ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-২২

0
756

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২২
ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পায় তখন খুশিতে মন যে কি করতে চায় তা ভেবে পায় নাহ।
মনির নিজের মনের এই আনন্দ ধরে রাখতে পারছে নাহ।ওর চোখে মুখে আলাদা এক খুশির ঝিলিক যেটা সবাই দেখেই বুঝতে পারছে। আফরান,নিবির,আরিফ,মেরাজ ওরা মনিরকে পিঞ্চ করছে।আর মনির মিথ্যে রাগ দেখাচ্ছে আবার হাসছেও ওদের সাথে।

–” ভাইরে ভাই তোর খুশি দেখে আমার বিয়ে করে নিতে মন চাইতেছে। সবার আগে বাগদান আমার হলো।কিন্তু এদিকে তুই আগে বিয়ে করে নিচ্ছিস।”আরিফ আফসোসের সুরে বললো।

নিবিড় হেসে বললো,

–” আহারে আমাদের আরিফের জ্বলে।
জ্বলে জ্বলে অন্তর ছারখার হয়ে যাচ্ছে তার।”

–” ভাই আর কতোক্ষন এরা আসছে না কেন?”

আফরানের কথায় মেরাজ দুষ্টু স্বরে বললো,

–” তুই এতো অস্থির হচ্ছিস কেন?কারন কি ভাই?”

আফরান এইবার আর ঘাবড়ালো না।সরাসরিই বললো,

–” যাকে ভালোবাসি তাকে দেখার জন্যে তো মন ছটফট করবেই।”

সবাই ‘ ইউউউউউ ‘ করে উঠলো।আফরান মাথার পিছনের চুল চুলকে মুচকি হাসসো।

হঠাৎ মাইকে আনাউন্স হলো।সবাই মনোযোগ দিলো সেদিকে।

–“Ladies and Gentlemen, now our Princess and her four besties are coming….”

তখনি সিড়ির দিকে স্পোটলাইট গিয়ে পড়লো। সবাই সেদিকে তাকাতেই যেন সবার নজর থমকে গেলো।
মনির, আফরান,নিবিড়,আরিফ,মেরাজ স্তব্ধ হয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছে স্বয়ং পাচঁটা পরি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।অন্যান্য মেহমান সবাই তাদের দিক তাকিয়ে।
সবাই চিৎকার করে হাত তালি দিতেই ওদের পাচঁজনের হুশ আসে।নূর,আলিশা,আলিফা,মিম ওরা সাদুকে ধরে নামাচ্ছে।
মনির যেতে নিলেই আরিফ আর মেরাজ ওকে ধরে আটকিয়ে রাখে।মনির ওদের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই ওরা মনিরকে চোখ টিপ দেয়।
আফরান আর নিবিড় গিয়ে ওদের বোনকে ধরে নিয়ে আসে।
আফরান আর নিবিড় বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

–” মাশা-আল্লাহ। আমার বোনটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

নূর তাকিয়ে আছে আফরানের দিকে। কালো কমপ্লিট সুটে লোকটাকে মারাত্মক লাগছে।নূর চোখ সরিয়ে নিলো সেদিনেত সেই আফরানের স্পর্শগুলো মনে পড়লে এখনো ওর হাত-পা কেঁপে উঠে।আলিশা নিবিড়ের দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে।লোকটাকে চকোলেট কালারের কমপ্লিট স্যুটে অনেক সুন্দর লাগছে।আলিশা নিজের দিকে তাকালো তারও তো গায়ে চকোলেট কালার লেহেঙ্গা। আলিশার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো।নিবিড়ের দিকে তাকাতেই মুহূর্তেই মুখটা কালো হয়ে গেলো।লোকটা ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে নাহ।লোকটা ওকে এক সপ্তাহ ধরে ওকে ইগনোর করছে।কেন এমন করছে লোকটা?আচ্ছা! ওরই বা এতো কষ্ট লাগছে কেন?এইযে বুকের বা-পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা করছে এটা কেন হচ্ছে?
লোকটা ওকে ইগনোর করলে ওর এতোটা কষ্ট কেন লাগে?কেন মন চায় সব কিছু ছার খার করে দিক।
নিবিড় সবার সাথে কথা বলতে বলতেই আলিশার দিকে চোখ যায়।দেখে আলিশা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।নিবিড়কে নিজের দিকে তাকাতে দেখেই আলিশার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু নিবিড় যখন মুখ কালো করে নিজের নজর সরিয়ে নেয়।
আলিশার কলিজাটায় ছ্যাৎ করে উঠে।
নিবিড়ের এই চাহনীতে একরাশ বেদনা দেখতে পেয়েছে ও।কিন্তু কিসের এতো কষ্ট লোকটার?আচ্ছা ও কি নিজের অজান্তেই নিবিড়কে কোন কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?
নাহ! লোকটার সাথে কথা বলা লাগবে কেন এমন করছে সে?

মনির অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।সাদুকে ওর ভাই আর বেস্টিরা ঘিরে ধরে আছে।বেচারাকে সাদুর কাছে যেতেই দিচ্ছে নাহ।মনির বিভিন্নভাবে সাদুকে ইশারা ইঙিত দিচ্ছে। সাদু মনিরের কান্ড কারখানা দেখে মিটিমিটি হাসছে। পার্পেল কালার কমপ্লিট স্যুটে মনিরকে ওর কাছে কোন রাজ্যের রাজা লাগছে।আর সাদু সেই রাজার রাণী।তার ভালোবাসার রাজ্যের রানী।
মনির এইবার নিজেকে আরিফ আর মেরাজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। হনহন করে ওদের মাজে গিয়ে সাদুকে সবার মাঝখান থেকে টেনে নিয়ে আসলো নিজের কাছে।আর জোড়ে বললো,

–” আবার বউকে আমি আবার বিয়ে করবো।আর আমার বিয়ে করা বউয়ের কাছেই আমাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে নাহ।
দ্যাট্স নট ফেয়ার।”

সাদু চোখ বড় বড় করে তাকায় মনিরের দিকে।

–” এটা কি হচ্ছে?লজ্জা নেই আপনার?এতোগুলো মানুষের সামনে কিভাবে টেনে আনলেন আমাকে?”

মনির সাদু কোমড়ে হালকা স্লাইড করতেই।সাদু কেঁপে উঠে নিজের লেহেঙ্গা খামছে ধরে।
মনির সবার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে থেকেই নিজের মুখটা সাদুর কানের কাছে নিয়ে আস্তে করে বলে,

–” তোমার বরের যে লজ্জা সরম খুউউউব কম। তা তুমি খুব ভালো করেই জানো উম্মিপাখি।”

–” হা..হাত সরান” কাঁপা কন্ঠ সাদুর।

–” উহুঁ।”

সাদু ঠোঁট উলটে বললো,

–” প্লিজ!”

মনির এতে যেন সাদুকে নিজের সাথে আর একটু ঘেসে দাড় করালো আর সাদুও আর কি করবে?অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষন পর মনির সাদুকে আলতো স্বরে বললো,

–” তোমাকে আজ যা লাগছে না।মন চাচ্ছে একদম…..!”

সাদু সাথে সাথে মনিরের পেটে চিমটি দিয়ে বললো,

–” আপনার অসভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন!

–” আমি তো প্রসংশা করছিলাম।”

সাদুর রাগি গলা,

–” ছি! এইভাবে কেউ প্রসংশা করে?”

–” তুমি আমার পুরো কথাটাই শুনলে না!”

–” এমন নির্লজ্জ কথাবার্তা আমি শুনি নাহ!”

–” আচ্ছা! ‘ লুকিং গোর্জিয়াস মাই কুইন!’ এইবার? ”

–” হ্যা ঠিক আছে।”

মনির হালকা হেসে বললো,

–” একদম আমার মনের ফুলের বাগানের ভালোবাসাময় একটা তাজা ফুটন্ত গোলাপ লাগছে।মন চাচ্ছে সারাজীবন আমার সামনে বসিয়ে রেখে তাকিয়েই থাকি।”

সাদু লাজুক হাসলো।বললো,

–” আর তো কটা দিন তারপর তো আমি আপনারই হয়ে যাবো।”

–” সেই অপেক্ষাটাই যে আর সইছে নাহ।আচ্ছা! চলো না দুজন পালিয়ে যাই।”

সাদু কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো মনিরের কথায়।

–” আশ্চর্য হাসছো কেন?”

–” আপনি যেসব কথা বলেন না হেসে পারা যায় নাহ।মানুষ কখন পালায় যখন তাদের ফ্যামিলি তাদের ভালোবাসা মেনে নিতে চায় নাহ।আর আমার ফ্যামিলি আপনার ফ্যামিলি সবাই রাজি। ইনফেক্ট আমাদের বিয়েও হয়ে গেছে।এখন আবার বিয়ে করছি কিছুদিনের মাজেই।আর আপনি বলছেন পালিয়ে যাবো।”

মনির ঠোঁট উলটে বাচ্চাদের মতো বললো,

–” হ্যা হাসো হাসো। আমার মনের দুঃখ তুমি বুজবে নাহ।”

সাদু মুচকি হেসে তার ভালোবাসার মানুষটির অভিমান ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

—————
আলিফাকে হাত ধরে টেনে আরিফ নিজের কাছে নিয়ে আসলো।তারপর অপলক আলিফার দিকে তাকিয়েই রইলো।
আলিফা ঘার কাত করে আরিফের দিকে তাকিয়ে।সাদা স্যুটে লোকটাকে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে অনেক।ইসস! এই লোকটা ওর। একান্তই ওর।ভাবতেই আলিফার মনটা ভালোলাগায় ভরে উঠে।
আরিফ তাকিয়েই আছে।এইবার আলিফা নিজেই বলে উঠে,

–” আমাকে সুন্দর লাগছে না বুজি?”

আরিফ ঘোরলাগা গলায় বললো,

–” এতোটা মারাত্মক লাগছে যে মানুষজন কিছু না দেখে তোমার ওই ঠোঁটে গভীর এক চুঁমু খাই।”

আলিফা গোলগোল চোখ করে তাকালো আরিফের দিকে তারপর বললো,

–” ছি! কিসব বলছেন?মানুষ শুনলে কি বলবে?”

–” ইস! আমার আলুউউ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।হৃদয়টা ঘায়েল হয়েছে শতোবার তোমাকে এই রূপে দেখে।
আমাদের বিয়েটা কবে হবে?আমার আর তর সইছে নাহ।”

আলিফা হাসলো।সেই হাসিতে ভালোবাসা পূর্ণতা পাবার আনন্দ।
————–

মিম মেরাজের কাছে গিয়ে দাড়ালো।আসলে ও খেয়াল করেছে মেরাজ ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।
মিম মেরাজের সামনে গিয়ে আকস্মিক দাড়াতেই।মেরাজ থতমত খেয়ে যায়।মিম মিষ্টি হেসে বললো,

–” আমাকে বুজি অনেক সুন্দর লাগছে?”

মেরাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিম ওকে থামিয়ে দিয়ে আবার নিজেই বলে উঠে,

–” উহু! মিথ্যে বলবেন না। এটা আমার পছন্দ না।”

মেরাজ শুকনো ঢোক গিলে।জিহবা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলো।তারপর নিজের মনের কথাটাই বললো,

–” তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।একদম চোখ ধাঁধানো সুন্দর যাকে বলে।”

মিম বড় এক হাসি দিয়ে মেরাজের গাল টেনে দিলো।তারপর বলে,

–” নীল স্যুটে আপনাকেও অনেক হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে।”

মিম অন্যদিকে চলে গেলো।ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।এদিকে মেরাজ নিজের গালে হাত দিয়ে আছে।একটু আগে মেয়েটা কি করলো সেটাই বুজার চেষ্টা করছে।

———–
আফরান সুযোগ খুজছিলো এতোক্ষন নূরের কাছে যাওয়ার।মেয়েটা এতো লাফায়। একদন্ড এক জাগগায় স্থির হয়ে দাড়াতে পারে নাহ।আফরান নিঃশব্দে নূরের পিছনে গিয়ে দাড়ালো।নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেতেই নূর দ্রুত পিছনে ঘুরে দাড়াতেই আফরানের বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয়।আফরান দ্রুত নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ওকে সামলিয়ে দাড় করায়।কিন্তু এখনো ওকে ধরে আছে।

আফরান মৃদ্যু স্বরেই বলে,।

–” আস্তে ধীরে বলতে যে শব্দ আছে তা কি তুমি জানোনা?সবসময় এমন তাড়াহুড়ো করো কেন?”

নূর এইবার নজর উঠিয়ে তাকায় আফরানের দিকে।এতোক্ষন সে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

নূরকে এইভাবে তাকাতে দেখে আফরান নিজের বুকের বা-পাশে হাত দিয়ে বলে,,

–” উফফ!!! এমনিতেই তোমাকে এই হুরপরি রূপে দেখে আমার অবস্থা আধমরা মানুষদের মতো।এখন এই কাঁজলটানা নয়নজোড়া দিয়ে এইভাবে তাকিয়ে আমার হৃৎপিন্ডটা ঝাঝড়া করো না আর।”

নূর কাঁপছে আফরানের স্পর্শে আর ওর কথায়।আস্তে করে এ বলে,

–” প্ল..প্লিজ আমাকে ছা..ছাড়ুন।”

আফরান এখনো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,

–” কেন? কি হয়েছে?”

নূর অনেক কষ্টে বললো,

–” আপনি ছাড়ুন! আমার কেমন কেমন যেন লাগছে।”

–” কেমন লাগে?”

নূর শেষমেষ না পেরে ‘ জানিনা! ‘ বলে আফরানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো।আর আফরান সেদিকে তাকিয়ে আছে ঠোঁটে মুগ্ধময় হাসি।

#চলবে____________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।