#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
||পর্ব_৪০||
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে মালিশা। রাতের নিস্তব্ধতায় চারদিকে বয়ে চলা শো শো শীতের বাতাসে তার খোলা চুল গুলো এলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে সে।
—এই ঠান্ডায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলে ফেভার হয়ে যাবে।
হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনেও পেছনে তাকালো না মালিশা। বেশ ভালো ভাবেই জানে, যে এটা মিরাজ ছাড়া আর কেউ না। মাথা নিচু করে কোনো রকমে নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ফেললো।
মিরাজ মালিশার পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,
—আজকের ঐ ছেলেটা তোর হাসবেন্ড ছিল, তাই না?
মালিশা অবাক চোখে তাকালো। মালিশাকে আরো অবাক করে দিয়ে মিহাদ চৌধুরী পেছন থেকে বলে উঠলো,
—যদি তোমার অফিসে এসে কোনো প্রব্লেম ক্রিয়েট করার চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের জানাবে।
মালিশা শুকনো হাসি দিয়ে বললো,
—দরকার নেই, বাপি। কালই আমি আর জ্যোতি অস্ট্রেলিয়া ব্যাক করছি।
মিরাজ শকড হয়ে তাকিয়ে বললো,
—হোয়াট! হোয়াট!! হোয়াট!!!
—প্লিজ, আমায় আটকাস না। সবাই জানাজানি হয়ে যাওয়ার আগেই আমার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। নিজেকে নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই, কিন্তু জ্যোতির ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। তাছাড়া আমার নামে কেস হয়েছে, ওটাকে তো আমি! (রাগী গলায়)
মিহাদ চৌধুরী বলে উঠলো,
—জ্যোতিকে নিয়ে তুমি টেনশন করো না। ওর সম্পুর্ণ সেফটি আমি নিশ্চিত করলাম। তাও তোমার অস্ট্রেলিয়া ব্যাক করার সাথে আমি একমত নই।
—কিন্তু বাপি……
মালিশার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিরাজ ছাদের মাঝখানে থাকা টেবিলটায় লাথি মেরে রাগ দেখিয়ে হনহন করে চলে গেল।
মালিশা আর কিছু বললো না। এখানে থাকা ছাড়া তার হাতে আর অন্য কোনো উপায়ও নেই।
—————
—হোয়াট’স আপ, সুইটহার্ট? বিজি আছো নাকি?
হঠাৎ কারো মুখে এমন উদ্ভট কথা শুনে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই নাক মুখ কুঁচকে ফেললো মালিশা। জোরে চেচিয়ে উঠে বললো,
—আপনি আজ আবার আমার অফিসে এসেছেন কোন সাহসে? আপনার না এখানে কোনো কাজ আছে আর না আমি আপনাকে ডেকেছি!
জয় মালিশার কাছে গিয়ে চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফেললো। চেয়ারের দুই হ্যান্ডেলে নিজের দুই হাত রেখে মালিশার ওপর ঝুঁকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—তুমি ডাকো আর না ডাকো, আমি তো বারবারই তোমার কাছে আসবো। তুমি মানো আর না মানো, আমি শুধু তোমারই হয়ে থাকবো। তুমি বাসো আর না-ই বাসো, আমি তো শুধুই তোমাকে ভালোবেসে যাবো।
মালিশা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়ের দিকে। ইচ্ছে তো করছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে ঝাপটে ধরতে। কিন্তু বারবার সেই অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। কোনো একটা বাঁধা আঁটকে দেয় তাকে।
—কী হলো, কোথায় হারিয়ে গেলে?
মালিশা চমকে উঠে অন্য দিকে ফিরে বললো,
—আপনি আমায় এভাবে ডিস্টার্ব করেছেন কেন? আপনারও তো বাড়িতে বউ-বাচ্চা আছে!
জয় হেসে উঠে বললো,
—আছে তো কী হয়েছে? আমি যাকে ভালোবাসি, মন তো বারবার তার দিকেই টানবে, তাই না?
মালিশা অবাক চোখে জয়ের দিকে তাকালো। তার মারা ওর ধারণাই ঠিক! জয় সত্যি সত্যিই তনিমাকে বিয়ে করেছে! এটা ভাবতেই মাথায় রক্ত উঠে গেল।
হঠাৎ জয়কে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো মালিশা। জয়ের দিকে আঙুল তুলে বললো,
—আপনার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমায় টাচ করারও সাহস দেখাবেন না। আপনার মতো দুশ্চরিত্র লোক আমি দু’টো দেখিনি।
জয় আবারো হেসে দিয়ে মালিশার দিকে দুকদম এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
—টাচ তো আগেই করেছি! ইভেন তোমার আমার একটা বেবিও আছে।
কথাগুলো যেন মালিশার গায়ে কাঁটার মতো বিঁধছে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে জয়ের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই জয় একটানে ওকে নিজের সামনে এনে কোমড় জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় মালিশা জয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
জয় মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—আমার বউ-বাচ্চা আছে শুনে তোমার জেলাস ফিল হচ্ছে বুঝি?
মালিশা বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
—আরে আজব তো! আমি জেলাস ফিল করতে যাবো কেন? আর আপনি আমায় ছাড়ুন।
—ছাড়ার জন্য তো ধরিনি!
—যতোসব বাকোয়াস কথাবার্তা।
—যাই বলো! বাট ইউ নো, আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। তবে এভাবে যে আসবে, তা ভাবতেও পারিনি। তুমি এসব পোশাক কেন পরো, এসব শার্ট, প্যান্ট? কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে যদিও। তুমি অনেক বদমেজাজি হয়ে গেছো, তবে যখন রেগে যাও তোমার এই মিল্কি মিল্কও গাল দুটো পুরো স্ট্রবেরির মতো হয়ে যায়।
—হয়েছে আপনার বলা? এবার আমায় ছাড়ুন আর চলে যান এখান থেকে।
জয় মালিশাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
—যাও, ছেড়ে দিলাম। তবে একেবারে দেইনি কিন্তু! এনিওয়ে, মুন তোমার…..
মালিশা জয়কে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—নট মুন। আমি মালিশা চৌধুরী। সো আমায় এই নামেই ডাকবেন।
জয় হেসে উঠে বললো,
—ওকে, ওকে। আজ আমি তাহলে যাই। বাট কাল আবারও আসবো।
বলেই চোখ টিপ মারলো।
মালিশা রেগে গিয়ে বললো,
—ওহহ, হ্যালো মিস্টার। লিসেন, আমি যতোদিন বিডিতে আছি, ততোদিন কাইন্ডলি আপনার এই মুখটা আমায় দেখাবেন না। ইউ নো হোয়াট, যাদেরকে আমি ঘৃণা করি, তাদেরকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে না।
জয় আহত দৃষ্টিতে তাকালো মালিশার দিকে। হঠাৎ হেসে উঠে বললো,
—ওকে, আসবো না তোমার সামনে। আমার অবহেলা করছো ভালো কথা। কিন্তু আমি যখন অবহেলা শুরু করবো, সহ্য করতে পারবে তো!
মালিশা কিছু বললো না, অন্য পাশে ফিরে তাকালো। জয় আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। মাল৭শাও নিজের চোখ দুটো আড়ালে মুছে ফেললো। জয় এটা উঁকি দিয়ে দেখে কিছু বললো না, হাসলো শুধু।
————–
—তোর এই দেবদাসের মতো জীবনযাপন কবে শেষ হবে, আমায় বলতো?
আহিলের কথা শুনে জয় কিছু বললো না। শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আরেকটা জ্বালাতে নিবে, এমনসময় আহিল হাত থেকে সিগারেট আর লাইটারটা নিয়ে নিল।
—স্টপ ইট, ইয়ার। এসব ছাইপাঁশ দিয়ে কী মজা পাস?
জয় হাসতে হাসতে নিজের রকিং চেয়ারে বসে বললো,
—পেইন, দোস্ত পেইন। যখন অনেক বেশি পেইন হয়, তখন এগুলো ছাড়া চলে না।
—কিন্তু গত দুদিন তো এগুলো ছুঁয়েও দেখিসনি। আমি আরো ভাবলাম, তুই বুঝি সব বাদ দিয়ে দিয়েছিস,স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিস। তাহলে আজ আবার কেন?
—কারন স্বাভাবিক করার মানুষটা আমায় বারবার অস্বাভাবিক করে দিচ্ছে।
আহিল কিছু না বুঝতে পারায় জিজ্ঞেস করল,
—কেন?
জয় হাত দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে বললো,
—বলবো, বলবো। সব বলবো। কিন্তু সঠিক সময়ে বলবো, যখন সব কিছু আমার আয়ত্তে থাকবে।
আহিল মাথা নাড়িয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।
আহিল বের হতেই অদ্রি এসে বললো,
—কী ব্যাপার, আহিল? কিছু বুঝলে?
আহিল মাথা নাড়িয়ে না বললো।
অদ্রি আমতা আমতা করে বললো,
—আচ্ছা, আহিল একটা কথা বলি।
আহিল অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
—আরে ভাবি, বলো না। এতো উশখুশ করছো কেন?
—আসলে আহিল, আমায় কথা ফোন দিয়েছিলো, তুমি নাকি দুদিন ধরে বাসায় যাও না,তাই।
—যাই না তো ওরই জন্য। আমার জন্য ওর টেনশন করতে হবে না।
বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল।
-চলবে…..
#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
|| পর্ব-৪১ ||
সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট করে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মালিশা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। অথচ জয় সেদিনের পর আর একবারও তার সাথে দেখা করতে আসেনি। একদিকে ভালোই হয়েছে, ও আমার ব্যাপারে কাউকে কিছু জানাবে না।
এমন সময় মিহাদ চৌধুরী এসে বললো,
—আজ কি অফিসে যেতেই হবে তোমার?
মালিশা হকচকিয়ে গিয়ে জ্যাকেট গায়ে দিতে দিতে বললো,
—কেন বাপি? অফিসে কেন যাবো না?
পেছন থেকে মিরাজ আর ডক্টর নিখিল এসে একসাথে বললো,
—কারণ আজ আমরা একজনের বাসায় যাবো ইনভাইট করার জন্য।
মালিশা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
—সবাইকে তো ফোনে ফোনে ইনভাইট করলে, এবার তাহলে বাসায় যেতে হবে কেন?
মিহাদ চৌধুরী বললেন,
—আসলে যার বাসায় যাবো, সে আমার অনেক ভালো বন্ধু। প্রায় দশ-বারো বছর ধরে দেখা হয় না, তাই ভাবলাম দেখাও করে আসি, ইনভাইটও করে আসি।
মাঝখান থেকে নিখিল বলে উঠলো,
—হ্যাঁ, আংকেল। অনেক ভালো আইডিয়া।
মালিশা একবার নিখিলের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকালো। আবার মিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো
—তাহলে তোমরা যাও। আমার যাওয়ার কী দরকার?
এবার মিরাজ রাগান্বিত স্বরে বললো,
—দেখলে তো, ড্যাড। আমি বলেছিলাম না যে, ও সোজা কথা শুনবে না। দেখলে তো এবার! আসল কথা কী বলো তো? ও এখনো আমাদের নিজের আপন বলে মনে করে না। এজন্যই তো সবক্ষেত্রে ওর শুধু সমস্যা! আমিও যাবো না।
বলেই চলে গেল।
মিহাদ চৌধুরী হতাশ হয়ে বললেন,
—তাহলে আর কী করার? আমিও যাবো না।
বলে তিনিও চলে গেলেন।
মালিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে সবটা বোঝার চেষ্টা করছে। দু’মিনিটের মধ্যে কী হয়ে গেল সবটাই ওর মাথার ওপর দিয়ে গেছে।
ডক্টর নিখিল মালিশার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
—কী সমস্যা তোমার? ওদের সাথে গেলে কী হবে?
মালিশা চমকে উঠে পাশে তাকাতেই নাক মুখ কুঁচকে বললো,
—সেটা আপনার জানতে হবে না। এতো দিন ধরে বেঁচে আছেন সেটার জন্য শুকোরগুজার করুন। যত্তোসব!
নিখিল হেসে উঠে বললো,
—আচ্ছা? যাইহোক, তুমি যাবে এখন নিশ্চয়ই। আমি নিচে গিয়ে ওদের রেডি হতে বলছি।
মালিশা কিছু বললো না। যেতে তো হবেই! এছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় নেই।
—————–
গাড়িতে সবাই চুপচাপ হয়ে বসে আছে। মালিশা মিহাদ চৌধুরী আর মিরাজের মাঝে বসেছে। তাদের পেছনে আসিফ আর রনি। নিখিল ড্রাইভারের পাশে বসেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর মালিশা নিজে থেকেই বলে উঠলো,
—আচ্ছা, তোমরা সবাই এমন চুপ করে বসে আছো কেন? আমি তো যাচ্ছি তোমাদের সঙ্গে! তাও আমার ওপর রেগে আছো?
মিরাজ বাইরে তাকিয়ে বললো,
—কই সবাই চুপচাপ? নিখিল ভাইয়া তো কথা বলছেই!
মালিশা মিরাজের কানে ফিসফিস করে বললো,
—আচ্ছা, এই ডক্টর নিখিলকে আমাদের সাথে আনার কী দরকার ছিল? একে দেখলেই আমার মন চায়, মাটিতে পুঁতে ফেলি।
—এরকম করছিস কেন? ওনি অনেক ভালো মনের একজন মানুষ। শুধু তোকেই….
মালিশা মিরাজকে থামিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—ওকে, ওকে, আই আন্ডারস্ট্যান্ড। এসব শোনার প্রতি আমার কোনো ইন্ট্রেস্ট নেই।
মিরাজ হাসলো। ও ভালো করেই জানে, মালিশা কেমন। পাচ বছরে মালিশাকে কখনো কোনো নীতিবিরোধী কাজ করতে দেখেনি। এজন্য ধীরে ধীরে তাদের পরিবারের সবার মনেই মালিশার জন্য একটা অন্য রকম মায়া তৈরি হয়েছে। হোক না, রক্তের সম্পর্ক নেই! সব সম্পর্ক রক্তের হতে হয় না। বরং সম্পর্কের মধ্যে মায়া আর ভালোবাসা থাকলে, তাতে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি ভালো বন্ডিং থাকে। এজন্যই চৌধুরী পরিবারের মেয়ের পরিচয়টা মালিশা পেয়েছে।
—কী এতো ভাবছিস? সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেছে আর তুই এখানে বসে বসে ভাবনার রাজ্যে বিচরণ করছিস? নাকি বউকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে? হুম, হুম!!
মালিশার ভ্রু নাচানো দেখে মিরাজ হেসে দিয়ে বললো,
—স্টপ ইট, আপুমনি। আমি তোকে নিয়েই ভাবছিলাম।
—হোহ! আমাকে নিয়ে? আনবিলিবেবল!!
মিরাজ ওর হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের হতে হতে বললো,
—আই নোও ওয়েল দ্যাট তুই বিশ্বাস করবি না। সো, ওসব বাদ দিয়ে চল ভেতরে চল। সবাই অলরেডি ভেতরে চলে গেছে
—ওকে ওকে, চল ভে…….
বলতে বলতে সামনের দিকে তাকাতেই মালিশা শকড হয়ে স্ট্যাচু হয়ে যায়। মনে মনে বলতে থাকে, “এটা তো জে. এম. ম্যানশন! আমি এখানে এসেছি? ওহ মাই লর্ড!! ”
—কী হলো, এখন নিজে কী ভাবছিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে?
মিরাজের কথায় চমকে উঠে বললো,
—আমরা এ. এ..এখানে কেন এসেছি, মিরাজ?
—এটাই তো ড্যাডের ফ্রেন্ড জাহিদ মাহমুদের বাড়ি! এখানে আসবো না তো কোথায় যাবো?
—ধুরর!! দুনিয়ার সব কাকতালীয় ঘটনা কি আমার সাথেই ঘটতে হয় নাকি? কেন যে আগে নাম জিজ্ঞেস করলাম না? আর বাপির ফ্রেন্ড তো অন্য কেউ ও হতে পারতো। এখন এদের সবার সামনে আমি নিজেকে কীভাবে শক্ত রাখবো? (মনে মনে)
মিরাজ আমায় ধাক্কা দিয়ে বললো,
—কোথায় হারিয়ে গেলি? সেই কখন থেকে ডাকছি!
মালিশা নখ কামড়াতে কামড়াতে বললো,
—ভাবছিলাম, আল্লাহ আমায় উঠিয়ে নেয় না কেন?
মিরাজ চোখ বড়বড় করে বললো,
—হোয়াটটট!!!
মালিশা থতমত খেয়ে বললো,
—আমার,, আমার না একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। সো আই নিড টু গো নাও।
—লিসেন, তোর এসব অ্যাটিচিউট দয়া করে ছাড়। আজ ড্যাড কতো এক্সাইটেড, তুই জানিস? তার ছেলেমেয়েকে সবার সাথে ইন্ট্রডিউস করাবে বলে এটা-সেটা ভেবেই চলেছে। অন্তত ড্যাডের কথা ভেবে হলেও ভেতরে চল। সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য।
বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে ভেতরে চলে গেল মিরাজ।
এদিকে মালিশা নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
—সবার সামনে গিয়ে এসব পরে আমি দাঁড়াবো কীভাবে? যতোই হোক, এটা একসময় আমার শশুর বাড়ি ছিল! এখন কী হবে? কোন দুঃখে বিডিতে এসেছি আমি?
অন্যদিকে,,,,
জাহিদ মাহমুদ মিহাদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—কতবছর পর আমাকে মনে পড়েছে তোর! আমি আরো ভাবলাম, আমায় বোধ হয় ভুলেই গিয়েছিস!
—তোকে তো আমি একযুগ কেন হাজর যুগেও ভুলবো না!
দুজনেই জোরে জোরে হেসে দিলো। দুই বন্ধুর হাসাহাসি দেখে জায়েদ আহিলের কানে ফিসফিস করে বললো,
—দেখলি তো! পুরোনো আমলের মানুষের বন্ধুত্বেও কোনো রসকষ নেই। যেসব কথা বলছে, সেগুলো তো গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডকে অর বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডকে বলে।
আহিল কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রি জায়েদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—ও তাই, না? তুমিও তাহলে তোমার গার্লফ্রেন্ডকে এসব বলতে?
—আমি সেটা কখন বললাম?
—বলোনি বলে কি আমি বুঝি না নাকি?
বলেই নাক ফুলিয়ে চলে গেল ।
—দেখলি তো আহিল! আমায় শুধু শুধু সন্দেহ করে। আমার মতো ইনোসেন্ট মানুষ দুটো আছে নাকি?
জায়েদের কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে আহিল হেসে দিয়ে বললো,
—ইয়াহ, ইয়াহ! আই নোও ইউ আর আ ইনোসেন্ট গায়।
এদিকে মিহাদ চৌধুরী জাহিদ মাহমুদকে জিজ্ঞেস করল,
—তোর ছেলে দুটো কোথায়? আর তাদের বউ-ই বা কই?
জাহিদ মাহমুদ জায়েদ আর অদ্রির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন,
—ছোট জন নিজের ঘরেই আছে। বোধ হয়, ঘুমাচ্ছে। তোর ছেলেটা আসেনি?
মিহাদ চৌধুরী হাসি মুখে বললেন,
—ছেলেও এসেছে, মেয়েও এসেছে।
জাহিদ মাহমুদ অবাক হয়ে বললেন,
—-মেয়েও এসেছে মানে? তোর মেয়ে তো,,,,,,
—আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন আমায়। আমি আমার মেয়েকে আবার ফিরে পেয়েছি।
—কিন্তু কীভাবে?
—পরে খুলে বলবো। এখন এই টপিক বাদ দে। আর মালিশার সামনে এ ব্যাপারে কিছু বলিস না কিন্তু।
—আচ্ছা, তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোর ছেলেমেয়ে দুটো কোথায়?
হঠাৎ মেইন ডোর দিয়ে মিরাজ মালিশার হাত ধরে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
—এই তো আমরা এসে গেছি!!
সবাই তাদের দিকে তাকাতেই চোখ দুটো হাসের ডিমের মতো ইয়া বড়সড় করে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালো। ব্ল্যাক শার্ক, ব্ল্যাক জিন্স আর হেয়াইট লেদারের জ্যাকেট পর এটা কে দাঁড়িয়ে আছে? সবার মাথায় এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।
অদ্রি আহিলের কানে ফিসফিস করে বললো,
—আচ্ছা, এটা কি সত্যিই মুন, নাকি মুনের ভুত দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে?
আহিল হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,
—আমিও সেটাই ভাবছি! বাট ভুত-ই হবে হয়তো!!
-চলবে……….