তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 33 + 34 ( Boom part)
.
🍁
.
তব প্রাণ যদি বাধা পড়ে কারো সহিত
মুখ নাহি খুলো, অন্তরে রাখিয়া দিও
অপর প্রাণে টান লাগিলে আপনা জায়গা
বুঝিয়া নিও, নিরবে লেনদেন করো,
কেননা ভাষাহীন প্রেমই শ্রেয়।
কাব্য ছুুই ছুঁই করে মেঘলার কাঁধে থুতনি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি স্থির মেঘলার মুখের দিকে। অদ্ভুত এ প্রেম তাই না? ধরা পড়েছে জানে তবুও আত্মসমর্পণ করতে দুজনেই নারাজ।
মেঘলা ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে কাব্যর অবস্থান আবিষ্কার করে। চাইলেও ছুটছে পারছে না কারণ কাব্য আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। আর যদি সে ধাক্কা দিতে চায় তাহলে দুজনেই আহত হবে কেননা হাতে ছুড়ি। তাই তেমন একটা জোড় না খাটিয়ে মুখ সামনে দিকে করে চোখ খিচে বন্ধ করে চেচিয়ে বলে,
– আপনি এভাবে আছেন কেনো? মাথা তুলুন। আমাকে ছাআআআড়ুওওওওন।
– শাট আপ। চিল্লাচ্ছো কেনো? আহামরি কি করেছি হ্যা? তোমার চুলের জন্য কেক দেখতে পারছিলাম না। পড়ে কি হাতের উপর দিয়ে ছুড়ি চালিয়ে দেবো নাকি? আমার শরীরের রক্ত অনেক দামী। সো এভাবে ঝড়াতে পারবো না আমি। অদ্ভুত! চুপচাপ দাঁড়াও। কেকটা কাটতে দাও।
– আপনি না….
– হুসসসসসস। চুপ থাকতে পারো না নাকি?
মেঘলা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কাব্যর ঠোঁট চেপে হাসছে। কেকের থেকে মেঘলার গালগুলো কেটে খেলে বোধহয় বেশি মজাদার লাগতো। কেকটা কাটার সাথে সাথে মেঘলা ঝাটকা দিয়ে সড়িয়ে বসে পড়লো। কাব্য একটা কেকেে পিচ মেঘলার মুখের সামনে ধরে। মেঘলারাণী রেগে বোম। কাব্য কি ভালো করে কথা বলতে পারে না একটুও তার সাথে এই অভিযোগে তার মনের অলিগলি কাব্যর নামে হরতাল করছে রীতিমতো। এতো রাতে নিয়ে আসছে বাহিরে। এতো সুন্দর জায়গা। তো ভালোমতো বললেও তো পারে। তা না! ধমক দেয়া তো স্বভাবই তার মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে ব্লাক মেইল। এই মুহুর্তে মেঘলার মনে হচ্ছে সেই ব্যক্তিকে কালাপাহাড়ে ( সিলেটের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় যার উচ্চতা ১০৯৮ ফিট) একা একা পানি ছাড়া এডভেঞ্চারে পাঠিয়ে দিতে যে ওর ঘরের তথ্য রপ্তানির কাজে নিযুক্ত।
মেঘলার ভাবনার মাঝখানে এসে দোকানদার কিছু স্নেক্স দিয়ে চলে যায়। কিন্তু মেঘলা এখনো সেই গাদ্দারের পিন্ডি চটকিয়ে বড়া বানাচ্ছে। হঠাৎ তরে কাব্য মেঘলাকে বলে ওঠে,
– জায়গাটা কেমন লাগছে?
চেয়ারের হ্যন্ডেলে হাতের কুনই ভর দিয়ে হাতটা মাথায় রেখে মাথাটা হালকা গেলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
– হুম ভালো।
– হুম! কাপলদের জন্য পারফেক্ট তাই না? বউ অথবা জিএফ নিয়ে আসতে পারলে আরো বেশি ভালো লাগতো।
– তো আসতেন। কেউ কি মাথার দিব্বি দিয়ে রেখেছিলো যে আনা যাবে না।
– বড্ড বেশি তেড়া কথা বলো। আমাকে কি বিবাহিত পুরুষ মনে হয় যে চাইলেই বউ নিয়ে আসতে পারবো।
– জিএফ কে নিয়ে আসতেন। আমাকে নিয়ে আসছেন কেনো?
– ইচ্ছে হয়েছে তাই। তোমারো বোরিং লাগছিলো, আমারো লাগছিলো তাই আর কি টাইম পাস করতে এলাম।
– কিহহ! আমাকে নিয়ে টাইম পাস করতে এসেছেন আপনি?
– তুমি কি আবার আমাকে নিয়ে ডেটিং করতে এসেছো?
– ইস্ কি কথা
– এতো সাধু সেজো না। দুনিয়ায় কেউ এতো সাধু না। সকলের মাঝেই খারাপ আছে। কেউ প্রকাশ্যে আর কেউ গোপনে।
কাব্যর কথাটা মেঘলার ঠিক পছন্দ হলো না আর সেইটা ওর মুখোভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অন্যমনস্ক হয়ে কাব্যর দিকে তাকাতেই চোখ যায় টেবিলে রাখা কাব্যর হাতের দিকে। হাতের তালু ও আঙুলের মাথার কিছু অংশে লাল রঙের পর্দার্থ লেগে আছে। কাব্য এক হাত দিয়ে টিস্যু ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। ডিফেরেন্ট লাইটিংএর জন্য তেমন বোঝা যাচ্ছে না। তাই মেঘলা কিছুটা কাছে গিয়ে দেখতেই মনে হলো রক্ত। রক্ত! এইটা রক্ত! ব্রেণ মেঘলাকে এই শব্দটা প্রেরণ করার সাথে সাথে মেঘলা আতঙ্কে চিৎকারে করে ওঠে,
– আআআা রক্তঅঅঅঅ
মেঘলার আকষ্মিক চিৎকারে কাব্য বিচলিত হয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে জোড়ে এক ধমকে থামিয়ে দেয়।
– স্টপপপপ। হোয়াট ননসেন্স। হচ্ছে টা কি হ্যা? চিল্লানো ছাড়া কি আর কিছু পারো না? এক চড় লাগালে এসব চিল্লানো একদম বন্ধ হয়ে যাবে। মার খাওয়ানোর ধান্দা সব। বদের হাড্ডি।
মেঘলা একদম থতমত হয়ে বসে আছে। মেঘও জমে গেছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামলো বলে। আর বৃষ্টি নামলে বন্যা হবেই। মেঘলার মুখোভাব দেখে কাব্য চোখ বন্ধ করে আবার খুলে নিচু কিন্তু কোঠর গলায় বলে,
– সমস্যা কি? ওভাবে চিৎকার দিলে কেনো?
মেঘলার গলা ইতিমধ্যেই ভারি হয়ে ওঠেছে। নাকও টানছে। তার ধারণাতেও ছিলো না এভাবে ধমক খেতে হবে এখন। মাথা নিচু করে ভারি কন্ঠেই বলে,
– রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এভাবে রক্ত দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে। এমনিতেই ভয় পেয়ে গেছি তারমধ্যে আরো ধমক দিলেন।
– রক্ত! কোথায় রক্ত?
– ওই যে আপনার হাতে। কিভাবে কাটলো? কখন কাটল? আমাকে বললেও তো পারতেন। এতোটা কি খারাপ আমি যে সাহায্য করতাম না।
কাব্য নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে সেকেন্ড দশেক কিছু ভেবে মুখে একটা বেচারি ভাব এনে বলে,
– ওহ্ হ্যা। আমার হাতটা কেটে গিয়েছে। কিভাবে জেনো ছুড়ি দিয়ে কাবাবটা পিছ পিছ করতে দিয়ে কেটে গিয়েছে। দাট’স নট এ সিরিয়াস ম্যাটার। চিল। আই কেন হেন্ডেল ইট।
– কি হ্যন্ডেল করবেন? এখন তো কোনো ফার্মেসিও খোলা নেই। কিভাবে ঔষধ লাগাবেন? আচ্ছা হাতটা দিন আপাতত টিস্যু দিয়ে জড়িয়ে দেই।
– না না! টিস্যুতে অনেক জীবানু থাকতে পারে। তোমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে তখন পরিষ্কার করে লাগিয়ে নেবো।
– তাহলে এখনি চলুন।
– হ্যা যাবো….. বাট… এই খাবার, এগুলোর কি হবে? আমার খুবই খিদে লেগেছে। কিন্তু খেতে তো পারছি না। কি করবো? যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটু হেল্প করবে?
মেঘলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে। কেনো জেনো খুবই অসহায় লাগছে কাব্যকে। মনে হচ্ছে সত্যি ভিষণ খিদে লেগেছে। আর হাত কেটেছে বলে তো খারাপ লাগা আছেই। তাই মেঘলা সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো। কাব্যকে খাওয়ায়ে দিয়ে পানিও খাওয়ায়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– চলুন এবার। শেষ খাওয়া। এবার চলুন প্লিজ। এভাবে থাকলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।
– তুমি তো খেলে না।
– আমি! এই তো খেয়েছি।
বলেই এক পিছ মুখে দিয়ে পানি ঢক ঢক করে গিলে ফেললো। মেঘলার কাহিনী দেখে মুচকি মুচকি হেসে ওঠে যায়। বিল দিয়ে কাব্য দোকানদারের সাথে ইশারায় কিছু কথা বলে মেঘলার সাথে চলে আসে। মেঘলা এক প্রকার দৌড়েই নিয়ে যাচ্ছে ওকে। মেঘলার চোখে মুখে চিন্তার ঘনঘটা কাব্যর মনে এক বিশাল প্রশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে। মনে মনে মেঘলাকে ‘ বোকা মেয়ে ‘ বলে সম্মোধন করে বাইকে ওঠে বসে। মেঘলা এতো তাড়াহুড়োয় ব্যস্ত ছিলো যে খেয়ালই করে নি কাব্যকে ওই হাত দিয়েই বাইক চালাতে হবে।
মেঘলার তাড়াহুড়োয় বেশ তাড়াতাড়ি এসে পড়ে। আবারো খুবই সাবধানে কেবিনে এসে পৌছায়। কেবিনে এসে দরজা আটকিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয়। কাব্য এসে বেডে বসে পড়ে। মেঘলা তাড়াতাড়ি করে ফাস্ট এইড বক্স এনে কাব্যর পাশে বসে হাতটা চাইতেই কাব্য একটা ডেভিল হাসি দেয়। মেঘলা এমনিতেই চিন্তায় পড়ে গেছে। তারমধ্য ওর এরকম রহস্যজনক শয়তান মার্কা হাসিটা মেঘলার কাছে চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কাব্য ধুম করে ওঠে টেবিলের দিকে এগিয়ে একটা টিস্যু নিয়ে এক টান দিয়ে হাতটা মুছে ফেলে। কাব্যর এমন কাজে মেঘলা বেশ বেড থেকে ওঠে বলে,
– এইটা কি করলেন? সেই টিস্যু দিয়েই পরিষ্কার করলেন। তো তখন যে বললেন জীবানু থাকতে পারে, ইনফেকশন হবে। এখন হবে না?
– নাহ্
– কেনো?
– টমেটো সস টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করলে কি ইনফেকশন হয়?
– মানে?
– মানে এইটা টমেটো সস ছিলো।
কথাটা শুনার সাথে সাথে মেঘলার মুখের রং ওড়ে গেলো। না রাগ, না বিরক্ত, না চিন্তার ছাপ। কিছুই নেই। সম্পূর্ণ ভাবলেশ একটা মুখ। মানে ওর এখন কি রিয়েকশন দেওয়া উচিৎ সেটাই ভুলে গেছে। বুঝে ওঠতে পারছে না। তাই শুধু তাকিয়েই আছে।
কাব্য মেঘলার মুখ দেখে বুঝতে পারে পরিবেশ থমথমে হওয়া খুব একটা ভালো না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে মেঘলার দিকে একটা মেকি হাসি দিয়ে নাকে চাপ দিয়ে বলে,
– ওকে! দ্যান বায়। অনেক রাত হয়েছে। টেক কেয়ার।
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। মেঘলা বেডে বসে দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে ধপাস করে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে হাত দিয়ে চাদর খামছে ধরে পা ছুড়ে মৃদু চেচিয়ে বলে,
– ইইইইইইইই! কাব্যর বাচ্চা! তোকে আমি বেগুন দিয়ে ভেজে খেয়ে নেবো। বারবার আমাকে বুদ্দু বানানোর সাজা তো তোকে পেতেই হবে। মেরে তক্তা বানিয়ে সেইটা দিয়ে খাট বানিয়ে সারাদিন লাফাবো। হুহ! তাহলে রাগ কমবে আমার।
🍁
মেঘলাকে রিলিজ করে দিয়েছে। আবির আর মেঘলার বাবা নিতে এসেছে। আবিরের মুখটা বেশ গম্ভীর তা মেঘলার একবার দেখেই বুঝতেই পারলো। কিন্তু কেনো? গাড়িতেও কোনো কথা বলে নি। বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সোজা ব্যক করে। বাড়িতে এসেই মেঘলা বেশ অবাক। নিচ তালার পুরোটা হালকা করে সাজানো। কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বাড়ি সাজানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। কি অনুষ্ঠান আজ?
#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Part: 34
#Writer: Anha Ahmed
.
🍁
.
মেঘলা গুটিগুটি করে হাঁটছে আর চারপাশটা দেখছে। এখনো পুরোপুরি সাজানো হয় নি। এক পাশে এখনো কাজ চলছে। দেখে মনে হচ্ছে ছোটখাটো কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। বিয়ের কথা ভাবতেই মেঘলার মনে হলো এন্গেজমেন্টের কথা। তবে কি আজকে এন্গেজমেন্ট হবে? কিন্তু তা তো হবার কথা নয়। আগে তো ডেট ফিক্সড করার কথা। তবে কি ওনারা মেঘলাকে ছাড়াই সব ঠিক করে নিয়েছেন? আর আজকে এন্গেজমেন্ট? কি হবে এখন? এবার সত্যি সত্যি এন্গেজমেন্টটা হয়েই যাবে?
ভাবতেই মেঘলার হতাশ লাগছে। সোফায় ধুম করে বসে পড়লো। মেঘলার মা দ্রুত এসে জিজ্ঞাসা করে,
– মেঘলা! খারাপ লাগছে নাকি?
-………
– এই মেঘলা
মেঘলা চমকিয়ে ওঠে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– ননননা ননা। আমি ঠিক আআছি।…… মা! ও মা! বাড়ি সাজানো হচ্ছে কেনো গো? কি আজকে বাড়িতে?
– ওমা! তুই জানিস না? তোর বাবা, আবির কিছু বলে নি তোকে?
– না তো ( বেশ অবাক হয়ে)
– আজকে তোর আর আবিরের কাবিন
– ওও….. কিহহহহহহ!
মেঘলাকে যেনো কেউ কারেন্টে শক দিয়েছে। সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে ওঠে। হালকা হেসে বলে,
– মা তুমি মজা করছো। এভাবে কি কাবিন বললেই হয় নাকি। আর আগে তো এন্গেজমেন্ট তাই না?
– তোর সাথে আমার মজা করার সম্পর্ক? আর তুই জানিস না মানে কি? আবির না বললো তোকে জানিয়ে দেবে।
– মজা তুমিই করছো। তোমরা সবাই করছো। হুট করে কাবিন বললেই হলো। আর কি বললে? আবির ভাইয়া বলবে? ওনি সকাল থেকে আমার সাথে টু শব্দও করেন নি।
– তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো?
– রাগবো না তো কি করবো? তোমার কি মনে হচ্ছে আমার এখন নাচা উচিৎ? হঠাৎ করে বলা নেই জানানো নেই, আমার বিয়ে আমিই জানি না। আমাকে বলা হলো কবে? যেদিন কাবিন করতে আসবে। বাহ বাহ। এর পরও নাকি আমার রাগ করা অন্যায়, পাপ।
– তুই কিন্তু বেশি রিয়েক্ট করছিস মেঘলা। যাহ্ উপরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট করে নে। বিকেল থেকে আবার রেডি হতে হবে। পার্লারে আজকে যাওয়া লাগবে না। বাসাই নরমাল সেজেগুজে নে। কেউ তো আসবে না তেমন জাষ্ট তিন ফ্যামিলির লোক। পরে এন্গেজমেন্ট এবং বিয়ে পরপর হবে। এটাই ভালো হয়েছে।
– মা তোমার কি মনে হচ্ছে না বেশি আমি না তোমরা করছো। একটু বেশি তাড়াতাড়ি করছো।
– আবির আর ওর বড় ভাই তিনদিন পর জাপান যাবে বিজনেসের জন্য। আবিরের এক্সাম শেষ। আর ফাইনাল এক্সাম দেরি আছে। এর মধ্যে ও ওদের ফ্যমিলি বিজনেসের জন্য ওর ভাইয়ের সাথে জাপান যাবে। ওকেও তো বুঝতে হবে সব। তিন মাসের জন্য যাবে। তাই ও চাইছে কাবিন টা করিয়ে তারপর যেতে। তারপর দেড় বছর পর পড় লেখাপড়াটা শেষ হলেই বিয়ে করবে সব রিচুয়াল মেনে।
– ওনার দিকটা দেখছো আমারটা দেখছো না? আমি কি এখন প্রস্তুত কিনা সেইটা কি জানতে চেয়েছো?
– না হওয়ার কি আছে? তোকে কি জোড় করে দিচ্ছি বিয়ে?
– হ্যা.. জোড় করেই দিচ্ছো
– মানে? কি বলতে চাচ্ছিস তুই? তুই আবিরকে পছন্দ করিস না?
– না করি না। ওইদিন তো আমার কোনো কথা না শুনে শুধু আংশিক কিছু দেখে আকাশ পাতাল ভেবে নিলে আর সিদ্ধান্ত শুনিয়ে খালাস হয়ে গেলে।
– মেঘলাআআআা চুপ। আর কোনো কথা বলবি না। এতোদিনে তুই এ কথা বলছিস? বিয়ের দিন তুই বলছিস আমাদের ধারণা ভুল ছিলো? মানসম্মান থাকবে না আর। কোনো কথাই বলিস না। বিয়ের কথা যখন ওঠেছে, ভুল করেই হোক ঠিক তো হয়েছে। তোকে আবিরকেই বিয়ে করতে হবে। আর আবিরের মধ্যে তো কম কিছু নেই।
– কিন্তু আমি ওনাকে ভালোবাসি না মা
– কাকে বাসিস তাহলে?
– ককককাউকেই না।
– তাহলে সমস্যা কোথায়। বাসিস না যখন তখন তো কোনো আপত্তি থাকার কথা না।
– কিন্তু মা…
– ব্যাস মেঘলা! আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না। ভুলে গেলে চলবে না বিয়ের প্রস্তাব আমরাই দিছি। তাই আমরা যেচে বিয়ে ভাঙ্গতে পারি না। মান সম্মান বলেও একটা ব্যাপার থাকে। এতো নিচে নামতে দিস না বাবা মা কে। ব বোন তো একবার গিয়েছে ধুলায় মিশিয়ে, তুইও কি সেই ফন্দিই আটছিস? তাই যদি ভাবিস তাহলে আমাকে মেরে তারপর যা খুশি কর।
– মাআআআ
মেঘলার গাল বেয়ে পানি গলিয়ে পড়ছে। দৌড়ে রুমে চলে এলো। দিশেহারা হয়ে পড়েছে মেঘলা। নিজের চুল নিজেরই ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এতো অসহায় লাগছে যে শুধু কান্না ছাড়া আর কোনো পথই পাচ্ছে না। ফ্লোরে বসে দুই পায়ে মুখ গুজে অবিরত কান্না করে যাচ্ছে। কান্না করেও যেনো ক্ষান্ত হচ্ছে না। অদ্ভুত যে যন্ত্রণা! কি তীক্ষ্ণ ব্যাথা! অদৃশ্যভাবে আহত হচ্ছে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। সবাই প্রায় চলেই এসেছে। মেঘলাকে হালকা বেবি পিংক কালারের টিস্যু শাড়ি পড়ানো হয়েছে। মেহের এসে সিম্পল ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। কানে এবং গলায় হোয়াইট আর পিংক কালারের কম্বিনেশনে জুয়েলারি পড়িয়েছে। নোড লিপস্টিক। এক হাতে সাদা চুড়ি আর অন্য হাতে গোলাপি রংএর। মুখ পুরোটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে মেঘলার। এতো সুন্দর সাজও মুখের আসল রংটা আনতে ব্যর্থ। ভেতরের রং যখন বিলুপ্ত তখন উপরের প্রলেপও ফিকে পড়ে যায়। শুভ মেঘলাকে দেখতে রুমে ঢুকে। মেঘলাকে দেখেই খুশিতে বলে ওঠে,
– আরে বাহ! মেজো গিন্নি! তোমায় তো চেনায় যাচ্ছে না। ইস্! কি ঠকে যে গেলাম গো তোমার বোনকে বিয়ে করে। তোমার জামাই জিতছে গো। তবে কি যেনো বাদ আছে। ওহ্ হ্যা! ঘোমটা টা দাও দেখি
মেঘলা চেয়েও হাসতে পারছে না। মেঘলার অবস্থা শুভ বুঝতে পেরে আঁচলটা মাথার দেয়ার বাহানায় কানে কানে বলে,
-মেজো গিন্নি! হাসি মুখ করো একটু। পড়ে কিন্তু ছবি দেখে বলবে ইস্ আগে যদি জানতাম তাহলে হাসিমুখেই থাকতাম। শুধু শুধু ছবি নষ্ট হলো।
মেঘলা কপাল কুচকে শুভর দিকে তাকিয়ে ওর কথা বুঝার চেষ্টা করলো কি বুঝাতে চাইলো আগে জানতাম বলে? কি এমন হবে যে পরর আফসোস হবে মন খারাপ করে থাকার জন্য?
🍁
মেঘলাকে নিয়ে আসা হলো বসার রুমে। সবাই উপস্থিত। মেঘলা আর আবির মুখোমুখি। শুভ আর কাব্যই শুধু নিখোঁজ। তখনই মেঘলার মা বলে ওঠে,
– এই মোহনা কোথায় রে? দেখছি না যে। ডাক ওকে। এখুনি শুরু হয়ে যাবে।
মেঘলার বুকের ভেতর ভুমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, আম্ফান সহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে।
মেঘলার খুবই কষ্টে সাইন করে দিলো। কারণ তার বোঝা হয়ে গেছে এখন সব কিছুই তার হাতের বাহিরে। বাকি শুধু সাক্ষী আর আবিরের সাইন। মেঘলার বাবা সাইনের পর মেয়ে পক্ষ থেকে আরো দুজনের সাইন লাগবে। কাব্যর বাবা করতে যাবেন তখনই কাব্য আর শুভ চলে আসে। কাব্য একটা সাদা শার্ট হাতা ফোল্ড করে রাখা, গলার ডার্ক ব্লু টাইটা হালকা লুস , ব্লু চেক প্যন্ট ইং করে পড়া। চুল গুলো বরাবরের মতো কপাল জুড়ে আছে। শার্টটা একদম ফিট হয়ে আছে। উপরের একটা খোলা। বোতামগুলো যেনো খুবই কষ্ট আটসাট করে লেগে আছে। উফ্! কি গেটআপ! জেনো বিয়েটা ওরই। শুভ এসেই বলে,
– বাবা! আমি বলি কি সাইন দুইটা আমি আর কাব্য দেই।
– হ্যা হ্যা কেনো নয়। দিলেই হলো।
কাব্যর কথা শুনে আবির মানা করতে যাবে কিন্তু থেমে যায়। কি যুক্তিতে সে না করবে? শুধু শুধু মহল খারাপ হবে।
শুভ সাইন শেষে কাব্যর দিকে কলম এগিয়ে দেয়। উকিল কাব্যকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। কলম নেওয়ার সময় কাব্য আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়। আবির কিছু একটা আন্দাজ করে কিছু বলতে যাবে তখনই কারেন্ট চলে গেলো।
এরমধ্যে উকিলের সাথে কিছু ফিসফিসানির শব্দ কানে যায় আবিরের। বেশ চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে আবির। সবাই চেচিয়ে ওঠে কি হলো কি হলো বলে। মোহনা কোথা থেকে এসে একটা মোম এনে বলে,
– এই যে মোম এনেছি। দারোয়ান মামা গিয়েছে। ততক্ষণে সাইন করে নিন।
কাব্য আর মোহনা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো যেটা আবিরের চোখ এড়িয়ে গেলো না। কাব্য দ্রুত সাইন করে নিলো। কিছুক্ষণ পর লাইট চলে আসার পর আবির সাইন করতে যাবে তখনই তার ছানা বড়া। রাগী দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে ওঠে বলে,
– হোয়াট ইজ দিজ? হোয়াদ দা হেল?
মেঘলার বাবা সহ সবাই চমকিয়ে ওঠে বলে,
– কি হয়েছে?
আবির কাব্যর দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে ওঠে বলে,
– হাও ডেয়ার ইউ? বরের জায়গায় তুই সাইন করছিস কেনো?
– হোয়াট? আমি কেনো বরের জায়গায় সাইন করতে যাবো? আমাকে তো উকিল যেখানে সাইন করতে বললো সেখানেই করছি।
আবিরের কথা শুনে সবাই থ। মেঘলা শুনার সাথে সাথে ওঠে গিয়ে পেপারটা নিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি বরের জায়গায় কাব্যর সাইন। মেঘলা চোখ বড়বড় করে কাব্যর দিকে তাকালো। কাব্যও মেঘলার দিকে তাকিয়ে সবার চোখ এড়িয়ে চোখ মেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যেনো নিরিহ প্রানী।
চলবে……. ❤