পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৩৮+৩৯

0
5556

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৩৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। খামচে ধরেছে ফারহাজ এর শার্ট। ফারহাজ বার বার ফিহাকে শান্ত করার চেস্টা করে যাচ্ছে। ফারহাজ কিছুটা মৃদু গলায় বলে উঠে– ফিহু! এই ফিহু! শান্ত হোও আমাকে বলো কি হয়েছে। কিন্তু ফিহা থামার বদলে আরো জোড়ে কেঁদে যাচ্ছে। ফারহাজ এইবার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে এইবার কিছুক্ষন বেশ কড়া করে বকে দিতে। বেদ্দপ মেয়ে টা কী বুঝে নাহ তার প্রতিটি চোখের জল ফারহাজ এর বুক টা ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। ফারহাজ এইবার নিজের থেকে থেকে ফিহাকে ছাড়িয়ে কিছুটা শান্ত সুরে বলে উঠে– ফিহু! আমি অনেক্ষন ধরে তোমার এই কান্না সহ্য করছি! আই সোয়ার আর এক ফোটা জল চোখ থেকে পড়লে এর শাস্তি পেতে হবে। আর তুমি জানো এই শহরে কড়া পুলিশ অফিসার হিসেবে আমার যথেস্ট নাম ডাক আছে। ফারহাজ যেনো শান্ত কন্ঠে বড়-সড় একটা হুমকি দিয়ে দিলো ফিহাকে। ফিহা কান্না থামিয়ে দিলোও বার বার হিচকি তুলে যাচ্ছে। ফারহাজ ফিহার গালে হাত দিয়ে — ফিহু! এই ফিহু! আমাকে বলো তোমার সমস্যা টা কী? তুমি নাহ স্ট্রং গার্ল এইভাবে কেঁদো নাহ আমার দিকে তাঁকাও! প্লিয লুক এট মি!

ফিহা ফুপাতে ফুপাতে ফারহাজ এর দিকে অস্রুমাখা কন্ঠে বলে উঠে—আমার সমস্যা তো আপনি লাটসাহেব! আপনাকে হারানো বড্ড ভয় করে বড্ড!
মনে হয় এখুনি কেউ এসে আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে। তখন আমি কি করে থাকবো? আমি তো এইকয়দিন ই আপনাকে আমার সবটুকু ভেবে ফেলেছি।

ফারহাজ নিজের কপালে সাথে ফিহার কপাল ঠেকিয়ে ঘোর মিশ্রিত বলে উঠে- ডোন্ট ক্রাই!
ইউ নো নাহ! ফারহাজ মির্জাকে তার পুচকির থেকে সহজে কেউ আলাদা করতে পারবে নাহ। ফারহাজও যে তার পুচকি কে এই কয়দিন নিজের জীবনের অনেকটটুকু অংশ মনে করে ফেলেছে।

ফারহাজ এর এই ঘোর মিশ্রিত কন্ঠ শুনে ফিহার মনে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। ফিহা কিছুটা দম নিলো। শ্বাস নিতে কেনো যেনো প্রচন্ড কস্ট হচ্ছে। সে ফারহাজ এর বুকে লেপ্টে রইলো। ফারহাজ তার হাত জোরা দুটো দিয়ে ফিহার চোখের জল টুকু মুছে ফেলে। নিজের সাথে মিশিয়ে ফিহাকে শান্ত করে তুলে। ফারহাজ বুঝতে পারলো নাহ সে কেন এইসব বললো কিন্তু তার মনে যা এসেছে সে তা ই বলে দিলো।

এদিকে।

ইরিনা ভয়ে হাত- পা কাঁপছে। কেননা আহান তার দিকে রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে আছে।

আহানঃ নিজের প্রাক্তন প্রেমিককে ফোন করছিলে বুঝি ইরিমনি!

ইরিনাঃ নাহ মানে! আসলে।

আহান পিছন থেকে ইরিনার হাত মুচড়ে ধরে।

ইরিনা ব্যাথায় কান্না করে উঠে।

আহান শয়তানি হাঁসি দিয়ে বলে উঠে—
জানেমান! আহান এতো কাঁচা কাজ করেনা বুঝেছো? তুমি কী কি করতে পারো সব ধারণা আছে।

আহান এতো জোড়ে ইরিনার হাত ধরেছে। হাত টা পুরো লাল হয়ে গেছে।

ইরিনাঃ প্লিয ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি!৷( কাঁদতে কাঁদতে)

আহানঃ ব্যাথা পাচ্ছো আমার জানেমন
এই বলে আহান আরো জোড়ে ইরিনার হাত চেপে ধরে।

আহানঃ আগেও বলেছি আমার সাথে চালাকি করতে আসবে নাহ।

এই বলে আহান ইরিনাকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

রেনু বেগম পান মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই ফিহা তার রুমে প্রবেশ করে!

ফিহাঃ ভয়ংকরী দিদা! আমাকে ডেকেছিলে??

রেনু বেগম হেঁসে বলে উঠে—
আমার ফিহু দিদিভাই! আসো আমার কাছে এসে বসো দেখি!

ফিহা বুঝতে পারলো নাহ হঠাৎ তাকে এতো আদর করে ডাকা হচ্ছে কেন? ফারহাজের দাদি ও মা ও৷ কিছুটা অবাক হলো।
কিন্তু তাও ফিহা রেনু বেগমের কাছে গেলো।

রেনু বেগম ফিহার কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে—
দিদিভাই! বলো তো তোমাকে এখন কেন ডেকেছি?

ফিহা কিছুটা ভাবনা চিন্তা করে বলে উঠলো–
তোমার মনে হয় এখন ঝগড়া করার মুড তাইনা দিদা? তাই তুমি আমাকে ডেকেছো ঝগড়া করতে।বাট এখন আমার একদম সময় নেই। পড়তে বসতে হবে।

ফিহার এরুপ বোকা কথা শুনে রেনু বেগম না হেঁসে পারলো নাহ।

রেনু ঃ নাহ নাতবউ! এখন ঝগড়া করতে তোমাকে আমি ডাকেনি। তোমাকে একটা বিশেষ উপহার দিবো।

ফিহাঃ বিশেষ উপহার? ( অবাক হয়ে)

রেনুঃ হুম বিশেষ। এই বলে রেনু বেগম একটা বালাজোড়া বের করে ফিহার হাতে পড়িয়ে দিলো।

রেনুঃ তুমি তো বাড়ির বড় নাত বউ! এই বালা তোমার হাতেই সোভা পায়।

আমারই দোষ আমারই উচিৎ ছিলো যেদিন তোমার মুখ প্রথম দেখছিলাম সেদিনই তোমাকে এই বালা জোড়া টা পড়িয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো

ইরাঃ রেনু আপা এইটা তো আমার শ্বাশুড়ির বালাজোড়া।

মিসেস প্রিয়া এইবার তাড়াতাড়ি রেনু বেগমের কাছে এসে বলে উঠে—

কিন্তু ফুপু! এইটা তো ইরিনার জন্যে মা রেখেছিলো। আপনি কি করে এই মেয়েটাকে পড়াতে পারেন?

রেনু বেগম ঃ দেখো! এই বালাজোড়া আমার মায়ের ছিলো। আমার মা এই বালাজোড়া আমাদের ফারহাজ এর বউ এর জন্যে রেখেছিলো আর ফিহা যখন এই বাড়ির বউ। সুতরাং এই বালাজোরার উপরে ফিহারই অধিকার আছে।

রেনু বেগমের কথা শুনে মিসেস প্রিয়া কিছুটা দমে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন নাহ একদিনেই কি করে রেনু বেগম বদলে গেলেন।

মিসেস ইরাও কিছুটা অবাক! ফিহা তো খুশি তার ভয়ংকরি দিদা তাকে এখন পছন্দ করতে শুরু করেছে।

লেকের এক কিনারে বসে আছে ইশিকা ও নেহাল।
ইশিকা এখানে আসতেও চাইনি বরং নেহাল তাকে জোড় করে এখানে এনে বসিয়ে রেখেছে।
ইশিকা ছিলো বড্ড মিস্টি সকলের সাথে হাঁসি আড্ডা করেই তার সজ্ঞী ছিলো। নেহালের সাথে তার রিলেশন ছিলো ২ বছর আগে। নেহাল তার ভার্সিটির সিনিয়র ছিলো। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। তার বাবা ছিলো সামান্য চাকরিজীবি।
কিন্তু ইশিকার বাজে অভ্যাস ছিলো সে প্রায় নাইট ক্লাব করতো। যা নেহালের পছন্দ ছিলো নাহ.। এই নিয়ে প্রায় দন্দ হতো তার ইশিকার সাথে। এক পর্যায়ে তাদের মাঝে দন্দ শুরু হয়। নেহাল চলে যায় ইশিকাকে ছেড়ে। সেসময় ইশিকা একেবারে ভেজ্ঞে পড়ে। সে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে ফেলে।

ইশিকাঃ সমস্যা কী তোমার???
আমাকে এখানে এনেছো কেন??

নেহাল অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকায় ইশিকার দিকে। আজ নিজের কাছে নিজেকে অনেক অপরাধী লাগছে।

নেহালঃ আমি জানি! আমি তোমার চোখে অপরাধী কিন্তু বিশ্বাস করো! আমিও ভালো ছিলাম নাহ। আমিও তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।

ইশিকাঃ তোমার এই নাটক শেষ ! অনেক দেখে ফেলেছি নেহাল।

এই বলে ইশিকা উঠে যেতে নিলে নেহাল তার হাত ধরে ফেলে

নেহালঃ ইশু প্লিয যেও নাহ! আমার কথাটাতো শুনো। তারপর যদি তুমি চলে যেতে চাও তো যেতে পারো। আসলে আমি ছিলাম মধ্যবিত্ত তোমার বাবা কোনোদিন আমাকে মেনে নিবে নাহ। তাই আমি চেয়েছিলাম একটা ভালো জব পেয়ে তোমার সামনে তোমার বাবার সামনে দাঁড়াতে। আর আজকে দেখো আমার গাড়ি বাড়ি সব আছে।

ইশিকা চুপ হয়ে যায়।

ফারহাজ কেবিনা হেলান দিয়ে বসে আছে। সামনে রুপ কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে।

রুপঃ স্যার সত্যি বুঝতে পারছি নাহ। আপ্নার কালেক্ট করা ড্যাটা কী করে চুরি হয়ে গেলো। বাট আমার মনে হয় এইটা ক্রিমিনালদের গ্যাং দের মধ্যেই কেউ করেছে।

ফারহাজ উঠে দাঁড়িয়ে রুপের চারপাশে ঘুড়তে ঘুড়তে বলে উঠে—

ঠিকই বলেছে যে এই কাজ টা করেছে সে গ্যাং এর ই কেউ। গ্যাং লিডার প্রচন্ড চালাক না হলে আমার বিশ্বস্ত কাউকেই আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করায়।

রুপ কিছুটা ঢক গুলে বলে উঠে–

মানে??

ফারহাজ কিছুটা বাঁকা হেঁসে বলে উঠে—
কেনো রুপ? বুঝতে পারছো নাহ?
কী ভেবেছিলে? তুমি আমার বিরুদ্বে তুমি সব ইনফোর্মেশন আহান আহমেদ কে দিবে আমার ড্যাটা চুরি করবে
আর আমি কিছুই বুঝবো নাহ? এমনি এমনি কি আর পুলিশের অফিসার হয়েছি?

।।।।।।।চলবে!

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৩৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আচ্ছা লাটসাহেব এর মধ্যে এমন কি আছে? যে বার বার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করছে এখুনি তার কাছে ছুটে যাই খানিক্টা লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো ফিহা। রেনু বেগম কথাটি শুনে না হেঁসে পারলো নাহ। আসলে এই কয়দিন বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে রেনু বেগম ও ফিহার মাঝে।
তিনি ফিহার থুতনি উচু করে বলে উঠেন– আমার ফারহাজ দাদাভাই এর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে যার কারনে তুই বার বার তার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছিস। বলতে গেলে প্রেমে পড়েছিস।
আমার ফারহাজ দাদুভাই হলো হিরের টুকরো ছেলে… কত কত মেয়ের সে স্বপ্নের পুরুষ বল তো? কথাটা শুনে মোটেও পছন্দ হলো নাহ ফিহার। হ্যা এইটা ঠিক ফারহাজ মানুষটা বিশেষ কিন্তু শুধুমাত্র ফিহার কাছে অন্য কোনো মেয়ের কাছে কেনো হবে। রেনু বেগম ফিহার অবস্হা বুঝতে পেরে ফিহার হাত দুটো নিজের হাতে রেখে বলে উঠে– আমার ফিহা দিদিভাই বুঝি রাগ হয়েছে?? ফিহা মুখটা বেঁকিয়ে বলে উঠে– আমার কোনো রাগ হয়নি হুহ।
রেনু বেগম– আমি জানি কিছু পুড়ছে..আসলে স্বামী তো পুড়বেই। কিন্তু দিদিভাই ফারহাজ তো শুধু তোর এইটা কি তুই বুঝিস নাহ? সে যে তোকে ভালোবাসে।
রেনু বেগমের কথা শুনে ফিহা অবাক চাহুনিতে তার দিকে তাঁকায়। ফিহা অবাক সুরে বলে উঠে–
ভালোবাসে আমাকে? কিন্তু কীভাবে? অই পচাঁ লাটসাহেব তো সারাদিন আমাকে শুধু বকেই একটুও
আদর করেনা। গালে একটা চুমুও খায়না সিনেমার নায়কদের মতো বলেই মুখ ফুলিয়ে ফেললো ফিহা।
রেনু বেগম ফিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে–
হয়তো আমার ফারহাজ দাদাভাই এর ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম অন্যরকম। তুই খেয়াল করেছিস? ফারহাজ দাদাভাই তোকে সবসময় প্রটেক্ট করার চেস্টা করে তোর অযত্নের কোনো কমতি রাখে নাহ। তোকে সর্বদা আগলে রাখার চেস্টা করে।

রেনু বেগমের কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে ফিহা।

রেনু বেগমঃ জানিস তোকে আর ফারহাজকে একসাথে দেখলেই আমার আরিশা আর নিবিড়ের কথা মনে পড়ে যায়।

ফিহাঃ আরিশা আর নিবিড় কে? রেনু দিদা?

রেনু বেগমকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি ভুল বশত কথাটা বলে ফেলেছেন?

ফিহাঃ কি হলো দিদা বলো? কারা এরা?

রেনুঃ তোকে কি করে বলবো দিদিভাই? এরা যে তোর বাবা-মা! হ্যা তুই এই বাড়ির মেয়ে। নিবিড় মির্জার মেয়ে ফিহা মির্জা।
( মনে মনে)

রেনু বেগম এক প্রকার এড়িয়েই গেলো বিষয়টা।

এসি চালু থাকা অবস্হায়ও তরতর করে ঘামছে রুপ।ফারহাজ রুপের অবস্হা বুঝতে পেরে খানিক্টা হেঁসে রুপের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। পানির গ্লাস পেয়ে ঢগঢগ করে পানি খেয়ে ফেলে। রুপ শুধু এইটাই ভাবছে ফারহাজ কী করে জানলো সে আহানকে সব ইনফোর্মেশন দিতো। ফারহাজ রুপকে শান্তনার সুরে বলে উঠে- আমি জানি এখন তোমার মনে একটা প্রশ্ন খুব করে নাড়া দিচ্ছে তাইনা? যে আমি কি কীরে জানলাম? রুপ চুপ হয়ে রইলো।
ফারহাজ নিজের শার্টের হাতা টা গুটিয়ে নিজের চেয়ারে আয়েশ করে বসে বলে উঠে–
আসলে আমার কোথাও একটা খঠকা হচ্ছিলো। আমি যা প্রমাণ কিংবা ক্লু পাই সব কিছুই কী করে উধাও হয়ে যায়? নিশ্চই এর পিছনে আমাদের থানার কেউ জড়িত আছে যে আমার খুব কাছের। যে আমার প্রত্যেকটা মিশনে পাশে থাকে..এমনকি আমার সব ড্যাটা সম্পর্কে ও তার ধারণা আছে। আর এই থানার মধ্যে একমাত্র তুমিই আছো যাকে আমি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতাম তাই আমি তোমাকে আস্তে আস্তে করে সংদেহ করা শুরু করে দেই এবং কিছু লোক দিয়প তোমার সব কাজের নজর রাখি এবং পরশু যখন তুমি আহান আহমেদ এর বাড়িতে গেলে তখনি আমার কাছে সব টা জলের পরিষ্কার হয়ে যায়। আহান আহমেদ এইসব খুনের পিছনে আছে আর পিছন থেকে তাকে সাহায্য করে যাচ্ছো তুমি রুপ। কেনো করেছো এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা রুপ আন্সার মি! ( চিৎকার করে)

ফারহাজ এর চিৎকারে পুরো থানার সকলে ভয়ে শিউরে উঠে।

তারা অনেকেই জানে নাহ ভিতরে রুপ এবং ফারহাজ এর মাঝে কি এমন কথা হচ্ছে তা সম্পর্কে কারো বিন্ধুমাত্র ধারণা নেই। কিন্তু এইটুকু বুঝা যাচ্ছে কোনো একটা কারণে ফারহাজ রুপের উপর রেগে আছে।

রুপকে চুপ থাকতে দেখে ফারহাজ আরো রেগে গেলো কিন্তু তবুও ফারহাজ শান্ত সুরে বলে উঠে–

রুপ তুমি কী চুপ থাকবে নাকি? তোমার কি কিছু বলার নেই??

রুপ এইবার মুখ খুলে—
আসলে আমি টাকার লোভে পড়ে গিয়েছিলাম।
আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার।

ফারহাজ এইবার রুপের কলার চেপে ধরে বলে উঠে–
ক্ষমা তাও তোমার মতো প্রতারক কে? সাহস কী করে হলো? আইনের পোষাক পড়ে একজন খুনির সাথে হাত মিলালে? যে কিনা দিনের পর দিন খুন করে যাচ্ছে। লজ্জা করলো নাহ? তোমাদের মতো কিছু অসৎ পুলিশ অফিসারের জন্যেই আজ পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর নাম নস্ট হচ্ছে জনগনের কাছে।

রুপ কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ।

ফারহাজ রুপের কলার ছেড়ে বলে উঠে—

তোমার শাস্তি তো পরে দিবো তার আগে আসল ক্রিমিনালকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জনগনের সামনে হাজির করবো আর সে কাজে সাহায্য করবে তুমি…!

রুপ ঃ মানে? ( শুকনো ঢুক গিলে)

ফারহাজ ঠোট জোড়া দিয়ে বাঁকা করে হেঁসে বলে উঠলো—
মানে হলো কাটা দিয়ে কাটা তুলবো!

সবে মাত্র বাংলাদেশে ল্যান্ড করলেন কিং স্যার। কিং স্যার হেলিক্যাপটার থেকে নামতেই আহান ফুলের তোরা নিয়ে এগিয়ে আসে কিং স্যার এর দিকে।
কিং স্যার হেঁসে ফুলের তোরা টা নিয়ে নেয়। আহান কিং স্যারকে জড়িয়ে ধরে। কিং স্যার ও আহানকে জড়িয়ে ধরে।
শারি বেঁধে কালো পোষাক পড়া কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে কিং স্যার এর সেফটির জন্যে।

আহানঃ কিং স্যার আমি সত্যি হ্যাপি! আমি এখন চলে এসেছেন আমার কোনো চিন্তা নেই!

কিং স্যার ঃ আমি জানি মাই বয়! এখন কি অবস্হা সেইটা বলো?

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

আহানঃ ফারহাজ মির্জা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে। যাকে বলে চালাকি! রুপ কি দিয়ে যেই ড্যাটা গুলো কালেক্ট করেছিলাম সেগুলো সম্পুর্ণ ভুল।

( আরে ভাই হ্যা এই আকাম ফারহাজের 🐸)

কিং স্যার হেঁসে বলে উঠে-বাহ ভালোই তো!
তুমি চিন্তা করো নাহ আহান! শান্ত হও। শান্ত মাথা রেখে সব কাজ করতে হবে। অশান্ত হবে নাহ।আপতত আমি অনেক টায়ার্ড! হোটেলে যাওয়া যাক।

পামকিন দৌড়াচ্ছে আর ফিহা পিছনে পিছনে পামকিনকে ধরার জন্যে ছুটছে।

ফিহাঃ পামকিন তুই দাঁড়া, ! দাঁড়া বলছি নাহলে কিন্তু
পরে ধরতে পারলে তোকে মজা বুঝাবো।

ফিহা দৌড়াতে হঠাৎ তার চোখ যায় স্টোর রুমের দিকে। ফিহা কৌতহল বশত স্টোর রুমের কাছে গিয়ে সেখানে আরো চারটা রুম!

ফিহাঃ ওরিম্মা এখানে দেখি আরো রুম! কিন্তু এখন বন্ধ! কই কেউ তো আমাকে এই রুমের কথা বললো নাহ।

ফিহা রুমের দিকে এগোতে নিলে কেউ তাকে বাঁধা দেয়। ফিহা তাঁকিয়ে দেখে তানহা!

ফিহাঃ কাকি!

তানহাঃ ফিহা তুমি এখানে? কি করছো? তুমি জানো নাহ এখানে আসা বারণ সকলের জন্যে।

ফিহাঃ কিন্তু কেন? কাকি? এখানে কারা ছিলো? এই রুম গুলোই বা কেনো বন্ধ!

ফিহার কথা শুনে মিসেস ইরা( ফারহাজ এর দাদি) গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে—

এতো কৌতহল ভালো নাহ! বাড়ির বউ বাড়ির বউয়ের মতোই থাকো।

ফিহা বুঝতে পারছে নাহ বাড়ির লোকেদের আজকে হলোটা কী? সবাই যেনো কিছু না কিছু লুকোতে চাচ্ছে।

এদিকে,,,,,,

ইশিকা নেহালকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

নেহালঃ কেঁদো নাহ ইশু! আমি তো ভেবেছিলাম আমি তোমার থেকে দূরে সরে গেলে তুমি নিজেকে চেঞ্জ করবে কিন্তু তুমি তো আরো অন্ধকারে নিজেকে তলিয়ে নিয়েছো আমি জানি এর জন্যে আমি দায়ী!

ইশিকা ঃ তুমি প্লিয আমাকে আর ছেড়ে যেও নাহ!
আমি আর এই বিরহ সহ্য করতে পারছি নাহ!

নেহালঃ এই পাগলি? আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো কেন? এখন তো আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি এখন তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।

আহান রুমে ঢুকে দেখে ইরিনা চুপ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। সত্যি মেয়েটার সাথে সে অনেকটা বাজে ব্যবহার করে ফেলেছে। কিন্তু আহান বা কি করবে?
ইরিনা কেনো সবসময় ফারহাজকে পাইরুটি বেশি দেয়? ইরিনা কি এখনো ফারহাজকে ভালোবাসে? বিয়ের এতোদিন পরেও কি আহান তার মনে একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি? ভাবতে ভাবতেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহান। সে ইরিনার দিকে এগিয়ে গেলে হঠাৎ করে ইরিনার হাতে তার খেয়াল যায়। হাত জোড়া এখনো লাল হয়ে রয়েছে। আহান বুঝেছে
সে আজকে একটু বেশি করে ফেলেছে। আহান ড্রয়ার থেকে একটা ওষুধ এনে ইরিনার কাছে বসে নিচু হয়ে হাতে পরম যত্নে ওষুধ লাগাতে থাকে।

ফিহা জানালার কাছে ঘেসে গভীরভাবে রেনু বেগমের কথা গুলো ভাবতে লাগলো!
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে ফিহার আর বুঝতে বাকি রইলে নাহ ফারহাজ থানা থেকে চলে এসেছে।
ফারহাজ এক পলক ফিহাকে দেখে আয়নার সামনে গিয়ে হাতের ঘড়িটা খুলতে থাকে।
ফিহা পিছনে না তাঁকিয়েই বলে উঠে-
লাটসাহেব একটা কথা জিজ্ঞাসা বলবো?

ফারহাজঃ হুম বলো? ( আয়নায় তাঁকিয়ে)

ফিহাঃ আমি কি আপনার দ্বায়িত্ব?

ফিহার এমন কথায় ফারহাজ কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠে—

হঠাৎ এই প্রশ্ন!

ফিহা জানালায় পুনরায় তাঁকিয়ে বলে উঠে—
আমার মা বলে মানুষ ভালোবেসে যত্ন করে কিন্তু দায়িত্বে কোনো ভালোবাসা থাকে নাহ। দায়িত্ব আর যত্ন সম্পুর্ণ আলাদা।
এখন আপনিই বলুন? আমি কি আপনার দায়িত্ব নাকি ভালোবাসা?

।।।।।।চলবে???কি?