অচেনা শহর ২ পর্ব-২৯+৩০

0
819

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[২৯]

অন্তরা অয়নকে কোলে করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে দেয়।
অয়ন সাথে সাথে উঠে বসে পরে।

কি হলো?
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে অন্তরা।

আমি এখন ঘুমাবো না।

কেন ?

পাপ্পা আসুক তারপর ঘুমাবো। আজকে পাপ্পার সাথে ঘুমাবো আমরা।

অন্তরা মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেল। বলে কি এই ছেলে,

না।

কেন মাম্মা? তুমি আমি পাপ্পা এক সাথে ঘুমায় না কেন? সবাই তো তার মাম্মা পাপ্পার সাথে ঘুমায়।
উত্তরের আশায় অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন।
মায়ের কাছে থেকে উত্তর না পেয়ে আবার ও অন্তরার হাত ধরে টেনে বলে।

অন্তরা মুখে হাসি টেনে বললো, তোমার পাপ্পা তো খুব বিজি কাজ নিয়ে। রাতে অনেক কাজ করতে হয় তাই আমরা আলাদা ঘুমায় যাতে তার সমস্যা না হয়।

আমরা তার সাথে ঘুমালে তার ডিস্টার্ব হবে এটা কেমন কথা।

অন্তরা পরেছে বেকায়দায় এই ছেলে এতো প্রশ্ন করতে পারে যে।‌

ডিস্টার্ব হবে বলে নি কিন্তু আমি জানি তার প্রবলেম হবে তাই তো মানা করছি।

না আজকে পাপ্পার সাথে ঘুমাবো আমি।
বলেই জেদ ধরলো।

অন্তরা কিছুতেই নিশাতের সাথে এক রুমে ঘুমাতে পারবে না। কি করবে ও অয়ন জেদ করছে ওকে মানানো যাচ্ছে না।
তখন আগমন নিশাত ভাই এর। এসে অয়ন বলে হাঁক ছাড়ল আর পায় কে ওকে লাফিয়ে ছুটলো সেদিকে।
নিজেও ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিশাতের ঘরে উঁকি দিলো অয়ন নিশাতের কোলে চড়ে আছে হাতে এক গাদা মজা যা পেয়ে অয়ন খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে।
কি যেন কথা বলছে আর হাসছে যেন এরাই সত্যি কারের বাবা ছেলে। এটা যদি সত্যি হতো কিন্তু আফসোস এটা মিথ্যা ওই প্রতারক টার সন্তান ও। যার জন্য কিনা ও অয়নকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো ছিঃ লজ্জা করে এসব ভাবতে তখন বাবা মা আত্নীয় স্বজন সবাই কিভাবে আমাকে ফেলে দিয়েছিলো কলঙ্কিনী বলেছিলো। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, আমাকে নিয়ে নিন্দা মন্দ করে আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছিলো তখন এই মানুষটি আমাকে সব কলঙ্কের হাত থেকে রক্ষা করে। বিয়ে করে। অয়নকে নিজের সন্তান এর পরিচয় দেয়।
কতো রকম মানুষ হয় এই পৃথিবীতে। হৃদয় এর মতো খারাপ মানুষ ও আছে আবার নিশাত এর মতো মহান মানুষ ও আছে।
__________________

স্নেহা চোখ খুলে আরো আধা ঘন্টা পর।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আদ্রর মুখটা দেখতে পায়। ওর পেটের কাছে বসে বিরবির করে কথা বলে যাচ্ছে। আমি বিস্মিত হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি‌। পাগল হলো নাকি একা একা কি সব কথা বলছে কার সাথে বলছে। রুমে তো কেউ নেই।

আপনি কি পাগল হলেন নাকি একা একা কি সব কথা বলছেন?
বলতে বলতে উঠতে গেলাম আমি।আদ্র কথা অফ করে ফট করে আমার কাঁধ ধরে আবার শুইয়ে দিলো।আমি ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে বললাম,

কি হলো? উঠতে দিচ্ছেন না কেন?

শুয়ে থাক অসুস্থ তুমি।

আমি বললাম, আমার আবার কি হলো? সরুন উঠতে দিন।

না বললাম না। চুপচাপ শুয়ে থাকো।

আমি হাঁ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি‌।

আদ্র এবার হাত বারিয়ে আমার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে উন্মুক্ত করে দিল আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

কি করছেন কি এ….

আমার কথা শেষ করতে দিলো না। বলতে বলতে আদ্র আমার পেটের উপর ঝুঁকে চুমু খেলো। আদ্রর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম। ছিটকে উঠে বসে পেট ঢেকে রেগে তাকালাম আদ্রর দিকে,

আপনার তো অফিস শেষ হয় নাই এখনো। এতো আগেই বাসায় কি করছেন?

ব‌উকে আদর করতে আগেই চলে এলাম।

কিহ একদম আমার কাছে আসবেন না দূরে যান।

আচ্ছা তোমাকে আদর করতে দিবে না ঠিক আছে আমার প্রিন্স/ প্রিন্সেস কে আদর করতে দাও।

মানে?
বুঝতে না পেরে।

তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে ব‌উ।

কি?

আদ্রর কি যেন ভেবে বলল, বলবো?

হুম বলুন তারাতাড়ি কি সারপ্রাইজ?

স্নেহা আমরা বাবা মা হতে চলেছি। বলেই এগিয়ে এসে স্নেহার পেটের উপর হাত রেখে বলে,
এখানে আমার আর তোমার সন্তান আছে।

আমি আদ্রর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্র হাত এগিয়ে স্নেহার গালে রাখে।

কি হয়েছে মুখ এমন মলিন করে ফেললে কেন তুমি খুশি হ‌ও নি?

আদ্রর কথা শুনে আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম।

আমার আদ্রিতা ক‌ই আদ্র? ওকে এনে দাও না আমার কাছে। আমার কাছে থেকে কেড়ে নিলো আমি আটকাতে পারলাম না ব্যর্থ তা আমি‌।

আদ্র স্নেহার চোখ মুছে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
যে নেই তাকে নিয়ে না কেঁদে যে আসছে তাকে নিয়ে আনন্দ করো না একটু। আল্লাহ যদি চায় আমরা আমাদের সন্তান পাব দেখো অচেনা যে শহর এই থাকুক না কেন একদিন তার দেখা পাব দেখো।

আমি কথা কথা বলছি না। কথা বলতে পারছি না চোখে বৃষ্টি পরছে।
________________

পাঁচ বছর আগে,

চোখ মেলে নিজেকে একটা অপরিচিত রুমে পায় আমি বিছানায় শুয়ে আছি। এটা কোথায় আমি আমার তো বিয়ে আদ্রর সাথে তখন হৃদয় আসলো আর কিছু তো মনে নেয়।
ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।
ছোট একটা রুমে বিছানা একটা ড্রেসিংটেবিল আছে। আর কিছু নাই একটা জানালা আছে কিন্তু লাগানো। আমি এগিয়ে জানালা খুললাম হৃদয় এলো তারপর আমার কেন কিছু মনে পরছে না।এটা কোথায় আমি বাইরে জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। এই জঙ্গল বাসায় কি ভাবে আসলাম শত ভেবেও কিছু মনে করতে পারলাম না।
দরজা ঠাস ঠাস করে শব্দ করছি ডাকছি কিন্তু কোন সারা শব্দ নেই।
ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলাম। কেউ আমাকে তুলে এনেছেন আমি বুঝতে পারছি। আদ্রর সাথে আমাকে থাকতে দেবেনা লোকটা মাইশা বলেছিল সেই কি আমাকে এখানে এনেছে। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
তবুও কাঁদছি আদ্র কোথায় আপনি? আদ্র আমার জন্য পাগলামো করছে বোধহয় আমাকে না পেলে।কি করবে ও?
তখন দরজা খট করে খুলে কেউ ভেতরে এলো আমি তার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে ওর সাথে এক গ্লাস পানি।
হৃদয় কে দেখে আমি বিস্মিত হলাম ও এখানে কি করছে ?
আচ্ছা হৃদয় কি আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে। আমার শুকনো মুখে হাসি ফুটে উঠলো,

আমি দাঁড়িয়ে পরলাম,
হৃদয় আপনি এখানে কিভাবে এলেন?

হৃদয় বলল,,,
পানি খাও গলা শুকিয়ে গেছে এতো কাঁদছ যে।

আমি পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।

আপনি আমাকে খুঁজতে এসেছেন তাইনা। এখানে কেউ আমাকে তুলে এনেছেন কিন্তু অদ্ভুত আমার কিছু মনে নেই। শেষ সময় আমি আপনাকে দেখেছিলাম। আপনি আমার রুমে এসেছিলেন তাইনা।

হৃদয় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।

আমি কিভাবে এলাম এখানে কেউ আমাকে তুলে এনেছেন জানেন আপনি আমাকে কি করে পেলেন? আদ্র ও কি আপনার সাথে এসেছে? কোথায় ও।

বলেই আমি দরজার দিকে খুশি হয়ে যাচ্ছিলাম।
একটা কথা শুনে থেমে গেলাম।

আদ্র আসি নি আর না আসবে।

হৃদয় এর গম্ভীর কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
কি সব বলছেন আসবে না মানে?

হৃদয় এক পা এগিয়ে আমার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। হৃদয় এর তাকানো আমার ভালো লাগছে না। তবুও কিছু বলছি না চুপ করে উওর এর আশায় তাকিয়ে আছি।

তোমার আর আমার মাঝে আমি কাউকে আসতে দেব না।

হৃদয় এর কথাটা আমার বুকে তীরের মত বিধলো। আমি বিস্মিত হয়ে হৃদয় এর দিকে তাকিয়ে আছি। হৃদয় নেশা ভড়া চোখে তাকিয়ে থেকে হাত উঁচু করে আমার স্পর্শ করতে যাবে আমি পিছিয়ে গেলাম।
হৃদয় কে আমার কেমন যেন লাগছে? ও এখানে কি করে এলো? আর তখন আমি শেষ বার হৃদয় কে দেখেছিলাম তাহলে কি এসব এ ওর কোন হাত আছে।

~~চলবে~~

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩০]

হাঁটু ভাঁজ করে বসে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছি। চোখের পানি বাধা মানছে না এতো বড় সত্য শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছী। এমনটা কল্পনাতেও ভাবিনি।এতো বড় ধোঁকা হৃদয় এর থেকে খাব কখনো ভাবিনি। বারবার অন্তরা মলিন মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠছে ও এসব জানলে কি করবে? এই কয়দিন ও কতোটা কষ্টে ছিলো সেটা আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি ও মে খুব ভালোবাসে‌ এই প্রতারক টাকে। আমরা এতোদিনে একটুও আঁচ করতে পারলাম না কিভাবে? কতোটা বিলিভ করতাম হৃদয় কে নিজের ভাই মনে করেছি সেই এমন হবে।
অন্তরার সামনে আমি কি করে দাড়াবো আমার জন্য ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল।
হৃদয় কেন এমনটা করলো কেন ও তো অন্তরাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো ওদের এনগেজমেন্ট অবধি হয়েছে তাহলে কিছু আমার মাথায় ঢুকছে না কিছু না।
কেমন জানি সব ধোঁয়াশা লাগছে সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
একটু আগে হৃদয় আমাকে জানিয়েছে ও আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে। তার কারন ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। অন্তরার কথা বললে ও বলে ওর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছে। কিন্তু এতো কিছু অভিনয় ছিলো আর আমরা কেউ বুঝতে পারলাম না।
হৃদয় বলে,
আমি কি না করেছি আদ্রকে তোমার থেকে আলাদা করতে বলো। আদ্রকে গুলি করালাম শালা মরে গিয়ে ও মরলো না। সুস্থ হয়ে কি করলো আমাকে কিনা আমার ভালোবাসা মানুষের বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে ধরলো। রাগে আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো জান কিন্তু নিরুপায় ভালো সাজার অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে তোমাদের বিয়েতে থাকতে হলো। চেষ্টা করেও বিয়ে আটকাতে পারলাম না তাই তো মাইশা কে দিয়ে ওইসব করে তোমাকে ওই আদ্রর মার কাছে খারাপ করেছিলাম যাতে তোমাদের মেনে না নেয়। আর আমি ভেবেছিলাম আদ্রর নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যাবেনা তারা না মানলে তোমাকে ছেড়ে দেবে আর তখন আমি তোমায় সাহায্য করবো কিন্তু আমার কপাল খারাপ শালা তোমাকে নিয়ে বাসা থেকে চলে আসতে চাইলো। এতো ভালোবাসা আমি চাইনি। ভালো তো আমি শুধু তোমায় বাসবো কিন্তু আদ্র হতে দিচ্ছিলো না। তাইতো আদ্রকে বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজি আমি করলাম তুমি ভেবেছো তোমার কথা শুনে গিয়েছে ইটস রং। আদ্রকে রাত ভড় আমি বুঝালাম তোমার থেকে দূরে যাওয়া উচিত এতে তুমি ওর ভালোবাসা বুঝবে আর আদ্রকে এটাও বললাম গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করো না। আদ্র না রাজি হলো না ও তোমাকে এক সেকেন্ড না দেখে থাকতেই পারবে না। রাগে আমার মন চাইলো এর চোখ উঠিয়ে ফেলি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে ভালো করে বুঝালাম এটাই যে আদ্র দূরে গেলে তুমি ওর মর্ম বুঝবে শেষে রাজি হলো। আমি প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ও যাওয়ার পর তোমাকে বাসা থেকে তারিয়ে দেবে আমি তোমাকে আমার বাসায় আনবো সব ঠিক ছিলো। রাস্তায় ছেলেরা তোমাকে ডিস্টাব করবে আমি হিরো হয়ে তোমাকে বাঁচাবো কিন্তু মাঝখানে সব গেটে দিলে তুমি ওই বাসায় গিয়ে আর বের হলে না। আমি সারা রাত ওই বাসার বাইরে মশার কামড় খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সমস্ত প্লান নষ্ট করে দিলে। পরে অন্তরার থেকে জানতে পারলাম ওইটা নিশাত এর বাসা।
আরেকটা কথা কি যেন বলছিলে অন্তরার সাথে এসব কেন করেছি আরে ওর সাথে এসব না করলে আমি তোমার কাছাকাছি থাকতে পারতাম নাকি।আর না তোমার সমস্ত ইনফরমেশন পেতাম। বোকা মেয়ে কি সুন্দর আমার অভিনয় টাকে ভালোবাসা ভেবেছে। বড্ড বোকা।
এতো কিছু করেও আমি তোমায় পেলাম না তাই তো ওকে ইগনোর করা শুরু করলাম এতো নাটক আর সহ্য হচ্ছিলো না।

সব শুনে স্তব্ধ করা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি সব কিছু হৃদয় করেছে মাইশা কে নিয়ে। আর অন্তরার সাথে সব মিথ্যে। আমি রেগে ওর গালে চর মেরে বসলাম।

ছিঃ ছিঃ ছিঃ আপনি এতো খারাপ। কতো ভালো ভেবেছিলাম। আর আপনি এসব করেছেন। অন্তরার সাথে এসব কেন করলেন কেন ওর জীবনটা নষ্ট করলেন।

একটা সত্য কথা বলি আমি কিন্তু তোমার আগে অন্তরাকে লাইক করেছিলাম কিন্তু সেটা জাস্ট
প্রেম করার জন্য। আর একবার যে মেয়েকে আমার ভালো লাগে তাদের আমি নিজের করেই ছারি। কিন্তু পরে তোমাকে দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমি কিভাবে যেন তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। কিন্তু ওই আদ্রর জন্য বাগে আনতে পারিনি। তাই অন্য রাস্তা ধরলাম। আর আজ আমি সফল।

আপনার বাবা মা তো অন্তরাকে দেখতে গিয়েছিলো সেসব কি ছিল।

সেসব নকল বাবা মা আমার বাবা কে জানো?

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।

আমার বাবা হলো আদ্রর বাবার বিপক্ষে পার্টি ওই আদ্রর বাবার জন্য সে ভোটে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। কি সুন্দর তাইনা বাবা ছেলের শত্রু একজন।

দরজা খুলার আওয়াজে সম্মতি পেলাম হৃদয় খাবার আর ড্রেস নিয়ে এসেছে।

আমার সামনে এসে বললাম,‌ ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার টা খেয়ে নাও দুইদিন পর আমার আর তোমার বিয়ে।

বিয়ের কথা শুনে চমকে তাকালাম।

আমি বিবাহিত আপনি সেটা জানেন কিন্তু।

হুম জানি তো ওইটা কোন বিয়ে নাকি আর আমি জানি আদ্র আর তোমার এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি। আর হলেও আমি তোমায় ছারতাম না।

আদ্র আপনাকে পেলে খুন করে ফেলবে।

পেলে তো করবে। তার আগে আমি তোমাকে আমার করে ফেলবো।

হৃদয় চলে গেলো আমি এক নজর খাবারের এর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম খাব না আমি কিছুতেই না।
ওদিকে আদ্র কি অবস্থায় আছে কে জানে। ও খুব পাগলামো করছে আমি জানি।
এখানে থেকে কি করে বের হবো আদ্র আমাকে এই প্রতারকটার থেকে বাঁচাও।
আমি উঠলাম ও না নরলাম ও এইভাবেই থাকবো কিছু করবো না যতক্ষন এখানে থাকতে হবে খাব না‌ গলা দিয়ে আমার খাবার নামবে না।

এদিকে আদ্র কোন ভাবেই স্নেহাকে পাচ্ছেৎনা আনন্দের স্থানে এখন সবাই থমথমে মুখ করে আছে। বিয়ের বদলে এমন কিছু কেউ আশা করে নি। আদ্রকে কেউ সামলাতে পারছে না তাই শেষে রাহাত ওকে নিয়ে আলাদা করে বলল,
মাইশার কথা এসবে ওর হাত আছে। ওকে ধরলে পাওয়া যাবে স্নেহাকে।

আদ্র রাহাত এর কথা শুনে শান্ত হলো। ছুটে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। ওর সাথে রাহাত আশিক ও গেল। উদ্দেশ্যে মাইশাদের বাড়ি সেখানে গিয়ে ও নিরাশ হলো মাইশা বাসায় নেই। কোথায় থাকতে পারে ও ইচ্ছে করে লুকিয়ে আছে। কারন এসবের পর ওকে আমরা খুঁজব ও জানতো তাই লুকিয়েছে। রাত হয়ে গেছে মাইশার খোঁজ পাওয়া যায় নি আদ্র পুলিশ এর কাছেও গিয়েছিলো তারা খোঁজ করছে।
স্নেহার কিছু হলে আমি মাইশা কে খুন করে ফেলবো।
রাগে গজগজ করতে করতে বললো।
রাহাত ওর ঘারে হাত দিয়ে বলল,
কিছু হবে না স্নেহার দেখিস।
আমার ভয় করছে খুব।
ভয় পাস না।
কিন্তু আদ্র শান্ত হতে পারছে না। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে ভয় হচ্ছে স্নেহার কোন ক্ষতি হবে না তো। আমি তোমাকে সেভ রাখতে পারলাম না আমি ব্যর্থ। নিজের ওয়াইফকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলাম না। আদ্রর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
রাহাত জোর করে বাসায় নিয়ে এলো সবাই চিন্তিত হয়ে আছে। আদ্রর চোখ গেল সিগ্ধর দিকে তার কাছে গিয়ে পায়ের কাছে বসে কাঁদতে লাগলো বাচ্চাদের মতো। সিগ্ধ ও কাঁদছে বোনের জন্য।
আদ্র কে কেউ বাসায় রাখতে পারলো না এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতেছে। ওর অবস্থা একদম নাজে হাল হয়ে গেছে।



এদিকে হৃদয় রুমে এসে দেখে স্নেহা সেই ভাবে বসেই ফুপাচ্ছে। খাবার পরে আছে ছুঁয়ে ও দেখে নি জামা কাপড় ও পরেই আছে ও যে নড়েও নি দেখেই বুঝা যাচ্ছে হৃদয় এসে স্নেহাকে খেতে বললো। স্নেহা সাথে সাথে না করে দিলো ও খাবে না কিছু।
হৃদয় খাওয়ানোর ট্রাই করছে ও আচমকা হৃদয় এর পা চেপে ধরে বলল,
আমাকে আদ্রর কাছে যেতে দেন প্লিজ। আদ্র কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে যেতে দিন।
হৃদয় সেসব তোয়াক্কা করলো না খেতে বলল। স্নেহার হাত পায়ে থেকে সরিয়ে।‌
কিন্তু স্নেহাকে রাজি করাতে পারলো না তাই বিরক্ত হয়ে রেগে বেরিয়ে গেলো।
সারারাত কেঁদে ভাসিয়ে দিলো স্নেহা। ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সকালে রাহাত এসে আদ্রকে বলে চল আমার সাথে আমি জানি কোথায় আছে মাইশা।
কিভাবে?
রাহাত আদ্রকে নিয়ে যায় একটা বাসায়। রাহাত মাইশার সাথে হাত মিলিয়েছিল তখন মাইশা বলেছিলো ও এখানে এসে থাকে তাই সন্দেহ হয়েছে ওর। এখানে এসে মাইশা কে পেয়ে যায়। আদ্র মাইশা দেখেই তো গলা চেপে ধরে।
বল স্নেহা কোথায়? কি করেছিস ওর সাথে?
আচমকা আদ্র দের এখানে দেখে মাইশা হতবাক ও ভাবতেই পারেনি এতো তারাতাড়ি আদ্র ওকে ধরে ফেলবে।
রাহাত অনেক কষ্ট আদ্র কে ছারিয়ে এনে বলে।
এসব করিস না মাইশার থেকে আমাদের স্নেহার কথা জানতে হবে।

তখন কিছুটা শান্ত হয় আর মাইশা জিজ্ঞেস করে।
মাইশা বলে ও কিছু জানে না।
হাজার বার জিজ্ঞেস করেও ওর মুখ থেকে কিছু জানতে পারে না রাগে আদ্র ওর বাসার চেয়ারে লাথি মারে আর চিৎকার করে বলে,

রাহাত ওকে বলতে বল সব। না হলে ওকে আমি এখানেই পুঁতে ফেলবো।

যাই করুক মাইশা মুখ খুলে না। তাই না পেরে ওকে একটা চেয়ারে শক্ত করে বেধে রুমে বন্ধ করে ফেলে। সব কিছু রাহাত করে। আদ্র তো ওকে মেরে ফেলতে চাইছে। তাই ওকে অনেক কষ্টে দূরে রেখেছে ওকে মারলে স্নেহাকে আমরা পাব না।

সব না বলা পর্যন্ত এভাবে থাক তুই।
বলে রাহাত আদ্র কে জোর করে নিয়ে পুলিশ এর কাছে আসে তারা একটা গাড়ি পেয়েছে যেটা কালকে আদ্র বাসা থেকে যেতে দেখা গেছে সিসি ক্যামেরাতে।
বাসায় যে সিসি ক্যামেরা ছিলো সব অফ করে কাজ করেছে এজন্য তার কোন ফোটেজ পায়নি‌।এটা রাস্তার ফোটেজ সেই গাড়িটা পেয়েছে কিন্তু তার মালিক বাবুল এসবের কিছুই জানে না বলছে। তিনি নাকি কালে একজন লোকের কাছে ভাড়া দিয়েছিল।
এখন সেই ভাড়া দেওয়া লোকটাকে খুঁজছে আর বাবুল কেও পুলিশ জেলখানায় আটকে রেখেছে তাকে ও সন্দেহ করেছে।

#চলবে