প্রেয়সী পর্ব-৩৭

0
1763

#প্রেয়সী 🧡🥀
#moumita_mehra
#পর্বঃ৩৭

৭২.

—-” বাবা-মা তো আমাকে ছেড়ে গিয়েছে! আপনি কি করে বুঝবেন আমার কষ্টটা? আপনি তো দয়াশীল মানুষ! বিয়ে করে আমাকে দয়া করেছেন! কষ্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন! এখন বুঝতে পারছেন তো কতটা ভালো রাখতে পারবেন আমায়?”

আরফান ভাইয়া আহত নয়নে তাকালেন রাইয়ের দিকে। জড়ানো গলায় বললেন,

—-” এভাবে কেন ভাবছ তুমি? আমি তোমার উপর কোনো প্রকার দয়া করিনি রাই! রূপ,অরিন যা করেছে তার জন্য আমরা প্রত্যেকেই ভীষণ আপসেট! আর তাছাড়া তুমি ভাবো না তুমি যে এখনও রূপের কাছে ফিরতে চাও সেটা কি ঠিক? রূপ তো বিয়ে করে ফেলেছে। সামান্য ভরসা টুকুও দেখাতে পারেনি তোমার প্রতি! সেই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তুমি নিজেকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছো প্রতিনিয়ত! আমি সেটা মেনে নিতে পারছিলাম না রাই! আর তাই আমি তোমায় বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই! বিলিভ মি রাই, আমি সবটা ঠিক করে দিবো!”

রাই চোখের জল মুছে কঠিনস্বরে বলল,

—-” বললেই কি সবটা ঠিক হয়ে যায়? আপনিও যে আপনার ফ্রেন্ডদের মতো আমার সাথে ছলনাবাজি করবেননা তার কি নিশ্চয়তা আছে?”

—-” প্লিজ রাই! একটু ভরসা রাখো আমার প্রতি! আমি কথা দিচ্ছি…”

রাই হাত তুলে থামিয়ে দিলো আরফান ভাইকে।

—-” আপনি প্লিজ আমায় একটু একা ছেড়ে দিন! আমি সহ্য করতে পারছিনা আপনাকে!”

আরফান ভাই ঢোক গিললেন। রাইকে তার আরও কিছু বলার থাকলেও সাহস জুগিয়ে বলতে পারলেননা কিছুই। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে মনে হতেই আমি পর্দা ঠেলে ওদের রুমে প্রবেশ করলাম। আমাকে হঠাৎ দেখতে পাবেন বলে হয়তো আরফান ভাই প্রস্তুত ছিলেন না। নিজের অসহায়ত্ব মুখটা আমার থেকে আড়াল করতেই জোরপূর্বক হেসে বলে উঠলেন,

—-” আরে নিধি তুমি!”

আরফান ভাইয়ের মুখে আমার নাম শুনতেই রাইয়ের টনক নড়ল যেন। আরফান ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়েই ছিলো ও। হঠাৎ তড়িঘড়ি করে সেও মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানল। থমথমে স্বরটা পরিস্কার করতেই গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো রাই,

—-” নিধু। গ..গুড মর্নিং বেব।”

দু’জনেই চমৎকার ভাবে নিজেদের ভোল পাল্টে ফেলল। কিন্তু আমি পারলাম না! ওদের কথা গুলো না চাইতেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শোনা যদিও বা আমার অপরাধ হয়েছে কিন্তু রাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার খাতিরে ওর জীবনের সমস্যা গুলো অনেকাংশে আমার সমস্যার মধ্যেই পড়ে। তাই সেগুলো ঠিক করে দেওয়াও আমার দায়িত্বের বাইরে নয়! আমি অপরাধী চোখে দু’জনের দিকেই তাকালাম। থমথম কন্ঠেই বললাম,

—-” আমায় ক্ষমা করবেন আরফান ভাই! আমি ইচ্ছে করে আপনাদের কথা গুলো শুনতে চায়নি! কিন্তু চেয়েও যেন দরজার ওপাশ থেকে চলে যেতে পারেনি! দরজাটাও খোলা ছিল তাই সবটাই বাইরে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো! পরিস্থিতিটাই এমন যে পারমিশন না নিয়েই ঢুকে পড়লাম! তার জন্য প্রথমেই সরি বলে নিচ্ছি!”

আমার কথায় যেন দু’জনেই চমকে উঠলো! রাই শুঁকনো হাসি দিয়ে আঁড়চোখে একবার আরফান ভাইকে দেখে নিয়ে বলল,

—-” আরে ধুর! কি যে বলিসনা তুই? আমাদের ঘরে আসবি তাতে আবার এতো ফর্মালিটি দেখাতে হবে কেন?”

আরফান ভাইও রাইয়ের কথার রেশ টেনে বলল,

—-” হ..হ্যাঁ তাই তো। আর দরজা যেহেতু খোলাই ছিলো সেহেতু পারমিশন আবার কেন নিতে হবে?”

বুঝলাম দু’জনেই অতি ফর্মালিটি মেইনটেইন করার চেষ্টা করছে। তারা যে নিজেদের প্রবলেম আমায় দেখাতে ইতস্ততবোধ করছে সেটুকু ঠিক বুঝে নিলাম। তাই আমিই কথা তুললাম তাদের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে! জানি ঠিক নয় কিন্তু, দু’জনকেই যে নর্মাল হতে হবে।

—-” দেখ রাই, আরফান ভাই যে তোর প্রতি দয়াশীল হয়ে তোকে বিয়ে করেছে তেমনটা কিন্তু নয়! সে তার বন্ধুর কর্মকান্ডে খুবই লজ্জিত আর তাদের সবার মাঝেই কিছু অপরাধবোধ ছিলো বিধায় সে তোকে তোর কষ্টগুলো থেকে বের করে আনতে সাহায্য করতে চেয়েছে। তুই রূপ ভাইয়াকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছিস তা হয় আমার থেকে তুই-ই বেটার জানিস! আর সেই ভালোবাসার দহনে পুড়তে পুড়তে তুই নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস আর এই মানুষ গুলোকেও কষ্ট দিচ্ছিস! রূপ ভাইয়া যে কাজ করেছে তাতে তোর কোনো দোষ নেই আর বাকিদেরও কোনো দোষ নেই! সে মানুষটাই এমন ছিলো যে বাইরের লোকের কথায় ভালোবাসার মানুষটাকে দোষী করে চলে গিয়েছে! অথচ যেখানে তোর কোনো ভুলই ছিলো না! ভুল রূপ ভাইয়া করেছে কিন্তু শাস্তি তুই পাচ্ছিস! কেন বলতো? ভালোবেসেছিস বলে সব অন্যায় মেনে নিয়ে চুপসে থাকতে হবে? এটা কি সত্যিই তোর ব্যাক্তিত্বের সাথে যায় বল? ক্ষমা তো রূপ ভাইয়ার তোর কাছে চাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু উল্টে তুই বারবার উনাকে কল করে অনবরত ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছিস! নিজেকে এতোটা ব্যাক্তিত্বহীন কবে থেকে ভাবা শুরু করলি বলতো? আর যে মানুষটা তোকে এই খাদ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে তুই তাকেই পাল্টা আঘাত করছিস? এমন বোকা কবে থেকে হলি রাই? ঠিক ভুলের বিচার করাটাও কি ভুলে গেলি?”

রাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরফান ভাইয়ের দিকে তাকালো। আরফান ভাই মাথা নীচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো উনার রাইকে বোঝানোর মতো আর কিছু নেই!

আমি আবারও বলে উঠলাম,

—-” ভুল মানুষটাকে ভুলে গিয়ে, ঠিক মানুষটাকে আগলে রাখ রাই! আর যদি বলিস আন্টি আর আঙ্কেলের তোর প্রতি ঘৃনা বা আক্রোশের কারন আরফান ভাই তাহলেও তুই ভুল!”

—-” মা আমাদের এই বিয়ে কখনই মেনে নিবেনা নিধু! তুই মাকে খুব ভালো করেই জানিস! আমাদের এই বিয়েটা না হলে মা আজ কখনই আমার সাথে সম্পর্ক না রাখার কথা বলতে পারতনা!”

—-” তুই ভুল ভাবছিস রাই! আন্টি এই বিয়ের জন্য তোকে ভুল বুঝেনি বা আরফান ভাইয়ের জন্যও তোর সাথে সম্পর্ক ভাঙার কথা বলেনি! বলেছে এই সমাজের জন্য! সমাজটা এমনই এক জিনিস যেখানে ভালোর দাম তুই কখনই পাবিনা! ভালো কাজে তোকে কখনও কেউ সাবাসি দিবেনা বা উৎসাহ দিয়ে বলবেনা ‘বাহ্ তুমি কাজটা বেশ করেছ’! সমাজ তখনই তোর দিকে ফিরে তাকাবে যখন তুই সমাজের বিরুদ্ধে কিছু করবি! রাই, সমাজকে ভেবে কখনও কিছু করা উচিৎ নয়! কেননা, তুই সমাজের জন্য মরলেও সমাজ কখনও তোর জন্য ভালো কিছু রাখবেনা! সর্বদা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তোর মনটা আরও বিষিয়ে দিবে। ভেবে দেখ তো রাই, আন্টি তোকে দু’চার কথা শোনালেও আঙ্কেল কি তোকে এমন কিছু বলেছে? বলেনি! বলেনি কারন আঙ্কেল সমাজের ধার ধারেনা! সে এই নিকৃষ্ট সমাজ থেকে অনেকটা ব্যবধানে বাস করে আর তোকেও কিন্তু সেভাবেই মানুষ করেছে রাই। একদিন দেখবি আন্টিও নিজের থেকে এসে তোকে আবারও বুকে আগলে নিবে! যেদিন দেখবে এই সমাজ তাকে কিছু দিচ্ছে না কেবল কেড়েই নিচ্ছে! যেদিন এই সমাজের আসল রূপটা আন্টির কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে সেদিন থেকে আন্টিও আর সমাজের ধার ধারবেনা! সেও মেয়েকে আপন করে নেওয়ার জন্য ছুটে আসবে। মানুষের জীবনে সবসময় ভালো সময় থাকেনা! ভালো-মন্দ মিশিয়েই তো জীবন বল! তাই জন্য ভালো সময়টাকে প্রশংসা করব আর খারাপ সময়টাকে নিন্দা করব সেটা তো হতে পারেনা তাই না? বেঁচে থাকতে হলে ভালো-মন্দ দুটোকেই সমান ভাবে আপন করে নিতে হবে আর ইনজয় করতে হবে। এই যে মানুষটা তোকে বিয়ে করেছে না? আমি কিন্তু বড় মুখ করে তোকে কথা দিতে পারি সে কখনও তোর এই প্রতিকূল পরিবেশে তোকে কখনও একলা ছাড়বেনা রে। সবসময় শক্ত করে তোর এই হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে আঁটকে রাখবে! কেন বলতো? দয়া করে? উঁহু… নতুন করে ভালোবাসার মানে শিখিয়ে ভালোবেসে আগলে রাখতে চায় তোকে! তুই এভাবে ভুল বুঝে মানুষটালে হেলাফেলা করিসনা যেন! তুইও তাকে ভালোবেসে মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলতো দেখি। দেখবি জীবনটা এভাবেই কত সুন্দর।”

আরফান ভাই পেছন থেকে ধীরপায়ে এগিয়ে এলো আমার সামনে। তার চোখ জোড়া কৃতজ্ঞতায় চিকচিক করছে। হাত গুটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। আমি মৃদু হেসে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—-” তোর এই হিরোর জন্য কিন্তু ভার্সিটির অর্ধেক মেয়ে শুধু হা-হুতাশ করে! অর্ধেক উনার জন্য আর অর্ধেক আমার উনার জন্য।”

চোখে জল নিয়েই ফিক করে হেসে ফেললো রাই। আমি মুগ্ধ নয়নে মেয়েটার হাসিতে ঝলমল করা মুখখানা দেখতে লাগলাম। পাশ থেকে আরফান মৃদুস্বরে বলে উঠলেন,

—-” থ্যাংক্যু নিধি! আমাদের ব্যাক্তিগত সমস্যা তোমার ব্যাক্তিগত সমস্যা ভাবার জন্য! বিশ্বাস করো তুমি যেভাবে রাইকে বোঝালে না সেভাবে হয়তো আমি নিজেও কখনও বেঝাতে পারতাম না! কখনও রাগ আর কখনও অভিমান বুকে চেপেই সরে আসতাম ওর সামনে থেকে! ওকে বেঝাতে গিয়েও ওর কষ্ট হবে ভেবে চুপ করে যেতাম। কিন্তু তুমি পারলে! তুমি সত্যিই প্রমান করে দিলে ইউ আর দ্য বেস্ট নিধি।”

আমি মুচকি হাসলাম। রাইকে আগলে ধরে বললাম,

—-” এই পাগলিটা তো আমার কলিজা আরফান ভাই। আর আমার কলিজাটা এভাবে কষ্ট পাবে আর আমি চুপ করে সইবো তা কি করে হয়? ওকে তো আমার এসব কথা বলতেই হতো।”

রাই চোখের জল মুছতে মুছতে আরফান ভাইয়ের দিকে তাকালো। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,

—-” আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন! আমি না বুঝে আপনাকে অনেক বেশি হার্ট করে ফেলেছি। আসলে…”

রাইকে থামিয়ে দিয়ে মাঝপথেই বলে উঠলেন আরফান ভাই,

—-” এভাবে ক্ষমা চেয়ে আমার মনের ক্ষতটা আর বাড়িয়ে দিও না প্লিজ। আমি এমনিতেই তোমায় খুব বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি! তোমার অমতে আমি তোমায় বিয়ে করে তোমার বাবা-মাকে তোমার থেকে দূরে করে দিয়েছি! এই অপরাধবোধেই যে আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো।”

রাই আমাকে পাশ কাটিয়েই আরফান ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলো। তার হাত ধরে অসহায় ঘেরা কন্ঠে বলে উঠলো,

—-” মাথায় উল্টা পাল্টা ঘুরছিলো বলেই তো আপনাকে ওসব কথা বলে ফেলেছি! এখন আপনিও যদি ওটাকেই আমার মনের কথা ধরে নেন তখন যে আমার নিজকেই সব থেকে বেশি অপরাধী লাগবে।”

আরফান ভাই কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো রাইয়ের দিকে। এখন মন দেওয়া নেওয়ার পালা চলবে। সেখানে আমি কি করে থাকতে পারি? আমি তাদের আড়ালেই রুম থেকে প্রস্থান করলাম। সবশেষে শান্তির এটাই যে, ওদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিটা তো মিটল। এখন শুধু রাইয়ের মাকে মানানো বাকি। চিন্তা নেই, সময়ের ফেরে পরে সে নিজেও বুঝবে মেয়ের শূন্যতা। আর দিনশেষে সেও মেয়েকে আপন করে নিতে সমাজের কটু কথাকে গ্রাহ্য করবে না আর।

৭৩.

বৈঠক হচ্ছে রাহিয়ান আর আমার মাঝে! তাও আবার শাড়ি নিয়ে। বড় খালামনি আর বউমনি মিলে আমাদের বিয়েতে আসা সব গিফ্টবক্স গুলো লিয়ার হাতে আমাদের ঘরে পাঠিয়ে দিলো। সেই সাথে বড় খালামনি আমার শাশুড়ী মা হওয়ার সুবাদে গুনে গুনে ঠিক আটখানা তাঁতের শাড়ি পাঠালো আমার জন্য। মূলত বাসায় পড়ব বলে। এখন সমস্যা টা হলো এখানেই যে গিফ্ট বক্সের বেশিরভাগ গিফ্টই শাড়ি আর শাড়ি। হয় কাজ করা ভারী শাড়ি,নয় সিল্ক,নয় কাতান আর নয় তাঁতের শাড়ি। তাই আমি ভাবলাম শাড়ির সংখ্যাই যখন এতো বেশি তখন অন্যান্য ড্রেস না পড়ে কিছুদিন শাড়িই পড়ি। তাতে নিজের মধ্যে একটা বউ বউ ভাব থাকবে আর আমার শাড়ি পড়ার হাতও পাঁকা হবে। আমার ভাবনাকে অহেতুক ভেবেই রেগে গেলেন রাহিয়ান। সব ড্রেস রেখে কেন শুধু শাড়িই পড়তে হবে? শাড়ি পড়লে নাকি আমাকে পেত্নীর মতো লাগে! আর পেত্নীদের নাকি শাড়ি পড়তে মানা! ব্যস, আমার ক্ষেপে যাওয়ার জন্য উনার এইটুকু মন্তব্যই বহুদূর কাজ করল। আমিও জেদ দেখিয়ে বললাম,

—-” যদি কোনো ড্রেস আমাকে পড়তেই হয় তা হবে অলনি শাড়ি। আদারস কোনো ড্রেস নয়!”

উনি আরও রেগে গেলেন। বিছানা থেকে সমস্ত শাড়ি তুলে নিয়ে আলমারির এক কোনে ফেলে রেখে লক করে দিলেন আলমারি। আমি কোমরে হাত চেপে উনার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া দিতে রেডি হয়ে গেলাম। উনি চাবিটা আঙ্গুলের মাথায় পেঁচাতে পেঁচাতে বললেন,

—-” আমার পারমিশন ছাড়া তুমি কখনও শাড়ি পড়বেনা নিধি!”

আমি রাগে ফুঁসে উঠে বললাম,

—-” আমি শুধু শাড়িই পড়ব। কারন শাড়ি আমার খুব পছন্দের। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আলমারিতে শাড়ি ছাড়া আমার যে বাকি ড্রেসগুলো আছে আমি সব গুলো লিয়াকে আর রানিকে দিয়ে দিব!”

উনি তেড়ে এলেন আমার দিকে। কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,

—-” আমি যখন বলেছি তুমি শাড়ি পড়বেনা সো পড়বেনা। নো মিনস নো!”

আমি থতমত খেয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলাম। কাচুমাচু করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বললাম,

—-” এমন কেন করছেন? খালামনি নিজেই তো বলল শাড়ি পড়ার কথা! আর গিফ্টগুলোও তো দেখলেন বেশিরভাগই শাড়ি। তাই ভাবলাম সব শাড়ি গুলো এভাবে ফেলে রাখলে অযত্ন হবে আর পড়লে তারও যত্ন হবে আর আমারও শাড়ি পড়ার হাত পাঁকা হবে।”

—-” মা বললেও পড়তে হবেনা তোমাকে! বাড়িতে বাইরের লোকের অভাব নেই। আর আমি চাইনা কোনো বাইরের লোক আমার বউকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখুক! শুধু এই রুমের ভেতরে থেকে শাড়ি পড়বে। এই রুমের বাইরে শাড়ি পড়ে পা রাখলে আমি তোমার পা কেটে ফেলবো বলে রাখলাম।”

আমি আঁতকে উঠে উনার দিকে তাকালাম! অসহায় মুখ করে বললাম,

—-” আ,,আপনি এমন কেন করছেন সত্যি করে বলুন তো? কিছু হয়েছে?”

উনি সরে গেলেন আমার সামনে থেকে। ফুস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললেন,

—-” শাড়ি পড়া আগে শিখো তারপর বাইরে আসবে।”

—-” আমি শাড়ি পড়া জানি!”

—-” জানলে পেটের একটা পাশ পুরোটাই কেন বের হয়ে থাকবে?”

আমি আবারও আঁতকে উঠে নিজের দিকে তাকালাম! এখনও পেটের একটা পাশ অনেকাংশে বেরিয়ে আছে! ছিহ্! কি লজ্জা কি লজ্জা!

উনি আবারও কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,

—-” আর যখন তোমার শাড়ি এখান থেকে একটু, ওখান থেকে একটু সরে যায় তখন তোমার নিজের দিকে কোনো খেয়ালই থাকেনা! ইডিয়ট মেয়ে!”

আমি ভড়কে গিয়ে তাকালাম! উনি আমায় ইডিয়ট বললেন! এতবড় অপবাদ! শাড়ি পড়লে তো একটু অসাবধানতা বশত সরে যেতেই পারে! তার জন্য এমন রিয়াক্ট করার কি আছে?

—-” আমি কি ইচ্ছে করে সরাই নাকি?”

আমার প্রশ্নে উনি ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন। কপালের রগ ফুলিয়ে বললেন,

—-” তুমি আমার সামনে ইচ্ছে করে সরালেও সমস্যা নেই কিন্তু বাইরের লোকের সামনে অসাবধানতা বশত সরে গেলেও আমার প্রচুর সমস্যা হয়। রাগ হয় খুব। ইচ্ছে করে সবার সামনেই তোমায় ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দেই!”

আমি ঠোঁট উল্টে তাকালাম। উনি যেভাবে রেগে যাচ্ছেন যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পেছনে এই অসহায় আমিই দায়ী! ধূর বাবা ভাল্লাগে না।

#চলবে____________________