#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 25
.
🍁
.
কাঠফাটা রোদ। সূর্য যেনো ক্ষোভে পড়ে প্রখর রোদ ছড়াচ্ছে। তাপে ঝলছে দেবে সবাইকে। কোথাও একটা গাছের পাতা নড়ছে না। থমথমে একটা পরিবেশ। কপালে ফুলে থাকা রগগুলোর ওপরেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। সূর্যের ন্যায় মুখটা আগুনের গোলা হয়ে আছে। সোফায় বসে দুই পায়ের উপর দুই হাত ভর করে কিছুটা নুয়ে বসে আছে কাব্য। এক হাতে ছোট্ট একটা ফুলদানি। বার বার ঘুরিয়েই যাচ্ছে। পুরো রুম দেখলে যে কেউ বলবে কেবল হয়তো জলোচ্ছ্বাস বয়ে গেছে। দরজার পাশে ছোট্ট মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে শুভ। কিছু বলতেও পারছে না আবার করতেও পারছে না। সাধারণত বড়দের তুলনায় ছোটদের রাগ, জেদ বরাবর বেশি থাকে। আর এক্ষেত্রেও একদম তাই। শুভ সাহস নিয়ে রুমে ডুকে রুমের অবস্থা দেখে সামান্য মাত্র বিচলিত না সে। এ তো তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানা। ছড়ানো ও ভাঙা জিনিসগুলো এড়িয়ে এড়িয়ে পা ফেলে শুভর পাশে গিয়ে বসে। হাতটা হালকা করে কাঁধে রেখে শুভ ধীর কন্ঠে বলে,
– কাব্য! কুল ডাউন। মাথা গরম করে ওখান থেকে চলে এলি সবাইকে রেখে। তোর জন্য আমিও চলে এলাম। এখন সবাই এসে যদি এরকম অবস্থা দেখে তখন সবার প্রশ্নের উত্তর কি তোর কাছে আছে? সব সময় এরকম করে মাথা গরম করে সমস্যার সমাধান করা যায় না। মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবতে হয়। ওখান থেকে ওভাবে চলে আশা একদমই ঠিক হয় নি তোর।
কাব্য সেই একইভাবে বসে থেকে শান্ত গলার উত্তর দেয়,
– তোর মতে আমার ওখানে থেকে মেঘের বিয়ের আলোচনায় সামিল হওয়া উচিৎ তাই না?
– আমি একদমই তা বলছি না।
– তুই এছাড়া অন্য কিছু বলছিসও না।
– আমি বলছি নরমাল থাকার ট্রাই করতে। এইভাবে উত্তেজিত হয়ে কোনো সমাধান বের করতে পারবি না।
– তোর অন্তত বোঝা উচিৎ আমার পক্ষে এখন নরমাল থাকা কতটা সম্ভব। আমার যতদুর মনে পড়ে তুইও হয়তো কোনো একসময় এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছিস।
কাব্য কথাটা বলেই শুভর দিকে তাকায়। শুভ কাব্যর চোখ দেখে বেশ অবাক হয়। চোখে যেনো লাল রং করে দেওয়া হয়েছে। শুভ কাব্যর চোখের তাকিয়েই আছে। কাব্য ওঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,
– সবাই জানলো কি করে ওরা ছাদে? কে খবর দিয়েছে?
– কেউ দেয়নি। মোহনা সম্ভবত মেঘলাকে খুঁজতে বের হয়েছিলো। তখন তোকে নাকি ওপর থেকে আসতে দেখে। তারপর আমাদের কাছে আসে কিনা জিজ্ঞাসা করতে দরজায় নক করে। তখনই ওর বাবা জেগে জেনে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
– তোর কি মনে হয় না ব্যপারটা অতিরিক্ত করেছে মেঘলার বাবা।
-আসলে বাবাকে দোষারোপ করতে পারছি না আমি এখানে।
শুভর কথাটা শুনে কাব্য ঘুরে শুভর দিকে তাকায়। শুভ কারণটা বুঝে আবার বলে,
– দ্যাখ! ওনি আতংকিত বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমে একবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়ে মান সম্মানে কাঁদা লেগেছে ওনার। সম্মান ব্যাপারটা এমন যা একবার হারালে ফিরে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ওনি একবার হারিয়ে এই পর্যন্ত আবার এসেছেন। তাই আবার হারাতে কেউই চাইবেন না। তাই ওনি হয়তো ভেবেছেন মেঘলা আবির সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে ভুল কদম ওঠানোর আগেই সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে দিতে। ওনার এখানে আসলেই কোনো ভুল নেই। থাকলে একটাই যে ওনি কারো কথা শুনেন নি। রাগের মাথায় সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সময় তো চলে যায় নি। এখন কেবল কথাটাই হয়েছে। আমাদের হাতে সময় আছে। বাবাকে ঠিক বোঝাতে পারবো। তুই এতোদিন এতো অপেক্ষা করেছিস। এখন আরেকটু কর। আমার ওপর ভরসা নেই তোর? আমি যখন বলেছি মেঘলা তোর হবে, তো তোর হবেই। আরে আমরা প্রেমিক পুরুষ, ব্যর্থ প্রেমিক পুরুষ নাকি? ছিনিয়ে নেবো অধিকার।
শুভ কাব্যর কাছে ওঠে গিয়ে পাশে দাড়িয়ে বলে,
– আরো একবার ডিরেক্টর হতে রেডি তো? এবার কাহিনীটাতে একটুবেশি টুইস্ট ঢালতে হবে ব্রো।
🍁
তিনদিন প্রচুর রোদ আর গরমের পর আজকে বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ ছুটোছুটি করছে। ভাবসা এক গরম হাওয়ার পর হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে। এক ঝুম বৃষ্টির অপেক্ষায় জানালার কাছে বসে আছে মেঘলা। দুইদিন যাবৎ রুমেই বসে আছে। ওর বাবা ওর সাথে কথা বলছে সেই কষ্ট যেনো আরো বেশি ঝেকে ধরেছে। মেয়েরা মূলত সবথেকে আহ্লাদী হয় তার বাবার কাছে। আর সেই বাবা আর মেয়ের মাঝে ফাঁটল ধরে তখন তার থেকে বেদনাময় হয়তো আর কিছুই লাগে না। মেঘলা এক কাপ কফির জন্য রান্না ঘরের দিকে নামতে গিয়ে হঠাৎ কিছু কথা শুনে আটকে যায়। মেঘলার বাবা ও মা সোফায় বসে তাকে নিয়েই কথা বলছে। প্রথমত কথাটা ওর মায়ের থেকে শুনেই দাঁড়িয়েই পড়ে। কথাটা গুলো এমন ছিলো,
– কাবিনের সময়টা কখন?
মেঘলার বাবা পাশে সোফায় গা এলিয়ে মাথাটা পেছনে ঠেকিয়ে দিয়ে বসে আছে। মেঘলার মায়ের কথার উত্তরে বলে,
– তুমি নিশ্চয় খুবই খুশি তাই না মেহেরের মা।
– হ্যা তা তো। যাই বলো মেয়ে কিন্তু আমার পছন্দেই পছন্দ করেছে।
– আমি রাগের বসে ভুল কিছু বলে ফেললাম না তো?
– একদমই না। হ্যা হয়তো পরিস্থিতিটা খারাপ ছিলো কিছু সিদ্ধান্ত খারাপ ছিলো না। আর আমি তো আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম আবির মেঘলার বিয়ে। টেনশনে ছিলাম মেঘলা পছন্দ করবে কিনা। কিন্তু দেখো এরা আগে থেকেই একে অপরকে পছন্দ করে।
– হুম! মেয়ের বাবা হওয়া আসলেই যেমন ভাগ্যের ব্যাপার তেমন চিন্তারও ব্যাপার। মেঘলাকে দিয়ে কখনো আশা করি নি এমন। মেহেরের মতো মেঘলাও শেষে কি না মান সম্মানের পরোয়া করলো না। ওখানে আমরা না থেকে অন্য কেউ থাকলে তখন কি হতো বলো তো?
– হ্যা! আমিও সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু তোমাকে কেমন জেনো সংশয়ে লাগছে। তোমার কি আবিরকে ভালো লাগে না?
– তেমনটা নয়। আবির যথেষ্ট ভালো ছেলে। কিন্তু…
– কিন্তু কি?
– আমি যে ওর জন্য অন্য কাউকে ভেবে রেখেছিলাম।
– তুমি অন্য কাউকে ভেবে রেখেছিলে আর আমাকে তা বলোও নি?
– বলার সময়ই হয়ে ওঠলো না।
– কে?
– কাব্য। শুভর ছোট ভাই। ইভেন শুভর বাবা আর আমি আলোচনাও করে রেখেছিলাম। কিন্তু মেঘলা এমন একটা কাজ করলো। নিরাশ করে দিলো গো একদম।
মেঘলার বাবার কথা শুনে মেঘলা চোখ বড়বড় করে ওর বাবার দিকে তাকায়। সাথে সাথেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। আর মনে মনে ভাবে,
– ওই খারুস সাদা মুরগির সাথে আমি? বাবা ওর সাথে আমার বিয়ের কথা ভেবে রেখেছিলো? হায়! খোদা। ওর থেকে আবির ভাইয়া অনেক ভালো। ওই খাটাসটাকে বিয়ে করার থেকে আবির ভাইয়াকেই বিয়ে করা অনেক ভালো।ওর সাথে আমার বিয়ে হলে তো সারাদিন বকা খেতে খেতেই পেট ভরে যেতো। ভাত আর খাওয়া লাগতো না। হুহ!
রুমে এসে বসতেই অজানা কারণেই মন খারাপ হয়ে গেলো। কেনো জেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে মেঘলার। মনে হচ্ছে কিছু নেই, কিছু হারাচ্ছে। কিন্তু কি তা আর খুঁজে পাচ্ছে না। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টির শব্দ কানে আসতেই জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো। খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে কিন্তু আবার কেনো জেনো ইচ্ছে করছে না। অদ্ভুতরকমের এক বিরক্তিকর অবস্থা। জানালার দিকে তাকিয়ে থেকেই হঠাৎ খেয়াল করলো মাঝ বয়সি একটা ছেলে একটা একটা ব্যাগ প্রাচীরের ওপর দিয়ে ওদের বাগানে ফেলে দিলো। ছেলেটা যে ওকে দেখেনি তা একদমই না। বরং মেঘলাকে দেখেই ফেলে দিলো। মেঘলা কিছু না ভেবেই কৌতুহল বশত বেরিয়ে গেলো এমনিই। ব্যাগটা নিতে গিয়ে একদম ভিজে গেছে। ছোট্ট প্লাস্টিক জাতীয় ব্যাগ। ব্যাগটা খুলতেই দেখে নীল ঘুড়ি দেখার সাথে সাথেই আটকে ফেলে পানি পড়ার ভয়ে। প্রথমত বেখায়ালি ভাবে খুললেও পড়ে ঘুড়ি দেখে খুব সামলে ছাদের ওপর চিলেকোঠার রুমে নিয়ে গেলো। যে কেউ চলে আসার সম্ভাবনা আছে।
খু্ব যত্ন সহকারে ঘুড়িটা বের করে। বেশ কিছুটা ভিজে গেছে। মেঘলার ঘুড়িটা দেখেই যত বিষন্নতা ছিলো সব যেনো গায়েব। যেনো ও আসলে একেই খুব মিস করছিলো। ঘুড়িরটায় প্রতিবারের মতো একটা চিরকুট বাঁধা। বৃষ্টিতে যেনো না ভেজে এমন ভাবে প্যাকেট করা। মেঘলার মনের ভেতর অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে। ভেজা ভেজা হাতে চিরকুটটা খুলতে গিয়ে ভিজিয়ে ফেলে। অসহায় একটা চাউনিতে ভেজা চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোদিন পর একটা চিঠি এলো তাও কি না ভিজিয়ে ফেললো। মন ভালোর করার ঔষধটা নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে গেলো। তবুও খুবই সাবধানে খুলে প্রথম লাইনের কিছুটা পড়ে,
” তোমার ভুলের জন্য শাস্তি আমার প্রাপ্য কেনো মেঘাবতী? আমার জিনিস আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার সাহসই……..
বাকি টুকু ভিজে গেছে। এটুকু পড়েই মেঘলা বেশ চিন্তায় পড়লো এই ভেবে যে ও কিভাবে শাস্তি পেলো। চিঠিটা বেশ বড় ছিলো। লেখার বিস্তৃত দেখ বোঝা যাচ্ছে বেশ কাঙ্খিত কিছু লেখা ছিলো। যতটা আফসোস হলে নিজেকে মেরে ফেলার ইচ্ছা জাগে ঠিক ততটাই ইচ্ছা মেঘলার মন পোষণ করছে। কিছু কিছু লেখা এখনো দৃশ্যমান। এইটা খেয়াল করার সাথে সাথে মেঘলা দৌড়ে গিয়ে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে ফ্যান চালু করে চিঠিটা শুকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মধ্যে ধৈর্য নামক কঠিন ব্যপারটা বিন্দু মাত্র কাজ করছে না। দ্রুত হেয়ার ড্রায়ার বের করে সেইটা দিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ মেঘলা তার আচরণের দিকে বেশ খেয়াল করলো। এতোটা ব্যস্ত কেনো ও সামান্য এই চিঠির জন্য? সামান্য? সামান্য না। এই চিঠিগুলো সামান্য না তার কাছে। নিঃসন্দেহে খুবই বিশেষ কিছু, চিঠিগুলো ও চিঠি প্রেরককারীও। বিশেষভাবে বিশেষ কিছু জিনিস থাকে। এগুলো তারই অন্তর্ভুক্ত। মেঘলা কথাগুলো ভাবতেই বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে। ওকে ওর হৃদযন্ত্রটা বাস্তবের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য জানান দেয়। সময় ও পরিস্থিতি মোড় নিয়েছে অন্যদিকে। সে কেবলই এগিয়েছে এক সমান্তরালে কিন্তু তার মাঝেই এক মোড় সৃষ্টি হয়ে সেই সমান্তরালের বিপরীতে ঠেকেছে। মেঘলার অবস্থানটা একদম মোড়ের মাথায়। সামনের পথ ডাকছে আর পাশের পথ আটকে নিচ্ছে। ছুটে সামনে এগোবে না আটকে থেকে যাবে সে?
চলবে….. ❤
#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 26 + বোনাস পার্ট
.
🍁
.
বৃষ্টি! আহা কি সুন্দর সেই বৃষ্টি! বৃষ্টি শব্দটার সাথে রোমান্টিক শব্দটাও যেনো ওতোপ্রেতোভাবে জড়িতো। আরো একটা আছে। তা হলো অসুখ। অসুখ ওতোপ্রেতোভাবে নয়, সরাসরি বৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত। সেই সম্পর্কেই সূত্র ধরেই অসুখ মেঘলার কাছে এসে আশ্রয় নিয়েছে। যার ফলস্বরূপ সে এখন সামনে বড় একটা বাটিতে গরম পানি নিয়ে বসে আছে। বসে আছে না ঠিক তা না, আসলে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ঠান্ডা যতই লাগুক কিন্তু তাদের বোঝা উচিৎ বাহিরের গরম আবহাওয়া হিসেবে আবার এই গরম ভাব নেওয়া একটু অসহ্যজনক। কিন্তু সে উপায়হীন। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে প্রচুর বকা হজম করতে হয়েছে। তার মধ্যে রোগ বাধিয়েছে যার জন্য বঙ্গমাতা ভিষণ ক্ষিপ্ত অবস্থায় আছে। তাই এসব চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো অপশন নেই। কপাল এবং ঘাড়ের কাছের ছোট ছোট চুলগুলো ঘামে ভিজে ওঠেছে। খুবই অস্বস্থিকর লাগছে। আর চুপ করে বসে থাকতে না পেরে বলেই উঠলো,
– আম্মু এবার উঠি? আর কতো? অনেকক্ষণ তো নিলাম।
– আরেকটু নে। এখনো হয় নি। যত বেশি নিবি তত তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
– সারবে না। গরম থেকে ওল্টো বেশি লাগবে।
– বেশি বুঝিস আমার থেকে? আর পেটে তুই হয়েছিস নাকি তোর পেটে আমি?
– হুহ! মায়েদের জাতীয় ডায়লগ।
মেঘলা মনে মনে কথাটা বলে মুখ গোমরা করে বসে রইলো।
দুপুরের দিকে মেহের এলো বাসায়। বেশ হইচই লেগে গেলো মেহের আর মেহেরের মেয়েকে নিয়ে। মেঘলা মনটাও বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। আসলে বাসায় একটা ছোট সদস্য না থাকলে প্রফুল্ল মেজাজটা থাকে না সবসময়। ওরা হলো সজীব প্রাণ। নিজের সাথে সাথে সকল মলিন প্রাণকেও সতেজ করে তোলে। মেঘলা বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ মেহভিন, মেহেরের মেয়েকে নিয়ে খেলছে। হঠাৎই ওর মা কোল থেকে নিয়ে বলে,
– তুই ওর কাছে এতো থাকিস না। তোর ঠান্ডা লেগেছে। তোর কাছ থেকে ওরও লাগবে।
মেঘলা ভ্যবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। পড়ে ভাবলো কথাটা খুব একটা ভুল বলে নি। তাই পরক্ষণেই চুপ করে বসে রইলো। সবাই বেশ হই হই করছে কিন্তু কেনো যেনো তার খুব একটা হইহই করার ইচ্ছা জাগছে না। মেহেররা আসার খুশি তার মধ্যেও বিদ্যমান তবে তা দৃশ্যমান নয়।মেঘলার মন মস্তিষ্কে শুধু ঘুরছে চিরকুট প্রেরককারীর কথা। অনেক হয়েছে। এবার তাকে আটঘাট বেঁধে নামতেই হবে। আর অন্ধকারে থাকলে চলবে না। এবার যে করেই হোক এই মানবের খোঁজ তাকেই পেতেই হবে। কিন্তু শুরু করবেটা কোথায় থেকে। কোনো একটা সূত্র নেই। এগুলো ভাবতে ভাবতেই মেহেরের ডাকে চমকিয়ে ওঠে। মেঘলাকে ওভাবে চমকিয়ে ওঠতে দেখে মেহের মেঘলার পাশে বসে মেঘলাকে জিজ্ঞাসা করে,
– কি ব্যাপার? কিসে ভাবছিলি এতো?
– না আপু কিছুই না।
– কিছু তো একটা অবশ্যই। না হলে চমকিয়ে ওঠলি যে?
– আরে ধুর! ওই যে টিভি দেখছিলাম তো ওইটার দিকেই ধ্যান ছিলো।
– ওহ্ আচ্ছা। আচ্ছা শোন না, চল না একটু সুপার শপে যেতে হবে। বাবুর কিছু জিনিস আনতে হবে। তোর জিজুই এনে দেয় কিন্তু সে খুবই ব্যস্ত তাই ভাবছি আমি তো ফ্রি আছি আর তুইও আছিস। ওকে খামোখা কষ্ট দেবো কেনো? যাবি?
– এইটা জিজ্ঞাসা করার কি আছে? আর আমিও বেশ কয়েকদিন যাবৎ এই সেই কতকিছুর জন্য বাহিরে যেতে পারি নি। চল আজকে ফুসকাও খেয়ে আসবো। কতদিন একসাথে খাওয়া হয় না বল তো।
– মন্দ বলিস নি। আমারো খুব ইচ্ছা করছিলো। যা রেডি হয়ে আয় তাহলে তাড়াতাড়ি। আমি লিস্ট টা নিয়ে আসি।
– তোরও লিস্ট লাগে?
– মনে থাকে না কি করবো বল। কোনো না কোনো টা ভুলে যাই কিনতে। আর তোর জিজু তো বলি একটা নিয়ে আসে আরেকটা। তাই লিস্ট করার অভ্যাস হয়ে গেছে।
– আচ্ছা তুই দাড়া আমি আসছি।
পাঁচ মিনিট পড় রেডি হয়ে এসে বেড়িয়েছে দুজন একসাথে। হঠাৎই মেহেরের মনে পড়ে সে লিস্টটা রেখে এসেছে। মেঘলাকে বলতেই মেঘলা দৌড়ে গিয়ে নিয়ে আসে। মেঘলা লিস্টটা নিয়ে এসে গাড়িতে বসে মেহেরকে জিজ্ঞাসা করে,
– আপু তোর লেখা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে।
– ওইটা আমার না রে। ভাইয়াকে দিয়ে লেখিয়েছি।
– ওওওওওওওওওওওও আচ্ছাআআআআআা।
– তো একটা লিস্ট আনতে এতো সময় লাগলো।
– আরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না তো তাই।
মেঘলা হাসি হাসি মুখে কথা গুলো বলে রহস্যজনক একটা হাসি দিয়ে ফোন টিপতে থাকলো।
🍁
পরের দিন বিকেলে মেহেরের সাথে ওর রুমে বসে আছে মেঘলা। পা তুলে বিছানায় বসে বসে তুরমুজ খাচ্ছে। পাশে দোলনায় ঘুমাচ্ছে মেহভিন। মেঘলার পাশে আধশোয়া অবস্থায় টিভি দেখছে মেহের। মেঘলা কাটা চামচ দিয়ে তরমুজের ফালি গেথে মুখে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করে,
– আচ্ছা আপু আমি যে হঠাৎ তোর শ্বশুড় বাড়ি এলাম তাতে কি তুই খুশি হয়েছিস?
মেহের মেঘলার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
– না রে! খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছি। তুই তো আমার ভাগে ভাগ বসাচ্ছিস, আমার সৎ বোন কিনা। তোর আসাতে আমি খুশি হতে পারি বল? ফাজিল মেয়ে
– আরে রাগ করছিস কেনো? আমি তো এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। হি হি
– তোকে জোড় করেও আনা যায় না আর সেই তুই ইচ্ছা করে এসেছিস আর বলছিস আমি খুশি না? খুব পর না ভাবলে এসব বলতে পারিস?
– আচ্ছা সরি! রাগ করিস না। আমার বাসায় আর ভালো লাগছিলো না। সামান্য ঠান্ডার জন্য ভার্সিটিতেও যেতে দেয় না। তুই দেখে তাও আসতে দিলো, না হলে সেই বন্দি হয়েই থাকতে হতো। বাই দা ওয়ে আপু, বাড়ি এতো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেনো রে? সেই সকালর এলাম। তখন থেকে কাজের মেয়েটা ছাড়া কাউকে দেখলাম না।
– হুম বাসায় তেমন কেউ নেই। শুভ তো সকাল সকালই বেড়িয়ে গেছে কারণ ওর নাকি ইম্পটেন্ট মিটিং আছে। বাবা দেশের বাহিরে গেছে সাথে মাকে নিয়ে গেছেন। কালকে রাতেই গেছেন। এর জন্যই আমি দ্রুত এসে পড়লাম। আর ভাইয়ার পরীক্ষা চলছে জানিসই। কিন্তু এতোক্ষণে তো চলে আসার কথা। কোনো কাজে আটকে গেছে হয়তো।
– হুমমমমমমমম। আচ্ছা আপি তুই বস আমি একটু আসছি।
অন্ধকার রুম। কাঁপা কাঁপা হাতে লাইটটা জ্বলিয়ে নিলো মেঘলা। বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। ইচ্ছে তো করছে হাতুড়ি দিয়ে বারি দিয়ে ধুকপুকানিটা বন্ধ করে দিতে। এইটার জন্যই না সব প্ল্যান ভেস্তে যায়। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের কাজ শেষ করে রুমের লাইট বন্ধ করে দৌড়ে চলে এলো নিজের রুমে। বাহিরে বাইকের শব্দ পেয়ে জানালা দিয়ে তাকায়। কাব্য একটা ব্ল্যাক শার্ট আর কাঠালি রঙের প্যান্ট পড়েছে। গাড়িটা পার্ক করে হেলমেটটা খুলে চাবি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। কাব্যকে দেখে মেঘলার ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসির রেখা ফুটে ওঠে। জারুর ঢালমে কুচ কালা হে।
কাব্য সিঁড়ি দিয়ে ওঠে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় কানে ভেসে আসে একটা গানের লাইন,
বাতাসে গুন গুন, এসেছে ফাগুন
বুঝিনি তোমায় শুধু ছোঁয়ায় এতো যে আগুন..
কাব্য গানটা শুনেই দুই পা পিছিয়ে ওর রুমের আগের রুমের দরজার কাছে আসতেই মেঘলা রুমের দরজার সামনে হুট করেই হাজির যেনো সে পড়ে যাচ্ছিলো নাচতে নাচতে কাব্যকে দেখে থেমে গেলো। এখন এই সময় মেঘলাকে এই জায়গায় দেখবে তা কাব্যর কল্পনার অতীত ছিলো। তার মধ্যেও এমন গান। কেমন যেনো কল্পনা কল্পনা লাগছে। কফি কালারের একটা লং লেডিস শার্ট টপস ও জিন্স পড়ে চুলটা উপরে বেধে আছে। ঘুরে পড়ার কারণে পেছনের কিছু চুল সামনে এসে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। মেঘলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে। মেঘলা মুখ টিপে হেসে মুখের সামনে হাত নেড়ে জোড়ে বলে,
– ওপস্ সরি সরি কাব্য ভাইয়া। আপনাকে খেয়ালই করি নি ভাইয়া আমি। বাই দা ওয়ে কেমন আছেন ভাইয়া? পরীক্ষা কেমন দিলেন?
– ভালো করে হাঁটার প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিৎ। সমতলেও ঘুরে অন্য জনের উপর পড়ে যাওয়া কোনো ভদ্র মেয়ের লক্ষণ বলে আমি মনে করি না।
এতোবার ভাইয়া ভাইয়া শুনে কাব্যর ভেতরে ভেতরে ইচ্ছে করছে টেনে ঠাস করে এটা চড় লাগিয়ে দিতে। এতো ভাইয়া ভাইয়া করার কি আছে? অদ্ভুত। বিরক্তিকর একটা এটিটিউট দেখিয়ে সেখান থেকে চলে এলো কাব্য। মেঘলাকে দেখে যেটুকু খুশি লেগেছিলো সবটুকু মুছে গেলো এতোবার ভাইয়া সম্বোধনে।
কাব্যর কথায় আর বিহেভিয়ার দেখে মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে থেকে মনে মনে ভাবে,
– আমি কি বললাম আর এ কি বলে গেলো? আশ্চর্য প্রাণী। চিড়িয়াখানায় রাখা উচিৎ। অবশ্য এর থেকে ভালো কিছু আশা করাই আমার বোকামি। ভালো কথার মানুষ ইনি নন এইটা এতোদিনে আমার বোঝা উচিৎ ছিলো। যাই হোক এসব ভেবে কাজ নেই৷ হুহ! মেঘলা তোমার কাজগুলো মনে আছে নিশ্চয়ই? লেগে পড়ো কাজে। লেটস গো ওওওওওওও…..
হাতে একটা পানির গ্লাস রাখা ট্রে নিয়ে আস্তে আস্তে পর্দাটা সরিয়ে কাব্যর ঘরের দিকে পা বাড়য়ে ভেতরে ধুকতেই দেখে কাব্য শার্ট খুলছে। ধবধবে লালসাদা শরীর। কালো শার্টের কারণে শরীরের রঙটা আরে বেশি উজ্জ্বল লাগছে। সাথে সাথে ঘুরে চোখ বন্ধ করে এক নাগাড়ে বলে,
– সরি সরি সরি! আমি জানতাম না আপনি চেঞ্জ করছেন। আপু ঘুমাচ্ছে আর কুসুম কোথায় জানি না। তাই ভাবলাম আমিই পানিটা নিয়ে আসি।
কথাগুলো বলে নিশ্বাস ফেলে খেয়াল করলো কোনো সাড়া শব্দ নেই। ঘুরে আঙ্গুল গুলো ফাকা করে তার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে দেখে কাব্য সোফায় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হেলান দিয়ে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বোতাম লাগানো তবে বুকের বোতাম খোলা। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
– এক্সকিউজ ভালোই বানাতে পারো। তোমায় ভদ্র ভেবেছিলাম বাট ধারণা ভুল। বাহিরে থেকে এসে যে কেউ ড্রেস চেঞ্জ করবে আর এইটা একটা কমন সেন্স।
কাব্যর কথায় মেঘলা গাল ফুলিয়ে ট্রে টা টেবিলে রেখে কিছুটা রাগি রাগি গলায় বলে,
– তার মানে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? আমি ইচ্ছে করে আমার শ শ শরীর দেখতে আ আসছি?
– নিঃসন্দেহে
– ইউ?? আই উইল কিল ইউ। ভালো করতে নেই এর জন্যই। ভালোর মুল্যই নেই। ভালো ভেবে পানি এনে দিলাম তাও বদনাম করিয়ে দেয়। হনুমানের প্রজা
কাব্য হুট করে ছুটে এসে মেঘলাাে ঘুড়িয়ে সোফায় বসিয়ে ওর ওপর ঝুকে বলে,
– আমি হনুমানের প্রজা তুমিও তারই আত্নীয়। অতএব তুমিও হনুমানের প্রজা হলে। আর এতোই যখন দেখতে ইচ্ছে হয় কাছে এসে দেখলেই পারো। লুকিয়ে অথবা বাহানার কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক মেয়েই আমার জন্য পাগল আমি জানি। তুমিও তার মধ্যে সামিল হয়েছো জেনে ভালো লাগলো। আত্মীয় হওয়ার সুবাধে ফায়দাও ভালোও তুলছো। আরো কিছু লাগ…..
– ইউ লোফার যাষ্ট শাট আপ।
মেঘলা কাব্যকে ধাক্কা দিয়ে নিজে ওঠে দরজার কাছে গিয়ে রাগে লালা হয়ে বলে,
– দেখে নেবো এভাবে অপমানের শোধ তুলবো গুনে গুনে। উগান্ডা প্রবাসি।
কাব্য মেঘলার বকাগুলো শুনে ভাবতে থাকে এই মেয়েটা এতো প্রো ম্যাক্স টাইপের বকাগুলো শিখে কোথায় থেকে। উদ্ভট ধরনের বকা।
❤❤
#তুই আমার কাব্য 🍂
#Part: বোনাস পার্ট
# Writer: Anha Ahmed
.
🍁
.
মেঘলা হনহন করে রুমে এসে বিছানায় বসে ফুসতে থাকে। অন্য মেয়েদের সাথে তার তুলনা? কত বড় অপবাদ ভাবা যায়? মেঘলা কিনা ইচ্ছা করে ওর শরীর দেখতে যায় তাও আবার বাহানা দিয়ে। এর মানে কি ওকে লুস ক্যরাক্টারের প্রমাণ করলো? ভাবতেই মেঘলার নিজের চুল নিজেই ছিড়তে হয়। ছেলেটা সব সময় গোল খাইয়ে দেয়। মেঘলা নিজেকে শান্ত করে বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে চুল গুল টেনে ঠিক করে ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে একটু পার্ট নিয়ে বলে,
– কাম অন মেঘলা। যাষ্ট কুল। রাগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তুমি ভুলে যেও না তুমি এখানে কেনো এসেছ? কেনো এসেছো মনে আছে তো? ইয়াহ্! অফ কোর্স। হোয়াই নট। হি হি হা হা হো হো। মেঘলা ক্যান ডু এনিথিং।
কথাগুলো বলে মেঘলা স্টাইল করে হেঁটে বাহিরে চলে গেলো।
রাত দশটা দশ মিনিট! মেহের, শুভ, কাব্য ও মেঘলা খেতে বসেছে। কাব্যর সামনে বরাবর মেঘলা বসেছে। খেতে খেতে মেঘলা হুট করেই বলে ওঠে,
– জিজু! তোমরা হানিমুনে গিয়েছো?
মেঘলার এমন কথায় শুভ ও মেহেরের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কাব্য খাওয়ায় ব্যস্ত হয়েই ওর এমন আজব বিহেভিয়ারের কারণ উদ্ঘাটন করতে থাকে। মেঘলা ওদের দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় আছে। শুভ পানি খেয়ে হাসি মুখে উত্তর দেয়,
– ভাগ্য কোথায় হলো বলো শালিকা। তোমার নিরামিষ আপুকে নিয়ে কি হানুমুন জমে বলো?
– হুহ! এইটা ঠিক বলেছেন। আসলেই আমার আপুটা নিরামিষ। ব্যাপার না আমার বিয়ের পর একসাথে যাবো আমরা কেমন?
কাব্য আড়চোখে মেঘলার দিকে তাকায়। প্রথমে রাগ উঠলেও পড়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে আবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করে। আর এদিকে মেঘলার কথা শুনে মেহের আর শুভ হেসে যাচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। মেঘলা ড্রয়িং রুমের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে ফোন টা নিয়ে টিপানোর ভঙ্গিতে সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে আবার সেই গান গায়। তবে একন একটু জোড়ে জোড়ে। মেঘলার গান শুনে সবাই মেঘলার দিকে ঘুরে তাকায়। কাব্য তো কপাল কুচকে মেঘলার প্রতিটা মুভ চেক করছে। মেঘলা এমন ভাব করে এসে দাঁড়ায় যেনো সে জানেই না সবাই এখানে আছে। সবাই কে দেখে একটা লম্বা হাসি দিয়ে বলে,
– আরে তোমরা এখনো বসে আছো? ঘুমাবে না ?
শুভ মেঘলার পাশে গিয়ে কাঁধে এক হাত রেখে দাড়িয়ে বলে,
– নাহ্! ভাবলাম আজকে আমার বিউটিফুল শালিকার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবো। কি রাজি তো?
– একশো বার। ইয়ে ভি কই পুছনেকি বাত হে কেয়া?
– তাহলে তো হলোই। চলো বসা যাক।
মেহের পাশ থেকে বলে ওঠে,
– হুম! গেলো আজকে রাতের ঘুম। তো এমনিই জাগবে নাকি মুখ চালানোর জন্য কিছু লাগবে?
শুভ মেহেরের কথা শুনে দারুণ একটা হাসি দিয়ে বলে,
– জানেমান! এর জন্যই এতো ভালোবাসি। না বলতেই কতকিছু বোঝো তুমি।
– হয়েছে। বস তোরা আমি আসছি। ভাইয়া তুমি থাকবে তো?
শুভ খেলা দেখছে টিভিতে। টিভির দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়,
– হ্যা ভাবি আছি খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত।
শুভ গিয়ে বসে পড়ে। মেঘলা সোফায় বসতে গিয়েও না বসে লাফিয়ে ওঠে বলে,
– জিজু! আই হ্যাভ আ ইন্টারেস্টিং ট্রু স্টোরি। ডু ইউ ওয়ান্ট টু হেয়ার দিস?
– ইয়াহ্ অফ কোর্স।
মেঘলা সোফায় না বসে ওদের বরাবর সামনের সোফার হ্যান্ডেলের উপর বসে বলে,
– বেশ ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। বলা শেষে সাজেস্টও করতে হবে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। ওকে?
– ওকে ডিয়ার।
– আমার একটা ফেসবুক ফ্রেন্ডের কাহিনী। আলাপ ফেসবুকে তিন থেকে চার বছর যাবৎ। তাই অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি। ও ওর লাভ স্টোরিটা শেয়ার করেছে আমার সাথে। কিন্তু এখনো ইন্ডিং এ আসে নাই আর এমন কিছু পরিস্থিতির জন্য বেশ কনফিউজড।
কাব্যর চোখ টিভিতে। প্রথমত মেঘলার আড্ডায় কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না। কারণ সে জানে এরা কিছু ভিত্তিহীন কথা নিয়ে মজে ওঠবে। আর মেঘলার বকবক সে তো সাইডে রাখাই ভালো। কিন্তু হঠাৎই কেনো যেনো মেঘলার কথার স্টার্টিংটা বেশ আর্কষণ করলো। কিছু একটা গোলমালের গন্ধ পাচ্ছে ওর কথায়। তাই চোখটা টিভিতে রেখে পুরো ধ্যানটা মেঘলাতে দিলো।
মেঘলা নিজের মতো করে বলেই যাচ্ছে,
– মেয়েটাকে জানো একজন খুব সিক্রেটলি ভালোবাসে। ওর কাছেও আসে, বিভিন্ন চিরকুট দেয় কিন্তু ও ধরতেই পারছে না ব্যাক্তিটা কে। ব্যক্তিটা প্রায় তার উপর সবসময় নজর রাখে এমন। তার মানে ওর পরিচিত কেউ রাইট? তবুও ও ধরতে পারছিলো না। এরকম করতে করতে বেশ অনেকদিন হয়ে যায়। আমার ফ্রেন্ডটা ওই ব্যক্তিটার জন্য ফিলও করতে শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন যখন মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আর মেয়েটাও তখনই যেনো আরো গভীর ভাবে অচেনা ব্যক্তিটার জন্য স্পেশাল কিছু অনুভব করে। অনেক চেষ্টা করে কিন্তু তবুও না খুঁজে পায় না একটা রাস্তাও যেটা দিয়ে ও ওই ব্যক্তিটার কাছে যেতে পারবে, চিনতে পারবে। হাল ছেড়ে সব মেনে নেয়। তবে জানো ওর হবু বরটাও ওফ্! কি হ্যন্ডসাম।
কাব্য মেঘলার এতোক্ষণ বোঝে যায় মেঘলা কি বলছে, কাকে নিয়ে বলছে। প্রথমে মুখ টিপে হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু যখনই হাসবেন্টের কথা বলে ভ্রু কুচকে মেঘলা। দিকে তাকিয়ে ওর এক্সপ্রেশন দেখতে তাকায়।
মেঘলা কথাগুলো বলার সময় কাব্যর দিকে তাকায়। তখনই খেয়াল করে কাব্য ওর দিকে তাকাচ্ছে। সাথে সাথে চোখ সড়িয়ে নিজের কথা ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত হওয়ার ভান করে,
– আমাকে ছবি দেখিয়েছে জানো জিজু। হায়! মারডালা একদম। কি হাইট! কি গায়ের রং! কি তার হাসি। আর এটিটিউটটা কি বলবো? দেখলেই যে কোনো মেয়ে ফিদা হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে লুক টা যে ওফ্! চাইনিজ ড্রামা নায়ক ইয়াং ইয়াং যেনো। ওরকম হবু বর থাকতেও ওই অচেনা ব্যক্তির কথা কি আর খুব একটা মনে থাকবে বলো?
শুভ বেশ মনোযোগ দিয়েই কথাগুলো শুনছিলো আর হাসছিলো মেঘলার এক্সপ্রেশন দেখে। মেঘলার প্রশ্নের উত্তর স্বরুপ বলে,
– আমার মতে তো একদমই না। হবু বর যখন তখন তাকে প্রায়রিটি দেওয়াই উচিৎ। কি বলিস কাব্য?
মেঘলার বর্ণণা শুনে কাব্যর চোয়ালে শক্ত হয়ে আসছিলো। কারণ কাব্য খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলো মেঘলা আবিরের বর্ণণা দিচ্ছিলো। নিজের রাগ সমঝোত করে গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দেয়,
– হবু বর। বর তো না। তাই আমার মনে হয় না এতো প্রায়রিটি দেওয়ার কিছু আছে।
মেঘলা মাথা নিচু করে আড় চোখে কাব্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। তখনই শুভ কিছু একটা ভেবে মেঘলাকে প্রশ্ন করে,
– অন্যের টা বাদ দিয়ে নিজেরটা কথা বলোতো শালিকা। তোমার হবু বরকে কেমন লাগে?
মেঘলা যেনো মেঘ না চাইতেও জল পেয়ে গেলো। লাফিয়ে বলে ওঠে,
– আরে জিজু ছেলেটা আর আবির ভাইয়া প্রায় একি রকম। এক কথায় ড্যাশিং পার্সোনালিটি। দেখলেই বুকের ভেতর ক্রাশ ক্রাশ করে।
হঠাৎ করে কাব্য ওঠে ঘুম আসছে বলে হন হন করে ওপড়ে চলে যায়। কাব্যর চলে যাওয়া দেখে মেঘলার পেট ফেটে হাসি বেরোতে চাচ্ছে। পাথড়ের চাপা পড়ে শুধু আটকে আছে। মেঘলার মনে তো ট্রফি জিতে যাওয়ার উচ্ছ্বাস বইছে। কাব্যকে প্রথম বারের মতো গোল খাওয়াতেই পারার আনন্দ উচ্ছ্বাস।
চলবে…….❤
হ্যপি রিডিং। ধন্যবাদ সবাইকে পাশে থাকার জন্য।