নীরব সাক্ষী পর্ব-২৩+২৪

0
508

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২৩
.
.
.
__________ ” আ,,আম্মু আমি সত্যি কিছু জানি না আপু কোথায় আছে..?”” (মৃন্ময়)

“” বুঝেছি ভালো কথায় কাজ হবে না দারা দেখাচ্ছি মজা…””

কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আলিয়া বেগম কিছুক্ষন পর খুন্তি নিয়ে আসে…

“” মৃন্ময় এখনো সময় আছে সত্যি টা বল তাহলে আমি তোকে ছেড়ে দিবো “”(আলিয়া বেগম)

“” আ,,আম্মু বি,,বিশ্বাস করো আপু কোথায় আছে তা আমি জানি না “” ভয়ে ভয়ে বললো মৃন্ময় ..আলিয়া বেগম মৃন্ময়ের কথা বিশ্বাস করলো না শুরু করে দিলো তার তান্ডব ৷ এলোমেলো ভাবে পিটিয়ে যাচ্ছে মৃন্ময় কে ৷ খুন্তির কোনা লেগে মৃন্ময়ের হাত পিঠ কেটে যায় ৷ তবুও আলিয়া বেগম তার মার থামায় না৷ যখন দেখলো এতেও কাজ হচ্ছে না ৷ তখন আলিয়া বেগম মৃন্ময়ের প্যান্টের বেল খুলে এনে আবার ওটা দিয়ে পিটাতে লাগলো ৷ মৃন্ময় যে খুব ছোট তা ঠিক নয় কলেজে উঠেছে৷ নিজের ভালো মন্দ ভাবা অনেক দিন আগে থেকে বুজতে পারে ৷ কারন যেখানে নিজের জন্মদাত্রী মা-ই সৎমায়ের মতো আচরন করে তখন বাচ্চারা ছোট থাকতে সব বুজতে শিখে যায়৷ এতো বছর মুন ছিলো বিধায় ওর কাজ গুলো ও করে দিতো মার থেকে আড়াল ও মুন করে দিতো কিন্তু শেষ একটা বছর সব কিছু এলোমেলো করে দেয় তার মা আলিয়া বেগম ৷ মুনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওর উপর অর্তাচার করতো আলিয়া বেগম কিন্তু আজ সব পরিসীমা অতিক্রম করে গেছে ৷ মৃন্ময় আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ৷ মৃন্ময় কে জ্ঞান হারাতে দেখে আলিয়া বেগম মটেও বিচলিত হন নি বরং বেল টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে চলে যান৷ মৃন্ময় জ্ঞান হারিয়ে ওভাবে ফ্লোরে পরে থাকে৷

মৃন্ময় যে মুনের খবর জানে না এটা বেশ বুজতে পারছে আলিয়া বেগম ৷ কিন্তু আবিদের বাবা আফজাল সাহেব এটা শুনতে নারাজ ৷ কারন তার বিশ্বাস মৃন্ময় কিছু না কিছু জানে ৷ আলিয়া বেগম ফোনে আফজাল সাহেব কে কিছুতেই বুঝাতে সক্ষম হলেন না বরং পরিস্তিতি আরো হাতের বাইরে চলে গেছে ৷ আফজাল সাহেব আলিয়া বেগমের দোকান লোক দিয়ে তুলে দেওয়ার হুমকি দিতে লাগলেন ৷ এতে আলিয়া বেগম বেশ ভয় পেয়ে গেলেন ৷ আলিয়া বেগম দিশা খুজে না পেয়ে মুনের বাবা কে কল করে সব জানায় তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তিনি কোন প্রকার তাকে সাহায্য করতে পারবে না ৷ যদি সম্ভব হয় মৃন্ময় কে যেন তার কাছে পাঠিয়ে দেয় ৷ আর মুনের ইচ্ছে হলে সে নিজে তার সাথে যোগাযোগ করবে ৷ কারন ইতেমধ্যে মুন তার বাবা কে কল করে সব টা জানিয়েছে ৷ কিন্তু এই বেপার গুলো তিনি চেপে গেলেন ৷ কিন্তু আলিয়া বেগম মৃন্ময় কে পাঠাত নারাজ তাই এক ধফা ঝগড়া করে কল কেটে দেয় আলিয়া বেগম৷

পরেরদিন __________________

“” মে আই কামিং ম্যাম””(রিদ)

“” ইয়েস কাম””(মুন)

রিদ ভিতরে ঢুকে অবাক হয়ে যায় কারন বসের চেয়ারে বসে আছে মুন…

“” হ্যালো মিস্টার রিদ এভাবে তাকিয়ে না থেকে ফাইল গুলো নিয়ে যান আর আদঘন্টার মধ্যে সলভ করে নিয়ে আসবেন…””(মুন)

রিদ মুনকে একা দেখে কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পরে ৷ রিদ মুনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে মুন বলে ওঠে “” নো মোর ওয়ার্ড মিস্টার রিদ , আপনাকে যে কাজ গুলো দেওয়া হয়েছে সে কাজ গুলো করে আনুন না হলে এর জন্য অন্য শাস্তি আপনাকে পেতে হবে..””

“” মুন তু,, বাকি টা বলার আগে মুন বলে উঠলো “” মিস্টার রিদ ভূলে যাবেন না আপনি একজন সামান্য অফিস স্টাফ আর আমি এখন আপনার বস ৷ নেক্সট টাইম আমার নাম ধরে ডাকার সাহস করলে আপনার হয়তো চাকড়ি টাই থাকবে না “”

“” স্যরি ম্যাম””

“” গেট লষ্ট “”

রিদ কোন কথা না বলে চুপ চাপ বেরিয়ে গেল ফাইল নিয়ে … রিদ কেবিন থেকে বের হতে পিয়ন এসে জানায় নতুন একাউন্টিং স্যার তাকে ডেকে পাঠিয়েছে৷ রিদ বুজতে পারলো নতুন একাউন্টিং স্যার মানে মুনের হাসবেন্ড …. রিদ মুনের দেওয়া ফাইল গুলো নিয়ে আবিদের কেবিনের সামনে গিয়ে নক করে…

“” কামিং ..””( আবিদ)

রিদ ভিতরে ঢুকতে আবিদ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কয়েকটা ফাইল নিয়ে ছুড়ে মারে রিদের মুখের উপর…..

রিদের রাগে চোয়াল শক্ত করে দারিয়ে আছে ৷ রাগ টা দমিয়ে রাখছে রিদ কারন আবিদ তার সিনিয়র স্যার ৷ আবিদ কে যদি কিছু বলে তাহলে চাকড়ি নিয়ে টানা টানি হতে পারে ৷

“” এই সব কি মিস্টার রিদ? হিসেবে এতো গোলমিল কেন? “”(আবিদ)

“” স্যরি স্যার আমি ফাইল গুলো আবার চেক করে দিচ্ছি আপনাকে…”” নরম কন্ঠে বললো রিদ….

“” ফাইল গুলো এখুনি চেক করে দিবেন মিস্টার রিদ “”

“” ওকে স্যার….””

রিদ ফাইল গুলো তুলে নিয়ে যেতে নিলে আবিদ পিছুন থেকে ডাকে..

“” মিস্টার রিদ আমার জন্য এক কাঁপ কফি পাঠিয়ে দিবেন৷””

রিদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো”” ওকে স্যার””

রিদ তার ডেক্সে ফাইল গুলো রেখে রাগে ফুসতে লাগলো .. অফিসে বাকি স্টাফরা কানাঘুষা অলরেডি শুরু করে দিয়েছে ৷ কেউ কেউ রিদের আড়ালে রিদের উপর হাঁসছে ৷

রিদ মুন আর আবিদের দেওয়া ফাইল গুলো চেক করতে লাগলো… এর মাঝে পিয়ন এসে রিদ কে জানায় আবিদ তাকে ডেকেছে ৷ তখনি রিদের মনে পরলো আবিদ কে কফি দেওয়ার কথা ,, রিদ দ্রুত উঠে কফি বানিয়ে নিয়ে যায় আবিদের জন্য…

“” মে আই কামিং স্যার “”

“” ইয়েস…””

রিদ ভিতরে ঢুকে কফিটা টেবিলে রাখে ৷ আবিদ তিক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে রিদের দিকে , রিদ কে যতোবার দেখে আবিদের রাগ যেন ততো রাগ বেরে যায় ৷ আবিদ তার রাগটা কন্ট্রোল করে কফিটা মুখে দিয়ে চোখ মুখ কুচকে রিদের দিকে তাকিয়ে ছুড়ে মারে ফ্লোরে …

“” এই কি কফি নাকি সরবত মিস্টার রিদ ,, যান আর এক কাঁপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসুন ৷””

রিদ দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে যেতে নিলে আবিদ পিছুন থেকে বলে ওঠে… “” ফ্লোর কে ক্লিন করবে মিস্টার রিদ? “”

“” আমি এক্ষুনি ক্লিন করে দিচ্ছি স্যার””

রিদ চুপচাপ ফ্লোর ক্লিন করে ৷ আবার আবিদের জন্য কফি বানিয়ে আনে ৷

আবিদ কে কফি দিয়ে কেবিন থেকে বের হতে আবিদের ঠোটের কোনে বাকা হাসি ফুটে উঠলো ৷

রিদ নিজের ডেক্সে এসে বসতে মুন রিদ কে কল করে কেবিনে আসতে বলে , রিদ বুজতে পারলো আবিদের মতো হয়তো মুন ও এমন কিছু করবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুনের কেবিনের দিকে হাটা দিলো রিদ…….
.
.
.
____________ রায়হান আহাম্মেদ ভোর বেলায় বেরিয়ে যায় ৷ এদিকে রিয়ানা বেগমের গতকাল থেকে দু-চোখে ঘুম নেই ৷ রক্ত বর্ন হয়ে দুচোখ ৷ প্রিয়ন্তি বেলায় বারোটায় ঘুম থেকে উঠে পাউরুটি আর ডিম সিদ্ধ খেয়ে নিয়ে রেডি হয়ে নেয় বিয়ের শপিং করার জন্য … হঠাৎ করে প্রিয়ন্তির ফোনটা বেজে ওঠে ,প্রিয়ন্তি ফোনের স্কিনে ভেষে উঠা নাম টা দেখে চোখ মুখের রং পাল্টে যায় প্রিয়ন্তির , ভয়ে ভয়ে কল টা রিসিব করে …

“” হ্যা ,, হ্যালো ম্যাম..””(প্রিয়ন্তি)

“” বিয়ের ডেট কবে ফিক্সড হয়েছে প্রিয়ন্তি ?””

“” নেক্সট উইক ম্যাম…””

“” ছেলেটাকে বলেছিস তোর আগে দুবার এবোশর্ন হয়েছিল?””

ফোনের ওপাশ থেকে কথা টা শুনে ভয়ে আঁতকে ওঠে ….

“” ম্যাম প্লিজ এমন টা করবেন না ৷ বলুন আমাকে কি করতে হবে? আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো..””(প্রিয়ন্তি)

“” হা হা হা তাহলে শোন তোকে ঠিক কি কি করতে হবে………………”””

“” ওকে ম্যাম আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো..””

“” গুড রাখছি এখন পরে আবার ফোন করবো “”

কল ডিসকানেক্ট হতে প্রিয়ন্তি যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো ৷ কারন যতোবার এই নাম্বার থেকে কল এসেছে ঠিক ততোবার তার রাতের ঘুম হারাম হয়েছে চিন্তায়……

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে প্রিয়ন্তি আর রিয়ানা বেগম দুজনের ভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটে দুজনে রুম থেকে বের হয় দরজা খুলে দেওয়ার জন্য কিন্তু প্রিয়ন্তি রিয়ানা বেগম কে দেখে দরজার কাছে দারিয়ে পরে ৷ রিয়ানা বেগম ধির পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে সামনে তাকিয়ে মানুষ গুলো কে দেখে রিয়ানা বেগম পরে যেতে নিলে প্রিয়ন্তি ছুটে এসে রিয়ানা বেগম কে ধরে ফেলে……

“” খালা মনি তুমি ঠিক আছো ? “”

“” হুম আমি ঠিক আছি…”” সামনে দারিয়ে থাকা মানুষ টির দিকে তাকিয়ে বললো রিয়ানা বেগম ..

“” বুবু তুমি ঠিক আছো তো..??”” রিমা ..

“” তুই রিদের বাপের সাথে কেন রিমা?”” রাগি গলায় জ্বিগাসা করবো রিয়ানা তার মামাতো বোন কে…..

“” বউ তার স্বামীর সাথে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না রিয়ানা?”” হাসি মুখে বললো রায়হান আহাম্মেদ …

রিদের বাবার কথা শুনে আতঁকে ওঠে রিয়ানা বেগম কাপা কাপা গলায় বলে ওঠে ….”” ম,, মা মানে কি বলতাছো রিদের বাপ?””

“” যেটা শুনেছো ওইটাই, আমি তোমার মামতো বোন রিমা কে বিয়ে করেছি আজ-ই”””

রিয়ানা বেগম আর কিছু শুনলো বলে মনে হলো না তার আগে জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল রিয়ানা বেগম… রায়হান আহাম্মেদ প্রিয়ন্তি মিলে রিয়ানা কে নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ৷ প্রিয়ন্তি রিয়ানা বেগমের পাশে বসে রিয়ানা বেগমের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করে… অন্যদিকে….

“” রায়হান ভাই আমরা যা করছি এটা ঠিক হচ্ছে বুবু তো আমাকে আপনার বউ মনে করে শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে ৷ “”

“” রিমা আমি যা করছি ঠিকি করছি রিয়ানা যা যা পাপ করেছে তার শাস্তি তো পেতে-ই হবে ৷ আর আমাদের স্বামী স্ত্রী হওয়ার নাটক ও চালিয়ে যেতে হবে৷””

“” কিন্তু রাইহান ভাই রিদ বাবা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখছেন?””

“” শোন রিমা ছেলে মেয়ে কেউ এখন ছোট নেই সবাই বড় হয়ে গেছে তারা এখন প্রতিষ্ঠিত ৷ নিজেরা নিজেদের ভালো মন্দ যখন বুঝে তখন আমাকে ও বুজবে…””

“” রাইহান ভাই আমার মনে হয় না রিদ আমাকে মেনে নিবে..””

“” এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি তোমার কাজ টা চালিয়ে যাবে আমার বউ হওয়ার নাটক টা যেন রিদ আবিদ বা প্রিয়ন্তি কেউ না ধরতে পারে ৷ ওকেও বুজতে হবে চোখের সামনে নিজের স্বামীকে অন্য কোন মেয়ে সাথে দেখলে কেমন লাগে ৷ কথায় আছে না হাতে না পারলে ভাতে মারো ঠিক এই কাজটাই করবো আমি৷

“” আপনি যা ভালো মনে করেন করুন তবে দেখবেন আমার বোনটাকে এতোটা কষ্ট দিবেন না যাতে ও ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যায়৷””

“” হুম””

এদিকে রিয়ানা বেগমের জ্ঞান ফিরতে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো…

“” প্রিয়ন্তি আমার সব শেষ হয়ে গেল ৷ সব শেষ হয়ে গেল ৷””

“” কেঁদো না খালামনি সব ঠিক হয়ে যাবে “”

“” কিচ্ছু ঠিক হবার নয় প্রিয়ন্তি রিদের বাপ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার-ই বোন রিমা কে বিয়া কইরা আনছে ৷””

“” শান্ত হও খালামনি আমি খালুর সাথে কথা বলবো তুমি ভেবো না “”

“” তুই সত্যি কথা বলবি প্রিয়ন্তি?””

“” হুম বলবো তুমি চুপটি করে শুয়ে থাকো আমি এখুনি আসছি..””

প্রিয়ন্তি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রায়হান আহাম্মেদ এর সামনে এসে দারায়….

আচমকা প্রিয়ন্তি সামনে এসে দারাতে রিমা রায়হান দুজনে ঘাবড়ে যায় এটা ভেবে প্রিয়ন্তি না আবার তাদের কথা শুনে ফেলে…….

প্রিয়ন্তি রিমার দিকে এক নজর তাকিয়ে হুট করে বলে ওঠে …..
.
.
.
#চলবে………………

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-২৪
.
.
.
প্রিয়ন্তি দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে রায়হান আহাম্মেদ এর সামনে এসে দারায়….

আচমকা প্রিয়ন্তি সামনে এসে দারাতে রিমা রায়হান দুজনে ঘাবড়ে যায় এটা ভেবে প্রিয়ন্তি না আবার তাদের কথা শুনে ফেলে…….

প্রিয়ন্তি রিমার দিকে এক নজর তাকিয়ে হুট করে বলে ওঠে ….”” তোমরা কি বলছো খালু ভাতে মারবে না মানে কি যেন বললে?””

“তেমন কিছু না বলছি রিমা কে খেতে দিতে ভাত বা অন্য কিছু..””

প্রিয়ন্তি কিছুটা রেগে গিয়ে রায়হান আহাম্মেদ কে বলে ওঠে “” খালু রিমা খালা কে তুমি যেহেতু এনেছো তখন তুমি রিমা খালার দেখা শুনা করো আমি খালামনির কাছে যাচ্ছি…””

প্রিয়ন্তি রায়হান আহাম্মেদ কে ভারটেক করে রান্না ঘরে গিয়ে চিনির পানি গুলিয়ে নিয়ে আসে রিয়ানা বেগমের কাছে…

“” খালামনি পানি টা খেয়ে নেও ভালো লাগবে…””

“” না প্রিয়ন্তি আমার গলা দিয়ে এক বিন্দু পানি নামবে না ৷ রিদের বাপ কি করে পারলো আমার সাথে এমন টা করতে বল প্রিয়ন্তি ?”” আবার ও ঢুকরে কেঁদে ওঠে রিয়ানা বেগম…

তখনি রায়হান আহাম্মেদ রিমা কে নিয়ে রিয়ানার রুমে ঢুকে …

“” এখন কেমন আছো রিয়ানা? কেমন বোধ করছো?””

“” আমি কেমন আছি সেটা তুমি কি বুজতে পারছো না রিদের বাপ?””

“” আমার বুঝা উচিত বলছো?””

রিয়ানা বেগম আর কিছু বললো না চুপ করে কেঁদে যাচ্ছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগলেন”” রিয়ানা এখন যেহেতু তুমি তোমার বাপের বাড়ি যাচ্ছো না এখন সেহেতু তুমি আজ থেকে বাড়ির সব কাজ করবে ৷ কাজের লোক ছাড়িয়ে দিবো আমি…””

“” কি বলছো খালু খালামনি এই শরীলে কাজ করবে?””

“” কেন মুন মা যদি অসুস্থ থাকা অবস্তায় ঘরে সব কাজ করতে পারে তাহলে ও কেন পারবে না ?””

প্রিয়ন্তি চুপ হয়ে যায় কারন রায়হান আহাম্মেদ এর কথার টন শুনে বুজতে পারলো তিনি মুন কতোটা কষ্ট করেছে তা বোঝানোর জন্য এতো কিছু…..

“” কিহ হলো রিয়ানা এখনো পাথরের মতো বসে আছো কেন ?যাও সবার জন্য রান্না করো ৷ “”

রিয়ানা বেগম এক দৃষ্টিতে তাকায়ে আছে তার স্বামীর দিকে এতো পরিবতর্ন তিনি যেন মেনে নিতে পারছে না ৷ বুকে প্রচন্ড কষ্ট অনুভব করছে ৷ হুট করে মনে হলো কেউ তার বাহু ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখে রায়হান আহাম্মেদ তার বাহু শক্ত করে ধরে রান্না ঘরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷

“” নেও কাজ শুরু করে দেও ঝটপট দু ঘন্টার মধ্যে টেবিলে যেন খাবার পাই না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো বুজতে পেরেছো?””

কথা গুলো বলে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রায়হান আহাম্মেদ ….

রিয়ানা বেগম চোখের পানি ফেলতে ফেলতে চুলা জ্বালিয়ে ভাতের হাড়ি বসিয়ে দেয়৷
.
.
.
.
____________ ” আবির আবিদ কে সবটা জানিয়েছিস তো”( মনিরা বেগম)

“” হ্যা আম্মু কিন্তু আবিদ কে ফোনে পাইনি তাই নিরব কে কলে সবটা জানিয়ে দিয়েছি…””(আবির)

“” যাক তবুও ভালো , তোর আব্বু তার প্রয়োজনে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা একমাত্র আমি জানি কিন্তু তোরা কেউ জানিস না ৷ কিন্তু এবার আর আমি চুপ থাকবো না আমার ছেলে বা ছেলের বউয়ের কোন ক্ষতি হলে আমি ওনাকে ছাড়বো না ৷””

“” কি করবে তুমি? আব্বু যদি জানতে পারে আমি তুমি আব্বু বিরুদ্ধে আবিদ মুন কে সাহায্য করছি তাহলে আমাদের দুজনকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে আম্মু””

“” আমি জানি বাবা কিন্তু তা বলে বসে বসে নিজের ছেলে বউয়ের ক্ষতি করবে আর আমি তা দেখবো তা কখনো হবে না আবির ৷ তুই আজমিরের উপর নজর রাখ ৷ আমি জানি তোর আব্বু আজমির কে এই সব কাজে বিশ্বাস করে তুই ও আজমিরের বিশ্বাস অর্জন কর আর সাথে সাথে থেকে ওর প্রত্যেক টা কাজের উপর নজর রাখ..””

“” ওকে আম্মু তাই হবে৷ আমি তাহলে এখুনি বেরিয়ে যাচ্ছি কারন কিছুক্ষন আগে আব্বু ভাইয়া কে নিরবের মামার বাড়িতে যেতে বলেছে৷””

“” ঠিক আছে যা তবে সাবধান আজমির যেন কিছু বুজতে না পারে…””

“” কি বুজতে না পারে মনি..?””

মনিরা বেগমের কথা শেষ হতে পিছুন থেকে একটা ভারি কণ্ঠ শুনে পিছুনে তাকিয়ে দেখে আফজাল সাহেব …

আফজাল সাহেব কে দেখে আবির আর মনিরা বেগম দুজনে ঘাবড়ে যায় ৷

“” কি হলো আমি কিছু জ্বিগাসা করছি তোমাদের বলছো না কেন?”” (আফজাল)

“” তেমন কিছু না তু, তুমি এখানে কিছু প্রয়োজন তোমার? “”

“” ওহ হ্যা আমার ফোনের চার্জার টা খুজে পাচ্ছি না, কোথায় রেখেছো চার্জার..??””

“” চার্জার তো সাইড টেবিলের প্রথম ড্রয়ারে রাখা আছে..””

“” ঠিক আছে .. আর শোন খুব খিদে পেয়েছে টেবিলে খাবার বারো আমি ফোন চার্জে দিয়ে আসছি..””

“” আচ্ছা.. তুই ও খেয়ে যা আবির””

” আচ্ছা আম্মু…””

মনিরা বেগম দ্রুত চলে গেলে রান্না ঘড়ে…..

অন্যদিকে মুন আর আবিদ এক সাথে লান্চ করছে আর রিদ সামনে দাঁতে দাঁত চেপে দারিয়ে আছে ৷ আবিদের সাথে মুন কে রিদ সহ্য করতে পারছে না ৷ প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রিদের কিন্তু আফসোস কিছুই করতে পারছে না রিদ৷

মুন আবিদ কে খাবার খাইয়ে দিচ্ছ আর রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে ৷ আবিদ আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে রিদ কে ৷ রিদের হাবভাব বোঝার ট্রাই করছে এর মাঝে আবিদের ফোনটা বেজে ওঠে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে নিরব নামটা ভেষে উঠেছে৷ আবিদ কল টা রিসিব করে …

“” হ্যালো দোস্ত আমি তোর দেওয়া এড্রেসে পৌছে গেছি কিন্তু বাড়িতে তো কেউ নেই কয়েকজন কাজের লোক ছাড়া…””

“” ওকে তুই আদঘন্টা ওয়েট কর আমি আসছি “”

“” ওকে””

কল ডিসকানেক্ট করে আবিদ মুনকে বলতে লাগলো..”” মনপাখি আমাকে এখুনি বের হতে হবে তোমার কি আজ আর কোন ইমপটেন্ট কাজ আছে ?””

“” হ্যা গো মির্জা কোম্পানির সাথে আজ একটা মিটিং আছে উমম আদ ঘন্টা পর .. ” ঘড়ি দেখে বললো মুন

“” তাহলে তো আর তোমাকে নিয়ে যাওয়াটা হলো না আমার..””

“” উফফফ আবিদ তুমি না যাও যেখানে যাচ্ছো ৷ আমাকে ফাইল টা চেক করতে হবে ৷ আর এই যে মিস্টার রিদ এগুলো ক্লিন করে আপনি আপনার কাজে ফিরে যান””

“” ওকে ম্যাম””

রিদ নিঃশব্দে নিজের কাজ গুলো করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ৷ তখনি আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে মুনের ঠোট জোড়ায় দখল করে নিলো ৷ মুন আবেশে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ রিদ মুনের কেবিনে পানির গ্লাস রেখে আসার জন্য দরজায় নক করতে যাবে তখনি খেয়াল করে দরজা খোলা রিদ ভিতরে তাকিয়ে আবিদ মুনকে জরিয়ে ধরে মুনের ঠোট জোড়া দখল করে আছে এটা দেখে রিদের বুকের বা পাশে চিন চিনে ব্যাথা অনুভব করলো ৷ রিদের অজান্তে দু-চোখ থেকে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ৷ রিদ আর ভিতরে ঢুকলো না দরজা চাপিয়ে নিজের ডেক্সে গিয়ে বসে পড়লো রিদ….

আবিদ কিছুক্ষন পর মুন কে ছেড়ে দিয়ে মুনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে…

“” নিজের খেয়াল রেখো মনপাখি আর কোন প্রব্লেম হলে আমাকে কল করবে আমি সাথে চলে আসবো আর ওই লোকটাকে আজ আর কোন শাস্তি দিতে হবে না ওকে””

“” ঠিক আছে , আর তুমি সাবধানে যাবে ওকে””

“” একদম মনপাখি..””

আবিদ মুনের থেকে বিদায় নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল৷ মুন কিছুক্ষন পর মিটিং রুমে চলে গেল …
.
.
.
.
“” রিয়ানা রিয়ানা ..”” জোড়ে চিৎকার করে রিয়ানা বেগম কে ডাকতে লাগলো রায়হান আহাম্মেদ … রিয়ানা বেগম শাড়ির আচলে হাত মুচতে মুচতে দৌরে আসে …

“” কি কি হয়েছে রিদের বাপ?””

“” কি হয়েছে মানে ক-টা বাজে হুম দুপুর দুটো বেজে গেছে আর এখনো রান্না হয়নি আমি খাবো কি হুম?””

“” রান্না প্রায় শেষ রিদের বাপ তুমি আর একটু অপেক্ষা করো আমি আমি এখুনি তোমাকে খেতে দিচ্ছি৷ “”

“” চুপ একদম চুপ আমার কথা অমান্য করার শাস্তি তো তুমি পাবে রিয়ানা ,,””

“” শাস্তি ..””(অবাক হয়ে)

“” হ্যা শাস্তি আর শাস্তি টা হলো আজ সারাদিন তোমার খাওয়া বন্ধ ৷ যাও রান্না ঘরে যাও বাকি রান্না টা শেষ করো আমি ততোক্ষনে রিমার সাথে সময় কাটাই..””

রায়হান আহাম্মেদ মুচকি মুচকি হেসে রিমার রুমের দিকে চলে গেল৷ রিয়ানা বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রায়হান আহাম্মেদ এর যাওয়ার দিকে আজ যেন তার স্বামীকে নয় নিজের ছেলে কে দেখছে ৷ ঠিক এই একই ব্যবহার করেছিলো মুনের সাথে আর আজ তা তার নিজের সাথে ঘটছে৷ রিয়ানা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল৷

.
.
.

রিদ মুনের দেওয়া কাজ গুলো মনযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হচ্ছে না যতোবার কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে ঠিক ততোবার আবিদ আর মুনের ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি চোখের সামনে ভেষে উঠছে৷ ৷ এর মাঝে রিদের ফোনটা বেজে ওঠে ৷ ফোনের স্কিনে নাম টা না দেখে কল রিসিব করে কানে ধরে…..

“” হ্যালো ..””

“” রিদ ভাইয়া তুমি কি আজ একটু তারাতারি বাড়ি আসবে.?””

গলা শুনে রিদের বুজতে মটেও অসুবিধা হয় না যে এ প্রিয়ন্তি…

“” কেন কি হয়েছে?””

“” বাড়িতে আসলে জানতে পারবে রিদ ভাইয়া প্লিজ একটু তারা তারি আসার চেষ্টা কর””

“” ঠিক আছে আমি দেখছি ম্যাম আমাকে এই হাফ বেলার ছুটি দেয় কিনা…””

“” ঠিক আছে রিদ ভাইয়া রাখছি তাহলে..””

“” হুম””

কল কেটে আবার কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কারন যতোক্ষন না মুন মিটিং শেষ করে বের হচ্ছে ততোক্ষন ওকে অপেক্ষা করতে হবে৷ এক ঘন্টা পর মুনের মিটিং শেষ করে কেবিনে আসতে রিদ গিয়ে কেবিনে সামনে গিয়ে নক করে ..

“” কামিং…”” ফাইল দেখতে দেখতে বললো মুন…..

রিদ কেবিনে প্রবেশ করতে মুন ফাইল নামিয়ে রিদের দিকে তাকায়…

“” ম্যাম আমার এই হাফ বেলা ছুটি প্রয়োজন “”

“” আপনাকে যে কাজ গুলো দেওয়া হয়েছে সে গুলো কম্পিলিট মিস্টার রিদ?””

মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে রিদ..

“” ওয়াও কাজ কম্পিলিট না করে আপনি এসেছেন ছুটি চাইতে বাহ আপনার সাহস দেখে আমি যাস্ট স্পিচলেস মিস্টার রিদ….””

“” ম্যাম প্লিজ ছুটিটা আমার খুব দরকার বাড়িতে কোন একটা প্রব্লেম হয়েছে আমাকে যেতে হবে ম্যাম…””

মুন কিছু একটা ভেবে পারমিশন দিয়ে দেয় রিদ কে রিদ মুন কে থ্যাংকিউ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷

তার কিছুক্ষন পর মুন ও বেরিয়ে পরে অফিসের গাড়ি নিয়ে …….
.
.
.

এদিকে রিদ বাড়িতে সবটা জেনে প্রচন্ড রেগে যায় ৷ রাগে থরথর করে কাঁপছে রিদ ৷ চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলে রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে রিদ আর সামনে দা……
.
.
.
#চলবে……………