১২দশ পর্বের পর থেকেঃ-
”নিরব সে”
#সাদিয়া_সৃষ্টি
১৩দশ পর্ব
যেমনটা ভেবেছিল তেমনটাই হল জিনিয়ার সাথে। তবে ওয়াফিফের কথাগুলো আশা করে নি সে। ভাবনার থেকে একটু বেশিই অবাক হয়েছে জিনিয়া।
আজও রোদ ছিল। অনেকটাই। তবে বিকালের দিকে তার উত্তাপ কমে এসেছিল। আগামীকাল ফিরে যেতে হবে ওয়াফিফের বাড়ি। তাই শেষ বারের মতো এসেছিল মাঠে জিনিয়া। ইচ্ছা ছিল বট গাছে ওঠার। কিন্তু এক দিকে যেমন সে প্রেগন্যান্ট, তেমনি অন্যদিকে আছে ওয়াফিফের সেই পিঠা কাকুর গল্প। সব মিলিয়ে গাছে ওঠার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিয়েছে। যদিও পিঠা কাকুর ভুত তালগাছে থাকে, আর জিনিয়াদের এই মাঠে আছে বট গাছ। কিন্তু গাছই তো। ভুত হঠাৎ করে ঘাড়ের উপর বসে হাজিরা দিতে বলবে, ”টুকি” আর তাতেই ওর অজ্ঞান হওয়ার কাজ হয়ে যাবে। সেটা কি আর হতে দেওয়া যায়? তাই পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে। তার বদলে বট গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে সামনের দৃশ্য দেখা অনেক ভালো । সামনে অনেক বাচ্চারা খেলছে। কিছু তরুণ তরুণী জোড়া বেঁধে হাঁটছে। গাছের ছায়ায় থাকা বেঞ্চ গুলোও খালি পড়ে নেই। সেখানে কিছু জোড়া দেখা যাচ্ছে। বয়সে বেশি হলেও সম্পর্ক মজবুত। কিছু বন্ধুদের দল আড্ডায় মগ্ন। গাছে গাছে পাখির জোড়াও বিদ্যমান। গাছের ছায়ার শান্ত পরিবেশ তারাও উপভোগ করছে। তো কিছু গাছের আনাচ কানাচ থেকে ভেসে আসছে পাখির কিচিরমিচির। মন ভালো করে দেওয়ার মতো একটা পরিবেশ। শুধু রোদটাই একটু বেশি, এই আর কি !
নিজে ওয়াফিফের অনুমতি পেলে রোজ এই মাঠ পুরো ঘুরত। কিন্তু ওয়াফিফ বেশি ঘোরাঘুরি করতে মানা করে দিয়েছে। বলেছে বেশি মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়ালে, এক কথায় দৌড়াদৌড়ি করলে পা ভেঙে বাসায় বসিয়ে রাখবে। ওর বউ খোঁড়া হলেও কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এই অবস্থায় বেশি ক্লান্তি আসে এমন কাজ করা যাবে না। এমনটা বলার কারণ জিনিয়া যেটাকে হাঁটাহাঁটি বলে, আপাত দৃষ্টিতে সেটা দৌড় এর সমপর্যায়ে পড়ে। মাঠে হাতে হাত ধরে হাতে কাপলরা। কিন্তু ও তো একাই থাকে। তাই হাঁটার মতো বোরিং কাজ না করে জিনিয়া যে দৌড় দিবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। জিনিয়ার কাছ থেকে শুনেই ওয়াফিফ এমন অনুমান করেছে। একদিন আলোচনায় বসেছিল। সেখানে জিনিয়ার ব্যাখ্যা শুনেই বুঝে গিয়েছে যে জিনিয়া হাঁটে কম, দৌড়ায় বেশি। অবশ্যই একা থাকলে। তাই মাঠে একা থাকলে রোজ পা ভেঙে বাসায় ফিরতে পারে সেই আশঙ্কায় ওয়াফিফ মাঠে ঘোরার অনুমতি দেয় নি। তবে এই পরিবেশটাই এমন যে বসে থাকলেও ভালো লাগবে। জিনিয়া আপাতত তাই করছে। তবে অন্যদিনের মতো শুধু বসে নেই। সে অপেক্ষা করছে। ওয়াফিফের আসার। আজ দুপুরে ওয়াফিফ বলেছে সে জিনিয়াকে নিতে আসবে। এখানে আসার পর একবারও বাদাম খাওয়া হয় নি তার। আর রোজ টাকা আনতেও ভুলে যায়। ফলে বাদাম জিনিসটাকে খুব মিস করছে জিনিয়া। আজকে ওয়াফিফকে ডাকা মূলত এই উদ্দেশ্যেই। তবে যদি জাবির সামনে এসে পড়ে তাহলে তার সাথে ওয়াফিফের পরিচয় করিয়ে দিবে। এই বিষয়টা শেষ করা প্রয়োজন। নিজের চিন্তায় জাবির এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছে যে সে বাস্তবতা দেখতে বা মানতে চাইছে না। আর মানুষ যতক্ষণ না নিজে থেকে কিছু না চায়, ততক্ষণ তাকে সেই বিষয়ে কিছুই বিশ্বাস করানো যায় না। তাই এটার বিহিত ওয়াফিফ ই করতে পারবে।
বসে বসে এমন নানা চিন্তায় মগ্ন জিনিয়া সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু তখনও টের পায় নি যে তার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু জিনিয়ার কোন কথা না শুনতে পেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আর সরে যায় নি। শেষে সে গিয়ে সোজা জিনিয়ার পাশে বসে পড়ল। আর জিন্যাকে ডাক দিল।
–জান।
কথাটা শুনতেই নিজের ভাবনার মধ্যেই রেগে গেল জিনিয়া। এখন কিসের এতো জান জান করতে আসে এ? ভাবতে ভাবতেই পাশে তাকাল জিনিয়া। নিজের আসল অনুভূতিকে চাপা দিয়ে জাবিরকে বলে উঠল,
–প্লিজ, নিজের কথা ঠিক কর। আমার নাম ধরেই ডাকবে। আর কতবার বলতে হবে তোমায় জাবির?
জাবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই বলে উঠল জিনিয়া,
–জানি কি বলবে? আমি মজা করছি, তাই তো? কিন্তু আমি মজা করছি না , সেদিন রিতিকা আপুও বলে গেল। তুমি আমার মা বাবা প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করো, ওরা অন্তত তোমায় মিথ্যা বলবে না। তারপর বিশ্বাস করো। আর আমাকে এভাবে অকারনে ডাকবে না এটা আগেও বলে দিয়ে ছিলাম। আবার বলছি। তোমাকে আমার সহ্য হয় না।
–তাই? তাহলে চোখের কোণে জলের অস্তিত্ব কেন মিলছে জান?
–আমি কান্না করি নি।
–আমি তো বলি নি যে তুমি কান্না করেছ। আমি তো শুধু বলেছি তুমি কান্না করে দিবে কিছু সময়ের মধ্যে।
–৫ মাস পর তোমার কি এমন দরকার পড়ল যে আমার সাথে আবার কথা বলতে আসলে? এই ৫ মাসে তো ভালোই ইগনোর করেছ আমায়। আজ কি হল? আমি বিয়ের আগেও তোমার কাছে গিয়েছিলাম। তখনও আমার কথাকে তুমি মজা করা ভেবেছিলে। এখন আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাও সেটাকেও তুমি জোকস ভাবছ। নিজের জীবনে তুমি কোন কথাটাকে সিরিয়াসলি নিয়েছ জাবির?
–আমি তো তোমাকে সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম, কিন্তু মাঝে আমার…
–এখন বলে কোন লাভ নেই জাবির। এখন আমরা সম্পূর্ণ আলাদা । তাই আমাকে আর কিছু বলা লাগবে না তোমার।
–আমাকে একবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেও জা …
–প্লিজ বল না জাবির। আমি আর তোমার কোন কথাই শুনতে চাই না। কিংবা তোমার কথা শুনলেও কোন কিছু বদলাবে না এখন আর, তাই কোন কথা বলতে এসো না আর যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হয়।
–আমি না তোমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি ?
–ছিলে, এখন না। এখন আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি শুধুই আমার পরিবার। সেখানে তুমি নেই।
বলেই উঠে পড়ল জিনিয়া। যাকে ৩ বছর ধরে ভালোবেসে এসেছে তাকে কড়া কড়া কিছু কথা শোনানও অনেক কঠিন তার জন্য। সে গিয়ে হাঁটা ধরল। জাবির ও উঠে ওর পিছনে হাঁটতে থাকল। একটু দ্রুত হাঁটার কারণে জিনিয়া পড়ে যেতে লাগল। তাই জাবির দৌড়ে আসলো। কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে আরেকটা হাত এসে জিনিয়াকে ধরে ফেলল। জাবির মানুষটার হাত থেকে চোখ সরিয়ে মুখের দিকে তাকাল। এক হাতে সাদা এপ্রোন ঝুলছে। বুক পকেটে একটা চশমা ঝুলানো। মুখে তার চিন্তার ভাব ফুটে উঠেছে। লম্বা ভালোই। জিনিয়াকে দুই হাত দিয়ে আগলে নিয়েছে।
ওয়াফিফ জিনিয়াকে এভাবে পড়তে দেখে দৌড়ে এসেছিল। হাসপাতাল থেকে ফিরে গাড়ি নিয়ে সোজা বাড়ি চলে গিয়েছিল। তারপর সে গাড়ি রেখে মাঠের দিকে হাঁটা ধরেছিল। বহু বছরের অভ্যাস হওয়ায় সাদা এপ্রোন টা হাতে নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। জিনিয়াকে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে সে প্রশ্নের বাহার তুলে ধরে,
–দৌড়াচ্ছিলে তুমি আবার? কতবার মানা করেছি তোমায়। যাওয়ার আগে বার বার বলে গেলাম না যে দৌড়াবে না। নাহলে এই মাঠে আসা কি, সব জায়গায় যাওয়া বন্ধ করে দিব। সাবধানে হাঁটতে পারো না? চোখ কোথায় রাখো? ঠিক আছো তো? কোথাও লাগে নি তো?
–না না, আমি ঠিক আছি।
বলতেই জিনিয়া মাথা নিচু করে ফেলল। জাবির স্পষ্ট বুঝতে পারল জিনিয়া এই মানুষটার সামনে একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছে। লজ্জাও ভর করেছে তার উপর। জিনিয়াকে এক দেখায় বলে দিতে পারে জাবির। ওর সব অনুভূতি বুঝতে পারে। কিন্তু জিনিয়ার এই অনুভূতি প্রথমবার দেখল সে। জাবিরের সামনে জিনিয়ার এই রুপ সে কখনো দেখে নি। কিন্তু সামনে থাকা এই লোকটা কে যার জন্য জিনিয়ার এমন অদ্ভুত রুপ দেখতে পেল জাবির? প্রশ্ন করতে থাকল নিজেকেই।
ওয়াফিফ ঠিক ভাবে জিনিয়াকে চেক করে তারপর ছাড়ল। এবার জিজ্ঞেস করল,
–বল, কি জন্য আমায় ডেকেছ?
–বাদাম।
বলেই জিনিয়া হাত দিয়ে এক দিকে ইশারা করল যেখানে একটা বুড়ো লোক বাদাম ভেজে চলেছে। ওয়াফিফ কিছুক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে বলে উঠল,
–তাহলে আমাকে বলতে, আমি কিনে আনতাম বাড়ি ফেরার সময়। কল দিয়ে আনার মানে কি?
–আমি মাঠে বসে বাদাম খাবো।
বলেই মুখ লটকাল জিনিয়া। ওয়াফিফ আবার হেসেই ওর হাত ধরে সেদিকে হাঁটা ধরল। জাবির এতক্ষণ এদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তার মনে হচ্ছিল সামনে একটা পারফেক্ট কাপলের ছদি দেখছে সে। কিন্তু জিনিয়ার কথা মাথায় আসতেই সে ভাবল এটা কিছুতেই হতে পারে না। পারফেক্ট কাপল তার সাথে জিনিয়ার ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না। সে ওদের আটকাল।
–জিনিয়া, উনি কে?
–উনি আমার হাসবেন্ড, ওয়াফিফ রহমান, জাবির।
–ওহ।
বলেই ভালো করে আবার ওয়াফিফের দিকে তাকাল। জিনিয়া ওয়াফিফের হাত ধরে আবার হাঁটা শুরু করলে জাবির পিছন থেকে ডেকে উঠল,
–আপনি কি আমাকে চিনেন মি. ওয়াফিফ?
–ওয়াফিফের নিজের নাম শুনে পিছনে ঘুরল। সাথে জিনিয়াও পিছনে ঘুরল। ওয়াফিফ জাবিরের থেকে চোখ সরিয়ে জিনিয়ার দিকে তাকাল। জিনিয়ার মুখ দেখে সে কিছুক্ষণ ভেবে সে জবাব দিল,
–তুমি মেইবি জাবির, জিনিয়ার এক্স বয়ফ্রেন্ড।
জাবির ওয়াফিফের উত্তর শুনে অবাক হয়ে গেল। তাও নিজেকে সামলে বলল,
–আপনি কি আমার সম্পর্কে সব জানেন?
–না, তবে তোমার সাথে জিনিয়ার কি হয়েছে সে সম্পর্কে জানি। আর কিছু না।
–তাও আপনার সাথে ওর সম্পর্ক এখনো টিকে আছে? কি করে? মনে হয় জিনিয়া আপনাকে আমাদের সম্পর্কে সব বলে নি।
–জিনিয়া আমকে সব ই বলেছে। আর তাই আমরা এখন চলে যাই? সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
–কতোটুকু জানেন আমাদের সম্পর্কে? আপনি কি জানেন, জিনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক কত গভীর?
–হুম। এবার তোমার কথা শেষ হলে আমরা আসতে পারি মি. জাবির?
–আমি তো আপনাকে শুধু সত্যিটা বলতে চাইছিলাম।
–কি সত্যি? আমাদের বিয়ের ৩ সপ্তাহ আগে তোমরা একসাথে ছিলে আর তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল, তাও কীজন্য? খাবারের বা কোন পানীয়র সাথে কিছু একটা মেশানো ছিল যার ফলে তোমরা কাছাকাছি এসেছিলে আর পরের দিন সকালে জ্ঞান ফেরার পর সব কিছু ভুলে যেতে বলেছিলে। এর থেকে বেশি আর কিছু জানা বাকি আমার? আর কিছু বলতে চাও তুমি? নাকি আরও কিছু আমি তোমার সম্পর্কে বলব? শুধুমাত্র তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছিল সেদিন খাবারের সাথে মেশানো ওষুধের ফলে, ভুলে যেও না। আর এখন জিনিয়া আমার স্ত্রী। তোমার থেকে আমি বয়সে বড়। বলতে গেলে বড় ভাই বলতে পারো। আর এই কয়দিন ধরেও তুমি আমার জিনিয়াকে জ্বালাচ্ছ। তাই তো ছোট ভাই? যেহেতু আমি তোমার বড় ভাই এর মতো, তাই এর পর থেকে জিনিয়াকে ভাবি বলে ডাকবে, ঠিক আছে?
জাবির ওয়াফিফের সব কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। সে আশা করে নি জিনিয়া ওকে এতো কিছু বলবে, তাও ওর বলা প্রতিটা কথা সত্য, লাইন বাই লাইন সব। আর ওয়াফিফ ও সব মেনে নিয়েছে। সত্যিই ওর সামনে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নাকি অন্য কিছু? জাবির ভেবেছিল ওয়াফিফ এর সাথে জিনিয়ার সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে আবার সব কিছু আগের মতো করবে, কিন্তু এখন তাও সম্ভব না। প্রথম দিকেই রিতিকার কাছে শুনে সে সব সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিল। কিন্তু মানতে পারে নি। রোজ জিনিয়ার সাথে দেখা করে ও জানতে চেয়েছিল যে এই বিয়েটা কি জোর করে দেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু জিনিয়ার কাছে আশাজনক উত্তর পায় নি। কিন্তু আজ হঠাৎ করে ওয়াফিফ চলে আসবে এটা ভাবতে পারে নি। আর এসে যে এমন কথা বলবে সেটাও ওর ধারণার বাইরে ছিল। তাই সে কি বলবে ভেবে না পেয়ে যা মাথায় আসলো তাই বলল,
–কিন্তু আপনি কেন আমাকে এগুলো বলছেন?
–যাতে তুমি আর আমাদের জীবনে ফিরে না আসো। আর রোজ জিনিয়াকে না জ্বালাও। আর যদি কখন এমন কথা বলে জিনিয়ার উপর মানসিক চাপ তৈরি করো, তাহলে মনে রেখ আমিও একজন ডাক্তার। কোথায় কোথায় ইঞ্জেকশন ফোটাতে পারি, আশা করি সেটা বলা লাগবে না তোমাকে।
জাবিরের শার্ট এর কলার ঠিক করতে করতে মুখে একটা বড় হাসি নিয়ে জবাব দিল ওয়াফিফ। জাবির একটু ভাঙ্গা গলায় বলল,
–ইঞ্জেকশন? কোথায় কোথায় ফোটাতে পারেন মানে?
–কোথায়, সেটা আশা করি বলা লাগবে না। এখন দেখাতেও চাইছি না। তাই চুপ চাপ কেটে পপড় আর এরপর থেকে আর জিনিয়াকে জ্বালাবে না। মোস্ট ইম্পরটেন্টলি, ওকে ভাবি বলে ডাকবে, ওকে ছোট ভাই?
বলেই জাবিরের কলার ছেড়ে দিয়ে জিনিয়ার হাত ধরে হাঁটা শুরু করল আর বলতে থাকল,
–তুমি বাদাম খাবে, কিন্তু কত টাকার? ৫ তাকায় হবে?
–আপনি এতো কিপটা কেন?
–ওকে ১০ টাকার, হবে না?
–না।
–তাহলে কত?
–জানি না।
–ওকে ১০০ টাকার বাদাম কিনি, এখানে বসে একটু খাবো আর বাড়ি ফিরে সবাই মিলে খাবো।
–৫০০।
–তুমি কি নিজের বরের টাকা হিসাব করে চালাতে পারো না। এমন করলে তো আমার সব বেতন আমার পকেটে না থেকে বাদাম ওয়ালার পকেটে চলে যাবে।
–আপনার বেতন ৫০০ টাকা? এতো কম?
জিনিয়ার এমন বোকা প্রশ্নে হেসে ফেলল ওয়াফিফ। তারপর এক হাত দিয়ে জিনিয়ার মাথায় হালকা মারল সে। ওদের কথা শুনে মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগে কিছু হয়েছে। জাবির ওদের একসাথে থাকার দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে চলে গেল।
ওয়াফিফ আর জিনিয়া সেখানে একটা বেঞ্চে বসে বাদাম খেলো কিছুক্ষণ, তারপর জারিফকে সাথে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল। রাস্তা হাঁটার মাঝেও জারিফ আর জিনিয়া বাদাম খাওয়ার প্রতিযোগিতা করছিল যেন। আর মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল ওয়াফিফ। ওর হাতে বাদামের প্যাকেট। জারিফ কে ক্রিকেট খেলতে দেখে ওর সাথে বাড়ি ফিরল ওরা।
______________________
কেটে গিয়েছে ৩ মাস। জিনিয়ার পেট হালকা ফুলে উঠেছে। ওদের কথা এখন ওয়াফিফের পরিবার জানে। তবে ওয়াফিফের সন্তান হিসেবে। জিনিয়া আর ওয়াফিফের সম্পর্ক ভালোই চলছে। জিনিয়া জানালার ধারে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াফিফ এর ফেরার অপেক্ষায় সে পুরনো কথাগুলো মনে করছে।
l
l
জিনিয়ার বাড়ি থেকে ফেরার সময় জারিফ জিনিয়াকে ধরে কান্না করছিল। কে বলবে এই দুই ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই হয় না এরা একসাথে থাকলে। আবার ১২ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেও বোনকে ধরে কান্না করছিল, অবাক করার বিষয় না? জিনিয়াও অবাক হয়েছিল খুব সে নিজেও কেঁদেছিল ভাইকে ধরে সেই দিন।
l
ওদের বিয়ের ১ মাসের মাথায় আফিয়া রহমান হঠাৎ করেই জিনিয়াকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন। আর জিনিয়া খাবার কিংবা ব্যবহার দেখে যা মনে করেন সে সম্পর্কে জিনিয়াকে না বলে সরাসরি ওয়াফিফকে জানান। ওয়াফিফ নিজেও চিন্তায় ছিল কবে বলবে, কবে বলবে করে। তাই আফিয়া রহমানের যখন সন্দেহ হয়েছিল তখন সে পরীক্ষা করার কথা বলে। আর পরের দিন প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট করার নামে সেই ফ্রেন্ড ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় আর জিনিয়ার চেক আপ করায়। আর বাড়িতে গিয়ে সু সংবাদ দেয় যে জিনিয়া ৩ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট। যদিও তখন জিনিয়ার ১ মাস ২ সপ্তাহ চলছিল। শুধু এই কথাটা গোপন করে ওরা। জিনিয়া বার বার ভয় পাচ্ছিল। তাই সে চুপ করেই থাকে। সব কথা ওয়াফিফ বলেছিল। জিনিয়ার মধ্যে এখনো গিল্টি ফিল হয়। মনে হয় এখনই গিয়ে অন্তত কাউকে না হলেও আফিয়া রহমানকে জানানোর। কিন্তু সাহস করে বলে উঠতে পারে নি কোন বার ই।
তবে আফিয়া রহমানের সাথে তার সম্পর্ক বেশ ভালো। আর আফিয়া রহমানের কাছ থেকে সে যেমন অনেক কাজ শিখেছে। তেমনি ভালবাসাও পেয়েছে। এখন এই ভালোবাসা হারানোর ভয় কাজ করে তার মধ্যে। আবার সে এতটাও সাহসি নয় যে সব বলে দিবে। তাই রোজ এক কষ্ট নিয়েই থাকে।
।
।
অনেক রাত হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন রাত ১০ টা পার হয়ে গিয়েছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। জানালার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। আজকাল ওয়াফিফ একটু বেশিই দেরি করে, আবার কয়েকদিন দুপুরেও ফিরে আসে না। কথা বলে না জিনিয়ার সাথে। কয়েকদিন ধরে এই ব্যবহার গুলো পেলেও জিনিয়া প্রশ্ন করে নি কখনো। তবে আজ সে ওয়াফিফের অপেক্ষা করছিল। আজ সে ভেবেছিল ওয়াফিফের সাথে খাবে। এমনিই খেতে পারে না সে কিছু। বমি হয়ে যায়। তবে আজ তার জন্ম দিন। তাই ভাবছিল নিজে যেই নতুন রান্না শিখেছে সেটা একসাথে বসে খাবে। জন্মদিন পালন করবে না, তবে ওয়াফিফের সাথে একটু সময় কাটাতে বেশ ইচ্ছে হচ্ছে তার। আজ রাতেও কি সে ওয়াফিফের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়বে?
চলবে।
[রিচেক করি নি, ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ]
Sadia Hq Sr.