তোমার হাতটি ধরে পর্ব-২৫

0
866

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২৫
#Jechi_Jahan

আমি জোবানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। জোবান মাত্র আমাকে এটা কি জিজ্ঞেস করলো।আমাকে প্রথমে বিশ্বাস করেনি মানলাম কিন্তু এখন উনি আমার বাচ্চা টাকেও ছাড়লেন না।আমি এবার নিজেকে শক্ত করে যেই ওনাকে কিছু বলতে যাবো ওমনি।

জোবান-ছি ছি ছি এটা কি জিজ্ঞেস করলাম আমি।টেনশনে কি বলছি আমি নিজেও জানিনা।সরি শিশির আমি এটা বলতে চাইনি।তুমি প্লিজ ভুল বুঝো না আমাকে।

আমি – হুম।

জোবান-আজকে শুভা আমাকে বলেছিল তুমি নাকি পিল খেতে প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে।তো এখন আমি বলতে চাচ্ছি,,,,

আমি-আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি অন্য কারো সাথে শুয়ে পিল খেতে ভুলে গেছি।আর এখন আমার গর্ভে যে বাচ্চাটি আছে সেটা অন্য কারোর।

জোবান-এই ছি ছি ছি,,,আমি এটা কেনো বলবো।শিশির আমি ভুলে একটা প্রশ্ন করেছি বলে তুমি এত বড় একটা কথা বলে ফেললে।

আমি-ওই প্রশ্নটা আপনি ভুলে করেননি ওটা আপনার মনে মনেই ছিলো।

জোবান-শিশির আমি জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম তুমি পিল কেনো খেতে।

আমি-ওহ,,,এই সামান্য প্রশ্নটা করতে আপনার এত ঘাম ঝরছে টেনশন হচ্ছে তাই না।আমাকে কি এতই বোকা মনে হয় আপনার।

জোবান-শিশির তুমি আমাকে বিশ্বাস করো।আমি তোমাকে ওই প্রশ্নটা মন থেকে করিনি।

আমি-মুখ দিয়ে তো করেছেন।

জোবান-আচ্ছা তুমি আগে আমাকে এটা বলো তো তুমি পিল কেনো খেয়েছিলে???

আমি-আপনার এত কিছু জানার কি দরকার।আপনার তো জানা উচিত এই বাচ্চাটা কার।

জোবান-শিশির তুমি ওই কথা আর বলিও না।ওই কথাটা আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।

আমি-মনের কথা মুখ ফসকেই বের হয় জোবান।

জোবান-শিশির এবার কিন্তু আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।কোনোদিন তো আমার হাতের মার খাওনি।আজ এমন মার দিবো যে পটর পটর বন্ধ হয়ে যাবে।তুমি বলবে তুমি পিল কেনো খেয়েছিলে???

আমি-মার কি গাছে ধরে?? যে আমাকে দিবেন।

জোবান-যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো।

আমি-বাবা ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে একদিন আপনি বাবাকে বলেছিলেন আপনার বাচ্চা চাইনা।তাই আমি আপনার কথা ভেবে পিল খেয়েছিলাম যাতে প্রেগন্যান্ট না হই।

জোবান-সেদিন তো বাবা আমাকে,,,

আমি-সেদিন আপনি এগুলা বাবার রুমে বলেছিলেন। কিন্তু আমি ওদিক দিয়ে যাওয়ার সময় সব শুনে ফেলেছিলাম।

জোবান-তো তুমি এটা আমাকে আগে বলবেনা।তখন তোমার নামে ওই বাজে বাজে ছবি গুলো আসতো।ছবি গুলো দেখে আমার রাগ হতো ইনফেক্ট তোমার কথা শুনলেও রাগ হতো।বাবা সেদিন আমাদের বাচ্চার কথা বলছিলো তো আমিও রাগের মাথায় বলছিলাম বাচ্চা লাগবেনা।

আমি-ওহ,,,

জোবান-শিশির আম সরি,,, আমি ওটা বলতে চাইনি।আরে এ যে আমার বাচ্চা এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।

আমি- হুম,,, আচ্ছা কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি হ্যাঁ।ভালো লাগছে না।

জোবান-আচ্ছা চলো।(বলে আমাকে ধরে খাটে শুইয়ে দিয়ে আবার বারান্দায় চলে গেলো)

জোবান বারান্দায় এসে শুভাকে ফোন দিতে লাগলো।কিন্তু শুভা ব্যস্ত থাকায় ফোনটা ধরতে পারছেনা।কিছুক্ষণ পর শুভা নিজে জোবানকে ফোন দেয়।

শুভা-হ্যালো জোবান,,, সরি আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন ধরতে পারিনি।

জোবান-তোর ব্যস্তর সস্টি করি।

শুভা-কি হয়েছে??

জোবান-আজ তোর কারণে আমি শিশিরকে এমন অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসলাম।

শুভা-কি প্রশ্ন করেছিস??

জোবান-হাসপাতালে তুই বলেছিস পিল খাওয়ার ব্যাপারে আমার শিশির থেকে জানার অধিকার আছে।মানে কি ব্যাপারে জানবো আমাকে তো তুই সেটাই বলিসনি।আমি শিশিরকে প্রশ্ন করার সময় সবকিছু যেনো গুলিয়ে ফেলেছি।আর অবশেষে এমন একটা প্রশ্ন করলাম যেটাতে আমি নিজেও চমকে উঠেছি।

শুভা-গাঁদার জাত,,,বলবি কি প্রশ্ন করেছিস??

জোবান-বলেছি এই বাচ্চাটা আমার তো???

শুভা-হাদারাম একটা,,,পিল খাওয়ার সাথে এই বাচ্চাটা আমার তো এর কি সম্পর্ক??

জোবান-সেটা তো আমি নিজেও জানিনা।তখন মুখ ফসকে কি না কি বলে ফেললাম।প্রশ্নটা শুনে শিশিরের মনে খারাপ হয়ে গেছিলো।ও অনেক রিয়েক্ট করছিলো।

শুভা-এমন প্রশ্ন শুনলে যে কোনো মেয়েই রিয়েক্ট করবে।অবশ্য আমি জানতাম যে তুই কোনো না কোনো অঘটন ঘটাইবি।কিন্তু এত বড় অঘটন ঘটাইবি সেটা বুঝতে পারিনি।

জোবান-শিশির তো ওই প্রশ্নটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছে।

শুভা-দূর আমারই ওকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।লজ্জার কারণে জিজ্ঞেস না করে তোর মতো গাদাকে বললাম জিজ্ঞেস করতে।

জোবান-কিন্তু তুই তো এমন ভাবে আমাকে কথাটা বললি যেনো অনেক বড় কিছু।পিল খেলেই কি মানুষ প্রেগন্যান্ট হয় না।আরে পিল অনিয়ম করে খেলেও তো প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়।

শুভা-শুন,,,শিশির বলেছিলে ও বিয়ের এক মাস পরই নাকি পিল নেওয়া শুরু করেছে।তো আমার মতো যে কেওই ভাববে শিশির নিয়ম মতই পিল নিয়েছে।

জোবান-এখন আমি কি করবো,,,বেচারি অনেক কষ্ট পেয়েছে।

শুভা-তুই ওর নাম্বারটা আমাকে সেন্ড কর আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো।

জোবান-পাক্কা বুঝিয়ে বলবি তো।

শুভা-হ্যাঁ রে আমার বাপ বলবো।

জোবান-আচ্ছা আমি টেক্স করে দিচ্ছি।এখন রাখ মহারানীর কাছে যেতে হবে।

শুভা-আচ্ছা রাখছি।

জোবান ফোনটা রেখে শিশিরের পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

———-+———-

আকিব-তিশা,,,তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।

তিশা-,,,,,,(চুপ করে আছে)

আকিব-আমি এতদিন অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ছাড়া থাকার কিন্তু আমি পারছি না।তুমি প্লিজ আমার সাথে ফিরে চলো।

আশিক-ভাইয়া বাদ দাও,,,ও ওর সিদ্ধান্তে অটুট।ও কোনোদিন ও তোমার সাথে যাবেনা।

আকিব-আশিক কি বলছো তুমি এসব।তুমি একটু ওকে বুঝাও।

আশিক-ভাইয়া আমি ওকে এতদিন বুঝিয়েছি কিন্ত ও বুঝেনি।বিশ্বাস করো কিছুদিন আগে আমি ছোট ভাই হয়ে ওর গালে থাপ্পড় মেরেছি।তাও কিসের জন্য জোবানকে ভুলে তোমার কাছে ফেরত যাওয়ার জন্য।কিন্তু ও আমার কোনো কথা শুনেনি।

আকিব-তুমি কি জোবানকে এখনো ভুলোনি???

আশিক-কিসের ভুলে যাওয়া আর কিসের মনে রাখা।ও তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য জোবানের সাথে মেশার চেষ্টা করছে।মানে ও তোমাকে দেখাতে চায় ও তোমাকে ছাড়া সুখেই আছে।

আকিব-কি??

আশিক-হুম,,,ভাইয়া আমি ওকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছি।এবার তুমি একটু ওকে বুঝাও।

তিশা-কি বুঝাবে ও আমাকে আশিক।যে মানুষটা আমাকে বিশ্বাস করে না আমি তার কাছে কিভাবে ফিরে যাবো।

আশিক-তাহলে কি জোবানের কাছে ফিরে যাবি।আপু জোবান এখন বাবা হতে চলেছে।ও শিশিরের সাথে খুশি আছে।তুই ও প্লিজ আকিব ভাইয়ার সাথে খুশি খুশি থাক।

আকিব-তিশা,,,তুমি জোবানের সাথে মিশছো যাতে আমি কষ্ট পাই।আচ্ছা এবার আমাকে বলো তো,,,আমিও যদি তোমার মতো অন্য একটা মেয়ের সাথে মিশি তাহলে তোমার কেমন লাগবে।

তিশা-আকিব।(রেগে)

আকিব-আমি মিশার আগেই তো তুমি রেগে যাচ্ছো।এর মানে তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো।প্লিজ তিশা ফিরে আসো না।আমার ভুল হয়ে গেছে,,,সেদিন আমার তোমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে ফিরে আসো না।(তিশার হাত ধরে কান্না করে)

আশিক-এবার ও যদি তুই না মানিস তাহলে আমি ভাববো তুই তোর বেস্ট টা হারিয়ে ফেলেছিস।(এটা বলে আশিক রুম থেকে চলে গেলো।)

তিশা-ছাড়ো।(বলে আকিব থেকে সরে আলমারির সামনে চলে গেলো।আলমারি খুলে ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে আকিবের সামনে দাড়ালো)

আকিব-তিশা প্লিজ ডোন্ট ডু দিচ।

তিশা-(কিছু না বলে ডিভোর্স পেপার টা ছিড়ে ফেলে দিলো আর আকিবকে জরিয়ে ধরলো)আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আকিব।আমি তোমার সাথে বাড়ীতে যাবো।কিন্তু তার আগে একটা কাজ আছে।

আকিব-কি কাজ??

তিশা-আমাকে জোবান আর শিশিরের থেকে ক্ষমা চাইতে হবে।

(আল্লাহ আল্লাহ করে এই বদের চ্যাপ্টার শেষ করলাম)

সকালে”””””

জোবান এখনো ঘুমাচ্ছে আর আমি উঠে নিজের সব জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি।সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ এই বাড়ী থেকে চিরতরে বের হয়ে যাবো।যেখানে কোনে বিশ্বাস নেই সেখানে থেকে কি লাভ।অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি।রেডি হয়ে জোবানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে লাগেজটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।গাড়ীতে বসেই শান্তকে ফোন দিয়ে বললাম আমি বাড়ী আসছি ও যেনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।শান্তকে কথাটা বলেই আমি ফোনটা বন্ধ করে ব্যাগে রেখে দিই।যাতে জোবান ফোন দিলে না পায়।গাড়িটা নিজের আপন গতিতে চলছে কিন্তু আমার ভেতরে সবকিছু তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।কালকের ওই প্রশ্নটা আমার কানের সামনে যেনো ঘন্টার মতো বাজছে।প্রায় অনেকক্ষণ পর গাড়ী বাড়ীর সামনে আসলে আমি নেমে পড়ি।শান্তকে কিছু না বলেই আমি বাড়ীর ভেতর ডুকে পড়ি।

কিছুক্ষণ পরঃ-

জোবান ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে গেলে সার্জেন্টরা বলে “শিশির নাকি ওর বাবার বাড়ীতে চলে গেছে”। এটা শুনে জোবান কোনো রিয়েক্ট না করে বসে বসে নাস্তা খাচ্ছে।জোবান বুঝতে পেরেছে যে শিশির কেনো ওর বাবার বাড়ীতে গেছে।

-চলবে।