#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ২১
দেখতে দেখতে আরো ১ সপ্তাহ কেটে গেল। লাজ আর ফারাজ দুজন একসাথে মিলে ফারিদ তাকদিয়ারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।ফারিন এই কয়েকদিনে মাহেরা তাকদিয়ারের ভালোবাসা পেয়ে তার নিজের মা হারানোর ব্যাথা টা না ভুলতে না পারলেও অনেক সামলে গেছে।লাজ নিজ হাতে কফি বানিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসলো। তখনি ফারিদ তাকদিয়ার একটা কাপ হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল…..
-“এই প্রথম তোমার হাতের কফি খাবো,খেতাম না যদি না আজকে এতবড় সুসংবাদ টা আসতো! কি বুঝতে পারছো না তো আমি কি বলছি?”
-“আপনি কি বলতে চায়ছেন তা আমি ভালো করেই জানি!”
-“না,একদম না। এটা একদম নতুন খবর। মনোনয়ন দেওয়ার সময় হয়ে গেছে, কালকেই মনোনয়ন দিবে, আর আমার বিরুদ্ধে কেউ মনোনয়ন নিবে না, সে সাহস কারো হয়নি।তাই ধরে নাও আমি ই আবার এম পি হয়ে গেলাম!”
-“এইবার এই আশা বা স্বপ্ন জেগে বা ঘুমিয়ে কোনোভাবেই দেখবেন না।আপনাকে আমি আর এম পি এর আসনে বসতে দিবো না। কেউ থাকুক বা না থাকুক আপনাকে আমি আর ঐ চেয়ারে বসে থেকে অন্যায় করতে দিবো না।”
-“তোমার এত বড় বড় কথা আমি দেখে নিবো। একটা বার আমাকে আবারো এম পি হতে দাও তারপর তোমাদের সবকটার খবর আমি নিজ হাতে করবো।আর এমন করবো যা তোমরা কল্পনাও করতে পারছো না!”
-“আর আপনার হালও আমি এমন করবো যা আপনি কল্পনা করতে পারছেন না!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাগুলো বলে চলে লাজ এই কথাটা বলল, তাতে ফারিদ তাকদিয়ার পিছনে ফিরে তাকায়। লাজ শয়তানি হাসি দিয়ে ওনার কাছে গিয়ে দারিয়ে কফির মগে আরো অনেকটা চিনি দিয়ে বলল…..
-“এই কফিটা যেমন বেশী মিষ্টির জন্য খেতে পারবেন না তেমনি আপনার বেশী স্বপ্ন থাকার জন্য ঐ চেয়ারেও আর বসতে পারবেন না।”
লাজ সেখান থেকে চলে আসলে ফারিদ তাকদিয়ার নিজের কফির মগটা ফ্লোরে ফেলে দেয়।
লাজ নিজের রুমে আসতেই দেখে ফারাজ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।লাজ বোঝতে পারলো ফারাজ কিছু ভাবছে,লাজ ওর মন ঠিক করার জন্য পাশে গিয়ে বসলো।তারপর গলা কাশি দিয়ে বলল….
-“এই চাঁদ মুখ খানায় গ্রহন কেন লেগে আছে?”
লাজের কথা শুনে ফারাজ ওর দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিল।লাজ বলল….
-“ফারাজ,এভাবে চিন্তা করলে কিছু হবে না।আমাদের কে কিছু একটা করতেই হবে।ওনাকে এমপি হতে দেওয়া যাবে না।”
-“আমি এটাই ভাবছি কিন্তু কি করবো সেটাই বোঝতে পারছি না, আমরা কেন ওনার পর্দা সবার সামনে ফাঁস করছি না।”
-“ওনাকে এত সহজ শাস্তি তো আমি দিবো না, ওনি যা পাপ করছেন তার শাস্তি এত সহজে পেতে দিবো না।”
-“তাহলে কি করবে তুমি?”
-“কাউকে না তো কাউকে ওনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে মনোনয়নের জন্য। কিন্তু কাকে দাঁড় করাবো?”
-“তুমি নিজেই দাঁড়াবে!”
ফারাজের কথা শুনে লাজ চমকে উঠে, সে ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ বলে….
-“আমি যা বলছি তাই হবে, তুমিই দাঁড়াবে।তুমি ছাড়া আমি অন্য কাউকে দেখতে পারছিনা যে কিনা বাবা-র বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”
-“আরে এটা হয়না আমি এই চেয়ারের যোগ্য নয় আর সেই যোগ্যতা আমার মাঝে নেই।”
-“বাবা-র মতো একটা লোক যদি ঐ চেয়ারে বসতে পারে তাহলে তুমি কেন পারবে না।তোমার যোগ্যতা আছে,তোমার সাহস তোমার রাগ তোমার নরম মন সবকিছু ই আছে যা যা দরকার।”
-“কিন্তু…”
-“আর কোনো কিন্তু আমরা শুনতে চাচ্ছি না। যদি তুমি তোমার প্রতিশোধ আর সবার সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি দিতে চাও তাহলে তোমাকে এটা করতেই হবে। আর আশা করি জনগনও তোমাকেই সার্পোট করবে। তুমি এ কয়েকমাসে সবার সামনে কিছুটা হলেও ওনার মুখোশ খুলতে পেরেছো।”
লাজের কিন্তু বলার পর তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মাহেরা তাকদিয়ার রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাগুলো বলল। ওনার সাথে ফারিনও এসেছে। ফারিন কান্না করতে করতে বলল…..
-“ভাবী,প্লিজ তুমি এখন আর এখান থেকে সরে এসো না৷ এখন যদি তুমি সরে আসো তাহলে পরে আর সুযোগ আশা করা যাবে না। কারণ একবার যদি বাবা আবারো এমপি হয়ে যায় তাহলে শত চেষ্টা করলেও ওনাকে কিছু করা যাবে না।সবকিছু টাকা দিয়ে ধামা চাপা দিয়ে দিবে।”
-ফারিন যা বলছে একদম ঠিক বলছে, মনোনয়ন যদি ওনি একাই পায় তাহলে ওনি এমপি নিশ্চিত তারপর ওনার নোংরা খেলা আবার শুরু হবে।”
ফারাজ লাজের সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল। লাজ কি করবে বোঝতে পারছে না। সে এক দুটানায় পরে গেল।
লাজ শুয়ে শুয়ে কথাগুলো ভাবছিল তখনই ফারাজ ঘুমের মাঝে ওকে জড়িয়ে ধরলো। লাজ ফারাজের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে,”কতটা ভুল ভেবেছিলাম তোমাকে, মনে করেছিলাম তুমিও তোমার বাবার মতোই অমানুষ কিন্তু আমি ভুল। তুমি তোমার বাবার মতো না৷ তুমি যে অনেক ভালো, নিজের বাবার অন্যায়ের শাস্তি দেবার জন্য, মানুষদের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য এতকিছু করছো। আমার এখন তোমাকে নিয়ে গর্ব হয়, আই লাভ ইউ ফারাজ!”
-“এত রাতে আমাকে নিয়ে ভাবলে আবারো নতুন করে প্রেমে পরে যাবে। তারপর যা হবে তাতে আমার কোনো দোষ থাকবে না কিন্তু বলে দিলাম।”
ফারাজের কথা শুনে লাজ কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে জিজ্ঞেস করলো….
-“তুমি জেগে আছো?”
-“এভাবে তাকিয়ে থাকলে ঘুমের ঘোরে আর কি করে থাকি বলো? তখন তো শুধু ইচ্ছে করে তোমাকে আদর করতে।”
-“শুরু হয়ে গেছে ওনার ডং, ঘুমাও!”
ফারাজের কথা লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ না করে একটু রাগ দেখিয়ে কথাটা বলল।ফারাজ লাজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে কিস করে বলল…
-“ডং তুমি করছো, ভালোবেসেও আদর করতে দিচ্ছো না!কিন্তু আমি জোর করবো না,তুমি যেদিন বলবে সেদিনই হবে সবকিছু।”
পরদিন সকালবেলা, লাজ আর ফারাজ মাহেরা তাকদিয়ার কে সালাম করে বেড়িয়ে পরলো। লাজ কাল সারারাত ভেবে দেখলো ফারাজের বলা কথাগুলোতে যুক্তি আছে।তাই সে রাজি হয়ে গেল, আজকে তারা মনোনয়ন আনতে যাচ্ছে। ফারাজের গাড়ি চালাচ্ছিল আর লাজের সাথে টুকটাক কথা বলছিল। হঠাৎ করে একটা গাড়ি সামনে আসতেই ফারাজ এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচতে অন্যদিকে ঘুড়াতেই গাছের সাথে ধাক্কা খায়। ফারাজ মাথায় একটু ব্যাথা পায়, ফারাজ রাগে গাড়ি থেকে বের হতেই কতগুলো লোক ওদের সামনে চলে আসে।প্রতিটা লোকের হাতে হকিস্টিক।ফারাজ তাদের হাতের হকিস্টিক দেখেই বোঝতে পারলো এগুলো তার বাবার পাঠানো লোক।লাজ গাড়ি থেকে বের হলে ফারাজ বলে,”লাজ তুমি গাড়িতে বসো, তুমি গাড়ি থেকে বের হবে না। এগুলো বাবার লোক।”
-“ফারাজ হাতে সময় কম আমাদের কে তারাতাড়ি যেতে হবে।”
লাজের কথা শেষ হতে না হতেই একটা হকিস্টিক এসে লাজের লাজের কপালে লাগে সাথে সাথে কপাল ফেটে রক্ত পরতে লাগে।লাজ নিজের কপাল হাত দিয়ে গাড়িতে হেলে যায়। ফারাজের রাগ উঠে গেল সে এক এক করে সবকটা কে মারতে লাগলো। হঠাৎ করে একটা স্টিক দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। ফারাজের মাথা ফেটে রক্ত পরতে লাগে সাথে মাথাও চক্কর দিতে লাগে।লাজ দৌড়ে ওর কাছে যেতে নিলে ফারাজ বলে…
“লাজ আজকে আমার যা কিছুই হয়ে যাক না কেন? তুমি আমার কাছে আসবে না। তুমি পালাও,তোমাকে৷ আজকে মনোনয়ন আনতেই হবে।”
লাজ ফারাজের কথা না মেনে কাছে আসতে নিলে ফারাজ বলে,”এটা তোমাকে দেওয়া আমার প্রথম আদেশ, আমার ভালোবাসার আদেশ। তোমাকে আজকে এখান থেকে যেতেই হবে।”
লাজ আর কোনো উপায় না পেয়ে কপালে হাত দিয়ে দৌড়তে লাগে। একদিকে ফারাজ অন্য দিকে ফারাজের আদেশ। সে দৌড়তে দৌড়তে নির্বাচন অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়েরা সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু লাজকে এমন অবস্থা দেখে সে জিজ্ঞেস করে….
-“তোর এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে তোর? আর ফারাজ কোথায়?”
-“আগে বল সময় কতটুকু আছে?”
-“সময় খুবই কম আছে, তুই এমন অবস্থা নিয়ে ভিতরে যেতে পারবি!”
-” এতটা পথ যখন আসতে পেরেছি এতটুকুও পারবো।”
লাজ আর কোনো কথা না বলে দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। ফারিদ তাকদিয়ার ওকে দেখে চমকে উঠে। লাজ ওনার পাশ কাটিয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর বাহিরে ফিরতেই ফারিদ তাকদিয়ার শয়তানি হাসি দিয়ে ওর কাছে গেল। তারপর বলল….
-“আহ, বড্ড আফসোস!এতকিছু করেও কোনো ভাবে মনোনয়ন টা আর পাওয়া হলো না। কি করবে বলো, সব আশা তো আর পূরন হয় না।আর তুমি তো ব্রাম্মন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চেয়েছিলে তাই এমন হয়েছে। তো তোমার প্রানের স্বামী কোথায়? তাকে কি এতক্ষণে মেরে দিয়েছে? যায় হোক শুকরিয়া আদায় করো তুমি এখনো বেঁচে আছো, তোমার স্বামীর সাথে তোমাকে উপরে যেতে হয়নি।”
ফারিদ তাকদিয়ার কথাটা বলেই একটু মুচকি হাসি হাসতে লাগলো। লাজের আর সহ্য হলো না, ওনার মতো অমানুষের কথা লাজ আর সহ্য করতে পারলো না। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো, আর নিজের হাত টা কষিয়ে বসিয়ে দিলো ফারিদ তাকদিয়ারের গালে। ঠাস শব্দ হয়ে পুরো অফিস স্তব্ধ হয়ে যায়। চারদিকের মানুষ কথায় ব্যস্ত ছিলো কিন্তু থাপ্পড় এর শব্দে সবাই চুপ হয়ে যায়। সবাই এখন তার দিকে তাকিয়ে আছে, মনোনয়নের খবর নিতে আসা প্রেসের লোক গুলোও এখন তাদের দিকে ক্যামেরা ধরে আছে।
#চলবে!!!