#অপূর্ণতা❤️
#লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
#পর্ব_৬(সমাপ্ত)
– বাহ রে, ওনি তো বললেন রাইসার হবু বর। আর ওনার সাথে তো বিয়ে ঠিক হলো।
” রিহানের কথা শুনেই রাইসা রাগে তাকাতেই বিশ্রী দাঁত গুলো বের করে হাসি দিলো। রাইসা যখন এগিয়ে যাবে তখনি তাঁর আম্মু বলে উঠলো….
– যা, রাইসা। মুখ বুঝে সহ্য না করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা দরকার। না হলে এদের মতো চরিত্রহীন মানুষের চরিত্র ভালো হবে না।
রাইসা তাঁর আম্মুর কথা শুনেই এগিয়ে গেলো। রাইসা কে দেখেই দাঁত বের করে বললো…..
– হে হে… আর কিছুদিন পরেই আমার বউ করে নিয়ে যাবো।
” লোকটির কথা শুনেই রাইসা ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। আশেপাশের সবাই তাকিয়ে উঠলে। লোকটা রাইসার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই রাইসা বলে উঠলো…..
– আরেকবার বলে দেখ,জুতা পেটা করে পুলিশের কাছে দিবো। কি মনে করেছিস? তোদের জন্য একটা মেয়ে নিজেকে মানুষ মনে করতে পারে না। রাস্তা ঘাটে মেয়ে দের দেখলেই বাজে মন্তব্য করিস। তোদের ঘরে কি মেয়ে নেই। যখন বাহিরের কেউ কিছু বলে তখন জ্বলে কেনো??? মেয়েদের কি এতোই সস্তা মনে করেছিস?
” রাইসার কথা শুনেই অনেকেই এগিয়ে আসে। লোকটি ভয়ে সরে পড়ে। রাইসাকে আরো অনেক কথা বলেই চলে আসে।
” সেদিনের পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলো। এখনো অনন্তর কথা মনে পড়লে অশ্রু গুলো ঝড়ে পড়ে।
রাইসা বুঝতে পারে একটা নারী কতটা অসহায়। প্রতিটি মুহূর্ত যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। নিজের সাথে, এই সমাজের নোংরা কিছু মানুষের সাথে।
” রাইসা কথা গুলো মনে মনে বলে টেবিলে তাকাতেই চমকে উঠে।
” টেবিলে চোখ পড়তেই চমকে উঠে। এগুলো কে রেখেছে জানতেও পারি নি। এ যে রাইসার প্রিয় ফুল আর আইসক্রিম। যা অনন্তর কাছে প্রথম চেয়েছিলো।
রাইসার টেবিলের দিকে উঠে যায়। বুকের ভেতর টা কেঁপে উঠো। ধুরু ধুরু বুকে বেলী ফুল আর আইসক্রিম টা হাতে নিতেই চিঠি চোখে পড়ে। কাঁপা হাতে চিঠির ভাজ খুলতেই চোখে পড়লো…..
” প্রিয়,
” একরাশ শুভেচ্ছা রইলো।
“রাইসার বুঝতে বাকী রইলো না। কে রেখে গেছে তাঁর প্রিয় ফুল গুলো। ফুল গুলো হাতে নিয়ে চিৎকার করে বললো….
– আম্মু, দেখে যাও আমার অনন্ত বেঁচে আছে।
রাইসা টেবিলের উপর রাখা বেলী ফুল আর আইসক্রিম গুলো আগলে নেয়। রাইসার কথা শুনেই তাঁর আম্মু দৌড়ে আসলো।
“রুমে ঢুকে তিনি খেয়াল করলে রাইসা হাতে ফুল আর আইসক্রিম নিয়ে আনন্দে আত্মাহারা হয়ে আছে।
” রাইসার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো…..
– কি হয়েছে?
– অনন্ত বেঁচে আছে। আমার অনন্ত মরেনি।
” রাইসার কথা শুনেই ভয়ে চমকে উঠে রাইসার আম্মু। নিচের চোখের কষ্ট গুলো আর কত দেখতে হবে। রাইসাকে বললো….
– যেই মানুষ টা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে কেনো তাঁর কথা মনে করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস?
– না, মা। অনন্ত আছে। আমি নিয়ে আসবো।
– কোথায় যাচ্ছিস….??
” রাইসা ফুল গুলো হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লে তাঁর বাবা জানতে চাইলো। অনন্তর জন্য ছুটে যাওয়ার আগে বললো….
– অনন্তর কাছে।
” রাইসা দৌড়ে বেশ হাপিয়ে উঠলো। রাইসা বেশ ভাল করেই জানে তাঁর অনন্ত কোথায় আছে। আজকেও অনন্তর ভূল হয়নি। রাইসাকে বলেছিল…..
” যতদিন বেঁচে থাকি,তোমার আমার প্রথম দেখার দিনটি মনে থাকবে। একগুচ্ছ বেলীফুল তোমার জন্য রেখে দিবো।
” রাইসা দূরের আবছা আলোয় দেখা মানুষটির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে।
” রাইসার কথা গুলো এখনো স্পষ্ট মনে আছে। যা অনন্ত তাকে বলেছিল…
” কখনো অভিমান করে দূরে সরে গেলে খুঁজে পাবে,সেখানেই প্রথম বার তোমার হাতটি ধরেছিলাম।
” সেই বেলী ফুল বাগান। যেখানে রাইসার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল। রাইসা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষ টির কাঁধে হাত রেখে বললো….
– অনন্ত…..
হঠাৎ করেই হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে। পিছনে ফিরে দেখে বলে উঠলো….
– তুমি….
– হে, আমি। কি মনে করেছিলে?? দূরে সরিয়ে দিলেই খুঁজে পাবো না??
” রাইসা কথা শুনে অনন্ত চুপ করে রইলো। অনন্ত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। রাইসাকে দূরে সরিয়ে দিতে চেয়ে যে অনেক সুখে আছে সেটা কি করে বলবে? প্রতিটা মূহুর্ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে নিজেকে।
– আচ্ছা,অনন্ত আমার সাথে কেনো এমন করলে? কেনো আমাকে এতো টা কান্না করাতে পারলে??
– তুমিই তো বলেছিলে, তোমাকে মুক্তি দিতে। তুমি মুক্তি চাইলে আর সেটা কেনো আমি দিবো না??
” রাইসার কথা শুনে মাথা নিচু করে কথা গুলো বললো অনন্ত। অনন্তর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই সেই অনন্ত যে কি-না তাকে অনেক ভালবাসে।
অনন্ত মাথা নিচু করে আবার বলতে শুরু করে…..
– রাইসা, আমি কোন দিনও বাবা হতে পারবো না। তুমি কোনদিন মা ডাক শুনতে পাবে না। তোমার মা ডাক শোনার পূর্ণতা পাবে না।
অনন্ত এই টুকু থেমে গিয়ে রাইসার দিকে তাকিয়ে আবার বললো….
– রাইসা, আমি চাই তোমার অপূর্ণতা পূর্ণতা হোক।
তাই তুমি যেনো…….
” ঠাসসসসস……………
” রাইসার দিকে তাকিয়ে যেই না বলতে যাবে তখনি চড় বসিয়ে দিল। অনন্তর কথা গুলো রাইসা আর নিতে পারেনি। রাইসার চোখের অশ্রু গুলো জড়িয়ে পড়লেও অনন্তর চোখের অশ্রু গুলো টলমল করতে থাকে।
” রাইসার হাতে চড় খেয়েও চুপচাপ মাথা নিচু করে আছে। রাইসার রাগ টুকু ধরে রাখতে না পেরে অনন্তর কলার ধরেই বললো…..
– কি মনে করেছিস নিজেকে? সবসময়ই তুই আমার জন্য করে যাবি। আমি কিছুই জানতে পারবো না?
– রাইসা….
– হ্যা, আমি সেই রাইসা। সেদিন তোর সম্পর্কে না জেনেই হাত ধরে ছিলাম। বলেছিলাম যতদিন বেঁচে আছি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবো।
“অনন্ত, মনে আছে বলেছিলি……
” তুমি যাকে ভালবাসো তাঁর সবটাকেই ভালবাসো।
মনে করে দেখো তো বলেছিলে কি-না…..
” ভালবাসা হলো মানুষটির বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চেষ্টা করা। রাগ অভিমান ঝগড়ার বুঝতে চেষ্টা করা। পাশে থাকতে চেষ্টা করা।
আমি কি করবো বলো?? কেউ না জানুক তুমি তো জানো।
” যখন প্রিয় মানুষ গুলো একের পর এক অপমান করে তখন কি করবো বলতে পারো??
তুমি তো জানতে রিতুর জন্য কি না করেছি। আর সেই রিতু যখন অপয়া বলে তখন কি করবো?
সেদিন কি হয়েছিল না জেনেই তুমি ছেড়ে চলে গেলে? এই কি ছিলো তোমার বুঝার ক্ষমতা।
“অনন্ত বলতে পারো, তাহলে আমার চাওয়া কি অন্যায় ছিলো? কি অপরাধ করেছিলাম তোমাকে চেয়ে?
” রাইসা কথা গুলো বলেই অনন্ত কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
অনন্ত আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। রাইসাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। এ যে দুটি অবুঝ হৃদয়ের কান্না।
অনন্ত রাইসার চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে বললো…..
– রাইসা, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে অনেক…..
” অনন্ত আর কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই মুখে ধরে বললো…..
– আবার ক্ষমা চাচ্ছিস? কিসের ক্ষমা হে? যদি ক্ষমাই চেয়ে নিতে হয় তাহলে কিসের বন্ধু হলাম? কিসের ভালবাসার সাথী হতে চাইলাম? আমি তো শুধু ক্ষণিক সময়ের সঙ্গী হতে চাইনি। তোর সুখ কষ্টের সাথী হতে চাই। তোর কোন ক্ষমা নেই। এটার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
“রাইসার রাগী চোখের চাহনী দেখে মাথা নত করে বললো….
– যথা হুকুম মহারাণী।আপনার সব শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি।
“অনন্তর কথা শুনেই রাইসা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারেনি। অনন্তর বুকে আলতু ঘুষি দিয়ে বললো….
– হারামি,কুত্তা,বিলাই,হনুমান বান্দর, সিরিয়াস মূহুর্তেও তুই ফাজলামি করিস। আজকে তরে……
” রাইসাকে থামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। অনন্তর মাধকতা চাহনীতে রাইসা চুপ হয়ে যায়। রাইসাকে কাছে টেনে নিয়ে আলতু ছোঁয়ায় কপালে কিস করে বললো…..
– ভালবাসি।
” অনন্তর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে নিজেকে। রাইসার চোখের পানি অনুভব করতে পারে। রাইসা জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে…..
” ভালবাসি না। একটুও ভালবাসি না।
” রাইসার অভিমানী কথার মাঝেও নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করে রাখে। রাইসা যে আজ তাঁর আশ্রয় টুকু খুঁজে পেলো।
“অনন্তর কতটুকু সময় জড়িয়ে ছিলো খেয়াল নেই। হঠাৎ করেই দূরে কেউ কাশি দিয়ে উঠলো। কারো আওয়াজ পেয়েই অনন্ত কে ছেড়ে দিলো।
” রিহান হালকা কাশি দিয়ে বললো……
– অনেক হয়েছে। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো আজকে আপনাদের শুভ দিনে কান্না একদম মানায় না।
“রিহানের কথা শুনেই অনন্ত তাকাল। রিহান কথাগুলো বলেই একমনে হাঁটা শুরু করলো। রিহান যে সবকিছু করেছে। রিহান বেশ ভালো করেই জানে তাঁদের দুজনের অবস্থা।
রিহান চলে যেতেই অনন্ত বললো….
– তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আজ তোমাকে বলার দরকার।
” অনন্তর কথা শুনেই রাইসা বললো…..
– আজ কোন কথা না। তোমার কোন কথা শুনতে চাই না।
– আমার অতীত….
– চুপ, না করেছি মানে না করেছি। কি হবে তোমার অতীত জেনে। কখনো কি ফিরে আসবে? আর ফিরে আসলেও দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিবো। তেমার অতীত দেখে তো ভালবাসি নি। কখনো জানতেও চাই না। অতীত জানতে চেয়ে কারো মনের দুঃখ বাড়াতে চাই না।
– রাইসা….
” অনন্তর কথা শুনেই রাইসা রাগী গলায় বললো….
– একদম চুপ করে যা বলছি সেটা কর। বাসায় চল….
” হুম, চলেন মহারাণী।
রাইসা অনন্তর কাঁধে মাথা রেখে হাঁটতে শুরু করে। একটা নতুন জীবনে। যা হয়েছে ক্ষনিক সময়ের অতীত মনে করেই ভূলে যেতে যায়। ভূল ত্রুটি তো মানুষের হয়।
” ভালবাসা তো সেটা না ভূল করলে কেউ ছেড়ে দূরে চলে যাবে। একটু ভূল হলেও ছেড়ে চলে যাবে।
” ভালবাসা তো সেটাই যা হাজার ভূল থাকার পরও একটা অজুহাত খুঁজে বের করা আঁকড়ে থাকার জন্য। পাশে থাকার জন্য মানুষ টির।
” অনেক অপূর্ণতার মাঝেও একটু পূর্ণতা পাওয়ার জন্য পাশে থাকার চেষ্টা। জানে না কত দিন এ বাধঁন থাকবে। এক নতুন করে ভালবাসা পাওয়ায় সব অতীত দূরে সরিয়ে ভূলে থাকতে চাই। নতুন করে বাঁচতে চাই আঁকড়ে ধরে।
তবে কিসের অপূর্ণতা রয়ে গেলো……….!!!
—- সমাপ্তি ——