এক সমুদ্র ফুল পর্ব-২২

0
5816

#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_22
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


সমুদ্র রুমে রাগে ফেটে যাচ্ছে।

কেমন করে আমাকেই আমার বউ দিলো না?আমি কি অন্যর বউকে চেয়েছি নাকি?(সমুদ্র পায়চারি করে)

অনেকক্ষন পায়চারি করে সমুদ্র সাগরকে ফোন করলো।প্রথম ফোন বেজে গেলো কেউ ধরলো না। দ্বিতীয় বারও ফোন বেজে গেলো কেউ ধরলো না।এমনি সমুদ্রের মেজাজ গরম তারপর সাগর ফোন ধরছে না।
দূর এই মহাশয় আবার কই গেলো?আর এক বার ফোন দিবো যদি না ধরে তাহলে খবর আছে।(সমুদ্র রেগে)

আরেকবার ফোন দিতেই সাগর ফোন ধরলো
হ্যালো!(সাগর)

রাখ তোর হেলো।আগে বল তুই তোর ফোন ধরিস না কেনো?(সমুদ্র রেগে)

টয়লেটে ছিলাম।কেমনে ধরবো?(সাগর)

আর সময় পাস না টয়লেট করার?(সমুদ্র)

টয়লেট কবে থেকে সময় দেখে আসতে শুরু করলো!(সাগর ভ্রু কুঁচকে)

দেশে যুদ্ধ লাগবে আর তুই টয়লেটে গিয়ে বসে থাকবি!(সমুদ্র)

এই টয়লেট ছাড়!(সাগর)

কি!(সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে)

সরি এই টপিক ছাড়।(সাগর)

ও এইটা বল।(সমুদ্র)

তুই কেনো ফোন করেছিস?(সাগর)

তোর বউকে কিছু বলবি?(সমুদ্র)

কেনো?আমার বউ আবার তোকে কি করলো?(সাগর কনফিউজ হয়ে)

তোর বউ আমার বউকে নিয়ে চলে গেছে।(সমুদ্র)

কি!আমার বউ তোর বউকে নিয়ে চলে গেছে মানে?(সাগর অবাক হয়ে)

তাহলে শোন বলেই সমুদ্র সাগরকে সব কিছু বললো।সাগর তো সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।

ওই ব্যাটা তুই হাসছিস কেনো?(সমুদ্র রেগে)

উচিত বিচার হয়েছে তোর সাথে!(সাগর হাসতে হাসতে)

তুই কি তোর বউয়ের দলে?(সমুদ্র ক্ষেপে)

তোর কি এখনও মনে হয় না স্ত্রীর বিপক্ষে গেলে বিপদ!(সাগর)

তাও ঠিক বলেছিস!তো এখন কি করবো?(সমুদ্র)

বিয়ের আগ পর্যন্ত বউকে ভুলে যা।তার শোন এই মুহূর্ত গুলোকে এনজয় কর।(সাগর)

Thanks ভাই।(সমুদ্র)

তুই আমাকে ভাই বললি।আবার thanks ও দিলি।সত্যিই তোর এই পরিবর্তন দেখে আমি খুব খুশি।(সাগর)

হুম। ভাইয়ে ভাইয়ে যদি মিল না থাকি তাহলে পরিবার কি করে এক থাকবে বল?(সমুদ্র)

ঠিকই বলেছিস।আমি আমার ছোটো ভাইকে পেয়ে অনেক খুশি।(সাগর)

আর আমি আমার বড়ো ভাইকে পেয়ে।(সমুদ্র)

এইভাবে বছরের পর বছর জমিয়ে রাখা মান অভিমান সব মিটিয়ে সারা রাত দুইভাই মিলে নিজেদের মনের কথা খুলে বলছে একে অপরকে।
এক সাথে কাটানো ছোটো বেলার সেই মুহূর্ত গুলো মনে করেছে।মন খুলে কথা বলেছে।


সকালে
ভেবেছিলাম সমুদ্র মুখ গোমড়া করে থাকবে কিন্তু না ও আরো খুশিই ছিলো।কি জানি রাতে কি হয়েছে যাতে ও এতো খুশি?তবে যাই হোক সবাই খুশি এতেই আমিও খুশি।কিন্তু সবার থেকে খুশি আমার মেয়েটা।যখন ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেলো আমাদের বিয়ে হবে তখনই অনেক এক্সসাইটেড হয়ে যায়।তবে এটার অন্য কারণ আছে আর সেটা হলো ও আমাদের সাথে ছবি তুলতে পারবে।ভাবা যায় পিচ্ছি মেয়ে ছবি তোলার কতো শখ।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে তৈরি হও।শপিং এ যাবে!(আরমান)

আচ্ছা।আপা আপনিও কি আমাদের সাথে যাবেন?(আয়শা)

না তোর দুলভাই আর বাকি সবাই আসবে আজ। তোরাই যা।আমি থাকি ওদের জন্য।(রুবিনা)

ও আমি তো ভুলেই গেছি আজ থেকে তো মেহমান আসতে শুরু করবে।আমিও যেতে পারবো না।(আয়শা)

না তুই যা।আমি এদিক সামলে নিবো।তোর পরিবারের এখন তোকে বেশি দরকার।আর মেহমান আমি সামলে নিবো।কোথায় কোথায় উনাদের রাখতে হবে বল।(রুবিনা)

খালাম্মা!(সমুদ্র,সোনালী,মিতু আর আমি অবাক হয়ে এক সাথে)

কি হয়েছে?এতো অবাক হয়ে লাভ নেই।আমি কারো মাগনা খাই না।(খালাম্মা)

তাহলে আমি আপনাকে সব বলে যাচ্ছি।(আয়শা অবাক হয়ে)

হাওয়া দিক পাল্টাতে শুরু করছে।(সোনালী আমার কানে ফিসফিস করে)

আমারও তাই মনে হয়।(আমি)

আম্মু আমরা কখন মার্কেটে যাবো?(আলো)

এইতো মা খাওয়া শেষ হলেই যাবো।(আমি)

এই তোমরা সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো না কেনো?আমরা মার্কেটে যাবো।এতো দেরি করলে মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে তো।(আলো আদো আদো গলায়)

সবাই আলোর কথা শুনে হেসে দিলো।

এই আমার আলোমনি সবাইকে তাড়াতাড়ি খেতে বলেছে তাড়াতাড়ি খাও।(আরমান)

মার বিয়ের তার তাল নেই এখানে মেয়ের ঘুম নাই।(সোনালী)

সবাই আরেক দফা হেসে নিলো।


শপিং মলে
সায়ান ভাইদের পরিবারও এসেছে।দুপরিবার এক সাথে শপিং করছে।আমরা আমাদের লেহেঙ্গা কিনলাম।সমুদ্র আর সায়ান ভাইয়া তাদের শেরওয়ানি।মা নিজের জন্য আর বাকি আত্মীয় স্বজনদের জন্য জামা কাপড় আর শাড়ি কিনলো।মিতু ভাবীও শাড়ি কিনলো। তবে তাকে আমি আর সোনালী জোর করে লেহেঙ্গা কিনালাম।আলো শাড়ি কিনলো আর সাথে দুটো লেহেঙ্গা একটা হলুদে পড়বে আরেকটা বিয়েতে পড়বে।ওর তো আনন্দের শেষ নেই।শুধু ওর কি আমাদেরও আনন্দের শেষ নেই।


বাসায়
আমরা সবাই গাড়ি থেকে নামলাম আলো আমার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই ওকে আমিই কোলে নিয়েছি আর সমুদ্র আমাদের ব্যাগ গুলো নিয়ে।আর বাকি সবাই যার যার ব্যাগ সে সে নিয়েছে।

আমরা বাসায় ফিরলাম।বাসায় ফিরেই আরেকটা ঝটকা খেলাম।বাসায় এসেই দেখলাম সাগর ভাইয়া এসে ডেকরেটর দের সাথে মিলে কাজ করছে।

সাগর ভাইয়া (আমি)

ও hi!(সাগর ভাইয়া হাত নাড়িয়ে)

দূর।ওইসব রাখো।তুমি এখানে কি করছো?(আমি অবাক হয়ে)

কাল সারা রাত ধরে আমার সাথে কথা বলতেছিলি তখনও তো বললি না।(সমুদ্র)

তোমার না কাল আসার কথা, আজ আসলে যে!(মিতু)

তুমি জানতে ও আসবে?(সোনালী)

বলেছিলো সারপ্রাইজ দিবে তোমাদের তাই আমি আর কিছু বলিনি।(মিতু)

সত্যিই অনেক বড় সারপ্রাইজ।কি করে আসলি বাবা?কোনো সমস্যা হয়নি তো(আয়শা সাগরের কাছে গিয়ে)

ওয়েট ওয়েট।তোমরা এতো প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিবো কি করে?আমি একে একে তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি
প্রথমে তোর উত্তর ফুল
আমি এখানে সোনালীর বিয়ের জন্য এসেছি আর আমি পুরো এক মাস থাকবো তোদের সাথে।
দ্বিতীয় তোর উত্তর সমুদ্র
কালকে রাতে আমি তোর সাথে কথা বলতে বলতে জার্নি করেছি।(সাগর)

তাহলে টয়লেট?(সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে)

ওইটা বাস থামানো ছিলো।ফোন ব্যাগে রেখে একটু গেছিলাম।(সাগর হাসি দিয়ে)

সমুদ্র দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে
হায়রে!

আর এখন আমার লক্ষ্মী বউয়ের উত্তর
ভাবলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো তোমাকে দেবো না।তাই এক দিন আগে এসে তোমাকেও সারপ্রাইজ দিয়ে দিলাম।
সব শেষে আমার আদুরে মা আমি বাসে করে এসেছি আর আসতে আমার একটুও সমস্যা হয়নি।
পেয়েছো সবাই তোমার উত্তর।(সাগর হাসি দিয়ে)

সব বুঝলাম কিন্তু তুই ডেকোরেটদের সাথে কাজ করছিলি কেনো?(আরমান ভ্রু কুঁচকে)

উনারা এসে দেখে বাসায় কেউ নেই যে উনাদের সব কিছু দেখিয়ে দেবে।খালাম্মা ও জানে না ডেকরেটর দের কি কাজ?তাই উনারা চলে যাচ্ছিল আর সেখানেই হিরোর মত আমি এন্ট্রি নিলাম।আর এসেই উনাদের সাথে লেগে পড়লাম কাজে।(সাগর)

ও আচ্ছা।(আরমান)

তোর কাজ করতে হবে না।তুই অনেক টুকু জার্নি করে এসেছিস।বাকি কাজ আমি আর বাবা দেখে নিবো।তুই ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।ভাবী ওর জন্য কিছু খাবার দাবারের ব্যবস্থা করো।মা তুমি কিছু বানিয়ে দাও ওকে।আর সোনালী তুই আমাদের ব্যাগ গুলো নিয়ে যা।(বলেই সমুদ্র সোনালীকে ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিলো 0)

আচ্ছা আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। ফুল এই ব্যাগগুলো নিয়ে যা।আর তুই কি করে নিবি তোর কোলে তো আলো ঘুমিয়ে আছে।তুই বরং ওকে উপরে শুইয়ে দিয়ে এসে আমাকে একটু হেল্প করে দিস।সোনালী এই ব্যাগ গুলো গুলো ধর।নিয়ে আমার রুমে রাখবি।
বলেই আয়শা রান্নাঘরে দৌড় দিল আজ ছেলে এসেছে কি কি রান্না করে খাওয়াবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।

ফুল তুই আলোকে নিয়ে যা।অনেকক্ষন ও তোর কোলে তোর ক্লান্ত লাগছে হয়তো।(সমুদ্র)

হুম।
বলেই আমি উপরে চলে গেলাম।

সাগর অবাক হয়ে দেখছে।এতদিন সমুদ্র পাল্টে গেছে শুনেছে কিন্তু কখনো নিজের চোখে দেখা হয়নি।আজ দেখে অবাক না হয়ে পারছে না।সাগর সমুদ্রকে দেখছে তখনই সোনালী সাগরের হাতে চিমটি কাটল

আহ্!পেত্নী চিমটি কাটলি কেনো?(সাগর হাত ঘষতে ঘষতে)

তুই সব সময়ই সমুদ্রে এমন অবিশ্বাস্য কিছু করতে দেখলে আমাকে বলিস চিমটি কাটতে।তাই ভাবলাম যদি এখনও বলিস।তাই আগেই কেটে দিলাম।(সোনালী)

অনেক উপকার করলি বোন।এমন মজোগ নিয়ে কি করে শশুর বাড়িতে থাকবি তা নিয়ে আমার চিন্তা হচ্ছে বোন।চলো মিতু আমি ফ্রেশ হবো।
বলেই সাগর উপরে চলে গেলো।

ভুল হয়েছে আরো জোড়ে দেয়া উচিত ছিলো। অসভ্য গুলো খালি আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে কথা শুনাবে দূর ভালো লাগে না।আর সবাই যার যার ব্যাগ আমার কাছে দিয়ে নিজেরা নাচতে নাচতে চলে গেলো।যেনো সবাই বেস্ত আর আমি এক মাত্র যার কোনো কাম নেই।
বলেই সোনালী ব্যাগের বস্তা গুলো নিয়ে রুমে চলে গেলো।


তুমি এতো বড় সারপ্রাইজ দিবে ভাবতে পারিনি।(মিতু সাগরের সুট কেস গুলো রাখতে রাখতে)

সাগর মিতুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
সেদিন যখন তোমার ঐ আপসেট হাওয়া গলা শুনতে পাই।তখন অনেক খারাপ লাগছিল।তুমি সচরাচর কোনো দিন আমার সামনে নিজের ইমোশন গুলোকে দেখাও না।আমার কষ্ট হবে বলে।আমার খারাপ লাগবে বলে।কাজে আমার মন টিকবে না বলে।কিন্তু যখন কাল তোমাকে ওই অবস্থায় দেখলাম তখন অনেক খারাপ লাগছিলো।মনে হচ্ছিল দৌড়ে তোমার কাছে চলে আসি।তাই তো অনেক কষ্ট করে একদিন আগে চলে এসেছি।শুধু তোমার জন্য।এখন যতো খুশি আমার বুকে মাথা রেখে কাদতে পারো।(সাগর মিতুকে ঘুরিয়ে বুকে মাথা রেখে)

আর্মি দের স্ত্রীরাও অনেক সাহসী হয়।শত কষ্ট হলেও তোমাদের বলবে আমি ঠিক আছি।আমার কোনো চিন্তা করো না।মন দিয়ে কাজ করো।দেশের সেবা করো।(মিতু কাদতে কাদতে)

হুম।তোমরা সাহসী দেখেই তো আমাদের সাহস জোগাতে পারো।মিতু ওই দিন বলেছিলে না আমাকে পেয়ে তুমি অনেক লাকি।এখন আমি বলছি তোমাকে পেয়ে আমি অনেক লাকি।(সাগর মিতুকে জড়িয়ে ধরে)

সাগর।
বলেই মিতু সাগরের বুকে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো।


চলবে,,,,