দু’মুঠো প্রেম পর্ব-০৬

0
4039

#দু’মুঠো_প্রেম
#ফারজানা_আফরোজ

সকালের মিষ্টি বাতাস এসে পড়ল ফয়সালের গায়ে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো পাঁচটা চল্লিশের বেশী বাজতে চলেছে। হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল বাহিরের দিকে। রাতে বৃষ্টি হওয়াতে এখনও বেশ থমথমে আছে পরিবেশ। সারারাত জেগে আদিবার ধ্যানে মগ্ন ছিল সে। কিভাবে যে রাত পেরিয়ে সকালের আলো ফুটতে চলেছে সে দিকে কোনো খেয়াল ছিল না তার। এই প্রথম সারারাত ধরে সে সাতটা সিগারেট শেষ করেছে যেখানে দুই ঘণ্টায় এক প্যাকেট শেষ করে সে। মনে মনে শান্তি শান্তি ভাব নিয়ে জানালা অফ করে দিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা দিল। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরেই নিজের রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তার উদ্দেশ্য এখন আদিবার বাসায় যাওয়া। কলেজ থেকে সব ইনফরমেশন নিয়েছে সে। বাইক চালিয়ে এসে দাঁড়ালো আদিবার বাসার সামনে।

ফজরের নামাজ আদায় করে সকালের শান্তিময় ছোঁয়া গায়ে মাখার জন্য ছাদে দাঁড়িয়েছিল আদিবা। ছাদের এক কোণে পানি জমে থাকায় তার দুষ্টু মন নাচতে শুরু করলো, ফিসফিস করে বলল,

– আদু দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বৃষ্টির পানিতে নেমে পড়। রাতে বৃষ্টি বিলাস করিসনি তো কি হয়েছে বৃষ্টির পানি তো তোর পায়ের নিচে ঠিকই আছে। লাফালাফি করতে তো বারণ নেই।

আদিবা পানির নিচে দাঁড়িয়ে লাফাতে লাগলো। তার শরীর অর্ধেক ভিজে একাকার হয়ে গেছে। দূর থেকে আদিবার দুষ্টুমি দেখে হাসছে ফয়সাল। তার বড্ড ইচ্ছা করছে আদিবাকে ছুঁয়ে দিতে। গোলাপের মত ঠোঁট দুটি একবার স্পর্শ করতে। হঠাৎ একজন মাঝ বয়সী লোক এসে দাঁড়ালো ফয়সালের সামনে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি ফয়সালকে দেখে ভীষণ বিরক্ত।

– কি চাই?

– তেমন কিছু না আংকেল।

ধমকের সুরে বলল লোকটি,

– তাহলে আমার বাসার সামনে এসে আমার মেয়ের দিকে কু-নজরে তাকাচ্ছ কেন? রাজনীতি করো বলে আমার বাসায় এসে আমার মেয়েকে বিরক্ত করবে আর আমি চোখ বুজে সেসব সহ্য করবো ভাবলে কিভাবে?

ফয়সালের বুঝতে বাকি নেই লোকটি কে। আদিবার বাবার দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল,

– এইজন্যই তো বলি দুই বোন এত সুন্দর, কিউট হওয়া সত্বেও ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথা কেন বলে। সব সময় ঠোঁটের কোণায় ঝগড়া লাগার জন্য স্পেশাল কথাবার্তা ঠোঁটে লেগেই বা কেন থাকে? আজ বুঝলাম যাদের বাবা এমন তারা কি করে আর ভালো হবে। শশুর মশাইকে দেখেই বুঝে যাচ্ছে মেয়েগুলোর আচার আচরণ উনার মত তবে দেখতে মনে হয় শাশুড়ি মায়ের মত হয়েছে। আমার শাশুড়ি মা মে বি অনেক সুন্দর।

ফয়সালের বিড়বিড় বুঝতে না পেরে আবারো জোরে ধমক দিয়ে বলল আদিবার বাবা,

– কি হলো কথা বলছো না কেন? বিড়বিড় করে কি বলছো? এক্ষুনি আমার বাসার সামনে থেকে চলে যাও তা-নাহলে তোমার খবর আছে।

রাগে গজগজ করতে করতে বাসায় চলে গেলেন আদিবার বাবা। শশুর মশাইয়ের যাবার পানে তাকিয়ে থেকে শব্দ করেই বলল ফয়সাল,

– জন্মের সময় আমার দাদী শাশুড়ি উনার মুখে মধু দেননি এই কারণেই এমন রগচটা হয়েছেন সাথে করে আমার ভবিষ্যত্ বউ আর শালীকেও বানিয়েছেন। আমার সুন্দরী শাশুড়ি মা কোন দুঃখে যে এই লোকটাকে বিয়ে করলো কে জানে? অন্য কোথাও বিয়ে হলে আমার কি ভালো একটা শশুর হতো। দুঃখে ইচ্ছা করছে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিষ খেয়ে হয় নিজে মরি নয় উনাকে মারি।

বাইক স্টার্ট করে একবার ছাদের দিকে তাকিয়ে থেকে ফ্লাই কিস দিয়ে চলে গেলো ফয়সাল। আদিবা এইসবের কিছুই জানে না সে তার মতো লাফালাফি করতে ব্যাস্ত।

আদিবার বাবা বাসায় এসেই ঝগড়া করতে শুরু করে দিলেন উনার স্ত্রীর সাথে।

– বাসার নিচে আজকাল রাজাকারের বাচ্চারা ঘুরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে। কবে না জানি আমার বাসায় আঘাত হানে। আজকের পর থেকে আমার মেয়ে দুটোকে বলবে তারা যেন ছাদে উঠে নাচানাচি না করে। তুমি যেমন আগে লাফালাফি করে আমার মনকে নাচিয়েছ এখন তোমার মেয়েও লাফালাফি করে রাজাকারের বাচ্চাদের নাচাচ্ছে। সকাল হতে না হতেই বাসায় এসে বদ নজর দেওয়া শুরু করেছে।

– বুড়ো বয়সে বিমরতি হলে যা হয় আর কি। ওই ক্ষুধা লাগছে তোমার? পেটে বেশি টান পড়লেই বাজে বকো তুমি। কেন যে তোমার মত পেটুক বদমেজাজি লোকের সাথে প্রেম করেছিলাম। এখন দেখি ছেলে মেয়ে প্রেম করলে কত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়, শপিং করায়, গিফট দেয় আর তুমি কি দিয়েছো আমায়? ঘুরাঘুরির কথা উঠলেই বলো , তোমার বাবার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে এনেছি ঘুরাঘুরি হয়নি তোমার? যাও তাহলে বাবার বাড়ি ঘুড়ে আসো। শপিংয়ের কথা বললে বলো, শপিং করে করে তো আমাকে ফকির বানিয়ে ফেলছ। গিফটের কথা বললে বলো, দুইটা বাচ্চা গিফট করেনি? আরো চাও। এই তোমার মত আনরোমান্টিক লোকের সাথে প্রেম করে আমার জীবন তেজপাতা বানিয়ে ফেলছি।

শুরু হয়ে গেলো আদিবার মার ঘ্যানঘ্যান। সোফায় বসে চুপচাপ স্ত্রীর বকবক শুনছেন আর খবরের কাগজ পড়ছেন। মনে মনে বড্ড আফসোস করছেন কেন এই মহিলার প্রেমে পড়লেন আর কেনই বা আজকে কথা বলতে এলেন। এক সপ্তাহ ধরে এখন শুনতে হবে স্ত্রীর চেঁচামেচি। বাঘ হতে এসে বিড়াল হয়ে পড়লেন এখন।

______________________

দুই বান্ধবী হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল কলেজের উদ্দেশ্য। পার্কের কাছে আসতেই বাইকে হেলান দিয়ে আধশোয়া ফয়সালকে দেখে অরিনের হাত চেপে ধরলো আদিবা। এই লোকটাকে দেখলেই তার ভয় হয়, ঘৃনা হয়, রাগ হয়। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ফয়সাল আদিবার হাত চেপে ধরলো। আদিবার পুরো শরীর এইবার কাঁপতে লাগলো। তোতলিয়ে বলতে লাগলো,

– হা হাত ধ ধরেছেন কেন?

– কিছু কথা বলব।

– অপমান করবেন আবারো?

– একটু সাইডে চলো কিছু কথা আছে।

আদিবা পার্কের চারপাশটা দেখে শিউরে উঠলো। এমন পরিবেশে কোনো ছেলের সাথে পার্কে জায়গা মানেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। সাহস জুগিয়ে বলে ফেলল,

– যাবো না কোথাও? যা বলার এইখানেই বলেন।

– প্রেমময় মুডে আছি। দয়া করে রাজনীতিবিদ ফয়সালের মুড ধারণ করতে বলো না। চুপচাপ চলো জাস্ট কিছু কথা বলব ।

আদিবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ফয়সাল। পিছন পিছন অরিন আসতে নিলেই ফয়সাল বলে উঠলো,

– তোমাকে কেউ আসতে বলেছে? দেখতেই পাচ্ছো আমরা রোমান্স করতে যাচ্ছি কাবাব মে হাড্ডি হতে এসো না।

অরিন দাঁড়িয়ে পড়লো। এত্ত বড় অপমান কিছুতেই সে মানতে পারছে না। কিন্তু ফয়সালকে কিছু বলার সাহস তার নেই সেইজন্য চুপচাপ পার্কের এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো।

গাছের আড়ালে দাঁড়ালো ফয়সাল ও আদিবা। ফয়সালের দৃষ্টি আদিবার গালের সেই তিলের উপর।

– কি বলবেন?

– সরি।

আদিবা যেন আকাশ থেকে টপকে মাটিতে পড়ল মনে হয়। ফয়সাল তাকে সরি বলছে তার যেন বিশ্বাসেই হচ্ছে না। আবারো নিজের কাননে বিশ্বাস করানোর জন্য বলল,

– কি বললেন?

– সরি। সেদিন তোমাকে ঐভাবে না বললেই হতো।

– অপমান করেছেন একশো লোকের সামনে আর সরি বলছেন চুপিচুপি। করবো না ক্ষমা আপনাকে।

– সমস্যা নেই। বাই দা ওয়ে তোমার গালের তিলটা কি আসল নাকি আসল?

– যত্তসব। তিল নকল হতে যাবে কেন? চোখে কি দেখেন না এখন। দেখবেন বা কি করে বয়স তো আর কম হয়নি। বিয়ে করলে দশ বাচ্চার বাপ হয়ে যেতেন এতদিন।

– তুমি বললে দশটা কেন একশো বাচ্চার বাপ হতে পারবো। সামলাতে পারবে এতগুলো বাচ্চা?

– ছিঃ অসভ্য লোক। লজ্জা করে না, নিজেই ছেলেদের বলুন মেয়েদের বিরক্ত না করতে এখন নিজেই করছেন। আপনার আসল মুখোশ বলে দিবো সবাইকে।

– বলে দেও সমস্যা নেই। কেউ ট্রাস্ট করবে না তোমার কথা।

– অসভ্য লোক। কোন দুঃখে যে আপনার সাথে দেখা হলো আমার……

আদিবার কথা শেষ হতে না হতেই ফয়সাল এমন একটি কাজ করে বসলো যার জন্য আদিবা পুরো কথা আর বলতে পারলো না। হঠাৎ করেই ফয়সাল আদিবার সেই তিল ওয়ালা গালে কিস করে বসলো। চোখ থেকে দু এক ফোঁটা করে পানি গাল বেয়ে পড়লো আদিবার। বিয়ের আগে এমন কিছু হোক সে আশা করেনি। জড়িয়ে ধরা, হাতে টাচ্ করা, মাঝে মধ্যে দু একটা কিস এইসবের কারণে জীবনে প্রেম করেনি। ফ্রেন্ডের কাছে শুনেছিল প্রেম হলেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে এমন ঘনিষ্ট হতে হয় সেই কারণে প্রেম নামক শব্দ থেকে হাজার হাত দূরে থাকতো সে। আর এখন,,,, ভাবতেই ওর দু চোখ পানিতে ভরপুর হয়ে উঠলো……

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল বানানগুলো ধরিয়ে দিবেন।