#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:২৫
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
আরশির হাতের উপর হাত রেখেছে সাভাশ।দুজনে ছাদে বসে জোসনা বিলাশ করছে।আরশি বলল,
“সাভাশ জানেন নানু বলেছে যে বিয়ের পর না কি এভাবে ছাদে বসে থাকা ভালো না রাতের বেলা।”
“এসব কথা বাদ।তুমি জানো আজ আমাদের হানিমুন।”
আরশি কথাটা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়।সে ভড়কে গেছে কথাটা শুনে।সাভাশ বলে,
“পূর্নিমার চাঁদ আকাশে আর আমার পাশে হানি।হানিমুন না তাহলে।”
আরশি দাঁত বের করে হেসে দেয়।সাভাশ নিজের বুকে হাত রেখে মনে মনে বলে,
“এই হাসির জন্য তো জান ভি কুরবান।”
সাভাশ এবার একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
“আমাদের হানিমুনে যেতে হবে কিন্তু।তোমার সেমিস্টার এক্সাম শেষ হলেই আমি আর তুমি পেরু যাবো হানিমুনে।”
আরশি বলল,
“আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটু সময় দেওয়া উচিত।আর কিছুদিন আগেই তো আমরা কুমিল্লা থেকে এলাম সেটা কি হানিমুন ছিল না?,,,তাছাড়া পেরুর কথা কেন বললেন?বাংলাদেশে ঘুরার মতো কতো জায়গা আছে।”
সাভাশ বলল,
“পেরুর পাহাড় পর্বত আর বিশুদ্ধ বাতাস আমার ভীষণ পছন্দ।আমি একবার গিয়ে সাত দিন থেকে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর বিয়ে ছিল বিয়ের দাওয়াত খেতেই সেখানে যাওয়া।সেখানকার প্রকৃতি আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে।”
আরশি কিছু বলে না সাভাশের মাথা রাখতে তার অনেক ইচ্ছা করছে কিন্তু কোথাও না কোথাও সে বাঁধা পাচ্ছে।সাভাশ আরশির মাথাটা নিজে থেকেই কাঁধের উপরে রাখে।আরশি হাসে।লোকটা তার মনের ভাবনাগুলো পড়তে জানে।
;
;
;
তীব্র! তীব্র নামক ব্যক্তিটা আজকাল কেমন আছে?মানুষটার দিন কেমন যাচ্ছে? সে কি নিজের পছন্দের কাউকে খুঁজে নিতে পেরেছে যার সঙ্গে সে বাকিটা জীবনের পথ চলার নকশা করতে পারবে? ভার্সিটির ক্লাসে বসে বসে হঠাৎই আরশির হৃদয়ে এসব কথার সৃষ্টি হয়।
প্রফেসর এদিকে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করছে সেটা যেন একদম ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।
তীব্রর ব্যাপারটা হঠাৎ মস্তিষ্কে আসার কারণ অবশ্য আছে।আরশির ব্যাগে একটা বই ছিল যেখানে আরশি মজার ছলে লিখেছিল,”তীব্রর জন্য তীব্রতর ভালোবাসা।” এখন সেই বই সংক্রান্ত ক্লাস তাই বইটা খুলতেই লেখাটার সঙ্গে আরশির এক তরফা চোখাচোখি হয়ে যায়।
আর এরপরেই আরশির মনে তীব্রকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন ভীর করে।প্রফেসর বোর্ডে লিখে কিছু বোঝাচ্ছিলেন।পঁচিশ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তার তাই ক্লাস নেওয়ার সময় তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় প্রবলভাবে সক্রিয় থাকে।যেকোনো শিক্ষার্থীকে ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় এক ঝলক দেখেই উনি শিক্ষার্থীর হাব ভাব ধরে ফেলতে পারেন। উনি বোর্ডে লিখতে লিখতে পেছনে তাকালেন।সবাই নোটস লিখতে ব্যস্ত একজন ছাড়া।সেই বালিকাটির দৃষ্টি বোর্ডের উপর নিবদ্ধ।প্রফেসর হাসেন আজকে তার শিকার তিনি পেয়ে গেছেন।ক্লাসের সবাই ওনার ক্লাসে পিন ড্রপ সাইলেন্স বজায় রাখার সাথে সাথে মনোযোগী হয়ে থাকে কারণ সবার চোখে উনি শিকারি।এই শিকারীর জালে না চোখি শিকার আটকা পড়ে।যে সেখানে আটকাবে আজকের মতো তার ক্লাস থেকে বিদায় নিতে হবে।প্রফেসর মার্কার নামিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,
“খালাম্মা আপনি নোটস লিখছেন না কেন জানতে পারি?আপনার জ্ঞান কি আমার তুলনায় বেড়ে গেছে যে আপনার কাছে আমার দেওয়া জ্ঞান এখন তুচ্ছ হয়ে গেছে?”
আরশি ঘোর ভাঙ্গে প্রফেসরের ডাকে।সে হকচকিয়ে আশেপাশে তাকায় আর হতাশ হয়।আশে পাশে তাকিয়ে সে বুঝতে পারে আজকে তাকে ধুয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রফেসর।আরশি মাথা নিচু করে বলে,
“প্রফেসর আমি দুঃখিত আমার মনোযোগ কিছুটা সময়ের জন্য অন্যদিকে চলে গিয়েছিল।”
“ওহ আম সরি আমার কারণে তোমার মনোযোগ ক্লাসে ফিরে এসেছে।যাইহোক ইতোমধ্যেই তোমাকে অনেক ডিস্টার্ব করে ফেলেছি আর করতে চাই না।”
আরশি বুঝতে পারে প্রফেসর তাকে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে বলছে।তাই বিনীত সুরে বলল,
“স্যার আমি এই জরুরী ক্লাসটা মিস করতে চাইছি না তাই এবারের মতো যদি আমাকে ক্ষমা করতেন।”
আরশি কথা শুনে স্যার মার্কারের ঢাকনা খুলে বললেন,
“তুমি যেহেতু তোমার জরুরি ভাবনার চেয়ে আমার ক্লাসকে জরুরী মনে করো নি তাই আমিও তোমাকে ক্লাসে রাখাটা জরুরি মনে করছি না।তাছাড়া ইতোমধ্যেই আমি এই অধ্যায়ের একটা জরুরী পার্ট বুঝিয়ে ফেলেছি যা নিশ্চয়ই তুমি মনোযোগ দিয়ে শোনো নি।পরের পার্ট বোঝার জন্য আগেরটা জানা জরুরি সো তুমি নিজের সময় এখানে নষ্ট না করলেই ভালো হবে।”
আরশি আর অপেক্ষা না করে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়।ক্যাম্পাসের বাইরে দাঁড়িয়ে সে ভাবছে এখন কি করবে বাড়িতে যেতে তার ইচ্ছা করছে না কারণ এখন বাড়িতে কেউই নেই।শুধু আছে চাচী শাশুড়ি যিনি এই মুহুর্তে হয়তো ঘুমাচ্ছেন।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আরশিকে ডাক দেয়।আরশি পরিচিত গলা শুনে পেছনে তাকায়।আরেহ!এটা তো তীব্র ভাই।আরশি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল সেদিনের পর তীব্রর সঙ্গে হওয়া প্রতিটা দেখা হবে সাধারণ চাচাতো ভাই বোনের মতো।আরশি মুখে হাসি টেনে হাত নাড়িয়ে বলে,
“আরে তীব্র ভাই!কেমন আছেন?”
তীব্র এগিয়ে আসে।হেসে বলে,
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস?”
“ভালো।আপনি এখানে কেন?”
“ওহ আসলে তানহার পক্স উঠেছে লিভ এপ্লিকেশন দিতে এলাম।তোর ক্লাস আজ এতো জলদি শেষ!”
তীব্র ঘড়ি দেখতে দেখতে কথাটা বলল।আরশি বোকা হাসি দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটা তীব্রকে বলল।তবে কোন বিষয় নিয়ে অন্যমনস্ক ছিল সেটা এড়িয়ে গেল।
তীব্র বলল,
“আরু তুই কিছু খাবি?চল তোকে কেন্টিন থেকে কিছু কিনে দেই।”
আরশি নাকোচ করে হাত নাড়িয়ে বলল,
“না না তীব্র ভাই।আমি এখন বাসায় যাবো।যেই গরম পড়েছে!যতক্ষণ ক্লাসে ছিলাম শান্তি ছিল।এখন মনে হচ্ছে ওভেনের ভেতরে আছি।আমি এখন ডাইরেক্ট বাসায় যাবো।”
তীব্র ইতস্তত করে বলল,
“তোকে আমি বাসায় পৌছে দেই।”
“না তার দরকার নেই।আমি স্কুটার এনেছি।”
তীব্র কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
“সাভাশ তোকে স্কুটার চালাতে দেয়?!না মানে ও তোকে নিতে আসবে না?”
আরশি হেসে বলল,
“সাভাশ আমাকে কখনোই কিছুতে বাঁধা দেয় না।তবে বলেছে যদি কোনোদিন এই স্কুটারের কারণে আমার হাত থেকে এক ফোঁটা রক্ত ঝড়ে তবে স্কুটারের সর্বনাশ সে করবে।”
তীব্র কিছু বলে না প্রতিউত্তরে।আরশি হঠাৎ শান্ত গলায় বলল,
“আপনি কি জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেবেন?”
তীব্র নির্বাক ভঙ্গিতে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে বলে,
“আমি চেষ্টা করছি।কিন্তু ব্যাপারটা সহজ কিছু না।আমি সবসময় এমন কাউকে চেয়েছি যে আমাকে বুঝবে।আমি যার সঙ্গে সব কথা বলতে পারবো।নেহা আমার জীবনে এমন কেউই ছিল।তারপর তুই,,,,।”
আরশি তীব্রকে কথা শেষ না করতে দিয়ে চলে যেতে যেতে বলে,
“তীব্র ভাই আজ যাই আপনি একদিন সময় করে আমাদের বাসায় আসবেন।”
তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝতে পারে আরশি পালিয়েছে।অবশ্য পালিয়ে যাওয়াটা কখনো কখনো ভালো হয়।তীব্র দেখে ফুটপাতে কিছু জিনিস বিক্রি করছে এই যেমন:ব্রেসলেট,আংটি ইত্যাদি।তীব্রর চলে যেতো কারণ এসব জিনিসে তার শখ নেই।কিন্তু হঠাৎ একটা ব্রেসলেট ওর চোখে ধরে।কেন যেন সেটার প্রতি তীব্রর অদ্ভুত আকর্ষণ হয়।তীব্র নিচু হয়ে সেটা তোলার জন্য হাত বাড়াতেই অতি সুন্দর একটা হাত সেটা নিয়ে নেয়।তীব্রর রাগ হয় চরম রাগ।জিনিসটা তার বড্ড বেশি পছন্দ হয়েছে অন্য কেউ কেন নেবে?
তীব্র রাগী মুখ করে পাশ ফিরে তাকাতেই একজোড়া বিড়াল চোখের সঙ্গে চোখাচোখি হয় তার।চোখ জোড়া বড় নয় তবে অসাধারণ।তীব্রর কুচকানো ভ্রু সোজা হয়ে যায় মুখ হা হয়ে যায়।মেয়েটা হাসে কিন্তু এটা বোঝার জন্য ঠোঁটের দিকে তাকাতেই হয় না তীব্রকে।মেয়েটার চোখ হাসছে।খুব কম মানুষ ঠোঁটের সাথে সাথে চোখের সাহায্যেও হাসি প্রকাশ করে এই মেয়ে তাদেরই একজন।
মেয়েটার মিষ্টি স্বর তীব্রর কানে ঝন ঝন করতে থাকে।মেয়েটা বলে,
“ভাইয়া সরি আমি এটা নিয়েছি আপনি অন্যটা দেখুন।”
তীব্রর বুক ধুকপুক করে ওঠে।এটা তার জীবনে প্রথম অদ্ভুত অনুভূতি কোনো অচেনা মেয়েকে দেখে।মেয়েটার কন্ঠ তো কন্ঠ নয় যেন একটা মধুর চাক।এতোটা মধুময় কোনো মানুষের কন্ঠ কি করে হতে পারে?নিশ্চিত জন্মের পর অনেক গুলো মধু খাওয়ানো হয়েছিল মেয়েটিকে।
মেয়েটা টাকা পরিশোধ করে যখন চলে যাচ্ছিল তখন তীব্রর হুশ ফিরে।মেয়েটা তার পছন্দের জিনিসটা নিয়ে নিল আর সে হাবলার মতো শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো।তীব্র জোর গলায় ডাকে,
“এই মেয়ে এই যে মিস,,হোয়াট এভার শুনো।”
মেয়েটা পেছন ফিরে তাকায়।তীব্র এই তাকানোতেও মাধুর্যতা খুঁজে পায়।সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না জ্ঞান হারায়।
মেয়েটা দৌড়ে এসে তীব্রর পাশে বসে।চিন্তিত সুরে বলে,
“ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন?হায় আল্লাহ্ এই লোকের কি হলো?”
তীব্র শুধু বিড়বিড় করে বলে,
“আমি নিজেকে হারিয়ে নতুন আমি কে পেয়েছি।”
;
;
;
নিজের জ্ঞান ফেরার পর তীব্র নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।মাথার পেছনে বেশ ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।তীব্র হাত দিয়ে বুঝতে পারে ব্যান্ডেজ করা।সে ধীরে ধীরে উঠে বসে।শবনম দ্রুত এসে ছেলেকে বসতে সাহায্য করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন,
“বাপ তুই ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কেন করিস না।আজকে রাস্তায় এভাবে ধিরিম করে পড়ে গিয়ে মাথাটা তো ফাটালি।জানিস কয়টা সিলি পড়ছে?”
“কয়টা?”
“তিনটা সিলি দিতে হয়েছে।পরী মা যদি না থাকতো তবে আজ তোকে কে হসপিটালে আনতো আল্লাহ্ জানে।”
তীব্র ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“কে পরী?”
শবনম বেগমের পেছন থেকে উঠে এসে বিড়াল চোখের মেয়েটা বলল,
“আমার নাম পরী।ভাইয়া আপনি এখন ঠিক আছেন তো?”
তীব্র বিড়াল চোখের নীল হিজাব আর নীল বোরখা পড়া এই মেয়ের নাম পরী।তীব্র বিড়বিড় করে বলল,
“তুমি সত্যিই পরী?তাহলে আল্লাহ্ হয়তো আমার জীবন গুছিয়ে দিতেই তোমাকে পাঠিয়েছে।”
তীব্র এবার মায়ের দিকে তাকায় তখনই তার বাবা কেবিনে প্রবেশ করেন হাতে কিছু ওষুধ পত্র নিয়ে।তীব্র বলে,
“এই মেয়েটাকে তুমি আগের থেকে চেনো মা?”
শবনম বেগম নাক উঁচিয়ে বলল,
“চিনি একদম চিনি।ও আমার বান্ধবীর মেয়ে।”
কথাটা শুনে তীব্রর ইচ্ছা করছে নিজের মাথা দেয়ালে বাড়ি দিয়ে আবার ফাটাতে।তার মায়ের নজরে এই সুকন্যা থাকা সত্তেও তার মা এতোদিন মেয়েটাকে তার সঙ্গে দেখা করায় নি।
তীব্র ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
“তানহা বাসায় এক?”
“ওর এই জ্বরে ওকে একা রেখে আসবো পাগল হয়েছিস?তোর ছোট মা বাসায় আছেন উনিই খেয়াল রাখবেন তানহার।”
“ওহ্,,হসপিটাল থেকে রিলিজ কখন দেবে?”
রাফিউল আহসান মানে তীব্রর বাবা বললেন,
“কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার হাতের স্যালাইনটা শেষ হোক আগে।”
তীব্র মাথা নাড়িয়ে আবার পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে।কেউ একজন সত্যিই বলেছে আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।সত্যিকারের ভালোবাসা হয়তো এভাবেই প্রলয় নিয়ে আসে জীবনে কিন্তু এর সমাপ্তি ঘটে স্নিগ্ধতার মাধ্যমে।
পরী নিজের ব্যাগ কাঁধে তুলে নিয়ে বলে,
“আন্টি আজ আসি আমার এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।আপনারা একদিন আমার বাসায় আসবেন।”
আহসান দম্পতি পরীকে বিদায় জানান।পরী বের হতে না হতেই এক প্রকার চিৎকার করে তীব্র বলে,
“মা বাবা আমি এই পরীটাকেই বিয়ে করবো।আমি আর কোনো দেরী চাই না।”
শবনম বেগম আর রাফিউল আহসান ছেলের আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।ছেলে কি তাদের পাগল হয়ে গেছে না কি?
;
:
;
;
সাভাশ আজ সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আরশির সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলে নি শুধু বলেছে,
“খেয়েছো?”
“হুম।”
এতোটুকু কথা এরপর সাভাশ গোসল করে সেই যে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে রাত নয়টা বাজে এখনো আসার নাম নেই।আরশি সাভাশের মোবাইলে ফোন দিল কিন্তু সাভাশ রিসিভ করলো না।
আরশি আভাসের রুমে গিয়ে দেখে আভাস বসে বসে খাতায় অঙ্ক কষছে।আরশির সাভাশের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে গলা থেকে যেনো শব্দ বের হয় না।
আরশির বেশ কষ্ট হচ্ছে।সে রুমে ফিরে যায় রাতের খাবারের সময় হয়ে যায় কিন্তু সাভাশের দেখা নেই।আরশিকে তুযে একবার এসে ডেকে যায় খাবারের জন্য কিন্তু আরশি ঘুমিয়ে থাকার ভান করায় তুযে আর ডাকে না।এই বাড়ির সবার একটা কড়া শর্ত আছে কেউ ঘুমিয়ে গেলে তার ঘুমে কোনো কিছুর বিনিময়ে এরা ডিস্টার্ব করবে না।
আরশি দেয়ালে সাভাশের আর নিজের ছবিটা দেখে মনটা আরো খারাপ করে ফেলে মনে মনে বলে,
“লোকটা আজ আসছে না কেন?সকালে কি উনি আমার কোনো কথায় রাগ করেছেন?,,, আচ্ছা আমি কবে থেকে অন্যের রাগ নিয়ে এতো ভাবতে শুরু করলাম?আমি তো এসব নিয়ে ভাবতাম না।,,,কিন্তু আমি তো ওনাকে তেমন কোনো কথাই বলি নি।”
আরশি আরো অনেক কথা ভাবতে ভাবতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
;
আরশি সাভাশকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কি হয়েছে আমার জামাইটার সে কি আমার উপরে রেগে আছে?”
সাভাশ রুডলি আরশিকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,
“আমি তোমার কে হই হ্যা?!আমাকে তো তুমি ভালোবাসো না তবে আমাকে নিয়ে এতো চিন্তার কি আছে?আমি রাগ করি আর যাই করি তাতে তোমার তো যায় আসে না।”
আরশি কথাগুলো শুনে করুন স্বরে বলল,
“সাভাশ আপনি হঠাৎ এমন করে কথা বলছেন কেন?”
সাভাশ একটা পাঞ্জাবি পড়ে বলল,
“তুমি যেহেতু আমাকে ভালোবাসো না তাই আমি শিলার কাছে চলে যাবো।”
তখনই শিলা একটা লাল বেনারসি পড়ে রুমে ঢুকল মুখে বউদের মতো সাজ আর হাসি।সাভাশ শিলার হাত ধরে বলল,
“আরশি ভালো থেকো আমি শিলাকে বিয়ে করবো।”
সাভাশ শিলার হাত ধরে হেঁটে চলে যায়।আরশি চিৎকার করে বলে,
“নাআআআ আমি আপনাকে ভালোবাসি সাভাশ!”
;
আরশি চোখ মেলে আশেপাশে তাকায় না শিলা কোথাও নেই।আর না আছে সাভাশ।আরশি বিছানায় শুয়ে আছে এখনো।আরশি হেসে নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“ওহ্ মাই গড তার মানে এসব স্বপ্ন ছিল।”
পরক্ষণেই আরশি সতর্ক হয়ে যায় চোখ বড় বড় করে বলে,
“কিন্তু স্বপ্ন সত্যি হতে কতক্ষণ?আমি ঐ শিলা শাতচুন্নিকে আমার সাভাশের ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেবো না।আজ সাভাশ ফিরলেই ওকে মনের কথা বলে দেবো।”
;
#চলবে!