#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৭
তোড়া আজ তিন দিন হল গোয়া এসেছে শুটিং এর জন্য। রাতে ফ্লাইট। তাদের বিয়ের পর এই প্রথম তারা তিনদিন এর জন্য একে অপরের থেকে এত দূরে আছে। রেয়ান্স এর অফিসের কাজ থাকার দরুন রেয়ান্স তোড়ার সাথে আসতে পারেনি। তাই তোড়া রাই ও কৃতীর সাথে চলে এসেছে।
লাভাসার শুট এর পর থেকে তোড়ার কাজ অফিসিয়াল ভাবে শুরু হয়ে গেছে তার টাফ সিডিউল তৈরী হয়ে গেছে তাই একটু ও ফাঁকি মারার সময় নেই আর। এমনিতে তার হাতে আর বেশি সময় নেই। তিন মাস মত বাকি। এই সময়ে এর মধ্যে তাকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তার পরেই তাদের বিয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট হবে। তাই তোড়া ও এর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তোড়া নিজের কাজের দিকে খুবই সচেতন।
তোড়া রেয়ান্স এই তিন দিন একে অপরের থেকে দূরে থাকলে ও সব সময়ে তাদের কথা হতো। আর রেয়ান্স সময় পেলেই তোড়া কে ফোন করত। তবে বেশির ভাগ সময়ে রাই ফোন রিসিভ করত। যেহেতু তোড়া তার শুটিং থাকতো। তবে আজ তোড়ার শান্তি আজ মুম্বাই ফিরে যাবে শুটিং শেষে।
তোড়া মেকআপ নিয়ে রেডি হয়ে আছে এর পরেই তার শুট শুরু হবে। ততক্ষণে বসে বসে সে রেয়ান্স আর তার কথা ভাবছিল। আর এই পুরোটা সময় তার মুখে হাসির রেখা ফুটে ছিল। আর এটা দেখেই রাই আর কৃতী মুচকি মুচকি হাসছে। তোড়ার শুট রেডি হতে সে ঘোর কেটে বেরিয়ে আসে তার পর নিজেকে প্রস্তুত করে শুটিং ফ্লোরে চলে যায়।
এদিকে এতক্ষণ তোড়া কে পর্যবেক্ষণ করেছিলো রেয়ান্স। রাই তার ফোন থেকে ভিডিও কলে লাইন দিয়ে রেখেছিলো রেয়ান্স এর সাথে। এটা সে প্রায় সময় করে। আর তোড়ার শুট এর সময়ে তো ভিডিও কলে থাকবে। তোড়া যখন শুটিং ফ্লোরে আসে তখন নিজেকে একটা আলাদা আবরণ মুড়ে ফেলে যেটা তার সম্পূর্ন বিপরীত। রেয়ান্স নিজেও প্রতিবার তোড়ার এই লুকে মুগ্ধ হয়ে যায়।
আজকের শুট এর পরই তোড়া মুম্বাই এর টপ ওয়ান মডেল লিস্টে যোগ হয়ে যাবে । এতদিন সে টপ পজিশন থাকলেও আজকে শুট তার পথ আরো কিছুটা এগিয়ে দেবে। এর পরেই শুরু হবে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই একে অপরের পজিশন টিকিয়ে রাখার। এমনিতেই এই কয়েকদিন তোড়ার এত নাম সাকসেস দেখেই অনেকের মনে ক্ষোভ জমে গেছে কয়েকজনের চোখের বিষ ও তৈরী হয়েছে। আর আজকের পর তো আরো তুঙ্গে লড়াই শুরু হবে। তবে তোড়া নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছে এইসব এর জন্য। সে জানে তার এই পথ মসৃণ নয়। আর তাকে অনেক ঝড় সামলে এগিয়ে যেতে হবে শুধু মনোবল টিকিয়ে রেখে।
————-
-“স্যার কাজ হয়ে গেছে। মিস অনিতা শর্মার ডিটেইলস এতে আছে। শাহীন রেয়ান্স এর কেবিনে এসে বলে ওঠে।
-” স্যার…. মানে। শাহীন আমতা আমতা করে বলে ওঠে।
-“আর কিছু পেয়েছো? রেয়ান্স শাহীন কে দেখে তীক্ষ্ণ ভাবে বলে ওঠে।
-“ইয়েস স্যার। অ্যাকচুয়ালি এটা একটা বড় খবর মিস অনিতা শর্মার মৃত্যুর আগে ম্যাম আর ম্যাম এর বাবার সাথে এক সাথে দেখা গেছে। তবে ওখানে কিছু বড় ঝামেলা হয়ে ছিলো আর তার কয়েক দিন পরেই অনিতা শর্মার মৃত্যু হয়েছে তবে… এটুকু বলেই শাহীন চুপ করে যায়।
-” তবে? কি তবে? রেয়ান্স ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে?
-” তবে আমি খবর নিয়ে দেখেছি মিস অনিতা শর্মার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায় তবে ওনার বডি পাওয়া যায়নি। আর ওনার মৃত্যু ও স্বাভাবিক নয়। শাহীন বলে ওঠে।
-“হোয়াট? রেয়ান্স মৃদু চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” ইয়েস স্যার ওনার বডি পাওয়া যায়নি। আর এই খবর কেউ জানে না কয়েকজন ছাড়া। ইনফ্যাক্ট মিস্টার এহসান মানান ও জানেন না যে ওনার বডি পাওয়া যায়নি। সবাই জানে ওনার মৃত্যু হয়েছে। আর ওনার বডির জায়গায় একটা বেওয়ারিশ লাশ রাখা হয়েছিল যাকে সবাই অনিতা শর্মা ভেবে তার শেষ কাজ করেছে। শাহীন মুখস্ত পড়ার মত বলে যায়।
শাহীন এর কথা শুনেই রেয়ান্স এর ভ্রু কুঁচকে যায় ।এর আগের ডিটেইলসে রেয়ান্স দেখেছিল অনিতা শর্মার সাথে এহসান মানান এর এক গোপন সম্পর্ক ছিল। তবে কি এর মধ্যে আরো বেশি কিছু রহস্য জমা আছে। আর তোড়ার সাথে এর কি লিঙ্ক থাকতে পারে। আর মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তোড়ার সাথে কি নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। আর তাছাড়া ও অনিতার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আর তোড়ার বাবা মা তাকে দেখতে পারে না। হুম এর পিছনে নিশ্চয়ই বড় কোনো রহস্য আছে। সব টা এক জায়গায় লিঙ্ক হয়ে আছে। কিছু তো আছে আর যেটা তোড়া কে ভেঙে ফেলেছিলো ছোটো থেকেই ।রেয়ান্স নিজের মনেই ভেবে যাচ্ছে।
-“স্যার। শাহীন ডেকে ওঠে।
-” হুম । রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“স্যার এই অনিতা শর্মার সাথে মানান পরিবারের পারিবারিক ভাবে কোনও যোগ সূত্র আছে। শাহীন বলে ওঠে।
-” হুম ঠিক আছে। তুমি খোঁজ লাগিয়ে রাখো আর আপডেট দিতে থাকো। রেয়ান্স গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
-“ওকে স্যার। বলেই শাহীন বেরিয়ে যায়।
শাহীন বেরিয়ে যেতেই রেয়ান্স চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে গালে হাত দিয়ে নিজের ভাবনায় ডুবে গেছে। তোড়ার সাথে অনিতার আর এহসান মানান এর কি লিঙ্ক থাকতে এটাই তাকে ভাবাচ্ছে। আর অনিতার মৃত্যু স্বাভাবিক নয় আর বডি পাওয়া যায়নি তাহলে এর মধ্যে কি আরো বড় কিছু যা আছে? আমি যেটা ভাবছি যদি সেটা হয় তাহলে অনেক বড় ঝড় আসতে চলেছে। সামনে খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
————–
রাত দশটা মুম্বাই এয়ারপোর্ট প্লেন ল্যান্ড হতে তার কিছুক্ষণ পরেই তোড়া বেরিয়ে আসে। তবে এই মুহূর্তে তোড়া কে বোঝা যাচ্ছে না। তোড়ার এখন কার ফ্যান ফলোয়ার দেখেই তার ফ্লাইট রাতে রেখেছে রেয়ান্স। দিনের বেলা আসলে চারিদিকে থেকে তাকে ঘিরে থাকতো পাবলিক যেহেতু সে এখন একজন সেলিব্রিটি তাই এটা স্বাভাবিক। আর তাছাড়া তার আসার খবর পেলেই মুম্বাই এয়ারপোর্ট এতক্ষণ প্রেস মিডিয়া ভরে যেতো। তাই রেয়ান্স তোড়ার ফ্লাইট রাতে রেখেছে এখন রাতের বেলা তাকে তেমন কেউ নোটিশ করবে না আর তার সাথে এখন তার পুরো লুক চেঞ্জ হয়ে আছে। মাক্স দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। আর একদম সাধারন মানুষের মত ড্রেস আপ করেছে। তাই হুট করে কারোর নজরে পড়বে না। তোড়া বেরোতে তার সামনে রেয়ান্স এর গাড়ি এসে থেমে যায়। সাথে সাথে তোড়া গাড়িতে উঠে পড়ে সাথে রাই। কৃতী ও কোম্পানির থেকে আসা ভ্যানে উঠে যায়। সে সোজা বাড়িতে যাবে তার আর আজকে কাউকে ড্রপ করতে যেতে হবে না। যেহেতু রেয়ান্স গাড়ি নিয়ে এসেছে।
রাই গাড়িতে বসেই একবার শাহীন দেখে নেয় পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার স্ক্যান করে নিয়ে সোজা হয়ে বসে যায়। তবে রাই দেখলেও শাহীন একবার এর জন্য ও রাই এর দিকে ঘুরে তাকায়নি তবে তার বদলে তার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছিলো একটা বাঁকা হাসি। রাই শাহীন কে তার দিকে না তাকাতে দেখেই তার যেনো মনের মধ্যে কেমন একটা হয়ে ওঠে। হটাৎ করেই যেনো তার মন বিষাদে ভরে। সে কোনা চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে করে নেয়। রাই নিজেও জানে না শাহীন না তাকাতে তার কেনো এতো খারাপ লাগছে। কেনো তার এতক্ষণ ভালো থাকা মন টা হঠাৎ করেই বিষাদে ভরে গেছে এর কোনো উত্তর তার কাছে নেই। তবে তার খারাপ লাগছে এটা জানে।
রাই এর এমন কাজে শাহীন এর মুখের হাসি ফুটে উঠে। সে এতক্ষণ রাই এর কর্ম গুলো দেখেছিল আয়নাতে। আসলে তোড়া রাই গাড়িতে ওঠার আগেই শাহীন সামনের আয়না তার পাশের সিট বরাবর সেট করে রেখেছিলো। সে জানত রাই এসেই তার পাশে বসবে। তাই আগের থেকে সেট করে রেখেছিলো আর এতক্ষণ রাই এর কাজ গুলো তার মাধ্যমে দেখ ছিলো।
তবে ওরা জানে না যে ওদের এই কর্মকান্ড ও কারোর নজরে ছিল। হ্যাঁ পিছন তোড়া এতক্ষণ ওদের দুজন কে দেখ ছিল। শাহীন এর রাই কে দেখে মুচকি মুচকি হাসি আর রাই এর মুখ ফোলানো সবটাই তার নজরে এসেছে। এটা দেখেই তার মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।
এদিকে রেয়ান্স এতক্ষণ তোড়া কে দেখ ছিল ।সে এই তিন দিন তোড়া কে ছেড়ে ছিল। যতো তাদের ভিডিও কলে দেখা হোক না কেনো সামনে দেখা আর ভিডিও কলে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই সে মন ভরে এতক্ষণ তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে তার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছিলো। তার মনের ভিতর হাজারো প্রশ্ন চিহ্ন থাকলেও এই মুহূর্তে সে সব কিছুই ভুলে গেছে তোড়ার এই মায়া ভরা মুখ দেখেই আর এটা দেখেই তার বারবার মনে হতে থাকা না তার তোড়া কোনো খারাপ কাজ করতেই পারে না। রেয়ান্স তোড়ার এই দু চোখের মাঝে ডুবে ছিল তবে হঠাৎ করে তোড়ার মুচকি হেসে তাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরতে তার ভাবনার তার ছিড়ে বেরিয়ে আসে। রেয়ান্স তোড়ার মুখের এই মুচকি হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতে সে ও দেখতে পায় সামনে কোনা চোখে তাকানোর লড়াই। এটা দেখেই বুঝতে পারে তোড়া কেনো হাসছে। তবে রেয়ান্স এর এতে কোনো ভাব গতি নেই সে আরো একটু শক্ত করে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় ।
রেয়ান্স এর মনের মধ্যে একটাই চিন্তা ঘুরে যাচ্ছে সামনে কি হতে চলেছে। তবে যাইহোক না কেনো সে তোড়ার কিছু হতে দেবে না। এই সব ভাবতে থাকে।
শাহীন লর্ড রেজেন্সি তে এসে তোড়া ও রেয়ান্স কে রেখেই তার নিজের গাড়িতে রাই কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। রাই ড্রপ করে সে বাড়ি ফিরবে। অন্ধকার রাতের মাঝে রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি। তবে এখন এই মুহূর্তে গাড়ির মধ্যে একটু নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। গাড়ি বাতাস কেটে যাওয়ার জন্য সা সা করে মৃদু আওয়াজ হচ্ছে সাথে বাইরের আলো আধারি পরিবেশ। মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ি তাদের পাশ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাই জানালার দিকে মুখ করে আছে। জানলা হাফ খুলে রাখার জন্য বাইরে থেকে হওয়া এসেই রাই এর চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মাঝে মাঝে শাহীন এর মুখে এসে ঝাঁপটা দিয়ে যাচ্ছে আর এতেই যেনো শাহীন এর মনের মধ্যে হালকা করে অদ্ভূত অনুভূতি খেলে যাচ্ছে। শাহীন এবার সরাসরি মুখ ঘুরিয়ে রাই এর দিকে তাকায় ।তবে রাই এখনও বাইরের দিকে মুখ করে আছে। শাহীন তার গিয়ারে থাকা হাত ছড়িয়ে আঙুল নিয়ে পাশে পড়ে থাকা রাই এর আঙুলে আলতো করে স্পর্শ করে। আর এতেই রাই কেঁপে ওঠে। শাহীন এর হাতের আলতো স্পর্শ লাগতে রাই মাথা ঘুরিয়ে শাহীন এর দিকে তাকায়। তবে শাহীন তার দিকে না তাকিয়ে তার আঙুল এর সাথে রাই একটা আঙুল লক করে নেয়। রাই শুধু বিস্ময় হয়ে শাহীন এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনের মধ্যে ও একটা অনুভূতির দোল খেলে যায়। তার এতক্ষণে ভার হয়ে থাকা মন টা আসতে আসতে ভালো লাগতে লাগে। রাই শাহীন এর দিকে তাকিয়ে দেখে শাহীন এর মুখের কোণে একটা হাসি ফুটে আছে। আর এটা দেখেই রাই ও সোজা হয়ে বসে তবে সে আর হাত সরিয়ে নেই নি।
থাক না না জানা কিছু অনুভূতি। না বলা কিছু কথা। যেখানে কিছু না বলেও কিছু অনুভূতির প্রকাশ পাওয়া যায় সেখানে আর কোনো শব্দের প্রয়োজন পড়ে না।
.
.
.
.❤️❤️❤️
. চলবে……
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৮
সকালের মৃদু রৌদ্দুরে ছাট থাই গ্লাসে প্রতিফলিত হয়ে পর্দার ফাঁকে থেকে রুমের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি মারে। অন্ধকার রুমের মধ্যে মৃদু আলো প্রবেশ করতে একটা আলো আধারির মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মৃদু আলোর ছটা তোড়ার মুখের ওপর এসে পড়তে হালকা নড়ে ওঠে। ঘুমের মধ্যেই অনুভব করে সে কারোর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। তার নাকে আসছে একটা পরিচিত স্মেল। চোখ বন্ধ অবস্থায় একটু বড় করে শ্বাস টেনে নেয়। মুখের ওপরে রৌদ্দুরের ছাট তীব্র হতে আসতে আসতে নড়েচড়ে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় ।
চোখ খুলতেই চোখের সামনেই চলে আসে একটা স্নিগ্ধ মুখ মণ্ডল। কিছু অবিনস্ত চুল কপালে এসে ছড়িয়ে আছে। এমনিতেই প্রথম দিকে তোড়া রেয়ান্স এর এই ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ডুবে গেছিলো রেয়ান্স এর মাঝে । তার সব সময়ে এর জন্য প্রিয় রেয়ান্স এর এই ঘুমন্ত মুখ। তবে সব সময়ে এই ঘুমন্ত মুখের দর্শন পায় না। কখনো কখনো সে তার থেকে আগে উঠে যায়। তখন আর দেখতে পায় না। রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে তোড়ার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি খেলে যায়। তবে তোড়া রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে ও বোঝে এই মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ ফুটে আছে। তোড়া এক হাত উঠিয়ে রেয়ান্স মাথার এলোমেলো চুল গুলোর মাঝে নিজের আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে হালকা হালকা করে টেনে দিতে থাকে।
তোড়া জানে এখন রেয়ান্স এর কাজের চাপ প্রচুর। একাই তার এত বড় বিজনেস সামাল দেওয়া। আর সামনেই বিভিন্ন ইভেন্ট শো শুরু হতে চলেছে তাই প্রেসার ও বেড়ে গেছে কাজের। সেই সকালে অফিসে যায় আর রাতে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। কিন্তু তারপরেই বাকি কাজ গুলো স্টাডি রুমে সেরে ফেলে। এর মধ্যে ও রেয়ান্স কখনো তোড়ার জন্য টাইম বের করতে ভুলে না। এত কাজের মধ্যে থেকেই তার জন্য চিন্তা করতে ভোলে না মানুষটা।
তবে এই সব কিছুর মাঝেও একটা নতুন চিন্তা উদয় হয়েছে তোড়ার মনে। সে এখন রেয়ান্স এর মুখে একটা চিন্তার ভাব লক্ষ করে। কাজের মাঝে থাকলেও দেখেছে এই চিন্তার ছাপ স্পষ্ট মুখে আছে। আর তোড়া এটাও বোঝে এই চিন্তা তাঁকে নিয়ে। কিন্তু তোড়া এটা বুঝতে পারে না যে কি এমন বিষয় যেটা নিয়ে রেয়ান্স এত চিন্তিত থাকে। প্রথম প্রথম তার মনে হয়েছিলো এমনি কারণ রেয়ান্স তোড়ার জন্য সব সময়ে এমন থাকে তাই ভেবেছিল। কিন্তু এটা এখন তার মনে ঘর করে গেছে। তার বিষয় এমন কি নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছে রেয়ান্স? আর এটা যে খুব বড় কিছু সেটাও বোঝে। সে গোয়ার শুট থেকে ফেরার পর থেকেই দেখছে রেয়ান্স এর মুখের এই ভাব বদল আর তার পর থেকেই তার সমস্ত কাজ রেয়ান্স নিজে চেক করে নিজেই সব কিছু ঠিক করে। এমনকি সে এটাও জানে যে রেয়ান্স তার পিছনে সিক্রেট বডি গার্ড ও রেখেছে। যারা চব্বিশ ঘণ্টা তার উপর নজর রাখে। তোড়া এখন নিজেও ব্যস্ত গোয়ার থেকে ফেরার পর থেকেই তার ব্যস্ততা আরো বেড়ে গেছে। সে নিজেও কঠোর পরিশ্রম করছে রেয়ান্স এর সাথে তার যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য।
রেয়ান্স তোড়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ বুজে থেকেই তার বুকের ওপরে থাকা তার প্রেয়সী তার ওয়াইফি কে আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। এটা রেয়ান্স প্রায় মিস করে যায়। যখন সে তাড়াতাড়ি তোড়ার আগে উঠে যায়। তোড়ার নিজের কোমরের ওপরে রেয়ান্স এর হাতের স্পর্শ এর বাঁধন শক্ত হয়ে আসতে তার ঘোর কেটে বেরিয়ে আসে। রেয়ান্স মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। বুঝতে পারে রেয়ান্স জেগে গেছে। তোড়া ও মুচকি হেসে রেয়ান্স এর কপালে উষ্ণ স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। রেয়ান্স পিট পিট করে চোখ খুলে দেখে তার ওয়াইফি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সে তো প্রথমেই জেনে গেছিলো তার এই পাগল বউ টা তার এই ঘুমন্ত মুখ এর মধ্যেই ডুবে যায়। তোড়া রেয়ান্স ঠোঁটের কোণে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয়।
-“গুড মর্নিং ।তোড়া রেয়ান্স গাল আলতো করে টেনে দিয়ে বলে ওঠে।
রেয়ান্স তোড়া কে জড়িয়ে নিয়ে এক পাক খেয়ে তোড়া কে বিছানায় ফেলে সে তোড়ার ওপরে উঠে যায়। তোড়া কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে দেয়। আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে তাকে। তোড়া আলতো হাতে রেয়ান্স এর মাথার চুল গুলো টেনে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার বুকে মাথা রেখেই তার হার্ট বিট শুনতে থাকে। এতেও যেনো একটা আলাদা নেশা আছে। রেয়ান্স বোঝে যে তোড়া ও তার এই চিন্তিত মুখ নিয়ে ভাবনার মধ্যে থাকে। কিন্তু কিছু করার নেই সে এখন তাকে তার এই চিন্তার কারণ বলতে পারবে না।
রেয়ান্স মাথা উঠিয়ে তোড়ার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ঠোঁটের কোণে একটা আলতো চুমু বসিয়ে দেয়।
-“সুইট মর্নিং ওয়াইফি। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” চলুন উঠে পড়ুন আপনার অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে। তোড়া রেয়ান্স মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।
-“উমমম । কাজের চাপের জন্য আমি তোমাকে ঠিক করে সময় দিতে পারছিনা ওয়াইফি।রেয়ান্স তোড়ার গায়ের গন্ধ নিয়ে বলে ওঠে।
-” কে বললো শুনি? আমার বরবর তো অনেক সময় দেয় আমাকে। তোড়া বলে ওঠে।
-“বরবর? রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” হুম আরে বাবা এটা হচ্ছে ফিল তোমাকে বরবর বললে লাগে। বর বর দুবার করে ডাকছি একসাথে। তোড়া বলে ওঠে।
-” তাই নাকি? রেয়ান্স দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে।
-“হুম তাই। তোড়া ও হেসে ফেলে।
————–
তোড়া রাই কৃতীর সাথে ওশিয়ান গ্রুপে যাচ্ছে। মিস্টার নিমেষ ডেকে পাঠিয়েছে। তবে সে লক্ষ করেছে গোয়ার থেকে ফেরার পরের থেকেই রাই মুখ টা কেমন একটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সব সময়ে লজ্জা মাখা হাসি লেগে থাকে তার মুখে। সেই সাথে সেও লক্ষ করেছে শাহীন এর ভাব গতি ও ঠিক রাই এর মতন।
কোম্পানির সামনে গাড়ি এসে থামতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। তোড়া নিমেষ এর কেবিনে বাইরে দাঁড়িয়ে নক করতে নিমেষ হাসি মুখে তাকে ভিতরে যেতে বলে। তোড়া ঢুকে থেকেই লক্ষ করেছে যে নিমেষ এর হাসিটা ও কেমন একটা লাগছে। যা অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক নয়। তোড়া ভ্রু কুঁচকে নিমেষ এর মুখের দিকে তাকিয়ে টেবিলের নিচে থেকে ফোন হাতে তুলে নেয়।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৯
তোড়া টেবিলের নিচে দিয়ে ফোন থেকে নিমেষ এর চোখের অলক্ষে রাই কে এসএমএস করে দেয়। নিমেষ এর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে নিমেষ এর মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করে। এই মুহূর্তে নিমেষ তোড়ার সামনে বসে আছে আর তার দিকে তাকিয়ে হেসে যাচ্ছে তবে এটা স্বাভাবিক নয়।
-“মিস্টার রয়। তোড়া বলে ওঠে।
-” হু.. হুম । নিমেষ কিছুটা হকচকিয়ে বলে ওঠে।
-“আপনি কিছু বলবেন বলেছিলেন? তোড়া বলে ওঠে ।
-” ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ বলবো তো। খানিকটা হেসে বলে ওঠে নিমেষ।
তোড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে নিমেষ এর দিকে তাকিয়ে আছে । আর বোঝার চেষ্টা করছে নিমেষ এর মনোভাব। সে আগে থেকেই জানতো যে এই নিমেষ তার উপরে একটু একটু গলে আছে। কিন্তু আজকে হঠাৎ কি হলো এত ভাব কেনো।
-” বলছিলাম মিস তোড়া যেটা বলার ছিল। লন্ডন এর এল এম কোম্পানির থেকে একটা ইভেন্ট শো এর অফার এসেছে। মূলত ওরা এই শো এর মাধ্যমে তাদের একটা নিউ প্রোডাক্ট লঞ্চ করবে আর তার সাথে এটা একটা হাই লেভেল ইভেন্ট শো তাই এটা আমি আমাদের কোম্পানির থেকে তোমাকে দিতে চাই যেহেতু তুমি এখন আমাদের কোম্পানির টপ লিস্টে আছো। আর তাছাড়া তুমি এখন তোমার লক্ষের একদম সামনে এখন তুমি মুম্বাই টপ মডেল তাই তুমি এল এম কোম্পানির ইভেন্ট শো তে উইন হলে একজন ইন্টারন্যাশনাল মডেল হিসাবে পরিচিতি পেয়ে যাবে। নিমেষ বলে ওঠে।
তোড়া এতক্ষণ মন দিয়ে নিমেষ এর প্রতি টা কথা শুনছিলো। হ্যাঁ অবশ্যই এটা তার কাছে একটা বিগ অপরচুনিটি। এটাতে উইন হতে পারলে সে ইন্টারন্যাশনাল মডেল হিসাবে পরিচিত হবে সাথে তার আর রেয়ান্স এর মধ্যে শুধু এক ধাপ দূর থাকবে।
-“তোড়া আর ইউ রেডি? নিমেষ বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ আমি তৈরী আছি এই অপরচুনিটি টা নেওয়ার জন্য। তোড়া সিরিয়াস ভাবে বলে ওঠে।
-“ওকে । বেস্ট অফ লাক। নিমেষ বলে ওঠে।
-” থ্যাঙ্কস ।
-“তোড়া । আরো একটা কথা বলার আছে। বলছিলাম তোমার এই অপরচুনিটি এর জন্য আমরা কি একসাথে লাঞ্চ করতে পারি? মানে আমি কি এটার জন্য তোমাকে ট্রিট দিতে পারি? নিমেষ তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে।
তোড়া একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখে নেয় হাতের দিকে তারপরেই নিমেষ এর দিকে তাকায় ।সে নিজেও বুঝতে চায় আসলে এই নিমেষ এর আসল উদ্দেশ্য কি। কি চায় সে তার কাছে।
-“ওকে । তোড়া মৃদু হেসে বলে ওঠে।
তোড়ার কথা শুনেই যেনো নিমেষ হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে এমন অবস্থা। তার মুখ ঝলমলিয়ে ওঠে । চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তোড়ার দিকে এগিয়ে তোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে এক পা পিছনে নিয়ে কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে এক হাত দিয়ে ইশারায় বাইরের দিকে যাওয়ার নির্দেশ করে হেসে। তোড়া ও কোনও কথা না বলে উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বেরিয়ে রাই কে ইনফর্ম করে দেয়। সে জানে এবার খবর ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাবে. আর তার সাথে সিক্রেট গার্ড ও আছে তাই তার কোনো অসুবিধা নেই আর তার নিজের কিছু কায়দা আছে যাতে সে নিজেকে সেফ রাখতে পারে। তাই সে হাসি মুখেই নিমেষ এর সাথে বেরিয়ে যায়।
————-
ইউনিভার্সিটি পার্কিং সাইটে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে লেখা ও তামিম। তারা নিজেরাই চমকে আছে একে অপরকে সামনাসামনি দেখে তাও একই জায়গা একই ইউনিভার্সিটি তে। তামিম এর বাইক আর লেখার কার পাশাপাশি রাখা। লেখা কার থেকে বেরোতে তামিম এর সামনে পড়ে যায়। আর তামিম ও বাইক থেকে নেমে বেরোতে গিয়ে লেখার সামনে পড়ে যায়। তাই এখন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে দাঁড়িয়ে আছে।
-“তুমি!
-” তুমি!
দুজনেই প্রায় একসাথে চিৎকার করে বলে ওঠে।
-“এই তুমি এখানে কি করছো। আমার ইউনিভার্সিটি তে তুমি কি করতে এসেছ? এক মিনিট এক মিনিট তুমি আমাকে ফলো করতে করতে এখানে চলে আসোনি তো? লেখা চোখ বড় বড় করে তামিম এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।
তামিম ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। লেখার কথা শুনে প্রথমে রাগ লাগলেও এখন লেখার মুখের দিকে তাকিয়ে আর শেষের কথা শুনে হাসি পাচ্ছে তার। এই চোখ বড় বড় করে অবাক চাহনি দেখেই সে ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে।
-“আমার যতদূর মনে পড়ে এটা একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি। এটা কারোর নামে লেখা নেই যে এখানে আসতে পারবে না। তামিম লেখার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে।
লেখা তামিম এর কথা শুনে থতমত খেয়ে গেছে। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্রী লেখা নয়।
-” এই আমি কখন বললাম এটা আমার নামের ইউনিভার্সিটি। আমি বলেছি আমার ইউনিভার্সিটি মানে আমি এখানে পড়ি তাই সে ক্ষেত্রে দেখতে গেলে এক প্রকার আমার হলো তাই না। লেখা তার পক্ষে যুক্তি খাড়া করে বলে ওঠে।
-” হুম সে ক্ষেত্রে দেখতে গেলে এটা আমারও ইউনিভার্সিটি। তাই আমি এখানে আসতেই পারি। তামিম বলে ওঠে।
-” মানে তোমার ইউনিভার্সিটি মানে? লেখা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
-“মিস লেখালেখি আমি চলতাফিরতা ডিকশনারি নয় যে আমি সব কথার মানে বুঝিয়ে বলবো। তবে হ্যাঁ এটা বলতে পারি যে মানে টা খুব সহজ। তবে তাদের জন্য যাদের মাথায় একটু হলেও বুদ্ধি আছে। তামিম লেখার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” এই এই তুমি কি বলতে চাইছ আমি বুদ্ধি হীন আমার বুদ্ধি নেই? লেখা তামিম এর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে ওঠে।
-” আমি কি তাই বললাম বলে তোমার মনে হচ্ছে। ওহ হ্যাঁ তাইতো বললাম তবে তোমাকে তো বলিনি। তাহলে তুমি সত্যি বুদ্ধি হীন। তামিম কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বলে ওঠে।
-” তামিম এর বাচ্চা। লেখা মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে।
তামিম লেখার কথাটা শুনেই এক হাত বাড়িয়ে লেখার কোমর ধরে টেনে আনে নিজের কাছে তারপর কিছুটা ঝুঁকে যায়। লেখার মুখের ওপর তামিম এর নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। আর তোর সাথে তার কোমরের ওপরে তামিম এর হাতের ছোয়াতে সে ফ্রিজ হয়ে গেছে। তার পিঠ বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেছে। আর তামিম উষ্ণ নিঃশ্বাস তার মুখে আছড়ে পড়তে সে শিহরিত হচ্ছে। আবারও তার মনের মধ্যে এক অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে সেই আগের দিনের মতো।
-“আমার এখন ও বাচ্চা হয়নি তবে তুমি চাইলে সেটাও হয়ে যেতে পারে। তামিম ফিসফিস করে বলে ওঠে।
তামিম এর কথা শুনে লেখার মুখ ও চোখ ডবল বড় বড় হয়ে গেছে। এতক্ষণ সে অজানা অনুভূতির দ্বারস্থ হয়েছিল আর এখন তামিম এর কথা শুনে সে কেঁপে ওঠে। তামিম লেখার অবস্থা দেখে তাকে ছেড়ে দেয়। লেখার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে এক চোখ টিপে দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যায় শিস বাজাতে বাজাতে। আর এদিকে হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে আছে লেখা সে এক দৃষ্টিতে তামিম এর চলে যাওয়া দেখছে আর একটু আগের ঘটে যাওয়া সব কিছু ভাবছে।
তামিম ও এই ইউনিভার্সিটি তে পড়ে ফাইনাল ইয়ার চলছে। আর লেখা সেতো এই ইউনিভার্সিটি তে নতুন তাই জানে না আর আগেও দেখা হয়নি তাদের। আসলে তামিম এর ডিপার্টমেন্ট আলাদা আর তাদের টাইম ও আলাদা তাই ঠিক ভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি আর লেখাও ইউনিভার্সিটি কন্টিনিউ করে না সপ্তাহে একবার করে আসে। তাই তারা জানতো না।
————-
রেস্টুরেন্ট এর এক কোনায় টেবিলের সামনাসামনি হয়ে বসে আছে তোড়া ও নিমেষ। নিমেষ এসে থেকেই উসখুস করছে। সে কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। তোড়া শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে আর নিজের লাঞ্চ করতে ব্যস্ত আছে।
-“উম তোড়া তো তোমার নেক্সট কি প্ল্যান আছে? নিমেষ বলে ওঠে।
-” মানে? কি নিয়ে? তোড়া বলে ওঠে ।
-“উম তোমার লাভ লাইফ নিয়ে। মানে দেখো তুমি তো এখন নিজে একজন টপ মডেল হিসাবে পরিচিত আর তার সাথে সবে তোমার ক্যারিয়ার এর উড়ান ভরছো তো তাই জিজ্ঞেস করছি। কারণ এখন যদি কোনো কারণে তুমি স্ক্যান্ডেলে ফেসে যাও তাহলে মুশকিল হয়ে যাবে। নিমেষ বলে ওঠে।
তোড়া কোনো কথা না বলে চুপচাপ থেকে নিমেষ এর কথা বোঝার চেষ্টা করছে। বুঝতে চাইছে ঠিক কী বলতে চায় নিমেষ। নিমেষ তোড়ার তীক্ষ্ণ প্রশ্ন সূচক দেখে ফের বলে ওঠে।
-“না মানে দেখো লাভ লাইফ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা স্ট্যান্ডার্ড দেখতে হবে কারণ তুমি যার সাথে রিলেশনে যাবে সে যদি তোমাকে সাপোর্ট করতে না পারে তাহলে তোমার নাম খারাপ হবে। নিমেষ বলে ওঠে।
-” আপনাকে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি আপনার কথা। কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। তোড়া বলে ওঠে ।
-” মানে তুমি কি তাহলে রিলেশনে আছো? নিমেষ বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে।
তোড়া নিমেষ এর কথা শুনে কিছু সেকেন্ড চুপ করে থাকে। কারণ তোড়া রেয়ান্স কে প্রথমেই বলেছিলো যে সে কখনো তাদের সম্পর্ক কে অস্বীকার করবেনা।
-” ইয়েস আমি রিলেশনে আছি।তবে এটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। যদি কখনো কোনো স্ক্যান্ডেল আসে আমার নামে সেটা আমি হ্যান্ডেল করে নেবো। তোড়া বলে ওঠে ।
-” মিস্টার রয় আমি এখন উঠছি আমার হয়ে গেছে তাছাড়া কিছু কাজ আছে। বলেই তোড়া কোনো কথার উত্তর না শুনেই উঠে বেরিয়ে যায় তোড়া।
তোড়া যদি একবার ঠিক ভাবে নিমেষ এর দিকে তাকিয়ে দেখতো তাহলে বুঝতে পারতো তার
দিকে দুটো চোখ আগুন নিয়ে তাকিয়ে আছে। তোড়া বেরিয়ে যেতেই নিমেষ রাগে টেবিলের উপরে থাকা সমস্ত জিনিষ ফেলে দেয়। রাগে নিমেষ এর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে। তোড়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তার কিছুক্ষণ পরেই নিজের কপালে রাব করে কিছু ভেবে নিয়ে বাঁকা হেসে ওঠে নিমেষ ।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…..।