#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩৪]
মাইশার সাথে কথা শেষ করে অফিসে গেল নিশাত। চেয়ার হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কপালে আংগুল চালাতে লাগলো।
এর জন্য তো হৃদয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি।এতো তন্ন তন্ন করে খুঁজে ও পাওয়া যায় নি। কোন দেশে গিয়ে লুকিয়ে আছে হৃদয়।কিভাবে জানবো?
ওর পরিবার কিন্তু সেখানেও কেউ তো ওর খবর জানে না বলেছে।
হৃদয় তো আসবে দুই দিনের মাঝে তাহলে এখন আমার একটা কাজই করণিয়। ওকে ধরতেই হবে।
:
ভাইয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম একে মানানো আমার সম্ভব না। ভাইয়া ভাবিকে বাসায় রাখবে কি স্ত্রীর অধিকার আর দেবে না। আমি হাল ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
ভাবির কাছে গিয়ে দেখি সে বিছানায় বসে চোখের জল ফেলছে আমাদের কথা শুনেছে আমি দেখেছি।
আর ভেতরে ঢুকলাম না নিজের রুমে চলে এলাম।
বিছানায় এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম আদ্র কল করেছিলো।আমি জানতাম কল করবে মিনিট এ মিনিট এ কল করতে হবে উনার।
ফোন হাতে বসে রইলাম ফোন দিচ্ছে না ধুর বিরক্ত হয়ে কল লিস্ট এ গিয়ে ফোন করতে গিয়ে কি মনে করে যেন আদ্রর বদলে অন্তরাকে কল করলাম ওকে জানানো হয়নি।
হ্যালো কেমন আছিস?
ভালো, তুই?
আলহামদুলিল্লাহ। অয়ন কেমন আছে?
ভালোই আছে। বসে বসে আকাম করছে?
কি করছে?
গাড়ি ভেঙে সেটা ইন্জিনিয়ার হয়ে ঠিক করছে।
ভালো তো ওর কাছে দে।
আচ্ছা ধরো।
অন্তরাকে স্নেহা ডাকছে কিন্তু সে আসলো না বললো, মাম্মা তুমি আম্মু ( স্নেহাকে আম্মু বলে অয়ন) কে পরে কল করতে বলবো। আমি এখন বিজি আছি ইম্পর্টেন্ট কাছে।কথা বলতে পারবো না।
ওর সিরিয়াস কথা শুনে হেসে ফেললাম।
আচ্ছা ওকে ওর ইম্পর্টেন্ট কাজ করতে দে।
অন্তরা আর স্নেহা অনেক সময় কথা বললো। এদিকে আদ্র কল করেই যাচ্ছে আর বারবার বিজি পাচ্ছে নাম্বার বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো বিছানায়।
এতো কার সাথে কথা বলছে স্নেহা। এদিকে আমি ওর জন্য ছটফট করছি আর ও আমার কথা না ভেবে কার সাথে এতো কথা বলছে।
অন্তরার সাথে কথা শেষ করতেই আদ্রর কল এলো। এতোক্ষণ কল করে নিশ্চয়ই বিজি পেয়েছে। ফোন কানে ধরতেই আদ্র ককর্শ আওয়াজ এলো,
এসব স্নেহা আমি তোমাকে পাগলের মতো কল করে যাচ্ছি। আর তুমি আমার ফোন রিসিভ না করে অন্য কারো সাথে কথা বলে যাচ্ছ।
আরে শুনুন তো।
কি শুনবো তুমি একটু ও আমাকে ভালোবাস না? এখন পর্যন্ত আমার তোমার প্রতি যে টান সেটা তোমার ক্ষেত্রে দেখলাম না।
অলস মুখ করে দাঁড়িয়ে আদ্রর কথা শুনছি কিছু হলেই এইসব কথা বলতে লাগে লোকটা।
আদ্র নিজের অভিযোগ এর পালা শেষ করে থামলো।এবার আমি বললাম,
আমি অন্তরার সাথে কথা বলছিলাম। আপনার কল দিতে দেরি হচ্ছিল তাই।আর তার আগে আমি ভাইয়ার কাছে ছিলো ফোন রুমে রেখে তাই ধরতে পারিনি।
খাইছো?
হুম, আপনি?
এখনো না খাবো।
এখনো খাননি কেন? হালকা রেগে।
কাজ করছিলাম। আম্মু খাবার দিয়ে গেছে খাব এখন।
আচ্ছা তাহলে খেয়ে কল করেন রাখি।
না না তোমাকে আমি কি রাখতে বলছি।
আপনি খাবেন তো পরে কথা বলেন।
না আগে বলো আমার রাজকন্যা কেমন আছে?
আদ্রর কথায় অবাক হলাম।
সাথে মন খারাপ হলো। আদ্র বুঝতে পেরে।
আরে মন খারাপ করবে না বলে দিচ্ছি। না হলে কিন্তু আমি খাব না।
উফফ বিরক্ত করেন না তো তারাতাড়ি খেয়ে কল করবেন রাখি না হলে কল রিসিভ করবো না।
এমন করলে আমি এই রাতে তোমার কাছে চলে আসবো কিন্তু। আমার ক্লান্ত শরীর নিয়ে কষ্ট হবে তাও আসবো কল কেটে দেখো শুধু।
আদ্রর হুমকি শুনে আর কল কাটতে পারলাম না।যে লোক উনি তখন সত্যি চলে আসবে।
আদ্র কল কাটলো না খেতে খেতে কথা বললো।
ফোন কানে নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পরলাম।
__________
পাপ্পা তুমি আমাকে রেখে কোথায় যাবে?
মন খারাপ করে হিয়া বললো হৃদয় এর দিকে তাকিয়ে।
হৃদয় ওর কাছে এসে গালে চুমু খেল তারপর হেসে বললো,
তোমার মাম্মা কে আনতে যাচ্ছি তাকে নিয়ে চলে আসবো ততক্ষন তুমি ন্যানির কাছে থাকবে লক্ষি মেয়ে হয়ে ওকে।
মাম্মা কে আনতে? পাপ্পা মাম্মা কোথায় আছে?
সেটা তো বলা যাবে না এটা সারপ্রাইজ?
আমাকে নিয়ে চলো তাহলে?
না তুমি এখানেই থাকবে ?
হিয়া মন খারাপ করে বসে তাকিয়ে রইলো।
মন খারাপ করো না। আমি তো খুব দ্রুত ফিরে আসবো। এই যাব আর আসবো।
কিন্তু আমার তো কষ্ট হবে মিস করবো তোমাকে?
ফোন করবো তো।
তবুও।
অনেক কষ্টে হিয়াকে মানতে চাইছে মানছে না। হৃদয় বিরক্ত হয়ে ঠাস করে চড় মেরে বসলো হিয়ার গালে। রাগে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে এতো বিরক্ত করতে পারে অসহ্য।
হিয়া কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো। তারপর স্নেহার একটা ছবি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,,
মাম্মা পাপ্পা আমাকে মেরেছে তুমি এসে পাপ্পাকে বকে দিবে কেমন?
বলেই স্নেহার ছবি বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো।
হৃদয় হিয়ার দেখাশোনা করার জন্য একজন মহিলাকে রেখেছে তার নাম এলিনা তাকে ডেকে উঠলো দৌড়ে আসলো,
আমি কিছু দিনের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছি তুমি হিয়াকে সামলে রেখো।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
সেটা তোমার জানার দরকার নাই। যতটুকু বলেছি করো।
বলেই বেরিয়ে গেলো।
_______________
পরদিন নিশাত পুলিশ ফোর্স নিয়ে ইয়ারপোট ঘেরাও করে ফেলেছে হৃদয় কে ধরবে বলে।
এদিকে হৃদয় বাংলাদেশ পা রেখেই নিজের আমেরিকার সমস্ত জিনিস ফেলে দেয়। ওর ভয় যদি জেনে যায় কেউ তাই। ও বাথরুমে গিয়ে ছদ্রবেশে ইয়ারপোট বাঁকা হেসে বেরিয়ে আসে।
বাইরে এসেই নিশাত ও তার লোকদের দেখে শয়তানি হাসি দেয়।
সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে সবার সামনে একটা গাড়িতে গিয়ে বসে কেউ ওকে চিনতে ও পারেনা।
পরদিন স্নেহা বাসায় চলে আসে ভাইকে আরেকবার বুঝিয়ে সাথে ভাবিকে ও বলেছে সে যেন আশা না ছাড়া আস্তে আস্তে ঠিক ক্ষমা করে দেবে ভাইয়া বলে চলে আসে।
অন্তরা অয়ন কে নিয়ে শপিং করতে এসেছে। অয়নকে ধরতেই পারছে না খালি দৌড়ে দৌড়ে এদিকে ওদিকে চলে যাচ্ছে এতো দুষ্টু হয়েছে ছেলেটা কি বলবো?
ও পেছনে থেকে রেগে ওকে থামাতে বলছে।
হৃদয় ড্রেস কেনার জন্য শপিং এ এসেছে। বিদেশ থেকে কিছু নিয়ে আসে নি এখন ড্রেস কিনে বাসা ভাড়া করতে হবে। ও ব্যাগ হাতে ছদ্রবেশে চলে আসতে নেয় তখন এখন বাচ্চা ছেলের সাথে ধাক্কা লাগে ফলে হাতের ব্যাগ পরে যায় ও রেগে অয়ন কে ধমকে উঠে। অয়ন চঞ্চল হলেও ধমক শুনে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। অন্তরা এসব দেখে দ্রুত অয়নের কাছে যায় অয়ন মাম্মা বলে ওর হাত জরিয়ে ধরে।
হৃদয় বকতে বকতে ব্যাগ হাত তুলে নেয়।
তারপর মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতেই থমকে যায় অন্তরাকে দেখে। তিন বছর পর অন্তরাকে দেখছে অন্তরাকে। গায়ে নীল রঙের থ্রি পিস পড়া। আগের থেকে মোটা হয়েছে কিছুটা সাথে সুন্দর ও হয়েছে। থমকে অন্তরার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে চিনে ফেলে নিতো ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
অন্তরা এগিয়ে এসে হৃদয় কে বলে,
সরি মিস্টার। আমার ছেলে বুঝতে পারেনি। খুব চঞ্চল অয়ন আন্কেল কে সরি বলো আসো।
অয়ন এগিয়ে এসে হৃদয় এর দিকে তাকিয়ে বলে,
নো মাম্মা আমি সরি বলবো না।
অয়ন সরি বলো।
নো।
অন্তরা চোখ রাঙিয়ে তাকালো তাতেও কাজ হলো না। তাই হালকা হাসি টেনে বললো,
কিছু মনে করবেন না। আসি।
বলেই রেগে অয়ন এর হাত ধরে টানতে টানতে চলে গেলো হৃদয় বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
অন্তরার ছেলে অবাক হয়ে ওর তো নিশাত এর সাথে বিয়ে হয়েছে শুনেছি এটা কি নিশাত এর সন্তান। তাই হবে হয়তো।
চলবে~~~
#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৩৫]
ইয়ারফোর্টে সারা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় এসেছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিশাত। বাথরুমের থেকে গোসল সেরে বিছানায় শুয়ে পরলো। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। এতো সময় থেকেও হৃদয় এর খোঁজ পেলাম না তাহলে কি ও আসে নি মাইশা মিথ্যা বলেছে। চোখ বন্ধ করে রইলো।
হৃদয় কে পাবে কি করে? ও তো ছদ্রবেশে এসেছে সাথে নাম ও চেন্জ ওর পাসপোর্ট এ। যার জন্য ওকে নিশাত ধরতেই পারেনি।
অয়ন নিশাতের আশার খবর পেয়ে পড়া অফ করে নিশাতের রুমে এসে দেখে ও শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। অয়ন পা টিপে টিপে ওর পেটের উপর উঠে বসে। আর চিৎকার করে পাপ্পা বলে উঠে। কেবল ঘুম ধরছিলো নিশাতের তখন চিৎকার শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসতে গিয়ে দেখে অয়ন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসছে।
অন্তরা রান্না ঘরে থেকে চা করে নিয়ে আসে নিশাত এর জন্য।
ভাইয়া আপনার চা।
কথাটা বলেই তাকিয়ে রেগে উঠে অয়নকে পড়া ছেড়ে উঠে আসতে দেখে।
তুই এখানে কি করছিস? তোকে তো পরতে দিয়েছিলাম।
বলেই গরম চোখ করে তাকিয়ে এগিয়ে যায়।
নো মাম্মা আমি এখন পাপ্পার কাছে থাকবো। তুমি যাও এখানে থেকে।
না এখন পাপ্পা টায়ার্ড তুমি আমার সাথে চলো পাপ্পাকে রেস্ট নিতে দাও।
অয়ন কথা শুনছে না জেদ করে নিশাত এর সাথে চেপে আছে। নিশাত উঠে অন্তরার থেকে চা নিয়ে বলল,
থাক। তুই যা।
কিন্তু।
আমি সামলে নেব।
অন্তরা বাধ্য হয়ে চলে গেলো। বাইরে এসে বুড়ির কাছে যাবে তখন কলিং বেল বাজলো কাজের মেয়ে খুলে দিয়েছে কে এসেছে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তখন দেখলো আদ্র কাকা।ও সালাম দিল তিনি গম্ভীর মুখ করে উওর নিয়ে নিশাতের মায়ের রুমে চলে গেল।
অন্তরা আর তার কাছে গেল না। নিজের রুমে এলো।
রাতে পরলো ঝামেলায় দুজনেই। অয়ন বায়না ধরেছে আজ ও মা বাবা দুজনেই মাঝে ঘুমাবে। সেই নিয়ে রাগ করে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। খাচ্ছেও না। নিশাত আর অন্তরা দরজায় বাইরে দাঁড়িয়ে ওকে ডেকে যাচ্ছে।
অয়ন দরজা খুল।
না মাম্মা আগে তোমরা রাজি হয়ে তারপর।
থাপ্পড় দিবো কিন্তু একটা বেশি বেড়ে গেছিস তুই!
অন্তরার রাগ উঠে গেছে নিশাত অন্তরার হাত ধরে টেনে দরজার কাছে থেকে আনলো।
কি করছিস বকসিস কেন?
দেখছেন না কি সব বলছে ফাজিল ছেলে।
বকিস না যদি কিছু করে বসে বাচ্চা ছেলে। রাজি হয়ে যা।
কিহহ?
চোখ কপালে তুলে।
নিশাত শ্বাস ফেলে বলে,
এখন রাজি হ। ও ঘুমিয়ে গেলে আমি তোদের রুমে ঘুমিয়ে যাব নি এসে।
কিন্তু,,
ওর মন খারাপ করিস না ও তো আর জানে না আমরা নিজের স্বামী স্ত্রী মানি না। ওর সামনে আমি নিজেকে খারাপ করতে চাইনা।
আচ্ছা।
অন্তরা রাজি হতেই অয়ন দাঁত বের করে হেসে বেরিয়ে এসে জরিয়ে ধরলো অন্তরাকে।
_________________
আমি সকালেই চলে এসেছি এই বাসায় আদ্র অফিস থেকে আমাকে ফোন করলো,
হ্যালো, স্নেহা আমি তোমাকে নিতে আসছি রেডি হয়ে থেকে।
আরে শুনুন আপনি আইসেন না।
আদ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো,, কেন তুমি কি আজকেও থাকবে। এটা কিন্তু ঠিক না তুমি আজ চলে আসবে বলেছিলে!
স্নেহা হঠাৎ হেসে ভাবলো আমার আসছি বলবো না।
হুম আজ না আমি কাল যাব আপনি বাসায় চলে যান।
স্নেহা আমি আজকেই তোমাকে নিয়ে যাবো।রেডি থাক আমি আসছি।
আমি যাব না। এসে লাভ নেই।
আমি জোর করে নিয়ে আসবো।
তাও যাব না। ভাইয়া আমাকে আজ যেতেই দিবে না। আপনি চলে যান। আসলে আপনাকেও থাকতে হবে।
আচ্ছা আমিও থাকবো।
ধুর এখন কি বলবো? দাঁত দিয়ে আংগুল কামাড়াচ্ছি।
আদ্র বলল,
আসছি তাহলে।বাই।
না না রাইখেন না।
কেন? আমি এখন ড্রাইভ করবো।
আইসেন না আমি বাসায় এসেছে।
মানে কোন বাসায়।
ধুর ওইবাসায় যাইয়েন। আমি এখানেই আছি।
কখন আসছো?
সকালে!
তাহলে না করলে কেন? আর একা কেন গেছো?
আমি আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে নাকি। জোর করে চলে যাবেন ওইখানে।
হুম যাবই তো।
রাখি সাবধানে আসবেন।
হুম। এসে তোমার খবর করবো আমাকে মিথ্যা বলা তাইনা।
_________________
অন্তরা বিছানার বাম সাইডে জরোসরো হয়ে শুয়েছে। ওর খুব আনইজি ফিল হচ্ছে। ভাইয়ার সাথে এক খাটে ঘুমাতে হবে কখনো ভাবেনি। কিন্তু এই দুষ্টু ছেলের জন্য তাও করতে হচ্ছে।
মাঝখানে তৃপ্তির হাসি দিয়ে শুয়ে আছে অয়ন আরেকপাশে নিশাত। অয়ন নিশাত এর উপর হাত পা দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে। আর কথা বলছে হাসছে।
এই দুজন কে একসাথে দেখলে অন্তরার বুকটা ভরে যায়। যেখানে নিজের সন্তানের খোঁজ না নিয়ে অন্যের সন্তান নিয়ে লুকিয়ে পরেছে হৃদয়। নিজের সন্তানের একটু ও খোঁজ নেয়নি।স্নেহা জানিয়েছিলো সে না করে দিয়েছে অস্বীকার করেছে। এতোটা ঠুনকো ছিলো আমার ভালোবাসা। ভালোবাসিস না কাছে কেন এসেছিলি। কেন ? অন্তরা বাদ দিয়ে দিলো ওর চোখ জল চিকচিক করছে তারাতাড়ি মুছে নিলো ওই প্রতারকটার জন্য কখনো কাঁদবো না আমি।
নিশাত এর দিকে তাকিয়ে ওর মায়া হয় ভাইয়া আর জীবনটা আমার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো। ফুপি জোর করে আমার সাথে তাকে বিয়ে দিলো।আমি বিয়ের আগেও ভাইয়াকে বলেছিলো,
সেদিন,
ভাইয়া আমি এই বিয়ে করবো না আপনার চিন্তা করবেন না।ফুপি যা বলার বলুক। উনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে উনি ভুলেই গেছেন আপনার কতো ক্ষতি করছে। আমার মতো একটা নষ্টা মেয়েকে আপনার সাথে জরিয়ে আপনার ক্ষতি করছে। আপনি কেন অন্যের সন্তান কে মেনে নেবেন।আপনার ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করবেন পছন্দ মতো। আর তার সাথে আপনাদের সন্তান হবে।
নিশাত পুরোটা সময় চুপ করে অন্তরার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
তোর কথা শেষ হলে আমি বলেছি এবার।আমি এই বিয়েটা নিজের ইচ্ছায় করতেছি।কেউ জোর করছে না।
অন্তরা অবাক হয়ে তাকালো।
তারপর বলল,
কেন করছেন? আমি দয়া চাই না। পাপ আমি করেছি তার মাশুল আমিই দেবো। আপনি রাজি থাকলেও আমি করবো না বিয়ে।
তুমি কি চাস? তোর জন্য মামু মামির মুখ সবার সামনে নিচু হোক। সবাই তাদের কথা শুনাক।
কিন্তু আমি আপনাকে মানতে পারবো না কখনো।
আমিও আর আমি জোর করবো না কখনো তুই তোর মতো থাকবি আমি আমার মতো সবাই জানবে আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ কিন্তু আমরা জানবো আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই।
অন্তরা নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে।
কি রে রাজি থাকলে চল।
অন্তরা কথা বলছে না।ও একটুও রাজিনা।
নিজের পরিবারের কথা ভাবিস। তোর সিদ্ধান্তের উপর অলির ভবিষ্যত নির্ভর করছে। ও বড় হচ্ছে কিন্তু।
অন্তরার কিছু ক্ষন ভেবে চোখ বন্ধ করে মুছে বেরিয়ে এলো নিশাত ও এলো।
মাম্মা কথা বলছো না কেন কি ভাবছো তুমি?
অয়ন ঘুরে অন্তরাকে ডাকে অন্তরা চিন্তায় মশগুল ছিলো শুনতে পায়নি।অয়ন হাত বাড়িয়ে অন্তরার হাত ঝাকাতে লাগে।অন্তরা চমকে উঠে দেখে দুই জোরা চোখ ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
কি হয়েছে?
তুমি কি ভাবছো কখন থেকে ডাকছি।
কিছু না তুই ঘুমাবিনা। তারাতাড়ি ঘুমা। তোর কথা শুনলাম।
অয়ন মন খারাপ করে চোখ বন্ধ করলো।
___________________
হৃদয় মাইশা কে লোক দিয়ে তুলে এনেছে। আর নিজে এখন মরার মতো ঘুমিয়ে আছে।
সপ্নে ও অন্তরাকে দেখলো।অন্তরাকে কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
কেন আমাকে ঠকালে হৃদয় আমার কি দোষ ছিলো। আমি তো তোমাকে সত্যি ভালোবাসেছি। তুমি কেন আমার ভালোবাসা নিয়ে অভিনয় করলে।কেন আমার মনটা ভেংগে দিলে।
তখন পেছনে থেকে একটা চার পাঁচ বছরের এর ছেলে মাম্মা বলে ডাকলো।
নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে অন্তরা। হৃদয় হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।
হৃদয় ধরফরিয়ে উঠে বসলো।
ঘেমে একাকার হয়ে গেছে হৃদয়। গ্লাস ভর্তি পানি ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
_______________
আদ্র বাসায় এসেই রুমে এসে স্নেহাকে পেছনে থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে কামড়ে ধরে।
আমি আকষ্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে আহ করে উঠে।
চাপা রাগ করে নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,
পাগল হলেন নাকি ছারুন রাক্ষস এর মতো কামড়াকামড়ি করছেন কেন?
ছারানোর চেষ্টা করতে করতে।
আদ্র কে কি ইচ্ছে করলেই ছারানো যায়। সে ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে চেপে করে। আদ্র নিজের থুতনি আমার কাঁধে রাখে আমি কেঁপে উঠলাম।
ছারুন কি করছেন?
তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছি তার শাস্তি এটা।
ছারুন তো আপনার শরীর দিয়ে ঘামের গন্ধ আসছে। আমার বমি পাচ্ছে।
নাক সিটকে উঠলাম আমি। আদ্র তা দেখে আমাকে ছেড়ে দিলো আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সরে আসবো তার আগেই আমাকে ঘুরিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো আমি ইয়া বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকালাম কি হলো মারতে বললাম এ তো আরো চেপে ধরেছে।
আদ্র মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে আমার একদম কাছে এসে গেল।
কি করছেন?
কি বললে আমার শরীর দিয়ে গন্ধ আসছে।
হুম।
ওকে এভাবেই থাকবো গন্ধ শুকো একটু।
বলেই এগিয়ে নিলো আমার নাকের কাছে।
আমি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে বললাম।
আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ছারুন।
না ছারবো না। আমার শরীর দিয়ে গন্ধ আসে তাই না। এখন এইভাবেই আধা ঘন্টা থাকবো।
অসহায় মুখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।লোকটার মাথা গেছে একেবারে।
ছারুন না সত্যি খারাপ লাগছে।
আদ্র হাত বাড়িয়ে আমার কপালে থেকে চুল সরিয়ে বলল,
আচ্ছা ছারতে পারি একটা চুমু দাও। প্রমিজ ছেড়ে দেবো।
আমি কড়া চোখে তাকিয়ে আছি।
কি হলো এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই যা বলছি তাই করো না হলে কিন্তু…
তখন দরজা খুলে আশা এলো। ভাবি ভাবি করতে করতে আদ্র তা শুনে চমকে ছেড়ে দাঁড়ালো।
চলবে~~~