নীরব সাক্ষী পর্ব-১০+১১

0
363

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১০
.
.
.
আবিদের মুখে হাসি দেখে সামসু হকের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো ….

অন্যদিকে মুন ছাঁদ থেকে নামতে মনে হলো কেউ পিছুন থেকে ধাক্কা দিলো , মুন ধাক্কা সামলাতে না পেরে টি টেবিলের সাথে পায়ে আঘাত পায় মুন ৷ দাঁতে দাঁত চেপে মুন পিছুনে তাকিয়ে দেখে রিদ তার বত্রিশ পাটি দাঁত বের মুনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ মুনের বুজতে বাকি নেই রিদ তার প্রতিশোধ নিলো ধাক্কা দেওয়া ৷ মুন পায় প্রচন্ড ব্যাথা পাওয়ায় রিদ কে পাত্তা না দিয়ে ধির পায়ে শশুরের রুমের সামনে গিয়ে দারায় ৷ মুন কে রায়হান আহাম্মেদ এর রুমের সামনে যেতে দেখে রিদ ভিত হয়ে পরে , রিদ ভাবে মুন হয়তো তার বাবার কাছে নালিশ করবে কিন্তু রিদের ধারনা ভেঙে দিয়ে মুন তার শশুরের কাছে স্প্রে টা চেয়ে নিয়ে রুমে চলে যায় ৷ মুন তার শশুরের সামনে স্বাভাবিক ভাবে হেটে গেল যাতে বুজতে না পারে ৷ মুন রুমে গিয়ে ব্যাথার জায়গায় স্প্রে করে বিছানায় শুয়ে পরে ৷ প্রচন্ড জ্বলছে পা ৷ রিদ রুমে এসে দেখে মুন বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ৷ রিদ খুব সাবধানে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎ করে মুনের উপর ঝাপিয়ে পরে ৷ আচমকা রিদ মুনের উপর ঝাপিয়ে পরায় মুন হতবম্ব হয়ে যায় যখন বুজতে পারে রিদ তখনি মুন হাত পা ছুড়তে থাকে কিন্তু একজন শক্তিশালী পুরুষের সাথে পেরে ওঠা মুনের মতো দূর্বলচিত্তের মেয়ে কখনো পেরে ওঠে না মুন ও পারে নি ৷ রিদের হিংস্রতার কাছে হার মানতে হলো মুন কে ৷

রিদ তার কাজ শেষ করে ফ্রেস হতে চলে যায় ৷ এদিকে শরীলে অসংখ্য কামড় আর আচরের দাঁগ ৷ ব্যাথায় যন্ত্রনায় গুমরে কাদঁতে থাকে মুন ৷ প্রচন্ড অসহায় লাগছে মুনের ৷ এই নরকযন্ত্রণা থেকে বের হবার জন্য মুনকে এখনো দুটো দিন অপেক্ষা করতে হবে ভেবে আরো কান্না পাচ্ছে ৷
রিদ ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে মুন বিছানায় বসে কাঁদছে ৷ মুনের চোখের পানি দেখে রিদের ঠোটের কোনে বিজয়ের হাসির রেখা ফুটে উঠলো ৷ সে তার অপমানের প্রতিশোধ নিতে পেরেছে ভেবে ৷ রিদ ভিজে তোয়ালে মুনের দিকে ছুড়ে মেরে বলে…”” যাও ফ্রেস হয়ে আসো পাচঁ মিনিটের ভিতর তারপর টেবিলে খাবার সার্ব করবে””

মুন কিছু না বলে পাতলা চাদর গায় পেছিয়ে ফ্লোর থেকে শাড়ি টা তুলে নিয়ে কাবার্ড থেকে সালোয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷ শাওয়ার অন করে ঠান্ডা পানির নিচে দারিয়ে ডুকরে কাঁদছে ৷ এ কান্না কেউ কারোর কান পর্যন্ত পৌছায় না ৷ পাঁচ মিনিটের বদলে পনেরো মিনিট পর মুন ওয়াশরুম থেকে বের হয় ৷ রিদ রুমে ছিলো ৷ তবে এখন আর মুন কে কিছু বললো না মুনের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে ঠোটের কোনে রক্ত বিন্দু দেখা যাচ্ছে ৷ জামার ফুল হাতা থাকায় হাতের অবস্তা বুঝা যাচ্ছে না তবে গলায় কামড় গুলো কিছুটা স্পষ্ট ৷ রিদের এখন কেন যেন গিল্টি ফিল করছে ৷ মুন রিদের দিকে না তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে যায় ৷ টেবিলে খাবার গুলো সাজিয়ে সার্ব করে দেয় ৷ কিছুক্ষন পর মুনের শশুর শাশুড়ী প্রিয়ন্তি আর রিদ হাজির হয় ৷ প্রিয়ন্তি মুনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ প্রিয়ন্তি মুনের ফোলা চোখ মুখ কাটা ঠোট দেখে বুজতে পারলো আজ আবার তার রিদ ভাইয়া মুনের সাথে জানোয়ার এর মতো ব্যবহার করেছে ৷

সবার খাওয়া শেষ হলে যে যার রুমে চলে যায় ৷ মুন না খেয়ে সব খাবার তুলে গুছিয়ে রেখে আবার শশুরের রুমের সামনে গিয়ে নক করে…

“” বাবা আসবো?””

“” এসো বউমা,, কিছু বলবে?””

“” বাবা আপনার ছেলে আর আমার ডিভোর্স টা আগামিকাল যেন হয়ে যায় আপনি একটু তার চেষ্টা করুন দয়াকরে আর এটা যেহেতু ম্যিউচুয়াল ডিভোর্স হচ্ছে আমার মনে হয় এতে ওনাদের কোন সমস্যা হবে না ৷””

মুন নিজ থেকে ডিভোর্স এর কথা বলছে এটা দেখে রিয়ানা বেগম বেশ ক্ষেপে গেল ৷ কিন্তু তার স্বামীর কারনে কিছু বলতে পারছে না ৷ রায়হান আহাম্মেদ মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বললেন”” ঠিক আছে বউ মা আমি এখুনি উকিলের সাথে কথা বলছি””

রায়হান আহাম্মেদ দ্রুত ফোন বের করে উকিলের সাথে কথা বললো প্রথমে রাজি না হলেও রায়হান আহাম্মেদ ডাবল টাকা অফার করায় উকিল রাজি হয়ে যায় ৷ আর কাল সকাল এগারোটায় রিদ আর মুন কে কোটে যেতে বলে ৷

“” ধন্যবাদ “”

” বউ মা আগামিকাল সকাল এগারোটায় রিদ আর তোমার ডিভোর্স টা হচ্ছে, তাহলে তোমার মা কে ফোন করে আসতে বলি?””

শশুরের কথা শুনে মুন আঁতকে ওঠে ভয়ে ,,,

“” না না বাবা মাকে আপনার কিচ্ছু জানানোর প্রয়োজন নেই কাল আমি একাই খুলনা যাবো তখন না হয় মাকে বুঝিয়ে বললো ৷ এখন আপনি কিছু মা কে জানাবেন না তাহলে হয়তো মা ডিভোর্স না হওয়ার জন্য বেগরা দিবে””

“” হো রিদের বাপ , এই মাইয়া ডা ঠিক কথা কইছে ৷ তোমার কোন কিছু জানানোর প্রয়োজন নাই যা জানানোর এই মাইয়াই তার মা কে বলবো””

“” আচ্ছা তোমরা যা ভালো মনে করো তবে বউমা তোমাকে আমি একা ছাড়বো না আমি তোমাকে খুলনা পৌছে দিয়ে আসবো ৷ আর কোন কথা হবে না “”

মুন আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ মুন কে বের হতে দেখে দরজার পাশ থেকে লুকিয়ে পরে রিদ ৷ মুন চলে যেতে বেরিয়ে আসে , চোখ মুখে অন্ধকার ছেয়ে আছে রিদের আর মুনের চোখে মুখে খুশির ঝলক ৷ যেন মরুভূমির মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এলো মুনের জীবন টাকে ভিজিয়ে দিতে ……….

মুন রুমে এসে ছোট্ট বেলকনিতে গিয়ে দারালো শীতের নরম রোদ্দুর মুনকে ছুয়ে দিচ্ছে আবার কখনো আগের আড়াল হয়ে যাচ্ছে ৷ মুন বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ জোরা যেন বাধ মানছে না ৷ গাল ভিজিয়ে দিচ্ছে মুনের ৷ মুন আকাশে উড়তে থাকা পাখিদের দেখে বলতে লাগলো

“সুখের আকাশটা আজ,
রাতের মতো কালো।
সাজানো স্বপ্ন গুলো
হয়ে গেছে এলোমেলো।”

” আবিদ কি এখনোও আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে? ছিঃ কি ভাবছি আমি আবিদ কেন আমার জন্য অপেক্ষা করবে ৷ হয়তো এতোদিনে বিয়ে করে সংসার করছে আবিদ ৷ কিন্তু কাল আমি যাবো কোথায় মায়ের কাছে কিন্তু মা যখন জানতে পারবে আমার ডিভোর্স এর কথা তখন মা আমাকে ও বাড়িতে কিছুতেই ঢুকতে দিবে না ৷ “”

মুন ভাবনায় পরে গেল কাল কোথায় যাবে ৷ মুন তার বাবার কথা মনে আসতে মুন ভেবে নিলো খুলনা পৌছে প্রথমে মায়ের কাছে যাবে তারপর সেখান থেকে ছোট খালার বাড়িতে ওখানে দুদিন থেকে ঢাকা বাবার কাছে চলে যাবে৷ ওখানে চাকরির চেষ্টা করবে ৷ মুন পুরো বিকেল বেলকনিতে কাটিয়ে সন্ধ্যায় রুমে ঢুকে দেখে রুম ফাঁকা মানে রিদ রুমে নেই ৷ মুন কাবার্ডের উপর থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিজের জামা কাপড় তার ভিতর গুছিয়ে নিয়ে সাইডে রেখে দিলো৷

রাত হতেই মুন রাতের খাবার গরম করে টেবিলে সবাই কে সার্ব করে দিলো ৷ দুপুরের সেই ঘটনার পর থেকে রিদ আর মুনের সামনে যাইনি পুরো টা সময় প্রিয়ন্তির রুমে কাটিয়ে রাতে ডিনার করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরে ৷ মুন রাতেও কিছু না খেয়ে সব গুছিয়ে রুমে চলে আসে ৷ মুন কোন শব্দ ছাড়াই বালিশ আর একটা চাদর নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে ৷

খুব ভোর বেলা মুন ঘুম থেকে উঠে খিচুড়ি বেগুন ভাজা ইলিশ মাছ ভাজা আর জলপাইয়ের চাটনি বানিয়ে ফেলে ৷ রিদ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে তারা তারি অফিস চলে যেতে নিলে পিছুন থেকে রায়হান আহাম্মেদ রিদ কে ডাকে ৷ রিদ ৎেটার ভয় পেয়েছিলো সেটাই হলো তার বাবা রিদ কে যেতে দেখে ফেলে…..

“”” কোথায় যাচ্ছো রিদ”” গম্ভির গলায় বললো রায়হান আহাম্মেদ….

“” বাবা আ , আমি অফিসে যাচ্ছি “”

“” না আজ অফিসে যাবে না ৷ ফোন করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেও ৷ আজ তোমার আর বউমার ডিভোর্স এর জন্য কোর্টে যেতে হবে ৷””

রিদ বাধ্য হয়ে অফিসে ফোন করে আসবে না তা জানিয়ে দেয় ৷

প্রিয়ন্তি রিদের বাবা মা রিদ ডাইনিং টেবিলে বসে আছে ৷ মুন খুব জত্ন সহকারে সবাই কে খিচুড়ি বেগুন ভাজা ইলিশ মাছ আর জলপাইয়ের চাটনি দিয়ে দিলো ৷ রিদের বাবা আর রিদের চোখ মুখ গম্ভির হয়ে আছে অন্যদিকে প্রিয়ন্তির চোখে মুখে খুশির ঝিলিক , সকালে রিয়ানা বেগম প্রিয়ন্তিকে আজ রিদ আর মুনের ডিভোর্সের কথা জানিয়ে দেয় ৷ খবর টা শোনার পর থেকে প্রিয়ন্তির প্রচন্ড খুশি লাগছে ইচ্ছে করছে লাফিয়ে নাচতে ৷

রিয়ানা বেগম খুব তৃপ্তি সহকারে খিচুড়ি খাচ্ছে ৷ মুন দারিয়ে দারিয়ে ওদের তৃপ্তির খাওয়া দেখছে ৷ রিদের বাবা অনেক বার করে মুন কে ওদের সাথে খেতে বললো কিন্তু মুন পরে খেয়ে নিবে বলে আর খেলো না ৷ সবার খাওয়া শেষ হতে মুন সব গুছিয়ে প্লেট ধুয়ে রেখে ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশ টা বেজে গেছে ৷ মুন হাত ধুয়ে রুমে গিয়ে বোরকা পরে নেয় ৷ রিদ মুন কে দেখছে কতো যত্ন করে হিজাব আর নেকাব টা বেধে নিলো ৷ বোরকা পড়া হয়ে গেলে মুন ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যায় ৷ রিদের বাবা মুন দেখতে পেলো কিন্তু রিদ কে দেখতে না পেয়ে রিদ কে ডাকতে লাগলো ৷ রিদ বাবার ডাক শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ৷

“” রিদ আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে দ্রুত চলো “”

“” জ্বি বাবা””

রিদ আর রিদের বাবা যেতে লাগলেন তখন মুন পিছুনে ঘুরে পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে প্রিয়ন্তির সামনে দারিয়ে বলে””” যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ে টা করে নিও প্রিয়ন্তি ৷ আর মন দিয়ে সংসার করো “” মুন মিষ্টি করে হেসে শাশুড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে বেরিয়ে গেল৷

রিদ আর মুন পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে ৷ মুন কে প্রথমে সাইন করতে বললে মুন দ্রুত সাইন টা করে দেয় ৷ রিদ কে সাইন করতে বলা হলে রিদ একটু সময় নিয়ে সাইন টা করে দেয় ৷ কোট থেকে বেরিয়ে মুন রিদের বাবাকে জরিয়ে ধরে .. রিদের বাবার দুচোখ ছলছল করছে এদিকে রিদের চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না ৷ রিদের বাবা জোর করে রিদের আড়ালে মুনের হাতে বিশ হাজার টাকা দিয়ে দিলো ৷ মুন কিছু বলতে নিলে রিদের বাবা ইশারায় বারন করে দিয়ে বলে “” মা আমাকে ক্ষমা করে দিস আজ আমার জন্য তোমার আজ এই অবস্তা ৷ “”

“” বাবা দয়াকরে এমন কথা বলবেন না ৷ধরে নিন না আল্লাহ্ আমাকে এই বিয়েটার মধ্যে দিয়ে আমার পরীক্ষা নিয়েছে””

“” মারে তুই যে বড্ড সরল বড্ড ভালো মেয়ে না হলে এতোদিন কোন মেয়ের পক্ষে সম্ভব হতো না এরকম কুলাঙ্গার আর রিয়ানার মতো দরজাল শাশুড়ীর মতো মহিলার সাথে সংসার করতে পারতে না ৷ “”

মুন তার ফোন বের করে বারোটা বেজে গেছে ৷ দুপুর একটায় খুলনা যাওয়ার জন্য বি আর টি সি র বাস ছাড়বে তাই মুন আর সময় নষ্ট না করে জোর করে একাই কোট থেকে বেরিয়ে যায় ৷ যাওয়ার সময় একবারের জন্য ও পিছুন ফিরে তাকায় নি মুন সামনের দিকে এগিয়ে গেল ৷

টেম্পু করে বাসস্টান্ড এসে বাসের টিকিট কেটে নিয়ে বাসে উঠে বসে ৷ কিছুক্ষনের মধ্যে বাস ভরে যায় ৷ বাস চলতে শুরু করে হুট করে মুনের পাশে কেউ গা ঘেষে বসে পরে মুন এতে প্রচন্ড রেগে যায় পাশ ফিরে কিছু বলতে যাবে তখনি মুন পাশের মানুষ টা কে দেখে ফ্রিজড হয়ে যায়……….

.
.
#চলবে……….✌️

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১১
.
.
.
টেম্পু করে বাসস্টান্ড এসে বাসের টিকিট কেটে নিয়ে বাসে উঠে বসে ৷ কিছুক্ষনের মধ্যে বাস ভরে যায় ৷ বাস চলতে শুরু করে হুট করে মুনের পাশে কেউ গা ঘেষে বসে পরে মুন এতে প্রচন্ড রেগে যায় পাশ ফিরে কিছু বলতে যাবে তখনি মুন পাশের মানুষ টা কে দেখে ফ্রিজড হয়ে যায় ৷ মুন সামনের মানুষ টা কে দেখে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না মুনের দু-চোখ ভোরে এলো , সামনে থাকা মানুষ টা মুনের দু-চোখের পানি আলতো করে মুছে দিয়ে মুনকে বুকের সাথে চেপে ধরে … কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে যায় মুনের ..

“” মনপাখি আমাকে দেখে যদি তোমার চোখে অস্রু ঝরে তাহলে আমি কখনো-ই তোমার সামনে আসবো না””(আবিদ)

মুন আবিদের কথা শুনে আবিদ কে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে নাক টানতে লাগলো….

আবিদ মুনের কান্ড দেখে হাসছে ৷ মুন আবিদ কে হাসতে দেখে আবিদের বুকে কিল মারতে লাগলো “” বাজে লোক আমাকে কাদিয়ে হাসছো তাই না””

“” উহু মনপাখি লাগছে তো””

আবিদের কথা শুনে মুন আরো জোড়ে জোড়ে মারতে লাগলো”” লাগুক আরো বেশি করে লাগুক তুমি খুব খারাপ খুব “” বলে আবার কাঁদতে লাগলো মুন …

আবিদ মুনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে “” মনপাখি আজ এই কান্না তোমার শেষ কান্না এর পর থেকে তোমাকে আমি আর কাঁদতে দিবো না আই প্রমিজ ইউ , ওই নরক থেকে যখন একবার বের হতে পেরেছো আর কখনো ওই নরকে তোমায় আমি যেতে দিবো না আমার মনের মনেকোঠায় তোমায় আগলে রাখবো””

বাস চলছে তার নিজের গতিতে মুন আবিদের বুকে এখনো মিশে আছে ৷ পৃথিবীর সব শান্তি যেন আবিদের বুকে মুন তার শান্তির ঠিকানা পেয়ে গেছে ৷ বাসের প্রত্যেকটা লোক মুন আর আবিদ কে দেখছে তাতে মুন বা আবিদের বিশেষ কিছু যায় আসে না ৷ প্রায় ঘন্টাখানিক পর মুন আবিদের বুক থেকে মাথা তুলে বলে”” আমি এই বাসে উঠবো তুমি জানলে কি করে? তার মানে …””

“” ঠিক ধরেছো মনপাখি আমি তোমার উপর নজর রাখছিলাম “”

“” তুমি জানতে আজ আমার ডিভোর্স হবে””

“” হুম জানতাম তবে আজ হবে সেটা জানতাম না ৷ তবে সকালে যখন তোমায় ওই জানোয়ারটার সাথে বের হতে দেখলাম তখনি আমি আর নিরব তোমাকে ফলো করছিলাম””

“” তার মানে তুমি পাশের বাসার ভাবির বাড়িতে উঠেছিলে ?””

“” হুম কারন ওটা নিরবের ছোট মামার বাড়ি “” আবিদ কথা বলতে বলতে পিছুনের ছিট থেকে নিরব আবিদের মাথায় টোকা মেরে বলে “” সালা নিজের মনপাখিকে পেয়ে আমাকে ভূলে গেছিস ৷ আমি যে তোর পিছুনে বসে আছি ভূলে গেছিস সেটা”” রাগি গলায় বললো নিরব..

মুন নিরব কে দেখে আবিদের কাছ থেকে কিছু টা দুরে চেপে বসে ৷ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে মুন ৷ মুন কে এভাবে থাকতে দেখে নিরব বলে উঠলো “” মুন তুমি কেন লজ্জা পাচ্ছো বোন? একদম লজ্জা পাবে না আমি তোমার আর একটা ভাই মনে রাখবে সব সময় আর হ্যা তুমি তোমার জীবন থেকে একটা বছর দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো কারন তোমার ফিউচার এখন আবিদ ওকে নিয়ে ভাববে আর একটা রিকুয়েস্ট আছে তোমার কাছে বোন রাখবে?””

“” আপনি বলুন ভাইয়া””

“” তুমি এই পাগল টাকে ছেড়ে আর কোথাও যেও না ৷ পাগলটা তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে ৷ তুমি জানো না এই একটা বছর আবিদ কতোটা নিজেকে কষ্ট দিয়েছে ওর দু হাত দেখো ….””

মুন দ্রুত আবিদের দুহাতের উঠিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে পুরো হাতে কাটার দাগ ৷ শুকিয়ে চামরা সাদা হয়ে গেছে ৷ মুনের দু-চোখ আবার ছলছল করে উঠলো ৷ মুন আবিদের দিকে তাকাতে আবিদ তার দুচোখ নামিয়ে ফেলে ৷ মুন আবিদ কে কিছু না বলে আবিদের হাত ছেড়ে দিয়ে জানালার দিকে মুখ ঘরিয়ে রাখে ৷ মুন কে মুখ ঘুরাতে দেখে আবিদ নিরবের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকাতে নিরব মুখ কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফোন বের করে ফোন টিপতে লাগলো…..

আবিদ এক টানে মুনকে বুকের সাথে মিশিয়ে চেপে ধরে নিজের গায়ের চাদরে মুন কে ঢুকিয়ে নেয়৷ মুন আবিদের বুকে মাথা রাখতে পেরে শান্তিতে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে৷

নিরব পিছুন থেকে ফিস ফিস করে আবিদ কে বলতে লাগলো”” আবিদ ছোট মামাকে আমাদের আসার কথা বলেছি মামা আমাদের জন্য রুপসা ব্রিজে অপেক্ষা করবে ৷ আমরা ওখান থেকে সোজা কাজী অফিস যাবো বিয়ে টা হয়ে গেলে সোজা মামা বাড়ি ওকে৷””

“” হুম কিন্তু তার আগে ব্যাগ থেকে খাবারের বক্স টা বের কর “”

নিরব ব্যাগ থেকে মামির রান্না করা বিরয়ানির বক্স বের করে আবিদের হাতে দেয় ৷ আবিদ মুনকে মনপাখি বলে দুবার ডাক দিতে মুন চোখ মেলে তাকায় , আবিদ মুনের নেকাব টা খুলে বিরয়ানি নিজ হাতে মুন কে খাইয়ে দিলো মুন নিঃশব্দে আবিদের হাতে খেতে লাগলো ৷ গতকাল দুপুর রাত আর আজ সকাল পর্যন্ত না খাওয়া থাকায় মুনের খিদে পায়নি তবে আবিদের হাতে খাওয়ার লোভে মুনের পেটের ভিতর কেউ ফুটবল খেলতে লাগলো ৷ কিছুটা খাওয়ার পরে মুন আবিদ কে জ্বিগাসা করে”” তুমি খেয়েছো?””

আবিদ কখনো মুন কে মিথ্যে কথা বলে না ৷ আর আজও বললো না “” না “”

মুন নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে জানালা দিয়ে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে বিরয়ানির বক্স টা নিয়ে আবিদের মুখের সামনে লোকমা ধরলো , আবিদ পরম আনন্দে মুনের হাতে খেতে লাগলো তৃপ্তি করে ৷ আবিদের খাওয়া দেখে যে কেউ বলবে যে আবিদ যেন কতো বছরের অভুক্ত ৷

নিরব পিছুনের সিটে বসে আবিদ আর মুন কে দেখছে ৷ আজ আবিদের মুখে হাসি দেখে নিরবের চোখ জোরা ছলছল করছে ৷ নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুকে গত এক বছরে এতোটা খুশি কখনো দেখেনি ৷ মুনের বিয়ে হয়ে গেছে শুনে আবিদের জীবন যেন থমকে যায় ৷ থেমে যায় সময় কিন্তু আজ আবিদ আগের মতো হয়ে গেছে ৷ সেই হাসি খুশি আবিদ ……

মুন আবিদ কে বাকি অর্ধেক খাবার টা খাইয়ে দেয়৷ খুলনা পৌছাতে এখনো এক ঘন্টা বাকি ৷ মুন আবিদ কে পেয়ে রিদ , রিয়ানা বেগম প্রিয়ন্তি এদের কথা ভুলে গেছে এতো টর্চার এতো অপমান এতো কষ্ট সব কিছু যেন এক মুহূর্তে মুছে গেল মুনের মন থেকে ৷

আবিদ মুন বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আবিদ গত কয়েক দিনের কথা ঘটা ঘটনা বলতে লাগলো মুন কে কি ভাবে নিরব ওকে সাহায্য করেছে কিভাবে নিরবের মামা ওকে কাজে রেখে সাহায্য করছে সব কিছু , মুন মন দিয়ে আবিদের কথা শুনছে ৷ এতোদিন পর প্রিয় মানুষটার গলার আওয়াজ শুনে মুনের শুকনো হৃদয় টা যেন পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে৷

____________ রিদ কোট থেকে বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে ৷ মুন চলে যাওয়ার পর থেকে রিদের পুরো দম বন্ধ লাগছে সব কিছু ৷ রিদ তার পুরো রুম টা দেখছে ৷ প্রত্যেকটা জিনিস ছুয়ে ছুয়ে দেখছে ৷ রিদের মনে হচ্ছে এগুলোতে মুনের ছোয়া আছে ৷ রিদ কাবার্ড খুলে মুনের কাপড় খুজতে লাগলো কিন্তু একটা সুতোর কোনাও পেলো না রিদ শুধু মাত্র এবাড়ি থেকে দেওয়া কিছু গয়না ছাড়া ৷ রিদ বুজতে পারলো মুন এবাড়ির কোন জিনিস নিয়ে যায়নি ৷ রিদ রুমের কোথাও মুনের কোন জিনিস বা কাপড় খুজে পেল না ৷ রিদ বুজতে পারছে না কেন মুন কে এতো মিস করছে ৷ এদিকে ও চলে যাক এটাই চেয়েছিলো মনে মনে আর আজ যখন চলে গেল তখন কেন এমন খালি খালি লাগছে বুকটা এটা রিদ বুজতে পারছে না ৷

মুন বরা বরের মতো চলে যাওয়ায় রিয়ানা বেগম প্রচন্ড খুশি এবার তার মনের আশা পূরন হবে ভেবে ৷ রিয়ানা বেগম মুনের রান্না করে রাখা খিচুড়ি গরম করে টেবিলে সার্ব করে দিয়ে সবাই কে খেতে ডাকলো ৷ রিদের বাবা খাবেনা বলে দরজা আটকে দিয়ে শুয়ে আছে এতে রিয়ানা বেগমের খুশিতে মটেও ভাটা পরেনি ৷ রিয়ানা বেগম প্রিয়ন্তিকে ডেকে বলে “” প্রিয়ন্তি যা তো মা বাবু কে খেতে ডেকে নিয়ে আয়””

“” ওকে খালা মনি””

প্রিয়ন্তি আয়নার দিকে তাকিয়ে ঠোটে লাল টক টকে লিপস্টিক লাগিয়ে চুলটা ঠিক করে নিয়ে রিদের রুমের দিকে গেল ৷ প্রিয়ন্তি রিদের রুমের দরজায় নক করতে লাগলো কিন্তু ভিতর থেকে কোন টু শব্দ আসছে না আর না রিদ দরজা খুলছে ৷ অনেকবার নক করার পর ও যখন রিদ দরজা খুললো না তখন প্রিয়ন্তি মনে মেনে ভিষন রাগ হলো ৷ প্রিয়ন্তি এবার কড়া গলায় বলে উঠলো”” রিদ তুমি যদি এখন দরজা না খুলো তাহলে আমি সুইসাইড করবো “”

প্রিয়ন্তির বলা শেষ হতে-ই রিদের রুমের দরজা খুলে গেল ৷ রিদ প্রিয়ন্তির দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে গেল ৷ রিদ কে বেরিয়ে যেতে দেখে প্রিয়ন্তির চোখে মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠলো ………

রিদের গলা দিয়ে খাবারের কোনা যেন নামছে না ৷ বুকের বা পাশ টা শুধু খালি খালি লাগছে ৷ প্রিয়ন্তি রিদের পাশে বসে খিচুড়ি খেয়ে যাচ্ছে আর রিয়ানা বেগমের সাথে গল্প করতে লাগলো ৷ রিদের এই সব যেন বিষাধ এর মতো লাগছে ৷ রিদ কিছু না খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে গেল ৷

____________ আবিদ মুন আর নিরব রুপসা ব্রিজের নিচে নেমে যায় ৷ বাস থেকে নামতে নিরবের মামা সামসু নিরব আবিদ আর মুনের দিকে চলে যায়৷

“” নিরব আবিদ তোমাদের আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?””

“” না মামু আমাদের আসতে কোন সমস্যা হয়নি””(নিরব)

“” কিন্তু আমার বউমা কোথায় যাকে আনতে আমার দুই ভাগনে বরিশাল গেল এতো তারা হুরা করে””

আবিদ মুচকি হেসে মুনের হাত ধরে সামসুর সামনে এনে দার করিয়ে বলে “” এই যে মামু এই তোমার বউ মা””

মুন সামসুর সামনে দারিয়ে সালাম দিলো ৷ সামসু মুনের আদব কায়দা ব্যবহার দেখে ভিষন খুশি হলো …সালামের উওর দিয়ে ভারা করা মাইক্রোতে সবাই কে উঠতে বললো … আবিদ আর মুন মাঝের সিটে নিরব পিছুনের সিটে আর সামসু ড্রাইভারের পাশে বসে পরে ৷

__________ ” বাবা আবিদের খবর পাওয়া গেছে””(আবিদের মেজ ভাই আবির)

“” আবিদ কোথায় আছে এখন?”” (আফজাল )

“” শুনেছি কি কাজে নাকি আবিদ বরিশাল গিয়েছে”” বাকি কথাটা চেপে গেল আবির …

“” আবিদ খুলনা ফিরলে আমাকে জানাবে “” গম্ভির গলায় বললো আফজাল..

“” জ্বি বাবা””

আবির আফজালের রুম থেকে বেরিয়ে দম নিতে লাগলো কারন যতোক্ষন নিজের বাবার সামনে দারিয়ে থাকে ততোক্ষন যেন শ্বাস টা আটকে থাকে ৷ আবির তার বাবা মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে আসতে মনিরা বেগম আবিরের সামনে এসে দারায়……

___________ মুন বিয়ের রেজিট্রি কাগজে সাইন করার পর আবিদ সাইন করে তারপর সাক্ষী হিসেবে নিরব সামসু আর আবিদের কিছু বন্ধুরা সাইন করে দেয় ৷

“” আলহামদুলিল্লাহ বিয়েটা সম্পূর্ন হয়েছে ৷ আপনারা এখন আইনত স্বামী স্ত্রী “” (কাজী)
.
.
.
.
#চলবে………………