#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২১
.
.
.
“” মুন আর জিজু আগামিকাল রেডি থেকো , কাল থেকে তোমরা দুজনে আমার সাথে অফিসে যাবে ৷ “”
“” কিন্তু….””(মুন)
“” কোন কিন্তু নয় মুন আর শোন কাল একজনের মুখো মুখি হবি সো গেট রেডি ফর টুমোরো কারন কাল ধামাকা হবে কারো কারো হুস উরে যাবে তোদের দেখে…..”” কথাটা বলে রহস্যময় হাসি দিলো ফারিহা…..
পরের দিন সকালে ফারিহা মুন আয়ান আবিদ নাস্তা করে নিয়ে ফারিহা মুন আর আবিদ কে রেডি হতে বলে৷ মুন বোরকা পরে আসলে ফারিহা মুন কে থামিয়ে দিয়ে বলে”” মুন বেবি আমাদের অফিসের কিছু রুলস আছে তোকে সেই রুলস অনুযায়ী চলতে হবে ৷ তবে হ্যা শালীনতা রেখে ৷ ওকে তুই আমার সাথে আয়..”””
ফারিহা মুনকে নিজের রুমে নিয়ে এসে কাবার্ড খুলে দেয় মুনের সামনে…”” এখান থেকে কোন ড্রেস চুজ কর মুন ৷ তোর আর আমার ড্রেসের সাইজ একই তাই তোর পড়তে প্রব্লেম হবে না ৷””
“” ওকে বাট তুই চুজ করে দে ফারিহা “”
“” ওকে ”
ফারিহা মুন কে অফওয়াইট কালার একটা গাউন বের করে দেয় ৷ সাথে মেচিং হিজাব ৷ মুন গাউন আর হিজাব টা পরে আসে তারপর ফারিহা মুন কে হালকা সাজিয়ে দেয় ৷ ফারিহার গোল্ডের রিচ ওয়াচ টা মুনের হাতে পরিয়ে দেয়৷
“” এই ফারিহা কি করছিস ? তোর এতো দামি রিচ ওয়াচ আমাকে কেন পড়ালি?””
“” কারন এটা আজ থেকে তোর ৷ ধরে নে এটা আমার থেকে আমার বেস্টুকে উপহার দিলাম””
“” তাই আর যখন তন্নি শুনবে তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস তখন তো ও জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে৷”
“” হিহিহি ও ওমনি ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না ৷ ওর সাথে কথা হয়েছে ঢাকা থেকে খুব তারাতারি আসছে এখানে””
“” বাহ তাহলে তো খুব ভালো হবে””
“” হুম , এখন চল অফিসে যেতে হবে ৷ আমিতো রেডি বাট তোকে রেডি করতে গিয়ে লেট হয়ে গেল ৷””
“” হুম চল””
ফারিহা মুন সিড়ি দিয়ে নেমে আসার সময় আবিদ মুন কে দেখে চোখ ফিরাতে পারে না ৷ অফ ওয়াইড কালার গাউন তার উপর ছোট ছোট স্টোনের কাজ ৷ চোখে কাজল ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক হাতে ঘড়ি সব মিলিয়ে অসম্ভব মিষ্টি দেখতে লাগছে মুন কে ৷
“” জিজু আর কতোক্ষন এভাবে হ্যা করে তাকিয়ে থাকবেন?””(ফারিহা)
“” অনন্তকাল সালিকা “”
“”কিহ”””
ফারিহার চিৎকার শুনে আবিদের ধ্যান ভাঙে ৷ বেশ লজ্জা পায় দুজনে ৷ ফারিহা ওদের দুজন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ৷ আর আয়ান চলে যায় নিজের অফিসে ৷
সবার আগে অফিসে এসে রিদ তার কাজে লেগে পড়লো ৷ ফারিহা প্রত্যেকটা দিন এক গাদা করে ফাইল রিদ কে চেক করতে দেয় ৷ রিদ যথাস যথাসম্ভব চেষ্টা করে কাজ গুলো কম্পিলিট করার কিন্তু তা কোন ভাবে সম্ভব হয় না কেননা তিন দিনের কাজ কোন মানুষের পক্ষে এক দিনে করা সম্ভব নয় ৷ আর রিদের বেলায় ও তাই ৷ আর পুরস্কার স্বরুপ বস অর্থাৎ ফারিহার কাছে বকা খেতে হয় ৷ তাই রিদ এখন সকাল সকাল অফিসে এসে কাজে লেগে পরে ৷
একে একে অফিসের সব স্টাফ এসে কাজে লেগে যায় ৷ তখনি ফারিহা মুন আর আবিদ কে নিয়ে অফিসে ঢুকে ৷ সবাই ফারিহা কে দেখে গুড মরনিং জানায় ৷ আর অবাক চোখে ফারিহার সাথে অচেনা মানুষদের দেখে অবাক হয় ৷ ফারিহা কেবিনে গিয়ে ম্যানেজার কে কেবিনে আসতে বলে ৷
“” মে আই কামিং ম্যাম ?”” (ম্যানেজার)
“” ইয়েস ..”
“” ডেকেছেন ম্যাম?””
“” আঙ্কেল আবার ম্যাম বলছেন?”” খানিকটা রেগে বললো ফারিহা..
“” স্যরি মামুনি আর ভূল হবে না ৷ “”
“” হু , আঙ্কেল পরিচয় করিয়ে দি ৷ এই হচ্ছে আবিদ আর ও মুন ওরা আজ থেকে এই কোম্পানিতে জব করবে ৷ আব্বু আপনাকে নিশ্চয় সবটা জানিয়ে দিয়েছে?””
“” জ্বি মামুনি বড় স্যার আমাকে ফোন করে সবটা জানিয়েছে ৷ আমি আগে থেকে ওনাদের কেবিন রেডি করে রেখেছি৷ “”
“” আঙ্কেল আমি কিছুদিন জন্য অফিসে আসবো আসবো না ৷ ততোদিন মুন আমার পজিশনে থাকবে আর আমি যখন আসবো তখন ওকে অন্য কেবিনে শিফট করে দিবেন ওকে?””
“” ওক মামুনি””
“” আপনি বাইরে গিয়ে সকাল স্টাফ দের এক জায়গায় হতে বলুন আমি আজ ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো””
“” ওকে মামুনি””
ফারিহার কথা মতো ম্যানেজার সকল কে ডেকে এক যায়গায় হতে বলে তখনি ফারিহা কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে মুন আর আবিদ …
রিদ হঠাৎ মুন কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে মুন কে দেখে তাও এই রুপে ৷ রিদের চোখ যেন মুনের উপর থেকে নরছে না ৷ ফারিহা আবিদ দুজনে তা খেয়াল করলো কিন্তু কিছু বললো না ৷
“” সবাই কে এখানে এক সাথে ডাকার কারন টা হলো এরা , পরিচয় করিয়ে দি এই হচ্ছে মৃন্ময়ী ইয়াসমিন মুন আর উনার নাম আমিনুল ইসলাম আবিদ ৷ আজ থেকে দুজনে আপনাদের সাথে একি অফিসে কাজ করবে ৷ বুজতে পেরেছেন আমি কি বলেছি””
“” ইয়েস ম্যাম “” সবাই এক সাথে বলে উঠলো শুধু রিদ বাদে কারন রিদ এখনো তার হুসে ফেরেনি৷
“” গ্রেট তাহলে যে যার কাজে যান আর মিস্টার রিদ কিছুক্ষন পর আমার কেবিনে আসবেন৷ “”
কথাটা বলে ফারিহা চলে গেল ৷ আর মুন আবিদ দুজনে রিদ কে না দেখার ভান করে ফারিহার পিছু পিছু চলে গেল ৷ ওরা যেতে রিদ চেয়ারে ধুপ করে বসে পড়ে ৷ দু-চোখ পানিতে টলমল করছে ৷ হয়তো মুন কে হারিয়ে ফেলায় কারনে তার চোখে বৃষ্টি নেমেছে ৷
রিদের বুকের ভিতর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে ৷ চোখ বর বার ঝাপসা হয়ে আসছে ৷ হয়তো এটাই নিয়তি ৷
রিদ চোখে মুখে পানি দিয়ে ফারিহার কেবিনের বাইরে দারিয়ে নক করে ৷
“” কামিং””
ফারিহার পারমিশন পেয়ে রিদ ভিতরে ঢুকে দেখে মুন তাদের বসের চেয়ারে বসে আছে ৷ রিদ কিছুটা অসস্থি হচ্ছে কারন সামনে তার এক্স ওয়াইফ আর তার বতর্মান স্বামী কে দেখে রিদের মটেও ভালো লাগছে না ৷ রিদের ইচ্ছে করছে আবিদ নামক আপদ টাকে এখুনি খুন করে দিতে ৷ কিন্তু এটা অসম্ভব ৷
“” মিস্টার রিদ আপনাকে যে কারনে ডাকা , আজ থেকে মুন আপনাদের নতুন বস আমি কিছুদিন ছুটিতে থাকবো তবে মাঝে মাঝে অফিসে এসে আপনাদের কাজ দেখে যাবো ৷ আর জিজু (আবিদ) উনি একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট দেখবে ৷ “”
“” ওকে ম্যাম”” ঠান্ডা গলায় বললো রিদ…
“” ওকে এখন আপনি আমাদের জন্য কফি পাঠিয়ে দিন৷””(ফারিহা)
“” সিওর ম্যাম””
রিদ এক ঝলক মুনের দিকে তাকিয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেল৷ রিদ আজ মুনের চোখে মুখে কোন ভয় বা অসস্থি দেখেনি যেটা ওর ভিতর প্রকাশ পাচ্ছিলো৷ রিদ বাইরে এসে তিন কাঁপ কফি বানিয়ে বসের কেবিনে দিয়ে নিজের ডেক্সে চলে আছে৷ কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না রিদ বার বার রিদের চোখের সামনে ভেষে উঠছে মুন আবিদ কে জরিয়ে ধরে আছে ৷ আবিদ মুন কে ছুয়ে দিচ্ছে ৷ রিদের কল্পনায় ৷ রিদ বির বির করে বলে উঠলো …..
“” মুন আমার বউ শুধু আমার ওর উপর শুধু আমার অধিকার আর কারো না””
.
.
.
.
_______ ” এখনো সাইন করো নি কেন রিয়ানা? আমার কাছে অনন্ত সময় নেই তোমাকে দেওয়ার “”(রায়হান আহাম্মেদ )
” রিদের বাপ তুমি সত্যি ডিভোর্স চাও আমার কাছে?””(রিয়ানা বেগম)
“” হ্যা চাই এমন নিচু প্রকৃতির মহিলার সাথে আমি আর থাকতে চাই না ৷ “”
রিয়ানা বেগম গতকাল থেকে একভাবে ফ্লোরে বসে আছে ৷ কেঁদে যাচ্ছে ৷ কিন্তু তাতে রায়হান আহাম্মেদ এর বিশেষ কিছু যায় আসে বলে মনে হচ্ছে না তিনি প্রিয়ন্তির বিয়ে নিয়ে ব্যাস্ত ছেলে পক্ষ যতো তারাতারি সম্ভব চায় মেয়ে কে বউ করে নিয়ে যেতে ৷ এতে প্রিয়ন্তির কোন আপত্তি নেই ৷ আর না রিদের ৷ রিদ সে দিন-ই প্রিয়ন্তিকে মন থেকে মুক্ত করে দিয়েছে ৷ রিদ প্রিয়ন্তির সাথে কথা বলে শিওর হয়ে নেয় যে প্রিয়ন্তি প্রেগনেন্ট না ৷ প্রেগনেন্সির কথাটা পুরোটাই মিথ্যে ছিলো৷ রিদ এবার আর রেগে যাইনি প্রিয়ন্তির উপর বরং চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে যায় ৷
রায়হান আহাম্মেদ আলমারি থেকে টাকা বের করতে করতে রিয়ানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন”” রিয়ানা সময় নষ্ট করো না ৷ দ্রুত সাইন টা করে দেও ৷ কেন বুজতে পারছো না আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না “”
“” দোষটা কি আমার রিদের বাপ?”” কাতর চোখে তাকিয়ে বললো রিয়ানা বেগম…
“” সব দোষ তোমার রিয়ানা ৷ না ছেলে কে মানুষ করতে পেরেছো আর না নিজে মানুষের মতো কোন কাজ করেছো৷ আমার জীবনের সব থেকে বড় ভূল কি জানো রিয়ানা তোমাকে বিয়ে করা৷ না তোমার রুপে মহোহিত হয়ে তোমায় বিয়ে করতাম৷ “”
কথাটা বলে রায়হান আহাম্মেদ রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ রিয়ানা বেগম ফ্লোরে বসে হাউ মাউ করে কাদঁতে লাগলো……
.
.
.
.
_______ “এই টাই তোর ধামাকা ফারিহা?””( মুন)
“” কেন তোর এই ধামাকা পছন্দ হয়নি?”” ব্রু কুচকে জ্বিগাসা করলো ফারিহা… তখনি আবিদ মুনের কোমর জরিয়ে ধরে ফারিহা কে বলে..” নো সালিকা ধামাকাটা আমাদের ভিষন পছন্দ হয়েছে৷ আমি তো চেয়েছিলাম ওই জানোয়ার টার সাথে আমার দেখা হোক ৷ ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না ৷””
“” ওহো চিল জিজু চিল এখন তোমরা এই অফিসে জব করবে ৷ আর তোমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে না কারন রিদ যখনি তোমাদের দুজন কে দেখবে তখন ও জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বুজলে “”
“” একদম “”
আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে আছে এমন সময় রিদ পারর্মিশন না নিয়ে কেবিনে ঢুকে আবিদ আর মুনকে কাছা কাছি দেখে তৈলে বেগুলে জ্বলে উঠলো ৷ মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে রিদ মনে হয় এখনি দুজন কে ভষ্শ করে দিবে তখনি ফারিহা………
.
.
.
#চলবে…………….
#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২২
.
.
.
“” ওহো চিল জিজু চিল এখন তোমরা এই অফিসে জব করবে ৷ আর তোমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে না কারন রিদ যখনি তোমাদের দুজন কে দেখবে তখন ও জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বুজলে “”
“” একদম “”
আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে আছে এমন সময় রিদ পারর্মিশন না নিয়ে কেবিনে ঢুকে আবিদ আর মুনকে কাছা কাছি দেখে তৈলে বেগুলে জ্বলে উঠলো ৷ মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে রিদ মনে হয় এখনি দুজন কে ভষ্শ করে দিবে তখনি ফারিহা রিদ কে দেখে প্রচন্ড রেগে যায় ৷
“” হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার রিদ? আপনার সাহস কি করে হয় আমার পারমিশন না নিয়ে আমার কেবিনে প্রবেশ করার? আপনি জানেন এই বিয়াদবির জন্য আমি আপনাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে পারি””
রিদ এবার বুজতে পারলো রেগে হুট করে এভাবে বসের কেবিনে ঢোকা মটেও ভালো হয়নি ৷ রিদের ভয় হতে লাগলো এটা ভেবে সত্যি যদি ফারিহা চাকরি থেকে বের করে দেয়৷
“” সরি ম্যাম”” মাথা নিচু করে বললো রিদ..
“” স্যরি ফর ওয়াট মিস্টার রিদ? এর শাস্তি তো আপনাকে পেতে-ই হবে তাই না মুন বেপি”” মুন কে উদ্দেশ্য করে বললো ফারিহা…
“” ইয়েস জানু “”
“” তো কি শাস্তি দেওয়া যায় বলতো?””
“” উমম একটা কাজ কর ফারিহা পুরো অফিসের পরিষ্কার করার দ্বায়িত্ব আজ মিস্টার রিদ কে দে””( বাকা হেসে বললো মুন)
“” ওয়াও গ্রেট আইডিয়া , ওকে মিস্টার রিদ আপনার শাস্তিটা তো শুনে নিয়েছেন নাও কাজ শুরু করে দিন ৷ “”
রিদ রাগের হাত মুঠ করে দারিয়ে আছে ৷ মুন যে এতোটা পাল্টে গেছে এটা দেখে রিদ সহ্য করতে পারছে ৷ আর আজ এমন অপমান ৷ রাগে দুঃখে রিদের ইচ্ছে করছে এখুনি মুন কে ঠাটিয়ে থাপ্পোর মারতে ৷ বিয়ে হয়েছে বলে এতোটা পাল্টে যাবে ৷
“” গেট লষ্ট মিস্টার রিদ “”
রিদ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় ৷ রিদ বাইরে এসে তিন গ্লাস পানি খেয়ে নেয় ৷ রাগে পুরো গা জ্বলে যাচ্ছে রিদের ৷ কিছুক্ষন পর দারোয়ান এসে রিদের হাতে ঝাড়ু বালতি ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় ৷ সব স্টাফদের নজর রিদের উপর রিদের রিয়েকশন বোঝার চেষ্টা করছে সবাই ৷
রিদ বুজতে পারছে এই কাজ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ৷ রিদ পুরো অফিস ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে ফেলে ৷ আবিদ ফারিহা মুন তিন মিলে ল্যাপটপে দেখছে ৷
“” এই জানোয়ার কে তো আমি ছাড়বো না সালিকা ৷ আমার মনপাখিকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি তো আমি ওকে দিবো …””(আবিদ)
আবিদ বসা থেকে উঠে কাউ কে ফোন করে…. দুবার রিং বাজতে কল রিসিব করে …
“” হ্যালো “”(আবিদ)
“” হ্যালো আবিদ কেমন আছিস ? সব ঠিক আছে তো?””
“” হুম সব ঠিক আছে কিন্তু তোকে আমার প্রয়োজন ৷ বরিশাল চলে আয় কাজ আছে “”
“” ওকে বাট তোকে একটা কথা জানানোর আছে ৷ ”
“” কি কথা?””
“” আঙ্কেল গতকাল অনেক লোকজন নিয়ে এসেছিলো তোদের খোজ করতে ৷ তোদের না পেয়ে যা নয় তা ব্যবহার করেছে ৷ মামুর সাথে খুব মিস বিহেব করেছে ৷ আর হ্যা ওই মহিলাও এসেছিলো ৷ পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে তোদের খুজেছে ৷””
নিরবের কথা শুনে আবিদের রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে ৷ তার বাবা যে এতোটা নিচে নামতে পারে এটা জানা ছিলো না ৷
“” নিরব মামা কে বলিস বাবার হয়ে আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি “”
“” ধুর সালা কি বলিস এইসব ৷ আচ্ছা শোন আজ তো আর ডিরেক্ট বাস নেই ৷ আমি আগামিকাল সকালে চলে আসবো৷””
“” আমি এড্রেস সেন্ড করে দিচ্ছি ৷ পৌছে ফোন করিস৷””
“” ওকে দোস্ত , ভালো থাকিস ইনশাআল্লাহ আগামিকাল দেখা হবে””
“” আল্লাহ হাফেজ “”
কল ডিসকানেক্ট করে আবিদ জোড়ে জোড়ে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে চেয়ারে বসে পরে ৷ মুন ফারিহা দুজনে চুপ হয়ে আছে আবিদের গম্ভির মুখ দেখে..কিছুক্ষন চুপ থেকে মুন বলে উঠলো “” কি হয়ে আবিদ ? “”
“” কি আর হবে আব্বু নিরবের মামার বাসায় গিয়ে যা তা ব্যবহার করে গেছে সাথে তোমার মা ও””
“” মা……””
“” গাইজ এখন এই সব নিয়ে ভেবো না আন্টি আর আঙ্কেল কে পরে সামলে নিতে পারবে এখন ওখানে যাওয়া তোমাদের উচিত হবে না “”
“” হ্যা আবিদ ফারিয়া ঠিক বলেছে তুমি শান্ত হও “”
দুপুরে লান্চে ফারিহা রিদ কে দিয়ে ওদের লান্চ বাইরে থেকে আনায় ৷ রিদ দাঁতে দাঁত চেপে ফারিহার অডার্র মতো কাজ করে ৷ রিদ কে সামনে দার করিয়ে ফারিহা মুন আবিদ খেতে লাগলো , আবিদ মুন কে খাইয়ে দিচ্ছে আবার মুন আবিদ কে খাইয়ে দিচ্ছে ৷ এই সব দেখে রিদের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে ৷
মুন রিদ কে দেখে বেশ মজা পাচ্ছে ৷ ওকে একটা বছর যে নরক যন্ত্রনা সহ্য করেছে ৷ আর এইটুকু যন্ত্রনা তো কিছুই না ৷ মুন রিদ কে জ্বালানোর জন্য আবিদের ঠোটে লেগে থাকা খাবার হাত দিয়ে যত্ন সহকারে মুছে দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো ৷ রিদ আর সহ্য করতে না পেরে ফারিহা কে বলে উঠলো “” ম্যাম আমি কি এখন যেতে পারি না মানে ডেক্সে অনেক কাজ জমা হয়ে আছে৷””
“” আমি কি আপনাকে যেতে বলেছি মিস্টার রিদ?””
“” নো ম্যাম””
“” তাহলে যেভাবে দারিয়ে আছেন ওভাবে দারিয়ে থাকুন ৷ আমাদের লান্চ করা শেষ হয়ে গেলে এগুলো কে পরিস্কার করবেন ৷ বুজতে পেরেছেন?””
“” ইয়েস ম্যাম””
ফারিহা মুন আবিদের খাওয়া শেষ হবার পর রিদ টেবিল পরিষ্কার করে বেরিয়ে যায় ৷
“” দোস্ত আজ এই পর্যন্ত রিদ কে শাস্তি দেওয়া ৷ আগামিকাল থেকে তুই নিজের হাতে রিদ কে শাস্তি দিবি বুজতে পেরেছিস?””(ফারিহা)
“” ওকে বাট আবিদ ও কি করবে?””(মুন)
“” জিজু কে নিয়ে তুই টেনশন করিস না কারন জিজু কাল থেকে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট সামলাবে বলতে পারিস রিদের সিনিয়র হয়ে যাবে ৷ “”
“” গ্রেট তাহলে দু দিক থেকে চাপ পরবে রিদের উপর..””
“” একদম , মুন আয় তোকে কাজ গুলো বুঝিয়ে দি””
“” হুম”””
.
.
.
____________ “” আজমির আবিদ আর ওই মেয়েটা ওখানে নেই মানে কোথাও পালিয়ে গেছে ৷ খোজ লাগা যতো তারাতারি সম্ভব””(আফজাল সাহেব)
“” জ্বি আব্বু কিন্তু ওরা এই এলাকায় নেই আব্বু থাকলে আমি খবর পেতাম..””(আজমির)
“” ওই মেয়েটার মাকে খবর দেও আজমির ৷ “”
“” ওই বাজে ঝগড়াটে মহিলা কে কেন ডাকবো আব্বু?””
“” আজমির তোমার সাহস তো কম না আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করো”” চিৎকার করে বললো আফজাল সাহেব…
“” স,,স্যরি আব্বু আমি ওনাকে এখুনি ডেকে পাঠাচ্ছি…””
ত্রিশ মিনিট পর আলিয়া বেগম এসে হাজির হলো….
“” ভাইসাহেব আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?””
“” হুম, আপনার মেয়ের কোন খবর পেয়েছেন?””
“” পেলে তো আর আপনাকে কষ্ট করতে হতো না ৷ ওর চুলের মুঠি ধরে আমি আপনার পায়ের কাছে ফেলতাম””
“” বাজে কথা রাখুন ৷ আপনার একটা ছেলে আছে না? কি যেন নাম..?””
“” মৃন্ময় নাম ভাই সাহেব””
“” হ্যা মৃন্ময় ওকে জ্বিগাসা করেছেন ওর বোন কোথায় আছে এটা জানে কিনা?””
“” না ভাই সাহেব ওকে তো কিছু জ্বিগাসা করিনি কারন ও তো জানে না মুন খুলনা আছে””
“” ভূল জানেন আপনি ৷ “”
“” মানে?””
“” আপনার ছেলে আগে থেকে জানে ওরা খুলনা আছে আর ওদের সাথে দেখাও করেছে “”
“” আপনি ঠিক বলছেন তো ভাই সাহেব?””
“” আপনার কি মনে হয় আমি গুলতানি মারছি?”” খানিকটা রেগে বললো আফজাল সাহেব …
“” মাফ করবেন ভাই সাহেব আমি এটা বলতে চাই নি , আচ্ছা আমি আজ মৃন্ময়ের কাছে জানতে চাইবো ও মুনের বিষয় কিছু জানে কিনা?””
“” হুম , ভালো করে জ্বিগাসাবাদ করুন না হলে পরে যদি জানতে পারি মৃন্ময় সব টা জানে আর আপনারা কিছু জানেন তাহলে …. বাকিটা বলতে না দিয়ে আলিয়া বেগম বলে উঠলো “” না না ভাইসাহেব আমি দেখছি কি করা যায় ৷ এখন আমি আসছি “”
আলিয়া বেগম দ্রুত আফজাল সাহেবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মৃন্ময় কে জ্বিগাসা বাদ করার জন্য ..
.
.
.
.
_____________” বাহ সাইন করে দিয়েছো বেশ৷ যাও জামা কাপড় গুছিয়ে নেও আগামিকাল তোমায় তোমাদের বাড়ি দিয়ে আসবো” পেপারস গুলো আলমারিতে তুলতে তুলতে বললো রায়হান আহাম্মেদ ..
রিয়ানা বেগম চুপ হয়ে আছে ৷ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ৷ এতো বছরের সাজানো সংসার এক নিমিশে ভেঙে গেল ৷ মাত্র এই ক-দিনে রিয়ানা বেগমের চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে , চোখের নিচে কালি পরে গেছে ৷ রিয়ানা বেগমের এখন বার বার মুনের কথা মনে পড়ছে ৷ কতোটা অর্তাচার করেছিলো মেয়েটার উপর , গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে খেতে না দেওয়া পর্যন্ত সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা সব করেছে ৷ এমনকি ডিভোর্স পর্যন্ত করিয়েছে ৷ নিজের সংসার থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছেন তিনি ৷ এখন বুজতে পারছে রিয়ানা বেগম সে কতো বড় ভূল করেছে ৷
“” ওহ আর একটা কথা বলার ছিলো রিয়ানা, আগামিকাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে “”
“” কি সারপ্রাইজ ?””
“” সেটা না হয় কাল-ই দেখতে পাবে “”
রায়হান আহাম্মেদ আর কিছু না বলে ফ্রেস হতে চলে গেলেন ৷
অন্যদিকে রিদ ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফিরে এসে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আছে সেটা রায়হান আহাম্মেদ এর চোখে পরে….
“” হঠাৎ ছেলেটার কি হলো ? সেই আসলো আর এখনো বের হলো না ?””
রিদের বাবা ছেলে যতো-ই ঘৃনা করুক না কেন নিজের সন্তান বলে কথা কষ্ট তো পাচ্ছে নিজেও , ছেলের সাথে সে দিনের পর কথা বলা বন্ধ করে দিলেও আজ মনে হচ্ছে রিদের সাথে কথা বলতে হবে তাকে ৷ রায়হান আহাম্মেদ রিদের দরজায় কয়েকবার ডাকা ডাকি করার পর রিদ দরজা খুলে দেয় ৷ রিদের চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে ৷ রিদ যে এতোক্ষন কেদেছে এটা রিদের বাবার আর বুজতে বাকি নেই৷ আচমকা রিদ তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ওঠে ৷ রায়হান আহাম্মেদ তার ছেলের এই রুপ দেখে হতবম্ব হয়ে গেলেন৷ তিনি বুজতে পারছেন না তার ছেলের কি হয়েছে হঠাৎ এই রুপে কেন ? তিনি রাগ অভিমান ভূলে গিয়ে রিদের মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো”” কি হয়েছে আমার রিদের হুম বাবাকে বলবে না?””
“”বা,,বাবা মুন বিয়ে করেছে বাবা ৷ আমি কিছুতেই ওকে অন্য কারোর সাথে সহ্য করতে পারছি না “” কোন রকম কান্না চেপে ভাঙা গলায় বললো রিদ.. রিদের কথা শুনে রায়হান আহাম্মেদ মুনের জন্য কিছুটা নিশ্চিত হলো এটা ভেবে যে মেয়েটা হয়তো এবার সুখের মুখ দেখবে ৷ কিন্তু ছেলের এই ভাঙাচুরা অবস্তা দেখে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে ৷ কিন্তু এখানে ছেলে কে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই৷
“” রিদ কি হয়েছে সব টা আমাকে খুলে বল প্লিজ””
রিদ একটু দম নিয়ে সবটা বলে রায়হান আহাম্মেদ কে…
“” ওহ তার মানে মুন মা আর ওর হাসবেন্ট একই অফিসে আছিস বর্তমানে ..””
মাথা নাড়লো রিদ…
” রিদ এখন কেঁদে কোন লাভ হবে না কারন তুমি যা যা করেছো তার শাস্তি তুমি অবশ্যই ভোগ করবে কিন্তু এখন পরোস্ত্রীর দিকে নজর দেওয়া তোমার ঠিক হবে না ৷ তুমি তোমার জীবনটা নতুন করে শুরু করো রিদ ৷ এভাবে ভেঙে পড়ো না ৷ যাও ফ্রেস হয়ে আসো তার পর কিছু খেয়ে নিবে৷””
রায়হান আহাম্মেদ রিদ কে ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে ভাবতে লাগলো “” বাহ মুন মা দেখছি এবার বেশ স্ট্রং হয়ে ফিরে এসেছে ৷ কিন্তু রিদ কে কি করে সামলাবো আমি ? ছেলেটা যে একে বারে ভেঙে পড়েছে৷ আমি কি মুনের সাথে কথা বলবো! নাহ এখনি না রিদের এখনো অনেক শাস্তি পাওয়া বাকি আছে ৷ মুন কে তার কাজ করতে দেওয়া উচিত….””
রিদ ফ্রেস হয়ে বের হবার পর রায়হান আহাম্মেদ নিজে ছেলের জন্য খাবার বেড়ে নিয়ে এসে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় ৷ প্রিয়ন্তি এতোক্ষন আড়ালে দারিয়ে তার খালু আর রিদের কথা শুনেছে ৷ রিদের যে মুনের জন্য কষ্ট হচ্ছে এটা বেশ বুজতে পারছে প্রিয়ন্তি কিন্তু সে কিছু -ই করতে পারবে না তার রিদ ভাইয়ার জন্য না করতে চায় না কারন প্রিয়ন্তি মন থেকে রিদ কে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে ৷ কোন মতে আর রিদ কে মনে যায়গা দিতে চায় না প্রিয়ন্তি ৷ ছুটে চলে যায় নিজের রুমে ৷
__________ ” আ,,আম্মু আমি সত্যি কিছু জানি না আপু কোথায় আছে..?”” (মৃন্ময়)
“” বুঝেছি ভালো কথায় কাজ হবে না দারা দেখাচ্ছি মজা…””
কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আলিয়া বেগম……
.
.
.
.
#চলবে…………….