#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২০
#Jechi_Jahan
আমি ডায়েরিটা পড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলাম।আমি আজকে ডায়েরি টা না পড়লে এতকিছু জানতেই পারতাম না।আমি ছাড়াও ওনার লাইফে আরেকটা মেয়ে ছিলো।মেয়েটা ওনাকে ঠকিয়েছে বলে উনি আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করেন না।আচ্ছা আমি ওনার অতীতটা পড়ে এত কষ্ট পাচ্ছি।তাহলে জোবান তো এগুলা ফেস করেছে নিশ্চয়ই ওনারও খুব কষ্ট লেগেছে।আমি এবার রুম থেকে বের হয়ে দৌড়ে স্টাডি রুমে চলে গেলাম।স্টাডি রুমে গিয়ে দেখি জোবান মনমরা হয়ে চেয়ারে বসে আছে।আমি এবার গিয়ে ওনাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেই।
জোবান-শিশির তুমি কাঁদছো কেনো।(চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)
আমি-(কিছু না বলে কাঁদতেই আছি)
জোবান-শিশির কি হয়েছে?
আমি-আপনার একটা অতীত ছিলো সেটা আমাকে বলেননি কেনো।
জোবান-আরে কি বলো,,,আমার কোনো অতীত থাকলেই তো বলবো।
আমি-মিথ্যা বলবেন না আমি জানি আপনার অতীত আছে।
জোবান-এই তোমাকে এসব কে বললো।
আমি-কেও বলেনি,,,আমি নিজে জেনেছি আপনার ওই ডায়েরি টা পড়ে।
জোবান-তুমি ওই ডায়েরি টা কেনো ধরেছো।
আমি-বেশ করেছি ধরেছি নাহলে তো আমি আপনার অতীত টা জানতে পারতাম না।
জোবান-আমার কোনো অতীত নেই শিশির।
আমি-আপনি তিশা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতেন।মেয়েটা আপনাকে ঠকিয়ে আকিব নামে একটা ছেলেকে বিয়ে করে।আর এই কারণে আপনি কোনো মেয়ে বিশ্বাস করতে চাননা।
জোবান-শুনো শিশির।
আমি-জোবান আপনি কি ভেবেছেন,,, আপনার অতীত জেনে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।জোবান আর কিছু মনে রাখুন আর না রাখুন এই কথাটা মনে রাখুন।আপনি যদি আমার সামনে ১০ জন মেয়ের সাথে শুয়েও থাকেন আমি তবুও আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো না।
জোবান-তাই,,,তাহলে তুমিও শুনে রাখো।তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেতেও চাও আমি তোমাকে যেতে দেবোনা।আর না ১০ মেয়ের সাথে শুবো।
আমি-তিশাকে খুব ভালোবাসতেন তাইনা??
জোবান-ভালোবাসলেও ও ওই ভালোবাসার যোগ্য ছিলোনা।জানো ওর এই ঠকানো টা শুধু আমাকে কষ্ট দেয়নি আমার পরিবার কেও কষ্ট দিয়েছে।সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো আমার মা।আমার মা কম ভালোবাসেনি ওই ছলনাময়ী টাকে।আমার মা আমাকে ওই ছলনাময়ীটার জন্য কষ্ট পেতে দেখেছে,কাঁদতে দেখেছে।জানো তিশা বিয়ে করেছে শুনে আমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো আমার মা।আমার মা এত বড় শকটা নিতে পারেনি জানো।আমার মা অসুস্থ হয়ে গেছিলো আর অবশেষে আল্লাহর কাছেও চলে গেলো।তবে যাওয়ার আগে বলেছিলো তিশার থেকে দ্বিগুণ ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে।কিন্তু আমি পারতাম না জানো মেয়েদেরকে দেখলেই তিশার কথা মনে পড়তো সবাইকে তিশার মতো মনে হতো এবং কি তোমাকেও।
আমি-এখন ও কি আমাকে তিশার মত মনে হয়?
জোবান-দূর,,,কোথায় তুমি আর কোথায় তিশা।তিশা তোমার পায়ের নখেরও যোগ্য না।এখন তুমি আমার কাছে আমার লাইফ।
আমি-এখনো কি তিশাকে ভালোবাসেন?
জোবান-ছি,,,ওকে এখন ভালোবাসা তো দূরে থাক দেখতেও ঘৃণা করে আমার।দেখো এখন আমি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে ভালোবাসিনা।
আমি-আপনি কত কষ্ট পেয়েছেন।
জোবান-মনে আছে ওইদিন তোমাকে সুমনের সাথে দেখা করানোর পর একটা কথা বলেছিলাম “এরকম একটা শেষ সুযোগ আমি একজনের কাছে চেয়েছি কিন্তু সে আমাকে সেই সুযোগটা দেয়নি”।
আমি-হুম,,,হঠাৎ এই কথাটা কেনো বললেন??
জোবান-জানো,,,সেদিন তিশার কাছেই আমি এই সুযোগটা চেয়েছিলাম।কিন্তু ও আমাকে মুখের উপর না করে দেয়।জানো সেদিন আমার এত কষ্ট লেগেছিল যে বলার বাইরে।সুমন যখন আমাকে ফোনে বলেছিলো তোমার সাথে একটু দেখা করতে চায় তখন আমি ওকে না করতে পারিনি।আমি তখন সুমনের জায়গায় আমাকে কল্পনা করেছি।আমি বুঝেছিলাম ওকে না করে দিতে ও আমার মত কষ্ট পাবে।এ জন্য আমি তোমাকে না বলে ওর সাথে দেখা করাই।তুমি বলো,,,আমি কি ভুল করেছি??
আমি-না,,,আপনি কোনো ভুল করেননি আপনি একদম ঠিক করেছেন।কিন্তু বিশ্বাস করেন এখন যদি আমি তিশাকে সামনে পেতাম তাহলে ওকে আস্ত রাখতাম না ছলনাময়ী একটা।
জোবান-(তুমি তো তিশাকে আজকে সামনে থেকেই দেখেছো শিশির)তবে যাই বলো ও আমাকে ছেড়েছে বলেই আমি তোমাকে পেয়েছি।
আমি-(কিছু না বলে ওনাকে জড়িয়ে ধরি।)
—-***—
আশিক-আপু,,,(তিশার রুমে এসে)
তিশা-হুম।
আশিক-তুমি আজকে জোবানকে কিছু বলেছো??
তিশা-হুম।
আশিক-কি বলেছো???
তিশা-অনেক কিছুই বলেছি কিন্তু আমার কোনো কথাই পাত্তা দেয়নি।
আশিক-আকিব ভাইয়ার কথা বলেছো??
তিশা-প্রথমে আকিবের কথাই বলেছি কিন্তু ও তাও আমাকে কিছু বললো না।
আশিক-ওর কাছে ব্যাক করবে বলেছিলে???
তিশা-ব্যাক করবো বলাও ও আমাকে বলেছে ও নাকি এখন আর আমায় ভালোবাসে না।ও এখন শিশিরের সাথে হ্যাপি আছে আর সবচেয়ে বড় কথা ও নাকি শিশিরকে খুব ভালোবাসে।
আশিক-ওহহহ।
তিশা-জানিস ও আমাকে এডবাইস দিয়েছে।আমি নাকি আকিবকে বুঝিয়ে বলতাম যে ডিভোর্স দিয়োনা।
আশিক-তো ভুল কি বললো??
তিশা-ভুল কি বললো মানে??আমি ওর কাছে ব্যাক করতে চাইছি বলে ও আমাকে কথা শুনাচ্ছে,আমাকে এডবাইস দিচ্ছে।হাও ফানি!!!
আশিক-আমার মনে হয় ও ঠিক বলছে।
তিশা-কি???
আশিক-আপু,,,জোবানের হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে ও তোমাকে কোনদিনও একসেপ্ট করবে না।তাই বলছি কি ওর কথা মতো আমরা আকিব ভাইয়া কে বুঝিয়ে বলি যে ডিভোর্স টা যেনো না দেয়।আর এদিকে আমারও শিশিরের প্রতি ওই ফিলিংসটা আর নেই।সো চলো আমরা দুজনেই এই ভুল কাজ করা ছেড়ে দিই।
তিশা-তুই এসব কি বলছিস হ্যাঁ।আমি কি ইচ্ছে করে আকিবের বাড়ি থেকে বের হয়েছি।আকিব আমাকে ওর বাড়ী থেকে বের করেছে।সেদিন ও আমার কোনো কথা শুনেনি।আমাকে একটু বিশ্বাস ও করেনি।শুন আশিক,,,আমার একটা আত্মসম্মান আছে।যে বাড়ি থেকে আকিব নিজে আমাকে বের করে দিয়েছে সে বাড়িতে আমি আবার যাবো।আর তুই শিশিরকে না চাইলে নাই কিন্তু আমি জোবানকে চাই।
আশিক-চাই বললেই তো আর পাওয়া যায়না।দেখো আমি অনেক ভেবেচিন্তেই তোমাকে এই কথাটা বললাম আপু।তোমার আত্মসম্মান আছে সেটা আমি জানি।কিন্তু ডিভোর্সের পরে এই আত্মসম্মান দিয়ে কি করবে।আপু ডিভোর্সি হয়ে বাঁচাটা এত সহজ নয়।একটা ডিভোর্সি মেয়েকে সমাজের অনেক কটু কথা শুনতে হয়।তুমি কি তখন পারবে ওসব কটু কথা সহ্য করতে।
তিশা-জানিনা,,,কিন্তু আমি নিজ থেকে ওই বাড়িতে পা রাখবো না।
আশিক-তাহলে তুমি কি চাও???
তিশা-আমি জোবানের সুখ কেড়ে নিতে চাই।
আশিক-কি???
তিশা-হুম,,,আমি একটা ভুল করেছি বলে ও আমাকে একসেপ্ট করছেনা তাই না।তো দেখ আমি এর ওকে ঠিক কিভাবে শাস্তি দিই।
আশিক-তুমি কি বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না।
তিশা-যেখানে আমার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে সেখানে আমি ওর সংসার টিকতে দিই কি করে।এখানে আমি কষ্টে থাকবো আর ও সুখে থাকবে এটা তো হয়না।
আশিক-তুমি কি জোবানের সংসার ভাঙ্গার জন্য এতদিন এমন করেছিলে।
তিশা-হুম,,,তুই কি ভেবেছিস আমি ওকে ভালোবেসে আমার কাছে চাইছি,,,মোটেও না।আমার সংসারে ফাটল ধরার পরেই তো তুই জোবান আর শিশিরের ছবি দেখিয়েছিস।ওদের ছবি দেখে বুঝা যাচ্ছিলো যে ওরা সুখে আছে।তো তুই বল,,,আমি ওদের সুখ কিভাবে সহ্য করি।আর তাছাড়া আমার আকিবকেও দেখাতে হবে যে আমি ওকে ছাড়া সুখে আছি।
আশিক-তার মানে তুমি জোবানকে ভালোবাসো না।
তিশা-না,,,
আশিক-তাহলে এতদিন এসব করে কি লাভ হলো।
তিশা-মাত্র তো বললাম,,,আমি ওর সংসার ভাঙ্গার জন্য এমন করেছিলাম।কারণ আমার ওর সুখের সংসার টা সহ্য হচ্ছে না।
আশিক-ছিঃ আপু,,,তুই এতটা নিচ।আমি ভাবলাম তুই ভালোবেসে জোবানকে চাচ্ছিস।তাই শত ভুল করে তোকে আর জোবানকে মিলানোর চেষ্টা করেছি।আর তুই কি না এমন পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছিস।
তিশা-শুন বেশি ভালো সাজিস না।আমি যদি জোবানের সংসার ভাঙ্গার পরিকল্পনা না ও করতাম তাও ওর সংসার টা ভাঙ্গতো।আর কে ভাঙ্গতো জানিস,,,তুই ভাঙ্গতি।কারণ তুই আমার আগেই ওদের সংসারে ফাটল ধরিয়েছিস।
আশিক-আসলেই রে,,,অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।আর সবচেয়ে বড় ভুল করেছি তোকে বিশ্বাস করে।জানিস আবির আমাকে বারবার বলছিলো যে তুই জোবানকে ভালোবেসে চাচ্ছিস না।কিন্তু আমি গাধা ওর একটা কথাও বিশ্বাস করিনি।
তিশা-ও আমি জোবানকে চেয়েছি বলে দোষ হয়ে গেলো আর তুই যে শিশিরকে চেয়েছিস।
আশিক-আমি তো শিশিরকে ভালোবেসে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই তো জোবানকে নিজের প্রয়োজনে চাচ্ছিস।ভাগ্যিস সঠিক সময়ে বুঝতে পেরেছি যে শিশিরের প্রতি আমার ভালোবাসাটা আর নেই।নইলে সামনে আমি আরো অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।শুন আমি আর তোর সঙ্গে নেই।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি সো তোর সাথে মিলে আর কোনো ভুল করতে পারবোনা।
তিশা-তুই কি ভেবেছিস,,,তোর সাহায্য ছাড়া আমি নিজে কিছু করতে পারবোনা।
আশিক-(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)যা মন চায় কর।(বলে তিশার রুম থেকে চলে গেলো)
=========
সেই বিকালে থেকে এখন পর্যন্ত কিছু না খাওয়ায় এখন জোবান আর আমার খুব খিদে পেয়েছে।এদিকে আমার রান্নাও করতে ইচ্ছে করছে না।দুজনই সোফায় বসে আছি।জোবান এতক্ষণ ফোনে কি জানি করছিলো আমি ভাবলাম হয়তো খাবার ওর্ডার দিচ্ছে।কিন্তু পরক্ষনে মনে পড়লো এত রাতে কি আর কোনো রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে যে উনি খাবার ওর্ডার দিবে।
জোবান-ইয়েস পেয়ে গেছি।
আমি-কি???
জোবান-রান্নার রেসিপি।
আমি-জোবান আপনি এতক্ষণ রান্নার রেসেফি খুঁজছিলেন??
জোবান-ইয়েস।
আমি-গাধা।(কুশান একটা ওনার গায়ে ছুড়ে মেরে)
জোবান-আজব,,,কি হয়েছে??
আমি-কিছুনা,,,আপনি বসুন আমিই কিছু রান্না করে আনি।(বলে রান্না ঘরে গেলাম)
জোবান-ওয়েট আমিও আসি।
আমি রান্না ঘরে এসে অনেক ভেবে পাস্তা বানাতে লাগলাম।এমনিতে কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করছে না তাই সহজ ভাবে পাস্তা টাই বানালাম।পাস্তাটা দুজনে খেয়ে নিজেদের খিদা মিটালাম।রান্না ঘরে সব ঘুচিয়ে আমি রুমে চলে এলাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় বেনি করছি এমন সময় জোবান এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।
আমি-কি হয়েছে???(ওনার হাতের উপর হাত রেখে)
জোবান-পাস্তায় এত ঝাল দিলা কেনো??
আমি-সরি,,,ঝাল একটু বেশি দিয়ে ফেলছি।
জোবান-সরি বললে তো হবেনা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমি- শরবত করে দিই।
জোবান-শরবত সামনে আছে।
আমি-মানে??
জোবান-(কিছু না বলে আমার দুগালে হাত রেখে আমার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।২ মিনিট পর উনি আমাকে ছেড়ে দেয়।)
আমি-ঝাল কমেছে??(ঠোঁটটা হাত দিয়ে মুচে)
জোবান-না।(বলে আমাকে বিছানায় ফেলে দিলো)
আমি-শুনুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।(ওনাকে আমার দিকে আগাতে দেখে)
জোবান-সবসময় তো জোর করেই ভালোবাসাটা আদায় করি।আজ না হয় ভালোবেসেই ভালোবাসাটা আদায় করি।কি,,,আজ ভালবাসতে দিবে???(আমার কাছে এসে)
আমি-(চুপ করে একটু মুচকি হাসলাম)
জোবান-পেয়ে গেছি উত্তর।(বলে উনি নাইটটা বন্ধ করে দিলো)
-চলবে