#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১_২
#Jechi_Jahan
আজ আমার বিয়ে হচ্ছে কিন্তু আমার মনে কোনো খুশি নেই।আছে শুধু রাগ,দুঃখ আর অভিমান।অবশ্য এটাই স্বাভাবিক কারণ আমি এই বিয়েতে একদম খুশি নই। আমার বাবা মা আমাকে জোর করে বিয়েটা করাচ্ছে।আর আমিও বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছি।এখন কাজী সাহেব আমার সামনে বসে আছে আর শুধু কবুল বলার জন্য তাড়া দিচ্ছে।আর আমি বাধ্য হয়ে বলে দিলাম।
আমি-কবুল কবুল কবুল।(বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলি আর চোখে পানি ফেলতে থাকি)
কাজি-আলহামদুলিল্লাহ।
আমি চোখ খুলে দেখি বাবা আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমি রাগে দুঃখে মাথা থেকে বাবার হাতটা সরিয়ে ফেলি।বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে আমি কেনো এমন করেছি তাই কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।আর আমি বসে বসে কাঁদছি।
(আসুন আমার পরিচয় টা দিয়ে দিই।আমি হচ্ছি শিশির চৌধুরী।বাবা মায়ের বড় মেয়ে।বয়স মাত্র ২০ বছর।আমার দুইটা ছোট ভাই বোন আছে।ছোট বোন শিরিন চৌধুরী আর ছোট ভাই শান্ত চৌধুরী।আরো অনেক কিছু আছে যা পরে গল্পে জানতে পারবেন)
বিদায়ের সময় আমার বাবা মা অনেক কেঁদেছিল কারণ আমি ওনাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি তাই।কিন্তু আমি ওনাদের জন্য কাঁদিনি কেঁদেছিলাম আমার ছোট দুই ভাই বোনের জন্য।আসার সময় ওদেরকে জরিয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম।কারণ ওরাই একমাত্র চেয়েছিল যাতে আমার বিয়েটা এখানে না হোক।গাড়িতেও সারা রাস্তা নিশ্চুপ হয়ে কেঁদেছি কিন্তু আমায় শান্তনা দেওয়ার মতো কেও ছিলনা।সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে অবশেষে ওনার বাড়ীতে পৌঁছে যাই।পৌঁছানোর সাথে সাথে উনি গাড়ী থেকে নেমে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে যায়।অথচ আমাকে সাথে করেও নেয়না।যাই হোক আমি বাড়ীতে ঢুকে খানিকটা অবাক হই।বাড়ীটা খুব সুন্দর দামী দামী ফার্নিচার দিয়ে ভরা।এসব দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি।আমার বাবা মা হয়তো ওনার বাড়ী,গাড়ী,টাকা দেখেই আমাকে এখানে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।আসলেই টাকা থাকলে সবই সম্ভব।
জেরিন(আমার ননদ)-ভাবী।
আমি-জ্বি আপু।(ওনার দিকে তাকিয়ে)
জেরিন-এনারা আমার চাচারা আর মামারা।(সামনে কিছু মাঝবয়স্ক লোক দেখিয়ে)
আমি-জ্বি!!!
জেরিন-সালাম করো।(আস্তে করে বললো)
আমি-(টেনশনে সালামের দেয়ার কথাও ভুলে গেলাম।একে একে সব গুরুজন দের সালাম করলাম।)
জেরিন-ভাবী চলো তোমাকে একজনের সাথে দেখা করিয়ে আনি।(বলে একটা কোথায় নিতে লাগলো)
আমি-(আমিও ওনার সাথে চলতে লাগলাম)
জেরিন-ভাবী আমার তো বিয়ে হয়েছে তাই আমি জানি নতুন নতুন কারোর বাড়িতে বউ হয়ে গেলে ঠিক কেমন লাগে বা কেমন পরিস্থিতিতে পরতে হয়।
আমি-হঠাৎ এমন বলছেন।
জেরিন-ওইযে তখন তুমি আমার চাচারা আর মামাদের সালাম করোনি তাই বললাম।
আমি-আপু আমি টেনশনে ভুলেই গিয়েছিলাম যে…
জেরিন-ভাবী আগে আমার কথাটা শুনো।
আমি-বলুন।
জেরিন-তুমি সালাম না করায় আমরা কিছু মনে না করলেও ওনারা করতো।পিছনে পিছনে তোমায় নিয়ে সমোলোচনা করতো।যা তুমি বা আমরা কেওই সহ্য করতে পারতাম না তাই বলছি একটু মানিয়ে চলো।
আমি-আমি চেষ্টা করবো আপু।
জেরিন-হুম,,,আর আপু বলোনা আমি তোমার ননদ।
আমি-কিন্তু বয়সে তো আপু।
জেরিন-হুম,,,ওইতো চলে এসেছি।ভাবী ইনি আমার নানু (একটা রুমে ডুকে)
আমি-আসসালামু আলাইকুম।
নানু-ওয়ালাইকুম আসসালাম।এদিকে আয় মা।
আমি-(ওনার কাছে গেলাম)
নানু-বাহ তুই তো ভাবী মিষ্টি দেখতে।
আমি-তাই???
নানু-আমার নাতিতার সাথে ভালো মানিয়েছে তাইনা জেরিন?
জেরিন-ঠিক বলেছো নানু।
নানু-তো ওর সাথে সংসার করতে পারবি তো??
আমি-(মাথা নিচু করে ফেলি)
নানু-ভয় হচ্ছে তাইনা,,,আসলে ভয় হওয়ারই কথা আমার নাতি যা রাগী যে কেওই ভয় পায়।
জেরিন-আহ নানু কি বলো না বলো।
নানু-ঠিকই তো বললাম,,,আসলে ও আমার মেয়ের পাইছে।আমার মেয়েটাও খুব রাগী ছিলো।
আমি-হুম।
নানু-কিন্তু আমার মেয়েটাতো আর নেই তাই ওর সংসার টাও আর নেই।কিন্তু এখন এই সংসার টা তোর তোকে এই সংসারে থেকে সংসার করতে হবে।সবার খেয়াল রাখতে হবে।জানিস আমার মেয়ে না এই সংসার টা অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছিল।কিন্তু এখন সেই সংসার টা আর আগের মতো গোছানো নেই।হ্যাঁ রে তুই কি পারবি আমার মেয়ের মতো এই সংসার টাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখতে।
আমি-ইনশআল্লাহ পারবো।
নানুর সঙ্গে এমন আরো টুকটাক কথা হলো।কিন্তু বেশির ভাগ কথা এমন যে বাসর রাতে স্বামী যা বলবে তাতে সায় দিতে।এ কথার পিছনে ওনারা যে আমাকে আরো একটা কথার ইঙ্গিত করেছে সেটা আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।অবশেষে ওই রুম থেকে বের হয়ে সব নিয়ম কানুন শেষ করি সাথে খাওয়া দাওয়াও করি।এখন আমি রুমে বসে আছি প্রায় ১ ঘন্টা হতে চললো কিন্তু ওনার আসার নাম নেই।এক দিক থেকে আমার ভালোই হলো কিছুক্ষণ একা থাকতে পারবো।নিজেকে নিজে শান্তনা দিতে পারবো যে বিয়েটা মেনে নেয়।
(এবার আমার স্বামীর পরিচয় দেওয়া যাক।আমার স্বামীর নাম জোবান রহমান।উনি একজন ব্যবসায়ী।ওনার মা নেই কিন্তু বাবা জহির রহমান আর একটা বোন জেরিন রহমান আছে।ওনার বয়স ৩৮ বছর মানে আমার থেকে প্রায় ১৭ বছরের বড়।)
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি জোবান রুমে এসেছে।উনি হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে রুমে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি একটা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরেছে।এই ড্রেসআপে ওনাকে পুরো হিরো লাগছে মানে কেও দেখলে বলবেই না যে উনি একজন ৩৭ বছরের যুবক।আমি ওনার এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ ওনার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে।
জোবান-এই শুনো,,
আমি-জ্বি।
জোবান-আজকের রাতে যে স্বামীকে সালাম করতে হয় জানোনা?
আমি-হুম???(বুঝতে না পেরে)
জোবান-মানে কি,,তখন থেকে তাকিয়েই আছো সালাম কালাম কিছু নেই না।(ধমক দিয়ে)
আমি-(বুঝতে পেয়ে ওনাকে গিয়ে সালাম করি)
জোবান-গুড,,,যাও ওজু করে আসো।
আমি-কেনো??
জোবান-ওজু মানুষ কেনো করে।(আমার কাছে এসে)
আমি-কিন্তু আমি তো নামাজ পরেছি।
জোবান-এখন আমার সাথে নফলের নামাজ পড়বা,,, যাও ওজু করে আসো।
ওনার কথা মতো আমি গিয়ে ওজু করে আসি।এসে দেখি উনি পাশাপাশি দুইটা জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি গেলে উনি এবার নামাজ পরা শুরু করেন।নামাজ শেষে আমরা খাটে বসে আছি।আসলে আমি বসে আছি কিন্তু উনি ফোনে কি জানি করছেন।
জোবান-শুনো,,,
আমি-জ্বি।(ওনার দিকে ফিরে)
জোবান-তোমার নাম কি না শিশির নাকি শিরিন??
আমি-(অবাক হয়ে গেলাম আমাকে বিয়ে করেছে অথচ আমার নাম জানেনা)আমার নাম শিশির আর আমার বোনের নাম শিরিন মানে আপনার শালীর।
জোবান-ওহ,,তো শিশির এদিকে আসো।
আমি-জ্বি।(ওনার একটু কাছে গিয়ে)
জোবান-আমাকে কি বাগ মনে হয়।
আমি-না।
জোবান-তাহলে এত দূরে বসে আছো কেনো?(ধমকে)
আমি-(ধমকের ভয়ে ওনার আরো কাছে গিয়ে বসি)
জোবান-তুমি আমাকে কেনো বিয়ে করেছো??
আমি-মানে???
জোবান-মানে এইযে আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড় তাও তুমি আমাকে বিয়ে করলে।
আমি-(আপনার বয়স নিয়ে তো আমার সমস্যা নেই সমস্যা তো হচ্ছে আপনার বুঝ নিয়ে)
জোবান-বলো কেন বিয়ে করলে??
আমি-বাবা মা বিয়েতে রাজী ছিল তাই আমিও বিয়ে তে রাজী হয়েছি।আর তাছাড়া আমার আপনার বয়স নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
জোবান-মিথ্যা বলোনা প্লিজ।(ন্যাকামো করে)
আমি-(চুপ করে আছি)
জোবান-আমার টাকা দেখে করেছো তাইনা।
আমি-কি??(ওনার থেকে সরে)
জোবান-দূরে কেনো যাচ্ছো???সত্যি বলেছি বলে।(আমাকে আবার পাশে বসিয়ে)
আমি-এটা মোটেও সত্যি নয়।
জোবান-আরে আমি জানি জানি,,,,মধ্যবিত্তদের এই এক সমস্যা।টাকা লেখলে বুড়ো কেও বিয়ে করে ফেলে।(বলে আবার ফোন টা নিলো)
আমি-(কান্নামিশ্রিত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি)
জোবান-এই নাও,,,(ফোনটা রেখে আবার ওই ব্যাগটা ধরিয়ে দিলো)
আমি-কি এটা??(কোনোরকম কান্না থামিয়ে)
জোবান-তোমাদের মেয়েদের তো একটা সমস্যা আছেই যে আমাকে আজকে কোনো গিপ্ট দাও নাই।তাই অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম হয়তো তুমিও বলতে পারো যে আমাকে আজকে রাতে কোনো গিপ্ট দাও নাই।অবশ্যই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বলে কথা ডিমান্ড তো থাকবেই তাইনা।
আমি-(ওনার কথা গুলো এমন কেনো যেনো পুরো বিষের মতো।এমনে তে এখানে বিয়ে হয়েছে বলে আমার মনে শান্তি নেই।তার উপর ওনার এমন কাঁটা গায়ে নুনের চিটা দেওয়ার মতো কথা।আমার কষ্টে চোখ থেকে আবার পানি পরতে লাগলো)
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ খেয়াল করি জোবান আমার দিকে কেমন নেশা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওনার এমন তাকানো দেখে আমার লজ্জা লেগে যায়।আমি সাথে সাথে ওনার সামনে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই।আমি এমনিতে এসবে একটু ভয় পাই তার উপর ওনার এমন তাকানো।আমি ভাবছি ওনাকে আমায় এসবের জন্য একটু সময় দেওয়ার জন্য বলবো।কিন্তু উনি তার সুযোগ না দিয়ে আমাকে আরো ওনার কাছে নিয়ে গেলেন।আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাই।এনারও কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা আমি।কিছুক্ষণ আগে আমাকে এতো কথা শুনালো আর এখন আমাকে কাছে টানার চেষ্টা করছে।এসব ভাবতে ভাবতে উনি হুট করে আমাকে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।আমিও শান্ত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকাই।উনিও ধীরে ধীরে আমার কাছে চলে আসে।ওনার এমন কাছে আসা দেখে আমি হুট করে বলেই ফেলি।
আমি-আমাকে এসবের জন্য একটু সময় দিতে পারবেন?
উনি আমার মুখে এমন কথা শুনে উনি একটু দূরে চলে যায়।আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আমি ভাবি উনি হয়তো আমার কথাটা ভেবে দেখছে তাই আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে।কিন্তু এরপর উনি আমার সাথে যা করে তার জন্য আমি প্রস্তুতই ছিলাম না।
সকালেঃ-
ঘুম ঘুম চোখে আর পেটের অসম্ভব ব্যাথা নিয়ে সোফায় বসে আছি।আর বড়রা আমায় ঘিরে আমার পাশেই বসে আছে আর বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে।সকালে আমি নামাজ পরে যাও একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি তাও হয়না।খাটে শোয়ার সাথে সাথেই জেরিন আপু আমাকে ডেকে নিচে নিয়ে আসে।নতুন বউকে নাকি সবাই দেখতে চায় তাই।আর আমিও আমার ঘুমের বিসর্জন দিয়ে ওনাদের কাছে আসি।কিন্তু এখন ঘুমের জন্য আমার চোখ বার বার বন্ধ হয়ে আসছিল।কিন্তু চোখ আর বন্ধ রাখতে দিলোনা আমার চাচাতো ননদ হূর।
হূর-কি ভাবী কালকে ঘুম হয়নি যে এখন ঘুমে পুরো তলিয়ে যাচ্ছো।(হেসে হেসে)
আমি-(লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি)
জেরিন-আহ হূর কি বলিস না বলিস।
হূর-সরি ভাবি আমি মজা করছিলাম।
আমি-হুম।(তুমি যতই মজা করে বলো কথাটা কিন্তু সত্যিই বলেছো।)
জেরিন-(ভাবীকে দেখে কেমন ক্লান্ত লাগছে)ভাবী তুমি আমার রুমে গিয়ে রেস্ট নাও আসলে তোমাকে কেমন ক্লান্ত লাগছে।
আমি-না আপু তার দরকার নেই।সবাই কি না কি ভাববে,,,
জেরিন-আমার রুমে এখন আপাতত কেও যাবেনা।
আমি-না তাও।
জেরিন-সমস্যা নেই চলো আমি তোমায় দিয়ে আসি।
জেরিন আপু আমাকে ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।আমি রুমে এসে খাটে শুয়ে পরলাম।আসলেই আজকে শরীর খুব খারাপ লাগছে।কালকে ওই লোকটা যা অত্যাচার করেছে খারাপ লাগারই কথা।আমি আর কোনো কিছু না ভেবে একটু ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।
———–
জোবান-(কালকে শিশিরের সাথে আমার এমন করা উচিত হয়নি।ও তো জাস্ট একটু সময়ই চেয়েছিল আর আমিও চাইলে ওটা দিতে পারতাম।কি করব মেয়েদের উপর থেকে যে বিশ্বাসই উঠে গেছে।তখন তো শিশির এর কথা গুলোও আমার কাছে নাটক মনে হচ্ছিল।এগুলো ভাবতে ভাবতে সিড়ি দিয়ে নামছি।)
জেরিন-কি ভাইয়া এতোক্ষণ এ উঠলা।
জোবান-ওই একটু দেরি হয়ে গেলো আরকি।
জেরিন-আসো তোমাকে নাস্তা দিই।
জোবান-(নাস্তার টেবিলে বসে)সবাই খেয়েছে??
জেরিন-হুম তুমি বাদে সবাই খেয়েছে।
জোবান-ওহ,,,তা তোদের নতুন বউকে দেখছি না।
জেরিন-কেনো,,,খুব চোখে হারাচ্ছো বুঝি???
জোবান-আমি কিনা বাইরের মেয়েদের চোখে হারাবো।হাও ফানি,,,(খেতে খেতে)
জেরিন-বাইরের মেয়ে কি ভাইয়া,,,ও তোমার স্ত্রী।
জোবান-হুম বুঝলাম,,,তা উনি কই??
জেরিন-আমার রুমে ঘুমাচ্ছে।
জোবান-কি,,,নতুন বউ এখনো ঘুমাচ্ছে???
জেরিন-আরে ওর শরীল খারাপ লাগছিল তাই আমিই ওকে রেস্ট নিতে পাঠিয়েছিলাম।
জোবান-ওহ,,(বলে আবার খেতে শুরু করলো)
আমি এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ কারো ডাকে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।অবশেষে চোখ খুলে যাকে দেখি তাকে দেখে আমার চোখে পানি জমে যায়।শরীরের শত ব্যাথাকে ভুলে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিই।
-চলবে
#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২
#Jechi_Jahan
আমি আমার বোন শিরিনকে জরিয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছি।আর শিরিন ও আমাকে ধরে কান্না করছে।এভাবে কিছুক্ষণ কাঁদার পর এক পর্যায়ে আমরা দুজন শান্ত হয়ে যাই।আর এর মাঝে আমি বলে উঠি।
আমি-শিরিন তুই কখন এসেছিস?(কান্না থামিয়ে)
শিরিন-এই তো মাত্র এলাম।
আমি- একা এসেছিস???
শিরিন-না বাবাও এসেছে সাথে।
আমি-ওহ।
শিরিন-আপু,,,লোকটা কেমন রে???
আমি-কোন লোকটা???
শিরিন-আরে তোমার স্বামী আরকি।
আমি-ওহ!!!
শিরিন-কি বুঝলে ভালো না খারাপ??
আমি-(তোকে আমি কি বলবো শিরিন লোকটা তো একে বারে খারাপ)
শিরিন-আপু চুপ করে আছিস কেনো??
আমি-শান্তকে আনিসনি কেনো???
শিরিন-কথা ঘুরাচ্ছো।
আমি-চুপ করে আছি।
শিরিন-আপু,,,,,বিয়ের আগে তুমি আমার সাথে সব কিছু সেয়ার করতে আর আজ কিনা।
আমি-কি বলবো আমি তোকে???যে লোকটা খারাপ, আমাকে বুঝেনা,বিয়ের প্রথম রাতে আমাকে মধ্যবিত্ত বলে অপমান করেছে,জোর করে স্বামীত্ব ফলিয়েছে।
শিরিন-কি বলছো আপু এসব???(কান্না করে)
আমি-এজন্য আমি তোকে বলতে চাইনি।কারণ তুই এসব শুনলে কষ্ট পাবি।
শিরিন-কিন্তু আপু,,,,
আমি-থাক,,,তুই আর কিছু বলিস না।যারা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে তাদেরকেও বুঝতে হয়ে যে তাদের মেয়ে এখানে কতটা সুখে আছে।
শিরিন-আপু,,,লোকটা কি আসলেই এত খারাপ???
আমি-লোকটা শুধু খারাপ না লোকটা একটা জানোয়ার ও।(বলে কান্না করতে লাগলাম)
জোবান-শিরিন তুমি এখানে??(দরজা সামনে এসে)
আমি-(তাকিয়ে দেখি উনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার ভয় হতে লাগলো।উনি কি সব শুনে ফেললো নাকি।)
শিরিন-জ্বী ভাইয়া।
জোবান-তুমি নাকি এসেই কোথায় চলে গেলে তাই ডাকতে এলাম।
শিরিন-কেনো ভাইয়া,,,আমি তো জেরিন আপুকে বলেই এখানে এসেছি।
জোবান-আচ্ছা যাইহোক,,,এখন নীচে যাও জেরিন তোমাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করেছে।
শিরিন-ভাইয়া,,,আপুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে তারপর না হয় যাই।
জোবান-আরে তোমার আপু তো আর পালিয়ে যাচ্ছেনা যে গল্প করতে পারবেনা।আগে নাস্তা করে আসো তারপর গল্প করবে।
আমি-হ্যাঁ শিরিন তুই যা।
শিরিন-আচ্ছা।(বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
শিরিন যাওয়ার সাথে সাথে জোবান আমার দিকে এগিয়ে আসলো।আর আমি ভয়ে ওনার থেকে যেই দূরে সরতে যাই উনি ওমনি আমার হাতটা চেপে ধরে।
জোবান-আমি জানোয়ার তাইনা।(রেগে)
আমি-(উনি সব শুনে ফেললেন)
জোবান-আরো কি কি জানি বলছিলে শুনতে পাইনি।
আমি-আপনি সব শুনে,,,,,
জোবান-তার মানে তুমি সত্যি এসব বলেছিলে।
আমি-(ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলি)
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর হুট করে আমাকে টেনে আয়নার সামনে নিয়ে এলো।
আর আমার গাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে ফেললো।
আমি-ক কি করছেন??(ওনার দিকে তাকিয়ে)
জোবান-তোমার গাড়ে এই কামড়ের দাগগুলো দেখছ।
আমি-(মাথা নিচু করে আছি)
জোবান-এগুলো তো আমার অত্যাচারের দাগ তাইনা?
আমি-(ওনার কথায় আমি আয়নায় তাকাই আর দেখি সত্যি দাগগুলো আরো গাড়ো হয়ে গেছে)
জোবান-You know what,,,,কিছুক্ষণ এর জন্য আমার মনে হয়েছিল আমি কালকে তোমার সাথে অন্যায় করেছি।মনে হয়েছিল তোমার কথা মতে আমার তোমাকে এসবের জন্য সময় দেওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু না,,,,আমি একদম ভুল মনে করেছি।(রেগে)
আমি-(চুপ করে আছি)
জোবান-এই,,,আমি জানোয়ার তাইনা।তো ওয়েট করো আজকে রাতে দেখাবো এই জানোয়ার ঠিক কি কি করতে পারে।(আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে)
আমি-আর কিই বা করার বাকি রেখেছেন আপনি।
(ওনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে)
জোবান-ওহ কালকের কথা তাহলে মনে আছে।গুড,,,,,
মনে রাখাটাই ভালো।মনে করবে ওটা শুধু ট্রেলার ছিল।
(বলে রুম থেকে চলে গেল)
উনার চলে যাওয়ার পরপরই আমি মেঝেতে বসে পরি আর কান্না করতে থাকি।বিয়ের আগে কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে এমন নিষ্টুর একটা স্বামী পাবো।আমি এখানে এইজন্য বিয়ে করতে চাইনি কারণ এনারা বড়লোক ছিল।আসলে বড়লোক দের আমি বরাবরই ভয় পাই।কারণ মনে হয় ওনারা গরীব বা মধ্যবিত্তদের বুঝে কম।তার উপর আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত।
————-
বাবা-হ্যাঁ রে শিরিন তোর আপুর সাথে কথা বলেছিস।
শিরিন-হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগে আপুর সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম আর কথা বলে এসেছি।
বাবা-ওহ তো কি বললো তোকে।
শিরিন-আমাকে তো অনেক কিছুই বলেছে।তুমি গেলে তোমাকেও নিশ্চয়ই বলবে।
বাবা-আচ্ছা তো আমিও গিয়ে দেখা করে আসি।(বলে যেই উঠতে নিবে ওমনি শিরিন ডেকে উঠে)
শিরিন-আব্বু।
বাবা-কি,,,
শিরিন-তোমরা আপুকে আপুর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিয়ে অনেক বড় ভুল করেছো।এখন যদি যাও,,, পারলে একটু শান্তনা দিও আর না হয় একটু বুঝিও।
বাবা-হঠাৎ এসব বলছিস।
শিরিন-বলছি না,,,,,শিখিয়ে দিচ্ছি যাও।
বাবা-হুম।
আমি জেরিন আপুর রুম থেকে বের হয়ে আমাদের রুমে চলে এসেছি।আর রুমে এসেই সোজা বারান্দায় চলে যাই।ওনার রুমের বারান্দাটা খুব বড় সাথে অনেক ধরনের ফুল গাছ লাগানো।যাই হোক কখনো মন খারাপ হলে এখানে এসে কিছুক্ষণ বসতে পারবো।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ খেয়াল করি কেও আমার কাঁধে হাত রেখেছে।আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছে।আর বাবাকে দেখে আমার মাথায় রাগ উঠে গেলো।
আমি-কেনো এসেছো তুমি এখানে???
বাবা-কি বলছিস এসব,,,আমি তোর কাছে আসতে পারবোনা।
আমি-না তুমি আমাকে দেখতে আসতে পারোনা।(বলে অন্য দিকে ফিরে কান্না করে দিই)
বাবা-তুই আমার সাথে এমন করছিস কেনো।
আমি-এটা কি স্বাভাবিক নয় বাবা।
বাবা-তুই এখনো আমায় ভুল বুঝছিস।
আমি-বাবা তুমি আমাকে একবার বলতে,,,আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতাম তবুও এমন জায়গায় বিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না।
বাবা-তুই কেনো,,,
আমি-তুমি যাও এখান থেকে।
বাবা-শিশির,,,,
আমি-বাবা তুমি যাও এখান থেকে।
বাবা-মারে,,তুই আমার কথাটা একবার শুন।
আমি-ঠিক আছে,,তুমি যেওনা আমি নিজেই চলে যাচ্ছি (বলে বারান্দা থেকে বেরোতে গিয়ে দেখি জোবান বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওনাকে দেখেও না দেখার ভান করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলসম)
জোবান-বাবা।
বাবা-হুম বাবা,,,,বলো।
জোবান-শিশির আপনার সাথে এমন করলো কেনো??
বাবা-না এমনিই এমন করেছে।
জোবান-এমনি এমনি কেও এসব কথা বলে।
বাবা-ওই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়েছি বলে এমন করছে।
জোবান-বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে তাই বলে এভাবে আপনার সাথে এভাবে ব্যবহার করবে।
বাবা-রাগে বলে ফেলেছে।আচ্ছা আমি এখন আসি হ্যাঁ।(বলে বাবাও রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
দুপুরে আমি একটা হলুদ রংয়ের শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম গোসল করতে।যখন গোসল করছিলাম তখন আমার শরীরে আছড়ের দাগ দেখতে পেলাম।দাগগুলো দেখে আমার কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল।
ফ্লাসব্যাকঃ-
আমি ওনাকে কথাটা বলার পর উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন।তারপর হুট আমার গলায় হাত দিতে খাটের সাথে চেপে ধরে।এদিকে আমি গলার ব্যাথার জন্য ওনার হাতটা সরানোর চেষ্টা করছি।
জোবান-তোমরা মেয়েরা কি ভাবো নিজেদের হ্যাঁ,,,, প্রিন্সেস??
আমি-ছাড়ুন,,,লাগছে।(হাত সরানোর চেষ্টা করে)
জোবান-এখন লাগে তাইনা,,,যখন তোমরা ছেলেদের মন নিয়ে খেলা করো তখন ছেলেদের কষ্ট হয়না।
আমি-কিসব বলছেন,,,,ছাড়ুন আমাকে।
জোবান-আজ আর তোমাকে ছাড়বো না।সময় লাগবে না তোমার,,,,দাঁড়াও সময় দিচ্ছি।
(বলেই উনি আমার ঠোঁটটা কামড়ে ধরে তাও গলা টা চেপে ধরেই।এদিকে আমি ব্যাথায় কান্না করে দিই।বার বার ওনাকে নিজের থেকে সড়ানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হচ্ছি।আমাকে কিস করতে করতেই উনি নিজের শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করে।উনাকে এমন করতে দেখে আমি ভয় যাই।আর এতই ভয় পাই যে ভয়ের চোটে ওনাকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে দিই।ধাক্কা সামলাতে না পেরে উনি দূরে ছিটকে পরে।)
আমি-পাগল হয়ে গেছেন আপনি,,,,এমন করছেন কেনো???(কান্না করে)
জোবান-হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি,,,তোমরা পাগল করেছো আমাদের।কি ভাবো তোমরা ছেলেদের হ্যাঁ।
হাতের পুতুল ভাবো,,,যেভাবে নাচাবে সেভাবে নাচবে।
আমি-আপনি এসব কি বলছেন???আমি তো আপনার থেকে শুধু একটু সময় চেয়ে ছিলাম।(কান্না করে)
জোবান-সময় চাই না তোমার,,,,দাড়াও আজ তোমাকে পুরোপুরি ভাবে সময় দিবো।
(বলে আধখোলা শার্টটা পুরোপুরি খুলে মেঝেতে ফেলে দেয়।আর আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে আবার বিছানার সাথে চেপে ধরে।উনি এখন পুরো সাইকোর মত আমাকে ইউস করছে।আমি বারবার বাঁধা দিয়ে ছিলাম কিন্তু সফল আর হইনি।প্রায় অনেকক্ষণ পর উনি ক্লান্ত হয়ে খাটে শুয়ে গেলেন।আর আমি অন্যদিকে ফিরে কান্না করছি।আসলে আমি এসবে একটু ভয় পেতাম যার জন্য সময় চেয়েছিলাম।কিন্তু উনি আমাকে সময় দিলেনই না।হঠাৎ করে উনি আমাকে টেনে ওনার বুকের উপর ফেলে দেয় আর মাথায় হাত দিয়ে বলে।)
জোবান-আমার সামনে একদম ন্যাকা কান্না করবে না।
আমি-(কান্নামিশ্রত চোখে ওনার দিকে তাকাই)
জোবান-তোমাদের এই একটা জিনিসই আছে,,,চোখের পানি।যেটা দিয়ে তোমরা সহজে ছেলেদের বোকা বানাতে পারো।(বলে মাথায় হাত বুলাতে থাকে)
আমি-(রাগে মাথা থেকে উনার হাতটা ঝেরে পেলে দিই।আর ওনার থেকে সরতে চেষ্টা করি)
জোবান-ওই,,আবার নাটক শুরু করে দিয়েছো।চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো আর না হয় ফ্লোরে গিয়ে শোও।
আমি এবার আর কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। কারণ আমার শরীল খুব ব্যাথা করছে।ওনার বুকে এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর আমি ঘুমিয়ে পরি।সকালে ওনার ডাকে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখি উনি ফ্রেশ হয়ে একটা টি-শার্ট আর টাউজার পরে বসে আছে।
জোবান-ওই,,,ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরতে আসো।
আমিও ওনার কথায় শোয়া থেকে উঠে বসি।কিছুক্ষণ বসে আমি একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।একেবারে শাওয়ার নিয়ে এসে আমি আর উনি এক সাথে নামাজ পরতে বসি।নামাজ শেষে উনার কুরআন শরীফ নিয়ে কিছুক্ষণ পরতে শুরু করি।কুরআন শরীফ পরা শেষ হলে আমি যাও একটু ঘুমাতে যাই,,,তখনই জেরিন আপু এসে আমাকে নিয়ে চলে যায়।
প্রেজেন্টঃ-
হঠাৎ জোবান অনবরত দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে
যে কারণে আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।আমি তারাহুরো করে শাড়ীটা কোনোরকম পরে বেরিয়ে এলাম।
জোবান-এতক্ষণলাগে আসতে।
আমি-কি হয়েছে???
জোবান-কিছুনা,,এই ১ মিনিট।
আমি-কি??
জোবান-তোমার চুল ভেজা কেনো,,,গোসল করেছো?
আমি-হুম,,
জোবান-তুমি না সকালে গোসল করেছিলে এখন আবার কেন গোসল করেছো??(সন্দেহ জনক ভাবে)
আমি-গরম লাগছিলো তাই,,,
জোবান-তোমার গরমও লাগে।
আমি-(কিছু না বলে চলে যেতে লাগি)
জোবান-ওয়েট,,,
আমি-কি???
জোবান-আজকের শাস্তিটার কথা মনে রেখো।(বলপ রুমে থেকে বের হয়ে গেলো)
-চলবে