#গ্যাংস্টার_লাভ
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
#পার্ট_১২
রেহান : অ্যান্টি আসুন । আর রিহা তুমি উপরে যাও (রিহার দিকে তাকিয়ে)
রিহা রেগে একবার নীলিমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার রেহান এর দিকে ।
নীলিমা : আমি রিহার সাথে একটু কথা বলতে চাই
রিহা : তোমার সাথে আমার কোনো কথা না তুমি চলে যাও
রেহান: রিহা বড়োদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় যানো না উনি তোমার আম্মু (ধমক দিয়ে)
রিহা : না উনি আমার আম্মু না (চিৎকার করে)
রেহান কিছু বলতে যাবে তার আগে নীলিমা বলে
নীলিমা : ও ঠিক বলছে আমি ওর আম্মু না । আফজাল ভাই আমাকে বিয়ে করেনি
রিহা : হা এখন নতুন ড্রামা শুরু কর
নীলিমা ছুটে রিহার কাছে যায় ।
নীলিমা : বিশ্বাস করো মা আমি কোনো নাটক করছি না সত্যি আফজাল ভাই আমাকে বিয়ে করেনি শুধু তোর দেখাশুনার জন্য এনেছিল কিন্ত লোক যদি খারাপ বলে তাই নিজের স্ত্রীর পরিচয় দেয়।(কাদতে কাদতে)
রিহা : আব্বু (অবাক হয়ে)
নীলিমা : হা তোর আম্মু আর আমি খুব ভালো বান্ধবী ছিলাম । আমি একজনকে খুব ভালবাসতাম তার হাত ধরে বাড়ি থেকে চলে আসি কিন্ত তোর আম্মুর সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হতো । ভালো চলছিল আমার দিনগুলি আমাদের একটা মেয়ে ছিল । একদিন আমার স্বামী আর মেয়ে ঘুরতে বের হয়। খুব খুশি ছিল আমার মেয়েটা হটাৎ আমার কাছে ফোন আসে আমার মেয়ে আর স্বামীর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। (কথাটা বলতে গিয়ে নীলিমা কেদে উঠে)
রেহান পানি এগিয়ে দেয়।
রেহান : পানি খেয়ে নেন
নীলিমা : না আমাকে বলতে দাও
রেহান : পানি খেয়ে নেন ।
রেহান খেয়াল করে রিহার চোখ জ্বলজ্বল করছে । নীলিমা পানি খেয়ে আবার বলা শুরু করে।
নীলিমা : আমি পাগল এর মত ছুটে যাই গিয়ে দেখি আমার মানিক আর আমার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে । সেদিনের পর থেকে আমি প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম ওই বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল তাই নিজের বাড়ি যাই কিন্ত কেউ জায়গা দেইনি অনেকের কাছে গিয়েছিলাম শেষে তোর আম্মুর কাছে ফোন দিয়ে জানতে পারি তোর আম্মু আর নেই । তুই তখন অসুস্থ ছিলি তাই তোর আব্বু আমাকে তোদের বাসায় নিয়ে যায় । বিশ্বাস কর তোকে আপন ভাবতে পারতাম কারণ তোকে দেখলে আমার মানিকের কথা মনে পড়তো সেইজন্য তোকে আমি দূরে দূরে রাখতাম । তোর আব্বু অনেক ভালো মানুষ আমাকে যাতে কেউ বাজে কথা না বলে তাই সবার সাথে নিজের স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছে । কিন্ত সে কখনো আমাকে বাজে নজরে দেখেনি নিজের বোনের মতো দেখেছে (কথাটা বলতে গিয়ে নীলিমা কেদে উঠে)
রিহা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে রেহান নীলিমা সামলাচ্ছে ।
নীলিমা : আমার মানিক যদি বেচে থাকত তাহলে তোর মত এত বড়ো হতো । আমি খুব খারাপ নিজের স্বামী আর সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না (কাদতে কাদতে)
রেহান : অ্যান্টি প্লিজ নিজেকে সামলান মৃত্যুর উপর তো কারোর হাত থাকে না তাই না
নীলিমা : আমি রিহাকে অনেক বার বলতে চাইছি কিন্ত আফজল ভাইয়া বলতে দেননি । আজ ভাবলাম রিহাকে না বললে নিজের বান্ধবীর সাথে ধোঁকা হবে আমি নিজের স্বামী সন্তানকে তো বাঁচাতে পারলাম । রিহার সাথেও অনেক সময় অনেক অন্যায় করেছি মাপ করে দিস আমাকে (রিহার হাত ধরে)
রিহা কিছু বলছে না দেখে রেহান বললো
রেহান : অ্যান্টি আপনি এভাবে কেনো বলছেন আপনি তো ওর আম্মুর মত আর মা দের সন্তানের কাছে ক্ষমা চাইতে নেই
নীলিমা কিছু বলতে যাবে হটাৎ কিছু পড়ার শব্দ রেহান আর নীলিমা পিছনে তাকিয়ে দেখে রিহা ফ্লোরে পড়ে আছে ।
রেহান রিহার কাছে ছুটে যায়
রেহান : এই রিহা রিহা চোখ খুলে জান
নীলিমা : মনে হয় সেন্স হারিয়ে ফেলছে
রেহান : ছোটো বেলায় একবার না না রিহার কিছু হবে না আমি কিছু হতে দিবো না
রেহান রিহাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠে সাথে নীলিমা ও উঠে । নীলিমার কোলে শুয়ে দিয়ে। রেহান গাড়ি ড্রাইভ করছে ।
নীলিমা : রেহান এর গায়ে তো জ্বর আছে
রেহান: আসলে কাল রাতে ওর পা কেটে গিয়েছিল সেইজন জ্বর আসছে ।
নীলিমা : ওহ তাড়াতাড়ি যাও আমি আফজাল ভাইয়াকে ফোন করে দিচ্ছি
রেহান আরো জোড়ে ড্রাইভ করতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসলো।
রেহান রিহাকে কোলে নিয়ে হসপিটালে গেলো।
রেহান : ডক্টর আমার স্ত্রীকে একটু দেখুন
ডক্টর : কি হইছে উনার ?
রেহান : জানিনা হটাৎ সেন্স হারিয়ে গেছে
একজন ডক্টর : আরে রিহা মামনি । কি হইছে রিহার
ডক্টর আশিক : আপনি চেনেন ওকে ?
ডক্টর অমিত : হা আমার পেশেন্ট । আমি দেখছি কি হইছে রেহান তুমি আমার সাথে আসো
রেহান রিহাকে কোলে নিয়ে কেবিনে যায় ।
রিহার আব্বু আর অনির্বাণ ও আসছে । রেহান বাইরে দাড়িয়ে আছে ওর জিবন প্রায় যায় যায় অবস্থা
আফজাল : আমার মেয়ের কি হইছে রেহান
রেহান : আব্বু কিছু বুঝতে পারছি না হটাৎ করে সেন্স হারিয়ে ফেলছে । আমি কিছু বুঝতে পারছি না আব্বু
অনি: চিন্তা করিস না রিহার কিছু হবে না
কিছুক্ষণ পর ডক্টর বেরিয়ে আসলো।
ডক্টর : আফজাল তোকে আমি একবার বলেছিলাম রিহাকে কোনো ধরনের ইমোশনাল করা যাবে না ওর মাথার উপর চাপ দেওয়া যাবে না
আফজাল : আমি তো
রেহান : ডক্টর রিহা ঠিক আছে (অস্থির হয়ে)
ডক্টর : আপাতত ঠিক আছে কি না বলতে পারবো না সেন্স ফিরলে বুঝা যাবে ওর মাথার উপর একটু চাপ পড়ছে এমন কিছু ও শুনছে বা দেখছে যাতে ও ইমোশনাল হয়ে পড়ছে যেহেতু আগে একবার হয়েছিল তাই এবার একটু ঝুঁকি হতে পারে
আফজাল : কিছু কি করা যাবে না আমি আমার মেয়েকে হারাতে চাইনা (কান্না করতে করতে)
অনি : আংকেল একটু শান্ত হন রিহার কিছু হবে না আমরা আছি তো
রেহান : আমি খুব খারাপ আমি রিহার খেয়াল রাখতে পারিনি
ডক্টর : দেখো এখন এসব কথা না রিহার সেন্স ফিরার সাথে সাথে ওর মাইন্ড অন্য দিকে ঘুরাতে হবে
রেহান : ডক্টর আমি একটু
ডক্টর : হা যাও
রেহান ডক্টর এর কথা শুনে রিহার কেবিনে যায়।
আফজাল : আমার মেয়েটা
ডক্টর : চিন্তা করিস না আশা করি ছোটবেলার মত ওমন কিছু হবে না তুই শান্ত হয়ে বস
নীলিমা অনি আফজাল সাহেব কে সান্তনা দিচ্ছে । কিন্ত আব্বুর মন কি ওতো সহজে মানে ।
রেহান কেবিনে গিয়ে দেখে রিহা ঘুমিয়ে আছে । মুখ শুকিয়ে গেছে মুখে সেই চঞ্চলতা নেই। রেহান রিহার পাশে বসে রিহার সারামুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে ।
রেহান : প্লীজ চোখ খুলে শুধু একবার চোখ খুল আমার আর কিছু চাইনা কিছু না (রিহার কপালে চুমু দিতে দিতে )
কিছুক্ষণ পর রিহার সেন্স ফিরে আসে।
রিহা : রেহান
রেহান : রিহা জান কেমন লাগছে খুব কষ্ট হচ্ছে আমি আছি তো কিছু হবে না (রিহার কপালে চুমু দিয়ে) কি হইছে বলো
রিহা অস্পষ্ট স্বরে বলে
রিহা : পা ন ন নি খা খা বো
রেহান তাড়াতাড়ি পানি এনে খাইয়ে দেয়
রেহান : আর খাবে
রিহা মাথা নাড়ায় । উঠতে চাইলে রেহান ধরে উঠিয়ে দেয়।
রিহাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে যেনো ছেরে দিলেই হারিয়ে যাবে
রিহা : আব্বু যাবো
রেহান : আচ্ছা দাড়াও আমি ডেকে দিচ্ছি
রেহান বাইরে যেতে চাইলে রিহা হাত ধরে আটকিয়ে দেয়।
রেহান : কিহলো ছার যেতে দাও
রিহা মাথা নাড়িয়ে না জানায়
রেহান : আব্বু কে ডাকবো না
রিহা : না আমি যাবো
রেহান : তুমি এখন দূর্বল
বলতে বলতে রিহার আব্বু আসে।
আফজাল : মামনি এখন কেমন লাগছে কষ্ট হচ্ছে
রিহা : না আব্বু
রেহান সরে যায় রিহার আব্বু রিহার পাশে বসে আর অন্য পাশে রেহান
রিহা : আব্বু i am sorry আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না তোমাকে কতো অপমান করেছি
কথাটা বলতে গিয়ে রিহার হেঁচকি উঠে যাচ্ছে রেহান বুঝতে পেরে
রেহান : রিহা এখন তোমার শরীর খারাপ ওসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে
আফজাল : হা মামনি রেহান ঠিক বলছে তুই আমার লক্ষী মেয়ে ।
আফজাল সাহেব রিহার মন ঘুরানোর জন্য বলে
আফজাল : আচ্ছা মামনি রেহান কি তোকে কোনো ভাবে কষ্ট দিছে (রেহান কে চোখ মেরে)
রিহা মাথা নাড়িয়ে বলে
রিহা : না বাবা ও খুব ভালো আমার খুব খেয়াল রাখে
রেহান তো সেই খুশি
রেহান : যাক কেউ ত আমার প্রশংসা করলো আমি ধন্য হয়ে গেলাম (দুষ্টুমি করে)
কথা বলতে বলতে রেহান এর ফোন আসে রেহান একটু বাইরে চলে যায়
চলবে