#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২১
কেটে গেছে এর মাজে প্রায় এক সপ্তাহ।আজ সাদু আর মনিরের বাগদান।সকাল থেকেই তোরজোড় করে সব কিছুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।বাড়িটাকে বিভিন্ন রঙের মরিচ বাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে সাথে আছে রঙ বেরঙের শিফনের কাপড় দিয়েও সাজানো হচ্ছে।এতে যেন চারপাশের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।সাদু সাথে ওর চার বেস্টুকে সাজানো হচ্ছে। পার্লার থেকে মেয়েদের বাড়িতেই আনানো হয়েছে ওদের সাজানোর জন্যে। সবাই তাদের ড্রেস গুলো পড়ে সেজে বসে আছে,সাদুকে সাজানো হলেই ওরা ওকে নিয়ে বাহিরে যাবে।বাহির থেকে শব্দ আসছে মিউজিকের।
এদিকে ছেলেরা অস্থির তাদের নিজ নিজ প্রেয়সীদের দেখার জন্যে।সবার চোখে ভালোবাসার মানুষটিকে এক নজর দেখার তৃষ্ণা! বড্ড বেশি তৃষ্ণা।
মেরাজ ভাবছে আচ্ছা তার এমন কেন লাগছে?সে কেন এতোটা অস্থির হয়ে আছে মিমকে দেখার জন্যে।কেন এতোটা উতলা তার মন।কেন তার বেহায়া চোখ দুটো বার বার মিমকেই খুজে যাচ্ছে।নিজের মনকে বারে বারে প্রশ্ন করে মেরাজ।কিন্তু প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর আসে না।
মনির তো প্রায় পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছে সাদুকে দেখার জন্যে।মেয়েটা এতো দেরি কেন করছে?ভেবে পায়না মনির।ও কি বুজে না যে মনির কতোটা ব্যাকুল হয়ে আছে ওকে দেখার জন্যে।
চোখদুটো বার বার সাদুদের রুমের দরজার দিকে যাচ্ছে। কখন বের হবে সে।এদিকে আফরান,আরিফ,নিবিড় এদেরও একি অবস্থা।তাদের ও হাল বেহাল।
–” ভাই রে ভাই এরা এতোক্ষন যাবত করছেটা কি?” নিবিড় বিরক্ত হয়ে বলে।
আরিফ ভ্রু-কুচকে এখনো সাদুদের রুমের দিক তাকিয়েই বলে,
–” না জানি আমার ভোলাভালা আলুকেটাকে আটা ময়দা মেখে কোন ভূত বানাচ্ছে।”
আফরান বলে উঠলো,
–” হ্যা! এই কথা ওদের সামনে বলিস তোদের চুল একটাও মাথায় থাকবে নাহ।”
আরিফ দুষ্টু হেসে বললো,
–” তোকে আমারটাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে নাহ।আমারটা ভালোই আছে।তোরটা আর মনিরেরটাই পাবনা ফেরত পাগল থেকে ড্যাঞ্জারাস।”
আফরান মিথ্যে রাগ দেখিয়ে মনিরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–” কিরে তুই কিছু বলছিস না?তোর বউ আর বোনকে এই আরিফ কি বলছে?”
মনির দ্বায়সারা ভাবে বলে,
–” তো?তোরও তো বোন আর বউ তুই কেন বলিস না?”
মনিরের কথায় আফরান খুক খুক করে কেশে উঠে আঁড়চোখে তাকায় মনিরের দিকে।
মেরাজ একগ্লাস পানি ওকে এগিয়ে দিয়ে হেসে দিয়ে বললো,
–” এখনি যদি হিচঁকি উঠে যায়! তাহলে যার পাল্লায় পড়েছিস তাকে কিভাবে সামলাবি?”
আরিফ আর নিবিড় হাই ফাইভ দিয়ে আবার মেরাজের সাথে হাই ফাইভ করলো।
নিবিড় হাসতে হাসতেই বললো,
–” আহারে এক বালতি সমবেদনা ফোর মনির এন্ড আফরান!”
মনির বাকা হাসলো নিবিড়ের কথায়।হঠাৎ বললো,
–” কেউ একজন ছাদে গিয়ে যে প্রেম করে বেড়ায় তাকে কি আমরা কিছু বলেছি?আবার ‘ভালোবাসি’ ও বলে।”
নিবিড়ের কাশি উঠে গেলো।আফরান এইবার বললো,
–” লে তুই কাশছিস কেন?”
মনির বগলদাবা করে দেয়ালের সাথে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
–” সত্যি কথা ফাঁস হয়ে গেলে এমনি হয়।”
নিবিড় কোণা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে তুতলিয়ে বললো,
–” আ..আমি তো জা..জাস্ট ও..ওকে একটু ভয় দে..দেখাতে চে..চেয়েছিলাম।”
মনির বললো,
–” হ্যা ওই জাস্ট থেকে মাস্ট হতে কতোক্ষন?”
এইভাবেই ওরা নিজেদের মাজে কথা বলতে লাগলো।
—————–
মেয়েগুলো এক একটাকে হুরপরি লাগছে।
মিম পড়েছে আকাশি আর সাদা কালারের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা যার মাজে সাদা আর আকাশি রঙের স্টোন বসানো।চুলগুলো মাঝখানে সিথি করা, এবং টিকলি দেওয়া কানের দুল,গলায় হার হাতে চুরি সব সাদা এবং আকাশি রঙের কম্বিনেশনের।মুখে ভারি মেক-আপ।ওকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
আলিফা পড়েছে গোল্ডেন আর পিংক কালারের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা যার মাজে গোল্ডেন স্টোন বসানো।চুলগুলো একপাশে সিথি করা এবং জুয়েলারি তে টিকলি,কানের দুল, গলায় হার সব গোল্ডেন আর পিংক স্টোনের সাথে ভারি মেক-আপ আলিফাকেও অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে।
আলিশার গায়ে চকোলেট কালারের লেহেঙ্গা যার মাজে হুয়াইট স্টোন বসানো।
চুলগুলো মেসি বান করা কানের আর ঘাড়ের চারপাশ দিয়ে চুল বাহির করা কিছু কিছু।খোপায় একটা হুয়াট স্টোনের ক্লিপ বসানো।
গহনা গুলোও হুয়াইট স্টোনের।কানে দুল,হাতে ব্রেসলেট,গলায় হার,ভারি মেক-আপ সব মিলিয়ে জাস্ট ওয়াও।
নূরের গায়ে জড়ানো কালো রঙের লেহেঙ্গা যার মাজে গোল্ডেন স্টোন বসানো।চুলগুলো একপাশে সিথি করে মাঝে টিকলি,কানে দুল,গলায় হার,হাতে ব্রেসলেট সব ব্লাক স্টোনের সাথে ভারি মেক-আপ। তাকিয়ে থাকার মতো কালো পরি লাগছে একদম।
সবাই রেডি হয়ে বসে আছে। সাদুর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে ওরা বিরক্ত।আসলে সাদুকে ওদের রুমের সাথে এটাচ্ড করা আলাদা একটা রুম আছে সেখানে সাজানো হচ্ছে।
নূর বিরক্ত কন্ঠে বললো,
–” আরেএ আর কতোক্ষন লাগবে ইয়ার।
আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো।”
আলিফা সবার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থেকেই বললো,
–” এক একটাকে কি যে লাগছে না মন চাইতেছে সবগুলোকে চেপে ধরে লম্বা একটা চুমু খেয়ে নেই।”
ওরা সবাই আলিফার এমন কথায় ‘ ইউউউউউ! ‘ এমন শব্দ করে এতে আলিফা থতমত খেয়ে যায়।
আলিশা রাগি গলায় বললো,
–” তুই এতো লুইচ্চা কেন আলু?”
মিম দু কোমড়ে হাত রেখে একই ভঙিতে বলে,
–” এতো লুইচ্চা তুই?আগে বলবি না যে তুই লেসবো।”
আলিফা মিমের কথা সাথে সাথে মুখে হাত দেয়।
–” আস্তাগফিরুল্লাহ!! মাইয়া অশ্লীল!”
নূর ভ্রু-কুচকে বলে,
–” তুই যে আমাগো চুমু খাওয়ার কথা কস তখন অশ্লীলতা কোথায় যায়?”
আলিশা বলে,
–” কাবাড্ডি খেলতে যায়।”
আলিফা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
–” তোরা না জানি আমাকে কবে হার্ট এট্যাক দিয়ে মেরে ফেলিস।আমি তো জাস্ট তোদের সুন্দর লাগছে সেটা বললাম।আর তোরা? ছিঃ!”
ওরা সবাই একে-অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।তারপর সবাই আলিফাকে জড়িয়ে ধরলো।
মিম বলে উঠলো,
–” আমাদের আলুকেও অনেক সুন্দর লাগছে। একদম রসগোল্লা লাগছে।”
আলিফা নিজেও হেসে ওদের জড়িয়ে ধরলো।
–” বাহ! বাহ! বাহ! বাহ! আমাকে রেখেই গ্রুপ হাগিং আর ভালোবাসা দেওয়িং নেওয়িং প্রসেস চলছে মানে আমি কিছু না? এই দিনটাই দেখার বাকি ছিলো?”
সবাই সাদুর গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে একে অপরকে ছেড়ে তাকায় সেদিকে।মুহূর্তেই সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে সাদুর দিকে।ওদেরকে এইভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ভয় পেয়ে যায় সাদু।
কি হলো যে সবকটা এমন অদ্ভূত রিয়েকশন দিচ্ছে। সাদু জলদি নিজের লেহেঙ্গা দুহাতে উঁচু করে ধরে ওদের কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর ঘাবড়ানো গলায় বললো,
–” ক..কি হয়েছে?তোরা এমন অদ্ভূত রিয়েকশন কেন দিচ্ছিস?আমাকে কি অনেক খারাপ দেখা যাচ্ছে?আমি কি এটা বদলিয়ে অন্য একটা পড়ে আসবো।কিন্তু এটা মনির নিজে পছন্দ করে আমার জন্যে এনেছে।আমি এটা না পড়লে ওর মন খারাপ হয়ে যাবে।”
সাদুর মুখের উপর একহাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দেয় নূর।
আলিশা মুখে হাত দিয়ে চোখজোড়া বড় করে তাকিয়ে বলে উঠে,
–” হায় ম্যে মার জাবা গুড় খাকে।কিতনি সুন্দার লাগরাহি হে তু।ম্যে তো ফিদা হো গায়া।”
নূর বিষ্ময় মাখা কন্ঠে বললো,
–” মেরা ভাই তো আজ গায়া কামছে।”
মিম ওদের ঠেলে ঠুলে সাদুর কাছে এসে বলে,
–” আল্লাহ্ কি সুন্দর দেখাচ্ছে।ও মাই গোড, ও মাই গোড। আমি ছেলে হলে তোকে বিয়ে করে নিতাম।”
আলিফা দৌড়ে সাদুর হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বলতে লাগলো,
–” সাদু! সাদূরে!! এই মনির ভাই বাদ চল তুই আমি পালিয়ে যাই।”
সাদু বেক্কল বনে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।কি আজব আজব কথা বলছে এরা।
সাদুর গায়ে জড়ানো তার ভালোবাসার মানুষটির দেওয়া লেহেঙ্গা। যেটা পার্পেল আর ব্লাক এর কম্বিনেশনে আর তার মাজে ব্লাক টোন বসানো।লেহেঙ্গাটার উপরের টপস্টা পড়ে আবার তার উপর দিয়ে কালো রঙের নেটের আস্তরন দেওয়া।নিচের পার্টটা পাচঁটা ধাপে ধাপে দেওয়া যার মাজে বিভিন্ন লতাপাতা ফুলের ডিজাইন করা আর তাতে ব্লাক স্টোন বসানো।মাথায় পার্পেল কালার নেটের উড়না দেওয়া তাতে ব্লাক স্টোনের কাজ করা।আর গায়ে আবার একপাশে কালো নেটের উড়না জড়ানো যার চারিদিকে পার্পেল কালারের ডিজাইন করা।আর পার্পেল স্টোন বসানো।
চুলগুলো মাঝবরাবর সিথি করা একেবারে অনেক ছোট্ট সাইজের পার্পেল কালারের একটা স্টোনের টিকলি আর একপাশ করে বড় একটা টায়রা আর মাথার উড়নাটার সাথে ফিক্স করে একটা তাঁজ বসানো।
কানের দুল,গলায় হার,হাতে ব্রেসলেট সব পার্পেল আর ব্লাক স্টোনের।সাথে ভারি মেক-আপ।
সাদুকে এতোটা সুন্দর দেখাচ্ছে যেন কেউ ওর উপর থেকে নজর সড়াতে পারবে নাহ।
নূর গিয়ে সাদুকে ধরে বড় একটা আয়নার সামনে দাড় করায়।যেখানে ওর পা থেকে মাথা অব্দি সব দেখা যায়।
নূর ফিসফিস করে বললো,
–” তুই নিজেই নিজেকে দেখে বিবেচনা কর তোকে কেমন লাগছে।আজ নিশ্চয়ই ভাইয়ার জন্যে হাসপাতালের সিট বুকিং করা লাগবে।”
নূরের কথায় সাদু লজ্জা পেয়ে যায় ভীষন।নূর তার মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
–” আমার এতোটুকু কথায়ই এতো লজ্জা?নিচে ভাইয়ার কাছে গেলে তখন তো লজ্জায় মোমের মতো গলে যাবি।”
সাদু দু-হাতে নিজের মুখ ঢেকে নিলো।তার কেমন কেমন যেন লাগছে?প্রচন্ড অস্থির লাগছে।হাত পা ঝিমিয়ে আসছে।এ কেমন অনুভূতি।
সাদু কিভাবে মুখোমুখি হবে মনিরের?সে তো লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতেই পারবে নাহ।একদিকে অস্থিরতা অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্খা।
ইসস! কি এক অদ্ভূত যন্ত্রনা হচ্ছে বুকের মাঝখানটায়।সাদু বুকে হাত দিয়ে জোড়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো।তখনি টুং করে একটা মেসেজ আসলো ওর ফোনে।সাদু ফোন আনলক করে দেখে মনির মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজটা পড়তেই যেন সাদু সারা শরিরের মৃদ্যু কম্পন ধরে গেলো।অদ্ভূত ভালো লাগায় চারদিক মুখোরিত।মেসেজটা এইরকম ছিলো।
‘ কাজল কালো আঁখির মাঝে ভালবাসার স্বপ্ন সাজে,
দূর দেশের কাজল আঁখি ছুঁয়ে গেলে মন,
রঙিন প্রজাপতি আজ খুঁজে ফেরে সেই আঁখি, যাহার মাঝে নিজেকে আমি বাজেভাবে হারায়েছি .,
ও গো মোর লাজুকতা দেখা দেও না আমায়,
আর যে এই প্রতিক্ষা স্বয় না,আমি অস্থির,বড্ড অস্থির।
তোমার ওই আঁখি দুটির দর্শন দিয়ে আমার মনটাকে শীতল করে দেও।’
#চলবে_______
ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
কেমন হয়েছে জানাবেন।