#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১৬
.
.
.
“” ভাইয়া তুমি সানজু আপুর উপর লাইন মারছো আর আমি একটু ক্রাশ খেয়েছি বলে আব্বুর কানে দিয়ে পিটুনি খাইয়েছো তাই না এবার দেখো আমি কি করি….”” কথাটা বলে সামির হন হন করে বাইরে বেরিয়ে গেল আর নিরব ছুটলো সামিরের পিছুনে ….
এতোক্ষন আবিদ মুন দারিয়ে নিরব আর আবিদ দারিয়ে শুনছিলো ওরা চলে যেতে দুজনে হেসে ওঠে ৷ আবিদ হাসতে হাসতে মুনের হাসি মাখা মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গুন গুন করে বলে উঠলো ….
“” ঐ চাঁদ মুখে যেন
লাগেনা গ্রহন
জোছনায় ভরে থাক
সারাটি জীবন “””
মুন আবিদের গান শুনে আবিদের বুকে আসতে করে কিল মেরে দ্রুত রুমে ঢুকে যায় ৷ আবিদ মুচকি হেসে নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে আসে অন্য দিকে সামসু হক তার স্ত্রীর মান ভাঙিয়ে রোমান্স করায় ব্যাস্ত এর মাঝে সামিরা তাদের মাঝে ঢুকে পরে ….
“” আম্মু মুন আপু তোমাদের ডাকছে “”( সামিরা)
“” ঠিক আছে আম্মু তুমি গিয়ে খাবার টেবিলে বসো আমি আসছি””(মামী)
সামিরা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ৷
“” এই সামিরার বাবা যাও ফ্রেস হয়ে আসো বড়ো বয়সে ভিমরতী দেখাতে এসো না যাও তো গোছল করে এসো৷ “” (মামী)
সামসু আর কথা না বারিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিলো …..
মুন ঝটপট টেবিলে খাবার সাজিয়ে সামিরা কে খাইয়ে দিলো ৷ সামিরার খাওয়া শেষ হতে-ই আবিদ মামা মামি নিরব সামির এসে হাজির হয় ৷ সামিরের মুখ এখনো গম্ভির হয়ে আছে ৷ সামিরের মুখটা দেখে মুনের ভিষন হাসি পাচ্ছে ৷ সিনিয়র আপুরদের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে ৷ আর অন্য ভাই সেই মেয়ের উপর লাইন মারছে ৷
মুন সবাই কে খাবার সার্ব করে দিয়ে পাশে দারায়৷ সামসু হক মুন কে পাশে বসিয়ে নিজে মুনের খাবার বেরে দিয়ে খেতে বলে৷
মুন মামির দিকে তাকাতে তিনি ইশারায় খেতে বলে নিজেও মুনের পাশে বসে পরে৷ সবাই এক সাথে খেয়ে ওঠে ৷ মুন সব গুছিয়ে রুমে গিয়ে বসতে পিছুন থেকে আবিদ জরিয়ে ধরে ৷
“” শুরু হয়ে গেল দুষ্টুমি হুম৷ আবিদ আমার তিন মাস দশ দিনের ইদ্দত শেষ হয়নি এখনো “”
“” আই নো মনপাখি বাট তুমি তো জানো তোমাকে আমার চোখের আড়াল করতে ভয় পাই ৷””
মুন আবিদের দিকে ঘুড়ে দু হাতে আবিদের গাল ছুয়ে বলতে লাগলো”” আমি জানি আবিদ তুমি আমাকে ভিষন ভালোবাসো ৷ এই নয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না ৷ আমার প্রতিটা নিশ্বাসে তুমি বিরাজ করো ৷ তুমি আমার আত্তার সাথে মিশে আছো ৷ ভালোবাসি তোমায় ভয়ঙ্কর রকমের ভালোবাসি ৷ আর আমিও তোমায় চোখে হারাতে চাই না আবিদ ৷ যদি ভালোবাসাটা সত্যিকারের হয়
তবে দূরত্ব বেড়ে গেলে ভালোবাসা কমে না উল্টো বেড়ে যায় আবিদ ৷ এবার কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না , না তোমার বাবা ভাই আর না আমার মা ৷ “”
মুন তার মায়ের কথা ভাবতেই চোখে পানি জমা হলো ৷ আবিদ বুজতে পারছে মুনের হয়তো তার মায়ের জন্য মন খারাপ হচ্ছে ৷ কিন্তু এখন আবিদ চাইলেও তার সাথে কথা বলতে পারবে না তাহলে সবাই জেনে যাবে ওরা এখানে আছে ৷
“” মনপাখি যাস্ট আর তিনটে মাস অপেক্ষা করো তারপর দেখবে সবাই আমাদের সম্পর্ক টাকে মেনে নিয়েছে ৷ “”
“” এতোটা সহজ আবিদ? একটা ডিভোর্সি মেয়ে কে সমাজে কতোটা লান্চিতো হতে হয় ৷ তার সম্পর্কে কি ধারনা হয় সমাজে যানো আবিদ? এরা মনে করে মেয়েটির কোন চারিত্রিক ত্রুটি আছে ৷ নাহলে কেন ডিভোর্স হলো ৷ চরিত্রহীনা প্রমান করবার জন্য উঠে পরে লাগে ৷ টিটকারি মারে ৷ বাকা চোখে তাকায়৷ কেউ একটিবার ভেবে দেখবে না ছেলেটির কোন দোষ ট্রুটি আছে কিনা , ছেলেরা একাধিক বিয়ে করলে এটা নরমাল বলবে ৷ আর মেয়েরা ডিভোর্সের পর বিয়ে করলে বলবে নিশ্চয় ছেলেটির সাথে কোন অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আর তাই এই ডিভোর্স ৷””
আবিদ মুনের কথা গুলো খুব মন দিয়ে শুনলো ৷ মুনের প্রত্যেকটা কথা সত্য ৷ আমাদের সো কল্ড সমাজে কেউ এক বেলা না খেয়ে থাকলেও কেউ দেখতে আসে না কিন্তু কোন ভাবে মানুষটার কোন ক্ষুত পেলে সেটা তাল থেকে তিল বানিয়ে মজা নেয় ৷ অথচ সেই মানুষ গুলোর কষ্টের ভাগ নেয় না আর না সাহায্য করে বিপদ থেকে মুক্ত হতে ৷ তবে না চাইতেও আমাদের এই অসুস্থ সমাজে থাকতে হয় তাদের মন জুগিয়ে ৷
আবিদ মুন কে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে ৷ মুন আবিদের বুকে আশ্রয় পেয়ে ডুকরে কাঁদছে ৷ এক সময় মুন কাদঁতে কাদঁতে ঘুমিয়ে পরে ৷ আবিদ মুনকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মুনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে মুনের ভেজা গাল টা মুছিয়ে দিয়ে মুনের গায় ব্লাংকেট জরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতে দেখে সামসু হক আর তার স্ত্রী দারিয়ে দুজনের চোখের পাতা ভিজে ৷ আবিদ বুনতে পারলো ওরা দুজনে ওদের কথা শুনেছে ৷ আবিদ এক ঝলক মুনের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সামিরের রুমে চলে গেল ৷
সামসু হক আর তার স্ত্রী মুনের মাথার কাছে বসে আছে ৷ মুনের কথা গুলো আজ তাদেরও মন নারিয়ে দিয়েছে ৷ মামী মুনের কান্না মাখা ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সামসু হক কে বলতে লাগলো “” ওগো আজ আমাদের বড় মেয়েটা বেঁচে থাকলে হয়তো এই মেয়েটার মতোই কষ্ট পেতো ৷””
“” কষ্ট পেতো বলছো কেন ? যতোদিন বেঁচে ছিলো ততোদিন এই সমাজের লোকজন কটু কথা শোনাতে থামেনি ৷ আর যখন আমাদের আদরের মেয়েটা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো তখন তাদের মুখে কতো ভালো কথা ফুটে উঠলো ….””
“” জানো সামিরের বাবা এই মেয়েটার মাঝে আমি কেন যেন আমার মৃত মেয়ে টাকে দেখতে পাই ৷ মনে হয় আমাদের মেয়ে টা আমাদের সামনে আছে ৷ “” কান্নায় ভেঙে পড়ে সামসু হকের স্ত্রী…
“” সামলাও নিজেকে নয়তো তোমার কান্নার আওয়াজে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে ৷””
“” হুম , চলো আমরা এ রুম থেকে নয়তো মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে ৷””
সামসু হক আর তার স্ত্রী মুক্তা বেগম তারা তাদের রুমে চলে যায় ৷
আবিদ রুমে এসে তার মেজ ভাই আবির কে ফোন করে তার বাবা যে ওর বিয়ের কথা টা জানতে পেরে গেছে এটা শুনে আবিদ কিছুটা ঘাবড়ে যায় ৷ কারন আবিদ তার বাবা কে চিনে তিনি এক কথার মানুষ ৷ তিনি যখন বলেছেন তিনি মুন কে মেনে নিবে না তখন পৃথিবী এদিক থেকে ওদিক হলেও তার কথার নরচর হবে না ৷ আবিদ কিছুক্ষন চুপ থেকে তার মাকে ফোন টা দিতে বলে ৷ আবির ফোনটা তার মায়ের কাছে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দারায় যাতে তার বাবা বা বড় ভাই আজমির এসে না পরে ৷
“” আম্মু…””
দুদিন পর প্রান প্রিয় ছেলের মুখে মা ডাক শুনে মনিরা বেগমের দু-চোখ ছল ছল করছে ৷
“” এতোদিন পর মাকে বুঝি মনে পড়লো তোর ?” অভিমানি কন্ঠে বললো মনিরা বেগম…
“” স্যরি আম্মু তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও ৷ দেখো আমি কান ধরছি আর এমন ভূল হবে না ৷””
“” তুই মুন কে বিয়ে করেছিস?””শান্ত কন্ঠে বললো মনিরা বেগম…
“” হুম “”
“” এতো বড় সির্দ্ধান্ত আমাকে না জানিয়ে নিলি আবিদ?””
“” স্যরি আম্মু তখন পরিস্তিতি এমন ছিলো যে তোমাকে জানাতে পারি নি ৷””
“” তোর আব্বু কিন্তু মুন কে মেনে নিবে না এ বাড়িতে””
“” প্রয়োজন নেই আম্মু ৷ যে বাড়িতে আমার বউয়ের কোন অধিকার নেই সে বাড়িতে আমি বা আমার বউ কেউ ঢুকবে না ৷””
“” অনেক বড় হয়ে গেছিস আবিদ যাই হোক মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখিস আর তোর আব্বু জেনে গেছে তুই নিরবের মামার দোকানে কাজ করছিস এই জন্য ভিষন খেপে আছে ৷””
“” আম্মু আমি বড় হয়েছি আমার নিজের একটা মতামত আছে ৷ তাই কে কি ভাবলো বা রেগে থাকলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না ৷ তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো আর নিজের খেয়াল রেখো রাখছি পরে কল করো ৷৷আল্লাহ হাফেজ ৷””
আবিদ কল কেটে দিয়ে বিছানা ফোন টা ছুড়ে ফেলে চোখে মুখে পানি দিতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল৷
_______________ ফারিহা মাত্র একদিনে অফিসে এসে রিদের জীবন টা অতিষ্ঠ করে তুলেছে ৷ কিছুক্ষণ পর পর রিদ কে ডেকে এটা ওটা করাচ্ছে ৷ রিদ প্রথমে ফারিহা কে পটানোর চেষ্টা করে পরে বুজলো এই মেয়ে পটার নয় ৷ নয় তো রিদের মতো হ্যান্ডসাম গুড লুকিং ছেলের দিকে ফিরেও তাকায় না ৷ রিদ ফারিহার সামনে মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে ৷ রিদ কে মাথা নত করে দারিয়ে থাকতে দেখে ফারিহার বেশ মজা লাগছে ৷
“” মিস্টার রিদ অফিসে আসেন কেন গল্প করতে?””(ফারিহা )
“” স্যরি ম্যাম আসলে….বাকিটা বলার আগে ফারিহা চেচিয়ে উঠলো …”” যাস্ট শ্যাটয়াপ মিস্টার রিদ আমি কোন এক্সকিউজ শুনতে চাই না ৷ আমি আপনার আগের কাজের রিপোর্ট দেখেছি ৷ তিন বছর ধরে আপনি কি কোন কাজ শেখেন নি ? আব্বু আপনাদের মতো ইউজলেস স্টাফ কেন রেখেছে একমাত্র সে জানে ৷ ওয়াটএভার এখন থেকে আপনাদের কাজের উপর ডিপেন্ট করে আপনারা আপনাদের স্যালারি পাবেন ৷ অলরেডি বাকিদের এটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আপনি বাকি ছিলেন তাই আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হলো ৷ আর একটা কথা এই মাসে আপনার অধের্ক স্যালারি কেটে নেওয়া হলো আপনার অদক্ষ কাজের জন্য আশা করবো এর পর থেকে মন দিয়ে কাজ করবেন ৷ নাউ গেট লষ্ট “””
রাগে রিদের পুরো শরীল জ্বলে যাচ্ছে ৷ তিন তিনটে বছর কাজ করছে এ কম্পানিতে কখনো কেউ রিদের ভূল ধরতে পারেনি আর আজ একদিন এসে এই মেয়েটা ওর ভূল ধরছে ৷ রিদ রাগে নিজের ডেক্সে গিয়ে ফাইল গুলো ছুড়ে মারে ৷ অফিসে বাকি স্টাফ রিদের হাব ভাব দেখে বুজতে পারছে নতুন বস বেশ ভালো করে ঝার দিয়েছে রিদ কে তবে এখন নতুন বসের সামনে নিজেদের এক্সপ্রেশন ঠিক রাখার জন্য কাজ করতে লাগলো ৷
___________ দুপুরের পর থেকে রিয়ানা বেগমের কোমরের ব্যাথা হঠাৎ করে আরো বেড়ে যায় ৷ ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে প্রিয়ন্তি কে ডেকে কোমড়ে মলম বা গরম তৈল দিয়ে মালিশ করে দেওয়ার কথা বলতে প্রিয়ন্তি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে কোমড়ে মলম বা তৈল লাগিয়ে দিতে পারবে না ৷ তার বন্ধুদের সাথে আজ ঘুরতে যাবে ৷ রিয়ানা বেগম প্রিয়ন্তির কথা শুনে ভিষন নিরাশ হলো ৷ প্রিয়ন্তি সাজ গোজ করে বেরিয়ে গেল ৷ রিয়ানা বেগম এখন মুনের অনুপস্তিতি ভিষন ভাবে অনুভব করছে ৷ আজ মুন থাকলে হয়তো এতোটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না ৷ রিয়ানা বেগম নিজে কষ্ট করে বিছানা থেকে ড্রয়ার থেকে মলম টা বের করে নিজে নিজে কোমরে লাগাতে লাগলো ৷ রিদ বাড়ি ফিরে এসে বাড়ি খালি দেখে রিয়ানা বেগমের রুমে এসে দেখে রিয়ানা বেগম একা একা নিজে কোমড়ে মলম দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷ রিদ দ্রুত তার মায়ের হাত থেকে মলম টা নিয়ে বললো “” মা তুমি শুয়ে পড়ো আমি মলম টা মালিশ করে দিচ্ছি৷””
রিয়ানা বেগম তার ছেলের কথা শুনে চোখে পানি এসে গেল ৷
“” বাবু আমি ঠিক আছি তুই অফিস থেকে এসেছিস ফ্রেস হয়ে আয় আমি তোকে চা নাস্তা দিচ্ছি..””
“” কিন্তু তোমার কোমড়ে ব্যা…….
“” এখন আর ব্যাথা নেই তুই রুমে যা …””
রিদ রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নেয় ৷ রিয়ানা বেগম ধিরে ধিরে চা আর বিস্কুট নিয়ে রিদের রুমে ঢুকে অবাক হয়ে যায় ৷ পুরো রুম অগাছালো এখানে ওখানে কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ৷ চা বিস্কুট টেবিলের উপর রেখে কাপড় গোছাতে লাগলো রিয়ানা বেগম……..
__________ “আজমির আবিদের কোন খবর পেয়েছিস?””(আফজাল হোসেন)
“” জ্বি আব্বু আবিদ নিরবের মামুর বাড়িতে মুন কে নিয়ে আছে “”(আজমির)
মুনের কথা শুনে আফজাল সাহেব প্রচন্ড রেগে বলতে লাগলেন……..
.
.
.
#চলবে………….