রাখা হলো না। এটা লাইব্রেরী! এখানে একজনের গলার আওয়াজ অন্যজনের কানে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই গলার স্বর চেপেই বলে উঠলাম,

—-” হ্যালো, কে বলছেন?”

ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে ভেসে আসলো জবাব,

—-” এক আজনাবি, হাছিনা ছে~~
ইউ মুলাকাত হো-গায়ি।
ফির কেয়া হুয়া, ইয়ে না পুছো~~
কুছ এছি বাত, হো গায়ি।

আমি থতমত খেয়ে গেলাম গানের লাইন শুনে। অপরিচিতর গলা!

—-” আপনি!”(ফিসফিসিয়ে)

—-” হ্যাঁ আমি।”

উনি আমার থেকেও আরো ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন। আমি দাঁত চিবিয়ে বললাম,

—-” আপনি কেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছেন?”

উনিও আমার সহিত বলে উঠলেন,

—-” তুমি কেন এভাবে কথা বলছো?”

—-” আমি বলছি কারন আমার ইচ্ছে!”

—-” ওহ, তবে ধরে নাও এটা আমারও ইচ্ছে!”

আমি গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,

—-” কেন কল করেছেন?”

—-” ঐ যে আমার ইচ্ছে।”

আমি শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,

—-” তাই বুঝি? তাহলে আমিও কলটা কেটে দিয়ে আপনাকে ব্লক করে দিচ্ছি!”

উনি কেশে উঠে বললেন,

—-” আরে আরে তা কেন?”

—-” ঐ-যে আমার ইচ্ছে!”

—-” নো নো নো এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয় নীলু! তুমি এনন অমানবিক কাজ কিছুতেই করতে পারো না।”

—-” ওয়েট আ মিনিট! হু ইজ নীলু?”

হেসে উঠলো লোকটা। চাপা হাসি দিয়ে বলল,

—-” আই মিন নীলাদ্রিতা!”

—-” হোয়াট!”(চেঁচিয়ে)

রাই আমার হাত চেপে ধরলো। করুন চাহনি দিয়ে বলল,

—-” কি করছিস? চেঁচাচ্ছিস কেন? এখন কি এখান থেকেও বের হয়ে যেতে চাস??”

আমি চুপসে গেলাম রাইয়ের কথায়। কারন এখান থেকে তো আমরা বের হতে চাই না! সব দোষ এই অভদ্র লোকের। আমি গলার স্বর আবারও চেপে বললাম,

—-” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনি আমাকে নীলু বলেন কোন সাহসে?”

—-” কেন? নীলাদ্রিতা কে শর্ট করে নীলু বলা টা কি অন্যায়?”

—-” অন্যায় মানে? এতো রীতিমতো ঘোর অন্যায়। মহাপাপ!”

—-” বাট নীলাদ্রিতা, আমার যে তোমার এতবড় নাম নিতে নিঃশ্বাস ভরে আসে!”

আমি রাগে ফুঁসে উঠে বললাম,

—-” নিঃশ্বাস ভরে আসলে নিঃশ্বাস আঁটকে মরে যান! তবুও আমার নাম শর্ট করে ডাকবেন না! বুঝেছেন?”

—-” বাট নীলু…”

আমি আরও ক্ষেপে গেলাম! দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফাস গলায় বললাম,

—-” আপনাকে কিন্তু আমি জাতাঁকলে পিষে মেরে ফেলবো বলে দিলাম! ডোন্ট কল মি নীলু!”

উনি মাতাল সুরে হেসে উঠলেন। কোমল কন্ঠে বললেন,

—-” এই নীলু… সরি সরি! নীলাদ্রিতা, তুমি জানো এই মুহুর্তে আমার কিরকম ফিল হচ্ছে?”

—-” আমার জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই! বেশি ফিল হলে বুড়িগঙ্গার পানি খেয়ে মরে যান আপনি!”

—-” বাট নীলু আমার যে বলতে ইচ্ছে করছে!”

—-” আবার নীলু!”

—-” তুমি যতক্ষণ আমার কথা না শুনবে ততক্ষণ আমি নীলুই বলবো হু!”

—-” ভারি ডিজগাস্টিং লোক তো আপনি!”

—-” এভাবে বলছো!”

—-” আচ্ছা বলুন আপনার বুড়িগঙ্গার পঁচা পানি খাওয়ার ফিলিংস!”

—-” হোয়াট?”

—-” বলবেন কি বলবেন না?আমি তবে কল কেটে… ”

—-” এই না না বলছি!”

—-” হু,ফাস্ট…”

—-” এতো তাড়া দিচ্ছো কেন বলতো?”

—-” ভাগ্যিস ফোনটা আমার খুব সাধের। তাই এখনো ছুড়ে মারছিনা! অন্যথা…”

—-” নীলু, আর ইউ এংরি উইথ মি?”

—-” বেটা তরে তো আমি…”

—-” নিধি তোমরা এখানে? ক্লাস শেষ?”

কয়েক কদম দূর থেকেই ভেসে আসলো আরফান ভাইয়ের কন্ঠ। আমি ফেনটা কান থেকে নামাতে ভাইয়া ধীরগতিতে এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে। আমি কলের দিকে আর না তাকিয়েই লাইনটা কেটে দিলাম।

রাই হাসি মুখে জবাব দিলো,

—-” জ্বী ভাইয়া। ক্লাসে একটু বোরিং লাগছিলো তাই…”

—-” তা বেশ ভালোই করেছো? উপন্যাস পড়ছো?”

আমি মাথা দুললাম। মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম,

—-” হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!”

আরফান ভাই অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললেন,

—-” আরে ইয়ার! সব বই রেখে অবশেষে উনি?”

রাই হাসতে হাসতে বলল,

—-” ইউনিক লোক ইউনিকই চুজ করে ভাইয়া!”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম রাইয়ের দিকে। দাঁত চিবিয়ে বললাম,

—-” অপমান করছিস?”

আরফান ভাই ফিক করে হেসে দিলেন। সাথে রাইও যোগ দিলো। হাসতে হাসতেই বলতে লাগলেন আরফান ভাই,

—-” না না নিধি! রাই কিন্তু ভুল কিছু বলেনি। তোমার মাঝে সত্যি সবটাই ইউনিক। আর তুমি সত্যিই মারাত্মক লেভেলের ব্রিলিয়ান্ট।”

অপমান করছে না সুনাম করছে ব্যাপারটা ক্যাচ করতে সত্যিই ঘাম ছুটছে আমার। আমি জোরপূর্বক দাঁত কেলালাম। মাথা চুলকে বললাম,

—-” হঠাৎ আপনার এমন কথা কেন মনে হলো ভাইয়া?”

আরফান ভাই আবারও অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বললেন,

—-” আরে কি বলছো তুমি? যেখানে এজ আ সিনিয়র স্টুডেন্ট যারা নিজেরাই নিজেদের এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন করতে হিমশিম খেয়ে যায় সেখানে তুমি কতটা ইজিলি সবটা সাবমিট করে ফেললে। যদিও কয়েকদিন সময় লেগেছে তবে সময়টা কিন্তু তোমার অন্য কাজে ব্যয় হয়েছে নট ফর এসাইনমেন্ট। এম আই রাইট?”

আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো। কি থেকে যে কি হলো আমি নিজেই তো ঠিক করে বুঝতে পারিনি!

—-” হেহে হ্যাঁ হ্যাঁ!”

রাই আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—-” আসলেই?”

আরফান ভাই বললেন,

—-” আম ইমপ্রেসড নিধি!”

—-” থ্যাংক্যু ভাইয়া।”

—-” ফর এসাইনমেন্ট আমি তোমাকে ছোট্ট একটা ট্রিট দিতে চাই নিধি! তুমি কি আসবে আমার সাথে?”

আমি উনার কথায় হোঁচট খেলাম। এবার মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।

—-” আর তাছাড়া তোমার কিন্তু কথা ছিলো আমাকে রেঁধে খাওয়ানোর? মনে আছে তো?”

আরফান ভাই আবারও বলে উঠলেন। আমি রাইয়ের দিকে অসহায় চোখে তাকাতেই রাই বলে উঠলো,

—-” আপনি তো ভারি সেলফিশ মানুষ ভাইয়া। আমার সামনে থেকে আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রিট দিচ্ছেন, অথচ আমায় একবারও বলছেন না?”

আরফান ভাই ছোট্ট করে হাসলেন। লজ্জিত কন্ঠে বললেন,

—-” ভেরি সরি রাই। চলো তোমার ফ্রেন্ডের সাথে আজ তোমাকেও ট্রিট দিবো।”

এই হলো বেস্ট ফ্রেন্ড। যেখানে উদ্ধার করতে গিয়ে বাঁশ-ই বেশি দিতে প্রস্তুত। কোথায় ভাবলাম মগারাম এই যাওয়া থেকে আমায় কোনো মতে আঁটকে দিবে তা-না উল্টো আরও ফাঁসিয়ে দিলো। এই কান্ড যদি রাহিয়ান ভাইয়া কোনো মতেও জানতে পারে তো জানিনা ঠিক কি কি হবে! সেদিন গার্ডেনে উনার সাথে কথা বলার সময় মনে নেই কিভাবে টানতে টানতে আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন? আর তারপর!! উফফ! আর ভাবা যাচ্ছে না! কি করে আঁটকাই এই বিপদ?

—-” বলছিলাম কি ভাইয়া…”

—-” তুই আর কোনো কথা বলিস না! চলতো চল?”

কথার মাঝখানে বা-হাত ঢুকিয়ে দিয়েই কথা থামিয়ে দিলো রাই। আরফান ভাইও আমোদিত গলায় বলে উঠলো,

—” ‘Popular Foods’ এ যাবে? বেশ নাম করা এবং খুব ভালো সার্ভিস দেয় ওরা!”

রাই আমোদে লাফিয়ে উঠে বলল,

—-” হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন!”

৪৪.

রেস্টুরেন্টের থাই ঠেলে ভেতরে পা রাখার আগেই শূন্যে ভেসে উঠলাম আমি। ভয়ে থরথরিয়ে কেঁপে উঠতেই আবারও পায়ের নীচে যেন জমিন খুঁজে পেলাম! ভয়টা আরও কিছুটা জাঁতা দিয়ে ধরলো। ভয়ের দরুন বন্ধ করা চোখ দুটো পিটপিট করে খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলাম। না, আমার সামনে তো কোনো ভূত নয়! তবে ভূতের চেয়েও কম নয়! স্বয়ং রাহিয়ান রাফিদ। ঠিকই মাঠে গোল দেওয়ার পূর্বে হাজির হয়ে গেলেন। কি টাইমিং ইয়ার! এই পা রাখতে যাচ্ছিলাম আর উনি এই এসে হাজিরও হয়ে গেলেন। পেছন থেকে আরফান ভাইয়ার কিছুটা ভয়মিশ্রিত আওয়াজ পাওয়া গেলো,

—-” দোস্ত? তুই না বাসায় ফিরে গেলি?”

রাহিয়ান ভাইয়ার কোনো জবাব নেই। উনি লাল চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আর আমার অসহায় হাতটা তার হাতের ভাজে বন্ধি! চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

রাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে রাহিয়ান ভাইয়ার উদ্দেশ্য আমতাআমতা করে বলল,

—-” রাফিদ ভাই আপনিও আমাদের সাথে জয়েন করুন না? আমাদের খুব ভালো লাগবে! আরফান ভাই বলুন না আপনি?”

আরফান ভাই গলা খাঁকারি দিলেন। বার কয়েক ঢোকও গিললেন। অতঃপর আমতাআমতা করে বললেন,

—-” হ্যাঁ রে রাফিদ। তুইও জয়েন কর আমাদের সাথে।”

—-” আমি বা নিধি কেউই তোদের সাথে জয়েন করছিনা আবির।”

গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে উঠলো৷ মস্তিষ্ক শীতল হয়ে যাচ্ছে ক্রমশই।

—-” বাড়িতে কেউ নেই। আমাদের সবাইকে রিম্মির শশুর-শাশুড়ী ইনভাইট করেছেন তাদের বাড়িতে। তাই সবাই আগে মেঝ-মনির বাড়িতে গিয়েছে। ওখান থেকেই রেডি হয়ে সেখানে সবাই একসাথে যাবো। আমাদেরও তাই মেঝ-মনির বাড়িতে যেতে বলেছে মা। কারন বাকিরা আমাদের জন্য ওখানেই ওয়েট করবে। বেশি লেট যেন না হয় তাও বলে দিয়েছে। তাই নিধি আর আমি সেখানেই যাচ্ছি। তোরা ইনজয় কর। পারলে রূপ আর বাকি সবাইকেও ডেকে নিস।”

একটুকু বলেই আমার হাত ধরে হাঁটা ধরলেন রাহিয়ান ভাইয়া। আমার মনের মধ্যে কাল বৈশাখী ঝড় উঠেছে। না জানি সামনে কি শনি নাচছে আমার ফুটা কপালে।

#চলবে_______________