#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৩
_________আবিদের মায়ের কথা শেষ হতে মুনের বিকট কান্নার আওয়াজ পেয়ে চমকে ওঠে তখনি আবিদ আর মনিরা বেগম ছুটে যায় মুনদের ঘরে ৷ মুনদের ঘরে এসে আবিদ দেখতে পায় মুন ফ্লোরে বসে হাত ধরে বসে আছে আবিদ মুনের বাম হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুনের হাত অনেকটা কেটে গেছে ৷ আবিদ পকেট থেকে রুমাল বের করে মুনের কাটা হাতে চেপে ধরে ৷ মনিরা বেগম মুনের কাটা রক্ত মাখা হাত দেখে আগুন দৃষ্টিতে আলিয়া বেগমের দিকে বলতে লাগলো” আপনি কি মানুষ আপা , এভাবে এই ছোট্ট মেয়েটাকে আঘাত কি করে করতে পারলেন আপনি?””
আলিয়া বেগম আবিদের মায়ের কথা অপেক্ষা করে রাগে ফোস ফোস করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ আলিয়ার এমন ব্যবহার দেখে মনে মনে ভিষন ক্ষুব্ধ হয় মনিরা বেগম ৷
“” আবিদ মুনের হাত টা ব্যান্ডেজ করে দে””
“” জ্বি আম্মু””
মুন অবাক হয়ে আবিদের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ মুন এ বাড়িতে ভাড়া আসার পর অনেক বার দেখেছিলো আবিদ কে কিন্তু আবিদ কখনো দেখেনি মুন কে কারন মুন আবিদ বা তাদের ভাইদের দেখলে ঘড় থেকে বের হতো না কারন কখন আলিয়া বেগম , বাইরের মানুষের সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে দিতে পারে ৷ এই ভয়ে সব সময় আড়ালে থাকার চেষ্টা করেছে মুন ৷
আবিদের মুখ থম থমে হয়ে আছে ৷ মুনের উপর এমন নির্যাতন হতে দেখে আবিদের ভিষন রাগ সাথে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আবিদ নিরপায় মুনের হয়ে কথা বলার কোন অধিকার আবিদের নেই আর যদি বলেও তাহলে এর এর ঝাল যে মুনের উপর থেকে এটা আবিদ খুব ভালো করে জানে৷
___________ সূর্যের কিরন মুখে পড়তে মুন তার অতিতের ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে ৷ সূর্যের কিরন যেন মুহূর্তে সব অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করছে৷ মুন ভাবছে যদি সত্যি এমন টা হতো তার অন্ধকারময় জীবনটা সূর্যের কিরনে আলোকিত হয়ে উঠবে৷
মুন শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে দেয়াল ধরে উঠে রুমে ঢুকে দেখে রিদ একাই বিছানায় ঘুমিয়ে আছে ৷ মুন কাপড় পাল্টে রান্না ঘরে এসে ঝট পট রুটি বানিয়ে সেঁকে নিয়ে আলু ভাজি , ডিম পোচ , করে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে নিয়ে পুরো ঘড় পরিষ্কার করতে লাগলো ৷ সকাল আট টা নাগাত মুন সব কাজ শেষ করে সোফায় বসতে রিয়ানা বেগম দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে মুন সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ৷ রিয়ানা বেগমের যেন মুনের এই শান্তি সহ্য হচ্ছে না ৷ তিনি রান্না ঘড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে নিয়ে মুনের গায় পুরো ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয় ৷ ঠিক মতো ঘুম না হওয়ায় মুন ক্লান্তিতে সোফায় বসে ঘুমের মতো পরতে-ই শরীলে ঠান্ডা কিছু অনুভব করে মুনের ঘুম ভেঙে যায় ৷ ধরফরিয়ে ওঠে মুন ঠান্ডায় দাঁতের সাথে দাঁত লেগে যাচ্ছে ৷ তাকিয়ে দেখে রিয়ানা বেগম রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে….
“” কি রে নবাবজাদীর বেটি এখানে পরে পরে ঘুমাচ্ছিস হ্যা “”
এমনিতে শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা তার উপর আবার ঠান্ডা পানি পরেছে ৷ মুনের মনে হচ্ছে এখুনি অজ্ঞান হয়ে যাবে ৷ মুন কে কিছু বলতে না দেখে রিয়ানা বেগম যেন আরো তেতে উঠলো গতকাল ঘটে যাওয়ার কান্ডের রাগ আজ যেন বিষ্পরনের মতো কাজ করো রিয়ানা বেগমের উপর , মুন কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলতে লাগলো ” কাল শ্বশুর কে দিয়ে অনেক কথা শুনিয়েছিস কিন্তু তোকে বাচাঁবে কে ?”” কথাটা বলেই শয়তানি হাসি দিলো রিয়ানা বেগম .. রিয়ানা বেগমের মুখে হাসি দেখে বুজতে পারলো আজও তার কপালে অসেস দুঃখ আছে ৷
রিয়ানা বেগম গট গট করে নিজের রুমে চলে যেতে মুন উঠে কাপড় পাল্টাতে চলে যায় ৷ মুনের কেন যেন খুব ঠান্ডা লাগছে ৷ মুন বুজতে পারছে তার জ্বর আসছে ৷ মুন রুমে গিয়ে কোন রকম ভেজা কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় পরে নেয় ৷
কিছুক্ষন পর দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ন্তি ৷ প্রিয়ন্তি কে দেখে মুনের যেন সারা শরীল আবার গুলিয়ে আসছে ৷ মুন দ্রুত ওয়ারুমে ঢুকে যায় ৷ বমি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এসে দেখে রিদ প্রিয়ন্তির ওষ্ঠাধয়ে ঠোট ডুবিয়ে আছে ৷ এখানে যে মুন নামের কোন প্রানী আছে এটা দুজনের কেউ নজর দিচ্ছে না বরং নিজেদের কাজ নিজেরা করছে ৷
মুন সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো ৷ মুনের চিৎকার শুনে প্রিয়ন্তি কে ছেড়ে দিয়ে মুনের দিকে তেরে এসে মুনের গলা চেপে ধরে বলে…..
“” মা* মাইয়া তোর এতো বড় সাহস আমার সামনে তুই গলা তুলে কথা কস আজ তোর সব তৈল আমি মারমু প্রিয়ন্তি বেবি তুমি এখন দরজা টা বাইরে থেকে আটকে নিজের রুমে যাও তো “”
“” ওকে রিদ ভাইয়া “” প্রিয়ন্তি রিদের কথা মতো রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয় ৷ রিদ এতোক্ষন মুনের গলা হালকা করে চেপে ধরলে ও এবার বেশ শক্ত করে চেপে ধরে মুন দম নিতে না পেরে ছটপট করতে লাগলো আর রিদের ঠোটের কোনে পৌশাচিক হাসি যেন আজ এই মুন নামের অভিশাপ তার জীবন থেকে সে তারাবে ৷ কিন্তু তার আগে-ই মুন রিদ কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ৷ কাশতে থাকে মুন ৷ এদিকে রিদ কে এভাবে ধাক্কা দেওয়ায় রিদ ভিষন রেগে যায় কিন্তু পরক্ষনে মুনের চোখ মুখের অবস্তা দেখে রিদ ভিষন ভয় পেয়ে যায় ৷ মুন কে ধরে বিছানায় বসিয়ে গ্লাসে পানি নিয়ে মুনের মুখের সামনে ধরে ৷ মুন পানি দেখে দ্রুত পানি খেয়ে নেয় ৷ কিছুক্ষন পর মুন স্বাভাবিক হলে রিদ মুন কে বিছানার সাথে দু-হাত চেপে ধরে বলতে লাগলো” তোকে আমি প্রথম দিন বলেছি আমার থেকে দুরে থাকবি ৷ আমি তোকে বউ হিসেবে মানি না যতোদিন না তোর মা আমাকে দশ লাখ টাকা দিচ্ছে ৷ আর একটা কথা কখনো আমার আর প্রিয়ন্তির মাঝে আসার চেষ্টা করবি না কারন আমি প্রিয়ন্তি কে ভালোবাসি সেই ছোট্ট বেলা থেকে আর বাবা তোকে জোর করে আমার কাধে গছিয়ে দিছে ৷””
মুন সাথে সাথে বলে উঠলো “” তুমি কেন মেনে নিয়ে তখন পালিয়ে যেতে তাহলে এই নরকে পরে পঁচতে হতো না “”
রিদ দাঁতে দাঁত চেপে আবার বলে উঠলো ” কি ভেবেছিলে আমি পালাতে চাইনি চেয়েছি ৷ আর পালিয়েও ছিলাম কিন্তু বাবার লোকেরা আমাকে খোজে পেয়ে যায় আর বাবার কাছে নিয়ে আসে , বাবা সে দিন কঠিন গলায় বলেছিলো আমি যদি তোকে বিয়ে না করি তাহলে আমাকে তার সম্পত্তি থেকে এক কানা কড়ি ও দিবে না বরং তাজ্য করে দিবে তাই বাধ্য হয়ে তোর মতো কালি কে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি ৷””
মুন এতো দিনে জানতে পারলো ওকে বিয়ে করার আসল কারন তাজ্য হওয়া আর সম্পত্তি পাওয়ার লোভে পরে ওকে বিয়ে করেছে ৷ মুনের যেন কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে কিন্তু আফসোস এই কষ্টের ভাগ কাউকে ও দিতে পারবে না ৷ নিজের ভিতরে ঘুমরে ঘুমরে মরতে হবে ওকে ৷ রিদ মুনের কোন রেন্সপন্স না পেয়ে মুনের হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে “” তোকে তো আমার জীবন থেকে যেতেই হবে মুন সেটা হোক আজ বা কাল “”
মুন হাতের ব্যাথায় কুকড়ে উঠছে কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে কেঁদে যাচ্ছে ৷ রিদ আরো কিছু বলতে যাবে তখন বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেতে রিদ মুন কে ছেড়ে দিয়ে সরে যায় তখনি রিয়ানা বেগম ঘরে প্রবেশ করে …..
“” বাবু তুই ঘুম থেকে উঠে গেছিস””
“” হ্যা মা উঠে গেছি কিন্তু তুমি এখন এখানে?””
“” এসেছি আর সাথে এই ন* ঝি কে একটু শিক্ষা দিতে এসেছি ৷ কাল তোর বাপ এই মাইয়ার জন্য আমারে থাপ্পড় মারছে যতোক্ষন না এই থাপ্পড়ের শোধ নিতে পারছি ততোক্ষন আমার শান্তি নাই ৷” প্রচন্ড রেগে বললো রিয়ানা বেগম
“” তাহলে তো আমি তোমাকে তোমার প্রতিশোধ নিতে হেল্প করতে পারি মা””
“” না বাবু তুই নাস্তা করে অফিসে যা একে তো আমি দেখে নিচ্ছি আর ভালো কথা প্রিয়ন্তি কিছু কেনা কাটা করতে যাবে তুই বিকেলে ফিরে ওকে নিয়ে মার্কেটে যাবি “”
“” ঠিক আছে মা আজ তো আমার হাফ ডে আমি বিকেলে ফিরে আসবো “”
“” আচ্ছা বাবু আর তুই আমার সাথে আয় বাবুর বাপ ও বাসায় নেই তার কাজে সে চলে গেছে এখন তোকে কে আমার হাত থেকে বাচাঁয় আমিও দেখবো “” কথা গুলো বলে মুনের বাহু শক্ত করে ধরে টেনে হিচরে ড্রইংরুমে নিয়ে যায়৷
মুন ব্যাথায় কুকড়ে উঠছে কারন এখনো রিয়ানা বেগম মুনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আছে৷
” ওই বান্দির ঝি আমার গায়ে হাত তোলার শাস্তি তোকে তো পেতেই হবে ৷””
কথাটা বলে রিয়ানা বেগম মুনের হাত ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে কাড়ি কাড়ি কাপড় ড্রইং রুমে এনে ফ্রিজ থেকে টমেটো কেচাপ বের করে পরিষ্কার কাপড়ে ঢেলে দেয় ৷ আর ফ্রিজে রাখা বাসি তরকারি এনে কাপরে ঢেলে দিলো ৷ মুন হ্যা করে দারিয়ে তার শাশুড়ীর কান্ড দেখছে তবে মটেও অবাক হয়নি মুন কার গত এক বছর ধরে এমন ঘটনা দুদিন পর পর হতো তবে সেই সব দিনের থেকে আজ কাপরের সংখ্যা অনেক বেশি ৷ তার উপর গতকাল থেকে পেটে দানা পানি কিচ্ছু না পড়ায় মুনের শরীল যেন ভেঙে পড়ছে ৷ মুন ভেবে পাচ্ছে না এতো গুলো কাপড় আজ কি করে ধবে এর মাঝে রিদ অফিসের ড্রেস পরে রেডি হয়ে এসে মুনের উদ্দেশ্য বলে “” এই মেয়ে আমাকে নাস্তা দেও আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে “”
মুন ধির পায়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে রিদের প্লেটে রুটি আলু ভাজি আর ডিম পোচ টা দিয়ে সরে আসতে নিলে হুট করে প্রিয়ন্তি মুনের সামনে এসে দারিয়ে ন্যাকা গলায় মুন কে বলতে লাগলো……
“” ভাবি দেখ না আমার এই ড্রেসটার নোংরা হয়ে গেছে তুমি প্লিজ এটা একটু ধুয়ে দিবে?””
মুনের ইচ্ছে করছে প্রিয়ন্তিকে ঠাটিয়ে এক চর মারতে কিন্তু আফসোস মুন তা আজ করতে পারবে না তাহলে হয়তো আজ ই তার এ বাড়িতে শেষ দিন হবে ৷ মুন না চাইতেও মুখে প্লাস্টিক হাসি এনে প্রিয়ন্তির হাত থেকে ড্রেস টা নিয়ে বলে ” ঠিক আছে প্রিয়ন্তি আমি তোমার জামাটা ধুয়ে দিবো…””
প্রিয়ন্তি মুনের দিকে তাকিয়ে শয়তানির হাসি দিয়ে চলে যায় ৷ প্রিয়ন্তির এ কাজে রিয়ানা বেগম বেশ খুশি হন ৷ মা মরা মেয়ে প্রিয়ন্তি ৷ ছোট বেলা থেকে খুব আদরে মানুষ করে রিয়ানা বেগম দুধে আলতা গায়ের রং , হরিনীর মতো দুটো চোখ লাল টকটকে ঠোট জোরা , মেয়ে টাকে পরীর থকে কোন অংশে কম লাগে না রিয়ানা বেগমের কাছে , রিয়ানা বেগম অনেক আগে থেকে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন প্রিয়ন্তি কে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করে নিজের কাছে রেখে দিবে কিন্তু তার গুনধর স্বামীর জন্য সে আশায় জল ঢেলে কোথেকে চাপা গায়ের রঙের মেয়েটাকে আমার বাবু সোনার জন্য ধরে আনে ৷ সে দিন-ই রিয়ানা বেগম মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে মুন কে যে করে হোক এই বাড়ি থেকে বিদায় করে প্রিয়ন্তি কে ছেলের বউ করবে৷ আর তাই তো মুনের উপর বিয়ের প্রথম দিন থেকে অর্তাচার করা শুরু করে দেয় রিয়ানা বেগম ……
__________ দু ঘন্টার ভিতর মুন কাপড় ধুয়ে রান্না ঘরে দৌড়ে আসে কারন চুলোয় রান্না চাপিয়ে মুন কাপড় ধুতে চলে যায় ৷ কিন্তু রান্না ঘরে এসে দেখে তরকারি খানিকটা লেগে গেছে ৷ তা দেখে মুন ভয় পেয়ে যায় কারন এর আগে এক বার তরকারি পুরে যাওয়ায় রিয়ানা বেগম মুনের হাত গরম তরকারিতে ডুবিয়ে দেয় ৷ সেই কথা ভাবতেই মুনের শরীল যেন ভয়ে কাপতে লাগলো এদিকে সকালে রিয়ানা বেগম মুন কে কিছু খেতে না দিয়ে কাপড় কাঁচতে পাঠিয়ে দেয়৷ কাপড় অর্ধেক কেচে এসে মুন রান্না চরিয়ে আবার কাপড় কাচঁতে চলে যায় কিন্তু দূর্ভাগ্য বসত রান্না টা আজ অনেক টা পুরে গেছে মুন দ্রুত চুলা বন্ধ করে তরকারি টা নামিয়ে নেয় ৷ তখনি বাড়ির কলিং বেল টা বেজে ওঠে মুন দরজা ছুটে যায় দরজা খুলতে , দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে মানুষ টা কে দেখে মুন যেন পাথর হয়ে গেল ………
.
.
.
.
#চলবে………….